Joynal Bin Tofajjal

মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ - (১০)

Joynal Bin Tofajjal

Student Of Knowledge

Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
LV
16
 
Awards
30
Credit
4,582

মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ - (১০)​

-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম


আক্বীদা-৬ : আল্লাহর ক্রোধ, সন্তুষ্টি, আনন্দ, লজ্জা, হাসি, আশ্চর্য হওয়া, রহমত এবং অন্যান্য গুণ অস্বীকার করা।

মাতুরীদীরা আল্লাহর জন্য ক্রোধান্বিত হওয়া, সন্তুষ্ট হওয়া, আনন্দ, লজ্জা, হাসি, আশ্চর্য হওয়া, রহমত, অভিশাপ করা, প্রতিশোধ নেয়া, অপছন্দ করা, ঘৃণা করা এবং অন্যান্য গুণকে অস্বীকার করে। তারা বলে, وأنه تعالى لا يوصف بالأعراض المحسوسة والكيفيات النفسانية ‘আল্লাহর জন্য ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য প্রদর্শনী গুণ এবং আত্মিক আকৃতি বর্ণনা করা যাবে না’।[১]

পর্যালোচনা

আল-কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ থেকে আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত, ত্রেুাধান্বিত হওয়া, সন্তুষ্ট হওয়া, অভিশাপ করা, প্রতিশোধ নেয়া, অপছন্দ করা, ঘৃণা করা প্রমাণিত। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বড়ত্ব ও সম্মানের জন্য শোভনীয় পদ্ধতিতে এগুলোকে নিজের জন্য সাব্যস্ত করেছেন। এই বিশেষণগুলো আল্লাহ তা‘আলা যখন ইচ্ছা এবং যেভাবে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে এগুলো বিশেষণ সৃষ্টির সাথে তুলনীয় নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَیۡسَ کَمِثۡلِہٖ شَیۡءٌ ۚ وَ ہُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ ‘তাঁর সদৃশ কোন কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’ (সূরা আশ-শুরা : ১১)। মহান আল্লাহ নিজের জন্য যেগুণগুলো বর্ণনা করেছেন। নিম্নে দলীল সহ উপস্থাপন করা হল,

আল্লাহর সন্তষ্টি

মহান আল্লাহ এককত্বের স্বীকৃতি প্রদানকারী ও সত্যবাদীদের উপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।[২] এ কারণে তিনি মুমিনদেরকে সত্যবাদীদের সাথী হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ وَ کُوۡنُوۡا مَعَ الصّٰدِقِیۡنَ ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং (কথায়-কাজে) সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো’ (সূরা আত-তাওবা : ১১৯)। মহান আল্লাহ যাদের জন্য সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন যেমন,

১. ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর সাথীদের প্রতি মহান আল্লাহ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,رَضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡہُ ؕ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ‘আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে; এটাই হচ্ছে মহা সফলতা’ (সূরা আল-মায়িদা : ১১৯)।

উপরিউক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ এককত্বের স্বীকৃতি প্রদানকারী ও সত্যবাদীদের উপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।[৩] আর সত্যবাদী তারাই যারা সঠিক পথ, সত্য পথ, ছিরাতে মুস্তাক্বিমের উপর অটল থাকে এবং তাদের আমল ও কথার উপর অবিচল থাকে। ক্বিয়ামতের দিন তাদের জন্য রয়েছে অগণিত পুরষ্কার।[৪] মহান আল্লাহ বলেন,

قَالَ اللّٰہُ ہٰذَا یَوۡمُ یَنۡفَعُ الصّٰدِقِیۡنَ صِدۡقُہُمۡ ؕ لَہُمۡ جَنّٰتٌ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَاۤ اَبَدًا ؕ رَضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡہُ ؕ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ

‘(ক্বিয়ামতের দিন) মহান আল্লাহ বলবেন, এটা সেদিন, যেদিন সত্যবাদীদের সত্যবাদিতা কাজে আসবে, তারা জান্নাত প্রাপ্ত হবে, যার তলদেশে নহরসমূহ বইতে থাকবে, সেখানে তারা চিরস্থায়ী থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে; এটাই হচ্ছে মহা সফলতা’ (সূরা আল-মায়িদা : ১১৯)।

২. মুহাজির ও আনছার ছাহাবীদের প্রতি এবং যেসব লোক একান্ত নিষ্ঠার সাথে তাঁদেরকে অনুসরণ করবে, তাদের প্রতিও মহান আল্লাহ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,

لَقَدۡ رَضِیَ اللّٰہُ عَنِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اِذۡ یُبَایِعُوۡنَکَ تَحۡتَ الشَّجَرَۃِ فَعَلِمَ مَا فِیۡ قُلُوۡبِہِمۡ فَاَنۡزَلَ السَّکِیۡنَۃَ عَلَیۡہِمۡ وَ اَثَابَہُمۡ فَتۡحًا قَرِیۡبًا

‘আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা বৃক্ষতলে আপনার নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেছেন, তিনি তাদের অন্তরে যা ছিল তা অবগত হলেন তাই তাদেরকে তিনি দান করলেন প্রশান্তি এবং তাদেরকে বিনিময় দিলেন আসন্ন বিজয়’ (সূরা আল-ফাতহ : ১৮)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَالسّٰبِقُوۡنَ الۡاَوَّلُوۡنَ مِنَ الۡمُہٰجِرِیۡنَ وَالۡاَنۡصَارِ وَالَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡہُمۡ بِاِحۡسَانٍ ۙ رَّضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡہُ وَ اَعَدَّ لَہُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ تَحۡتَہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَاۤ اَبَدًا ؕ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ

‘আর যেসব মুহাজির ও আনছার (ঈমান আনয়নে) অগ্রবর্তী এবং প্রথম, আর যেসব লোক একান্ত নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুগামী, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, আর আল্লাহ তাদের জন্য এমন উদ্যানসমূহ প্রস্তুত করে রেখেছেন যার তলদেশে নহরসমূহ বইতে থাকবে, যার মধ্যে তারা চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে, তা হচ্ছে বিরাট কৃতকার্যতা’ (সূরা আত-তাওবা : ১০০)।

৩. মহান আল্লাহ ঐ সকল ছাহাবীদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, যারা মহান আল্লাহ এবং রাসূল (ﷺ)-এর ভালোবাসার জন্য নিজের মুশরিক পিতা, পুত্র, ভ্রাতা এবং জ্ঞাতি-গোত্রকে পরিত্যাগ করেছেন এবং যুদ্ধের ময়দানে তাদেরকে হত্যাও করেছেন।[৫] যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

لَا تَجِدُ قَوۡمًا یُّؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ یُوَآدُّوۡنَ مَنۡ حَآدَّ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ وَ لَوۡ کَانُوۡۤا اٰبَآءَہُمۡ اَوۡ اَبۡنَآءَہُمۡ اَوۡ اِخۡوَانَہُمۡ اَوۡ عَشِیۡرَتَہُمۡ ؕ اُولٰٓئِکَ کَتَبَ فِیۡ قُلُوۡبِہِمُ الۡاِیۡمَانَ وَ اَیَّدَہُمۡ بِرُوۡحٍ مِّنۡہُ ؕ وَ یُدۡخِلُہُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا ؕ رَضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡہُ ؕ اُولٰٓئِکَ حِزۡبُ اللّٰہِ ؕ اَلَاۤ اِنَّ حِزۡبَ اللّٰہِ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ

‘আপনি পাবেন না আল্লাহ ও আখিরাতের বিশ্বাসী এমন কোন সম্প্রদায়; যারা ভালোবাসে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর বিরুদ্ধাচারীদেরকে, হোক না এই বিরুদ্ধাচারীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা তাদের জ্ঞাতি-গোত্র। তাদের অন্তরে আল্লাহ সুদৃঢ় করেছেন ঈমান এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর পক্ষ থেকে এক রূহ দ্বারা। তিনি তাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত; সেখানে তারা স্থায়ী হবে; আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট, তারাই আল্লাহর দল। জেনে রেখো যে, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে’ (সূরা আল-হাশর : ২২)।

৪. মহান আল্লাহ ঈমানদার ও সৎআমলকারীদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ ۙ اُولٰٓئِکَ ہُمۡ خَیۡرُ الۡبَرِیَّۃِ . جَزَآؤُہُمۡ عِنۡدَ رَبِّہِمۡ جَنّٰتُ عَدۡنٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَاۤ اَبَدًا ؕ رَضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡہُ ؕ ذٰلِکَ لِمَنۡ خَشِیَ رَبَّہٗ

‘যারা ঈমান আনে ও সৎআমল করে, তারাই সৃষ্টির সর্বোৎকৃষ্ট। তাদের প্রতিপালকের নিকট আছে তাদের পুরস্কার স্থায়ী জান্নাত, যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে; আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর উপর সন্তুষ্ট; এটা তার জন্য যে তার প্রকিপালককে ভয় করে’ (সূরা আল-বাইয়্যিনাহ : ৭-৮)।

৫. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ছাহাবীগণ আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করতেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

لِلۡفُقَرَآءِ الۡمُہٰجِرِیۡنَ الَّذِیۡنَ اُخۡرِجُوۡا مِنۡ دِیَارِہِمۡ وَ اَمۡوَالِہِمۡ یَبۡتَغُوۡنَ فَضۡلًا مِّنَ اللّٰہِ وَ رِضۡوَانًا وَّ یَنۡصُرُوۡنَ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ ؕ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الصّٰدِقُوۡنَ

‘(এ সম্প্রদায়) অভাবগ্রস্ত মুহাজিরদের জন্য যারা নিজেদের ঘরবাড়ী ও সম্পত্তি হতে বহিস্কৃত হয়েছে। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর সাহায্য করে। তারাই তো সত্যবাদী’ (সূরা আল-হাশর : ৮)।

অনুরূপভাবে আল্লাহ অসন্তুষ্টিও হোন। যারা কুফর, ফিসক্ব (পাপাচার) এবং অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়, মহান আল্লাহ তাদের প্রতি অস্তুষ্টি প্রকাশ করেন। আর আল্লাহর অস্তুষ্টির কারণে তারা শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।[৬] মহান আল্লাহ বলেন,

فَکَیۡفَ اِذَا تَوَفَّتۡہُمُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ یَضۡرِبُوۡنَ وُجُوۡہَہُمۡ وَ اَدۡبَارَہُمۡ . ذٰلِکَ بِاَنَّہُمُ اتَّبَعُوۡا مَاۤ اَسۡخَطَ اللّٰہَ وَ کَرِہُوۡا رِضۡوَانَہٗ فَاَحۡبَطَ اَعۡمَالَہُمۡ

‘তাদের মরণ কালে ফেরেশতারা যখন তাদের মুখম-লে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করবে, তখন তাদের অবস্থা কেমন হবে! এই শাস্তির কারণ হল, তারা এমন পন্থা অবলম্বন করেছে, যা আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ এবং তারা তাঁর সন্তুষ্টিকে পছন্দ করেনি। এ কারণে তিনি তাদের সকল কাজ-কর্ম নষ্ট করে দিয়েছেন’ (সূরা মুহাম্মাদ : ২৭-২৮)।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ رِضَى الرَّبِّ فِيْ رِضَى الْوَالِدِ وَسَخَطُ الرَّبِّ فِيْ سَخَطِ الْوَالِدِ

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, পিতা-মাতার সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতা-মাতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে।[৭]

আল্লাহর ক্রোধ

যারা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়, মহান আল্লাহ তাদের উপর ক্রোধান্বিত হন। এ কারণে মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন, যাদের প্রতি তিনি ক্রোধান্বিত হন। মহান আল্লাহ বলেন, یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَوَلَّوۡا قَوۡمًا غَضِبَ اللّٰہُ عَلَیۡہِمۡ ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহ যে সম্প্রদায়ের প্রতি ক্রোধান্বিত হন তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না’ (সূরা আল-মুমতাহিনা : ১৩)। মহান আল্লাহ যাদের উপর ক্রোধান্বিত হন। যেমন,

১. যারা মহান আল্লাহর অবতীর্ণ অহীকে অবিশ্বাস করে। তিনি তাদের প্রতি ক্রোধান্বিত হন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

بِئۡسَمَا اشۡتَرَوۡا بِہٖۤ اَنۡفُسَہُمۡ اَنۡ یَّکۡفُرُوۡا بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ بَغۡیًا اَنۡ یُّنَزِّلَ اللّٰہُ مِنۡ فَضۡلِہٖ عَلٰی مَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِہٖ ۚ فَبَآءُوۡ بِغَضَبٍ عَلٰی غَضَبٍ ؕ وَ لِلۡکٰفِرِیۡنَ عَذَابٌ مُّہِیۡنٌ

‘তারা নিজ জীবনের জন্য যা ক্রয় করেছে তা নিকৃষ্ট, যেহেতু আল্লাহ তাঁর দাসগণের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা স্বীয় অনুগ্রহ অবতারণ করেন-শুধু এ কারণে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তারা বিদ্রোহবশত তা অবিশ্বাস করেছে, অতঃপর তারা ক্রোধের উপর ক্রোধে পতিত হয়েছে এবং কাফিরদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৯০)।

২. যারা মহান আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে, তিনি তাদের উপর ক্রোধান্বিত হন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

اِنَّ الَّذِیۡنَ اتَّخَذُوا الۡعِجۡلَ سَیَنَالُہُمۡ غَضَبٌ مِّنۡ رَّبِّہِمۡ وَ ذِلَّۃٌ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ؕ وَ کَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُفۡتَرِیۡنَ

‘নিশ্চয় যারা গো-বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে, অবশ্যই তারা এই পার্থিব জীবনে তাদের প্রতিপালকের গযব ও লাঞ্ছনায় নিপতিত হবে, মিথ্যা রচনাকারীদেরকে আমি এভাবেই প্রতিফল দিয়ে থাকি’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ১৫২)।

৩. যারা কুফরীর জন্য তাদের হৃদয়কে উন্মুক্ত করে দেয়, তিনি তাদের উপর ক্রোধান্বিত হন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

مَنۡ کَفَرَ بِاللّٰہِ مِنۡۢ بَعۡدِ اِیۡمَانِہٖۤ اِلَّا مَنۡ اُکۡرِہَ وَ قَلۡبُہٗ مُطۡمَئِنٌّۢ بِالۡاِیۡمَانِ وَ لٰکِنۡ مَّنۡ شَرَحَ بِالۡکُفۡرِ صَدۡرًا فَعَلَیۡہِمۡ غَضَبٌ مِّنَ اللّٰہِ ۚ وَ لَہُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ

‘কেউ ঈমান আনার পরে আল্লাহকে অস্বীকার করলে; কিন্তু যে, কুফরীর জন্য তার হৃদয়কে উন্মুক্ত করে দিল তাদের উপর আল্লাহর গজব আর তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি। তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয়েছে; কিন্তু তার চিত্ত ঈমানে অবিচল’ (সূরা আন-নাহল : ১০৬)।

৪. যারা আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে, তিনি তাদের উপর ক্রোধান্বিত হন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

وَ الَّذِیۡنَ یُحَآجُّوۡنَ فِی اللّٰہِ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا اسۡتُجِیۡبَ لَہٗ حُجَّتُہُمۡ دَاحِضَۃٌ عِنۡدَ رَبِّہِمۡ وَ عَلَیۡہِمۡ غَضَبٌ وَّ لَہُمۡ عَذَابٌ شَدِیۡدٌ

‘যারা আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে আল্লাহকে মেনে নেয়ার পর, তাদের যুক্তি-তর্ক তাদের প্রতিপালকের দৃষ্টিতে অসার এবং তাদের প্রতি রয়েছে (আল্লাহর) ক্রোধ এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি’ (সূরা আশ-শূরা : ১৬)।

৫. মহান আল্লাহ মুনাফিক্বদের উপর ক্রোধান্বিত হন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

اَلَمۡ تَرَ اِلَی الَّذِیۡنَ تَوَلَّوۡا قَوۡمًا غَضِبَ اللّٰہُ عَلَیۡہِمۡ ؕ مَا ہُمۡ مِّنۡکُمۡ وَ لَا مِنۡہُمۡ ۙ وَ یَحۡلِفُوۡنَ عَلَی الۡکَذِبِ وَ ہُمۡ یَعۡلَمُوۡنَ . اَعَدَّ اللّٰہُ لَہُمۡ عَذَابًا شَدِیۡدًا

‘আপনি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করেননি আল্লাহ যে সম্প্রদায়ের প্রতি ক্রোধান্বিত তাদের সাথে যারা বন্ধুত্ব করে? তারা (মুনাফিক্বগণ) তোমাদের দলভুক্ত নয়, তাদের দলভুক্তও নয় এবং তারা জেনে শুনে মিথ্যা শপথ করে। আল্লাহর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কঠিন শাস্তি’ (সূরা আল-মুজাদালাহ : ১৪)।

৬. মহান আল্লাহ অবৈধ হত্যাকারীর[৮] উপর ক্রোধান্বিত হন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

وَ مَنۡ یَّقۡتُلۡ مُؤۡمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُہٗ جَہَنَّمُ خٰلِدًا فِیۡہَا وَ غَضِبَ اللّٰہُ عَلَیۡہِ وَ لَعَنَہٗ وَ اَعَدَّ لَہٗ عَذَابًا عَظِیۡمًا

‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি হল জাহান্নাম, তথায় সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি μুদ্ধ হয়েছেন, তার উপর লা‘নত করেছেন’ (সূরা আন-নিসা : ৯৩)।

৭. মহান আল্লাহ অবাধ্য ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের উপর ক্রোধান্বিত হন। মহান আল্লাহ অবাধ্য ফের‘আঊন ও তার সাথীদের সম্পর্কে বলেন, فَلَمَّاۤ اٰسَفُوۡنَا انۡتَقَمۡنَا مِنۡہُمۡ فَاَغۡرَقۡنٰہُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ ‘অবশেষে তারা যখন আমাদেরকে ক্রোধান্বিত করল তখন আমরা তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করলাম, তাদের সবাইকে একসাথে ডুবিয়ে মারলাম’ (সূরা যুখরুফ : ৫৫)।

আল্লাহর অপছন্দ

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَ لَوۡ اَرَادُوا الۡخُرُوۡجَ لَاَعَدُّوۡا لَہٗ عُدَّۃً وَّ لٰکِنۡ کَرِہَ اللّٰہُ انۡۢبِعَاثَہُمۡ ‘সত্যিই যদি তাদের বের হবার ইচ্ছা থাকত তাহলে সে জন্য তারা কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করত। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাদের অংশগ্রহণ অপছন্দ করেছেন’ (সূরা আত-তাওবা : ৪৬)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, کَبُرَ مَقۡتًا عِنۡدَ اللّٰہِ اَنۡ تَقُوۡلُوۡا مَا لَا تَفۡعَلُوۡنَ ‘আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় যে, তোমরা এমন কথা বল, যা তোমরা নিজেরাই করো না’ (সূরা আছ-ছাফ : ৩)।

আল্লাহর রহমত

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, بِسۡمِ اللّٰہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ ‘পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ তা‘আলার নামে শুরু করছি’ (সূরা আল-ফাতিহা : ১)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ کَانَ بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ رَحِیۡمًا ‘এবং তিনি মুমিনদের প্রতি খুবই দয়াবান’ (সূরা আল-আহযাব : ৪৩)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ رَحۡمَتِیۡ وَسِعَتۡ کُلَّ شَیۡءٍ ‘আর আমার রহমত প্রতিটি জিনিসকেই পরিব্যাপ্ত করে রয়েছে’ (সূরা আল-‘আরাফ : ১৫৬)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, رَبَّنَا وَسِعۡتَ کُلَّ شَیۡءٍ رَّحۡمَۃً وَّ عِلۡمًا ‘হে আমাদের রব! আপনি আপনার রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সবকিছু পরিবেষ্টন করে আছেন’ (সূরা আল-মুমিন : ৭)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

کَتَبَ رَبُّکُمۡ عَلٰی نَفۡسِہِ الرَّحۡمَۃَ ۙ اَنَّہٗ مَنۡ عَمِلَ مِنۡکُمۡ سُوۡٓءًۢ ابِجَہَالَۃٍ ثُمَّ تَابَ مِنۡۢ بَعۡدِہٖ وَ اَصۡلَحَ فَاَنَّہٗ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ

‘তোমাদের প্রতিপালক রহমত করাকে নিজের উপর আবশ্যক করে নিয়েছেন। নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ যদি অজ্ঞতা বশত কোন খারাপ কাজ করে বসে, তারপর তওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, তাহলে তিনি তাকে মাফ করে দেন এবং তার প্রতি দয়া করেন’ (সূরা আল-আনআম : ৫৪)।

আল্লাহর খুশী হওয়া, হাসা ও আশ্চর্যান্বিত হওয়া

আল্লাহ তা‘আলা খুশী হোন ও হাসেন। হাদীছে এসেছে, আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

لَلهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِيْنَ يَتُوْبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ رَاحِلَتُهُ بِأَرْضٍ فَلَاةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِيْ ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَّاحِلَتِهِ فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللهم أَنْتَ عَبْدِيْ وَأَنَا رَبُّكَ أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ

‘আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবা ও ক্ষমা চাওয়াতে আনন্দিত হন, যখন সে তার নিকট তওবা করে। তোমাদের মধ্যকার ঐ ব্যক্তির খুশির চেয়ে অধিক খুশি হন, যে ব্যক্তির আরোহণের বাহন একটি মরু প্রান্তরে তার নিকট হতে ছুটে পালায়, যার পিঠে তার খাদ্য ও পানীয় ছিল। এতে লোকটি হতাশ হয়ে যায়। অতঃপর সে একটি গাছের নিকট এসে তার ছায়ায় শুয়ে পড়ে। সে তার বাহন সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিরাশ। এমতাবস্থায় সে হঠাৎ দেখে বাহন তার নিকট দাঁড়িয়ে আছে। সে তার লাগাম ধরে আনন্দের আতিশয্যে বলে ওঠে হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার প্রতিপালক! সে ভুল করে আনন্দের আতিশয্যে এরূপ বলে ফেলে।[৯]

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ يَضْحَكُ اللهُ تَعَالَى إِلَى رَجُلَيْنِ يَقْتُلُ أَحَدُهُمَا الْآخَرَ يَدْخُلَانِ الْجَنَّةَ يُقَاتِلُ هَذَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَيُقْتَلُ ثُمَّ يَتُوْبُ اللهُ عَلَى الْقَاتِلِ فَيُسْتَشْهَدُ

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, দু’ ব্যক্তিকে দেখে আল্লাহ তা‘আলা হাসেন। যারা একজন অপর জনকে শহীদ করেও দু’জনই জান্নাতে প্রবেশ করে। দু’জনের মধ্যে একজন আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করে অতঃপর নিহত হয়। আর হত্যাকারীকে আল্লাহ তা‘আলা তওবার সুযোগ দান করেন, ফলে সে তওবা করে শহীদ হয়।[১০]

অন্য হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,..জাহান্নাম হতে সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী এক ব্যক্তির .. মিনতি দেখে আল্লাহ হেসে উঠবেন। যখন তিনি হেসে ফেলবেন তখন তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে বলবেন, এবার চাও তোমার যা চাওয়ার আছে। তখন সে আল্লাহর কাছে মন খুলে চাইবে। এমনকি যখন তার আকাঙ্ক্ষা শেষ হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ স্মরণ করে দিয়ে বলবেন, এটা চাও ওটা চাও।[১১]

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ঐ সমস্ত লোকদের দেখে বিস্মিত হবেন, যাদেরকে শিকলে আবদ্ধ করে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। অপর বর্ণনাতে রয়েছে, যাদেরকে শৃংখলিত অবস্থায় জান্নাতের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে।[১২]

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আনছার ছাহাবী আবূ ত্বালহা এবং তাঁর স্ত্রীর মেহমানদারী দেখে আল্লাহ তা‘আলা যে আশ্চর্যান্বিত হয়েছিলেন, সে বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন, لَقَدْ عَجِبَ اللّهُ أَوْ ضَحِكَ اللهُ مِنْ فُلَانٍ ‘আল্লাহ তা‘আলা অমুক পুরুষ ও অমুক মহিলার কার্যকলাপে আশ্চর্য হয়েছেন’ বা হেসেছেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াত নাযিল করলেন, ‘তারা নিজেদের উপর অন্যদেরকে প্রাধান্য দেন, অভাবগ্রস্ততা এবং দারিদ্র তাদের সাথী হলেও’ (সূরা আল-হাশর, : ৯)।[১৩]

ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,ذكر رضى الله وغضبه وسخطه وكراهيته في القران الكريم وأنه متصف بذالك ‘কুরআনুল কারীমে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট হন, ক্রোধান্বিত হন, ঘৃণা করেন এবং তিনি অপছন্দ করেন। সুতরাং তিনি এ সব বিশেষণে বিশেষিত’।[১৪] তিনি আরোও বলেন, إثبات اتصافه بالرحمة والمعغفرة سبحانه وتعالى ‘আল্লাহ তা‘আলার জন্য রহমত ও মাগফিরাত বিশেষণ সাব্যস্ত’।[১৫]

ছালেহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) উপরিউক্ত বিশেষণগুলো উল্লেখ করে বলেছেন, وأهل السنة يثبتون ذلك لله كما أثبته لنفسه على ما يليق بجلاله ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের লোকেরা সেভাবেই তাঁর পবিত্র সত্তার জন্য সাব্যস্ত করেন যেভাবে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য শোভনীয় পদ্ধতিতেই নিজের জন্য সাব্যস্ত করেছেন’।[১৬]

তবে ‘জাহমিয়া, মু‘তাযিলা এবং তাদের অনুরূপ অন্যান্য বিদ‘আতী সম্প্রদায়ের যেসব লোক সৃষ্টির সাথে আল্লাহ্র তাশবীহ (তুলনা) হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আল্লাহ তা‘আলার রহমত ও মাগফিরাত বিশেষণকে অস্বীকার করে, উপরিউক্ত আয়াতসমূহে তাদের প্রতিবাদ করা হয়েছে। মু‘তাযিলা ও জাহমিয়ারা বলে, দয়া করা মাখলুকের বৈশিষ্ট। তারা এই আয়াতগুলোকে রূপকার্থে ব্যাখ্যা করেছে। এই ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ বাতিল। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নিজের জন্য এই বিশেষণ সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলার দয়া মানুষের দয়ার মত নয় যে, তাতে তাশবীহ বা সাদৃশ্য আবশ্যক হবে। যেমনটি তারা ধারণা করে থাকে।[১৭]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)



[১]. ইশারাতুল মারাম মিন ইবারাতিল ইমাম, পৃ. ১১১; আদা’ঊ মাতুরীদীয়াতি লিল আক্বীদাতিত সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদীয়্যা- আল-মাতুরীদীয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫১৭।
[২]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৩৫।
[৩]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৩৫।
[৪]. আব্দুর রহমান নাছির আস-সা‘দী, তাইসীরুল কারীমির রহমান ফী তাফসীরি কালামিল মান্নান (মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ১৪২০ হি.), পৃ. ২৪৯।
[৫]. যেমন, ছাহাবী আবূ উবাইদাহ আল-জাররাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বদর প্রান্তরে আপন পিতাকে হত্যা করেছিলেন। আবূ বকর ছিদ্দীক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আপন পুত্র আব্দুর রহমানকে হত্যা করার মনস্থ করেছিলেন। মুছ‘আব ইবনু উমাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর ভাই উবাইদ ইবনু উমাইরকে হত্যা করেছিলেন। ওমর ইবনুল খাত্তাব , হামযাহ , আলী এবং উবাইদা ইবনুল হারিছ (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) স্বগোত্রের লোকদেরকে হত্যা করেছিলেন। দ্র. দেখুন, সূরা আল-হাশরের ২২ নং আয়াতের তাফসীর; তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৫৪।
[৬]. তাইসীরুল কারীমির রহমান ফী তাফসীরি কালামিল মান্নান, পৃ. ৭৮৯।
[৭]. তিরমিযী, হা/১৮৯৯; মিশকাত, হা/৪৯২৭, সনদ ছহীহ।
[৮]. তিনটি হত্যার বাহিরে সকল হত্যাকা-ই অবৈধ। হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন কোন মুসলিম এই সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই এবং আমি আল্লাহ্র রাসূল, তখন তার রক্ত তিনটি কারণ ব্যতীত হালাল নয়। (১) জানের বদলে জান কতল করা। (২) বিবাহিত ব্যভিচারী এবং (৩) দ্বীন ইসলাম ত্যাগকারী, যে মুসলিম জামা‘আত হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দ্র. ছহীহ বুখারী হা/৬৮৭৮; ছহীহ মুসলিম হা/১৬৭৬।
[৯]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৪৭, ‘তওবাহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১; মিশকাত, হা/২৩৩২।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮২৬, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৯০; মিশকাত, হা/৩৮০৭।
[১১]. ছহীহ বুখারী, হা/৮০৬, ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১২৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮২; মিশকাত, হা/৫৫৮১।
[১২]. সহীহুল বুখারী, হাদীস নং-৩০১০ ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৪৪; মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-৩৯৬০।
[১৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৮৮৯, ৩৭৯৮; ছহীহ মুসলিম, হা/২০৫৪; মিশকাত, হা/৬২৫২।
[১৪]. শারহুল আক্বীদাহ আল-ওয়াসিত্বীয়া, পৃ. ১০৯।
[১৫]. প্রাগুক্ত, পৃ. ১০৪।
[১৬]. শারহুল আক্বীদাহ আল-ওয়াসিত্বীয়া, পৃ. ১০৯।
[১৭]. প্রাগুক্ত, পৃ. ১০৭।
 

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Total Threads
13,028Threads
Total Messages
16,588Comments
Total Members
3,416Members
Latest Messages
Clever CardinalLatest member
Top