• আসসালামু আলাইকুম, খুব শীঘ্রই আমাদের ফোরামে মেজর কিছু চেঞ্জ আসবে যার ফলে ফোরামে ১-৩ দিন আপনারা প্রবেশ করতে পারবেন না। উক্ত সময়ে আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

বিবর্তনবাদের পরিচয় - বিবর্তনবাদের বিভ্রান্তি ১

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
690
Comments
1,222
Solutions
17
Reactions
7,100
Credits
5,773
পাশ্চাত্য বস্তুবাদের সবচেয়ে গুরুতর দিক হচ্ছে তিনটি।
(১) ডারউইনের (১৮০৯-১৮৮২ খৃ.) বিবর্তনবাদ। যা আল্লাহর অস্তিত্বকে যুক্তি দিয়ে অস্বীকার করে।​
(২) কার্লমার্কসের (১৮১৮-১৮৮৩) সাম্যবাদ। যা ন্যায়বিচার ভিত্তিক ইসলামী সমাজ ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে।​
(৩) ফ্রয়েডের (১৮৬৫-১৯৩৯)​
মনস্তত্ত্ববাদ বা ভোগবাদ। যা ইসলামী নৈতিকতাকে অস্বীকার করে। এই তিনটির কোন একটিতে বিশ্বাস রেখে কেউ ‘মুসলিম’ থাকতে পারবে না। উক্ত তিনটি মতবাদের ভিত্তি হ’ল ডারউইনের ‘বিবর্তনবাদ’। বিবর্তনবাদ সত্য হ’লে বাকী দু’টি সত্য। আর ওটি মিথ্যা হ’লে বাকী দু’টি মিথ্যা। মার্কস ও ফ্রয়েড উভয়েই বিবর্তনবাদকে তাদের মতবাদের ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করেছেন। বিবর্তনবাদের মূল কথা হ’ল, কোটি কোটি বছর পূর্বে আবদ্ধ পানিতে অতি সরল এককোষী জীবকণা সৃষ্টি হয়েছিল। সেখান থেকে বহুকোষী জীব সৃষ্টিহ’তে কেটে গেছে কয়েক কোটি বছর। অতঃপর তারা উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতে ভাগ হয়ে গেছে। এভাবে জেনেটিক কোষ বিশে−ষণের মাধ্যমে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, পৃথিবীতেই সকল জীবের উদ্ভব ঘটেছে। অন্যত্র জন্ম নেওয়া আদম-হাওয়া তত্ত্ব সন্দেহাতীতভাবে ভুল। যা ইব্রাহীমী ধর্ম সমূহে বর্ণিত হয়েছে।

প্রশ্ন হ’ল, তাদের দাবী মতে পৃথিবীতে আবদ্ধ পানিতে অতি সরল এককোষী জীবকণা প্রথমে কে সৃষ্টি করেছিল? আর তার আগে পানি কে সৃষ্টি করল?
প্রশ্নগুলির জবাব এসেছে কুরআনে। আল্লাহ বলেন, ‘আমরা পানি দ্বারা সকল প্রাণবান বস্তুকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?’ (আম্বিয়া ২১/৩০)।

এরপর এককোষী থেকে বহুকোষী কে বানাল? সেখান থেকে উদ্ভিদ ও প্রাণীতে কে ভাগ করল? প্রকৃতি যদি এগুলো করে থাকে, তাহ’লে সেই প্রকৃতির স্বরূপ কি? কে তাকে সৃষ্টি করল? বিজ্ঞানীদের নিকট এর কোন জবাব নেই। জবাব দিয়েছে কুরআন, ‘আল্লাহই নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে অনস্তিত্ব হ’তে অস্তিত্বে আনয়নকারী। যখন তিনি কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন, তখন তাকে বলেন, হও! অতঃপর তা হয়ে যায়’ (বাক্বারাহ ২/১১৭)।

বিবর্তনবাদের বক্তব্য হ’ল, মানুষ শুরুতে মানুষ ছিল না। বরং তারা বানর বা বানর জাতীয় পশুর বংশধর রূপে ভূপৃষ্ঠে আত্মপ্রকাশ করেছে। অর্থাৎ বানর থেকে ক্রমবিকাশ লাভ করে তারা এখন মানুষে পরিণত হয়েছে। এর জওয়াবে একটা বাচ্চা ছেলেও বলবে যে, যুগ যুগ ধরে বানর দেখে আসছি। কিন্তু কোন বানর তো কখনো মানুষ হয়নি এবং কোন মানুষ তো কখনো বানর হয়নি। তাছাড়া বানরের স্বভাব ও মানুষের স্বভাব তো এক নয়। উভয়ের জীবন প্রণালী তো এক নয়। তাহ’লে মানুষ কিভাবে বানরের উত্তরসুরী হ’ল? কিন্তু বিবর্তনবাদীরা যেকোন মূল্যে মানুষকে পশু বানিয়েই ছাড়বেন। আর সেজন্যেই তো তাদের হাত দিয়ে বের হয়েছে পুঁজিবাদ, সমাজবাদ, ফ্যাসিবাদ সহ মানবতাকে হত্যাকারী নানাবিধ নিকৃষ্ট মতবাদ। যা দিয়ে তারা পশুর মত নিষ্ঠুরতা নিয়ে সর্বত্র কেবল মানবতা বিরোধী কাজই করেন। বিশ্বের সর্বত্র তাদের হিংস্র নখর প্রসারিত। নিজেদের পশুত্বকে বৈধ করার জন্যই তারা এখন মানুষকে বানরের উত্তরসুরী বানাবার জন্য গলদঘর্ম হচ্ছেন। যদিও তা কখনই পারেননি। পারবেনও না কোনও দিন। এ ব্যাপারে তারা ডারউইনের মতবাদকে পুঁজি হিসাবে গ্রহণ করেছেন। যা স্রেফ একটি কল্পনা বিলাস মাত্র। আল্লাহ প্রেরিত অহি-র শাশ্বত বিধানের মোকাবিলায় যার কোনই মূল্য নেই। ইতিমধ্যেই এগুলি ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। কিন্তু নাস্তিক্যবাদী ধ্যান-ধারণার লোকদের অন্তর থেকে এগুলি বিচ্ছিন্ন হয়নি। আর এ ধরনের লোকদের অপতৎপরতার জন্যই বাংলাদেশের মত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এই বিষাক্ত মতবাদের ছোবল অব্যাহত রয়েছে। আর সেকারণ এখানকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে গর্ব করে বলেন, ‘আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেনি, বরং মানুষ আল্লাহকে সৃষ্টি করেছে। কেননা ‘আল্লাহ’ বলে কিছুই নেই’ (নাঊযুবিল্লাহ)।

ডারউইনের মতবাদ :
১৮৫৯ সালে চার্লস ডারউইনের The Origin of Species বা ‘প্রজাতির উৎস’ বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর এবং তাঁর শিষ্য টমাস হেনরী হাক্সলে (১৮২৫-১৮৯৫) অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক প্রকাশ্য সভায় বিশপ উইলবার ফোর্সকে বিতর্কে পরাস্ত করার পর তাঁর ক্রমবিকাশ মতবাদটি ব্যাপক খ্যাতি ও প্রতিপত্তি লাভ করে। এরপর থেকে এ তত্ত্বটি একটি প্রামাণ্য দলীল হিসাবে বিবেচিত হ’তে শুরু করে। তাঁর ধারণা মতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী জীবনে বেঁচে থাকার জন্য পরস্পরের সাথে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার সংগ্রামে লিপ্ত হয়। তখন ‘যোগ্যতম’ বেঁচে থাকে এবং অন্যেরা ধ্বংস ও লয়প্রাপ্ত হয়। বেঁচে যাওয়া সত্তা (Survivor) তার বংশধরদের মধ্যে এই সুফলদায়ক পরিবর্তন সংক্রমিত করতে সক্ষম হয়। আর এরই ফলে ক্রমবিকাশের নিয়মে নতুন জীবন পদ্ধতির উদ্ভব হয়। এ পদ্ধতিকেই ডারউইন Natural Selection বা ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ বলে অভিহিত করেছেন’ (৩৮)।

তবে এই পরিবর্তনের ফলে এক প্রজাতি অন্য প্রজাতিতে বিবর্তিত হবে, এমনটি তিনি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন। যেমন তিনি স্বীয় পৌত্রকে লেখা এক পত্রে বলেন, ‘এক প্রজাতি অন্য প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়েছে, যদিও এমন একটি ঘটনাও আমি প্রমাণ করতে পারবনা, তথাপি আমি এই তত্ত্বে বিশ্বাস করি’। ফলে যে সময় হ’তে ডারউইনের বিবর্তন-অনুকল্প (Hypothesis) অর্থাৎ এক প্রজাতির অন্য প্রজাতিতে রূপান্তর মতবাদকে একটি বৈজ্ঞানিক ধারণা হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তখন থেকেই এটি অন্যান্য বিজ্ঞানীদের নিকট সমালোচনার বিষয় হয়ে রয়েছে। ...এমনকি এর প্রধান মৌলিক সমস্যাগুলি চিহ্নিত করেছেন খোদ ডারউইনই। ...ফলে বর্তমান (বিংশ) শতাব্দীর প্রথম তিন দশকে ডারউইনের তত্ত্বের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে’ (বিবর্তন তত্ত্ব ৩-৪)।

আধুনিক মতাদর্শের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিতে গিয়ে ১৯৬৬ সালের ১০ই আগস্ট প্রকাশিত Oklahama City Times পত্রিকা লিখেছে, Accidental alteration in the mechanism of his heredity slowly by trial and error, made man better adapted his environment than of his rivals. That`s the accepted scientific view today, and scientists call this long, frequently bungling process 'evolution'.

‘বংশগতির যান্ত্রিকতায় দুর্ঘটনাজনিত পরিবর্তন ধীরে ধীরে পরীক্ষা ও ভুলের মধ্য দিয়ে মানুষকে পরিবেশের সাথে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অনেক উত্তম সামঞ্জস্যশীল বানিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে তাই হচ্ছে গৃহীত বৈজ্ঞানিক মত এবং বিজ্ঞানীরা এই দীর্ঘ ঘনঘন সংগঠিত ভণ্ডুল পদ্ধতিকে বলেন ‘বিবর্তন’ (৪২)।

ডারউইনের মত অনুসারে পরিবর্তনই হ’ল বিবর্তনের মূল উপাদান। পরিবর্তন না থাকলে বিবর্তনও থাকবে না। তিনি বিশ্বাস করতেন, এই পরিবর্তন দৈবচয়িত এবং অনির্দেশিত। তা শাবকের জন্য ক্ষতিকর, নিরপেক্ষ অথবা অনুকূলও হ’তে পারে। ...এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যোগ্যতমেরাই কেবল বেঁচে থাকে। আর এটাই ‘প্রকৃতির নির্বাচন’ হিসাবে অভিহিত (বিবর্তন তত্ত্ব পৃ. ৩)।... ১৯৩০ হ’তে ১৯৫০-এর দশক পর্যন্ত মেণ্ডেলের ‘জেনেটিক্সে’র সাথে ‘প্রাকৃতিক নির্বাচনে’র সিনথেসিস সংঘটিত হয় এবং তথাকথিত Synthetic Theory বা বিবর্তনের নব্য ডারউইন তত্ত্ব তৈরী হয়’ (বিবর্তন তত্ত্ব পৃ. ৪)। যা Neo-Darwinism বা ‘নব্য ডারউইনবাদ’ নামে খ্যাত হয়েছে (৪২)।

উদাহরণস্বরূপ, অতীতকালে আধুনিক জিরাফের পূর্ববংশ ছিল খাটো ঘাড় বিশিষ্ট। ওরা যখন বাঁচার জন্য সংগ্রামে লিপ্ত হ’ল, তখন ওরা গাছের উচ্চভাগে অবস্থিত পত্র-পল্লব সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় নামল। কতগুলি জিরাফ আঙ্গিক পরিবর্তন লাভের দরুণ অন্যদের তুলনায় কিছুটা লম্বা ঘাড় লাভ করল। তারা গাছের উচ্চতর শাখার পাতাগুলি আহরণ করতে সক্ষম হ’ল। ফলে দীর্ঘ ঘাড়ওয়ালারা বেঁচে থাকল এবং বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ পেল। যা এখনও অব্যাহত আছে (৪২)।

চলবে...



১. ‘বিবর্তন তত্ত্ব’ মুখবন্ধ, মূল : শেখ আব্দুল মাবুদ। ইংরেজী থেকে বঙ্গানুবাদ : শাহ হাবীবুর রহমান (প্রফেসর, অর্থনীতি)। সম্পাদনা : এ কে এম আজহারুল ইসলাম (প্রফেসর, পদার্থবিদ্যা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১ম প্রকাশ : ২০০০ সাল, মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ১১৪)।
 
Last edited:
Top