হাদিসের অপব্যাখ্যা আর কাকে বলে!
আরবি ভাষা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকলে হাদিসকে এভাবে অপব্যাখ্যা করা সম্ভব ছিল না।
যাহোক, হাদিসে বর্ণিত, هلم শব্দের সঠিক অর্থ থেকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্ত হাদিসটির মর্মার্থ উপলব্ধি করা যায়। هلم শব্দটির অর্থ হল, "আসুন, আমাদের সাথে যুক্ত হন।" এটি تعال (আসুন) শব্দেরও সমার্থক। যেমন: আরবি অভিধানে বলা হয়েছে,
هَلُمَّ
1. كَلِمَةٌ مُرَكَّبَةٌ مِنْ "هَا" التَّنْبِيهِ وَمِنْ "لُمَّ" أَيْ ضُمَّ نَفْسَكَ إِلَيْنَا، وَالدُّعَاءُ إِلَى الْقِيَامِ بِشَيْءٍ مَّا بِمَعْنَى تَعَالَ، ( معجم الغني)
অতএব উক্ত হাদিসের অর্থ হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেহরির খাবার খাওয়ার জন্য, তার কাছে অবস্থানকারী সাহাবিদেরকে আহবান করতেন। হাদিসের অর্থ এটা নয় যে, তিনি (তৎকালীন আরবের রীতি অনুযায়ী) রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কিংবা উঁচু কোন স্থানে বা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে মানুষকে ঘুম থেকে জাগাতেন আর বলে বেড়াতেন যে, উঠুন, রান্নাবান্না করুন, আর এক ঘন্টা সময় আছে, সেহরি খান... ইত্যাদি। নাউজুবিল্লাহ! হাদিসের মর্মার্থ ও উদ্দেশ্য মোটেও এটা নয়।
অতএব, হাদিসের অপব্যাখ্যা করে সমাজে বিদাতি কাজকে জায়েজ করার চেষ্টা চালাবেন না। কোন আলেমের জন্য এমনটি শোভনীয় নয়। এটি নিতান্তই গর্হিত ও নিন্দনীয় কাজ। বরং প্রত্যেকটি আলেমের উচিত, সমাজকে কিভাবে বিদাতি কার্যক্রম থেকে মুক্ত করা যায় সে চেষ্টা চালানো।
গভীর রাত থেকে মাইকে যেভাবে হাঁকডাক ও চিল্লাচিল্লি শুরু হয়, তা কোন ইসলামের রীতি ও সভ্যতার মধ্যে পড়ে না।
রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহ তায়ালা নিচের আসমানে নেমে আসেন। অনেক মানুষ তখন উঠে ইবাদত-বন্দেগি করেন, সালাত আদায় করেন এবং নিভৃতে আল্লাহর জিকির-আজকার এবং দোয়া-মোনাজাতে লিপ্ত থাকেন। কিন্তু সমাজের এইসব অর্বাচীন মোয়াজ্জিন এবং অতি উৎসাহী বক ধার্মিকদের মাইকের চিল্লাচিল্লির কারণে তাদের এবাদত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শিশু বাচ্চারা এ কারণে ঘুম থেকে জেগে যায়, মুমূর্ষ, অতি বৃদ্ধ, মুসাফির, ঋতুমতী ও প্রসূতি নারী ইত্যাদি যাদের উপরে রোজা ফরজ নয় এমন ব্যক্তিদের আরাম এবং ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। অমুসলিমদের কাছে ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। সর্বোপরি, এই বিদাতি কাজটি ভোররাত্রে আজানের সুন্নতের স্থান দখল করে বসেছে।
আর এটি বাস্তব কথা যে, যেখান থেকে সুন্নত উঠে যায় সেখানে বিদআত স্থান দখল করে।
ইবনুল হাজ আল মালেকি রাহ. [মৃত্যু: ১৩৩৬ খৃষ্টাব্দ] ভোররাতে সেহরির জন্য ডাকাডাকি প্রসঙ্গে যথার্থই বলেন,
وَيَنْهَى الْمُؤَذِّنِينَ عَمَّا أَحْدَثُوهُ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ مِنْ التَّسْحِيرِ ، لِأَنَّهُ لَمْ يَكُنْ فِي عَهْدِ النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَلَا أَمَرَ بِهِ ، وَلَمْ يَكُنْ مِنْ فِعْلِ مَنْ مَضَى، وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي الِاتِّبَاعِ لَهُمْ كَمَا تَقَدَّمَ .
“মুআজ্জিনগণ রমজান মাসে সেহরির সময় মানুষকে ডাকাডাকি করার যে বিদআত চালু করেছে সে ব্যাপারে তাদেরকে নিষেধ করতে হবে। কারণ তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে ছিলো না। তিনি তার আদেশও করেননি। এটি অতীত লোকদের (সালাফদের) কাজও ছিলো না। অথচ তাদের অনুসরণেই সকল কল্যাণ নিহীত রয়েছে-যেমনটি ইতোপূর্বে আলোচিত হয়েছে।” [আল মাদখাল ২/২৫৩]
অতএব, বন্ধ হোক গভীর রাতে সেহরির জন্য হাঁকডাক, চিল্লাচিল্লি এবং নিষ্প্রয়োজনীয় মাইকের ব্যবহার।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।
- আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
আরবি ভাষা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকলে হাদিসকে এভাবে অপব্যাখ্যা করা সম্ভব ছিল না।
যাহোক, হাদিসে বর্ণিত, هلم শব্দের সঠিক অর্থ থেকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্ত হাদিসটির মর্মার্থ উপলব্ধি করা যায়। هلم শব্দটির অর্থ হল, "আসুন, আমাদের সাথে যুক্ত হন।" এটি تعال (আসুন) শব্দেরও সমার্থক। যেমন: আরবি অভিধানে বলা হয়েছে,
هَلُمَّ
1. كَلِمَةٌ مُرَكَّبَةٌ مِنْ "هَا" التَّنْبِيهِ وَمِنْ "لُمَّ" أَيْ ضُمَّ نَفْسَكَ إِلَيْنَا، وَالدُّعَاءُ إِلَى الْقِيَامِ بِشَيْءٍ مَّا بِمَعْنَى تَعَالَ، ( معجم الغني)
অতএব উক্ত হাদিসের অর্থ হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেহরির খাবার খাওয়ার জন্য, তার কাছে অবস্থানকারী সাহাবিদেরকে আহবান করতেন। হাদিসের অর্থ এটা নয় যে, তিনি (তৎকালীন আরবের রীতি অনুযায়ী) রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কিংবা উঁচু কোন স্থানে বা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে মানুষকে ঘুম থেকে জাগাতেন আর বলে বেড়াতেন যে, উঠুন, রান্নাবান্না করুন, আর এক ঘন্টা সময় আছে, সেহরি খান... ইত্যাদি। নাউজুবিল্লাহ! হাদিসের মর্মার্থ ও উদ্দেশ্য মোটেও এটা নয়।
অতএব, হাদিসের অপব্যাখ্যা করে সমাজে বিদাতি কাজকে জায়েজ করার চেষ্টা চালাবেন না। কোন আলেমের জন্য এমনটি শোভনীয় নয়। এটি নিতান্তই গর্হিত ও নিন্দনীয় কাজ। বরং প্রত্যেকটি আলেমের উচিত, সমাজকে কিভাবে বিদাতি কার্যক্রম থেকে মুক্ত করা যায় সে চেষ্টা চালানো।
গভীর রাত থেকে মাইকে যেভাবে হাঁকডাক ও চিল্লাচিল্লি শুরু হয়, তা কোন ইসলামের রীতি ও সভ্যতার মধ্যে পড়ে না।
রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহ তায়ালা নিচের আসমানে নেমে আসেন। অনেক মানুষ তখন উঠে ইবাদত-বন্দেগি করেন, সালাত আদায় করেন এবং নিভৃতে আল্লাহর জিকির-আজকার এবং দোয়া-মোনাজাতে লিপ্ত থাকেন। কিন্তু সমাজের এইসব অর্বাচীন মোয়াজ্জিন এবং অতি উৎসাহী বক ধার্মিকদের মাইকের চিল্লাচিল্লির কারণে তাদের এবাদত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শিশু বাচ্চারা এ কারণে ঘুম থেকে জেগে যায়, মুমূর্ষ, অতি বৃদ্ধ, মুসাফির, ঋতুমতী ও প্রসূতি নারী ইত্যাদি যাদের উপরে রোজা ফরজ নয় এমন ব্যক্তিদের আরাম এবং ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। অমুসলিমদের কাছে ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। সর্বোপরি, এই বিদাতি কাজটি ভোররাত্রে আজানের সুন্নতের স্থান দখল করে বসেছে।
আর এটি বাস্তব কথা যে, যেখান থেকে সুন্নত উঠে যায় সেখানে বিদআত স্থান দখল করে।
ইবনুল হাজ আল মালেকি রাহ. [মৃত্যু: ১৩৩৬ খৃষ্টাব্দ] ভোররাতে সেহরির জন্য ডাকাডাকি প্রসঙ্গে যথার্থই বলেন,
وَيَنْهَى الْمُؤَذِّنِينَ عَمَّا أَحْدَثُوهُ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ مِنْ التَّسْحِيرِ ، لِأَنَّهُ لَمْ يَكُنْ فِي عَهْدِ النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَلَا أَمَرَ بِهِ ، وَلَمْ يَكُنْ مِنْ فِعْلِ مَنْ مَضَى، وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي الِاتِّبَاعِ لَهُمْ كَمَا تَقَدَّمَ .
“মুআজ্জিনগণ রমজান মাসে সেহরির সময় মানুষকে ডাকাডাকি করার যে বিদআত চালু করেছে সে ব্যাপারে তাদেরকে নিষেধ করতে হবে। কারণ তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে ছিলো না। তিনি তার আদেশও করেননি। এটি অতীত লোকদের (সালাফদের) কাজও ছিলো না। অথচ তাদের অনুসরণেই সকল কল্যাণ নিহীত রয়েছে-যেমনটি ইতোপূর্বে আলোচিত হয়েছে।” [আল মাদখাল ২/২৫৩]
অতএব, বন্ধ হোক গভীর রাতে সেহরির জন্য হাঁকডাক, চিল্লাচিল্লি এবং নিষ্প্রয়োজনীয় মাইকের ব্যবহার।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।
- আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
Last edited by a moderator: