New member
প্রথমত: ইসলাম সার্বজনীন জীবন বিধান। যেখানে প্রতিটি মানুষের স্ব স্ব অধিকার সংরক্ষিত আছে। হোক সেটা পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব কিংবা সেটা হোক ইসলাম ধর্ম অথবা অন্য ধর্মের মানুষ। প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, ইসলাম ছাড়া সকল জাতি, দীন ও ধর্ম বাতিল এবং তার অনুসারীগণ কাফির। আর দীন ইসলাম হলো একমাত্র সত্য দীন এবং তার অনুসারীগণ হলেন মুমিন মুসলিম। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র দীন।”(সূরা আলে ইমরান: ১৯)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
“আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।”(সূরা আলে ইমরান: ৮৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নি‘য়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।(সূরা আল-মায়িদা: ৩)
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নাযিলকৃত এসব চিরন্তন সত্যবাণীর মাধ্যমে মুসলিম ব্যক্তি জানে যে ইসলামপূর্ব সকল ধর্ম ইসলামের আগমনে ‘মানসুখ’ বা রহিত হয়ে গেছে। আর ইসলাম হয়ে গেল গোটা মানবজাতির একমাত্র দীন বা জীবনবিধান। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা কারও পক্ষ থেকে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীনকে গ্রহণ করবেন না এবং ইসলাম ছাড়া আর অন্য কোনো শরী‘য়তকে শরী‘য়ত হিসেবে পছন্দ করবেন না। আর সেখান থেকেই মুসলিম ব্যক্তি মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই কাফির যে ব্যক্তি ইসলামকে আল্লাহ তা‘আলার জন্য দীন হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনি। অমুসলিমরা যদিও কাফির তবুও তারা যদি বিদ্রোহী না হয় তাহলে তাদের প্রতি অকারনে যুলম করা যাবে না, তাদেরকে কোন প্রকার কষ্ট দেওয়া যাবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন: হে আমার বান্দারা! আমি নিজের উপর যুলুমকে হারাম করে রেখেছি এবং তোমাদের মধ্যেও তা হারাম করেছি; সুতরাং তোমরা পরস্পর যুলুম করো না।”(মুসলিম, হাদিস নং-৬৭৩৭)
আমরা এবার উপরোক্ত দুটি অবস্থান ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করবো ইনশাআল্লাহ।
(১) দেশের কোন মুসলিম সংগঠন কিংবা আম জনতা নিজ উদ্যোগে অমুসলিমদের গির্জা মন্দির নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সম্মত হওয়ার বিধান:
কুরআন সুন্নাহ এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের নেয় নিষ্ঠ সালাফগন সর্বসম্মতিক্রমে একমত যে কোনও মুসলিম পুরুষ-নারীর জন্য ই/হুদি-খ্রিস্টা/ন বা অন্যান্য কাফে/রদের উৎসবে অংশগ্রহণ করা ও সহযোগিতা করা, তাদের মন্দির, গীর্জা, পূজা মন্ডল ইত্যাদিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করা, সেগুলো পাহারা দেওয়া কিংবা নিরাপত্তা দেওয়া হারাম। কারণ ইসলামী শরী‘আতে কা-ফি-রদের কুফ/রী ও শিরকী উৎসব এবং তাদের অন্যায় ও পাপাচারে সহযোগিতা করা ও অংশগ্রহণ করা হারাম। এমনকি কোনও মুসলিম যদি বিশ্বাস করে যে, মন্দির গীর্জাগুলি আল্লাহর ঘর, সেগুলিতে আল্লাহর ইবাদাত করা হয় বা ইহুদি খ্রিস্টান কিংবা হিন্দুরা যা করে তা হল আল্লাহর ইবাদত এবং তাঁর ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর আনুগত্য অথবা সে এটি পছন্দ করে বা তাদের কার্যকলাপে খুশি হয় এবং অমুসলিমদের মূর্তি-ভাস্কর্য, গির্জা-মন্দির ইত্যাদি পাহারা দেওয়া ঈমানী দায়িত্ব, তাহলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। যেমন মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ায় পরস্পর সহযোগিতা কর এবং মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে অত্যধিক কঠোর’ (সূরা আল-মায়িদাহ: ২)। উপরিউক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এখানে আল্লাহ তা‘আলা মুমিন ব্যক্তিদেরকে ভালো কাজে সহযোগিতা করতে আদেশ করেছেন এবং অন্যায়, অসৎ ও হারাম কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন’ (তাফসীর ইবনু কাছীর, ২/১২; তাফসীরে কুরতুবী, ৬/৪৬-৪৭ পৃ.)।
শাইখুল ইসলাম নাসিরুল হাদীস ফাক্বীহুল মিল্লাত ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফি‘ঈ আল-মাক্কী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৫০ হি: মৃত: ২০৪ হি.] বলেছেন,
“মুসলমানের জন্য গির্জায় যেখানে তারা প্রার্থনা করে সেখানে নির্মাণ, ছুতার কাজ (সূত্রধরের কাজ, ছুতারগিরি) বা অন্য কোনো কাজ করা মাকরুহ”।(আল উম্ম ” ৪/২২৫) ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মুসলিমগণ কা-ফিরদের কোন উৎসবে অংশ নিবে না, যা কিনা তাদের ধর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ঠিক যেমন করে কোন মুসলিম অন্য ধর্মের অনুশাসন এবং উপাসনার লক্ষ্যবস্তুগুলোকে গ্রহণ করতে পারে না।’ (তাশাব্বুহুল খাসিস বি আহলিল খামিস, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৯৩)
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:
“যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে গীর্জাগুলি আল্লাহর ঘর, সেগুলিতে আল্লাহর ইবাদাত করা হয়, বা ইহুদি খ্রিস্টানরা যা করে তা হল আল্লাহর ইবাদত এবং তাঁর ও তাঁর রসূলের আনুগত্য অথবা সে এটি পছন্দ করে বা তাদের কার্যকলাপে খুশি হয় তাহলে সে কা/ফের। কেননা তার আকিদা হলো তাদের ধর্মকে বিশুদ্ধ মনে করা। আর এটা হল কুফরি। অথবা তাদের ধর্মকে প্রচারের ক্ষেত্রে সে সহযোগিতা করে, তাদের ধর্মকে প্রতিষ্ঠিতি ধর্ম মনে করে এবং সে বিশ্বাস করে যে এই ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট্য অর্জন করা যায় তাহলে জেনে নিতে হবে সে ব্যক্তি কাফে/র”। তিনি আরও বলেছেন: যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে জিম্মি লোকদের তাদের গির্জায় যাওয়া তাদের প্রভুর নিকটবর্তী করে দেয় তাহলে সে একজন মুরতাদ। যদি সে অজ্ঞ থাকে যে এটি হারাম তবে সে যেন সে সম্পর্কে জেনে নেয়। যদি সে অবিরত এটা করতে থাকে তবে সে মুরতাদ হয়ে যাবে। কেননা সে আল্লাহ তাআলার কথাকে মিথ্যাচার করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন: নিশ্চয় আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন হল ইসলাম”।(সূরা আল ইমরান: ১৯; মাত্বালিবু আউলান নাহয়ী; খন্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ২৮১)
খ্রিস্টা-ন বা অন্যান্য মুশরি-কদের উৎসবগুলোতে উপস্থিত হওয়া নাজায়েয। এই মর্মে ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন
আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে (যারা আলেম অভিধার উপযুক্ত) মুসলমানদের জন্য মুশরি/কদের উৎসবগুলোতে উপস্থিত হওয়া নাজায়েয। চার মাযহাবের ফিকাহবিদগণ তাঁদের গ্রন্থসমূহে এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছে। ইমাম বাইহাকী উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে ‘সহিহ-সনদ’ এ বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: “মুশরিকদের উৎসবের দিনে তোমরা তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করো না। কেননা তাদের উপর আল্লাহ্র অসন্তুষ্টি নাযিল হতে থাকে”। তিনি আরও বলেন: “তোমরা আল্লাহ্র শত্রুদেরকে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে এড়িয়ে চলবে”। ইমাম বাইহাকী আব্দুল্লাহ্ বিন আমর (রাঃ) থেকে ‘জায়্যিদ-সনদ’ এ বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি বিধর্মীদের দেশে গিয়ে তাদের নওরোজ ও মেলা পালন করেছে, তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করেছে এবং মৃত্যু পর্যন্ত এভাবে কাটিয়েছে কিয়ামতের দিন তাদের সাথে তার হাশর হবে।”[আহকামু আহলিয যিম্মাহ্ ;খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৭২৩-৭২৪)।
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে প্রশ্ন: একজন মুসলিম সৈনিক বা সৈনিকের জন্য গির্জা, বার, সিনেমা থিয়েটার বা বিনোদন ঘর যেমন ক্যাসিনো এবং মদের দোকান পাহারা দেওয়া কি জায়েজ?
উত্তরে তারা বলেন:
অন্তর্ভুক্ত। অথচ আল্লাহ তাআলা পাপের কাজে সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:”তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ায় পরস্পর সহযোগিতা কর এবং মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে অত্যধিক কঠোর’ (সূরা আল-মায়িদাহ: ২)। আল্লাহ তাআলা সাহায্য কামনা করছি। আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর, তাঁর পরিবার বর্গের উপর এবং তাঁর সাহাবীদের ওপর রহমত বর্ষিত হোক”।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; ফাতাওয়া নং-১৪৩৩৪)
অপর ফাতওয়ায় সৌদি আরবের ইলমি গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন: “ঐ মুসলিমের হুকুম কী হবে যে গির্জার পাহারাদার হিসেবে কাজ করে?”
উত্তরে তারা বলেন: “কোনও মুসলিমের জন্য গির্জার পাহারাদার হিসেবে কাজ করা জায়েজ নয়। কেননা এতে করে পাপকাজে সহয়তা করা হয়। অথচ মহান আল্লাহ পাপ কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা করা থেকে নিষেধ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কোরো না।’ (সুরা মায়িদা: ২) আর আল্লাহই তৌফিকদাতা। হে আল্লাহ, আমাদের নবি মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারপরিজন ও সাহাবিগণের ওপর আপনি সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।”ফতোয়া প্রদান করেছেন চেয়ারম্যান: শাইখ আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ। ভাইস চেয়ারম্যান: শাইখ আব্দুর রাযযাক আফিফি রাহিমাহুল্লাহ। মেম্বার: শাইখ আব্দুল্লাহ বিন গুদাইয়্যান রাহিমাহুল্লাহ।(সূত্র: ফাতাওয়া লাজনা দায়িমা; ফতোয়া নং: ১৪৬০৭)
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.]-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: আমি একটি গির্জায় দৈনিক মজুরির বিনিময়ে কাজ করেছি, এটা কি জায়েজ নাকি হারাম?
শায়েখ উত্তর দিয়েছেন:
“মুসলিমের জন্য আল্লাহ তাআলা ব্যতীত শির-কের স্থান যেমন গীর্জা, মাজার ইত্যাদিতে কাজ করা বৈধ নয়। কেননা এমনটি করার মাধ্যমে বাতিলের স্বীকৃতি দেওয়া ও তাদের সহযোগিতা করা হয়। তাই এমন কাজ হারাম, এ কাজ করা জায়েয নয়। এই কাজের বিনিময়ে আপনি যা পেয়েছেন তা হারাম উপার্জন, আপনার উপর তওবা আবশ্যক। তাই আপনি যদি এই পরিমাণ অর্থ দান করেন তবে তা আপনার অনুশোচনার প্রমাণ হবে। (দারুল মিনহাজ, আল-মুনতাক্বা মিন ফাতাওয়াস শাইখ সালিহ আল-ফাওযান: খন্ড: ৫; পৃষ্ঠা; ৪০) সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে কোন মুসলিম যেমন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা সংগঠনের জন্য নিজ উদ্যোগে বেধর্মীদের মন্দির-গির্জা পাহারা দেওয়া জায়েজ নয়।
(২) মুসলিম শাসক রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের মন্দির গীর্জায় নিরাপত্তা দেওয়া।
মুসলিম দেশে বসবাসকারী অমুসলিম কাফে-রদের জীবন, ধন-সম্পদ ও সম্মান রক্ষা করার দায়িত্ব মুসলিম সরকারের। অতএব মুসলিম দেশে অমুসলিম ব্যক্তিরা নিজের ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে। এতে তাদেরকে বাধা দেয়া যাবে না।কেননা কাউকে জোর করে কাউকে ইসলাম গ্রহণ করানো ইসলাম সমর্থন করে না। সুতরাং এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিমদের মন্দির-গির্জা কিংবা পূজায় নিরাপত্তা দেওয়া বৈধতা রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে মুসলিম শাসকের উচিত দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে যে সকল অমুসলিম সৈনিক রয়েছে তাদেরকে দিয়ে তাদের মন্দির-গির্জায় পাহারার ব্যবস্থা করা। কিন্তু যদি পর্যাপ্ত অমুসলিম সৈনিক না থাকে তাহলে মুসলিম সৈনিক বা অন্যান্য কর্মী দিয়ে অমুসলিমদের গির্জা মন্দির কিংবা পূজায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে।তবে শর্ত হলো মুসলিম সৈনিক নিরাপত্তা দানের সময় মন্দির-গির্জার ভিতর প্রবেশ করতে পারবে না বরং বাহিরে থেকে নিরাপত্তা দিতে হবে এবং জেনে রাখা ভাল যে এই নিরাপত্তা দানের উদ্দেশ্য তাদের শিরকী কাজে সহযোগিতা নয়, বরং রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে তাদের ধর্মপালনের অধিকার রক্ষা করা। মহান আল্লাহ বলেন,
“দ্বীনের ব্যাপারে যারা (অমুসলিমরা) তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বহিস্কার করেনি তাদের প্রতি মহানুভবতা দেখাতে ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ্ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায় পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন। আল্লাহ শুধু তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেছে এবং তোমাদেরকে বহিষ্করণে সহযোগিতা করেছে। তাদের সাথে যারা বন্ধুত্ব করে, তাঁরাইতো অত্যাচারী।”(সূরা মুমতাহিনাহঃ ৮-৯ )
সুতরাং এ সুস্পষ্ট আয়াতটি কা-ফিরদের সাথে ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ আচার-ব্যবহারকে এবং তাদের উপকার করার বিষয়টিকে বৈধতা দিয়েছে; আর শুধু বিদ্রোহী কাফি*রগণ ব্যতীত বাকি সকল কাফি-রই এ সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবে। সুতরাং যেসব কা/ফের মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কারেও অংশগ্রহণ করেনি, আলোচ্য আয়াতে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার ও ইনসাফ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ন্যায় ও সুবিচার তো প্রত্যেক কাফেরের সাথেও জরুরী। এতে যিম্মি কাফের, চুক্তিতে আবদ্ধ কাফের এবং শক্র কাফের সবাই সমান। উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইমাম বনু জারীর আত-তাবারী,(রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,:
দীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি তারা যেই দলের হোক না কেন, তাদের সাথে উত্তম আচরণ করতে, সম্পর্ক রাখতে এবং তাদের প্রতি ন্যায় বিচার করতে আল্লাহ নিষেধ করেননি। আল্লাহ তাআলা বলেন: যারা ধর্মের কারণে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের ঘর থেকে বের করে দেয়নি”।(সুরা মুমতাহিনা: ৮) এখানে এ সমস্ত বৈশিষ্ট্য যাদের মাঝে রয়েছে তারাই এর অন্তর্ভুক্ত হবে,কাউকে ছেড়ে আর কাউকে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি (তাফসির ইবনে জারির ত্বাবারী; খন্ড: ২৫; পৃষ্ঠা: ৬১১)
তাছাড়া রাসূল (ﷺ) ইয়েমেনের ইহুদী-খ্রিস্টানদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠিতে রাসূল (ﷺ) সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, ইহুদী-খ্রিস্টানদের মধ্যে যারা মুসলমান হবে তারা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হবে। মুমিনদের মতোই তাদের সব বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। আর যারা স্ব-ধর্মে রয়ে যাবে তাদের জোর করে ইসলামে আনা হবে না’।(দেখুন: ইবনে হিশাম; খন্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৮৮৫) সুতরাং অমুসলিম সংখ্যালঘুদের ধনসম্পদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। তাদের ধনসম্পদ জবরদখল করা যাবে না। অন্যায়ভাবে তা আত্মসাৎ করা যাবে না। তাদের সম্পদ দুর্নীতি করে খাওয়া যাবে না। অন্য কোনোভাবেও তাদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা যাবে না। রাসূলের যুগেই এই নীতি বাস্তবায়িত হয়েছে। নাজরানের অমুসলিমদের সঙ্গে মহানবী (ﷺ) চুক্তি করেন। তাদের ব্যাপারে রাসূল (ﷺ) বলেন, নাজরান ও তাদের আশপাশের লোকজন আল্লাহর প্রতিবেশী। তারা আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদের নিরাপত্তায় থাকবে। তাদের সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে ছোট-বড় সবকিছুর নিরাপত্তা দেওয়া রাসূলের দায়িত্ব’।(দালায়িলুন নুবুওয়াহ, খন্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৫৮৪)
পাশাপাশি হেদায়াতপ্রাপ্ত খেলাফায়ে রাশেদীনের যুগে ফিলিস্তিন জয়ের পর খলিফা উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বায়তুল মুকাদ্দাসের খ্রিস্টানদের একটি সংবিধান লিখে দিয়েছিলেন। তাতে বলা হয়েছে,
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। এটি একটি নিরাপত্তা সংক্রান্ত চুক্তিনামা, যা মুসলমানদের আমির, আল্লাহর বান্দা ওমরের পক্ষ থেকে স্বাক্ষরিত হলো। এ চুক্তিনামা ইলিয়্যাবাসী তথা জেরুজালেমে বসবাসরত খ্রিস্টানদের জানমাল, গির্জা-ক্রুশ, সুস্থ-অসুস্থ তথা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য প্রযোজ্য। সুতরাং চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর তাদের ধন-সম্পদ গির্জা মন্দির তাদের অসুস্থ সুস্থ সকল ধর্মের লোককে নিরাপত্তা দিয়েছিলেন যে, তাদের গির্জায় কেউ বসবাস করবে না এবং ধ্বংস করবেন না। তাদের মর্যাদারও মানহানি করা হবে না এবং তাদের যথাযথ স্থান এর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে না। এমনকি তাদের ধন-সম্পদেরও কিছু গ্রহণ করা হবে না। তাছাড়াও তাদের ধর্মকে পরিত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে না এবং তাদের মধ্যে কারো ক্ষতি করা হবে না। তাদের সাথে প্রতিশ্রুতি থাকার কারণে ইয়াহুদীদের মধ্য থেকে কেউ বসবাস করবে না। প্রতিশ্রুতি ব্যক্তিদের উপরে কর্তব্য হল তাদেরকে ট্যাক্স দেওয়া। যেমনভাবে আহালুল মাদাইনরা দিয়ে থাকে। আর তাদের ওপর কর্তব্য হল সেখান থেকে রোম বাসি ও চোরদের বের করে দেওয়া। সুতরাং তাদের মধ্যে থেকে যে ব্যক্তি বেরিয়ে যাবে অবশ্যই সে তার নিজেকে এবং তার ধন-সম্পদকে নিরাপত্তা দিল। এমনকি তারা তাদের নিরাপত্তায় পৌঁছে যাবে। আর যে ব্যক্তি তাদের মধ্য থেকে তা প্রতিষ্ঠিত করবে অবশ্যই সে নিরাপদ। তার ওপর কর্তব্য হলো ট্যাক্স এর প্রতিশ্রুতি কারী ব্যক্তিদের ওপর যা রয়েছে অনুরূপ আদায় করা। যে ব্যক্তি ভালোবাসে প্রতিশ্রুতি গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্য হতে যে তারা তার নিজেকে এবং তার ধন-সম্পদকে রোম বাসীদের সাথে নিয়ে চলবে, এবং তাদের প্রতিশ্রুতিকে মুক্ত করবেন অবশ্যই তারা তাদের নিজেদের ওপর এবং তাদের প্রতিশ্রুতির উপর নিরাপদ দানকারী। আর যে ব্যক্তি সেই জমিনের মধ্য হতে তার সাথে থাকবে কোন ব্যক্তিকে হত্যা করার পূর্বে, কলেজে ব্যক্তি তাদের মধ্য থেকে চাইবে, তারা তার ওপ র ট্যাক্স এর প্রতিশ্রুতি গ্রহণকারী ব্যক্তিদের ওপর যে রূপ রয়েছে সে রূপ থাকবে। আর যে ব্যক্তি চাইবে রুমবাসীদের সাথে চলবে। আর যে ব্যক্তি চাইবে তার দেশে ফিরে যাবে। হলে অবশ্যই তার থেকে কোন কিছু গ্রহণ করা হবে না। এমনকি তারা তাদের শস্য সংগ্রহ করবেন। আর এ কিতাবে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি তার রাসূলের জিম্মা খোলাফায়ে রাশিদিন এবং সকল মুমিনদের জিম্মা রয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে যখন তাদেরকে দান করা হবে যে ট্যাক্স তাদের ওপর ছিল, তখন এর ওপর খালেদ বিন ওয়ালিদ আমর ইবনুল আস আব্দুর রহমান ইবনে আউফ মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান সাক্ষী দিয়েছেন এবং তা লিখেছেন ও ১৫ বছর সেখানে উপস্থিত ছিলেন। (তারিখ ইবনে জারীর আত-ত্ববারী: খন্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৪৪৯)।
অনুরূপভাবে মিসরবাসীর সাথে আমর ইবনুল আসের চুক্তি: মিশরীয়দের সাথে শান্তি চুক্তি: আমর ইবনুল আস মিশরীয়দের জন্য নিরাপত্তার একটি চিঠি লিখে বলেছিলেন:
“বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম (পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি), আমর ইবনুল-আস মিশরের জনগণকে তাদের জান, মাল, ধর্ম, গীর্জা, ক্রুশ ও ভূমি সমুদ্র নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটি দিয়েছিলেন। এগুলোর মধ্যে কিছুই কম বেশি হবে না। তাদেরকে কোনো আক্রমণ করা হবে না। যদি এই সন্ধির ব্যাপারে তারা ঐক্যমতে হয় তাহলে তাদেরকে কর দিয়ে বসবাস করা আবশ্যক। তাদের নদীর জন্য অতিরিক্ত ৫০ হাজার দিরহাম লাগবে তারা যা কিছু চুরি করবে সে বিষয়ে তাদের জরিমানা দিতে হবে। যদি তাদের কেউ উত্তর দিতে অস্বীকার করে তবে তাদের অনুপাত অনুসারে তাদের থেকে প্রতিদান তুলে নেওয়া হবে এবং যারা প্রত্যাখ্যান করবে তারা আমাদের জিম্মায় নির্দোষ হয়ে থাকবে, যদি তাদের নদীর উদ্দেশ্য শেষ হয়ে যায় তবে সেই অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে কর উঠিয়ে নেওয়া হবে। রোম এবং মিশর বাসীদের মধ্য থেকে যে কেউ এই চুক্তির আওতায় আসবে তার জন্য তাদের মতই চুক্তির নিয়ম কাঠামো হবে। তাদের ওপর যে সমস্ত নিয়ম সেটা সকলের উপর কার্যকর হবে। যে ব্যক্তি অস্বীকার করে এবং চলে যাওয়াকে পছন্দ মনে করে তাহলে সে তার গন্তব্যে না পৌঁছা পর্যন্ত অথবা আমাদের কর্তৃত্ব থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত নিরাপদে থাকবে…।(তারিখ ইবনে জারীর আত-ত্ববারী: খন্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৫১৪-৫১৫)
পরিশেষে, প্রিয় পাঠক! আসমানের নিচে জমিনের উপরে ইসলাম ধর্ম ব্যতীত অন্য সকল ধর্মই কুফরী ও গোমরাহ এবং ইসলাম ধর্ম ব্যতীত অন্য সকল উপাসনালয়ই শিরক কুফর ও পথভ্রষ্টতার ঘর, কারণ ইসলামে মহান আল্লাহ তাআলা যা বিধান আরোপ করেছেন তা ছাড়া অন্যকিছুর মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করা জায়েয নয়। ইসলামের আইন হল জ্বীন ও মানুষের জন্য চূড়ান্ত আইন। এর পূর্বে যা এসেছে ইসলাম আশার পর তা বাতিল করা হয়েছে। সুতরাং মুসলমানদের জন্য বিধর্মীদের যেকোন ধরনের উৎসবের কোনকিছুতে সাদৃশ্য গ্রহণ করা জায়েয নয়। না তাদের খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে, না পোশাকে, না গোসলে, না অগ্নি প্রজ্বলনে, না মন্দির গির্জায় প্রাত্যহিক কাজকর্ম বা ইবাদত থেকে অবকাশ নেয়ার ক্ষেত্রে, কোন ক্ষেত্রেই নয়। তেমনি ভোজ-অনুষ্ঠান করা, উপহার বিনিময় করা, তাদের উৎসবের সৌজন্যে বেচাবিক্রি করা, শিশুদেরকে তাদের উৎসবের খেলায় যেতে দেওয়া, সাজ-সজ্জা প্রকাশ করা ইত্যাদি কোনটি জায়েয নয়। অতএব যেখানে শির্ক সংগঠিত হয় সেখানে কোন তাওহীদবাদী মুসলিম স্বেচ্ছায় স্বেচ্ছাসেবক/কিংবা পাহারাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেনা৷ কেননা এটা তাদের শির্কী কাজে সহযোগিতা করার নামান্তর। যা অনেকটা কুফরী পর্যায়ের। তবে দেশের নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্র তাদের নিরাপত্তা দিবে সেটা ভিন্ন কথা। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি:)
إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُۗ
“নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র দীন।”(সূরা আলে ইমরান: ১৯)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ
“আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।”(সূরা আলে ইমরান: ৮৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নি‘য়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।(সূরা আল-মায়িদা: ৩)
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নাযিলকৃত এসব চিরন্তন সত্যবাণীর মাধ্যমে মুসলিম ব্যক্তি জানে যে ইসলামপূর্ব সকল ধর্ম ইসলামের আগমনে ‘মানসুখ’ বা রহিত হয়ে গেছে। আর ইসলাম হয়ে গেল গোটা মানবজাতির একমাত্র দীন বা জীবনবিধান। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা কারও পক্ষ থেকে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীনকে গ্রহণ করবেন না এবং ইসলাম ছাড়া আর অন্য কোনো শরী‘য়তকে শরী‘য়ত হিসেবে পছন্দ করবেন না। আর সেখান থেকেই মুসলিম ব্যক্তি মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই কাফির যে ব্যক্তি ইসলামকে আল্লাহ তা‘আলার জন্য দীন হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনি। অমুসলিমরা যদিও কাফির তবুও তারা যদি বিদ্রোহী না হয় তাহলে তাদের প্রতি অকারনে যুলম করা যাবে না, তাদেরকে কোন প্রকার কষ্ট দেওয়া যাবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« يَقُولُ اللهُ تَبَاركَ وتعالى : يَا عِبَادي ! إنِّي حَرَّمْتُ الظُلْمَ عَلَى نَفْسي وَجَعَلْتُهُ بيْنَكم مُحَرَّماً فَلا تَظَالَمُوا .
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন: হে আমার বান্দারা! আমি নিজের উপর যুলুমকে হারাম করে রেখেছি এবং তোমাদের মধ্যেও তা হারাম করেছি; সুতরাং তোমরা পরস্পর যুলুম করো না।”(মুসলিম, হাদিস নং-৬৭৩৭)
দ্বিতীয়ত: মুসলিম দেশে অমুসলিমদের মন্দির/গির্জায় নিরাপত্তা দেয়ার বিধান কী?
মুসলিম ভূখণ্ডে অমুসলিমদের গির্জা-মন্দির পাহারা দেওয়া যাবে কিনা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার আগে এখানে যে বিষয়টি বোঝা জরুরি তা হল, একটি মুসলিম প্রধান দেশে বা গণতান্ত্রিক দেশে অমুসলিমরা তাদের ধর্মীয় উপাসনালয় বানানোর অধিকার পাবে কিনা। যদি অধিকার পায় তাহলে তা আক্রমণকারীদের আক্রমণ থেকে সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্বে কিনা। আর সে সব উপাসনালয় মুসলিমদের পক্ষ থেকে আক্রমণ পরিচালনা করা বা সেগুলো ভেঙে ফেলা বা অগ্নিসংযোগ করা শরিয়ত সম্মত কিনা। এই তিনটি প্রশ্নের উপরে নির্ভর করে উত্তর হবে। যদি অমুসলিমরা মুসলিম প্রধান দেশে উপাসনালয় তৈরি করার অধিকার পায় এবং স্বার্থান্বেষী বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের আক্রমণ থেকে তার সংরক্ষণ করা বিশেষ করে যখন শত্রুরা অমুসলিমদের এই উপাসনালয়ে আক্রমণ করে মুসলিম দেশকে অমুসলিম দেশ দ্বারা আক্রমণ করার জন্য বা বিশ্বের কাছে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরে ক্ষতি করার পরিকল্পনা করে তখন দেশের কল্যাণের সাথে রাষ্ট্রের জন্য তাঁদের মন্দির গীর্জায় নিরাপত্তা দেয়া আবশ্যক হয়ে যায়। সুতরাং শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা ভাবনা করলে স্বার্থান্বেষী বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের আক্রমণ থেকে অমুসলিমদের মন্দির গীর্জা পাহারা দেওয়ার ক্ষেত্রে দুটি অবস্থা হতে পারে। আর সেগুলো হচ্ছে:(১). দেশের কোন মুসলিম সংগঠন কিংবা আম জনতা নিজ নিজ উদ্যোগে অমুসলিমদের উপাসনালয়গুলো পাহারা দেওয়া। এটি এটি জায়েজ নয়
(২). মুসলিম শাসক রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের মন্দির-গীর্জায় নিরাপত্তা দেওয়া। এটি শর্ত সাপেক্ষে জায়েজ।
আমরা এবার উপরোক্ত দুটি অবস্থান ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করবো ইনশাআল্লাহ।
(১) দেশের কোন মুসলিম সংগঠন কিংবা আম জনতা নিজ উদ্যোগে অমুসলিমদের গির্জা মন্দির নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সম্মত হওয়ার বিধান:
কুরআন সুন্নাহ এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের নেয় নিষ্ঠ সালাফগন সর্বসম্মতিক্রমে একমত যে কোনও মুসলিম পুরুষ-নারীর জন্য ই/হুদি-খ্রিস্টা/ন বা অন্যান্য কাফে/রদের উৎসবে অংশগ্রহণ করা ও সহযোগিতা করা, তাদের মন্দির, গীর্জা, পূজা মন্ডল ইত্যাদিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করা, সেগুলো পাহারা দেওয়া কিংবা নিরাপত্তা দেওয়া হারাম। কারণ ইসলামী শরী‘আতে কা-ফি-রদের কুফ/রী ও শিরকী উৎসব এবং তাদের অন্যায় ও পাপাচারে সহযোগিতা করা ও অংশগ্রহণ করা হারাম। এমনকি কোনও মুসলিম যদি বিশ্বাস করে যে, মন্দির গীর্জাগুলি আল্লাহর ঘর, সেগুলিতে আল্লাহর ইবাদাত করা হয় বা ইহুদি খ্রিস্টান কিংবা হিন্দুরা যা করে তা হল আল্লাহর ইবাদত এবং তাঁর ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর আনুগত্য অথবা সে এটি পছন্দ করে বা তাদের কার্যকলাপে খুশি হয় এবং অমুসলিমদের মূর্তি-ভাস্কর্য, গির্জা-মন্দির ইত্যাদি পাহারা দেওয়া ঈমানী দায়িত্ব, তাহলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। যেমন মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ায় পরস্পর সহযোগিতা কর এবং মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে অত্যধিক কঠোর’ (সূরা আল-মায়িদাহ: ২)। উপরিউক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এখানে আল্লাহ তা‘আলা মুমিন ব্যক্তিদেরকে ভালো কাজে সহযোগিতা করতে আদেশ করেছেন এবং অন্যায়, অসৎ ও হারাম কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন’ (তাফসীর ইবনু কাছীর, ২/১২; তাফসীরে কুরতুবী, ৬/৪৬-৪৭ পৃ.)।
শাইখুল ইসলাম নাসিরুল হাদীস ফাক্বীহুল মিল্লাত ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফি‘ঈ আল-মাক্কী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৫০ হি: মৃত: ২০৪ হি.] বলেছেন,
أَكْرَهُ لِلْمُسْلِمِ أَنْ يَعْمَلَ بِنَاءً أَوْ نِجَارَةً أَوْ غَيْرَهُ فِي كَنَائِسِهِمْ الَّتِي لِصَلَوَاتِهِمْ
“মুসলমানের জন্য গির্জায় যেখানে তারা প্রার্থনা করে সেখানে নির্মাণ, ছুতার কাজ (সূত্রধরের কাজ, ছুতারগিরি) বা অন্য কোনো কাজ করা মাকরুহ”।(আল উম্ম ” ৪/২২৫) ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মুসলিমগণ কা-ফিরদের কোন উৎসবে অংশ নিবে না, যা কিনা তাদের ধর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ঠিক যেমন করে কোন মুসলিম অন্য ধর্মের অনুশাসন এবং উপাসনার লক্ষ্যবস্তুগুলোকে গ্রহণ করতে পারে না।’ (তাশাব্বুহুল খাসিস বি আহলিল খামিস, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৯৩)
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:
من اعتقد أن الكنائس بيوت الله , أو أنه يعبد فيها ، أو أن ما يفعل اليهود والنصارى عبادة لله وطاعة له ولرسوله , أو أنه يحب ذلك , أو يرضاه فهو كافر ; لأنه يتضمن اعتقاده صحة دينهم , وذلك كفر ، أو أعانهم على فتحها ; أي : الكنائس ، وإقامة دينهم ; واعتقد أن ذلك قربة أو طاعة فهو كافر ، لتضمنه اعتقاد صحة دينهم ” .وقال : الشيخ في موضع آخر:” من اعتقد أن زيارة أهل الذمة كنائسهم قربة إلى الله ; فهو مرتد , وإن جهل أن ذلك محرم عُرِّف ذلك , فإن أصر صار مرتدا ; لتضمنه تكذيب قوله تعالى : ( إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الإِسْلامُ ) آل عمران
“যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে গীর্জাগুলি আল্লাহর ঘর, সেগুলিতে আল্লাহর ইবাদাত করা হয়, বা ইহুদি খ্রিস্টানরা যা করে তা হল আল্লাহর ইবাদত এবং তাঁর ও তাঁর রসূলের আনুগত্য অথবা সে এটি পছন্দ করে বা তাদের কার্যকলাপে খুশি হয় তাহলে সে কা/ফের। কেননা তার আকিদা হলো তাদের ধর্মকে বিশুদ্ধ মনে করা। আর এটা হল কুফরি। অথবা তাদের ধর্মকে প্রচারের ক্ষেত্রে সে সহযোগিতা করে, তাদের ধর্মকে প্রতিষ্ঠিতি ধর্ম মনে করে এবং সে বিশ্বাস করে যে এই ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট্য অর্জন করা যায় তাহলে জেনে নিতে হবে সে ব্যক্তি কাফে/র”। তিনি আরও বলেছেন: যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে জিম্মি লোকদের তাদের গির্জায় যাওয়া তাদের প্রভুর নিকটবর্তী করে দেয় তাহলে সে একজন মুরতাদ। যদি সে অজ্ঞ থাকে যে এটি হারাম তবে সে যেন সে সম্পর্কে জেনে নেয়। যদি সে অবিরত এটা করতে থাকে তবে সে মুরতাদ হয়ে যাবে। কেননা সে আল্লাহ তাআলার কথাকে মিথ্যাচার করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন: নিশ্চয় আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন হল ইসলাম”।(সূরা আল ইমরান: ১৯; মাত্বালিবু আউলান নাহয়ী; খন্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ২৮১)
খ্রিস্টা-ন বা অন্যান্য মুশরি-কদের উৎসবগুলোতে উপস্থিত হওয়া নাজায়েয। এই মর্মে ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন
ولا يجوز للمسلمين حضور أعياد المشركين باتفاق أهل العلم الذين هم أهله . وقد صرح به الفقهاء من أتباع المذاهب الأربعة في كتبهم . . . وروى البيهقي بإسناد صحيح عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه أنه قال : (لا تدخلوا على المشركين في كنائسهم يوم عيدهم فإن السخطة تنزل عليهم) . وقال عمر أيضاً : (اجتنبوا أعداء الله في أعيادهم) . وروى البيهقي بإسناد جيد عن عبد الله بن عمرو أنه قال : (من مَرَّ ببلاد الأعاجم فصنع نيروزهم ومهرجانهم وتشبه بهم حتى يموت وهو كذلك حشر معهم يوم القيامة)
আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে (যারা আলেম অভিধার উপযুক্ত) মুসলমানদের জন্য মুশরি/কদের উৎসবগুলোতে উপস্থিত হওয়া নাজায়েয। চার মাযহাবের ফিকাহবিদগণ তাঁদের গ্রন্থসমূহে এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছে। ইমাম বাইহাকী উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে ‘সহিহ-সনদ’ এ বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: “মুশরিকদের উৎসবের দিনে তোমরা তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করো না। কেননা তাদের উপর আল্লাহ্র অসন্তুষ্টি নাযিল হতে থাকে”। তিনি আরও বলেন: “তোমরা আল্লাহ্র শত্রুদেরকে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে এড়িয়ে চলবে”। ইমাম বাইহাকী আব্দুল্লাহ্ বিন আমর (রাঃ) থেকে ‘জায়্যিদ-সনদ’ এ বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি বিধর্মীদের দেশে গিয়ে তাদের নওরোজ ও মেলা পালন করেছে, তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করেছে এবং মৃত্যু পর্যন্ত এভাবে কাটিয়েছে কিয়ামতের দিন তাদের সাথে তার হাশর হবে।”[আহকামু আহলিয যিম্মাহ্ ;খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৭২৩-৭২৪)।
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে প্রশ্ন: একজন মুসলিম সৈনিক বা সৈনিকের জন্য গির্জা, বার, সিনেমা থিয়েটার বা বিনোদন ঘর যেমন ক্যাসিনো এবং মদের দোকান পাহারা দেওয়া কি জায়েজ?
উত্তরে তারা বলেন:
لا يجوز العمل في حراسة الكنائس ومحلات الخمور ودور اللهو من السينما ونحوها؛ لما في ذلك من الإعانة على الإثم، وقد نهى الله جل شأنه عن التعاون على الإثم فقال: {وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ} [سورة المائدة الآية 2]. وبالله التوفيق، وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم.
গীর্জা, মদের দোকান, বিনোদন গৃহ, সিনেমা হল ইত্যাদিতে দারোয়ান (প্রহরী) হিসাবে কাজ করা জায়েয নয়। কারণ এটা পাপের সাহায্য করার
অন্তর্ভুক্ত। অথচ আল্লাহ তাআলা পাপের কাজে সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:”তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ায় পরস্পর সহযোগিতা কর এবং মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে অত্যধিক কঠোর’ (সূরা আল-মায়িদাহ: ২)। আল্লাহ তাআলা সাহায্য কামনা করছি। আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর, তাঁর পরিবার বর্গের উপর এবং তাঁর সাহাবীদের ওপর রহমত বর্ষিত হোক”।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; ফাতাওয়া নং-১৪৩৩৪)
অপর ফাতওয়ায় সৌদি আরবের ইলমি গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন: “ঐ মুসলিমের হুকুম কী হবে যে গির্জার পাহারাদার হিসেবে কাজ করে?”
: لا يجوز للمسلم أن يعمل حارسا للكنيسة؛ لأن فيه إعانة لهم على الإثم، وقد نهى الله سبحانه عن التعاون على الإثم فقال تعالى: {وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ} [سورة المائدة الآية 2]. وبالله التوفيق، وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم.
উত্তরে তারা বলেন: “কোনও মুসলিমের জন্য গির্জার পাহারাদার হিসেবে কাজ করা জায়েজ নয়। কেননা এতে করে পাপকাজে সহয়তা করা হয়। অথচ মহান আল্লাহ পাপ কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা করা থেকে নিষেধ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কোরো না।’ (সুরা মায়িদা: ২) আর আল্লাহই তৌফিকদাতা। হে আল্লাহ, আমাদের নবি মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারপরিজন ও সাহাবিগণের ওপর আপনি সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।”ফতোয়া প্রদান করেছেন চেয়ারম্যান: শাইখ আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ। ভাইস চেয়ারম্যান: শাইখ আব্দুর রাযযাক আফিফি রাহিমাহুল্লাহ। মেম্বার: শাইখ আব্দুল্লাহ বিন গুদাইয়্যান রাহিমাহুল্লাহ।(সূত্র: ফাতাওয়া লাজনা দায়িমা; ফতোয়া নং: ১৪৬০৭)
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.]-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: আমি একটি গির্জায় দৈনিক মজুরির বিনিময়ে কাজ করেছি, এটা কি জায়েজ নাকি হারাম?
শায়েখ উত্তর দিয়েছেন:
” لا يجوز للمسلم أن يعمل في أماكن الشرك وعبادة غير الله عز وجل، من الكنائس والأضرحة وغير ذلك ؛ لأنه بذلك يكون مقرًّا للباطل ، ومعينًا لأصحابه عليه ، وعمله محرم ، فلا يجوز له أن يتولى هذا العمل ، وما أخذته من الأجر، مقابلاً لهذا العمل: كسبٌ محرم ، فعليك التوبة إلى الله سبحانه وتعالى ، ولو تصدقت بهذا المبلغ الذي حصلت عليه لكان أبرأ لذمتك ، ويكون دليلاً على صحة ندمك وتوبتك “
“মুসলিমের জন্য আল্লাহ তাআলা ব্যতীত শির-কের স্থান যেমন গীর্জা, মাজার ইত্যাদিতে কাজ করা বৈধ নয়। কেননা এমনটি করার মাধ্যমে বাতিলের স্বীকৃতি দেওয়া ও তাদের সহযোগিতা করা হয়। তাই এমন কাজ হারাম, এ কাজ করা জায়েয নয়। এই কাজের বিনিময়ে আপনি যা পেয়েছেন তা হারাম উপার্জন, আপনার উপর তওবা আবশ্যক। তাই আপনি যদি এই পরিমাণ অর্থ দান করেন তবে তা আপনার অনুশোচনার প্রমাণ হবে। (দারুল মিনহাজ, আল-মুনতাক্বা মিন ফাতাওয়াস শাইখ সালিহ আল-ফাওযান: খন্ড: ৫; পৃষ্ঠা; ৪০) সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে কোন মুসলিম যেমন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা সংগঠনের জন্য নিজ উদ্যোগে বেধর্মীদের মন্দির-গির্জা পাহারা দেওয়া জায়েজ নয়।
(২) মুসলিম শাসক রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের মন্দির গীর্জায় নিরাপত্তা দেওয়া।
মুসলিম দেশে বসবাসকারী অমুসলিম কাফে-রদের জীবন, ধন-সম্পদ ও সম্মান রক্ষা করার দায়িত্ব মুসলিম সরকারের। অতএব মুসলিম দেশে অমুসলিম ব্যক্তিরা নিজের ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে। এতে তাদেরকে বাধা দেয়া যাবে না।কেননা কাউকে জোর করে কাউকে ইসলাম গ্রহণ করানো ইসলাম সমর্থন করে না। সুতরাং এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিমদের মন্দির-গির্জা কিংবা পূজায় নিরাপত্তা দেওয়া বৈধতা রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে মুসলিম শাসকের উচিত দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে যে সকল অমুসলিম সৈনিক রয়েছে তাদেরকে দিয়ে তাদের মন্দির-গির্জায় পাহারার ব্যবস্থা করা। কিন্তু যদি পর্যাপ্ত অমুসলিম সৈনিক না থাকে তাহলে মুসলিম সৈনিক বা অন্যান্য কর্মী দিয়ে অমুসলিমদের গির্জা মন্দির কিংবা পূজায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে।তবে শর্ত হলো মুসলিম সৈনিক নিরাপত্তা দানের সময় মন্দির-গির্জার ভিতর প্রবেশ করতে পারবে না বরং বাহিরে থেকে নিরাপত্তা দিতে হবে এবং জেনে রাখা ভাল যে এই নিরাপত্তা দানের উদ্দেশ্য তাদের শিরকী কাজে সহযোগিতা নয়, বরং রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে তাদের ধর্মপালনের অধিকার রক্ষা করা। মহান আল্লাহ বলেন,
لَا یَنۡهٰىكُمُ اللّٰهُ عَنِ الَّذِیۡنَ لَمۡ یُقَاتِلُوۡكُمۡ فِی الدِّیۡنِ وَ لَمۡ یُخۡرِجُوۡكُمۡ مِّنۡ دِیَارِكُمۡ اَنۡ تَبَرُّوۡهُمۡ وَ تُقۡسِطُوۡۤا اِلَیۡهِمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُقۡسِطِیۡنَ,اِنَّمَا یَنۡهٰىكُمُ اللّٰهُ عَنِ الَّذِیۡنَ قٰتَلُوۡكُمۡ فِی الدِّیۡنِ وَ اَخۡرَجُوۡكُمۡ مِّنۡ دِیَارِكُمۡ وَ ظٰهَرُوۡا عَلٰۤی اِخۡرَاجِكُمۡ اَنۡ تَوَلَّوۡهُمۡ ۚ وَ مَنۡ یَّتَوَلَّهُمۡ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظّٰلِمُوۡنَ
“দ্বীনের ব্যাপারে যারা (অমুসলিমরা) তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বহিস্কার করেনি তাদের প্রতি মহানুভবতা দেখাতে ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ্ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায় পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন। আল্লাহ শুধু তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেছে এবং তোমাদেরকে বহিষ্করণে সহযোগিতা করেছে। তাদের সাথে যারা বন্ধুত্ব করে, তাঁরাইতো অত্যাচারী।”(সূরা মুমতাহিনাহঃ ৮-৯ )
সুতরাং এ সুস্পষ্ট আয়াতটি কা-ফিরদের সাথে ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ আচার-ব্যবহারকে এবং তাদের উপকার করার বিষয়টিকে বৈধতা দিয়েছে; আর শুধু বিদ্রোহী কাফি*রগণ ব্যতীত বাকি সকল কাফি-রই এ সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবে। সুতরাং যেসব কা/ফের মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কারেও অংশগ্রহণ করেনি, আলোচ্য আয়াতে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার ও ইনসাফ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ন্যায় ও সুবিচার তো প্রত্যেক কাফেরের সাথেও জরুরী। এতে যিম্মি কাফের, চুক্তিতে আবদ্ধ কাফের এবং শক্র কাফের সবাই সমান। উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইমাম বনু জারীর আত-তাবারী,(রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,:
لا ينهاكم الله عن الذين لم يقاتلوكم في الدين من جميع أصناف الملل والأديان أن تبَرُّوهم وتصِلوهم، وتُقسطوا إليهم، إن الله عز وجل عم بقوله: ﴿ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُمْ مِنْ دِيَارِكُمْ ﴾ [الممتحنة: 8] جميعَ مَن كان ذلك صفتَه، فلم يخصص به بعضًا دون بعضٍ؛
দীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি তারা যেই দলের হোক না কেন, তাদের সাথে উত্তম আচরণ করতে, সম্পর্ক রাখতে এবং তাদের প্রতি ন্যায় বিচার করতে আল্লাহ নিষেধ করেননি। আল্লাহ তাআলা বলেন: যারা ধর্মের কারণে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের ঘর থেকে বের করে দেয়নি”।(সুরা মুমতাহিনা: ৮) এখানে এ সমস্ত বৈশিষ্ট্য যাদের মাঝে রয়েছে তারাই এর অন্তর্ভুক্ত হবে,কাউকে ছেড়ে আর কাউকে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি (তাফসির ইবনে জারির ত্বাবারী; খন্ড: ২৫; পৃষ্ঠা: ৬১১)
তাছাড়া রাসূল (ﷺ) ইয়েমেনের ইহুদী-খ্রিস্টানদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠিতে রাসূল (ﷺ) সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, ইহুদী-খ্রিস্টানদের মধ্যে যারা মুসলমান হবে তারা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হবে। মুমিনদের মতোই তাদের সব বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। আর যারা স্ব-ধর্মে রয়ে যাবে তাদের জোর করে ইসলামে আনা হবে না’।(দেখুন: ইবনে হিশাম; খন্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৮৮৫) সুতরাং অমুসলিম সংখ্যালঘুদের ধনসম্পদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। তাদের ধনসম্পদ জবরদখল করা যাবে না। অন্যায়ভাবে তা আত্মসাৎ করা যাবে না। তাদের সম্পদ দুর্নীতি করে খাওয়া যাবে না। অন্য কোনোভাবেও তাদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা যাবে না। রাসূলের যুগেই এই নীতি বাস্তবায়িত হয়েছে। নাজরানের অমুসলিমদের সঙ্গে মহানবী (ﷺ) চুক্তি করেন। তাদের ব্যাপারে রাসূল (ﷺ) বলেন, নাজরান ও তাদের আশপাশের লোকজন আল্লাহর প্রতিবেশী। তারা আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদের নিরাপত্তায় থাকবে। তাদের সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে ছোট-বড় সবকিছুর নিরাপত্তা দেওয়া রাসূলের দায়িত্ব’।(দালায়িলুন নুবুওয়াহ, খন্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৫৮৪)
পাশাপাশি হেদায়াতপ্রাপ্ত খেলাফায়ে রাশেদীনের যুগে ফিলিস্তিন জয়ের পর খলিফা উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বায়তুল মুকাদ্দাসের খ্রিস্টানদের একটি সংবিধান লিখে দিয়েছিলেন। তাতে বলা হয়েছে,
بسم الله الرحمن الرحيم “هذا ما أعطى عبدالله عمر أمير المؤمنين أهل إيلياء (بيت المقدس) من الأمان، أعطاهم أمانًا لأنفسهم وأموالهم، ولكنائسهم وصُلبانهم، وسقيمها وبريئها وسائر ملتها، أنه لا تسكن كنائسهم ولا تهدم، ولا ينتقص منها ولا من حيزها، ولا من صليبهم، ولا من شيءٍ من أموالهم، ولا يكرهون على دينهم، ولا يضار أحد منهم، ولا يسكن بإيلياء معهم أحد من اليهود، وعلى أهل إيلياء أن يعطوا الجزية كما يعطي أهل المدائن، وعليهم أن يخرجوا منها الروم واللصوص، فمن خرج منهم فإنه آمن على نفسه وماله حتى يبلغوا مأمنهم، ومن أقام منهم فهو آمن، وعليه مثل ما على أهل إيلياء من الجزية، ومن أحب من أهل إيلياء أن يسير بنفسه وماله مع الروم ويخلي بيعهم وصلبهم فإنهم آمنون على أنفسهم وعلى بيعهم وصلبهم، حتى يبلغوا مأمنهم، ومن كان بها من أهل الأرض قبل مقتل فلانٍ، فمن شاء منهم قعدوا عليه مثل ما على أهل إيلياء من الجزية، ومن شاء سار مع الروم، ومن شاء رجع إلى أهله، فإنه لا يؤخذ منهم شيء حتى يحصد حصادهم، وعلى ما في هذا الكتاب عهد الله، وذمة رسوله، وذمة الخلفاء، وذمة المؤمنين، إذا أعطوا الذي عليهم من الجزية” شهد على ذلك خالد بن الوليد، وعمرو بن العاص، وعبدالرحمن بن عوفٍ، ومعاوية بن أبي سفيان،وكتب وحضر سنة خمس عشرة؛
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। এটি একটি নিরাপত্তা সংক্রান্ত চুক্তিনামা, যা মুসলমানদের আমির, আল্লাহর বান্দা ওমরের পক্ষ থেকে স্বাক্ষরিত হলো। এ চুক্তিনামা ইলিয়্যাবাসী তথা জেরুজালেমে বসবাসরত খ্রিস্টানদের জানমাল, গির্জা-ক্রুশ, সুস্থ-অসুস্থ তথা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য প্রযোজ্য। সুতরাং চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর তাদের ধন-সম্পদ গির্জা মন্দির তাদের অসুস্থ সুস্থ সকল ধর্মের লোককে নিরাপত্তা দিয়েছিলেন যে, তাদের গির্জায় কেউ বসবাস করবে না এবং ধ্বংস করবেন না। তাদের মর্যাদারও মানহানি করা হবে না এবং তাদের যথাযথ স্থান এর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে না। এমনকি তাদের ধন-সম্পদেরও কিছু গ্রহণ করা হবে না। তাছাড়াও তাদের ধর্মকে পরিত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে না এবং তাদের মধ্যে কারো ক্ষতি করা হবে না। তাদের সাথে প্রতিশ্রুতি থাকার কারণে ইয়াহুদীদের মধ্য থেকে কেউ বসবাস করবে না। প্রতিশ্রুতি ব্যক্তিদের উপরে কর্তব্য হল তাদেরকে ট্যাক্স দেওয়া। যেমনভাবে আহালুল মাদাইনরা দিয়ে থাকে। আর তাদের ওপর কর্তব্য হল সেখান থেকে রোম বাসি ও চোরদের বের করে দেওয়া। সুতরাং তাদের মধ্যে থেকে যে ব্যক্তি বেরিয়ে যাবে অবশ্যই সে তার নিজেকে এবং তার ধন-সম্পদকে নিরাপত্তা দিল। এমনকি তারা তাদের নিরাপত্তায় পৌঁছে যাবে। আর যে ব্যক্তি তাদের মধ্য থেকে তা প্রতিষ্ঠিত করবে অবশ্যই সে নিরাপদ। তার ওপর কর্তব্য হলো ট্যাক্স এর প্রতিশ্রুতি কারী ব্যক্তিদের ওপর যা রয়েছে অনুরূপ আদায় করা। যে ব্যক্তি ভালোবাসে প্রতিশ্রুতি গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্য হতে যে তারা তার নিজেকে এবং তার ধন-সম্পদকে রোম বাসীদের সাথে নিয়ে চলবে, এবং তাদের প্রতিশ্রুতিকে মুক্ত করবেন অবশ্যই তারা তাদের নিজেদের ওপর এবং তাদের প্রতিশ্রুতির উপর নিরাপদ দানকারী। আর যে ব্যক্তি সেই জমিনের মধ্য হতে তার সাথে থাকবে কোন ব্যক্তিকে হত্যা করার পূর্বে, কলেজে ব্যক্তি তাদের মধ্য থেকে চাইবে, তারা তার ওপ র ট্যাক্স এর প্রতিশ্রুতি গ্রহণকারী ব্যক্তিদের ওপর যে রূপ রয়েছে সে রূপ থাকবে। আর যে ব্যক্তি চাইবে রুমবাসীদের সাথে চলবে। আর যে ব্যক্তি চাইবে তার দেশে ফিরে যাবে। হলে অবশ্যই তার থেকে কোন কিছু গ্রহণ করা হবে না। এমনকি তারা তাদের শস্য সংগ্রহ করবেন। আর এ কিতাবে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি তার রাসূলের জিম্মা খোলাফায়ে রাশিদিন এবং সকল মুমিনদের জিম্মা রয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে যখন তাদেরকে দান করা হবে যে ট্যাক্স তাদের ওপর ছিল, তখন এর ওপর খালেদ বিন ওয়ালিদ আমর ইবনুল আস আব্দুর রহমান ইবনে আউফ মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান সাক্ষী দিয়েছেন এবং তা লিখেছেন ও ১৫ বছর সেখানে উপস্থিত ছিলেন। (তারিখ ইবনে জারীর আত-ত্ববারী: খন্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৪৪৯)।
অনুরূপভাবে মিসরবাসীর সাথে আমর ইবনুল আসের চুক্তি: মিশরীয়দের সাথে শান্তি চুক্তি: আমর ইবনুল আস মিশরীয়দের জন্য নিরাপত্তার একটি চিঠি লিখে বলেছিলেন:
بسم الله الرحمن الرحيم، هذا ما أعطى عمرو بن العاص أهل مصر من الأمان على أنفسهم وملتهم وأموالهم وكنائسهم وصلبهم، وبرهم وبحرهم، لا يدخل عليهم شيء من ذلك ولا ينتقص، ولا يساكنهم النوبة (أي أهل صعيد مصر)، وعلى أهل مصر أن يعطوا الجزية إذا اجتمعوا على هذا الصلح، وانتهت زيادة نهرهم، خمسين ألف ألفٍ درهم، وعليهم ما جنى لصوصهم، فإن أبى أحد منهم أن يجيب، رفع عنهم من الجزاء بقدرهم، وذمتنا ممن أبى بريئة، وإن نقص نهرهم من غايته إذا انتهى، رفع عنهم بقدر ذلك، ومن دخل في صلحهم من الروم والنوبة (أي أهل صعيد مصر)، فله مثل ما لهم، وعليه مثل ما عليهم، ومن أبى واختار الذهاب، فهو آمن حتى يبلغ مأمنه أو.يخرج من سلطاننا، علي
“বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম (পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি), আমর ইবনুল-আস মিশরের জনগণকে তাদের জান, মাল, ধর্ম, গীর্জা, ক্রুশ ও ভূমি সমুদ্র নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটি দিয়েছিলেন। এগুলোর মধ্যে কিছুই কম বেশি হবে না। তাদেরকে কোনো আক্রমণ করা হবে না। যদি এই সন্ধির ব্যাপারে তারা ঐক্যমতে হয় তাহলে তাদেরকে কর দিয়ে বসবাস করা আবশ্যক। তাদের নদীর জন্য অতিরিক্ত ৫০ হাজার দিরহাম লাগবে তারা যা কিছু চুরি করবে সে বিষয়ে তাদের জরিমানা দিতে হবে। যদি তাদের কেউ উত্তর দিতে অস্বীকার করে তবে তাদের অনুপাত অনুসারে তাদের থেকে প্রতিদান তুলে নেওয়া হবে এবং যারা প্রত্যাখ্যান করবে তারা আমাদের জিম্মায় নির্দোষ হয়ে থাকবে, যদি তাদের নদীর উদ্দেশ্য শেষ হয়ে যায় তবে সেই অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে কর উঠিয়ে নেওয়া হবে। রোম এবং মিশর বাসীদের মধ্য থেকে যে কেউ এই চুক্তির আওতায় আসবে তার জন্য তাদের মতই চুক্তির নিয়ম কাঠামো হবে। তাদের ওপর যে সমস্ত নিয়ম সেটা সকলের উপর কার্যকর হবে। যে ব্যক্তি অস্বীকার করে এবং চলে যাওয়াকে পছন্দ মনে করে তাহলে সে তার গন্তব্যে না পৌঁছা পর্যন্ত অথবা আমাদের কর্তৃত্ব থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত নিরাপদে থাকবে…।(তারিখ ইবনে জারীর আত-ত্ববারী: খন্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৫১৪-৫১৫)
পরিশেষে, প্রিয় পাঠক! আসমানের নিচে জমিনের উপরে ইসলাম ধর্ম ব্যতীত অন্য সকল ধর্মই কুফরী ও গোমরাহ এবং ইসলাম ধর্ম ব্যতীত অন্য সকল উপাসনালয়ই শিরক কুফর ও পথভ্রষ্টতার ঘর, কারণ ইসলামে মহান আল্লাহ তাআলা যা বিধান আরোপ করেছেন তা ছাড়া অন্যকিছুর মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করা জায়েয নয়। ইসলামের আইন হল জ্বীন ও মানুষের জন্য চূড়ান্ত আইন। এর পূর্বে যা এসেছে ইসলাম আশার পর তা বাতিল করা হয়েছে। সুতরাং মুসলমানদের জন্য বিধর্মীদের যেকোন ধরনের উৎসবের কোনকিছুতে সাদৃশ্য গ্রহণ করা জায়েয নয়। না তাদের খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে, না পোশাকে, না গোসলে, না অগ্নি প্রজ্বলনে, না মন্দির গির্জায় প্রাত্যহিক কাজকর্ম বা ইবাদত থেকে অবকাশ নেয়ার ক্ষেত্রে, কোন ক্ষেত্রেই নয়। তেমনি ভোজ-অনুষ্ঠান করা, উপহার বিনিময় করা, তাদের উৎসবের সৌজন্যে বেচাবিক্রি করা, শিশুদেরকে তাদের উৎসবের খেলায় যেতে দেওয়া, সাজ-সজ্জা প্রকাশ করা ইত্যাদি কোনটি জায়েয নয়। অতএব যেখানে শির্ক সংগঠিত হয় সেখানে কোন তাওহীদবাদী মুসলিম স্বেচ্ছায় স্বেচ্ছাসেবক/কিংবা পাহারাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেনা৷ কেননা এটা তাদের শির্কী কাজে সহযোগিতা করার নামান্তর। যা অনেকটা কুফরী পর্যায়ের। তবে দেশের নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্র তাদের নিরাপত্তা দিবে সেটা ভিন্ন কথা। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি:)