‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

লেনদেন ও ব্যবসা মানব জীবনে সূদের ক্ষতিকর প্রভাব

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
688
Comments
1,217
Solutions
17
Reactions
6,634
Credits
5,445
ইসলামে সূদ হারাম। কুরআন ও হাদীস দ্বারা এটা প্রমাণিত। এই বিষয়টি জানার পরেও মানুষ সূদ খায়। সূদী লেনদেন করে। দুনিয়া ও আখিরাতে এর পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। এ সম্পর্কেই আলোচ্য নিবন্ধে আলোচনা করা হ’ল।-

সূদের পরিচয় ও প্রকার :

‘রিবা’ অর্থ সূদ। ‘রিবা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ অতিরিক্ত, বর্ধিত। মূলধনের অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করাকে সূদ বলে। মোটকথা বাকীতে কিংবা নগদে সমজাতীয় পণ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে মূল পণ্যের অতিরিক্ত যা কিছু গ্রহণ করা হয়, তাকে ইসলামী শরী‘আতে সূদ বলা হয়। যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,اَلذَّهَبُ بِالذَّهَبِ وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ وَالشَّعِيْرُ بِالشَّعِيْرِ وَالتَّمْرُ بِالتَّمْرِ وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ مِثْلاً بِمِثْلٍ يَدًا بِيَدٍ فَمَنْ زَادَ أَوِ اسْتَزَادَ فَقَدْ أَرْبَى الآخِذُ وَالْمُعْطِى فِيْهِ سَوَاءٌ- ‘স্বর্ণের বদলে স্বর্ণ, রৌপ্যের বদলে রৌপ্য, গমের বদলে গম, যবের বদলে যব, খেজুরের বদলে খেজুর, লবণের বদলে লবণ সমান সমান হাতে হাতে নিবে। অতঃপর যে ব্যক্তি তাতে বেশী দিল বা বেশী চাইল, সে সূদে পতিত হ’ল। গ্রহীতা ও দাতা উভয়ে সমান’।[1]

সূদ দুই প্রকার। যথা- রিবা আল-ফাযল ও রিবা আন-নাসীআহ। নগদে বেশী নিলে সেটা হবে রিবা আল-ফাযল। আর বাকীতে বেশী নিলে সেটা হবে রিবা আন-নাসীআহ। দু’টিই সূদ এবং দু’টিই নিষিদ্ধ। যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, الرِّبَا فِى النَّسِيئَةِ ‘সূদ হ’ল বাকীতে’।[2] তবে নগদে হ’লে সেটা সূদ হবে না। রাসূল (ﷺ) বলেন,لاَ رِبًا فِيْمَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ ‘হাতে হাতে নগদ লেনদেনে কোন সূদ নেই’।[3] আবার বিনিময়ের ক্ষেত্রে পণ্যের ভিন্নতা থাকলেও সেটা সূদ হবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,...فَإِذَا اخْتَلَفَتْ هَذِهِ الأَصْنَافُ فَبِيْعُوْا كَيْفَ شِئْتُمْ إِذَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ. ‘যখন দ্রব্য ভিন্ন হবে, তখন তোমরা যেভাবে খুশী ক্রয়-বিক্রয় কর, যখন তা হাতে হাতে নগদে হবে’।[4]

একই জাতীয় পণ্য বিনিময়ে কম-বেশী যেহেতু বৈধ নয়, সেহেতু কেউ নিজের কাছে থাকা নিম্ন মানের জিনিস পরিবর্তন করে উন্নত মানের জিনিস নিতে চাইলে কি করবে এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, আবূ সাঈদ ও আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খায়বার এলাকায় এক ব্যক্তিকে চাকুরী দিলেন। ঐ ব্যক্তি সেখান থেকে বেশ ভালো খেজুর নিয়ে আসল। রাসূল (ﷺ) তা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, খায়বারের সব খেজুরই কি এমন ভালো হয়? ঐ ব্যক্তি বলল, জি না, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা এক ছা‘ এরূপ খেজুর দুই ছা‘ (খারাপ) খেজুরের বিনিময়ে গ্রহণ করে থাকি। অথবা ভালো দুই ছা‘ খারাপ তিন ছা‘র বিনিময়ে গ্রহণ করে থাকি। এ কথা শুনে তিনি বললেন, এভাবে বিনিময় করো না। বরং খারাপ খেজুর (দুই বা তিন ছা‘) মুদ্রার বিনিময়ে বিক্রি করে ঐ মুদ্রা দিয়ে ভালো খেজুর কিনে নাও’।[5]

সূদ হারাম হওয়ার দলীল :

ইসলামী শরী‘আতে সূদ সম্পূর্ণরূপে হারাম। কুরআন ও হাদীসে এ সম্পর্কেও বিভিন্ন দলীল উপস্থাপিত হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-

আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ الرِّبَا أَضْعَافاً مُّضَاعَفَةً وَاتَّقُواْ اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে সূদ খেয়ো না। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তাতে তোমরা অবশ্যই সফলকাম হবে’ (আলে ইমরান ৩/১৩০)। তিনি আরো বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوا اللهَ وَذَرُوْا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِيْنَ- ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সূদের পাওনা যা বাকী রয়েছে, তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা সত্যিকারের মুমিন হয়ে থাক’ (বাক্বারাহ ২/২৭৮)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,دِرْهَمُ رِبا يَأْكُلُهُ الرَّجُلُ وَهُوَ يَعْلَمُ أَشَدُّ مِنْ سِتَّةٍ وَثَلاَثِيْنَ زَنْيَةً ‘সূদের একটি মাত্র দিরহাম যদি কেউ জেনেশুনে ভক্ষণ করে তাহ’লে তা হবে ছত্রিশবার ব্যভিচার করার চাইতেও জঘন্য’।[6] তিনি আরো বলেন,الرِّبَا سَبْعُونَ حُوبًا أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكَحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ ‘সূদের পাপের ৭০টি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হচ্ছে কোন ব্যক্তির নিজ মাতাকে বিবাহ করা’।[7] অর্থাৎ তার সাথে ব্যভিচার করা।

সূদের নাম পরিবর্তন করে মুনাফা, Interest প্রভৃতি যাই রাখা হোক না কেন সেটা জায়েয হয়ে যাবে না। অনুরূপভাবে সূদ গ্রহণের পদ্ধতি পরিবর্তন করলেও তা বৈধ হয়ে যাবে না। বরং সূদ যেটা, সেটা সূদই থাকবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রচলিত সূদী প্রথার অধিকাংশই জাহেলী যুগে চালু ছিল।

ইহুদীরা সূদ ও হারাম ভক্ষণের কারণে অভিশপ্ত (নিসা ৪/১৬১; মায়েদাহ ৫/৬২)। আর তারা অত্যন্ত নিকৃষ্ট কাজ করত। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের অধিকারী ইহুদীরা সূদ খাওয়ার বিভিন্ন কৌশল ও পন্থা অবলম্বন করত। এ বিষয়ে তারা দক্ষ ও অভিজ্ঞ ছিল। যেমন বর্তমানেও সূদী অর্থ ব্যবস্থা ইহুদীদের মাধ্যমে সর্বত্র বিরাজিত। সূদের যত পথ ও পন্থা আছে এগুলো তাদের উদ্ভাবিত। পৃথিবীর অর্থ ব্যবস্থা তাদের হাতের মুঠোয়। মুসলিম দেশগুলোকেও তাদের ষড়যন্ত্রের জালে আটকে ফেলার ও কবযায় ফেলার চেষ্টায় তৎপর।

জাহেলী যুগে সূদের প্রকৃতি :

জাহেলী যুগে আরবের লোকেরা বিভিন্নভাবে সূদ খেত। তাদের সূদ খাওয়ার পদ্ধতি নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-

১. ঋণের উপরে সূদ : কোন লোক অন্যের নিকটে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণ দিয়ে মেয়াদ পূর্ণ হয়ে গেলে গ্রহীতা জিনিস ফেরৎ দিতে না পারলে দাতা মেয়াদ বৃদ্ধি করে দিয়ে অতিরিক্ত আদায় করত। কখনও গ্রহীতা বলতো যে, তুমি মেয়াদ বাড়িয়ে দাও আমি তোমাকে মূলের চেয়ে বেশী দিব।

২. করযে হাসানার উপরে সূদ : কেউ অপরকে এ শর্তে করয দিত যে, মেয়াদ বৃদ্ধি পেলে বেশী দিতে হবে। যেমন একমাস পর ১০ টাকা এবং দুই মাস পরে ১৫ টাকা বেশী দিতে হবে। আর মূলধন ঠিকই থাকবে। সূদের উপরোক্ত উভয় পদ্ধতি ‘রিয়া নাসীআহ’ নামে খ্যাত। যার ক্ষতি থেকে বাঁচানোর জন্য রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘বাকীতেই সূদ’।[8]

৩. রিবা আল-ফাযল : একই বস্ত্তর বিনিময়ে বেশী গ্রহণ করাকে ‘রিবা আল-ফযল’ বা অধিক গ্রহণের সূদ বলা হয়। যা নিম্নের হাদীসে স্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে। রাসূল (ﷺ) বলেন, الذَّهَبُ بِالذَّهَبِ وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ وَالشَّعِيْرُ بِالشَّعِيْرِ وَالتَّمْرُ بِالتَّمْرِ وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ مِثْلاً بِمِثْلٍ سَوَاءً بِسَوَاءٍ يَدًا بِيَدٍ فَإِذَا اخْتَلَفَتْ هَذِهِ الأَصْنَافُ فَبِيْعُوْا كَيْفَ شِئْتُمْ إِذَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ- ‘স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রূপার বিনিময়ে রূপা, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর, লবণের বিনিময়ে লবণ ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে উভয় বস্ত্ত সমান সমান ও হাতে হাতে হ’তে হবে। অবশ্য যখন উভয় শ্রেণী বা জাত বিভিন্ন হবে তখন তোমরা তা যেভাবে (কম-বেশী করে) ইচ্ছা বিক্রয় কর। তবে শর্ত হ’ল, তা যেন হাতে হাতে নগদে হয়’।[9]

জাহেলী যুগে যেমন সূদের প্রসার ঘটেছিল বর্তমানেও তেমনি সূদ ব্যপকতা লাভ করেছে। এর ভয়াবহতা থেকে জাতিকে সতর্ক করা যরূরী।

মানবজীবনে সূদের ক্ষতিকর দিক সমূহ :

সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য সূদ একটি মারাত্মক অভিশাপ। সূদের কারণে পারস্পরিক সহানুভূতি দূর হয়ে জন্ম নেয় সীমাহীন অর্থলিপ্সা ও স্বার্থপরতা। অতিরিক্ত লোভ-লালসার কারণে সূদী কারবারীরা মানুষের জান-মাল ও ইয্যত নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। সূদের কারণে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ জনগণ। সূদের ইহকালীন ক্ষতি যেমন রয়েছে তেমনি পরকালীন ক্ষতিও রয়েছে। সুতরাং সূদের ক্ষতিকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা- পার্থিব জীবনের ক্ষতি ও পরকালীন জীবনের ক্ষতি।

পার্থিব জীবনের ক্ষতি :

১. দুনিয়াবী জীবনে নিঃস্বতা :
সূদের মাধ্যমে বাহ্যত প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও তার পরিণাম নিঃস্বতা। আল্লাহ বলেন, يَمْحَقُ اللهُ الْرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ ‘আল্লাহ সূদকে সংকুচিত করেন ও ছাদাক্বাকে প্রবৃদ্ধি দান করেন’ (বাক্বারাহ ২/২৭৬)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,إِنَّ الرِّبَا وَإِنْ كَثُرَ فَإِنَّ عَاقِبَتَهُ تَصِيْرُ إِلَى قُلٍّ ‘সূদ যতই বৃদ্ধি পাক, এর পরিণতি হ’ল নিঃস্বতা’।[10]

২. সূদী লেনদেনে আল্লাহ ও রাসূলের নাফরমানী : সূদ খেতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নিষেধ করেছেন। তারপরেও সূদ খেলে তা হবে তাঁদের অবাধ্যতা। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতার শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يَعْصِ اللهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِيْنٌ- ‘পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর সীমাসমূহ লংঘন করবে, তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে চিরদিন থাকবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি’ (নিসা ৪/১৪)

৩. সূদ খাওয়া আল্লাহ ও রাসূলের সাথে যুদ্ধের শামিল : সূদ খাওয়াকে আল্লাহ তাঁর বিরুদ্ধে ও রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শামিল বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُواْ اتَّقُوْا اللهَ وَذَرُوْا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُم مُّؤْمِنِيْنَ، فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوْا فَأْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللهِ وَرَسُوْلِهِ وَإِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُؤُوْسُ أَمْوَالِكُمْ لاَ تَظْلِمُوْنَ وَلاَ تُظْلَمُوْنَ- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সূদের বাকী পাওনা ছেড়ে দাও যদি তোমরা মুমিন হও’। ‘কিন্তু যদি তোমরা তা না কর, তাহ’লে তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা কর। অতঃপর যদি তোমরা তওবা কর, তাহ’লে তোমরা (সূদ ব্যতীত) কেবল আসলটুকু পাবে। তোমরা অত্যাচার করো না এবং অত্যাচারিত হয়ো না’ (বাক্বারাহ ২/২৭৮-৭৯)

৪. সূদ খাওয়া অভিশাপের কারণ : সূদের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের উপরে রাসূল (ﷺ) অভিশাপ করেছেন। জাবের (রাঃ) বলেন,لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم آكِلَ الرِّبَا وَمُوْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ. ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সূদ ভক্ষণকারী, সুদদাতা, সূদের লেখক ও সাক্ষীদ্বয়কে অভিসম্পাত করেছেন’।[11]

৫. সূদ খাওয়া ধ্বংস ও বিনাশ হওয়ার কারণ : হাদীসে বর্ণিত ধ্বংসাত্মক বিষয়গুলির অন্যতম হচ্ছে সূদ খাওয়া। রাসূল (ﷺ) বলেন,اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوْبِقَاتِ. قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِى حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ، وَالتَّوَلِّى يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ ‘সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা (২) যাদু (৩) আল্লাহ তা‘আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরী‘আত সম্মত কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা (৪) সূদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল স্বভাবা সতী-সাধ্বী মুমিনাদের অপবাদ দেয়া’।[12]

পরকালীন জীবনের ক্ষতি :

১. সূদ আল্লাহর আযাবকে অবধারিত করে :
সূদ খেলে আল্লাহর আযাব বা শাস্তি অবধারিত হয়ে যায়। রাসূল (ﷺ) বলেন,إِذَا ظَهَرَ الزِّنَا وَالرِّبَا فِي قَرْيَةٍ، فَقَدْ أَحَلُّوا بِأَنْفُسِهِمْ عَذَابَ اللهِ ‘যখন কোন জনপদে ব্যভিচার ও সূদ ব্যাপকতা লাভ করে তখন সেখানকার বাসিন্দারা নিজেদের জন্য আল্লাহর আযাব বৈধ (অবধারিত) করে নেয়’।[13]

২. কবরে আযাব হবে : বারযাখী জীবনে বা কবরে সূদের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া হবে, যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। রাসূল (ﷺ)-কে ফেরেশতাদ্বয় বললেন, ‘আর ঐ ব্যক্তি যাকে (রক্তের) নহরে দেখেছেন, সে হ’ল সুদখোর’।[14]

৩. সূদখোর ব্যক্তি কিয়ামতের দিন শয়তানের আছর করা রোগীর ন্যায় দাঁড়াবে : আল্লাহ বলেন,الَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ الرِّبَا لاَ يَقُوْمُوْنَ إِلاَّ كَمَا يَقُوْمُ الَّذِيْ يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوْا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَنْ جَاءهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىَ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللهِ وَمَنْ عَادَ فَأُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ- ‘যারা সূদ খায় তারা (ক্বিয়ামতের দিন) শয়তানের স্পর্শে আবিষ্ট রোগীর মত দন্ডায়মান হবে। এটা এজন্য যে, তারা বলে, ব্যবসা তো সূদের মতই। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সূদকে হারাম করেছেন। অতএব যার নিকট তার পালনকর্তার পক্ষ হ’তে উপদেশ পৌঁছে যায়, অতঃপর সে বিরত হয়, তার জন্য রয়েছে ক্ষমা, যা সে পূর্বে করেছে। আর তার (তওবা কবুলের) বিষয়টি আল্লাহর উপর ন্যস্ত। কিন্তু যে ব্যক্তি পুনরায় (সূদী কাজে) ফিরে আসবে, সে হবে জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’ (বাক্বারাহ ২/২৭৫)

৪. সূদখোরের ইবাদত কবুল হয় না : ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য উপার্জন হালাল হওয়া যরূরী। সূদখোরের উপার্জন যেহেতু হালাল নয়, তাই তার ইবাদতও কবুল হয় না। রাসূল (ﷺ) বলেন, إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا ‘আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র। তিনি পবিত্র জিনিস ব্যতীত কিছু কুবুল করেন না’।[15]

৪. সূদখোরের পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম : সূদখোর পরকালীন জীবনে জাহান্নামের অধিবাসী হবে। রাসূল (ﷺ) বলেন,إنَّهُ لاَ يَرْبُوْ لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ إلاَّ كَانَتِ النَّارُ أوْلَى َبِهِ ‘অবৈধ খাদ্যে যে গোশত বৃদ্ধি পায় জাহান্নামই তার জন্য উত্তম বাসস্থান’।[16]

উপসংহার :

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, সূদের পার্থিব ও পরকালীন ক্ষতি থেকে সর্বতোভাবে বেঁচে থাকতে জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা মুমিনের জন্য অবশ্য কর্তব্য। এজন্য আল্লাহর কাছেও দো‘আ করতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে সূদ খাওয়া থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দিন- আমীন!



ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম​

[1]. মুসলিম হা/১৫৮৪, মিশকাত হা/২৮০৯।
[2]. মুসলিম হা/১৫৯৬; মিশকাত হা/২৮২৪, ‘সূদ’ অনুচ্ছেদ।
[3]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৮২৪।
[4]. মুসলিম হা/১৫৮৭।
[5]. মুসলিম হা/১৫৯৪, ‘সমপরিমাণ খাদ্য বিনিময় সংক্রান্ত’ অধ্যায়।
[6]. বুখারী হা/২৭৬৬;মুসলিম হা/৮৯।
[7]. ইবনু মাজাহ হা/২২৭৪; মিশকাত হা/২৮২৬, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫৪১।
[8]. মুসলিম হা/১৫৯৬; মিশকাত হা/২৮২৪, ‘সূদ’ অনুচ্ছেদ।
[9]. মুসলিম হা/৪১৪৭; মিশকাত হা/২৮০৮।
[10]. আহমাদ হা/৩৭৫৪, ইবনু মাজাহ হা/২২৭৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৫১৮; মিশকাত হা/২৮২৭। ১৮ মুসলিম হা/ ৯৮৭; মিশকাত হা/১৭৭৩।
[12]. বুখারী হা/৫৭৬৪, ৬৮৫৭; মুসলিম হা/৮৯; মিশকাত হা/৫২।
[13]. হাকেম হা/২২৬১; ত্বাবারাণী হা/৪৬০; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭৯।
[14]. বুখারী, হা/১৩৮৬, ১০৭৫।
[15]. মুসলিম হা/১০১৫; তিরমিযী হা/২৯৮৯; মিশকাত হা/২৭৬০।
[16]. তিরমিযী হা/৬১৪, সনদ হাসান।
 
COMMENTS ARE BELOW

Share this page