ইবাদাত তিনটি উপাদানের সমষ্টি। সেটি হচ্ছে:
১. মহব্বত বা ভালোবাসা
২. খাউফ বা ভয়
৩. রাজা বা আশা
মহব্বত থাকবে বিনয়ের সাথে, আর ভয় ও আশা থাকবে পরস্পরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত -ইবাদাতের মধ্যে এ অনুভূতি সম্মিলিতভাবে থাকাটা জরুরী। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মুমিন বান্দাদের গুণ বর্ণনায় বলেছেন, ﴿يُحِبُّهُمۡ وَيُحِبُّونَهُۥٓ ﴾ “তিনি তাদেরকে ভালোবাসেন এবং তারা তাঁকে ভালোবাসে।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৫৪]
তিনি আরো বলেন, ﴿وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ ﴾ “যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৬৫]
তিনি রাসূল ও নবীগণের গুণ বর্ণনায় বলেন,
“তারা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করত, তারা আমাকে ডাকত আশা ও ভীতির সাথে এবং তারা ছিল আমার নিকট বিনীত।” [সূরা আল-অম্বিয়া, আয়াত: ৯০]
সালাফ তথা পূর্ববর্তী আলিমদের কেউ কেউ বলেন, যে ব্যক্তি শুধু মহব্বতের সাথে আল্লাহর ইবাদাত করবে সে ‘যিন্দিক’। আর যে ব্যক্তি শুধু আশা নিয়ে ইবাদাত করবে সে ‘মুরজিয়া’। আর যে ব্যক্তি শুধু ভয়-ভীতির সাথে তাঁর ইবাদাত করবে সে হবে ‘হারুরী’।[1]
আর যে ব্যক্তি মহব্বত, ভীতি ও আশা এ তিনের সম্মিলনে তাঁর ইবাদাত করবে সে হবে মু’মিন ও তাওহীদপন্থী। শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যা তার ‘আল-উবূদিয়াহ’ গ্রন্থে এ বিষয়টি এভাবে বর্ণনা করেন, “আল্লাহর দীন মানে হচ্ছে তাঁর ইবাদাত, তাঁর আনুগত্য এবং তাঁর জন্য বিনয়ী হওয়া। ইবাদাতের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে বিনয় ও নম্রতা। বলা হয়, ‘নম্র রাস্তা’ যখন তা মানুষের পদভারে নরম হয়ে যায়। কিন্তু ইবাদাত পালনের নির্দেশ নম্রতার অর্থ যেমন অন্তর্ভুক্ত করে তেমনি মহববতের অর্থকেও শামিল করে। সুতরাং ইবাদাত আল্লাহ তা‘আলার জন্য পরিপূর্ণ ভালোবাসার সাথে পরিপূর্ণ নম্রতা ও বিনয়কে শামিল করে। যে ব্যক্তি কোনো মানুষের প্রতি ঘৃণা পোষণের পাশাপাশি তার জন্য নম্র হয় সে তার ইবাদাতকারী বলে গণ্য হবে না। আর যে ব্যক্তি কোনো কিছুকে ভালোবাসে অথচ তার জন্য বিনম্র হয় না সেও তাঁর ইবাদাতকারী বলে গণ্য হবে না। যেমন, কোনো ব্যক্তি তার বন্ধু ও সন্তানকে ভালোবাসে। এজন্যই এদুটোর কোনো একটি এককভাবে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাতের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। বরং আল্লাহ বান্দার কাছে সবকিছু থেকে যেমন প্রিয়তম হতে হবে তেমনি আল্লাহ বান্দার কাছে সবকিছু থেকে সম্মানিত হতে হবে, বরং পরিপূর্ণ মহব্বত এবং পরিপূর্ণ বিনয়ের অধিকারী আল্লাহ ছাড়া আর কেউ হতে পারে না.....।”[2]
এগুলো হচ্ছে ইবাদাতের উপাদান, যাকে ঘিরে ইবাদাত আবর্তিত হয়। আল্লামাহ ইবনুল কাইয়্যিম তার ‘আন-নূনিয়্যিাহ’ কাব্যগ্রন্থে বলেন,
“রহমানের ইবাদাত হচ্ছে তাঁকে পূর্ণরূপে ভালোবাসা ইবাদাতকারীর বিনয় ও নম্রতার পাশাপাশি, এ হলো দু’মেরু। এ দু’টো মেরুর উপরই আবর্তিত হতে থাকে ইবাদাতের দিগন্ত, দু’মেরু যতদিন থাকবে ততদিন এভাবেই আবর্তিত হবে এ দিগন্ত। রাসূল্লাহর নির্দেশই হলো সে আবর্তনের কেন্দ্রস্থল প্রবৃত্তি, নাফস ও শয়তানের অনুকরণ দ্বারা তা আবর্তিত হয় না।”
এখানে ইবন ইবনুল কাইয়্যিম রহ. প্রিয়তম সত্ত্বা তথা আল্লাহর উদ্দেশ্যে মহব্বত ও ভালোবাসা এবং বিনয় ও নম্রতার ওপর ইবাদাতের পরিক্রমণকে দুই মেরুর ওপর আকাশের পরিক্রমণের সাথে তুলনা করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে, ইবাদাতের পরিক্রমণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ ও তিনি যা প্রণয়ন করেছেন তার সাথে পরিক্রমণ করে, প্রবৃত্তির সাথে নয় এবং এ বিষয়ের সাথে নয় যা মানুষের নাফস ও শয়তান নির্দেশ প্রদান করে থাকে; কেননা তা ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা প্রনয়ণ করেছেন তা-ই ইবাদতের দিগন্তকে পরিচালনা করে থাকে। আর বিদ‘আত, কুসংস্কার, প্রবৃত্তি এবং পিতৃপুরুষদের অন্ধ অনুকরণ ইবাদাতের দিগন্তকে পরিচালনা করে না।
[1] ‘যিন্দিক’ হলো সে ব্যক্তি যে দ্বীন ও শরীয়াত মানে না। ‘মুরজিয়া’ হল ঐ ব্যক্তি যে মুখে ও মনে ঈমানের স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু কার্যে পরিণত করে না। আর হারুরী হল খারিজীদের অন্তর্ভুক্ত।
[2] মাজমু আত-তাওহীদ আন নাজদিয়া পৃ. ৫৪৯।
১. মহব্বত বা ভালোবাসা
২. খাউফ বা ভয়
৩. রাজা বা আশা
মহব্বত থাকবে বিনয়ের সাথে, আর ভয় ও আশা থাকবে পরস্পরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত -ইবাদাতের মধ্যে এ অনুভূতি সম্মিলিতভাবে থাকাটা জরুরী। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মুমিন বান্দাদের গুণ বর্ণনায় বলেছেন, ﴿يُحِبُّهُمۡ وَيُحِبُّونَهُۥٓ ﴾ “তিনি তাদেরকে ভালোবাসেন এবং তারা তাঁকে ভালোবাসে।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৫৪]
তিনি আরো বলেন, ﴿وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ ﴾ “যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৬৫]
তিনি রাসূল ও নবীগণের গুণ বর্ণনায় বলেন,
﴿إِنَّهُمۡ كَانُواْ يُسَٰرِعُونَ فِي ٱلۡخَيۡرَٰتِ وَيَدۡعُونَنَا رَغَبٗا وَرَهَبٗاۖ وَكَانُواْ لَنَا خَٰشِعِينَ ٩٠ ﴾ [الانبياء: ٩٠]
“তারা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করত, তারা আমাকে ডাকত আশা ও ভীতির সাথে এবং তারা ছিল আমার নিকট বিনীত।” [সূরা আল-অম্বিয়া, আয়াত: ৯০]
সালাফ তথা পূর্ববর্তী আলিমদের কেউ কেউ বলেন, যে ব্যক্তি শুধু মহব্বতের সাথে আল্লাহর ইবাদাত করবে সে ‘যিন্দিক’। আর যে ব্যক্তি শুধু আশা নিয়ে ইবাদাত করবে সে ‘মুরজিয়া’। আর যে ব্যক্তি শুধু ভয়-ভীতির সাথে তাঁর ইবাদাত করবে সে হবে ‘হারুরী’।[1]
আর যে ব্যক্তি মহব্বত, ভীতি ও আশা এ তিনের সম্মিলনে তাঁর ইবাদাত করবে সে হবে মু’মিন ও তাওহীদপন্থী। শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যা তার ‘আল-উবূদিয়াহ’ গ্রন্থে এ বিষয়টি এভাবে বর্ণনা করেন, “আল্লাহর দীন মানে হচ্ছে তাঁর ইবাদাত, তাঁর আনুগত্য এবং তাঁর জন্য বিনয়ী হওয়া। ইবাদাতের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে বিনয় ও নম্রতা। বলা হয়, ‘নম্র রাস্তা’ যখন তা মানুষের পদভারে নরম হয়ে যায়। কিন্তু ইবাদাত পালনের নির্দেশ নম্রতার অর্থ যেমন অন্তর্ভুক্ত করে তেমনি মহববতের অর্থকেও শামিল করে। সুতরাং ইবাদাত আল্লাহ তা‘আলার জন্য পরিপূর্ণ ভালোবাসার সাথে পরিপূর্ণ নম্রতা ও বিনয়কে শামিল করে। যে ব্যক্তি কোনো মানুষের প্রতি ঘৃণা পোষণের পাশাপাশি তার জন্য নম্র হয় সে তার ইবাদাতকারী বলে গণ্য হবে না। আর যে ব্যক্তি কোনো কিছুকে ভালোবাসে অথচ তার জন্য বিনম্র হয় না সেও তাঁর ইবাদাতকারী বলে গণ্য হবে না। যেমন, কোনো ব্যক্তি তার বন্ধু ও সন্তানকে ভালোবাসে। এজন্যই এদুটোর কোনো একটি এককভাবে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাতের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। বরং আল্লাহ বান্দার কাছে সবকিছু থেকে যেমন প্রিয়তম হতে হবে তেমনি আল্লাহ বান্দার কাছে সবকিছু থেকে সম্মানিত হতে হবে, বরং পরিপূর্ণ মহব্বত এবং পরিপূর্ণ বিনয়ের অধিকারী আল্লাহ ছাড়া আর কেউ হতে পারে না.....।”[2]
এগুলো হচ্ছে ইবাদাতের উপাদান, যাকে ঘিরে ইবাদাত আবর্তিত হয়। আল্লামাহ ইবনুল কাইয়্যিম তার ‘আন-নূনিয়্যিাহ’ কাব্যগ্রন্থে বলেন,
“রহমানের ইবাদাত হচ্ছে তাঁকে পূর্ণরূপে ভালোবাসা ইবাদাতকারীর বিনয় ও নম্রতার পাশাপাশি, এ হলো দু’মেরু। এ দু’টো মেরুর উপরই আবর্তিত হতে থাকে ইবাদাতের দিগন্ত, দু’মেরু যতদিন থাকবে ততদিন এভাবেই আবর্তিত হবে এ দিগন্ত। রাসূল্লাহর নির্দেশই হলো সে আবর্তনের কেন্দ্রস্থল প্রবৃত্তি, নাফস ও শয়তানের অনুকরণ দ্বারা তা আবর্তিত হয় না।”
এখানে ইবন ইবনুল কাইয়্যিম রহ. প্রিয়তম সত্ত্বা তথা আল্লাহর উদ্দেশ্যে মহব্বত ও ভালোবাসা এবং বিনয় ও নম্রতার ওপর ইবাদাতের পরিক্রমণকে দুই মেরুর ওপর আকাশের পরিক্রমণের সাথে তুলনা করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে, ইবাদাতের পরিক্রমণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ ও তিনি যা প্রণয়ন করেছেন তার সাথে পরিক্রমণ করে, প্রবৃত্তির সাথে নয় এবং এ বিষয়ের সাথে নয় যা মানুষের নাফস ও শয়তান নির্দেশ প্রদান করে থাকে; কেননা তা ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা প্রনয়ণ করেছেন তা-ই ইবাদতের দিগন্তকে পরিচালনা করে থাকে। আর বিদ‘আত, কুসংস্কার, প্রবৃত্তি এবং পিতৃপুরুষদের অন্ধ অনুকরণ ইবাদাতের দিগন্তকে পরিচালনা করে না।
তাওহীদ পরিচিতি
ড. সালিহ ইবন ফাওযান আল-ফাওযান
অনুবাদ: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
ড. সালিহ ইবন ফাওযান আল-ফাওযান
অনুবাদ: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
[1] ‘যিন্দিক’ হলো সে ব্যক্তি যে দ্বীন ও শরীয়াত মানে না। ‘মুরজিয়া’ হল ঐ ব্যক্তি যে মুখে ও মনে ঈমানের স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু কার্যে পরিণত করে না। আর হারুরী হল খারিজীদের অন্তর্ভুক্ত।
[2] মাজমু আত-তাওহীদ আন নাজদিয়া পৃ. ৫৪৯।