সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

পারিবারিক ফিকাহ মাহরাম কাকে বলে? নারী-পুরুষের মাহারাম কতজন? মাহরামের সামনে পর্দার ক্ষেত্রে মহিলার জন্য কী কী ছাড় রয়েছে? মহিলাদের মুখমণ্ডল কি পর্দার অন্তর্ভুক্ত?

abdulazizulhakimgrameen

Altruistic

Uploader
Salafi User
Threads
375
Comments
439
Solutions
1
Reactions
8,229
Credits
21,541
উত্তর: মাহরাম শব্দের শাব্দিক অর্থ: হারাম, যা হালাল এর বিপরিত। আর পারিভাষিক অর্থে মাহরাম বলা হয় ঐ সকল পুরুষ অথবা নারীকে যাদেরকে স্থায়ীভাবে বিবাহ করা হারাম-চাই তা নিকটাত্মীয় হওয়ার কারণে হোক অথবা দুগ্ধপান করার কারণে হোক অথবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে হোক।তবে তাদের সাথে আপনি দেখা দিতে পারবেন এবং তাদেরকে সাথে নিয়ে সফর করতে পারবেন। মাহরাম ব্যতীত অন্য সকল পুরুষদের সাথে দেখা করা অথবা তাদেরকে সাথে নিয়ে সফর করা মুসলিম নারীদের জন্য সম্পূর্ণ হারাম [লিসানুল আরব খ:৩, পৃ:১৩৯,] তিন ধরনের সম্পর্কের কারণে মাহরাম সাব্যস্ত হয়।

১। রক্তের সম্পর্কের কারণে।
২। দুধ পানের কারনে।
৩। বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে

এক নজরে মহিলাদের জন্য ১৪ জন মাহরাম পুরুষ:

বাবার মত পাঁচ জন

(১) নিজের বাবা
(২) দুধ বাবা
(৩) চাচা
(৪) মামা
(৫) শশুর

ভাইয়ের মত পাঁচ জন

(১) আপন ভাই
(২) দুধ ভাই
(৩) দাদা
(৪) নানা
(৫) নাতী

ছেলের মত চার জন

(১) নিজের ছেলে
(২) ভাইয়ের ছেলে
(৩)বোনের ছেলে
(৪) মেয়ের জামাই

সাথে যৌন কামনাহীন পুরুষ এবং নারীর গোপনাঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ শিশু [বিস্তারিত দেখুন সূরা নূর ২৪:৩১]

এবার এক নজরে নারীদের জন্য গায়ের মাহরাম পুরুষদের তালিকা যাদেরকে অনেক সময় ভুলে মাহারাম মনে করে হয়।আসলে তারা নন মাহারাম:

  • মায়ের খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুপাতো ভাই
  • বাবার খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুপাতো ভাই
  • নিজের চাচাতো ভাই ,দুলাভাই
  • ফুপুর স্বামী [ফুপা] ,ফুপাতো ভাই খালাতো ভাই মামাতো ভাই
  • ননদের ছেলে ,শ্বশুর/শাশুড়ির ভাই দেবর/ভাসুর ,ননদের স্বামী
  • স্বামীর খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুপাতো ভাই
  • স্বামীর দুলাভাই ,ছেলের শ্যালক, ছেলে/মেয়ের শ্বশুর ,খালার স্বামী অর্থাৎ [খালু] ইত্যাদি উপরোক্ত সবাই নন মাহারাম।

এবার পুরুষদের জন্যেও ১৪ জন মাহরাম নারী, যাদেরকে বিয়ে করা পুরুষদের জন্য হারাম।

মায়ের মত পাঁচ জন

(১) নিজের মা
(২) দুধ মা
(৩) খালা
(৪) ফুফু
(৫) শাশুড়ী

বোনের মত পাঁচ জন

(১) আপন বোন
(২) দুধ বোন
(৩)আপন দাদী
(৪)আপন নানী
(৫) আপন নাতনী

মেয়ের মত চার জন

(১) নিজের মেয়ে
(২) ভাইয়ের মেয়ে
(৩)বোনের মেয়ে
(৪) পুত্রবধু [বিস্তারিত দেখুন সূরা নিসা: ৪/২৩]

এবার এক নজরে পুরুষদের জন্য গায়ের মাহরামের তালিকা যাদেরকে অনেক সময় ভুলে মাহারাম মনা করে হয়।আসলে নন মাহারাম
  • মায়ের খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুফাতো বোন চাচাতো বোন,
  • বাবার খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুফাতো বোন,
  • ভাবী, চাচী, মামী,
  • ফুফাতো বোন খালাতো বোন মামাতো বোন
  • শ্যালক/শ্যালিকার মেয়ে ,শ্বশুর/শাশুড়ির বোন ,শ্যালিকা, স্ত্রীর খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুফাতো বোন, স্ত্রীর ভাবী ,মেয়ের ননদ, ছেলে/মেয়ের শাশুড়ি, ইত্যাদি উপরোক্ত সবাই নন মাহারাম।

উপরোক্ত মাহারাম নারী পুরুষ ছাড়া বাকিদের সাথে দেখা করা তো দুরের কথা, অযথা বিনা প্রয়োজনে কথাবার্তা বলাও নিষিদ্ধ। চাই তা সরাসরি হোক অথবা মোবাইল ফোনে হোক।তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করো তবে বাক্যালাপে কোমলতা অবলম্বন করো না যাতে দুষ্ট মনের কোন ব্যাক্তি লালসা করতে পারে; বরং সোজা ও স্পষ্ট কথা বলো। [সূরা আহযাব৩৩:৩২]।

আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! তুমি মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। আর এটাই তাদের জন্য উত্তম। বস্ত্ততপক্ষে তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবহিত’ [সূরা নূর ৩০]।

নিতি আরো বলেন,আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তবে যা সাধারণত প্রকাশ হয়ে থাকে। আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে [সূরা নূর:৩১]।

রাসূল সাঃ বলেছেন, তোমাদের কারো মাথায় যদি লোহার সুঁচ দিয়ে আঘাত করা হয় তবে সেই আঘাত এর যন্ত্রণা তার জন্য উত্তম এমন কোনো মহিলা কে স্পর্শ করা থেকে যাকে স্পর্শ করা তার জন্য জায়েজ নেই। [অর্থাৎ গায়ের মাহরাম মহিলা] [ হাদিস টি সহিহ, তাবারানী, ২০ /২১২, সহীহ আল-জামী, ৪৯২১]।

বুরায়দা [রাঃ] হ’তে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ [ছাঃ] হযরত আলী [রাঃ] কে বলেন, ‘হে আলী! তুমি দৃষ্টির উপর দৃষ্টি ফেলো না। হঠাৎ যে দৃষ্টি পড়ে ওটা তোমার জন্য ক্ষমা। কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্য বৈধ নয়’ [আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, দারেমী, মিশকাত হা/৩১১০]।

মাহরামের সামনে পর্দার ক্ষেত্রে মহিলার জন্য কী কী ছাড় রয়েছে?

মাহরাম পুরুষের সামনে একজন নারী পূর্ণ পর্দা না করে বরং স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে’ [সূরা আন-নূর, ৩১]।

এখানে ‘সৌন্দর্য’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সুরমা, মিসওয়াক ও মেহেদী [তাফসীরে ফাতহুল কাদীর, সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসীর]। তাফসীরে ইবনু কাছীরে বলা হয়েছে- ‘সৌন্দর্য’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কানের দুল, বাজুবন্ধ বা চুড়ি, নুপুর ও গলার হার। [তাফসীরে ইবনু কাছীর]। তাই মাহরামের সামনে নারী মাথা, চুল, মুখ, হাত ও পা প্রকাশ করে রাখতে পারে। মাহরাম সাথে না থাকলে কোনো মহিলার জন্য হজ্জে যাওয়া নিষিদ্ধ [ছহীহ বুখারী, হা/১৮৮৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৩৮]।

হজ্জে গিয়ে ইহরাম অবস্থায় নারীদের জন্য মুখ ঢেকে রাখা ও হাতমোজা পরা যাবে না [ছহীহ বুখারী, হা/১৮৩৮; মিশকাত, ২৬৭৮)।

তবে পরপুরুষের সামনে পড়লে মাথার কাপড়টি মুখের উপর টেনে দেওয়া যাবে [ইরওয়াউল গালীল, হা/১০২৩; মিশকাত, হা/২৬৯০]।

মহিলাদের মুখমণ্ডল কি পর্দার অন্তর্ভুক্ত?

এ ব্যাপারে সঠিক এবং বিশুদ্ধ কথা হল, মহিলাদের মুখমণ্ডল পর্দার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তা পরপুরুষদের সামনে ঢাকা ফরজ। এ মর্মে কয়েকটি দলীল নিন্মরূপ:

নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয় এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সূরা আহযাব:৫৯]।

উল্লেখিত আয়াতের جلابيب শব্দটি جلباب এর বহুবচন। জিলবাব’ অর্থ বড় চাদর, যা দ্বারা মুখমণ্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করা যায়। [কুরতুবী, আল-জামে‘ লিআহকামিল কুরআন : ১৪/২৪৩]।

এই চাদরের আকার-আকৃতি সম্পর্কে হযরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: এই চাদর ওড়নার উপরে পরিধান করা হয়। ইবনে কাসীরা ইমাম মুহাম্মদ ইবন সিরীন বলেন: আমি আবীদা আস-সালমানীকে এই আয়াতের উদ্দেশ্য এবং জিলবাবের আকার-আকৃতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি মস্তকের উপর দিক থেকে চাদর মুখমণ্ডলের উপর লটকিয়ে মুখমণ্ডল ঢেকে ফেললেন এবং কেবল বামচক্ষু খোলা রেখে إدناء ও جلباب এর তাফসীর বিশুদ্ধ।

আল্লামা আবু বকর জাসসাস বলেন, “এ আয়াতটি প্রমাণ করে, যুবতী মেয়েদের চেহারা অপরিচিত পুরুষদের থেকে লুকিয়ে রাখার হুকুম দেয়া হয়েছে। এই সাথে ঘর থেকে বের হবার সময় তাদের ‘পবিত্রতাসম্পন্না’ হবার কথা প্ৰকাশ করা উচিত। এর ফলে সন্দেহযুক্ত চরিত্র ও কর্মের অধিকারী লোকেরা তাদেরকে দেখে কোন প্রকার লোভ ও লালসার শিকার হবে না।” [আহকামুল কুরআন, ৩/৪৫৮]।

যামাখ্‌শারী বলেন, “তারা যেন নিজেদের ওপর নিজেদের চাদরের একটি অংশ লটকে নেয় এবং তার সাহায্যে নিজেদের চেহারা ও প্রান্তভাগগুলো ভালোভাবে ঢেকে নেয়।’ [আল-কাশ্‌শাফ, ২/২২১]।

আল্লামা নিযামুদ্দীন নিশাপুরী বলেন, ‘নিজেদের ওপর চাদরের একটি অংশ লটকে দেয়। এভাবে মেয়েদেরকে মাথা ও চেহারা ঢাকার হুকুম দেয়া হয়েছে।’ [গারায়েবুল কুরআন, ২২/৩২]।

ইবনে জারীর তাবারী বলেন, ‘ভদ্র ঘরের মেয়েরা যেন নিজেদের পোশাক আশাককে বাঁদীদের মতো সেজে ঘর থেকে বের না হয়। তাদের চেহারা ও কেশদাম যেন খোলা না থাকে। বরং তাদের নিজেদের ওপর চাদরের একটি অংশ লটকে দেয়া উচিত। ফলে কোন ফাসেক তাদেরকে উত্যক্ত করার দুঃসাহস করবে না।’ [জামেউল বায়ান, ২২/৩৩]। আল্লাহু আলাম।



উত্তর প্রধানে
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।​
 
Last edited by a moderator:
Top