- Joined
- Mar 14, 2024
- Threads
- 1
- Comments
- 3
- Reactions
- 16
- Thread Author
- #1
কেউ আপনার কিংবা আমার পূত-পবিত্র মাকে অপবাদ দিল ব্যভিচারিণী।আপনাকে ও আমাকে বলল–জারজ।এ কথাগুলো শুনতে আপনার আমার কাছে কেমন লাগবে? নিঃসন্দেহে আমাদের প্রচন্ড রাগ হবে।এখন আমাদের মা ও আমাদেরকে অপবাদকারী শয়তান ব্যক্তি যদি অন্য কোন শয়তান দ্বারা অত্যাচারিত নির্যাতিত হয় তাহলে আমরা কি আমাদের মাকে অপবাদকারীর পক্ষে কথা বলল?নিশ্চয় কোন সুস্থ মস্তিস্কের ব্যক্তি আমাদের মাকে ব্যভিচারিণী অপবাদকারীর পক্ষে কথা বললে না।
আরেকটি বিষয়ে আসি।আপনার কিংবা আমার ভাইকে কেউ অন্যায়ভাবে হত্যা করল। অনুরূপভাবে আমাদের অন্য এক ভাইকে আরেকজন অন্যায়ভাবে হত্যা করল। সময়ের পালাক্রমে লক্ষ করা গেল আমাদের ভাইদের হত্যাকারী দুই ব্যক্তি পারস্পারিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হল।এখন আমাদের ভাইদের হত্যাকারী দুই ব্যক্তির কারো পক্ষে কি আমরা সমর্থন দিব?
পৃথিবীতে অনেক উচ্চশিক্ষিত,মানবতাবাদী,বুদ্ধিজীবি শ্রেণীর মুসলিম নামধারী মানুষ আছে যারা তাদের মাকে ব্যভিচারিণী অপবাদকারীর পক্ষে কথা বলে।মাকে ব্যভিচারিণী বলা শয়তান ব্যক্তি অন্য শয়তান দ্বারা অত্যাচারিত হলে অপবাদকারীর পক্ষে উকালতি করতে তাদের একটুও বাধে না।এসব নামধারী মুসলিম মূহূর্তেই মধ্যে ভুলে যায় মাকে নিকৃষ্ট উপাধীতে ভূষিত করার কথা।এই ইতর শ্রেণি স্বার্থের জন্য নিজ ভাই হত্যাকারীর পক্ষ অবলম্বন করতে দ্বিধা করে না।
এবার মূল ঘটনায় প্রবেশ করা যাক।আল্লাহ সুবহানুওয়া তায়ালা ৩৩ নং সূরা আহযাবের ৬ নং আয়াতে বলেছেন—
"اَلنَّبِیُّ اَوۡلٰی بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ مِنۡ اَنۡفُسِهِمۡ وَ اَزۡوَاجُهٗۤ اُمَّهٰتُهُمۡ ؕ وَ اُولُوا الۡاَرۡحَامِ بَعۡضُهُمۡ اَوۡلٰی بِبَعۡضٍ فِیۡ كِتٰبِ اللّٰهِ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُهٰجِرِیۡنَ اِلَّاۤ اَنۡ تَفۡعَلُوۡۤا اِلٰۤی اَوۡلِیٰٓئِكُمۡ مَّعۡرُوۡفًا ؕ كَانَ ذٰلِكَ فِی الۡكِتٰبِ مَسۡطُوۡرًا"
"নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর।আর তার স্ত্রীগণ তাদের মাস্বরূপ। আর আল্লাহর বিধান অনুসারে মুমিন ও মুহাজিরদের তুলনায় আত্নীয় স্বজনরা একে অপরের নিকটতর। তবে তোমরা যদি বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ভাল কিছু করতে চাও (তা করতে পার)। এটা কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে।"
উক্ত আয়াতের মাধ্যমের এটা প্রমাণিত হয় নবী ﷺ এর সকল স্ত্রী মুমিনদের মা।
নবী ﷺ এর স্ত্রীদের অন্যতম হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা।কতিপয় মুনাফেক আমাদের পূত-পবিত্র মা আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহার প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করেছিল এবং তাদের অনুসরণ করে কয়েকজন মুসলিমও এ আলোচনায় জড়িত হয়ে পড়েছিলেন।মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগে নির্দোষ মানুষটির পৃথিবীটা তখন খুব সংকীর্ণ হয়ে পড়ে।জীবনটা মেঘে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।তিনি আল্লাহর উপর পরিপূর্ণভাবে নির্ভর করলেন।আল্লাহ স্বয়ং আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ইজ্জতের হেফাজত করেন।
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার এ বিষয়টি সীরাতের পাতায় ইফকের ঘটনা নামে পরিচিত। ৬ষ্ঠ হিজরীতে বনু মুসতালিকের যুদ্ধে এ ঘটনাটি ঘটে।এ যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক মুনাফিক অংশগ্রহণ করে।
রসূল ﷺ যখন কোনো সফরে যেতেন, তখন স্ত্রী নির্বাচনের জন্য লটারি করতেন। বনু মুসতালিকের যুদ্ধে অভিযানে সফরসঙ্গী হিসেবে নির্বাচিত হন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা।আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ভ্রমণের সময় প্রিয় বোন আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহার একটি হার ধার নেন। হারটির আংটা এতো দুর্বল ছিল যে তা বারবার খুলে যাচ্ছিল। সফরে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নিজ হাওদাতে/বাহনে আরোহণ করতেন। এরপর হাওদার দায়িত্বে থাকা অন্য সাহাবিরা তাঁদের উঠের পিঠে উঠতেন। তখন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। তিনি এতো হালকা গড়নের ছিলেন যে, হাওদা-বাহক সাহাবিরাও সাধারণত বুঝতে পারতেন না যে, ভিতরে কেউ আছে কি নেই!
সফরকালে রাতের বেলায় এক অপরিচিত জায়গায় যাত্রা বিরতি হয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে দূরে চলে গেলেন। ফেরার সময় হঠাৎ গলায় হাত দিয়ে দেখলেন ধার করা হারটি হারিয়ে গেছে। তিনি প্রচণ্ড ঘাবড়ে গেলেন। প্রথমত, তার বয়স ছিল কম আর তার উপরে হারটি ছিল ধার করা।হতভম্ব হয়ে তিনি হারটি খুঁজতে লাগলেন। বয়স কম হবার কারণে তার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ছিলো না। তিনি ভেবেছিলেন যাত্রা আবার শুরু হবার আগেই তিনি হারানে হারটি খুঁজে পাবেন আর সময়মতো হাওদাতে পৌঁছে যাবেন। তিনি না কাউকে ঘটনাটি জানালেন, না তাঁর জন্য অপেক্ষা করার নির্দেশ দিলেন।
খুঁজতে খুঁজতে একসময় তিনি হারটি পেয়ে গেলেন। কিন্তু ততক্ষণে কাফেলা রওনা হয়ে গেছে। হাওদার দায়িত্বে থাকা সাহাবীরা ভেবেছিলেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হাওদার মধ্যেই রয়েছেন। এদিকে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কাফেলার স্থানে এ সে কাউকে পেলেন না । তিনি চাদর মুড়ি দিয়ে সেখানেই পড়ে রইলেন । ভাবলেন, যখন কাফেলা বুঝতে পারবে তখন আবার এখানে ফিরে আসবে।
সে সফরে সাকাহ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন সফওয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু। সাকাহ বলতে কাফেলার রক্ষণাবেক্ষণকারীদের বুঝানো হয় । তাদের কাজ ছি লো কাফেলাকে কিছু দূর থেকে অনুসরণ করা । কেউ পিছিয়ে পড়লে কিংবা কোনো কিছু হারিয়ে গেলে তা কাফেলাকে পৌঁছে দেয়া। সফওয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন খুব বড় মাপের একজন সাহাবী। তিনি পথ চলতে চলতে অস্পষ্ট অবয়ব দেখতে পেয়ে সামনে এগিয়ে গেলেন। আর চাদর মুড়ি দেয়া অবস্থাতেও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে চিনতে পারলেন। কারণ, পর্দার বিধান নাযিল হবার পূর্বে তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে দেখেছিলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তখন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন । তাকে সজাগ করার জন্য সফওয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু জোরে-“ইন্না-লিল্লাহ” বলে আওয়াজ দিলেন। বললেন, “এ যে রাসূল ﷺ এর সহধর্মিণী! আল্লাহ আপনার উপরে রহম করুন! কী করে আপনি পিছে রয়ে গেলেন?”
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কোনো জবাব দিলেন না। সফওয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি উট এনে তাতে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে আরোহণ করতে বলে দূরে সরে দাঁড়ান। আয়েশা (রা) উটের পিঠে আরোহণ করলে তিনি উটের লাগাম ধরে সামনে পথ চলতে থাকেন। অনেক চেষ্টা করেও ভোরের আগে তারা কাফেলাকে ধরতে পারলেন না।
ঘটনাটি এতোটুকুই । যে কোনো সফরে এমনটা ঘটনা হওয়া একদম স্বাভাবিক। কিন্তু যাদের হৃদয়ে বক্রতা আছে তারা ঘটনাটিকে লুফে নিলো। কুৎসা রটাতে লাগলো। তবে যাদের হৃদয় পবিত্র তারা এসব শোনামাত্রই কানে আঙ্গুল দিয়ে বললেন – আল্লাহ মহাপবিত্র! এটা সুস্পষ্ট অপবাদ ছাড়া কিছুই না।
আবু আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু আনহু তার স্ত্রী কে জিজ্ঞেস করলেন, “হে উম্মে আইয়ুব! যদি তোমার ব্যাপারে কেউ এমন মন্তব্য করতো, তুমি কি মেনে নিতে?” তার স্ত্রী জবাব দিলেন, “আল্লাহ মাফ করুন, কোনো অভিজাত নারীই তা মেনে নিতে পারে না।” তখন আবু আইয়ুব (রা) বললেন, “আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তোমার চেয়ে অনেক অনেক বেশি অভিজাত। তাহলে তার পক্ষে এটা কিভাবে মেনে নেয়া সম্ভব!”
এ ঘটনা সব জায়গায় ছড়ানোর মূল হোতা ছিল আমিরুল মুনাফুকুন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই। মুনাফিকদের সর্দার। ঘটনাক্রমে আরো তিনজন সম্মানিত সাহাবী এই কুচক্রে জড়িয়ে পড়েন। তারা হচ্ছেন হাসসান ইবনে সাবিত রা., হামনা বিনতে জাহশ রা. আর মিসতাহ ইবনে আসাসাহ রা.।
এদিকে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা মদিনা পৌঁছানোর পর ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন।তিনি ঘটনাটি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। রাসূল ﷺ আর আবু বকর রা তাকে কিছুই জানালেন না। আয়েশা رضي الله عنها আর রাসূল ﷺ এর মধ্যে খুবই উষ্ণ সম্পর্ক ছিল সবসময়। রাসূল (সা), আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। এক সাথে দৌড় খেলতেন, ইচ্ছা করে হেরে যেতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা পাত্রের যে দিক দিয়ে পান করতেন, রাসূল ﷺ সেদিক দিয়ে পানি পান করতেন।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা অসুস্থ হলে তিনি দয়া আর কোমলতা প্রদর্শন করতেন। কিন্তু এবারের অসুস্থতায় আগের মতো কোমলতা প্রদর্শন করলেন না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা লক্ষ্য করলেন রাসূল ﷺ আর আগের মতো তার সাথে প্রাণ খুলে কথা বলেন না। পুরো ব্যাপারটায় তিনি খুব কষ্ট পেলেন। তাই রাসূল ﷺ এর অনুমতি নিয়ে পিতৃগৃহে চলে গেলেন। তখনো তিনি আসল ঘটনাটি জানতেন না। পরবর্তীতে, একদিন রাতের বেলা প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে বের হলে মিসতাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর মা তাকে পুরো ঘটনাটি জানান। নিজের ছেলেকে মা হয়ে অভিশাপ দেন ।তখন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে দিবালোকের ন্যায় সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল। তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। তিনি রাত-দিন অবিরত কাঁদতে থাকলেন।
এদিকে তার বিরুদ্ধে অপবাদকারীরা আরো জোরে শোরে তাদের কুৎসা রটাতে থাকে। প্রায় ১ মাস হয়ে যায়। কোনো মীমাংসা হয় না। মুনাফিক আর গুটিকয়েক ব্যক্তি ছাড়া সবাই বিশ্বাস করতো আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নির্দোষ ছিলেন। তারপরেও স্বচ্ছতার স্বার্থে রাসূল ﷺ ঘটনার ত দন্ত করলেন। তিনি উসামা রাদিয়াল্লাহু আনহু আর আলী
রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে পরামর্শ করলেন। উসামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আপনার পরিবার সম্পর্কে আমরা ভালো ছাড়া আর কিছুই জানি না।” আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ঘটনার আরো সুষ্ঠু তদন্তের জন্য রাসূল ﷺ কে ঘরের দাসীকে জিজ্ঞেস করতে বললেন। দাসীকে জিজ্ঞেস করা হলে সে বললো, “তার মধ্যে আমি দোষের কিছুই দেখি না। কেবল এতোটুকুই যে, তিনি যখন-তখন ঘুমিয়ে পড়েন, আর বকরী এসে সব সাবাড় করে নিয়ে যায়।”
রাসূল ﷺ বুকভরা কষ্ট নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। বললেন, “লোকসকল! মানুষের কী হয়েছে? তারা আমার পরিবার সম্পর্কে আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। তারা মিথ্যা বলছে আমার পরিবারের বিরুদ্ধে।”
রাসূল ﷺ এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর গৃহে আগমন করেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “হে আয়েশা! লোকেরা কী বলাবলি করছে তা তো তোমার জানা হয়ে গেছে। তুমি আল্লাহকে ভয় করো। আর লোকেরা যেসব বলাবলি করছে তাতে লিপ্ত হয়ে থাকলে তুমি আল্লাহর নিকট তওবা করো। আল্লাহ তো বান্দার তওবা কবুল করে থাকেন।”
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা সে কষ্টের অভিজ্ঞতার কথা সম্পর্কে বলেন, “আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে লক্ষ্য করে একথাগুলো বলার পর আমার চোখের অশ্রু সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়। আমার সম্পর্কে কুরআন নাযিল হবে! আমার নিজেকে নিজের কাছে তার চাইতে তুচ্ছ মনে হয়েছে। তখন আমি বললাম– আমার সম্পর্কে যেসব কথা বলা হচ্ছে সে ব্যাপারে আমি কখনোই তওবা করবো না। আমি যদি তা স্বীকার করি তবে আল্লাহ জানেন যে আমি নির্দোষ আর যা ঘটেনি তা স্বীকার করা হয়ে যাবে। আমি ইয়াকুব আ. এর নাম স্মরণ করতে চাইলাম। কিন্তু মনে করতে পারলাম না। তাই আমি বললাম- ইউসুফ আ. এর পিতা যা বলেছিলেন, তেমন কথাই আমি উচ্চারণ করবো–
“সুন্দর সবরই( উত্তম) আর তোমরা যা বলছো সে ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি।” (১২:সূরা ইউসুফ:১৮)
এ পর্যায়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী নাযিল হলো আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা সম্পর্কে। আল্লাহ ﷻ বলেছেন—
"اِنَّ الَّذِیۡنَ جَآءُوۡ بِالۡاِفۡكِ عُصۡبَةٌ مِّنۡكُمۡ ؕ لَا تَحۡسَبُوۡهُ شَرًّا لَّكُمۡ ؕ بَلۡ هُوَ خَیۡرٌ لَّكُمۡ ؕ لِكُلِّ امۡرِیًٴ مِّنۡهُمۡ مَّا اكۡتَسَبَ مِنَ الۡاِثۡمِ ۚ وَ الَّذِیۡ تَوَلّٰی كِبۡرَهٗ مِنۡهُمۡ لَهٗ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ"
"নিশ্চয়ই যারা এ অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। এটাকে তোমরা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর মনে করো না, বরং এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তাদের থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য রয়েছে, যতটুকু পাপ সে অর্জন করেছে। আর তাদের থেকে যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে, তার জন্য রয়েছে মহা আযাব।"
এই আয়াত নাযিলের পর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার মা প্রচণ্ড খুশি হন। মেয়েকে বলেন- যাও মা! আল্লাহর রাসূলের শুকরিয়া আদায় করো । আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তখন এক বুক অভিমান নিয়ে বললেন: আমি কখনোই তার শুকরিয়া আদায় করবো না। বরং যেই আল্লাহ তা’অ্যালা আমার নিষ্কুলষতার সাক্ষ্য দিয়েছেন, আমি কেবল তাঁরই শুকরিয়া আদায় করবো।
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর প্রেক্ষাপটে সূরা আন নূর এর ১১ থেকে ২০ পর্যন্ত ও ২২ নং আয়াতসহ মোট ১১ টি আয়াত নাযিল হয়েছে।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের মুসলিম নামধারী বহু শয়তান আছে ,যারা এখনো মনে করে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ব্যভিচারিণী (نَعُوْذُ بِاللهِ مِنْ ذَالِكْ)।যে বা যারা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে ব্যভিচারিণী বলবে,নিঃসন্দেহে তারা কাফের হয়ে যাবে।আল্লাহ ﷻ কুরআনুল কারীমের মাধ্যমে আল্লাহ ﷻ আমাদের মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার পূত-পবিত্র ও নিষ্কুলষতার সাক্ষ্য দিয়েছেন।আর কুরআনের আয়াত অস্বীকার করা কুফরী ।আল্লাহ সুবহানুওয়া তায়ালা বলেছেন—
"إِنَّ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآياتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا لا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاء"
"নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং তার ব্যাপারে অহঙ্কার করেছে, তাদের জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হবে না (৭:সূরা আরাফ-৪০)"
আমাদের মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে ব্যভিচারিণী বলা শয়তানরা কারা জানেন?
আরো কিছুদুর যাওয়ার পর আমাদের কাছে সেটি পরিস্কার হয়ে যাবে।
আল-মাজলেসী “হাক্কুল ইয়াক্বীন” গ্রন্থে’ মুহাম্মাদ আল-বাকের এর উদ্ধতি দিয়ে বলেন, “যখন ইমাম মাহদী আত্ম প্রকাশ করবেন তখন তিনি উম্মুল মু‘মিনীন আয়েশা রা.-কে পূনরায় জীবিত করবেন এবং তার উপর হদ্দ (ব্যভিচারের শাস্তি) কায়েম করবেন।”
আল-মাজলেসী কে জানেন?এ ব্যক্তি একজন ধর্মগুরু।ইনি শিয়াদের ধর্মগুরু।তিনি শিয়াদের ভিতরে কুফরীতে নিমজ্জিত 'ইসনা আশারিয়া' মতবাদকে পুনর্জীবিত করেন। তাকে সর্বকালের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী শিয়া পন্ডিত অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সকলের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি ইসনা আশারিয়া মতবাদ শিয়াদের বৃহত্তম শাখা যা গোটা শিয়া সম্প্রদায়ের ৮৫% এবং সংখ্যায় প্রায় ১৬০ থেকে ২০০ মিলিয়ন।ইসনা আশারিয়ারা ইরান,ইরাক,আজারবাইজান,লেবানন ও বাহরাইনে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়।
ইরান পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে ইসনা আশারিয়া রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত।
ইসনা আশারিয়া সম্প্রদায়ের মানুষের চিন্তাধারা লক্ষ করুন।ইমাম মাহদী আত্ন প্রকাশের পর আয়েশা রা.-কে পূনরায় জীবিত করবেন।আচ্ছা আল্লাহ ছাড়া কি কেউ পুনরায় জীবন দিতে পারে?এটা তো সুস্পষ্ট কুফরী।তারা আরো বিশ্বাস করে ইমাম মাহদী আয়েশা রা. এর উপর হদ্দ কায়েম করবেন।এটাও সুস্পষ্ট কুফরী।কেননা পূর্বেই আমরা বলেছি কুরআনুল কারীমে আল্লাহ ﷻ আয়েশা রা. এর নিষ্কুলষতার সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এখন নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. কে ব্যভিচারিণী বলা শয়তান কারা?এরা হচ্ছে এ যুগের সর্ব নিকৃষ্ট ইসনা আশারিয়ার অনুসারীরা।
ইসরাঈল সম্প্রতি ইরানে প্রথম আক্রমণ চালায় ১৩ জুন।এরপর ইসরাঈল ও ইরান যুদ্ধে জড়ায়।ইরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে না পারে সেজন্য ইসরাঈল এ হামলা চালায়।ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি ইসরায়েলের কেননা, মধ্যপ্রাচ্যে এরা উভয়ই প্রতিদ্বন্দ্বী।ইয়াহুদিয়া চায় সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য তাদের কব্জায় আনতে।ঠিক তেমনি ইসনা আশারিয়া ধর্মের অনুসারীরা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে তাদের শিয়া ধর্ম প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।ইসরাঈল এখন পর্যন্ত একটি মুসলিম দেশ দখল করেছে সেটি হচ্ছে ফিলিস্তিন।ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়ার তথ্যমতে, «ইসরাঈল গত ৭৫ বছরে ১ লক্ষ ৪০ হাজার মুসলিম ভাই-বোনদের নির্বিচারে হত্যা করেছে এবং ফিলিস্তিনি ভূখন্ড থেকে ৫০ লক্ষ ভাই-বোনদের বিতাড়িত করেছে।»আমরা দু'আ করি,অভিশপ্ত ইয়াহুদীদের হাতে নিহত ব্যক্তিদের আল্লাহ ﷻ শহিদ হিসেবে কবুল করুন।
অন্যদিকে ইরান এখন পর্যন্ত চারটি মুসলিম দেশ দখল করেছে।সেগুলো হচ্ছে-লেবানন,ইয়ামেন,ইরাক ও সিরিয়া।আলহামদুলিল্লাহ সিরিয়া শিয়াদের থেকে দখলমুক্ত হয়েছে।আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়ার তথ্যমতে,«ইরান গত ১০ বছরে ১৫ লক্ষের বেশি মুসলিম ভাই-বোনদের হত্যা করেছে।বিভিন্ন সময়ে ইরান ১ কোটি ৬০ লক্ষের বেশি মুসলিমদের তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে।»
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়ার তথ্যগুলো নিয়ে অনেকে সন্দেহে পতিত হতে পারেন।কিন্তু এ তথ্যে সন্দেহ করার অবকাশ নেই।২০২২ সালের ২৯শে জুন 'সিরিয়া যুদ্ধের ১০ বছর, প্রতিদিন প্রাণ যাচ্ছে ৮৪ জনের' শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।যেখানে বলা হয়েছে–সিরিয়া যুদ্ধে গত ১০ বছরে ৩০ লাখ ৬ হাজার ৮৮৭ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে।এমনকি ইরানের শিয়াদের হাতে অসংখ্য ফিলিস্তিনি মুসলিম নিহত হয়েছে।'হিযবুল্লাহ সম্পর্কে কী জানেন' এবং 'নুসাইরিয়া সম্প্রদায়' নামক দুইটি বই পড়লে আপনারা শিয়াদের দ্বারা মুসলিম হত্যাকান্ডের বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবেন।
ইসনা আশায়ারি শিয়ারা আমাদের মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে ব্যভিচারিণী মনে করে।ইসনা আশায়ারি শিয়াদের দ্বারা লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে।সম্প্রীতি ইসরাঈল ও ইরানের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধকে অনেকে ইয়াহুদী ও মুসলিমের মধ্যে যুদ্ধ বলে অভিহিত করার চেষ্টা করছেন।এমনকি বাংলাদেশের অগণিত মানুষের আইডল শায়খ আহমাদুল্লাহ এ ইস্যুতে ইরানীদের একই কেবলার মুসলিম ভাই বলে অভিহিত করেছেন। আশা করি এ লেখা সম্পূর্ণ পড়লে প্রতীয়মান হবে ইরানী শিয়ারা কেমন মুসলিম? অধিকাংশ নির্ভরযোগ্য আলেম ইসনা আশায়ারী শিয়াদের কাফির বলে ফতোয়া দিয়েছেন। আপনাদের জ্ঞাতার্থে আবারো বলছি পৃথিবীর মোট শিয়ার ৮৫% ইসনা আশায়ারী মতবাদে বিশ্বাসী।ইরানের মোট জনগোষ্ঠীর ৯০% ইসনা আশায়ারী মতবাদের অনুসারী।
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছিল—
প্রশ্ন:“ওই ব্যক্তির ব্যাপারে আপনি কী বলেন, যে বলে, সুন্নি ও শিয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই? এই ব্যক্তি একটি মুসলিম রাষ্ট্রের মুফতি। এমনকি একটি পত্রিকার সাথে তাঁর একমাস ধরে সাক্ষাৎকার চলেছে, যেখানে তিনি বলেছেন, আমাদের জন্য একথা বলা হারাম যে, এই লোক সুন্নি, আর এই লোক শিয়া। এই কথা কি ঠিক? এই কথার ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?”
বিন বায রাহিমাহুল্লাহ যে উত্তর দিয়েছিলেন তা হচ্ছে—
"এটা সংক্ষিপ্ত কথা এবং এতে ভুল রয়েছে। কেননা শিয়া সম্প্রদায়ের বেশ কিছু শ্রেণি রয়েছে, তারা একই শ্রেণিভুক্ত নয়। শিয়া সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি শ্রেণি বা উপদল রয়েছে। শাহরাস্তানী উল্লেখ করেছেন যে, তাদের ২২টি উপদল রয়েছে। তাদের মধ্যে বিভিন্নতা রয়েছে। তাদের কারও বিদ‘আত তাকে কাফির করে দেয়, আবার কারও বিদ‘আত তাকে কাফির করে না। এতৎসত্ত্বেও তারা সবাই বিদ‘আতী। শিয়ারা সবাই বিদ‘আতী। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোটো বিদ‘আতী সে, যে আস-সিদ্দীক্ব এবং ‘উমারের ওপর ‘আলীকে প্রাধান্য দিয়েছে। বস্তুত সে ভুল করেছে এবং সাহাবীদের বিরোধিতা করেছে।
কিন্তু তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো রাফিদ্বীরা, যারা হলো খোমেনীর সাঙ্গপাঙ্গ। তারা সবচেয়ে বিপজ্জনক শিয়া। অনুরূপভাবে নুসাইরিয়াহ সম্প্রদায়, যারা হলো সিরিয়ার হাফিজ আসাদের সাঙ্গপাঙ্গ ও তার দলের ব্যক্তিবর্গ। আর সিরিয়া, ইরান ও ভারতের বাত্বিনী সম্প্রদায়, যারা হলো ইসমা‘ঈলী সম্প্রদায়।এই তিনটি উপদল সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ভয়ঙ্কর শিয়া। তারা কাফির সম্প্রদায়। তারা কাফির। কেননা তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে অনিষ্টকে লুকিয়ে রাখে এবং নিজেদের ওপর মুসলিমদেরকে কাফিরদের চেয়েও বিপজ্জনক মনে করে। তারা কাফিরদের চেয়ে মুসলিমদেরকে বেশি ঘৃণা করে। তারা আহলুস সুন্নাহ’র জান ও মাল নিজেদের জন্য হালাল মনে করে। যদিও তারা কিছু ক্ষেত্রে মোসাহেবি করে থাকে। তারা মনে করে, তাদের ইমামরা গায়েব (অদৃশ্য) জানে, তাদের ইমামরা নিষ্পাপ, আল্লাহকে ব্যতিরেকে ইমামদেরও ইবাদত করা যায় ফরিয়াদ, জবেহ ও মানত করার মাধ্যমে। তাদের ইমামদের ব্যাপারে এই হলো তাদের অবস্থান।
আর রাফিদ্বীরা হলো ইসনা ‘আশারিয়াহ তথা বারো ইমামিয়াহ নামক উপদল। তাদেরকে ‘জা‘ফারিয়্যাহ’-ও বলা হয়। অবশ্য এখন তাদেরকে ‘খুমাইনিয়্যাহ’ (খোমেনীর মতাদর্শের লোকজন) বলা হয়, যারা এখনও মানুষকে বাতিলের দিকে আহ্বান করে। তারা সবচেয়ে নিকৃষ্ট উপদল। অনুরূপভাবে ‘নুসাইরিয়াহ’-ও নিকৃষ্ট উপদলগুলোর অন্তর্ভুক্ত। একইভাবে ইসমা‘ঈলী শিয়ারাও নিকৃষ্ট, যারা হলো বাত্বিনী শিয়া। তারা গুটিকয়েক সাহাবী ছাড়া সমস্ত সাহাবীকে ইসলাম থেকে খারিজ—মুরতাদ কাফির মনে করে। আর সেই গুটিকয়েক সাহাবীর অন্তর্ভুক্ত হলেন ‘আলী, হাসান, হুসাইন, ‘আম্মার বিন ইয়াসার এবং আরও দুই, তিন বা চারজন সাহাবী, যাদেরকে তারা মনে করে যে, কেবল তারাই ‘আলীর সাথে মিত্রতা পোষণ করেছিল। পক্ষান্তরে বাকি সাহাবী তাদের কাছে মুরতাদ। তাঁরা ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছেন এবং ‘আলীর ওপর জুলুম করেছেন, ইত্যাদি আরও কথাবার্তা তারা বলে থাকে। আমরা আল্লাহ’র কাছে সুস্থতা ও নিরাপত্তা কামনা করছি।
এছাড়াও আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের ব্যাপারে তাদের চরমপন্থি মতাদর্শ রয়েছে। তাদের দাবি অনুযায়ী, তাঁরা (আহলে বাইত) গায়েব জানেন। তাদেরকে ইমাম হিসেবে গ্রহণ করা ওয়াজিব। আর ‘আলীর আগে ও পরে যত ইমামত (নেতৃত্ব) রয়েছে, সবই বাতিল। তাদের নিকট কেবল ‘আলী এবং হুসাইনের নেতৃত্বই হক। পক্ষান্তরে নবী ﷺ এর যুগ থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত যত নেতৃত্ব চলে আসছে, রাফিদ্বীদের নিকট তার সবই বাতিল। আমরা আল্লাহ’র কাছে সুস্থতা ও নিরাপত্তা কামনা করছি।
মোটকথা, শিয়া সম্প্রদায়ের বেশ কিছু শ্রেণি রয়েছে, তারা শুধু এক শ্রেণিভুক্ত নয়। শিয়াদের অন্তর্ভুক্ত আরেকটি উপদল হলো ইয়েমেনের ‘যাইদিয়াহ’ নামক প্রসিদ্ধ উপদল। তাদের নিকট তাফদ্বীলের মতাদর্শ রয়েছে (তাফদ্বীল হলো ‘আলী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুকে আবূ বাকার এবং ‘উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমার ওপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা)। এরা কাফির না। তবে তাদের মধ্যে যারা মূর্তিপূজা করে, আহলে বাইতের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে এবং আল্লাহকে ব্যতিরেকে তাদের ইবাদত করে তাদের কথা আলাদা। পক্ষান্তরে শুধু ‘আলীকে আস-সিদ্দীক্ব এবং ‘উমারের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা কুফর না, কিন্তু বিদ‘আত এবং গলত। আবশ্যক হলো—আস-সিদ্দীক্বকে সবার ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া, তারপর ‘উমার, তারপর ‘উসমানকে ‘আলীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া। ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু ওয়া আরদ্বাহু) হলেন চতুর্থতম। এর ওপরই সাহাবীগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন। রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম ওয়া আরদ্বাহুম।
সুতরাং যে ব্যক্তি ‘আলীকে তাঁদের ওপর প্রাধান্য দেয়, সে ভুলকারী বিবেচিত হবে, সে কাফির নয়। শিয়াদের মধ্যে শুধু কাফির হলো রাফিদ্বী, নুসাইরিয়াহ ও ইসমা‘ঈলিয়্যাহ সম্প্রদায়। যারা আহলে বাইতের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে, আল্লাহকে ব্যতিরেকে তাদের ইবাদত করে, তাদের ইবাদত করা জায়েজ মনে করে, তাদের ইমামরা গায়েব জানে বলে মনে করে ইত্যাদি আরও কথাবার্তা তারা বলে থাকে। আমরা আল্লাহ’র কাছে সুস্থতা ও নিরাপত্তা কামনা করছি। মোটকথা তাদের ‘আক্বীদাহর দিকে বিশদভাবে নজর দিতে হবে। একথা বলা যাবে না যে, শিয়ারা সবাই কাফির। না, বরং তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ রয়েছে। তাদের অনেকগুলো শ্রেণি রয়েছে।”
ইমাম লালাকায়ী (রাহিমাহুল্লাহ) শু’বা (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ননা করেছেন,তিনি (শু’বা) বলেন,
“আমি ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে রাফিদীদের উপর দুটি বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রাধান্য দিয়েছি। ইয়া’হু’দীদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ লোক কারা? তারা বললঃ মূসা (আ.) এর সাথীগণ।খ্রিস্টানদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলঃ তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ লোক কারা? তারা বললঃ ঈসা (আ.) এর হাওয়ারিগণ।আর (রাফেদী) শিয়াদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলো: তোমাদের উম্মাহর মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক কারা?তারা বললঃ মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর সাহাবীগণ!ফলে যখন তাদেরকে ইস্তেগফার করার আদেশ করা হলো, তখন তারা তাদেরকে গালি দেওয়া শুরু করলো।(ইমাম লালাকায়ি: শারহু উসুলি ই’তিক্বাদি আহলিস-সুন্নাহ ওয়াল জামাআত; খন্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ১৫৫১; আরো দেখুন ইবনু তাইমিয়া; মিনহাজুস সুন্নাহ; খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৭)
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] রাফিদ্বী শিয়াদের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন,
“তাদের কুফর ই-হুদি-নাসা-রাদের কুফরের চেয়েও গুরুতর। কেননা ইহুদি-খ্রি-ষ্টান-রা হলো সত্ত্বাগত কাফির। পক্ষান্তরে তারা (রাফিদ্বীরা) হলো দ্বীন থেকে বের হয়ে যাওয়া মুরতাদ। আর মুরতাদ হওয়ার কুফর ইজমা‘র (মতৈক্য) ভিত্তিতে সত্ত্বাগত কুফরের চেয়েও গুরুতর। এজন্যই তারা মুসলিম জনসাধারণের বিরুদ্ধে কা-ফি-রদের সহযোগিতা করে। যেমন তারা মুসলিম জনগণের বিরুদ্ধে (মুসলিম জনপদে গণহত্যা পরিচালনাকারী) তাতার সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করছে।”(ইবনু তাইমিয়া; মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৪২১)
ইমাম ইবনু হাযম আন্দালুসী রাহিমাহুল্লাহ [মৃ:৪৫৬ হি.] বলেন,
“রাফেযীদের দাবী সমূহের অন্যতম হল, কুরআনের ইবারতের পরিবর্তন। কারণ তারা মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং তারা নতুন একটি ফের্কা। এটি এমন একটি দল যারা মিথ্যাচার ও কু-ফ-রীর দিক থেকে ইয়াহুদী-খ্রীষ্টানদের স্রোতে পরিচালিত হয়’ (আল-ফিছাল ফিল মিলাল; ২য় খণ্ড; পৃষ্ঠা: ৬৫)।"
ইমাম আবূ হানীফাহ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃ.১৮২ হি.] বলেন,
”আমি কোন পরওয়া করি না, আমি জাহমী ও রাফেযীর পিছনে সালাত পড়লাম, নাকি ই-হু-দী ও খ্রী-ষ্টা-নের পিছনে সালাত পড়লাম। তাদেরকে সালাম দেয়া যাবে না, তারা অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া যাবে না, তাদেরকে বিয়ে করা যাবে না, তারা মারা গেলে তাদের জানাযায় শরীক হওয়া যাবে না এবং তাদের যবহেকৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না’ (খালকু আফ‘আলিল ইবাদ, পৃষ্ঠা; ১২৫)"
এখন শিয়াদের আক্বীদা-বিশ্বাস নিয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করা যাক।
প্রথমত,
শিয়া ধর্মের অনুসারীরা আল্লাহর সাথে শির্ক করে।
মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী ‘উসুলুল কাফী’ গ্রন্থের মধ্যে “গোটা পৃথিবীর মালিক ইমাম” নামক অধ্যায়ে আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: দুনিয়া ও আখেরাত ইমামের মালিকানায়, যেখানে ইচ্ছা তিনি তা রাখেন এবং আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কারস্বরূপ যার কাছে ইচ্ছা তা হস্তান্তর করেন। [উসুলুল কাফী, পৃ. ২৫৯; (ভারত প্রকাশনা)।]
সুতরাং একজন বিচক্ষণ মুসলিম এই বক্তব্য থেকে কী উদঘাটন করবেন; অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সুস্পষ্ট আয়াতে বলেন:
إِنَّ ٱلۡأَرۡضَ لِلَّهِ يُورِثُهَا مَن يَشَآءُ [سورة الأعراف: ١٢٨]
“যমীন তো আল্লাহরই। তিনি বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার উত্তরাধিকারী করেন”। [সূরা আল-আ‘রাফ: ১২৮]
وَلِلَّهِ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ [سورة آل عمران: ١٨٩]
“আসমান ও যমীনের সার্বভৌম ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই”। [সূরা আলে ইমরান: ১৮৯]
فَلِلَّهِ ٱلۡأٓخِرَةُ وَٱلۡأُولَىٰ [سورة النجم: ٢٥]
“বস্তুত ইহকাল ও পরকাল আল্লাহরই”। [সূরা আন-নাজম: ২৫]
আর শিয়াগণ লেখে: “আলী বলেন: ... আমিই প্রথম, আমিই শেষ, আমিই ব্যক্ত, আমিই উপরে আর আমিই নিকটে এবং আমিই যমিনের উত্তরাধিকারী”। [‘রিজালু কাশী’, পৃ. ১৩৮ (ভারতীয় ছাপা)।]
আর এই আকিদাটিও প্রথম আকিদার মত ভ্রান্ত। আর আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা থেকে পবিত্র ও মুক্ত; আর এটা তাঁর উপর একটা বড় ধরনের মিথ্যারোপ। তিনি এই ধরনের কথা বলতেই পারেন না।
আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
هُوَ ٱلۡأَوَّلُ وَٱلۡأٓخِرُ وَٱلظَّٰهِرُ وَٱلۡبَاطِنُ [سورة الحديد: ٣]
“তিনিই আদি, তিনিই অন্ত; তিনিই সবার উপরে এবং তিনিই সবার নিকটে”। [সূরা আল- হাদীদ: ৩]
প্রসিদ্ধ শিয়া মুফাসসির মকবুল আহমদ সূরা যুমারের ৬৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা করেছে:
وَأَشۡرَقَتِ ٱلۡأَرۡضُ بِنُورِ رَبِّهَا [سورة الزمر: ٦٩]
“বিশ্ব তার প্রতিপালকের জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হবে”। — (সূরা যুমার: ৬৯)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় সে (মকবুল আহমদ) বলেছে, জাফর সাদিক বলেন: নিশ্চয় যমিনের রব (মালিক) হলেন ইমাম। সুতরাং যখন ইমাম বের হবে, তখন তার আলোই যথেষ্ট; মানুষের জন্য চন্দ্র ও সূর্যের প্রয়োজন হবে না। [তরজমাতু মকবুল আহমদ, পৃ. ৩৩৯]
তোমরা চিন্তা করে দেখ, তারা কিভাবে ইমামকে ‘রব’ (প্রতিপালক) বানিয়েছে; এমনকি তারা "بنور ربها" (তার প্রতিপালকের জ্যোতিতে)-এর অর্থ বর্ণনায় বলে: ইমামই হলেন সেই রব এবং যমিনের মালিক।
অনুরূপভাবে সূরা যুমারের ৬৫-৬৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায়:
لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥ بَلِ ٱللَّهَ فَٱعۡبُدۡ وَكُن مِّنَ ٱلشَّٰكِرِينَ [سورة الزمر: ٦٥-٦٦]
“তুমি আল্লাহর শরিক স্থির করলে তোমার কর্ম তো নিষ্ফল হবে এবং অবশ্য তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত। অতএব তুমি আল্লাহরই ইবাদত কর এবং কৃতজ্ঞ হও।” — (সূরা যুমার: ৬৫-৬৬)
এই শিয়া মুফাসসির (মকবুল আহমদ) জাফর সাদিক থেকে ‘কাফী’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন: তার (আয়াতের) অর্থ হল: যদি তোমরা আলী’র বেলায়াতের (একচ্ছত্র কর্তৃত্ব বা অভিভাবকত্বের) সাথে কাউকে শরিক কর, তবে তার ফলে তোমার আমল নিষ্ফল হবে।[তরজমাতু মকবুল আহমদ, পৃ. ৯৩২]
আপনারা লক্ষ করুন কিভাবে তারা আয়াতের ব্যাখ্যায় জাফর সাদিকের উপর মিথ্যারোপ করে; অথচ এই আয়াতগুলোর বক্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ তথা একত্ববাদ প্রসঙ্গে; আর আল্লাহই হলেন সকল কিছুর সৃষ্টা। আর সকল প্রকার ইবাদত তাঁর জন্য হওয়াই বাঞ্ছনীয়। [এ আয়াত এগুলোই প্রমাণ হয়] কিভাবে তারা তা (আয়াত) বিকৃত করল এবং তার থেকে সুস্পষ্ট শির্ককে বৈধতার প্রমাণ পেশ করল? আল্লাহ তাদেরকে উপযুক্ত এর শাস্তি প্রদান করুন।
কুলাইনীর ‘উসুলুল কাফী’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে: “তারা (ইমামগণ) যা ইচ্ছা করে, তা হালাল করতে পারে; আবার যা ইচ্ছা করে, তা হারামও করতে পারে। আর তারা কখনও কিছুর ইচ্ছা করেন না, যতক্ষণ না মহান আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করেন। [উসুলুল কাফী, পৃ. ২৭৮]
অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَآ أَحَلَّ ٱللَّهُ لَكَ [سورة التحريم: ١]
“হে নবী! আল্লাহ যা তোমার জন্য হালাল করেছেন, তা তুমি কেন হারাম করলে”। — (সূরা তাহরীম: ১)
সুতরাং আল্লাহ যখন তাঁর রাসূলকে হালাল জিনিসকে হারাম করার কারণে সতর্ক করে দিয়েছেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্যের দ্বারা তা কী করে সম্ভব হতে পারে?
কুলাইনী আরও উল্লেখ করেন: ইমামগণ জানেন যে, তারা কখন মারা যাবেন; আর তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী মারা যাবেন। আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: কোন ইমাম যদি তার উপর আপতিত বিপদাপদ ও তার পরিণতি সম্পর্কে না জানে; তবে সে ইমাম আল্লাহর সৃষ্টির ব্যাপারে দলিল (হিসেবে গ্রহণযোগ্য) নয়। [উসুলুল কাফী]
আল্লাহ ﷻ বলেছেন:
قُل لَّا يَعۡلَمُ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلۡغَيۡبَ إِلَّا ٱللَّهُ [سورة النمل:٦٥]
“বল, আল্লাহ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বা গায়েবী বিষয়সমূহের জ্ঞান রাখে না”। — (সূরা আন-নমল: ৬৫) মহান আল্লাহ আরও বলেছেন
وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَ [سورة الأنعام: ٥٩]
“আর অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে, তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা জনে না”। — (সূরা আল-আন‘আম: ৫৯)
কিন্তু শিয়াগণ তাদের ইমামদেরকে অদৃশ্যের জ্ঞানের ব্যাপারে আল্লাহর সাথে শরিক করে।
দ্বিতীয়ত,
শিয়ারা কুরআনকে বিকৃত ও পরিবর্তিত মনে করে।
শিয়ারা বিশ্বাস করে তাদের নিকট বিদ্যমান কুরআন মুহাম্মাদের ﷺ উপর অবতীর্ণ অবিকল কুরআন নয়। এতে অনেক পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও কম-বেশী করা হয়েছে।
শিয়াদের অধিকাংশ মুহাদ্দিস বিশ্বাস করে যে, কুরআন শরীফে অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে। নুরী আত্-তাবারাসী ‘ফাসলুল খেতাব ফী তাহরীফে কিতাবি রাবিবল আরবাব’ কিতাবে তা স্বীকার করেছেন। [আল কুলাইনী: উসূলুল কাফী:১/২৮৪।]
মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকুব আল-কুলাইনী ‘উসূলুল কাফী’ গ্রন্থে ‘ইমামগণ ব্যতীত পূর্ণ কুরআন কেউ একত্র করেনি’ অনুচ্ছেদে জাবের হতে বর্ণনা করেন, আবু জা‘ফার বলেছেন, যে ব্যক্তি দাবী করে যে, আল্লাহ পূর্ণ কুরআন যেভাবে নাযিল করেছেন, অনুরূপ সে তা একত্র করেছে, তাহলে সে মিথ্যাবাদী, প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ যেভাবে কুরআন নাযিল করেছেন, আলী ইবনে আবী তালেব ও তার পরবর্তী ইমামগণ ছাড়া কেউ তা হুবহু একত্র ও সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়নি।’’ [আল কুলাইনী: উসূলুল কাফী: ১/২৮৫।]
হিশাম ইবনে সালেম হতে প্রমাণিত হয়েছে যে, আবু আব্দুল্লাহ বলেন, ‘যেই কুরআন জিবরীল মুহাম্মাদের নিকট নিয়ে আসেন, তা সতের হাজার আয়াত বিশিষ্ট।’ [তাদের শায়খ আল মাজলেসী স্বীয় ‘‘মিরআতুল উকুল ’’ নামক গ্রন্থে এই বর্ণনাটিকে নির্ভরযোগ্য]
এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, শিয়ারা যে কুরআনের দাবী করে, তা বিদ্যমান কুরআন থেকে অনেক বেশী, যার সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ নিজে গ্রহণ করেছেন। (নাউযুবিলাহ্ মিনহুম)
আহমাদ ত্বাবারাসী ‘‘আল-ইহ্তেজাজ’’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, ওমর রা. যায়েদ বিন ছাবেত রা.-কে বলেন, নিশ্চয় আলী রা. যে কুরআন নিয়ে এসেছে তাতে আনছার ও মুহাজিরদের ফাযিহাহ অর্থাৎ দোষত্রুটি প্রকাশ করা হয়েছে। এর বিপরীতে আমরা এমন এক কুরআন সংকলন করার ইচ্ছা করছি যা থেকে আনছার ও মুহাজিরদের সকল প্রকার ফাযিহা তথা বিষোদগার মোচন করা হবে। তার এ কথার প্রতি যায়েদ রা. সমর্থন জানিয়ে বলেন, আমি যদি আপনার চাহিদা অনুযায়ী কুরআন সংকলন সম্পন্ন করি, আর আলী রা. যদি তা জানতে পারে, তাহলে তিনি কি আপনার সংকলন বাতিল করে দেবেন না? ওমর রা. বললেন, এ থেকে বাঁচার উপায় কি? যায়েদ রা. বলেন, উপায় সম্পর্কে আপনি-ই ভাল জানেন। ওমর রা. বললেন, তাকে হত্যা করে তার থেকে নিরাপদ হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। অতঃপর খালেদ ইবনুল ওয়ালিদের মাধ্যমে তাকে হত্যা চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ওমর রা. যখন খলিফা নিযুক্ত হন তখন আলী রা.-কে বলেন যে, আমাদের নিকট কুরআন পেশ কর, তাহলে আমাদের কাছে যা রয়েছে তাতে কিছু তাহরীফ অর্থাৎ পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করব। ওমর রা. বলেন, হে আবুল হাসান! আবু বকর রা. এর কুরআনের ন্যায় যদি আমাদের কাছে কুরআন পেশ করেন, তাহলে আমরা তাতে একমত পোষণ করব। আলী রা. বলেন, হায়! আমার দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে।
নিশ্চয় এ কুরআন আমার সন্তানের মধ্যে থেকে আউসিয়া ও পবিত্র সত্বা ব্যতীত কেউ তা স্পর্শ করতে পারবে না। অতঃপর ওমর রা. বলেন, এটা প্রকাশের নির্দিষ্ট কোন সময় আছে কি? আলী রা. বলেন, হ্যাঁ! যখন আমার সন্তানদের মধ্য হতে কেউ দন্ডায়মান হবে, তখন তা প্রকাশ করা হবে। অতঃপর মানুষকে তা মানতে বাধ্য করা হবে।
তাকইয়া তথা অপকৌশল ও বাহানার আশ্রয় নিয়ে শিয়াগণ যতই বলুক, ‘কুরআন অপরিবর্তনীয়, তাতে কোন পরিবর্তন হয়নি,’ কিন্তু তাদের বিশ্বাস অনুরূপ নয়, কারণ তাদের বিশ্বস্ত লেখকদের লেখনীই বলে যে, তারা কুরআনের অবিকলতার ব্যাপারে আস্থাশীল নয়, বরং তাদের বিশ্বাস কুরআনে পরিবর্তন হয়েছে, এবং এটাই তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। কিন্তু তাদের ভয়, এ আকীদা যদি ব্যাপকভাবে প্রকাশ হয়, তাহলে তাদের মুখোশ খসে পড়বে। তাদের কুফরীর বিষয়টি সবার নিকট স্পষ্ট হয়ে যাবে। ফলশ্রুতিতে মহান এক বিপ্লবের সূচনা ঘটবে, যা তারা কখনোই পছন্দ করে না। তাদের আরেকটি বিশ্বাস কুরআন দু’টি : একটি প্রকাশ্য অপরটি অপ্রকাশ্য। রাফেযী শিয়ারা আরো বিশ্বাস করে যে, সূরা আলাম-নাশরাহ্ থেকে:
ورفعنا لك ذكرك بعلي صهرك
‘এবং তোমার জামাতা আলীর দ্বারা আমি তোমার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি।’
আয়াতটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এ মন্তব্য নুরী আত্-ত্বাবারাসী ‘‘ফাসলুল খিতাব ফী তাহরীফে কিতাবে রাবিবল আরবাব’’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, এ সুরাটি মক্কায় নাযিল হয়েছে, যখন আলী রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামাতা ছিলেন না, তবুও এ ডাহা মিথ্যাচারের কারণে তারা সামান্য লজ্জা বোধ করে না।
তৃতীয়ত,
শিয়ারা নবী ﷺ এর প্রায় সব সাহাবাদের কাফের বলে থাকে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাদের গাল-মন্দ করা ও তাদের কাফের বলাই শিয়াদের ধর্মীয় মূলনীতি। যেমন আল-কুলাইনী ‘ফুরু‘ আল-কাফী’ কিতাবে জা‘ফারের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন : ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর তিন ব্যক্তি ব্যতীত সমস্ত মানুষ মুরতাদ ছিল, আমি বললাম, ঐ তিনজন কারা? জবাবে বলেন, মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ, আবু যর গিফারী ও সালমান ফারেসী।’’
আল-মাজলেসী ‘বেহারুল আনওয়ার’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, আলী ইবনে হুসাইনের গোলাম বলেন, ‘‘আমি একদা একাকি অবস্থায় তার সাথে ছিলাম, অতঃপর আমি তাকে বললাম, নিশ্চয় আপনার প্রতি আমার অধিকার রয়েছে, আপনি কী আমাকে দুই ব্যক্তি তথা আবু বকর ও ওমর সম্পর্কে বলবেন ? তিনি বলেন, তারা দুজনই কাফের এবং যারা তাদেরকে ভালবাসবে তারাও কাফের।’’
আবু হামযাহ্ আল-সেমালী হতে বর্ণিত যে, আলী ইবনে হুসাইনকে দু’জন অর্থাৎ আবু বকর ও ওমার রা. সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলেন, তারা দু’জনই কাফের এবং যারা তাদেরকে ওলী হিসেবে গ্রহণ করবে তারাও কাফের।’’ [আল মাজলেসী: বেহারুল আনওয়ার-২৯/১৩৭-১৩৮, এখানে একটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত দেয়া অতীব জরুরী যে, আলী ইবনুল হুসাইন ও আহলুল বায়ত সকলেই এরূপ মিথ্যা ধারনা থেকে মুক্ত।]
আল্লাহর বাণী :
{ وَ یَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ وَ الۡبَغۡیِ }
‘‘তিনি অশ্লীলতা,মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন।’’(সূরা আন-নাহাল: ৯০)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল-কুম্মী বলেন, ‘‘ফাহশা অর্থ আবু বকর, মুনাকার অর্থ ওমর এবং বাগী অর্থ উসমান।’’
আল-কুম্মী উক্ত গ্রন্থের অপর স্থানে বলেন, আবু বকর, ওমর, উসমান ও মু‘আবিয়াহ্ সকলেই জাহান্নামের জ্বালানী কাষ্ঠ। নাউযুবিল্লাহ মিন যালেক।
‘এহ্কাকুল হক’ কিতাবে বর্ণিত, ‘‘হে আল্লাহ্! মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের বংশধরের উপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করো আর কুরাইশের দুই তাগুত ও মূর্তি এবং তাদের দুই কন্যার উপর লা‘নত বর্ষণ করো... ।
তাগুত ও মূর্তি দ্বারা তারা আবু বকর ও ওমর রা. এবং তাদের দুই কন্যা দ্বারা আয়েশা ও হাফছাকে বুঝায়।
আল-মাজলেসী তার ‘আল-আকায়েদ’ পুস্তিকায় উল্লেখ করেন, ইমামিয়াহ্ দীনের জন্য যে সব বিষয় জরুরী তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মেয়াদী বিবাহ ও তামাত্তু হজ হালাল জানা এবং তিনজন তথা আবু বকর, ওমর, উসমান ও মু‘আবিয়াহ্, ইয়াযিদ ইবনে মু‘আবিয়াহ্ এবং যারা আমীরুল মু‘মিনীন আলী রা.-র সাথে লড়াই করে, তাদের থেকে মুক্ত থাকা।
আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মাদ তার 'শিয়াদের আকীদা-বিশ্বাস' গ্রন্থে উল্লেখ করেন—"আশুরার দিন তারা একটি কুকুর নিয়ে আসে এবং কুকুরের নামকরণ করে ওমর অতঃপর তারা কুকুরটির উপর লাঠির আঘাত ও কংকর নিক্ষেপ করতে থাকে যতক্ষণ না মরে। কুকুরটি মারা যাওয়ার পর একটি বকরি ছানা নিয়ে আসে এবং তার নাম রাখে আয়েশা অতঃপর ঐ বকরি ছানার লোম উপড়াতে ও জুতা দ্বারা আঘাত করতে থাকে, বকরি ছানাটি না মরা পর্যন্ত এরূপ আঘাত করতেই থাকে।
অনুরূপভাবে ওমর রা.-র শাহাদাত দিবসে তারা আনন্দ অনুষ্ঠান পালন করে এবং তাঁর হত্যাকারীকে ‘বাবা শুজাউদ্দীন’ বা ‘বাবা ধর্মীয় বীর’ নামে খেতাব দেয়। আল্লাহ্ তা‘আলা সকল সাহাবা ও উম্মাহাতুল মু‘মিনীনদের প্রতি সন্তুষ্ট হোন।"
আল্লাহ ﷻ সাহাবাদের ব্যাপারে বলেছেন—
{ رَضِیَ اللّٰهُ عَنۡهُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡهُ }
আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন তারাও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট হয়েছে।(সুরা আল বায়্যিনাহ-৮)
চতুর্থত,
শিয়ারা পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে।
আব্বাস আল-কুমী তার ‘মুন্তাহাল আমাল’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে-
“আস-সাদিক আ. বলেন: যে ব্যক্তি আমাদের পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে না এবং মুত‘আ বিয়ের বৈধতাকে স্বীকৃতি দেয় না, সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়।” [ আব্বাস আল-কুমী, মুন্তাহাল আমাল, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৪১]
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী বলেন,
“ইবনু বাবুইয়া ‘এলালুশ শারায়ে‘ নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন, ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. বলেন: যখন ইমাম মাহাদী আত্মপ্রকাশ করবে, তখন তিনি অতিসত্বর আয়েশাকে জীবিত করবেন এবং তার উপর শাস্তির বিধান (হদ) কায়েম করবেন।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন, পৃ. ৩৪৭]
মকবুল আহমদ আশ-শি‘য়ী তার ‘তরজুমাতুল কুরআন’-এ বর্ণনা করেন,
“ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. থেকে তাফসীরুল কুমী ও তাফসীরুল ‘আয়াশী’র মধ্যে বর্ণিত আছে যে, "الأخرة" দ্বারা উদ্দেশ্য হল, الرجعة বা পুনর্জন্ম। আর الرجعة বা পুনর্জন্ম মানে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইমামগণ কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে বিশেষ করে মুমিন ও কাফিরদের মধ্য থেকে ব্যক্তিবিশেষ দুনিয়ায় ফিরিয়ে আনবেন যাতে ভাল ও ঈমানকে সমুন্নত করা যায় এবং কুফর এবং পাপকে ধ্বংস করে দেয়া যায়।” [তরজুমাতু মকবুল আহমদ (ترجمة مقبول أحمد), পৃ. ৫৩৫]
মোল্লা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী ‘হক্কুল ইয়াকীন’ (حق اليقين) নামক গ্রন্থে দীর্ঘ আলোচনা পেশ করেন, যার সারকথা হল: যখন মাহাদী আ. (কিয়ামতের অল্প কিছুদিন পূর্বে) আত্মপ্রকাশ করবেন, তখন অতি শীঘ্রই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের দেয়াল ভেঙ্গে যাবে এবং তিনি আবূ বকর ও ওমরকে তাদের কবর থেকে বের করে নিয়ে আসবেন; অতঃপর তাদেরকে জীবিত করবেন এবং তাদেরকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করবেন (না‘উযুবিল্লাহ)।
অতঃপর তিনি মাহদী’র ব্যাপারে আরও উল্লেখ করেন,
"অতঃপর তিনি মানবজাতিকে একত্রিত হওয়ার নির্দেশ দিবেন; তারপর বিশ্ব জগতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত যুলুম (নির্যাতন) ও কুফরী প্রকাশ পেয়েছে, ঐসব যুলুম ও কুফরীর সকল পাপ তাদের (অর্থাৎ আবূ বকর ও ওমরের) আমলনামায় লিখা হবে। যে কোন যুগেই মুহাম্মদের বংশধরের মধ্যে যে রক্তপাত হয়েছে, বরং অন্যায়ভাবে যত রক্তপাত হয়েছে, যত অবৈধ মিলন হয়েছে, যত সুদী মাল অথবা যত অবৈধ সম্পদ খাওয়া হয়েছে এবং মাহাদী আগমনের পূর্ব পর্যন্ত যত পাপ ও অন্যায়-অত্যাচার সংঘটিত হয়েছে, নিশ্চিভাবে ঐসব কিছুই অচিরেই তাদের আমলনামায় হিসাব (গণনা) করা হবে। "[মোল্লা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين), পৃ. ৩৬০]
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী তার পরে আরও বর্ণনা করেন:
“নুমানী ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যখন ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশ করবে, তখন যে ব্যক্তি তার নিকট সর্বপ্রথম বায়‘আত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করবে, তিনি হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (না‘উযুবিল্লাহ); অতঃপর আলী আ. এবং আল্লাহ তা‘আলা তাকে ফেরেশতাদের দ্বারা সাহায্য করবেন। আর শাইখ আল-তুসী ও নুমানী ইমাম রেজা আ. থেকে বর্ণনা করেন যে, মাহদীর আগমনের অন্যতম নিদর্শন হল সে উলঙ্গ অবস্থায় সূর্যের সামনে আত্মপ্রকাশ করবে এবং আহ্বান করে বলবে এই হলেন আমীরুল মুমিনীন (মৃত্যুর পর) পুনরায় ফিরে এসেছেন যালিমদেরকে ধ্বংস করার জন্য।” [মোল্লা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين), পৃ. ৩৪৭]
আর এটা হল শিয়াদের বড় বড় মিথ্যাসমূহের মধ্যে অন্যতম, যা ইসলাম ও ইসলামী জীবন বিধান যার উপর প্রতিষ্ঠিত তার পরিপন্থী। আর সকল আসমানী ধর্ম এই ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ যে, নিশ্চয় সকল মানুষ এই দুনিয়ায় আমল করবে, অতঃপর মৃত্যুবরণ করবে, অতঃপর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার সামনে সমবেত হবে এবং সেখানে আল্লাহ তাদের সকল কৃতকর্মের হিসাব নেবেন। কিন্তু শিয়াগণ পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা অপবাদের মাধ্যমে মাহদীকে সৃষ্টির হিসাব গ্রহণকারীর আসনে সমাসীন করেছে। এই বর্ণনাসমূহ বাতিল ও অসার হওয়া সত্ত্বেও এর কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাইয়্যেদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর চরম অসম্মান হয়; কারণ, তারা উভয়জনকে ঐ মাহদীর নিকট বায়‘আত গ্রহণকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে, যিনি অচিরেই তাদের সন্তান হিসেবে আগমন করবেন। অতঃপর মাহদীর আত্মপ্রকাশ উলঙ্গ ও একেবারে কাপড় বিহীন হওয়া (তাও তার শানে চরম অপমানকর কথা)। তাছাড়া সম্মানিত শায়খাইন আবূ বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার তারা যে জঘন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ প্রকাশ করেছে, তা সমালোচনা ও পর্যালোচনার প্রয়োজন হয় না। কারণ, তা কুরআন ও সুন্নাহ থেকে উদ্ধৃত দলিল এবং যুক্তিভিত্তিক দলিলের পরিপন্থী। কেননা, কিভাবে সুস্থ বিবেক মেনে নেবে যে, ব্যক্তি তার পূর্ববর্তীদের পাপের বোঝা বহন করবে। সুতরাং সে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নয়; বরং বক্ষস্থিত হৃদয় প্রতিবন্ধী।
পঞ্চমত,
শিয়ারা তাকিয়া নীতিতে বিশ্বাসী।
আল-কাফী মিনাল উসূল গ্রন্থে বর্ণিত আছে,
“নিশ্চয় আল্লাহর দ্বীনের দশ ভাগের নয় ভাগ ‘তাকীয়া’ এর মধ্যে; যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ধর্ম নেই। আর নবীয তথা খেজুর থেকে গ্রহণ করা মদ ও মোজার উপর মাসেহ ব্যতীত সকল বস্তুর মধ্যে ‘তাকীয়া’ আছে।” [আল-কাফী মিনাল উসূল, ২য় খণ্ড, প্রকাশকাল: ১৯৬৮, পৃ. ২১৭ – ২১৯।]
আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“আবূ জাফর আ. বলেন: ‘তাকীয়া’ আমার এবং আমার বাপ-দাদাদের ধর্ম। যার ‘তাকিয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।” [উসুলুল কাফী, পৃ. ৪৮৪]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তোমরা তোমাদের দীনের ব্যাপারে ভয় কর এবং তাকে ‘তাকীয়া’ দ্বারা ঢেকে রাখ। কারণ, যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।” [উসুলুল কাফী, পৃ. ৪৮৩]
আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“সুলাইমান খালিদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন, নিশ্চয় তোমরা দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত; যে ব্যক্তি তা গোপন করবে, তাকে আল্লাহ সম্মানিত করবেন এবং যে ব্যক্তি তা প্রচার করবে, তাকে আল্লাহ অপমানিত করবেন।” [উসুলুল কাফী, পৃ. ৪৮৫]
"তাকীয়া হচ্ছে মানুষ তার মনের মধ্যে যা গোপন করে রাখে, কথায় ও কাজে তার বিপরীত প্রকাশ করা; যেমন কোন ব্যক্তির অপর কারোর সাথে প্রকাশ্যে ভদ্রতা ও নম্রতা প্রকাশ করে কথা বলা, তবে মনে মনে ও তার একান্ত লোকদের কাছে অভিশাপ দেয়া। এমনকি যদিও সেখানে কোন জোর করার মত কারণ নাও থাকে [আল-কাফী ফিল ফুরু‘উ, ৩য় খণ্ড, প্রকাশকাল: ১৯৬১, পৃ. ১৮৮ – ১৮৯।]।
‘তাকীয়া’র সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বর্ণনা প্রসঙ্গে খোমেনী তার গ্রন্থে বলে:
“তাকীয়া’র উদ্দেশ্য হল ইসলাম ও শিয়া মাযহাবকে হেফাযত করা; কারণ শিয়াগণ যদি তাকিয়া’র আশ্রয় গ্রহণ না করত, তবে অবশ্যই শিয়া চিন্তাধারা নিঃশেষ হয়ে যেত।” [আল-খামেনী, পৃ. ১৪৪।]
অপর অর্থে, শিয়াগণ ব্যতীত অন্যদের বিরুদ্ধে ‘তাকিয়া’কে ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে, এমনকি সমস্ত মুসলিমের বিরুদ্ধে। আর তা হবে কেবল শিয়া জা‘ফরীয়দের আকিদাকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য।
“শিয়া মাযহাবের মধ্যে ‘তাকিয়া’ (التقية)-র আকিদা বা বিশ্বাসের শিকড়ের সূত্রপাত হল সূরা আলে ইমরানের ২৮ নং আয়াত থেকে, যার মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿لَّا يَتَّخِذِ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلۡكَٰفِرِينَ أَوۡلِيَآءَ مِن دُونِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَۖ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ فَلَيۡسَ مِنَ ٱللَّهِ فِي شَيۡءٍ إِلَّآ أَن تَتَّقُواْ مِنۡهُمۡ تُقَىٰةٗۗ وَيُحَذِّرُكُمُ ٱللَّهُ نَفۡسَهُۥۗ وَإِلَى ٱللَّهِ ٱلۡمَصِيرُ ٢٨ ﴾ [سورة آل عمران: ٢٨]
“মুমিনগণ যেন মুমিনগণ ব্যতিত কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যে কেউ এইরূপ করবে, তার সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না; তবে ব্যতিক্রম, যদি তোমরা তাদের নিকট থেকে সতর্কতা অবলম্বন কর। আর আল্লাহ তাঁর নিজের সম্পর্কে তোমাদেরকে সাবধান করছেন এবং আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তন।” [সূরা আলে ইমরান: ২৮।]
পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরানের ২৮ নং আয়াতে মনের বিপরীত কথা বলার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে, তা শুধু কাফিরদের সাথে এবং বিশেষ কোন সংকটকালীন অবস্থায় কৌশল অবলম্বন করার জন্য সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। "[আহমদ ইবন তাইমিয়্যা, মিনহাজুস্ সুন্নাহ আন-নববীয়া ফী নকযে কালামেশ শিয়া ওয়াল কাদরিয়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ২১৩ ]
ইসলামে তাকিয়া নিষিদ্ধ। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
"তাক্বিয়া মুনাফিকের নিদর্শনসমূহের অন্যতম। বস্তুত এটাই প্রকৃত নিফাক বা দ্বিচারিতা।"[ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ২৬৩]
আল্লাহ ﷻ বলেন,
{وَ لِیَعۡلَمَ الَّذِیۡنَ نَافَقُوۡا ۚۖ وَ قِیۡلَ لَهُمۡ تَعَالَوۡا قَاتِلُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ اَوِ ادۡفَعُوۡا ؕ قَالُوۡا لَوۡ نَعۡلَمُ قِتَالًا لَّا تَّبَعۡنٰکُمۡ ؕ هُمۡ لِلۡکُفۡرِ یَوۡمَئِذٍ اَقۡرَبُ مِنۡهُمۡ لِلۡاِیۡمَانِ ۚ یَقُوۡلُوۡنَ بِاَفۡوَاهِهِمۡ مَّا لَیۡسَ فِیۡ قُلُوۡبِهِمۡ ؕ وَ اللّٰهُ اَعۡلَمُ بِمَا یَکۡتُمُوۡنَ }
"আর যাতে তিনি জেনে নেন মুনাফিকদেরকে। আর তাদেরকে বলা হয়েছিল, ‘এসো, আল্লাহর পথে লড়াই কর অথবা প্রতিরোধ কর’। তারা বলেছিল, ‘যদি আমরা লড়াই হবে জানতাম তবে অবশ্যই তোমাদেরকে অনুসরণ করতাম’। সেদিন তারা কুফরীর বেশি কাছাকাছি ছিল তাদের ঈমানের তুলনায়। তারা তাদের মুখে বলে, যা তাদের অন্তরসমূহে নেই। আর তারা যা গোপন করে সে সম্পর্কে আল্লাহ অধিক অবগত।"[৩:আলে ‘ইমরান-১৬৭]
আল মাউসূয়া আল-ফিক্বাইয়্যাহতে এসেছে,
"অধিকাংশ সুন্নী আলেমদের অভিমত হল যে, তাকিয়া সংক্রান্ত মূল নীতি হল ‘এটি নিষিদ্ধ’; এটা শুধুমাত্র প্রয়োজনের ক্ষেত্রে জায়েয, এবং শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় পরিমাণে অনুমোদিত। আল-কুরতুবী বলেন: তাকিয়া সম্পর্কে মূল নীতি হল যে মৃত্যু ভয়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা বা চরম ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলে তা জায়েয নয়এবং আমরা যতদূর জানি এর বিপরীতে কোনো বর্ণনা নেই সাহাবাদের মধ্যে মুআয ইবনে জাবাল থেকে এবং তাবেয়ীনদের মধ্যে মুজাহিদ থেকে বর্ণনা ছাড়া।" [মাওযূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ আল-কুয়েতিয়া, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ১৮৬-১৮৭]
ষষ্ঠত,
শিয়ারা মুত'আহ বিবাহে বিশ্বাসী।
শিয়াদের নিকট মুত‘আহ্ বা (Contract Marriage) এর অনেক বড় ফযিলত রয়েছে।
ফাতুহুল্লাহ্ আল-কাশানী ‘‘মিনহাজুস সাদেক্বীন’’ কিতাবে জা‘ফার আস্-সাদেক এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘নিশ্চয় এই মুত‘আহ্ বিবাহ আমার ও আমার পূর্ব পুরুষের ধর্মীয় নীতি। অতএব যে ব্যক্তি এই নীতির উপর আমল করল সেই আমার দীনের উপর আমল করল। আর যে ব্যক্তি এটাকে অস্বীকার করল সে আমার দীনকেই অস্বীকার করল। শুধু তাই নয় বরং সে মুরতাদ হয়ে গেল। আর এই বিবাহের ফলে যে সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে সেই সন্তানের মর্যাদা স্থায়ী স্ত্রীর সন্তানের চাইতে অধিক। মুত‘আহ্ বিবাহ অস্বীকারকারী কাফের মুরতাদ।’’
আল-কুম্মী ‘‘মান লা ইয়াহ্যুরহুল ফাক্বীহ্’’ গ্রন্থে আব্দুল্লাহ্ বিন সিনানের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেন, তিনি
আবু আব্দুল্লাহ্ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের (শিয়া) উপর প্রত্যেক নেশা জাতীয় পানীয় হারাম করেছেন এবং এর বিনিময়ে তাদেরকে মুত‘আহ্ বিবাহের বৈধতা দিয়েছেন।’’
মুল্লা ফাতহুলাহ্ আল-কাশানীর ‘‘তাফসীর মিনহাজুস্ সাদেক্বীন’’ গ্রন্থে এসেছে যে, ‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি একবার মুত‘আহ্ বিবাহ করবে তার এক তৃতীয়াংশ জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা হবে, যে ব্যক্তি দুইবার মুত‘আহ্ বিবাহ করবে তার দুই তৃতীয়াংশ জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা হবে। আর যে ব্যক্তি তিনবার মুত‘আহ্ বিবাহ করবে তাকে সম্পূর্ণরূপে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা হবে।’’
উক্ত গ্রন্থে আরো এসেছে, ‘‘নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি একবার মুত‘আহ্ বিবাহ করবে সে মহান আল্লাহর অসন্তোষ থেকে নিরাপদ থাকবে, যে দুইবার মুত‘আহ্ বিবাহ করবে তাকে নেককার পূণ্যবানদের সাথে হাশর করানো হবে, আর যে ব্যক্তি তিনবার মুত‘আহ্ বিবাহ করবে সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে।’’
উক্ত গ্রন্থে আরো বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি একবার মুত‘আহ্ বিবাহ করবে সে হুসাইনের মর্যাদা লাভ করবে, যে দুইবার মুত‘আহ্ বিবাহ করবে তার মর্যাদা হবে হাসানের ন্যায়, আর যে তিনবার মুত‘আহ বিবাহ করবে তার মর্যাদা হবে আলী ইবনে আবি তালেবের ন্যায়, এবং যে ব্যক্তি চারবার মুত‘আহ্ বিবাহ করবে তার মর্যাদা হবে আমার মর্যাদার ন্যায়।’’
প্রকৃত পক্ষে রাফেযী শিয়ারা মুত‘আহ্ বিবাহের ক্ষেত্রে সংখ্যার শর্তারোপ করে না। ‘‘ফুরুউল-কাফী’’ ও ‘‘আত-তুকইয়া ফী ফিকহে আহলিল বায়ত’’ গ্রন্থে রয়েছে, তিনি আবু আব্দুল্লাহ্ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘‘আমি তাকে মুত‘আহ্ বিবাহের সংখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি যে, মুত‘আহ্ বিবাহ কি চারটি? তিনি বলেন, তুমি একহাজার মুত‘আহ্ বিবাহ কর, কেননা এরা তো ভাড়াটিয়া (অতএব তোমার সাধ্যানুযায়ী যত পারো ভাড়া নাও)।
মুহাম্মাদ বিন মুসলিম আবু জা‘ফার হতে বর্ণনা করেন, তিনি মুত‘আহর ব্যাপারে বলেন, এর সংখ্যা শুধু চার-ই নয়, কারণ মুত‘আহ্ বিবাহে তালাক নেই এবং সে উত্তরাধিকারীও হয় না, এরা তো শুধুমাত্র ভাড়ায় খাটে।’’
এটা কিভাবে আল্লাহর মনোনীত দীন হতে পারে ? অথচ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
{وَ الَّذِیۡنَ هُمۡ لِفُرُوۡجِهِمۡ حٰفِظُوۡنَ ، اِلَّا عَلٰۤی اَزۡوَاجِهِمۡ اَوۡ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُهُمۡ فَاِنَّهُمۡ غَیۡرُ مَلُوۡمِیۡنَ، فَمَنِ ابۡتَغٰی وَرَآءَ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡعٰدُوۡنَ}
‘‘আর যারা তাদের নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী।তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে তারা ছাড়া, নিশ্চয় এতে তারা নিন্দিত হবে না। অতঃপর যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।’’ সূরা মুমিনুন : (৫-৭)
উক্ত আয়াতে প্রমাণিত হয় যে, নিকাহ্ তথা বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রী ও মালিকানাভূক্ত দাসীদের বৈধ করা হয়েছে, এর বাইরে সব হারাম। আর মুত‘আহ্ হচ্ছে ভাড়ায় খাটুনী নারী। সে আসলে স্ত্রী নয়। যে কারণে সে স্বামীর উত্তরাধিকারী হয় না এবং তাকে তালাক দেয়ারও প্রয়োজন হয় না। অতএব সে মহিলা ব্যাভিচারী যেনাকারী। আল্লাহর নিকট এরূপ অপকর্ম থেকে পানাহ চাই।
আশা করি এই লিখনীর মাধ্যমে শিয়া সম্প্রদায়ের বিষয়ে যৎসামান্য জানতে সক্ষম হয়েছেন।আল্লাহ ﷻ বিভ্রান্ত এই সম্প্রদায় থেকে মুসলিম উম্মাহকে হেফাযত করুন। আমিন।
১.প্রত্যেক শীয়ার প্রতি আমার নসিহত
-শায়খ আবু বকর জাবের-জাযায়েরি
২.শিয়াদের আকীদা-বিশ্বাস
-আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ আস সালাফী
৩.শী'আ মতবাদের বিস্তৃতি
-আব্দুল্লাহ আল-মাত্বরাফী
৪.শিয়া আকিদার অসরতা
-শাইখ মোঃ আব্দুস সাত্তার আত-তুনসাবী
৫.শিয়া আলেম ও অধিকাংশ মুসলিম আলেমের মধ্যে বিরোধের বাস্তব চিত্র
-সাঈদ ইসমাঈল
৬.কতিপয় প্রশ্ন যা শী'আ যুবকদের সত্যের দিকে ধাবিত করেছে
-সুলাইমান ইবন সালেহ আল-খারাশি
৭.'হিযবুল্লাহ' সম্পর্কে কী জানেন?
-আলী আস-সাদিক
৮.নুসাইরিয়া সম্প্রদায়
-ড. গালেব ইবন আলি আওয়াজি
৯.দ্বাদশ-ইমামী শী'আ ধর্মের মূলনীতিসমূহের সুস্পষ্ট রূপরেখা
-মুহিব্বুদ্দীন আল-খতিব
১০.আল বিদায়া ওয়াল নিহায়া
-ইবনে কাসির রহ.
১১.সীরাতে আয়েশা
-সাইয়্যেদ সুলাইমান নদভী রহ.
আরেকটি বিষয়ে আসি।আপনার কিংবা আমার ভাইকে কেউ অন্যায়ভাবে হত্যা করল। অনুরূপভাবে আমাদের অন্য এক ভাইকে আরেকজন অন্যায়ভাবে হত্যা করল। সময়ের পালাক্রমে লক্ষ করা গেল আমাদের ভাইদের হত্যাকারী দুই ব্যক্তি পারস্পারিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হল।এখন আমাদের ভাইদের হত্যাকারী দুই ব্যক্তির কারো পক্ষে কি আমরা সমর্থন দিব?
পৃথিবীতে অনেক উচ্চশিক্ষিত,মানবতাবাদী,বুদ্ধিজীবি শ্রেণীর মুসলিম নামধারী মানুষ আছে যারা তাদের মাকে ব্যভিচারিণী অপবাদকারীর পক্ষে কথা বলে।মাকে ব্যভিচারিণী বলা শয়তান ব্যক্তি অন্য শয়তান দ্বারা অত্যাচারিত হলে অপবাদকারীর পক্ষে উকালতি করতে তাদের একটুও বাধে না।এসব নামধারী মুসলিম মূহূর্তেই মধ্যে ভুলে যায় মাকে নিকৃষ্ট উপাধীতে ভূষিত করার কথা।এই ইতর শ্রেণি স্বার্থের জন্য নিজ ভাই হত্যাকারীর পক্ষ অবলম্বন করতে দ্বিধা করে না।
এবার মূল ঘটনায় প্রবেশ করা যাক।আল্লাহ সুবহানুওয়া তায়ালা ৩৩ নং সূরা আহযাবের ৬ নং আয়াতে বলেছেন—
"اَلنَّبِیُّ اَوۡلٰی بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ مِنۡ اَنۡفُسِهِمۡ وَ اَزۡوَاجُهٗۤ اُمَّهٰتُهُمۡ ؕ وَ اُولُوا الۡاَرۡحَامِ بَعۡضُهُمۡ اَوۡلٰی بِبَعۡضٍ فِیۡ كِتٰبِ اللّٰهِ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُهٰجِرِیۡنَ اِلَّاۤ اَنۡ تَفۡعَلُوۡۤا اِلٰۤی اَوۡلِیٰٓئِكُمۡ مَّعۡرُوۡفًا ؕ كَانَ ذٰلِكَ فِی الۡكِتٰبِ مَسۡطُوۡرًا"
"নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর।আর তার স্ত্রীগণ তাদের মাস্বরূপ। আর আল্লাহর বিধান অনুসারে মুমিন ও মুহাজিরদের তুলনায় আত্নীয় স্বজনরা একে অপরের নিকটতর। তবে তোমরা যদি বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ভাল কিছু করতে চাও (তা করতে পার)। এটা কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে।"
উক্ত আয়াতের মাধ্যমের এটা প্রমাণিত হয় নবী ﷺ এর সকল স্ত্রী মুমিনদের মা।
নবী ﷺ এর স্ত্রীদের অন্যতম হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা।কতিপয় মুনাফেক আমাদের পূত-পবিত্র মা আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহার প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করেছিল এবং তাদের অনুসরণ করে কয়েকজন মুসলিমও এ আলোচনায় জড়িত হয়ে পড়েছিলেন।মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগে নির্দোষ মানুষটির পৃথিবীটা তখন খুব সংকীর্ণ হয়ে পড়ে।জীবনটা মেঘে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।তিনি আল্লাহর উপর পরিপূর্ণভাবে নির্ভর করলেন।আল্লাহ স্বয়ং আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ইজ্জতের হেফাজত করেন।
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার এ বিষয়টি সীরাতের পাতায় ইফকের ঘটনা নামে পরিচিত। ৬ষ্ঠ হিজরীতে বনু মুসতালিকের যুদ্ধে এ ঘটনাটি ঘটে।এ যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক মুনাফিক অংশগ্রহণ করে।
রসূল ﷺ যখন কোনো সফরে যেতেন, তখন স্ত্রী নির্বাচনের জন্য লটারি করতেন। বনু মুসতালিকের যুদ্ধে অভিযানে সফরসঙ্গী হিসেবে নির্বাচিত হন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা।আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ভ্রমণের সময় প্রিয় বোন আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহার একটি হার ধার নেন। হারটির আংটা এতো দুর্বল ছিল যে তা বারবার খুলে যাচ্ছিল। সফরে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নিজ হাওদাতে/বাহনে আরোহণ করতেন। এরপর হাওদার দায়িত্বে থাকা অন্য সাহাবিরা তাঁদের উঠের পিঠে উঠতেন। তখন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। তিনি এতো হালকা গড়নের ছিলেন যে, হাওদা-বাহক সাহাবিরাও সাধারণত বুঝতে পারতেন না যে, ভিতরে কেউ আছে কি নেই!
সফরকালে রাতের বেলায় এক অপরিচিত জায়গায় যাত্রা বিরতি হয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে দূরে চলে গেলেন। ফেরার সময় হঠাৎ গলায় হাত দিয়ে দেখলেন ধার করা হারটি হারিয়ে গেছে। তিনি প্রচণ্ড ঘাবড়ে গেলেন। প্রথমত, তার বয়স ছিল কম আর তার উপরে হারটি ছিল ধার করা।হতভম্ব হয়ে তিনি হারটি খুঁজতে লাগলেন। বয়স কম হবার কারণে তার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ছিলো না। তিনি ভেবেছিলেন যাত্রা আবার শুরু হবার আগেই তিনি হারানে হারটি খুঁজে পাবেন আর সময়মতো হাওদাতে পৌঁছে যাবেন। তিনি না কাউকে ঘটনাটি জানালেন, না তাঁর জন্য অপেক্ষা করার নির্দেশ দিলেন।
খুঁজতে খুঁজতে একসময় তিনি হারটি পেয়ে গেলেন। কিন্তু ততক্ষণে কাফেলা রওনা হয়ে গেছে। হাওদার দায়িত্বে থাকা সাহাবীরা ভেবেছিলেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হাওদার মধ্যেই রয়েছেন। এদিকে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কাফেলার স্থানে এ সে কাউকে পেলেন না । তিনি চাদর মুড়ি দিয়ে সেখানেই পড়ে রইলেন । ভাবলেন, যখন কাফেলা বুঝতে পারবে তখন আবার এখানে ফিরে আসবে।
সে সফরে সাকাহ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন সফওয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু। সাকাহ বলতে কাফেলার রক্ষণাবেক্ষণকারীদের বুঝানো হয় । তাদের কাজ ছি লো কাফেলাকে কিছু দূর থেকে অনুসরণ করা । কেউ পিছিয়ে পড়লে কিংবা কোনো কিছু হারিয়ে গেলে তা কাফেলাকে পৌঁছে দেয়া। সফওয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন খুব বড় মাপের একজন সাহাবী। তিনি পথ চলতে চলতে অস্পষ্ট অবয়ব দেখতে পেয়ে সামনে এগিয়ে গেলেন। আর চাদর মুড়ি দেয়া অবস্থাতেও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে চিনতে পারলেন। কারণ, পর্দার বিধান নাযিল হবার পূর্বে তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে দেখেছিলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তখন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন । তাকে সজাগ করার জন্য সফওয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু জোরে-“ইন্না-লিল্লাহ” বলে আওয়াজ দিলেন। বললেন, “এ যে রাসূল ﷺ এর সহধর্মিণী! আল্লাহ আপনার উপরে রহম করুন! কী করে আপনি পিছে রয়ে গেলেন?”
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কোনো জবাব দিলেন না। সফওয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি উট এনে তাতে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে আরোহণ করতে বলে দূরে সরে দাঁড়ান। আয়েশা (রা) উটের পিঠে আরোহণ করলে তিনি উটের লাগাম ধরে সামনে পথ চলতে থাকেন। অনেক চেষ্টা করেও ভোরের আগে তারা কাফেলাকে ধরতে পারলেন না।
ঘটনাটি এতোটুকুই । যে কোনো সফরে এমনটা ঘটনা হওয়া একদম স্বাভাবিক। কিন্তু যাদের হৃদয়ে বক্রতা আছে তারা ঘটনাটিকে লুফে নিলো। কুৎসা রটাতে লাগলো। তবে যাদের হৃদয় পবিত্র তারা এসব শোনামাত্রই কানে আঙ্গুল দিয়ে বললেন – আল্লাহ মহাপবিত্র! এটা সুস্পষ্ট অপবাদ ছাড়া কিছুই না।
আবু আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু আনহু তার স্ত্রী কে জিজ্ঞেস করলেন, “হে উম্মে আইয়ুব! যদি তোমার ব্যাপারে কেউ এমন মন্তব্য করতো, তুমি কি মেনে নিতে?” তার স্ত্রী জবাব দিলেন, “আল্লাহ মাফ করুন, কোনো অভিজাত নারীই তা মেনে নিতে পারে না।” তখন আবু আইয়ুব (রা) বললেন, “আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তোমার চেয়ে অনেক অনেক বেশি অভিজাত। তাহলে তার পক্ষে এটা কিভাবে মেনে নেয়া সম্ভব!”
এ ঘটনা সব জায়গায় ছড়ানোর মূল হোতা ছিল আমিরুল মুনাফুকুন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই। মুনাফিকদের সর্দার। ঘটনাক্রমে আরো তিনজন সম্মানিত সাহাবী এই কুচক্রে জড়িয়ে পড়েন। তারা হচ্ছেন হাসসান ইবনে সাবিত রা., হামনা বিনতে জাহশ রা. আর মিসতাহ ইবনে আসাসাহ রা.।
এদিকে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা মদিনা পৌঁছানোর পর ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন।তিনি ঘটনাটি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। রাসূল ﷺ আর আবু বকর রা তাকে কিছুই জানালেন না। আয়েশা رضي الله عنها আর রাসূল ﷺ এর মধ্যে খুবই উষ্ণ সম্পর্ক ছিল সবসময়। রাসূল (সা), আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। এক সাথে দৌড় খেলতেন, ইচ্ছা করে হেরে যেতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা পাত্রের যে দিক দিয়ে পান করতেন, রাসূল ﷺ সেদিক দিয়ে পানি পান করতেন।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা অসুস্থ হলে তিনি দয়া আর কোমলতা প্রদর্শন করতেন। কিন্তু এবারের অসুস্থতায় আগের মতো কোমলতা প্রদর্শন করলেন না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা লক্ষ্য করলেন রাসূল ﷺ আর আগের মতো তার সাথে প্রাণ খুলে কথা বলেন না। পুরো ব্যাপারটায় তিনি খুব কষ্ট পেলেন। তাই রাসূল ﷺ এর অনুমতি নিয়ে পিতৃগৃহে চলে গেলেন। তখনো তিনি আসল ঘটনাটি জানতেন না। পরবর্তীতে, একদিন রাতের বেলা প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে বের হলে মিসতাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর মা তাকে পুরো ঘটনাটি জানান। নিজের ছেলেকে মা হয়ে অভিশাপ দেন ।তখন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে দিবালোকের ন্যায় সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল। তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। তিনি রাত-দিন অবিরত কাঁদতে থাকলেন।
এদিকে তার বিরুদ্ধে অপবাদকারীরা আরো জোরে শোরে তাদের কুৎসা রটাতে থাকে। প্রায় ১ মাস হয়ে যায়। কোনো মীমাংসা হয় না। মুনাফিক আর গুটিকয়েক ব্যক্তি ছাড়া সবাই বিশ্বাস করতো আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নির্দোষ ছিলেন। তারপরেও স্বচ্ছতার স্বার্থে রাসূল ﷺ ঘটনার ত দন্ত করলেন। তিনি উসামা রাদিয়াল্লাহু আনহু আর আলী
রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে পরামর্শ করলেন। উসামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আপনার পরিবার সম্পর্কে আমরা ভালো ছাড়া আর কিছুই জানি না।” আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ঘটনার আরো সুষ্ঠু তদন্তের জন্য রাসূল ﷺ কে ঘরের দাসীকে জিজ্ঞেস করতে বললেন। দাসীকে জিজ্ঞেস করা হলে সে বললো, “তার মধ্যে আমি দোষের কিছুই দেখি না। কেবল এতোটুকুই যে, তিনি যখন-তখন ঘুমিয়ে পড়েন, আর বকরী এসে সব সাবাড় করে নিয়ে যায়।”
রাসূল ﷺ বুকভরা কষ্ট নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। বললেন, “লোকসকল! মানুষের কী হয়েছে? তারা আমার পরিবার সম্পর্কে আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। তারা মিথ্যা বলছে আমার পরিবারের বিরুদ্ধে।”
রাসূল ﷺ এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর গৃহে আগমন করেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “হে আয়েশা! লোকেরা কী বলাবলি করছে তা তো তোমার জানা হয়ে গেছে। তুমি আল্লাহকে ভয় করো। আর লোকেরা যেসব বলাবলি করছে তাতে লিপ্ত হয়ে থাকলে তুমি আল্লাহর নিকট তওবা করো। আল্লাহ তো বান্দার তওবা কবুল করে থাকেন।”
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা সে কষ্টের অভিজ্ঞতার কথা সম্পর্কে বলেন, “আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে লক্ষ্য করে একথাগুলো বলার পর আমার চোখের অশ্রু সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়। আমার সম্পর্কে কুরআন নাযিল হবে! আমার নিজেকে নিজের কাছে তার চাইতে তুচ্ছ মনে হয়েছে। তখন আমি বললাম– আমার সম্পর্কে যেসব কথা বলা হচ্ছে সে ব্যাপারে আমি কখনোই তওবা করবো না। আমি যদি তা স্বীকার করি তবে আল্লাহ জানেন যে আমি নির্দোষ আর যা ঘটেনি তা স্বীকার করা হয়ে যাবে। আমি ইয়াকুব আ. এর নাম স্মরণ করতে চাইলাম। কিন্তু মনে করতে পারলাম না। তাই আমি বললাম- ইউসুফ আ. এর পিতা যা বলেছিলেন, তেমন কথাই আমি উচ্চারণ করবো–
“সুন্দর সবরই( উত্তম) আর তোমরা যা বলছো সে ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি।” (১২:সূরা ইউসুফ:১৮)
এ পর্যায়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী নাযিল হলো আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা সম্পর্কে। আল্লাহ ﷻ বলেছেন—
"اِنَّ الَّذِیۡنَ جَآءُوۡ بِالۡاِفۡكِ عُصۡبَةٌ مِّنۡكُمۡ ؕ لَا تَحۡسَبُوۡهُ شَرًّا لَّكُمۡ ؕ بَلۡ هُوَ خَیۡرٌ لَّكُمۡ ؕ لِكُلِّ امۡرِیًٴ مِّنۡهُمۡ مَّا اكۡتَسَبَ مِنَ الۡاِثۡمِ ۚ وَ الَّذِیۡ تَوَلّٰی كِبۡرَهٗ مِنۡهُمۡ لَهٗ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ"
"নিশ্চয়ই যারা এ অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। এটাকে তোমরা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর মনে করো না, বরং এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তাদের থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য রয়েছে, যতটুকু পাপ সে অর্জন করেছে। আর তাদের থেকে যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে, তার জন্য রয়েছে মহা আযাব।"
এই আয়াত নাযিলের পর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার মা প্রচণ্ড খুশি হন। মেয়েকে বলেন- যাও মা! আল্লাহর রাসূলের শুকরিয়া আদায় করো । আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তখন এক বুক অভিমান নিয়ে বললেন: আমি কখনোই তার শুকরিয়া আদায় করবো না। বরং যেই আল্লাহ তা’অ্যালা আমার নিষ্কুলষতার সাক্ষ্য দিয়েছেন, আমি কেবল তাঁরই শুকরিয়া আদায় করবো।
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর প্রেক্ষাপটে সূরা আন নূর এর ১১ থেকে ২০ পর্যন্ত ও ২২ নং আয়াতসহ মোট ১১ টি আয়াত নাযিল হয়েছে।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের মুসলিম নামধারী বহু শয়তান আছে ,যারা এখনো মনে করে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ব্যভিচারিণী (نَعُوْذُ بِاللهِ مِنْ ذَالِكْ)।যে বা যারা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে ব্যভিচারিণী বলবে,নিঃসন্দেহে তারা কাফের হয়ে যাবে।আল্লাহ ﷻ কুরআনুল কারীমের মাধ্যমে আল্লাহ ﷻ আমাদের মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার পূত-পবিত্র ও নিষ্কুলষতার সাক্ষ্য দিয়েছেন।আর কুরআনের আয়াত অস্বীকার করা কুফরী ।আল্লাহ সুবহানুওয়া তায়ালা বলেছেন—
"إِنَّ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآياتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا لا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاء"
"নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং তার ব্যাপারে অহঙ্কার করেছে, তাদের জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হবে না (৭:সূরা আরাফ-৪০)"
আমাদের মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে ব্যভিচারিণী বলা শয়তানরা কারা জানেন?
আরো কিছুদুর যাওয়ার পর আমাদের কাছে সেটি পরিস্কার হয়ে যাবে।
আল-মাজলেসী “হাক্কুল ইয়াক্বীন” গ্রন্থে’ মুহাম্মাদ আল-বাকের এর উদ্ধতি দিয়ে বলেন, “যখন ইমাম মাহদী আত্ম প্রকাশ করবেন তখন তিনি উম্মুল মু‘মিনীন আয়েশা রা.-কে পূনরায় জীবিত করবেন এবং তার উপর হদ্দ (ব্যভিচারের শাস্তি) কায়েম করবেন।”
আল-মাজলেসী কে জানেন?এ ব্যক্তি একজন ধর্মগুরু।ইনি শিয়াদের ধর্মগুরু।তিনি শিয়াদের ভিতরে কুফরীতে নিমজ্জিত 'ইসনা আশারিয়া' মতবাদকে পুনর্জীবিত করেন। তাকে সর্বকালের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী শিয়া পন্ডিত অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সকলের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি ইসনা আশারিয়া মতবাদ শিয়াদের বৃহত্তম শাখা যা গোটা শিয়া সম্প্রদায়ের ৮৫% এবং সংখ্যায় প্রায় ১৬০ থেকে ২০০ মিলিয়ন।ইসনা আশারিয়ারা ইরান,ইরাক,আজারবাইজান,লেবানন ও বাহরাইনে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়।
ইরান পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে ইসনা আশারিয়া রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত।
ইসনা আশারিয়া সম্প্রদায়ের মানুষের চিন্তাধারা লক্ষ করুন।ইমাম মাহদী আত্ন প্রকাশের পর আয়েশা রা.-কে পূনরায় জীবিত করবেন।আচ্ছা আল্লাহ ছাড়া কি কেউ পুনরায় জীবন দিতে পারে?এটা তো সুস্পষ্ট কুফরী।তারা আরো বিশ্বাস করে ইমাম মাহদী আয়েশা রা. এর উপর হদ্দ কায়েম করবেন।এটাও সুস্পষ্ট কুফরী।কেননা পূর্বেই আমরা বলেছি কুরআনুল কারীমে আল্লাহ ﷻ আয়েশা রা. এর নিষ্কুলষতার সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এখন নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. কে ব্যভিচারিণী বলা শয়তান কারা?এরা হচ্ছে এ যুগের সর্ব নিকৃষ্ট ইসনা আশারিয়ার অনুসারীরা।
ইসরাঈল সম্প্রতি ইরানে প্রথম আক্রমণ চালায় ১৩ জুন।এরপর ইসরাঈল ও ইরান যুদ্ধে জড়ায়।ইরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে না পারে সেজন্য ইসরাঈল এ হামলা চালায়।ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি ইসরায়েলের কেননা, মধ্যপ্রাচ্যে এরা উভয়ই প্রতিদ্বন্দ্বী।ইয়াহুদিয়া চায় সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য তাদের কব্জায় আনতে।ঠিক তেমনি ইসনা আশারিয়া ধর্মের অনুসারীরা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে তাদের শিয়া ধর্ম প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।ইসরাঈল এখন পর্যন্ত একটি মুসলিম দেশ দখল করেছে সেটি হচ্ছে ফিলিস্তিন।ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়ার তথ্যমতে, «ইসরাঈল গত ৭৫ বছরে ১ লক্ষ ৪০ হাজার মুসলিম ভাই-বোনদের নির্বিচারে হত্যা করেছে এবং ফিলিস্তিনি ভূখন্ড থেকে ৫০ লক্ষ ভাই-বোনদের বিতাড়িত করেছে।»আমরা দু'আ করি,অভিশপ্ত ইয়াহুদীদের হাতে নিহত ব্যক্তিদের আল্লাহ ﷻ শহিদ হিসেবে কবুল করুন।
অন্যদিকে ইরান এখন পর্যন্ত চারটি মুসলিম দেশ দখল করেছে।সেগুলো হচ্ছে-লেবানন,ইয়ামেন,ইরাক ও সিরিয়া।আলহামদুলিল্লাহ সিরিয়া শিয়াদের থেকে দখলমুক্ত হয়েছে।আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়ার তথ্যমতে,«ইরান গত ১০ বছরে ১৫ লক্ষের বেশি মুসলিম ভাই-বোনদের হত্যা করেছে।বিভিন্ন সময়ে ইরান ১ কোটি ৬০ লক্ষের বেশি মুসলিমদের তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে।»
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়ার তথ্যগুলো নিয়ে অনেকে সন্দেহে পতিত হতে পারেন।কিন্তু এ তথ্যে সন্দেহ করার অবকাশ নেই।২০২২ সালের ২৯শে জুন 'সিরিয়া যুদ্ধের ১০ বছর, প্রতিদিন প্রাণ যাচ্ছে ৮৪ জনের' শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।যেখানে বলা হয়েছে–সিরিয়া যুদ্ধে গত ১০ বছরে ৩০ লাখ ৬ হাজার ৮৮৭ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে।এমনকি ইরানের শিয়াদের হাতে অসংখ্য ফিলিস্তিনি মুসলিম নিহত হয়েছে।'হিযবুল্লাহ সম্পর্কে কী জানেন' এবং 'নুসাইরিয়া সম্প্রদায়' নামক দুইটি বই পড়লে আপনারা শিয়াদের দ্বারা মুসলিম হত্যাকান্ডের বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবেন।
ইসনা আশায়ারি শিয়ারা আমাদের মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে ব্যভিচারিণী মনে করে।ইসনা আশায়ারি শিয়াদের দ্বারা লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে।সম্প্রীতি ইসরাঈল ও ইরানের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধকে অনেকে ইয়াহুদী ও মুসলিমের মধ্যে যুদ্ধ বলে অভিহিত করার চেষ্টা করছেন।এমনকি বাংলাদেশের অগণিত মানুষের আইডল শায়খ আহমাদুল্লাহ এ ইস্যুতে ইরানীদের একই কেবলার মুসলিম ভাই বলে অভিহিত করেছেন। আশা করি এ লেখা সম্পূর্ণ পড়লে প্রতীয়মান হবে ইরানী শিয়ারা কেমন মুসলিম? অধিকাংশ নির্ভরযোগ্য আলেম ইসনা আশায়ারী শিয়াদের কাফির বলে ফতোয়া দিয়েছেন। আপনাদের জ্ঞাতার্থে আবারো বলছি পৃথিবীর মোট শিয়ার ৮৫% ইসনা আশায়ারী মতবাদে বিশ্বাসী।ইরানের মোট জনগোষ্ঠীর ৯০% ইসনা আশায়ারী মতবাদের অনুসারী।
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছিল—
প্রশ্ন:“ওই ব্যক্তির ব্যাপারে আপনি কী বলেন, যে বলে, সুন্নি ও শিয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই? এই ব্যক্তি একটি মুসলিম রাষ্ট্রের মুফতি। এমনকি একটি পত্রিকার সাথে তাঁর একমাস ধরে সাক্ষাৎকার চলেছে, যেখানে তিনি বলেছেন, আমাদের জন্য একথা বলা হারাম যে, এই লোক সুন্নি, আর এই লোক শিয়া। এই কথা কি ঠিক? এই কথার ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?”
বিন বায রাহিমাহুল্লাহ যে উত্তর দিয়েছিলেন তা হচ্ছে—
"এটা সংক্ষিপ্ত কথা এবং এতে ভুল রয়েছে। কেননা শিয়া সম্প্রদায়ের বেশ কিছু শ্রেণি রয়েছে, তারা একই শ্রেণিভুক্ত নয়। শিয়া সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি শ্রেণি বা উপদল রয়েছে। শাহরাস্তানী উল্লেখ করেছেন যে, তাদের ২২টি উপদল রয়েছে। তাদের মধ্যে বিভিন্নতা রয়েছে। তাদের কারও বিদ‘আত তাকে কাফির করে দেয়, আবার কারও বিদ‘আত তাকে কাফির করে না। এতৎসত্ত্বেও তারা সবাই বিদ‘আতী। শিয়ারা সবাই বিদ‘আতী। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোটো বিদ‘আতী সে, যে আস-সিদ্দীক্ব এবং ‘উমারের ওপর ‘আলীকে প্রাধান্য দিয়েছে। বস্তুত সে ভুল করেছে এবং সাহাবীদের বিরোধিতা করেছে।
কিন্তু তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো রাফিদ্বীরা, যারা হলো খোমেনীর সাঙ্গপাঙ্গ। তারা সবচেয়ে বিপজ্জনক শিয়া। অনুরূপভাবে নুসাইরিয়াহ সম্প্রদায়, যারা হলো সিরিয়ার হাফিজ আসাদের সাঙ্গপাঙ্গ ও তার দলের ব্যক্তিবর্গ। আর সিরিয়া, ইরান ও ভারতের বাত্বিনী সম্প্রদায়, যারা হলো ইসমা‘ঈলী সম্প্রদায়।এই তিনটি উপদল সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ভয়ঙ্কর শিয়া। তারা কাফির সম্প্রদায়। তারা কাফির। কেননা তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে অনিষ্টকে লুকিয়ে রাখে এবং নিজেদের ওপর মুসলিমদেরকে কাফিরদের চেয়েও বিপজ্জনক মনে করে। তারা কাফিরদের চেয়ে মুসলিমদেরকে বেশি ঘৃণা করে। তারা আহলুস সুন্নাহ’র জান ও মাল নিজেদের জন্য হালাল মনে করে। যদিও তারা কিছু ক্ষেত্রে মোসাহেবি করে থাকে। তারা মনে করে, তাদের ইমামরা গায়েব (অদৃশ্য) জানে, তাদের ইমামরা নিষ্পাপ, আল্লাহকে ব্যতিরেকে ইমামদেরও ইবাদত করা যায় ফরিয়াদ, জবেহ ও মানত করার মাধ্যমে। তাদের ইমামদের ব্যাপারে এই হলো তাদের অবস্থান।
আর রাফিদ্বীরা হলো ইসনা ‘আশারিয়াহ তথা বারো ইমামিয়াহ নামক উপদল। তাদেরকে ‘জা‘ফারিয়্যাহ’-ও বলা হয়। অবশ্য এখন তাদেরকে ‘খুমাইনিয়্যাহ’ (খোমেনীর মতাদর্শের লোকজন) বলা হয়, যারা এখনও মানুষকে বাতিলের দিকে আহ্বান করে। তারা সবচেয়ে নিকৃষ্ট উপদল। অনুরূপভাবে ‘নুসাইরিয়াহ’-ও নিকৃষ্ট উপদলগুলোর অন্তর্ভুক্ত। একইভাবে ইসমা‘ঈলী শিয়ারাও নিকৃষ্ট, যারা হলো বাত্বিনী শিয়া। তারা গুটিকয়েক সাহাবী ছাড়া সমস্ত সাহাবীকে ইসলাম থেকে খারিজ—মুরতাদ কাফির মনে করে। আর সেই গুটিকয়েক সাহাবীর অন্তর্ভুক্ত হলেন ‘আলী, হাসান, হুসাইন, ‘আম্মার বিন ইয়াসার এবং আরও দুই, তিন বা চারজন সাহাবী, যাদেরকে তারা মনে করে যে, কেবল তারাই ‘আলীর সাথে মিত্রতা পোষণ করেছিল। পক্ষান্তরে বাকি সাহাবী তাদের কাছে মুরতাদ। তাঁরা ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছেন এবং ‘আলীর ওপর জুলুম করেছেন, ইত্যাদি আরও কথাবার্তা তারা বলে থাকে। আমরা আল্লাহ’র কাছে সুস্থতা ও নিরাপত্তা কামনা করছি।
এছাড়াও আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের ব্যাপারে তাদের চরমপন্থি মতাদর্শ রয়েছে। তাদের দাবি অনুযায়ী, তাঁরা (আহলে বাইত) গায়েব জানেন। তাদেরকে ইমাম হিসেবে গ্রহণ করা ওয়াজিব। আর ‘আলীর আগে ও পরে যত ইমামত (নেতৃত্ব) রয়েছে, সবই বাতিল। তাদের নিকট কেবল ‘আলী এবং হুসাইনের নেতৃত্বই হক। পক্ষান্তরে নবী ﷺ এর যুগ থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত যত নেতৃত্ব চলে আসছে, রাফিদ্বীদের নিকট তার সবই বাতিল। আমরা আল্লাহ’র কাছে সুস্থতা ও নিরাপত্তা কামনা করছি।
মোটকথা, শিয়া সম্প্রদায়ের বেশ কিছু শ্রেণি রয়েছে, তারা শুধু এক শ্রেণিভুক্ত নয়। শিয়াদের অন্তর্ভুক্ত আরেকটি উপদল হলো ইয়েমেনের ‘যাইদিয়াহ’ নামক প্রসিদ্ধ উপদল। তাদের নিকট তাফদ্বীলের মতাদর্শ রয়েছে (তাফদ্বীল হলো ‘আলী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুকে আবূ বাকার এবং ‘উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমার ওপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা)। এরা কাফির না। তবে তাদের মধ্যে যারা মূর্তিপূজা করে, আহলে বাইতের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে এবং আল্লাহকে ব্যতিরেকে তাদের ইবাদত করে তাদের কথা আলাদা। পক্ষান্তরে শুধু ‘আলীকে আস-সিদ্দীক্ব এবং ‘উমারের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা কুফর না, কিন্তু বিদ‘আত এবং গলত। আবশ্যক হলো—আস-সিদ্দীক্বকে সবার ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া, তারপর ‘উমার, তারপর ‘উসমানকে ‘আলীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া। ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু ওয়া আরদ্বাহু) হলেন চতুর্থতম। এর ওপরই সাহাবীগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন। রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম ওয়া আরদ্বাহুম।
সুতরাং যে ব্যক্তি ‘আলীকে তাঁদের ওপর প্রাধান্য দেয়, সে ভুলকারী বিবেচিত হবে, সে কাফির নয়। শিয়াদের মধ্যে শুধু কাফির হলো রাফিদ্বী, নুসাইরিয়াহ ও ইসমা‘ঈলিয়্যাহ সম্প্রদায়। যারা আহলে বাইতের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে, আল্লাহকে ব্যতিরেকে তাদের ইবাদত করে, তাদের ইবাদত করা জায়েজ মনে করে, তাদের ইমামরা গায়েব জানে বলে মনে করে ইত্যাদি আরও কথাবার্তা তারা বলে থাকে। আমরা আল্লাহ’র কাছে সুস্থতা ও নিরাপত্তা কামনা করছি। মোটকথা তাদের ‘আক্বীদাহর দিকে বিশদভাবে নজর দিতে হবে। একথা বলা যাবে না যে, শিয়ারা সবাই কাফির। না, বরং তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ রয়েছে। তাদের অনেকগুলো শ্রেণি রয়েছে।”
ইমাম লালাকায়ী (রাহিমাহুল্লাহ) শু’বা (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ননা করেছেন,তিনি (শু’বা) বলেন,
“আমি ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে রাফিদীদের উপর দুটি বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রাধান্য দিয়েছি। ইয়া’হু’দীদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ লোক কারা? তারা বললঃ মূসা (আ.) এর সাথীগণ।খ্রিস্টানদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলঃ তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ লোক কারা? তারা বললঃ ঈসা (আ.) এর হাওয়ারিগণ।আর (রাফেদী) শিয়াদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলো: তোমাদের উম্মাহর মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক কারা?তারা বললঃ মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর সাহাবীগণ!ফলে যখন তাদেরকে ইস্তেগফার করার আদেশ করা হলো, তখন তারা তাদেরকে গালি দেওয়া শুরু করলো।(ইমাম লালাকায়ি: শারহু উসুলি ই’তিক্বাদি আহলিস-সুন্নাহ ওয়াল জামাআত; খন্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ১৫৫১; আরো দেখুন ইবনু তাইমিয়া; মিনহাজুস সুন্নাহ; খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৭)
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] রাফিদ্বী শিয়াদের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন,
“তাদের কুফর ই-হুদি-নাসা-রাদের কুফরের চেয়েও গুরুতর। কেননা ইহুদি-খ্রি-ষ্টান-রা হলো সত্ত্বাগত কাফির। পক্ষান্তরে তারা (রাফিদ্বীরা) হলো দ্বীন থেকে বের হয়ে যাওয়া মুরতাদ। আর মুরতাদ হওয়ার কুফর ইজমা‘র (মতৈক্য) ভিত্তিতে সত্ত্বাগত কুফরের চেয়েও গুরুতর। এজন্যই তারা মুসলিম জনসাধারণের বিরুদ্ধে কা-ফি-রদের সহযোগিতা করে। যেমন তারা মুসলিম জনগণের বিরুদ্ধে (মুসলিম জনপদে গণহত্যা পরিচালনাকারী) তাতার সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করছে।”(ইবনু তাইমিয়া; মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৪২১)
ইমাম ইবনু হাযম আন্দালুসী রাহিমাহুল্লাহ [মৃ:৪৫৬ হি.] বলেন,
“রাফেযীদের দাবী সমূহের অন্যতম হল, কুরআনের ইবারতের পরিবর্তন। কারণ তারা মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং তারা নতুন একটি ফের্কা। এটি এমন একটি দল যারা মিথ্যাচার ও কু-ফ-রীর দিক থেকে ইয়াহুদী-খ্রীষ্টানদের স্রোতে পরিচালিত হয়’ (আল-ফিছাল ফিল মিলাল; ২য় খণ্ড; পৃষ্ঠা: ৬৫)।"
ইমাম আবূ হানীফাহ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃ.১৮২ হি.] বলেন,
”আমি কোন পরওয়া করি না, আমি জাহমী ও রাফেযীর পিছনে সালাত পড়লাম, নাকি ই-হু-দী ও খ্রী-ষ্টা-নের পিছনে সালাত পড়লাম। তাদেরকে সালাম দেয়া যাবে না, তারা অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া যাবে না, তাদেরকে বিয়ে করা যাবে না, তারা মারা গেলে তাদের জানাযায় শরীক হওয়া যাবে না এবং তাদের যবহেকৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না’ (খালকু আফ‘আলিল ইবাদ, পৃষ্ঠা; ১২৫)"
এখন শিয়াদের আক্বীদা-বিশ্বাস নিয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করা যাক।
প্রথমত,
শিয়া ধর্মের অনুসারীরা আল্লাহর সাথে শির্ক করে।
মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী ‘উসুলুল কাফী’ গ্রন্থের মধ্যে “গোটা পৃথিবীর মালিক ইমাম” নামক অধ্যায়ে আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: দুনিয়া ও আখেরাত ইমামের মালিকানায়, যেখানে ইচ্ছা তিনি তা রাখেন এবং আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কারস্বরূপ যার কাছে ইচ্ছা তা হস্তান্তর করেন। [উসুলুল কাফী, পৃ. ২৫৯; (ভারত প্রকাশনা)।]
সুতরাং একজন বিচক্ষণ মুসলিম এই বক্তব্য থেকে কী উদঘাটন করবেন; অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সুস্পষ্ট আয়াতে বলেন:
إِنَّ ٱلۡأَرۡضَ لِلَّهِ يُورِثُهَا مَن يَشَآءُ [سورة الأعراف: ١٢٨]
“যমীন তো আল্লাহরই। তিনি বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার উত্তরাধিকারী করেন”। [সূরা আল-আ‘রাফ: ১২৮]
وَلِلَّهِ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ [سورة آل عمران: ١٨٩]
“আসমান ও যমীনের সার্বভৌম ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই”। [সূরা আলে ইমরান: ১৮৯]
فَلِلَّهِ ٱلۡأٓخِرَةُ وَٱلۡأُولَىٰ [سورة النجم: ٢٥]
“বস্তুত ইহকাল ও পরকাল আল্লাহরই”। [সূরা আন-নাজম: ২৫]
আর শিয়াগণ লেখে: “আলী বলেন: ... আমিই প্রথম, আমিই শেষ, আমিই ব্যক্ত, আমিই উপরে আর আমিই নিকটে এবং আমিই যমিনের উত্তরাধিকারী”। [‘রিজালু কাশী’, পৃ. ১৩৮ (ভারতীয় ছাপা)।]
আর এই আকিদাটিও প্রথম আকিদার মত ভ্রান্ত। আর আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা থেকে পবিত্র ও মুক্ত; আর এটা তাঁর উপর একটা বড় ধরনের মিথ্যারোপ। তিনি এই ধরনের কথা বলতেই পারেন না।
আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
هُوَ ٱلۡأَوَّلُ وَٱلۡأٓخِرُ وَٱلظَّٰهِرُ وَٱلۡبَاطِنُ [سورة الحديد: ٣]
“তিনিই আদি, তিনিই অন্ত; তিনিই সবার উপরে এবং তিনিই সবার নিকটে”। [সূরা আল- হাদীদ: ৩]
প্রসিদ্ধ শিয়া মুফাসসির মকবুল আহমদ সূরা যুমারের ৬৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা করেছে:
وَأَشۡرَقَتِ ٱلۡأَرۡضُ بِنُورِ رَبِّهَا [سورة الزمر: ٦٩]
“বিশ্ব তার প্রতিপালকের জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হবে”। — (সূরা যুমার: ৬৯)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় সে (মকবুল আহমদ) বলেছে, জাফর সাদিক বলেন: নিশ্চয় যমিনের রব (মালিক) হলেন ইমাম। সুতরাং যখন ইমাম বের হবে, তখন তার আলোই যথেষ্ট; মানুষের জন্য চন্দ্র ও সূর্যের প্রয়োজন হবে না। [তরজমাতু মকবুল আহমদ, পৃ. ৩৩৯]
তোমরা চিন্তা করে দেখ, তারা কিভাবে ইমামকে ‘রব’ (প্রতিপালক) বানিয়েছে; এমনকি তারা "بنور ربها" (তার প্রতিপালকের জ্যোতিতে)-এর অর্থ বর্ণনায় বলে: ইমামই হলেন সেই রব এবং যমিনের মালিক।
অনুরূপভাবে সূরা যুমারের ৬৫-৬৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায়:
لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥ بَلِ ٱللَّهَ فَٱعۡبُدۡ وَكُن مِّنَ ٱلشَّٰكِرِينَ [سورة الزمر: ٦٥-٦٦]
“তুমি আল্লাহর শরিক স্থির করলে তোমার কর্ম তো নিষ্ফল হবে এবং অবশ্য তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত। অতএব তুমি আল্লাহরই ইবাদত কর এবং কৃতজ্ঞ হও।” — (সূরা যুমার: ৬৫-৬৬)
এই শিয়া মুফাসসির (মকবুল আহমদ) জাফর সাদিক থেকে ‘কাফী’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন: তার (আয়াতের) অর্থ হল: যদি তোমরা আলী’র বেলায়াতের (একচ্ছত্র কর্তৃত্ব বা অভিভাবকত্বের) সাথে কাউকে শরিক কর, তবে তার ফলে তোমার আমল নিষ্ফল হবে।[তরজমাতু মকবুল আহমদ, পৃ. ৯৩২]
আপনারা লক্ষ করুন কিভাবে তারা আয়াতের ব্যাখ্যায় জাফর সাদিকের উপর মিথ্যারোপ করে; অথচ এই আয়াতগুলোর বক্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ তথা একত্ববাদ প্রসঙ্গে; আর আল্লাহই হলেন সকল কিছুর সৃষ্টা। আর সকল প্রকার ইবাদত তাঁর জন্য হওয়াই বাঞ্ছনীয়। [এ আয়াত এগুলোই প্রমাণ হয়] কিভাবে তারা তা (আয়াত) বিকৃত করল এবং তার থেকে সুস্পষ্ট শির্ককে বৈধতার প্রমাণ পেশ করল? আল্লাহ তাদেরকে উপযুক্ত এর শাস্তি প্রদান করুন।
কুলাইনীর ‘উসুলুল কাফী’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে: “তারা (ইমামগণ) যা ইচ্ছা করে, তা হালাল করতে পারে; আবার যা ইচ্ছা করে, তা হারামও করতে পারে। আর তারা কখনও কিছুর ইচ্ছা করেন না, যতক্ষণ না মহান আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করেন। [উসুলুল কাফী, পৃ. ২৭৮]
অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَآ أَحَلَّ ٱللَّهُ لَكَ [سورة التحريم: ١]
“হে নবী! আল্লাহ যা তোমার জন্য হালাল করেছেন, তা তুমি কেন হারাম করলে”। — (সূরা তাহরীম: ১)
সুতরাং আল্লাহ যখন তাঁর রাসূলকে হালাল জিনিসকে হারাম করার কারণে সতর্ক করে দিয়েছেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্যের দ্বারা তা কী করে সম্ভব হতে পারে?
কুলাইনী আরও উল্লেখ করেন: ইমামগণ জানেন যে, তারা কখন মারা যাবেন; আর তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী মারা যাবেন। আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: কোন ইমাম যদি তার উপর আপতিত বিপদাপদ ও তার পরিণতি সম্পর্কে না জানে; তবে সে ইমাম আল্লাহর সৃষ্টির ব্যাপারে দলিল (হিসেবে গ্রহণযোগ্য) নয়। [উসুলুল কাফী]
আল্লাহ ﷻ বলেছেন:
قُل لَّا يَعۡلَمُ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلۡغَيۡبَ إِلَّا ٱللَّهُ [سورة النمل:٦٥]
“বল, আল্লাহ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বা গায়েবী বিষয়সমূহের জ্ঞান রাখে না”। — (সূরা আন-নমল: ৬৫) মহান আল্লাহ আরও বলেছেন
وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَ [سورة الأنعام: ٥٩]
“আর অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে, তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা জনে না”। — (সূরা আল-আন‘আম: ৫৯)
কিন্তু শিয়াগণ তাদের ইমামদেরকে অদৃশ্যের জ্ঞানের ব্যাপারে আল্লাহর সাথে শরিক করে।
দ্বিতীয়ত,
শিয়ারা কুরআনকে বিকৃত ও পরিবর্তিত মনে করে।
শিয়ারা বিশ্বাস করে তাদের নিকট বিদ্যমান কুরআন মুহাম্মাদের ﷺ উপর অবতীর্ণ অবিকল কুরআন নয়। এতে অনেক পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও কম-বেশী করা হয়েছে।
শিয়াদের অধিকাংশ মুহাদ্দিস বিশ্বাস করে যে, কুরআন শরীফে অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে। নুরী আত্-তাবারাসী ‘ফাসলুল খেতাব ফী তাহরীফে কিতাবি রাবিবল আরবাব’ কিতাবে তা স্বীকার করেছেন। [আল কুলাইনী: উসূলুল কাফী:১/২৮৪।]
মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকুব আল-কুলাইনী ‘উসূলুল কাফী’ গ্রন্থে ‘ইমামগণ ব্যতীত পূর্ণ কুরআন কেউ একত্র করেনি’ অনুচ্ছেদে জাবের হতে বর্ণনা করেন, আবু জা‘ফার বলেছেন, যে ব্যক্তি দাবী করে যে, আল্লাহ পূর্ণ কুরআন যেভাবে নাযিল করেছেন, অনুরূপ সে তা একত্র করেছে, তাহলে সে মিথ্যাবাদী, প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ যেভাবে কুরআন নাযিল করেছেন, আলী ইবনে আবী তালেব ও তার পরবর্তী ইমামগণ ছাড়া কেউ তা হুবহু একত্র ও সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়নি।’’ [আল কুলাইনী: উসূলুল কাফী: ১/২৮৫।]
হিশাম ইবনে সালেম হতে প্রমাণিত হয়েছে যে, আবু আব্দুল্লাহ বলেন, ‘যেই কুরআন জিবরীল মুহাম্মাদের নিকট নিয়ে আসেন, তা সতের হাজার আয়াত বিশিষ্ট।’ [তাদের শায়খ আল মাজলেসী স্বীয় ‘‘মিরআতুল উকুল ’’ নামক গ্রন্থে এই বর্ণনাটিকে নির্ভরযোগ্য]
এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, শিয়ারা যে কুরআনের দাবী করে, তা বিদ্যমান কুরআন থেকে অনেক বেশী, যার সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ নিজে গ্রহণ করেছেন। (নাউযুবিলাহ্ মিনহুম)
আহমাদ ত্বাবারাসী ‘‘আল-ইহ্তেজাজ’’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, ওমর রা. যায়েদ বিন ছাবেত রা.-কে বলেন, নিশ্চয় আলী রা. যে কুরআন নিয়ে এসেছে তাতে আনছার ও মুহাজিরদের ফাযিহাহ অর্থাৎ দোষত্রুটি প্রকাশ করা হয়েছে। এর বিপরীতে আমরা এমন এক কুরআন সংকলন করার ইচ্ছা করছি যা থেকে আনছার ও মুহাজিরদের সকল প্রকার ফাযিহা তথা বিষোদগার মোচন করা হবে। তার এ কথার প্রতি যায়েদ রা. সমর্থন জানিয়ে বলেন, আমি যদি আপনার চাহিদা অনুযায়ী কুরআন সংকলন সম্পন্ন করি, আর আলী রা. যদি তা জানতে পারে, তাহলে তিনি কি আপনার সংকলন বাতিল করে দেবেন না? ওমর রা. বললেন, এ থেকে বাঁচার উপায় কি? যায়েদ রা. বলেন, উপায় সম্পর্কে আপনি-ই ভাল জানেন। ওমর রা. বললেন, তাকে হত্যা করে তার থেকে নিরাপদ হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। অতঃপর খালেদ ইবনুল ওয়ালিদের মাধ্যমে তাকে হত্যা চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ওমর রা. যখন খলিফা নিযুক্ত হন তখন আলী রা.-কে বলেন যে, আমাদের নিকট কুরআন পেশ কর, তাহলে আমাদের কাছে যা রয়েছে তাতে কিছু তাহরীফ অর্থাৎ পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করব। ওমর রা. বলেন, হে আবুল হাসান! আবু বকর রা. এর কুরআনের ন্যায় যদি আমাদের কাছে কুরআন পেশ করেন, তাহলে আমরা তাতে একমত পোষণ করব। আলী রা. বলেন, হায়! আমার দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে।
নিশ্চয় এ কুরআন আমার সন্তানের মধ্যে থেকে আউসিয়া ও পবিত্র সত্বা ব্যতীত কেউ তা স্পর্শ করতে পারবে না। অতঃপর ওমর রা. বলেন, এটা প্রকাশের নির্দিষ্ট কোন সময় আছে কি? আলী রা. বলেন, হ্যাঁ! যখন আমার সন্তানদের মধ্য হতে কেউ দন্ডায়মান হবে, তখন তা প্রকাশ করা হবে। অতঃপর মানুষকে তা মানতে বাধ্য করা হবে।
তাকইয়া তথা অপকৌশল ও বাহানার আশ্রয় নিয়ে শিয়াগণ যতই বলুক, ‘কুরআন অপরিবর্তনীয়, তাতে কোন পরিবর্তন হয়নি,’ কিন্তু তাদের বিশ্বাস অনুরূপ নয়, কারণ তাদের বিশ্বস্ত লেখকদের লেখনীই বলে যে, তারা কুরআনের অবিকলতার ব্যাপারে আস্থাশীল নয়, বরং তাদের বিশ্বাস কুরআনে পরিবর্তন হয়েছে, এবং এটাই তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। কিন্তু তাদের ভয়, এ আকীদা যদি ব্যাপকভাবে প্রকাশ হয়, তাহলে তাদের মুখোশ খসে পড়বে। তাদের কুফরীর বিষয়টি সবার নিকট স্পষ্ট হয়ে যাবে। ফলশ্রুতিতে মহান এক বিপ্লবের সূচনা ঘটবে, যা তারা কখনোই পছন্দ করে না। তাদের আরেকটি বিশ্বাস কুরআন দু’টি : একটি প্রকাশ্য অপরটি অপ্রকাশ্য। রাফেযী শিয়ারা আরো বিশ্বাস করে যে, সূরা আলাম-নাশরাহ্ থেকে:
ورفعنا لك ذكرك بعلي صهرك
‘এবং তোমার জামাতা আলীর দ্বারা আমি তোমার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি।’
আয়াতটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এ মন্তব্য নুরী আত্-ত্বাবারাসী ‘‘ফাসলুল খিতাব ফী তাহরীফে কিতাবে রাবিবল আরবাব’’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, এ সুরাটি মক্কায় নাযিল হয়েছে, যখন আলী রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামাতা ছিলেন না, তবুও এ ডাহা মিথ্যাচারের কারণে তারা সামান্য লজ্জা বোধ করে না।
তৃতীয়ত,
শিয়ারা নবী ﷺ এর প্রায় সব সাহাবাদের কাফের বলে থাকে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাদের গাল-মন্দ করা ও তাদের কাফের বলাই শিয়াদের ধর্মীয় মূলনীতি। যেমন আল-কুলাইনী ‘ফুরু‘ আল-কাফী’ কিতাবে জা‘ফারের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন : ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর তিন ব্যক্তি ব্যতীত সমস্ত মানুষ মুরতাদ ছিল, আমি বললাম, ঐ তিনজন কারা? জবাবে বলেন, মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ, আবু যর গিফারী ও সালমান ফারেসী।’’
আল-মাজলেসী ‘বেহারুল আনওয়ার’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, আলী ইবনে হুসাইনের গোলাম বলেন, ‘‘আমি একদা একাকি অবস্থায় তার সাথে ছিলাম, অতঃপর আমি তাকে বললাম, নিশ্চয় আপনার প্রতি আমার অধিকার রয়েছে, আপনি কী আমাকে দুই ব্যক্তি তথা আবু বকর ও ওমর সম্পর্কে বলবেন ? তিনি বলেন, তারা দুজনই কাফের এবং যারা তাদেরকে ভালবাসবে তারাও কাফের।’’
আবু হামযাহ্ আল-সেমালী হতে বর্ণিত যে, আলী ইবনে হুসাইনকে দু’জন অর্থাৎ আবু বকর ও ওমার রা. সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলেন, তারা দু’জনই কাফের এবং যারা তাদেরকে ওলী হিসেবে গ্রহণ করবে তারাও কাফের।’’ [আল মাজলেসী: বেহারুল আনওয়ার-২৯/১৩৭-১৩৮, এখানে একটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত দেয়া অতীব জরুরী যে, আলী ইবনুল হুসাইন ও আহলুল বায়ত সকলেই এরূপ মিথ্যা ধারনা থেকে মুক্ত।]
আল্লাহর বাণী :
{ وَ یَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ وَ الۡبَغۡیِ }
‘‘তিনি অশ্লীলতা,মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন।’’(সূরা আন-নাহাল: ৯০)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল-কুম্মী বলেন, ‘‘ফাহশা অর্থ আবু বকর, মুনাকার অর্থ ওমর এবং বাগী অর্থ উসমান।’’
আল-কুম্মী উক্ত গ্রন্থের অপর স্থানে বলেন, আবু বকর, ওমর, উসমান ও মু‘আবিয়াহ্ সকলেই জাহান্নামের জ্বালানী কাষ্ঠ। নাউযুবিল্লাহ মিন যালেক।
‘এহ্কাকুল হক’ কিতাবে বর্ণিত, ‘‘হে আল্লাহ্! মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের বংশধরের উপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করো আর কুরাইশের দুই তাগুত ও মূর্তি এবং তাদের দুই কন্যার উপর লা‘নত বর্ষণ করো... ।
তাগুত ও মূর্তি দ্বারা তারা আবু বকর ও ওমর রা. এবং তাদের দুই কন্যা দ্বারা আয়েশা ও হাফছাকে বুঝায়।
আল-মাজলেসী তার ‘আল-আকায়েদ’ পুস্তিকায় উল্লেখ করেন, ইমামিয়াহ্ দীনের জন্য যে সব বিষয় জরুরী তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মেয়াদী বিবাহ ও তামাত্তু হজ হালাল জানা এবং তিনজন তথা আবু বকর, ওমর, উসমান ও মু‘আবিয়াহ্, ইয়াযিদ ইবনে মু‘আবিয়াহ্ এবং যারা আমীরুল মু‘মিনীন আলী রা.-র সাথে লড়াই করে, তাদের থেকে মুক্ত থাকা।
আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মাদ তার 'শিয়াদের আকীদা-বিশ্বাস' গ্রন্থে উল্লেখ করেন—"আশুরার দিন তারা একটি কুকুর নিয়ে আসে এবং কুকুরের নামকরণ করে ওমর অতঃপর তারা কুকুরটির উপর লাঠির আঘাত ও কংকর নিক্ষেপ করতে থাকে যতক্ষণ না মরে। কুকুরটি মারা যাওয়ার পর একটি বকরি ছানা নিয়ে আসে এবং তার নাম রাখে আয়েশা অতঃপর ঐ বকরি ছানার লোম উপড়াতে ও জুতা দ্বারা আঘাত করতে থাকে, বকরি ছানাটি না মরা পর্যন্ত এরূপ আঘাত করতেই থাকে।
অনুরূপভাবে ওমর রা.-র শাহাদাত দিবসে তারা আনন্দ অনুষ্ঠান পালন করে এবং তাঁর হত্যাকারীকে ‘বাবা শুজাউদ্দীন’ বা ‘বাবা ধর্মীয় বীর’ নামে খেতাব দেয়। আল্লাহ্ তা‘আলা সকল সাহাবা ও উম্মাহাতুল মু‘মিনীনদের প্রতি সন্তুষ্ট হোন।"
আল্লাহ ﷻ সাহাবাদের ব্যাপারে বলেছেন—
{ رَضِیَ اللّٰهُ عَنۡهُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡهُ }
আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন তারাও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট হয়েছে।(সুরা আল বায়্যিনাহ-৮)
চতুর্থত,
শিয়ারা পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে।
আব্বাস আল-কুমী তার ‘মুন্তাহাল আমাল’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে-
“আস-সাদিক আ. বলেন: যে ব্যক্তি আমাদের পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে না এবং মুত‘আ বিয়ের বৈধতাকে স্বীকৃতি দেয় না, সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়।” [ আব্বাস আল-কুমী, মুন্তাহাল আমাল, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৪১]
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী বলেন,
“ইবনু বাবুইয়া ‘এলালুশ শারায়ে‘ নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন, ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. বলেন: যখন ইমাম মাহাদী আত্মপ্রকাশ করবে, তখন তিনি অতিসত্বর আয়েশাকে জীবিত করবেন এবং তার উপর শাস্তির বিধান (হদ) কায়েম করবেন।” [আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন, পৃ. ৩৪৭]
মকবুল আহমদ আশ-শি‘য়ী তার ‘তরজুমাতুল কুরআন’-এ বর্ণনা করেন,
“ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. থেকে তাফসীরুল কুমী ও তাফসীরুল ‘আয়াশী’র মধ্যে বর্ণিত আছে যে, "الأخرة" দ্বারা উদ্দেশ্য হল, الرجعة বা পুনর্জন্ম। আর الرجعة বা পুনর্জন্ম মানে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইমামগণ কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে বিশেষ করে মুমিন ও কাফিরদের মধ্য থেকে ব্যক্তিবিশেষ দুনিয়ায় ফিরিয়ে আনবেন যাতে ভাল ও ঈমানকে সমুন্নত করা যায় এবং কুফর এবং পাপকে ধ্বংস করে দেয়া যায়।” [তরজুমাতু মকবুল আহমদ (ترجمة مقبول أحمد), পৃ. ৫৩৫]
মোল্লা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী ‘হক্কুল ইয়াকীন’ (حق اليقين) নামক গ্রন্থে দীর্ঘ আলোচনা পেশ করেন, যার সারকথা হল: যখন মাহাদী আ. (কিয়ামতের অল্প কিছুদিন পূর্বে) আত্মপ্রকাশ করবেন, তখন অতি শীঘ্রই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের দেয়াল ভেঙ্গে যাবে এবং তিনি আবূ বকর ও ওমরকে তাদের কবর থেকে বের করে নিয়ে আসবেন; অতঃপর তাদেরকে জীবিত করবেন এবং তাদেরকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করবেন (না‘উযুবিল্লাহ)।
অতঃপর তিনি মাহদী’র ব্যাপারে আরও উল্লেখ করেন,
"অতঃপর তিনি মানবজাতিকে একত্রিত হওয়ার নির্দেশ দিবেন; তারপর বিশ্ব জগতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত যুলুম (নির্যাতন) ও কুফরী প্রকাশ পেয়েছে, ঐসব যুলুম ও কুফরীর সকল পাপ তাদের (অর্থাৎ আবূ বকর ও ওমরের) আমলনামায় লিখা হবে। যে কোন যুগেই মুহাম্মদের বংশধরের মধ্যে যে রক্তপাত হয়েছে, বরং অন্যায়ভাবে যত রক্তপাত হয়েছে, যত অবৈধ মিলন হয়েছে, যত সুদী মাল অথবা যত অবৈধ সম্পদ খাওয়া হয়েছে এবং মাহাদী আগমনের পূর্ব পর্যন্ত যত পাপ ও অন্যায়-অত্যাচার সংঘটিত হয়েছে, নিশ্চিভাবে ঐসব কিছুই অচিরেই তাদের আমলনামায় হিসাব (গণনা) করা হবে। "[মোল্লা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين), পৃ. ৩৬০]
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী তার পরে আরও বর্ণনা করেন:
“নুমানী ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যখন ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশ করবে, তখন যে ব্যক্তি তার নিকট সর্বপ্রথম বায়‘আত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করবে, তিনি হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (না‘উযুবিল্লাহ); অতঃপর আলী আ. এবং আল্লাহ তা‘আলা তাকে ফেরেশতাদের দ্বারা সাহায্য করবেন। আর শাইখ আল-তুসী ও নুমানী ইমাম রেজা আ. থেকে বর্ণনা করেন যে, মাহদীর আগমনের অন্যতম নিদর্শন হল সে উলঙ্গ অবস্থায় সূর্যের সামনে আত্মপ্রকাশ করবে এবং আহ্বান করে বলবে এই হলেন আমীরুল মুমিনীন (মৃত্যুর পর) পুনরায় ফিরে এসেছেন যালিমদেরকে ধ্বংস করার জন্য।” [মোল্লা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين), পৃ. ৩৪৭]
আর এটা হল শিয়াদের বড় বড় মিথ্যাসমূহের মধ্যে অন্যতম, যা ইসলাম ও ইসলামী জীবন বিধান যার উপর প্রতিষ্ঠিত তার পরিপন্থী। আর সকল আসমানী ধর্ম এই ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ যে, নিশ্চয় সকল মানুষ এই দুনিয়ায় আমল করবে, অতঃপর মৃত্যুবরণ করবে, অতঃপর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার সামনে সমবেত হবে এবং সেখানে আল্লাহ তাদের সকল কৃতকর্মের হিসাব নেবেন। কিন্তু শিয়াগণ পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা অপবাদের মাধ্যমে মাহদীকে সৃষ্টির হিসাব গ্রহণকারীর আসনে সমাসীন করেছে। এই বর্ণনাসমূহ বাতিল ও অসার হওয়া সত্ত্বেও এর কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাইয়্যেদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর চরম অসম্মান হয়; কারণ, তারা উভয়জনকে ঐ মাহদীর নিকট বায়‘আত গ্রহণকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে, যিনি অচিরেই তাদের সন্তান হিসেবে আগমন করবেন। অতঃপর মাহদীর আত্মপ্রকাশ উলঙ্গ ও একেবারে কাপড় বিহীন হওয়া (তাও তার শানে চরম অপমানকর কথা)। তাছাড়া সম্মানিত শায়খাইন আবূ বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার তারা যে জঘন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ প্রকাশ করেছে, তা সমালোচনা ও পর্যালোচনার প্রয়োজন হয় না। কারণ, তা কুরআন ও সুন্নাহ থেকে উদ্ধৃত দলিল এবং যুক্তিভিত্তিক দলিলের পরিপন্থী। কেননা, কিভাবে সুস্থ বিবেক মেনে নেবে যে, ব্যক্তি তার পূর্ববর্তীদের পাপের বোঝা বহন করবে। সুতরাং সে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নয়; বরং বক্ষস্থিত হৃদয় প্রতিবন্ধী।
পঞ্চমত,
শিয়ারা তাকিয়া নীতিতে বিশ্বাসী।
আল-কাফী মিনাল উসূল গ্রন্থে বর্ণিত আছে,
“নিশ্চয় আল্লাহর দ্বীনের দশ ভাগের নয় ভাগ ‘তাকীয়া’ এর মধ্যে; যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ধর্ম নেই। আর নবীয তথা খেজুর থেকে গ্রহণ করা মদ ও মোজার উপর মাসেহ ব্যতীত সকল বস্তুর মধ্যে ‘তাকীয়া’ আছে।” [আল-কাফী মিনাল উসূল, ২য় খণ্ড, প্রকাশকাল: ১৯৬৮, পৃ. ২১৭ – ২১৯।]
আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“আবূ জাফর আ. বলেন: ‘তাকীয়া’ আমার এবং আমার বাপ-দাদাদের ধর্ম। যার ‘তাকিয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।” [উসুলুল কাফী, পৃ. ৪৮৪]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তোমরা তোমাদের দীনের ব্যাপারে ভয় কর এবং তাকে ‘তাকীয়া’ দ্বারা ঢেকে রাখ। কারণ, যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।” [উসুলুল কাফী, পৃ. ৪৮৩]
আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“সুলাইমান খালিদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন, নিশ্চয় তোমরা দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত; যে ব্যক্তি তা গোপন করবে, তাকে আল্লাহ সম্মানিত করবেন এবং যে ব্যক্তি তা প্রচার করবে, তাকে আল্লাহ অপমানিত করবেন।” [উসুলুল কাফী, পৃ. ৪৮৫]
"তাকীয়া হচ্ছে মানুষ তার মনের মধ্যে যা গোপন করে রাখে, কথায় ও কাজে তার বিপরীত প্রকাশ করা; যেমন কোন ব্যক্তির অপর কারোর সাথে প্রকাশ্যে ভদ্রতা ও নম্রতা প্রকাশ করে কথা বলা, তবে মনে মনে ও তার একান্ত লোকদের কাছে অভিশাপ দেয়া। এমনকি যদিও সেখানে কোন জোর করার মত কারণ নাও থাকে [আল-কাফী ফিল ফুরু‘উ, ৩য় খণ্ড, প্রকাশকাল: ১৯৬১, পৃ. ১৮৮ – ১৮৯।]।
‘তাকীয়া’র সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বর্ণনা প্রসঙ্গে খোমেনী তার গ্রন্থে বলে:
“তাকীয়া’র উদ্দেশ্য হল ইসলাম ও শিয়া মাযহাবকে হেফাযত করা; কারণ শিয়াগণ যদি তাকিয়া’র আশ্রয় গ্রহণ না করত, তবে অবশ্যই শিয়া চিন্তাধারা নিঃশেষ হয়ে যেত।” [আল-খামেনী, পৃ. ১৪৪।]
অপর অর্থে, শিয়াগণ ব্যতীত অন্যদের বিরুদ্ধে ‘তাকিয়া’কে ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে, এমনকি সমস্ত মুসলিমের বিরুদ্ধে। আর তা হবে কেবল শিয়া জা‘ফরীয়দের আকিদাকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য।
“শিয়া মাযহাবের মধ্যে ‘তাকিয়া’ (التقية)-র আকিদা বা বিশ্বাসের শিকড়ের সূত্রপাত হল সূরা আলে ইমরানের ২৮ নং আয়াত থেকে, যার মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿لَّا يَتَّخِذِ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلۡكَٰفِرِينَ أَوۡلِيَآءَ مِن دُونِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَۖ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ فَلَيۡسَ مِنَ ٱللَّهِ فِي شَيۡءٍ إِلَّآ أَن تَتَّقُواْ مِنۡهُمۡ تُقَىٰةٗۗ وَيُحَذِّرُكُمُ ٱللَّهُ نَفۡسَهُۥۗ وَإِلَى ٱللَّهِ ٱلۡمَصِيرُ ٢٨ ﴾ [سورة آل عمران: ٢٨]
“মুমিনগণ যেন মুমিনগণ ব্যতিত কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যে কেউ এইরূপ করবে, তার সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না; তবে ব্যতিক্রম, যদি তোমরা তাদের নিকট থেকে সতর্কতা অবলম্বন কর। আর আল্লাহ তাঁর নিজের সম্পর্কে তোমাদেরকে সাবধান করছেন এবং আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তন।” [সূরা আলে ইমরান: ২৮।]
পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরানের ২৮ নং আয়াতে মনের বিপরীত কথা বলার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে, তা শুধু কাফিরদের সাথে এবং বিশেষ কোন সংকটকালীন অবস্থায় কৌশল অবলম্বন করার জন্য সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। "[আহমদ ইবন তাইমিয়্যা, মিনহাজুস্ সুন্নাহ আন-নববীয়া ফী নকযে কালামেশ শিয়া ওয়াল কাদরিয়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ২১৩ ]
ইসলামে তাকিয়া নিষিদ্ধ। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
"তাক্বিয়া মুনাফিকের নিদর্শনসমূহের অন্যতম। বস্তুত এটাই প্রকৃত নিফাক বা দ্বিচারিতা।"[ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ২৬৩]
আল্লাহ ﷻ বলেন,
{وَ لِیَعۡلَمَ الَّذِیۡنَ نَافَقُوۡا ۚۖ وَ قِیۡلَ لَهُمۡ تَعَالَوۡا قَاتِلُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ اَوِ ادۡفَعُوۡا ؕ قَالُوۡا لَوۡ نَعۡلَمُ قِتَالًا لَّا تَّبَعۡنٰکُمۡ ؕ هُمۡ لِلۡکُفۡرِ یَوۡمَئِذٍ اَقۡرَبُ مِنۡهُمۡ لِلۡاِیۡمَانِ ۚ یَقُوۡلُوۡنَ بِاَفۡوَاهِهِمۡ مَّا لَیۡسَ فِیۡ قُلُوۡبِهِمۡ ؕ وَ اللّٰهُ اَعۡلَمُ بِمَا یَکۡتُمُوۡنَ }
"আর যাতে তিনি জেনে নেন মুনাফিকদেরকে। আর তাদেরকে বলা হয়েছিল, ‘এসো, আল্লাহর পথে লড়াই কর অথবা প্রতিরোধ কর’। তারা বলেছিল, ‘যদি আমরা লড়াই হবে জানতাম তবে অবশ্যই তোমাদেরকে অনুসরণ করতাম’। সেদিন তারা কুফরীর বেশি কাছাকাছি ছিল তাদের ঈমানের তুলনায়। তারা তাদের মুখে বলে, যা তাদের অন্তরসমূহে নেই। আর তারা যা গোপন করে সে সম্পর্কে আল্লাহ অধিক অবগত।"[৩:আলে ‘ইমরান-১৬৭]
আল মাউসূয়া আল-ফিক্বাইয়্যাহতে এসেছে,
"অধিকাংশ সুন্নী আলেমদের অভিমত হল যে, তাকিয়া সংক্রান্ত মূল নীতি হল ‘এটি নিষিদ্ধ’; এটা শুধুমাত্র প্রয়োজনের ক্ষেত্রে জায়েয, এবং শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় পরিমাণে অনুমোদিত। আল-কুরতুবী বলেন: তাকিয়া সম্পর্কে মূল নীতি হল যে মৃত্যু ভয়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা বা চরম ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলে তা জায়েয নয়এবং আমরা যতদূর জানি এর বিপরীতে কোনো বর্ণনা নেই সাহাবাদের মধ্যে মুআয ইবনে জাবাল থেকে এবং তাবেয়ীনদের মধ্যে মুজাহিদ থেকে বর্ণনা ছাড়া।" [মাওযূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ আল-কুয়েতিয়া, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ১৮৬-১৮৭]
ষষ্ঠত,
শিয়ারা মুত'আহ বিবাহে বিশ্বাসী।
শিয়াদের নিকট মুত‘আহ্ বা (Contract Marriage) এর অনেক বড় ফযিলত রয়েছে।
ফাতুহুল্লাহ্ আল-কাশানী ‘‘মিনহাজুস সাদেক্বীন’’ কিতাবে জা‘ফার আস্-সাদেক এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘নিশ্চয় এই মুত‘আহ্ বিবাহ আমার ও আমার পূর্ব পুরুষের ধর্মীয় নীতি। অতএব যে ব্যক্তি এই নীতির উপর আমল করল সেই আমার দীনের উপর আমল করল। আর যে ব্যক্তি এটাকে অস্বীকার করল সে আমার দীনকেই অস্বীকার করল। শুধু তাই নয় বরং সে মুরতাদ হয়ে গেল। আর এই বিবাহের ফলে যে সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে সেই সন্তানের মর্যাদা স্থায়ী স্ত্রীর সন্তানের চাইতে অধিক। মুত‘আহ্ বিবাহ অস্বীকারকারী কাফের মুরতাদ।’’
আল-কুম্মী ‘‘মান লা ইয়াহ্যুরহুল ফাক্বীহ্’’ গ্রন্থে আব্দুল্লাহ্ বিন সিনানের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেন, তিনি
আবু আব্দুল্লাহ্ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের (শিয়া) উপর প্রত্যেক নেশা জাতীয় পানীয় হারাম করেছেন এবং এর বিনিময়ে তাদেরকে মুত‘আহ্ বিবাহের বৈধতা দিয়েছেন।’’
মুল্লা ফাতহুলাহ্ আল-কাশানীর ‘‘তাফসীর মিনহাজুস্ সাদেক্বীন’’ গ্রন্থে এসেছে যে, ‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি একবার মুত‘আহ্ বিবাহ করবে তার এক তৃতীয়াংশ জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা হবে, যে ব্যক্তি দুইবার মুত‘আহ্ বিবাহ করবে তার দুই তৃতীয়াংশ জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা হবে। আর যে ব্যক্তি তিনবার মুত‘আহ্ বিবাহ করবে তাকে সম্পূর্ণরূপে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা হবে।’’
উক্ত গ্রন্থে আরো এসেছে, ‘‘নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি একবার মুত‘আহ্ বিবাহ করবে সে মহান আল্লাহর অসন্তোষ থেকে নিরাপদ থাকবে, যে দুইবার মুত‘আহ্ বিবাহ করবে তাকে নেককার পূণ্যবানদের সাথে হাশর করানো হবে, আর যে ব্যক্তি তিনবার মুত‘আহ্ বিবাহ করবে সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে।’’
উক্ত গ্রন্থে আরো বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি একবার মুত‘আহ্ বিবাহ করবে সে হুসাইনের মর্যাদা লাভ করবে, যে দুইবার মুত‘আহ্ বিবাহ করবে তার মর্যাদা হবে হাসানের ন্যায়, আর যে তিনবার মুত‘আহ বিবাহ করবে তার মর্যাদা হবে আলী ইবনে আবি তালেবের ন্যায়, এবং যে ব্যক্তি চারবার মুত‘আহ্ বিবাহ করবে তার মর্যাদা হবে আমার মর্যাদার ন্যায়।’’
প্রকৃত পক্ষে রাফেযী শিয়ারা মুত‘আহ্ বিবাহের ক্ষেত্রে সংখ্যার শর্তারোপ করে না। ‘‘ফুরুউল-কাফী’’ ও ‘‘আত-তুকইয়া ফী ফিকহে আহলিল বায়ত’’ গ্রন্থে রয়েছে, তিনি আবু আব্দুল্লাহ্ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘‘আমি তাকে মুত‘আহ্ বিবাহের সংখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি যে, মুত‘আহ্ বিবাহ কি চারটি? তিনি বলেন, তুমি একহাজার মুত‘আহ্ বিবাহ কর, কেননা এরা তো ভাড়াটিয়া (অতএব তোমার সাধ্যানুযায়ী যত পারো ভাড়া নাও)।
মুহাম্মাদ বিন মুসলিম আবু জা‘ফার হতে বর্ণনা করেন, তিনি মুত‘আহর ব্যাপারে বলেন, এর সংখ্যা শুধু চার-ই নয়, কারণ মুত‘আহ্ বিবাহে তালাক নেই এবং সে উত্তরাধিকারীও হয় না, এরা তো শুধুমাত্র ভাড়ায় খাটে।’’
এটা কিভাবে আল্লাহর মনোনীত দীন হতে পারে ? অথচ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
{وَ الَّذِیۡنَ هُمۡ لِفُرُوۡجِهِمۡ حٰفِظُوۡنَ ، اِلَّا عَلٰۤی اَزۡوَاجِهِمۡ اَوۡ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُهُمۡ فَاِنَّهُمۡ غَیۡرُ مَلُوۡمِیۡنَ، فَمَنِ ابۡتَغٰی وَرَآءَ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡعٰدُوۡنَ}
‘‘আর যারা তাদের নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী।তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে তারা ছাড়া, নিশ্চয় এতে তারা নিন্দিত হবে না। অতঃপর যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।’’ সূরা মুমিনুন : (৫-৭)
উক্ত আয়াতে প্রমাণিত হয় যে, নিকাহ্ তথা বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রী ও মালিকানাভূক্ত দাসীদের বৈধ করা হয়েছে, এর বাইরে সব হারাম। আর মুত‘আহ্ হচ্ছে ভাড়ায় খাটুনী নারী। সে আসলে স্ত্রী নয়। যে কারণে সে স্বামীর উত্তরাধিকারী হয় না এবং তাকে তালাক দেয়ারও প্রয়োজন হয় না। অতএব সে মহিলা ব্যাভিচারী যেনাকারী। আল্লাহর নিকট এরূপ অপকর্ম থেকে পানাহ চাই।
আশা করি এই লিখনীর মাধ্যমে শিয়া সম্প্রদায়ের বিষয়ে যৎসামান্য জানতে সক্ষম হয়েছেন।আল্লাহ ﷻ বিভ্রান্ত এই সম্প্রদায় থেকে মুসলিম উম্মাহকে হেফাযত করুন। আমিন।
তথ্য সহায়ক
১.প্রত্যেক শীয়ার প্রতি আমার নসিহত
-শায়খ আবু বকর জাবের-জাযায়েরি
২.শিয়াদের আকীদা-বিশ্বাস
-আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ আস সালাফী
৩.শী'আ মতবাদের বিস্তৃতি
-আব্দুল্লাহ আল-মাত্বরাফী
৪.শিয়া আকিদার অসরতা
-শাইখ মোঃ আব্দুস সাত্তার আত-তুনসাবী
৫.শিয়া আলেম ও অধিকাংশ মুসলিম আলেমের মধ্যে বিরোধের বাস্তব চিত্র
-সাঈদ ইসমাঈল
৬.কতিপয় প্রশ্ন যা শী'আ যুবকদের সত্যের দিকে ধাবিত করেছে
-সুলাইমান ইবন সালেহ আল-খারাশি
৭.'হিযবুল্লাহ' সম্পর্কে কী জানেন?
-আলী আস-সাদিক
৮.নুসাইরিয়া সম্প্রদায়
-ড. গালেব ইবন আলি আওয়াজি
৯.দ্বাদশ-ইমামী শী'আ ধর্মের মূলনীতিসমূহের সুস্পষ্ট রূপরেখা
-মুহিব্বুদ্দীন আল-খতিব
১০.আল বিদায়া ওয়াল নিহায়া
-ইবনে কাসির রহ.
১১.সীরাতে আয়েশা
-সাইয়্যেদ সুলাইমান নদভী রহ.