পবিত্রতা বীর্য পবিত্র না অপবিত্র লিখিত ডিবেট?

Joined
Nov 17, 2023
Threads
407
Comments
522
Solutions
1
Reactions
12,887
আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান দুই বন্ধু। একদা আব্দুর রহমান ও আব্দুল্লাহ এর মধ্যে বীর্য পবিত্র না অপবিত্র এই বিষয়ে আলোচনা হলো।

আব্দুর রহমান: বীর্য পবিত্র না অপবিত্র এই বিষয়ে আপনার মতামত কি?

আব্দুল্লাহ: বীর্য পবিত্র এটাই সঠিক মত।

আব্দুর রহমান: না বন্ধু। বীর্য অপবিত্র। কারণ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كُنْتُ أَغْسِلُ الْجَنَابَةَ مِنْ ثَوْبِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، فَيَخْرُجُ إِلَى الصَّلاَةِ، وَإِنَّ بُقَعَ الْمَاءِ فِي ثَوْبِهِ‏.‏‏​

"আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাপড় হতে অপবিত্রতার চিহ্ন ধুয়ে দিতাম এবং কাপড়ে ভিজা চিহ্ন নিয়ে তিনি সালাতে বের হতেন। ( সহীহ বুখারী ২৩০, ২৩১, ২৩২; মুসলিম ২/৩২, হাঃ ২৮৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৯)""।

আর কাপড় নাপাক না হলে তো ধৌত করার প্রশ্নই আসে না। সুতরাং তা অপবিত্র।

আব্দুল্লাহ: এটা আপনি একটি দিক বর্ণনা করেছেন। হাদীসের মধ্যে এসেছে:

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ : كُنْتُ أَفْرُكُ الْمَنِيَّ مِنْ ثَوْبِ رَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم فَيُصَلِّي فِيهِ ‏.‏​

"আল-আসওয়াদ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাপড় থেকে বীর্য রগড়ে তুলে ফেলতাম। অতঃপর তিনি ঐ কাপড়েই সালাত আদায় করতেন। ( আবু দাউদ ৩৭২,মুসলিম (অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ বীর্যের হুকুম), ইবনু মাজাহ (অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ কাপড় থেকে বীর্য খুঁটিয়ে ফেলা, হাঃ ৫৩৯) ইবরাহীম সূত্রে, এবং আহমাদ (৬/৩৫, ৯৭, ১০১, ১২৫, ১৩২)"

ঘর্ষণ বা রগ্ড়ানোর মাধ্যমে যথেষ্ট মনে করাটাই পবিত্রতা প্রমাণ করে।

আব্দুর রহমান: না ভাই এটা সঠিক নয়। ঘর্ষণ করাটা পবিত্রতা প্রমাণ করে না, বরং তা পবিত্র করার একটি মাধ্যম মাত্র। যেমনটি জুতা পবিত্র করার মাধ্যম হলো তা মাটিতে ঘর্ষণ করা।

আব্দুল্লাহ: আপনার বক্তব্য সঠিক নয়। আপনার কাছে আমার প্রশ্ন, যদি কাপড়ে প্রস্রাব ও পায়খানা লাগে তাহলে কি ঘর্ষণ করার মাধ্যমে পবিত্র হয়ে যাবে?

আব্দুর রহমান: না না ভাই। সেটাকে ধৌত করতে হবে।

আব্দুল্লাহ: তাহলে কিভাবে আপনি দুইটি বিষয়কে এক করে দিলেন। অথচ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, কাপড়ে বীর্য লাগলে ঘর্ষণ করার কারণে কাপড় পবিত্র হয়ে যায়। কিন্তু কাপড়ে প্রস্রাব ও পায়খানা লাগলে তা শুধু ঘর্ষণ করার মাধ্যমে পবিত্র হয়না । তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। তাহলে হয় আপনাকে মানতে হবে বীর্যের হুকুম প্রস্রাব ও পায়খানার নিচে না হয় যদি একই হয় তাহলে কাপড়ে বীর্য লাগলে ঘর্ষণ করার মাধ্যমে যেভাবে পবিত্র হয়ে যায় অনুরূপ প্রস্রাব ও পায়খানার হুকুম হবে।

আব্দুর রহমান: ঘর্ষণ করার কারণে পায়খানা, প্রস্রাব পরিপূর্ণ ভাবে দূর করা সম্ভব নয়। তাই।

আব্দুল্লাহ: ঘর্ষণ করার কারণে বীর্য পরিপূর্ণ ভাবে দূর করা সম্ভব নয়। আপনি নিজেই পরিক্ষা করতে পারেন। আমি পরিক্ষা করেছি যখন আমার স্বপ্নদোষ হয়েছিল। যখন ঘন বীর্য বাহির হয় তখন বীর্যের সাথে তরল পানীয়ও বের হয়। তরল বীর্য বাহির হওয়ার পর তা শুকিয়ে যায়।এখানে তরল বীর্য প্রস্রাব ও শক্ত বীর্য পায়খানা এর হুকুম রাখে আপনার মতে। তাহলে শক্ত বীর্য তো দূর করলেন ঘর্ষণ করার মাধ্যমে কিন্তু তরল বীর্যের কি করবেন। তরল বীর্য তো শুকিয়ে গেছে। যদি বীর্য নাপাক হত তাহলে প্রস্রাবের মত তরল বীর্য পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা আবশ্যক হতো। কিন্তু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত তরল বীর্য ধুতে হয় না। অর্থাৎ এটা পবিত্র।

আব্দুর রহমান:- তাহলে বীর্য কেন ঘর্ষণ করা হয়? যদি তা পবিত্র হয়ে থাকে?

আব্দুল্লাহ: আপনার নাকের শ্লেমা যা বীর্যের মত গাড় হয় তখন যদি সেই শ্লেমার তরল পানীয় শুকিয়ে শুধু গাড় শ্লেমা থাকে তখন আপনি কি করবেন। নিশ্চয় সেটা ঘর্ষণ করে দিবেন। অর্থাৎ নাকের গাড় শ্লেমা ও বীর্যের একই হুকুম।

আব্দুর রহমান: বীর্য পরিপূর্ণ ভাবে দূর না হলেও তা পড়ে সালাত আদায় করা যাবে যেমন হায়েজের রক্ত নাপাক হওয়া শর্তেও তা পরিপূর্ণ ভাবে দূর করা সম্ভব না হলে তা পড়ে সালাত আদায় করা যাবে। যেমন হাদিসে এসেছে:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ خَوْلَةَ بِنْتَ يَسَارٍ، أَتَتِ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم فَقَالَتْ : يَا رَسُولَ اللهِ! إِنَّهُ لَيْسَ لِي إِلَّا ثَوْبٌ وَاحِدٌ وَأَنَا أَحِيضُ فِيهِ فَكَيْفَ أَصْنَعُ قَالَ ‏"‏ إِذَا طَهُرْتِ فَاغْسِلِيهِ ثُمَّ صَلِّي فِيهِ‏"‏.‏ فَقَالَتْ : فَإِنْ لَمْ يَخْرُجِ الدَّمُ قَالَ ‏"‏يَكْفِيكِ غَسْلُ الدَّمِ وَلَا يَضُرُّكِ أَثَرُهُ‏​

"আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। খাওলা বিনতু ইয়াসার (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার একটি মাত্র পরনের কাপড় আছে। তা পরিহিত অবস্থায় আমি হায়িযগ্রস্ত হই। অতএব এই অবস্থায় আমার করণীয় কি? তিনি বললেন, তুমি হায়িযমুক্ত হলে পরিধেয় বস্ত্রটি ধুয়ে নিবে। অতঃপর সেটা পরে সালাত আদায় করবে। তিনি বলেন, যদি রক্তের চিহ্ন দূরীভূত না হয়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রক্ত ধুয়ে ফেলাই তোমার জন্য যথেষ্ট। রক্তের চিহ্ন তোমার কোন ক্ষতি করবে না। (আবু দাউদ ৩৬৫,আহমাদ (হাঃ ৮৭৫২) কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ সূত্রে।)""

আব্দুল্লাহ: আপনার বক্তব্য সঠিক নয় কারণ, (১) তার একটি মাত্র কাপড় ছিল যার কারণে সে সেই কাপড়টি ব্যবহার করতে বাধ্য ছিল। সেই কাপড় ব্যবহার না করলে তাকে উলঙ্গ হয়ে সালাত আদায় করতে হত। এটা জরুরী অবস্থার বর্ণনা।

(২) সে পরিপূর্ণ ভাবে দূর করার চেষ্টা করার পরও তা দূর হয়নি। কিন্তু বীর্যের বিষয়ে হাদীস সুস্পষ্ট যে, আয়িশা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তা পরিপূর্ণ ভাবে দূর করার চেষ্টা করেনি বরং, সে শুধু নখ দিয়ে ঘর্ষণ করার মাধ্যমে উঠিয়ে দিয়েছে। সুতরাং উভয় এক নয়। হায়েজের রক্ত দূর করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু বীর্য দূর করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়নি। তাই আপনার বক্তব্য ভুল। হায়েজের রক্ত নাপাক তাই তা দূর করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু বীর্য পবিত্র তাই তা দূর করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়নি। সুতরাং এটা দ্বারা বীর্য পবিত্র এই মতটি আরো শক্তিশালী হয়।

আব্দুর রহমান: আরো বিভিন্ন সাহাবাদের আছার পাওয়া যায় যে, তারা বীর্য লাগলে কাপড় ধোয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ও নিজেরাও ধৌত করেছেন। সুতরাং এটা অপবিত্র।

আব্দুল্লাহ: তাদের ধৌত করার নির্দেশ এটা অপবিত্র প্রমাণ করে না ।কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে ধৌত করেনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাহলে হারাম কাপড়ে নামায পড়ছেন ( নাউযুবিল্লাহ)।আর তাদের ধৌত করার নির্দেশ দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, এটা করা অধিক ভালো যেমন, নাকের শ্লেমা ধৌত করা অধিক ভালো । সুতরাং সর্বপরি বীর্য পবিত্র এই মতটি সঠিক।
 
মডারেটর ভাই এই ডাইলগ টা বাদ দিয়েন। তাহলে পরতে ভালো লাগবে।

আব্দুর রহমান:- জি ভাই আপনি ঠিক বলেছেন। ঘর্ষণ করার মাধ্যমে বীর্য পরিপূর্ণ ভাবে দূর করা সম্ভব নয় সুতরাং এটা পবিত্র এটাই সঠিক।
 
Similar threads Most view View more
Back
Top