- Views: 401
- Replies: 2
মীলাদুন্নবী উৎসব থেকে সতর্কতা
প্রথম খুতবা
আলহামদুলিল্লাহ, প্রশংসা মাত্রই আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁরই সাহায্য চাই এবং তাঁর কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করি। নিজেদের আত্মার অনিষ্টতা থেকে এবং মন্দ আমলের বদ ফলাফল থেকে আল্লাহর কাছেই পানাহ চাই। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না, আবার যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন তার কোনো পথপ্রদর্শকও নেই।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরীক নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল; আল্লাহ তাঁর প্রতি, তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি এবং সব সাহাবীর প্রতি দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন।
অতঃপর:
হে আল্লাহর বান্দারা, আপনারা আল্লাহকে ভয় করুন। আল্লাহর কিতাব, তদ্বীয় রাসূলের সুন্নাহ এবং সাহাবীগণের পথকে আঁকড়ে ধরুন। কারণ আল্লাহর কিতাব হচ্ছে: হেদায়েত, উজ্জ্বল জ্যোতি এবং আল্লাহর দৃঢ় রজ্জু। আল্লাহ বলেনঃ
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمْ بُرْهَانٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكُمْ نُورًا مُبِينًا (174) فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَاعْتَصَمُوا بِهِ فَسَيُدْخِلُهُمْ فِي رَحْمَةٍ مِنْهُ وَفَضْلٍ وَيَهْدِيهِمْ إِلَيْهِ صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا
অর্থাৎ, হে মানবকুল! তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে দলীল, তোমাদেরকে দিয়েছেন উজ্জ্বল জ্যোতি। তো যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁকেই আঁকড়ে থাকবে, আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় রহমত ও অনুগ্রহে ঢুকিয়ে নেবেন এবং তাদের সরল সঠিক পথ দেখাবেন।" -[সূরা নিসা, ১৭৪-৭৫]
আর রাসূলের সুন্নাহ তো কুরআনের স্পষ্টকারী ভাষ্য। আল্লাহ বলেনঃ
وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
অর্থাৎ, আর আমরাই তোমার প্রতি যিকর তথা কুরআন নাজিল করেছি, যাতে করে তুমি মানুষকে তাদের প্রতি নাজিলকৃত বিষয়াবলী বর্ণনা করে দাও এবং যেন তারা (এটা নিয়ে) চিন্তাভাবনা করে।"অন্যত্র তিনি বলেনঃ
وَمَا أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ إِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِي اخْتَلَفُوا فِيهِ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
অর্থাৎ, আমরা তো তোমার উপর কিতাব নাজিল করেছি তাদের বিরোধময় বিষয়ের বিবরণ দেওয়ার জন্য, মুমিনদের জন্য হেদায়েত ও রহমত স্বরূপ।আবার সাহাবীগণ -রাযিয়াল্লাহু আনহুম- ছিলেন আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহ সম্পর্কে উম্মাহর সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ। আল্লাহ তাদের ঈমান ও হেদায়েতের সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং তাদের অনুসরণ অনুকরণের নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূল ﷺও তাদের পথেই চলার আদেশ দিয়েছেন। কারণ, তারাই যে কুরআন সুন্নাহর বিষয়ে সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ এবং আল্লাহ ও তদ্বীয় রাসূলের কথার উদ্দেশ্য বোঝার বিষয়ে তারাই বিশুদ্ধতম মানুষ। পাশাপাশি কুরআন ও সুন্নাহকে একদম পূর্ণাঙ্গরূপে মানার বিষয়ে তারাই ছিলেন সবচেয়ে সোচ্চার। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাঁর নবীর সাহাবীদের বিষয়ে বলেনঃ كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ
অর্থাৎ, তোমরাই হচ্ছ শ্রেষ্ঠতম উম্মাহ, মানুষের জন্যই যাদের উদ্ভব।
অন্যত্র বলেনঃ وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا অর্থাৎ এভাবেই আমরা তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী উত্তম জাতি করেছি।
তাদের ব্যাপারে আরো বলেনঃ فَإِنْ آمَنُوا بِمِثْلِ مَا آمَنْتُمْ بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوْا অর্থাৎ তারা যদি তোমাদের মতো ঈমান আনে, তাহলেই কেবল তারা হেদায়েত পাবে।
রাসূল ﷺ বলেছেনঃ عليكم بِسُنَّتِي وسُنَّةِ الخلفاءِ الراشدين অর্থাৎ তোমাদের উপর আমার সুন্নাহ ও খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাহ মানা আবশ্যক।
অন্যত্র তিনি জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত দল সম্পর্কে বলেনঃ مَا أنا عليهِ وأصحابي অর্থাৎ আমি ও আমার সাহাবীরা যার উপর রয়েছি, (যারা তার উপর থাকবে তারাই কেবল নাজাত পাবে)। তিরমিযী বর্ণনা করেছেন।
সুতরাং যে ব্যক্তি কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরে উম্মাহর সালাফদের পথে চলবে, সে-ই সুন্নাহর তাওফীক পাবে এবং বিদ'আত থেকে মুক্তি পাবে। কোনো বক্তি যদি এমন কোনো ইবাদত করে যেটা আল্লাহ তা'আলা শরীয়তে দেননি, রাসূলও করতে বলেননি এমনকি সাহাবীগণও করেননি, তাহলে (বুঝতে হবে যে, সে) দ্বীনের মাঝে বিদ'আত করল এবং এমন নতুন কিছু করল যা দ্বীনের মাঝে ছিল না। আর যে ব্যক্তি বিদ'আতে পতিত হলো সে তো সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয়ে পড়ে গেল, স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে নিপতিত হলো। মহাপ্রতাপশালী আল্লাহর গজব ও কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুনে পুড়ার মতো ভয়ানক আশঙ্কায় রয়েছে। কারণ রাসূল ﷺ বলেছেনঃ
وَشَرُّ الأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا، وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ، وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِي النَّارِ
অর্থাৎ, সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো নবাবিষ্কৃত বিষয়াবলী। আর সব নতুন বিষয়ই বিদ'আত আর প্রত্যেক বিদ'আতই ভ্রষ্টতা। ভ্রষ্টতা মাত্রই জাহান্নামে নিয়ে যাবে।"আল্লাহ আমাকে ও আপনাদেরকে বিদ'আত থেকে রক্ষা করুন এবং সুন্নাহকে আঁকড়ে থাকার তাওফীক দিন। আমি এরকম বলছি, আমি আমার এবং আপনাদের জন্য যাবতীয় গুনাহ থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি; আপনারাও ক্ষমা চান। নিশ্চয়ই তিনি মহাক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।
দ্বিতীয় খুতবা
প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর, যিনি আমাদের জন্য দ্বীনকে পূর্ণ করে দিয়েছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরীক নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল; আল্লাহ তাঁর প্রতি, তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি এবং সব সাহাবীর প্রতি কিয়ামত দিবস পর্যন্ত দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন।
অতঃপর:
হে আল্লাহর বান্দারা, আপনারা আল্লাহকে ভয় করুন। জেনে রাখুন, দ্বীনের মাঝে নবাবিষ্কৃত বিষয়াবলীর মাঝে অন্যতম বিষয় হলো: রাসূলের জন্মদিবস উপলক্ষে উৎসব পালন।
এটা বিদ'আত হওয়ার কারণ হলো: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাঁর কিতাবে এর বিধান দেননি, রাসূল ﷺ তাঁর সুন্নাহতেও এরকম কোনো নির্দেশ দেননি; এমনকি সাহাবীদের যুগ শেষ হওয়া অবধি কোনো সাহাবী এই দিবস পালন করেননি। বরং তাদের অনেক পরে এগুলো তৈরি হয়েছে।
সুতরাং আপনারা নিজেরা মীলাদুন্নবী থেকে সতর্ক থাকুন এবং অন্যদেরকেও সতর্ক করুন। আরো জেনে নিন যে, মুসলিমদের পক্ষ থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য এটা কোনো সঠিক পদ্ধতিও নয়, শরীয়ত সমর্থিত তরীকাও নয়। কেননা জিন-মানবের নেতা, রাসূলদের ইমাম, আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত মহান রাসূলের ভালোবাসা তো কেবল তাঁর অনুসরণ, অনুকরণ এবং নির্দেশ বাস্তবায়ন জরুরি। যেমনটি আল্লাহ বলেছেনঃ "قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
অর্থাৎ, বলে দিন হে নবী, তোমরা যদি আল্লাহকে (যথাযথ) ভালোবেসে থাকো, আমার অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন, তোমাদের গুনাহ মাফ করবেন। আর আল্লাহ তো দয়াশীল ক্ষমাশীল।"
একজন মুসলিম কি নবীর প্রতি তার (উজাড় করা) ভালোবাসা প্রকাশ করবে নবীর নাফরমানি করে এবং তাঁর আদেশকে অবজ্ঞা করে?
ওহে আল্লাহর বান্দারা! কোনো বিদ'আত 'অনেক লোক করছে' এই ধরনের কথা বলে বিদ'আতের বৈধতার দলীল দিতে যাইয়েন না। কারণ, এই সংখ্যাধিক্য হক তথা সঠিকতার দলীল নয়। আল্লাহ বলেনঃ
وَإِنْ تُطِعْ أَكْثَرَ مَنْ فِي الْأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ
অর্থাৎ, তুমি যদি জমিনের অধিকাংশ লোকের অনুসরণ কর, তাহলে তো তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করবে। তারা তো শুধুই ধারণার অনুসরণ করে। অনুমানই কেবল তারা করতে পারে।"(নিজেদেরকে) ইলমের দিকে নিসবত করা কিছু লোকের ফতোয়া দিয়ে বিদ'আত করার দুঃসাহস দেখায়েন না। কারণ মূল দলীল তো হলো: আল্লাহ ও তদ্বীয় রাসূল যা বলেছেন এবং সালাফে সালেহীন যে পথে ছিলেন- সেটা। কিন্তু আলেম, মুফতী, দা'ঈ সবারই অজানা, ভুলভ্রান্তি এবং পদস্খলন থাকতে পারে।
বিদ'আতীদের সুন্দর নিয়তের কারণে তাদের জন্য ওজর আপত্তি তুলেন না, কারণ এককভাবে সুন্দর নিয়তই কোনো আমল বিশুদ্ধ ও কবুল হওয়ার মাপকাঠি নয়। বরং আমল সঠিক হওয়ার শর্ত হলো: নিয়ত একনিষ্ঠ আল্লাহর জন্য হবে এবং আমলটা শরীয়ত সমর্থিত হবে। রাসূল ﷺ বলেছেনঃ مَن عمِلَ عَمَلاً ليس عليهِ أمرُنا فهو رَدٌّ অর্থাৎ যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করল, যে বিষয়ে আমাদের নির্দেশনা নেই -তা প্রত্যাখ্যাত।" যদিও তার নিয়ত খালেস হয়।
হে আল্লাহ, আপনার নৈকট্য অর্জনের জন্য আমরা যা-ই করি, তাতে আপনার ইখলাস এবং আপনার নবীর অনুসরণ করার তাওফীক দিন।
আল্লাহ গো, আপনি ইসলাম ও মুসলমানদের সম্মানিত করুন, আপনার তাওহীদপন্থী বান্দাদের সাহায্য করুন এবং এই দেশসহ সকল মুসলিম দেশকে নিরাপদ বাসস্থান বানিয়ে দিন।
প্রভু হে, আপনি আমাদের শাসক খাদেমুল হারামাইন শরীফাইন ও তার বিশ্বস্ত ওলিয়্যুল 'আহদকে আপনার সন্তুষ্টিমূলক কাজের তাওফীক দান করুন। তাদেরকে আপনার আনুগত্য ও আপনার দ্বীনের সাহায্যের কাজে লাগান এবং তাদেরকে সৎ কল্যাণকামী উপদেষ্টা পরিষদ দান করুন হে বিশ্বজগতের প্রতিপালক।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতেও ভালো দান করুন ও আখিরাতেও ভালো দান করুন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের রক্ষা করুন। হে আল্লাহ, আপনি আপনার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারবর্গ এবং সব সাহাবীদের প্রতি দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন।
খুতবা প্রদান করেছেনঃ শায়খ ড. আলী বিন ইয়াহয়া আল-হাদ্দাদী হাফিযাহুল্লাহ।