• আসসালামু আলাইকুম, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের ফোরামে মেজর কিছু চেঞ্জ আসবে যার ফলে ফোরামে ১-৩ দিন মেইনটেনেন্স মুডে থাকবে। উক্ত সময়ে আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানাচ্ছি।
‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

বিদআত বিদআত পরিচিতির মূলনীতি ও বিদআতের মৌলিক নীতিমালা

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
690
Comments
1,222
Solutions
17
Reactions
7,102
Credits
5,779
ভূমিকা: আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা যিনি আমাদেরকে সত্যপথের দিকে হিদায়াত দিয়েছেন। সালাত ও সালাম পেশ করছি মহানবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লামের ওপর যিনি সুন্নাত ও বিদআত সম্পর্কে উম্মতকে সম্যক দিক-নির্দেশনা দান করেছেন এবং সালাম পেশ করছি তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবায়ে কেরামের ওপরও।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত অনুসরণের অপরিহার্যতা সম্পর্কে মুসলিম মাত্রই অবহিত। সুন্নাতের বিপরীত মেরুতে অবস্থান হচ্ছে বিদআতের। সে কারণেই বিদআত থেকে বেঁচে থাকা ওয়াজিব এবং বিদআতে লিপ্ত হওয়া হারাম। বর্তমান সমাজের চালচিত্রে বিদআতের প্রচলন আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সুন্নাত ও বিদআত উভয়ের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণে পর্যাপ্ত জ্ঞানের যথেষ্ট অভাবই মূলতঃ এর কারণ। সুন্নাত মনে করেই বহু মানুষ বিদআতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এ ভুল ধারণার কারণে বিদআত থেকে মুক্তিলাভ হয়ে পড়ে আরো দুরূহ।

বিদআতকে সহজে চিহ্নিত করার জন্য তাই প্রয়োজন এ সম্পর্কিত মৌলিক ও সাধারণ নীতিমালা সম্পর্কে অবগত হওয়া। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সবার পক্ষে বিদআতকে চিহ্নিত করা যাতে সহজ হয় সে উদ্দেশ্যে এ পুস্তিকাটি একটি প্রাথমিক প্রয়াস। এ সম্পর্কে বিদগ্ধ পাঠকবর্গের সুচিন্তিত ও দলীল নির্ভর যে কোনো মতামতকে অত্যন্ত ধন্যবাদের সাথে স্বাগত জানাই। আল্লাহ আমাদের সকলের ভালো কথা ও কাজ কবুল করুন। আমীন!!

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

আল্লাহর নিকট ইসলামই হচ্ছে একমাত্র মনোনীত দীন। আল-কুরআনে তিনি বলেন,

﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ﴾ [ال عمران: ٨٥]​

‘‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন অনুসন্ধান করে, তা কখনোই তার কাছ থেকে গ্রহণ করা হবে না’’। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫]

এ দীনকে পরিপূর্ণ করার ঘোষণাও আল্লাহ আল-কুরআনে দিয়েছেন,

﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗا﴾ [المائ‍دة: ٣]​

‘‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’’ [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩]

এ ঘোষণার পর আল-কুরআন ও সুন্নাহ’র বাইরে দীনের মধ্যে নতুন কোনো বিষয় সংযোজিত হওয়ার পথ চিরতরে রুদ্ধ হয়ে গেল এবং বিদআত তথা নতুন যে কোনো বিষয় দীনী আমল ও আকীদা হিসেবে দীনের অন্তর্ভুক্ত হওয়াও হারাম হয়ে গেল। এ আলোচনায় বিদআতের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরার পাশাপাশি কীভাবে আমাদের সমাজে প্রচলিত বিদআতগুলোকে সনাক্ত করা যায় সে সম্পর্কিত মূলনীতি তুলে ধরা হবে।

বিদআতের সংজ্ঞা:

বিদআত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো:

اَلشَّيْءُ الْمُخْتَرَعُ عَلٰى غَيْرِ مِثَالٍ سَابِقٍ​

অর্থাৎ পূর্ববর্তী কোনো নমুনা ছাড়াই নতুন আবিষ্কৃত বিষয়।[1]

আর শরী‘আতের পরিভাষায়-

مَا أُحْدِثَ فِى دِيْنِ اللهِ وَلَيْسَ لَهُ أَصْلٌ عَامٌ وَلاَخَاصٌّ يَدُلُّ عَلَيْهِ​

অর্থাৎ আল্লাহর দীনের মধ্যে নতুন করে যার প্রচলন করা হয়েছে এবং এর পক্ষে শরী‘আতের কোনো ব্যাপক ও সাধারণ কিংবা খাস ও সুনির্দিষ্ট দলীল নেই।[2]

এ সংজ্ঞাটিতে তিনটি বিষয় লক্ষণীয়:

১. নতুনভাবে প্রচলন অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে এর কোনো প্রচলন ছিল না এবং এর কোনো নমুনাও ছিল না।

২. এ নব প্রচলিত বিষয়টিকে দীনের মধ্যে সংযোজন করা এবং ধারণা করা যে, এটি দীনের অংশ।

৩. নব প্রচলিত এ বিষয়টি শরী‘আতের কোনো ‘আম বা খাস দলীল ছাড়াই চালু ও উদ্ভাবন করা।

সংজ্ঞার এ তিনটি বিষয়ের একত্রিত রূপ হল বিদআত, যা থেকে বিরত থাকার কঠোর নির্দেশ শরী‘আতে এসেছে। কঠোর নিষেধাজ্ঞার এ বিষয়টি হাদীসে বারবার উচ্চারিত হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম বলেছেন,

«وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ».​

‘‘তোমরা (দীনের) নব প্রচলিত বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদআ‘ত এবং প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা’’।[3]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম তাঁর এক খুতবায় বলেছেন:

«إِنَّ أَصْدَقَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللهِ وَأَحْسَنَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِي النَّارِ».​

‘‘নিশ্চয় সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।[4]

বিদআতের বৈশিষ্ট্য:

বিদআতের চারটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

১. বিদআতকে বিদআত হিসেবে চেনার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো দলীল পাওয়া যায় না; তবে তা নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে মূলনীতিগত ‘আম ও সাধারণ দলীল পাওয়া যায়।

২. বিদআত সবসময়ই শরী‘আতের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও মাকাসিদ এর বিপরীত ও বিরোধী অবস্থানে থাকে। আর এ বিষয়টিই বিদআত নিকৃষ্ট ও বাতিল হওয়ার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এ জন্যই হাদীসে বিদআতকে ভ্রষ্টতা বলে অভিহিত করা হয়েছে।

৩. অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদআত এমন সব কার্যাবলী সম্পাদনের মাধ্যমে হয়ে থাকে যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে প্রচলিত ছিল না। ইমাম ইবনুল জাওযী রহ: বলেন,

البِدْعَةُ عِبارةٌ عَنْ فِعلٍ لَمْ يَكُنْ فابتُدِعَ​

‘বিদআত বলতে বুঝায় এমন কাজকে যা ছিল না, অতঃপর তা উদ্ভাবন করা হয়েছে’।[5]

৪. বিদআতের সাথে শরী‘আতের কোনো কোনো ইবাদাতের কিছু মিল থাকে। দু’টো ব্যাপারে এ মিলগুলো লক্ষ্য করা যায়:

প্রথমত: দলীলের দিক থেকে এভাবে মিল রয়েছে যে, কোনো একটি ‘আম দলীল কিংবা সংশয় অথবা ধারণার ভিত্তিতে বিদআতটি প্রচলিত হয় এবং খাস ও নির্দিষ্ট দলীলকে পাশ কাটিয়ে এ ‘আম দলীল কিংবা সংশয় অথবা ধারণাটিকে বিদআতের সহীহ ও সঠিক দলীল বলে মনে করা হয়।

দ্বিতীয়ত: শরী‘আত প্রণীত ইবাদাতের রূপরেখা ও পদ্ধতির সাথে বিদআতের মিল তৈরী করা হয় সংখ্যা, আকার-আকৃতি, সময় বা স্থানের দিক থেকে কিংবা হুকুমের দিক থেকে। এ মিলগুলোর কারণে অনেকে একে বিদআত মনে না করে ইবাদাত বলে গণ্য করে থাকেন।

বিদআত নির্ধারণে মানুষের মতপার্থক্য:

বিদআত নির্ধারণে মানুষ সাধারণতঃ তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত:

এক: দলীল পাওয়া যায় না এমন প্রতিটি বিষয়কে এক শ্রেণির মানুষ বিদআত হিসেবে চিহ্নিত করছে এবং এক্ষেত্রে তারা বিশেষ বাছ-বিচার না করেই সব কিছুকে (এমন কি মু‘আমালার বিষয়কেও) বিদআত বলে অভিহিত করছে। এদের কাছে বিদআতের সীমানা বহুদূর বিস্তৃত।

দুই: যারা দীনের মধ্যে নব উদ্ভাবিত সকল বিষয়কে বিদআত বলতে রাজী নয়; বরং বড় বড় নতুন কয়েকটিকে বিদআত বলে বাকী সবকিছু শরী‘আতভুক্ত বলে তারা মনে করে। এদের কাছে বিদআতের সীমানা খুবই ক্ষুদ্র।

তিন: যারা যাচাই-বাছাই করে শুধুমাত্র প্রকৃত বিদআতকেই বিদআত বলে অভিহিত করে থাকেন। এরা মধ্যম পন্থাবলম্বী এবং হকপন্থী।

বিদআতের মৌলিক নীতিমালা:

বিদআতের তিনটি মৌলিক নীতিমালা রয়েছে। সেগুলো হলো:

১. এমন ‘আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশা করা যা শরী‘আত সিদ্ধ নয়। কেননা শরী‘আতের স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম হলো: এমন আমল দ্বারা আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশা করতে হবে যা কুরআনে আল্লাহ নিজে কিংবা সহীহ হাদীসে তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম অনুমোদন করেছেন। তাহলেই কাজটি ইবাদাত বলে গণ্য হবে। পক্ষান্তরে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম যে আমল অনুমোদন করেন নি সে আমলের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদাত করা হবে বিদআত।

২. দীনের অনুমোদিত ব্যবস্থা ও পদ্ধতির বাইরে অন্য ব্যবস্থার অনুসরণ ও স্বীকৃতি প্রদান। ইসলামে একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, শরী‘আতের বেঁধে দেওয়া পদ্ধতি ও বিধানের মধ্যে থাকা ওয়াজিব। যে ব্যক্তি ইসলামী শরী‘আত ব্যতীত অন্য বিধান ও পদ্ধতি অনুসরণ করল ও তার প্রতি আনুগত্যের স্বীকৃতি প্রদান করল সে বিদআতে লিপ্ত হল।

৩. যে সকল কর্মকাণ্ড সরাসরি বিদআত না হলেও বিদআতের দিকে পরিচালিত করে এবং পরিশেষে মানুষকে বিদআতে লিপ্ত করে, সেগুলোর হুকুম বিদআতেরই অনুরূপ।

জেনে রাখা ভালো যে, ‘সুন্নাত’-এর অর্থ বুঝতে ভুল হলে বিদআত চিহ্নিত করতেও ভুল হবে। এদিকে ইঙ্গিত করে ইমাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন, ‘‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সুন্নাতকে বিদআত থেকে পৃথক করা। কেননা সুন্নাত হচ্ছে ঐ বিষয়, শরী‘আত প্রণেতা যার নির্দেশ প্রদান করেছেন। আর বিদআত হচ্ছে ঐ বিষয় যা শরী‘আত প্রণেতা দীনের অন্তর্ভুক্ত বলে অনুমোদন করেন নি। এ বিষয়ে মানুষ মৌলিক ও অমৌলিক অনেক ক্ষেত্রে প্রচুর বিভ্রান্তির বেড়াজালে নিমজ্জিত হয়েছে। কেননা প্রত্যেক দলই ধারণা করে যে, তাদের অনুসৃত পন্থাই হলো সুন্নাত এবং তাদের বিরোধীদের পথ হলো বিদআত।’’[6]

বিদআতের উল্লিখিত তিনটি প্রধান মৌলিক নীতিমালার আলোকে বিদআতকে চিহ্নিত করার জন্য আরো বেশ কিছু সাধারণ নীতিমালা শরী‘আত বিশেষজ্ঞ আলিমগণ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যার দ্বারা একজন সাধারণ মানুষ সহজেই কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসের ভিত্তিতে বিদআতের পরিচয় লাভ করতে পারে ও সমাজে প্রচলিত বিদআতসমূহকে চিহ্নিত করতে পারে। কেননা প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব হলো শরী‘আতের দৃষ্টিতে যা বিদআত তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে জেনে নেওয়া ও তা থেকে পুরোপুরি বেঁচে থাকা। নিচে উদাহরণ স্বরূপ কিছু দৃষ্টান্তসহ আমরা অতীব গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় নীতিমালা উল্লেখ করছি।

প্রথম নীতি: অত্যধিক দুর্বল, মিথ্যা ও জাল হাদীসের ভিত্তিতে যে সকল ইবাদাত করা হয়, তা শরী‘আতে বিদআত বলে বিবেচিত।

এটি বিদআত চিহ্নিত করার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নীতি। কেননা ইবাদাত হচ্ছে পুরোপুরি অহী নির্ভর। শরী‘আতের কোনো বিধান কিংবা কোনো ইবাদাত শরী‘আতের গ্রহণযোগ্য সহীহ দলীল ছাড়া সাব্যস্ত হয় না। জাল বা মিথ্যা হাদীস মূলতঃ হাদীস নয়। অতএব, এ ধরনের হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হওয়া কোনো বিধান বা ইবাদাত শরী‘আতের অংশ হওয়া সম্ভব নয় বিধায় সে অনুযায়ী আমল বিদআত হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে থাকে। অত্যধিক দুর্বল হাদীসের ব্যাপারে জমহুর মুহাদ্দিসগণের মত হল এর দ্বারাও শরী‘আতের কোনো বিধান সাব্যস্ত হবে না।

উদাহরণ: রজব মাসের প্রথম জুমু‘আর রাতে অথবা ২৭শে রজব যে বিশেষ শবে মি‘রাজের সালাত আদায় করা হয় তা বিদআত হিসেবে গণ্য। অনুরূপভাবে নিসফে শা‘বান বা শবে বরাতে যে ১০০ রাকাত সালাত বিশেষ পদ্ধতিতে আদায় করা হয় যাকে সালাতুর রাগায়েব বলেও অভিহিত করা হয়, তাও বিদআত হিসেবে গণ্য। কেননা এর ফযীলত সম্পর্কিত হাদীসটি জাল।[7]

দ্বিতীয় নীতি: যে সকল ইবাদাত শুধুমাত্র মনগড়া মতামত ও খেয়াল-খুশীর ওপর ভিত্তি করে প্রণীত হয় সে সকল ইবাদাত বিদআত হিসেবে গণ্য। যেমন, কোনো এক ‘আলিম বা আবেদ ব্যক্তির কথা কিংবা কোনো দেশের প্রথা অথবা স্বপ্ন কিংবা কাহিনী যদি হয় কোনো ‘আমল বা ইবাদাতের দলীল তাহলে তা হবে বিদআত।

দীনের প্রকৃত নীতি হলো: আল-কুরআন ও সুন্নাহ’র মাধ্যমেই শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের কাছে জ্ঞান আসে। সুতরাং শরী‘আতের হালাল-হারাম এবং ইবাদাত ও ‘আমল নির্ধারিত হবে এ দু’টি দলীলের ভিত্তিতে। এ দু’টি দলীল ছাড়া অন্য পন্থায় স্থিরীকৃত ‘আমল ও ইবাদাত তাই বিদআত বলে গণ্য হবে। এ জন্যই বিদআতপন্থীগণ তাদের বিদআতগুলোর ক্ষেত্রে শরঈ‘ দলীলের অপব্যাখ্যা করে সংশয় সৃষ্টি করে। এ প্রসঙ্গে ইমাম শাতেবী রহ. বলেন, “সুন্নাতী তরীকার মধ্যে আছে এবং সুন্নাতের অনুসারী বলে দাবীদার যে সকল ব্যক্তি সুন্নাতের বাইরে অবস্থান করছে, তারা নিজ নিজ মাসআলাগুলোতে সুন্নাহ্ দ্বারা দলীল পেশের ভান করেন।’’[8]

উদাহরণ:

১। কাশফ, অন্তর্দৃষ্টি তথা মুরাকাবা-মুশাহাদা, স্বপ্ন ও কারামাতের ওপর ভিত্তি করে শরী‘আতের হালাল হারাম নির্ধারণ করা কিংবা কোনো বিশেষ ‘আমল বা ইবাদাতের প্রচলন করা।[9]

২। শুধুমাত্র ‘আল্লাহ’ কিংবা হু-হু’ অথবা ‘ইল্লাল্লাহ’ এর যিকির উপরোক্ত নীতির আলোকে ইবাদাত বলে গণ্য হবে না। কেননা কুরআন কিংবা হাদীসের কোথাও এরকম যিকির অনুমোদিত হয় নি।[10]

৩। মৃত অথবা অনুপস্থিত সৎব্যক্তিবর্গকে আহ্বান করা, তাদের কাছে প্রার্থনা করা ও সাহায্য চাওয়া, অনুরূপভাবে ফিরিশতা ও নবী-রসূলগণের কাছে দো‘আ করাও এ নীতির আলোকে বিদআত বলে সাব্যস্ত হবে। শেষোক্ত এ বিদআতটি মূলতঃ শেষ পর্যন্ত বড় শির্কে পরিণত হয়।

তৃতীয় নীতি: কোনো বাধা-বিপত্তির কারণে নয় বরং এমনিতেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম যে সকল ‘আমল ও ইবাদাত থেকে বিরত থেকেছিলেন, পরবর্তীতে তার উম্মাতের কেউ যদি সে ‘আমল করে, তবে তা শরী‘আতে বিদআত হিসেবে গণ্য হবে।

কেননা তা যদি শরী‘আতসম্মত হত তাহলে তা করার প্রয়োজন বিদ্যমান ছিল। অথচ কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়াই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম সে ‘আমল বা ইবাদাত ত্যাগ করেছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ‘আমলটি শরী‘আতসম্মত নয়। অতএব, সে ‘আমল করা যেহেতু আর কারো জন্য জায়েয নেই, তাই তা করা হবে বিদআত।

উদাহরণ:

১। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও জুমা‘ ছাড়া অন্যান্য সালাতের জন্য ‘আযান দেওয়া। উপরোক্ত নীতির আলোকে বিদআত বলে গণ্য হবে।

২। সালাত শুরু করার সময় মুখে নিয়তের বাক্য পড়া। যেহেতু রাসূলুল্লঅহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম ও সাহাবীগণ এরূপ করা থেকে বিরত থেকেছিলেন এবং নিয়ত করেছিলেন শুধু অন্তর দিয়ে, তাই নিয়তের সময় মুখে বাক্য পড়া বিদআত বলে গণ্য হবে।

৩। বিপদাপদ ও ঝড়-তুফান আসলে ঘরে আযান দেওয়াও উপরোক্ত নীতির আলোকে বিদআত বলে গণ্য হবে। কেননা বিপদাপদে কী পাঠ করা উচিৎ বা কী ‘আমল করা উচিৎ তা হাদীসে সুন্দরভাবে বর্ণিত আছে।

৪। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লামের জন্মোৎসব পালনের জন্য কিংবা আল্লাহর কাছে সাওয়াব ও বরকত লাভের প্রত্যাশায় অথবা যে কোনো কাজে আল্লাহর সাহায্য লাভের উদ্দেশে মিলাদ পড়া উপরোক্ত নীতির আলোকে বিদআত বলে গণ্য হবে।

চতুর্থ নীতি: সালাফে সালেহীন তথা সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈন যদি কোনো বাধা না থাকা সত্ত্বেও কোনো ইবাদাতের কাজ করা কিংবা বর্ণনা করা অথবা লিপিবদ্ধ করা থেকে বিরত থেকে থাকেন, তাহলে এমন পরিস্থিতিতে তাদের বিরত থাকার কারণে প্রমাণিত হয় যে, কাজটি তাদের দৃষ্টিতে শরী‘আতসিদ্ধ নয়। কারণ, তা যদি শরী‘আতসিদ্ধ হত তাহলে তাদের জন্য তা করার প্রয়োজন বিদ্যমান ছিল। তা সত্ত্বেও যেহেতু তারা কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়াই উক্ত ‘আমল ত্যাগ করেছেন, তাই পরবর্তী যুগে কেউ এসে সে ‘আমাল বা ইবাদাত প্রচলিত করলে তা হবে বিদআত।

হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘‘যে সকল ইবাদাত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লামের সাহাবীগণ করেন নি তোমরা সে সকল ইবাদাত কর না।’’[11]

মালিক ইবন আনাস রহ. বলেন, ‘‘এই উম্মাতের প্রথম প্রজন্ম যে ‘আমল দ্বারা সংশোধিত হয়েছিল একমাত্র সে ‘আমল দ্বারাই উম্মাতের শেষ প্রজন্ম সংশোধিত হতে পারে।’’[12]

ইমাম ইবন তাইমিয়া রহ. কিছু বিদআতের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বলেন, ‘‘এ কথা জানা যে, যদি এ কাজটি শরী‘আতসম্মত ও মুস্তাহাব হত যদ্দ্বারা আল্লাহ সাওয়াব দিয়ে থাকেন, তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি অবহিত থাকতেন এবং অবশ্যই তাঁর সাহাবীদেরকে তা জানাতেন, আর তাঁর সাহাবীরাও সে বিষয়ে অন্যদের চেয়েও বেশি অবহিত থাকতেন এবং পরবর্তী লোকদের চেয়েও এ ‘আমলে বেশি আগ্রহী হতেন। কিন্তু যখন তারা এ প্রকার ‘আমলের দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপই করলেন না তাতে বোঝা গেল যে, তা নব উদ্ভাবিত এমন বিদআত যাকে তারা ইবাদাত, নৈকট্য ও আনুগত্য হিসেবে বিবেচনা করতেন না। অতএব, এখন যারা একে ইবাদাত, নৈকট্য, সাওয়াবের কাজ ও আনুগত্য হিসাবে প্রদর্শন করছে তারা সাহাবীদের পথ ভিন্ন অন্য পথ অনুসরণ করছেন এবং দীনের মধ্যে এমন কিছুর প্রচলন করছেন যার অনুমতি আল্লাহ প্রদান করেন নি।’’[13]

তিনি আরো বলেন, ‘‘আর যে ধরনের ইবাদাত পালন থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম বিরত থেকেছেন অথচ তা যদি শরী‘আতসম্মত হত তাহলে তিনি নিজে তা অবশ্যই পালন করতেন অথবা অনুমতি প্রদান করতেন এবং তাঁর পরে খলিফাগণ ও সাহাবীগণ তা পালন করতেন। অতএব, এ কথা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করা ওয়াজিব যে এ কাজটি বিদআত ও ভ্রষ্টতা।’’[14]

এর দ্বারা বুঝা গেল যে, যে সকল ইবাদাত পালন করা থেকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম নিজে এবং তাঁর পরে উম্মাতের প্রথম প্রজন্মের আলিমগণ বিরত থেকেছিলেন নিঃসন্দেহে সেগুলো বিদআত ও ভ্রষ্টতা। পরবর্তী যুগে কিংবা আমাদের যুগে এসে এগুলোকে ইবাদাত হিসেবে গণ্য করার কোনো শরঈ‘ ভিত্তি নেই।

উদাহরণ:

১। ইসলামের বিশেষ বিশেষ দিবসসমূহ ও ঐতিহাসিক উপলক্ষগুলোকে ঈদ উৎসবের মত উদযাপন করা। কেননা ইসলামী শরী‘আতই ঈদ উৎসব নির্ধারণ ও অনুমোদন করে। শরী‘আতের বাইরে অন্য কোনো উপলক্ষকে ঈদ উৎসবে পরিণত করার ইখতিয়ার কোনো ব্যক্তি বা দলের নেই। এ ধরনের উপলক্ষের মধ্যে একটি রয়েছে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লামের জন্ম উৎসব উদযাপন। সাহাবীগণ ও পূর্ববর্তী ‘আলিমগণ হতে এটি পালন করাতো দূরের কথা বরং অনুমোদন দানের কোনো বর্ণনাও পাওয়া যায় না। ইমাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন, “এ কাজটি পূর্ববর্তী সালাফগণ করেন নি অথচ এ কাজ জায়িয থাকলে সওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে তা পালন করার কার্যকারণ বিদ্যমান ছিল এবং পালন করতে বিশেষ কোনো বাধাও ছিল না। যদি এটা শুধু কল্যাণের কাজই হতো তাহলে আমাদের চেয়ে তারাই এ কাজটি বেশি করতেন। কেননা তারা আমাদের চেয়েও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লামকে বেশি সম্মান ও মহব্বত করতেন এবং কল্যাণের কাজে তারা ছিলেন বেশি আগ্রহী।’’[15]

২। ইতোপূর্বে বর্ণিত সালাত আর রাগায়েব বা শবে মি‘রাজের সালাত উল্লিখিত চতুর্থ নীতির আলোকেও বিদআত সাব্যস্ত হয়ে থাকে।
ইমাম ইযযুদ্বীন ইবনু আব্দুস সালাম রহ. এ প্রকার সালাত এর বৈধতা অস্বীকার করে বলেন, ‘‘এ প্রকার সালাত যে বিদআত তার একটি প্রমাণ হলো দীনের প্রথম সারির ‘উলামা ও মুসলিমদের ইমাম তথা সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন ও শরী‘আহ বিষয়ে গ্রন্থ প্রণয়নকারী বড় বড় ‘আলিমগণ মানুষকে ফরয ও সুন্নাত বিষয়ে জ্ঞান দানের প্রবল আগ্রহ পোষণ করা সত্ত্বেও তাদের কারো কাছ থেকে এ সালাত সম্পর্কে কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় নি এবং কেউ তাঁর নিজ গ্রন্থে এ সম্পর্কে কিছু লিপিবদ্ধও করেন নি ও কোনো বৈঠকে এ বিষয়ে কোনো আলোকপাতও করেন নি। বাস্তবে এটা অসম্ভব যে, এ সালাত আদায় শরী‘আতে সুন্নাত হিসেবে বিবেচিত হবে অথচ দীনের প্রথম সারির ‘আলিমগণ ও মুমিনদের যারা আদর্শ, বিষয়টি তাদের সকলের কাছে থেকে যাবে সম্পূর্ণ অজানা’’।[16]

পঞ্চম নীতি: যে সকল ইবাদাত শরী‘আতের মূলনীতিসমূহ এবং মাকাসিদ তথা উদ্দেশ্য ও লক্ষের বিপরীত সে সবই হবে বিদআত।

উদাহরণ:

১. দুই ঈদের সালাতের জন্য আযান দেওয়া। কেননা নফল সালাতের জন্য আযান দেওয়া শরী‘আত সম্মত নয়। আযান শুধু ফরয সালাতের সাথেই খাস।

২. জানাযার সালাতের জন্য আযান দেওয়া। কেননা জানাযার সালাতে আযানের কোনো বর্ণনা নেই, তদুপরি এতে সবার অংশগ্রহণ করার বাধ্যবাধকতাও নেই।

৩. ফরয সালাতের আযানের আগে মাইকে দুরূদ পাঠ। কেননা আযানের উদ্দেশ্য লোকদেরকে জামা‘আতে সালাত আদায়ের প্রতি আহ্বান করা, মাইকে দরূদ পাঠের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

ষষ্ঠ নীতি: প্রথা ও মু‘আমালাত বিষয়ক কোনো কাজের মাধ্যমে যদি শরী‘আতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছাড়াই আল্লাহর কাছে সাওয়াব লাভের আশা করা হয় তাহলে তা হবে বিদআত।

উদাহরণ: পশমী কাপড়, চট, ছেঁড়া ও তালি এবং ময়লাযুক্ত কাপড় কিংবা নির্দিষ্ট রঙের পোশাক পরিধান করাকে ইবাদাত ও আল্লাহর প্রিয় পাত্র হওয়ার পন্থা মনে করা। একইভাবে সার্বক্ষণিক চুপ থাকাকে কিংবা রুটি ও গোশত ভক্ষণ ও পানি পান থেকে বিরত থাকাকে অথবা ছায়াযুক্ত স্থান ত্যাগ করে সূর্যের আলোয় দাঁড়িয়ে কাজ করাকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পন্থা হিসাবে নির্ধারণ করা।

উল্লিখিত কাজসমূহ কেউ যদি এমনিতেই করে তবে তা নাজায়েয নয়, কিন্তু এ সকল ‘আদাত কিংবা মু‘আমালাতের কাজগুলোকে যদি কেউ ইবাদাতের রূপ প্রদান করে কিংবা সাওয়াব লাভের উপায় মনে করে তবে তখনই তা হবে বিদআত। কেননা এগুলো ইবাদাত ও সওয়াব লাভের পন্থা হওয়ার কোনো দলীল শরী‘আতে নেই।

সপ্তম নীতি: আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম যে সকল কাজ নিষেধ করে দিয়েছেন সেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য ও সাওয়াব লাভের আশা করা হলে সেগুলো হবে বিদআত।

উদাহরণ:

১। গান-বাদ্য ও কাওয়ালী বলা ও শোনা অথবা নাচের মাধ্যমে যিকির করে আল্লাহর কাছে সাওয়াবের আশা করা।

২। কাফির, মুশরিক ও বিজাতীয়দের অনুকরণের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য ও সাওয়াব লাভের আশা করা।

অষ্টম নীতি: যে সকল ইবাদাত শরী‘আতে নির্ধারিত সময়, স্থান ও পদ্ধতির সাথে প্রণয়ন করা হয়েছে সেগুলোকে সে নির্ধারিত সময়, স্থান ও পদ্ধতি থেকে পরিবর্তন করা বিদআত বলে গণ্য হবে।

উদাহরণ:

১। নির্ধারিত সময় পরিবর্তনের উদাহরণ: যেমন, জিলহাজ্জ মাসের এক তারিখে কুরবানী করা। কেননা কুরবানীর শরঈ সময় হলো ১০ যিলহজ ও তৎপরবর্তী আইয়ামে তাশরীকের দিনগুলো।

২। নির্ধারিত স্থান পরিবর্তনের উদাহরণ: যেমন, মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও ই‘তিকাফ করা। কেননা শরী‘আত কর্তৃক ই‘তিকাফের নির্ধারিত স্থান হচ্ছে মসজিদ।

৩। নির্ধারিত শ্রেণি পরিবর্তনের উদাহরণ: যেমন, গৃহ পালিত পশুর পরিবর্তে ঘোড়া দিয়ে কুরবানী করা।

৪। নির্ধারিত সংখ্যা পরিবর্তনের উদাহরণ: যেমন, পাঁচ ওয়াক্তের অতিরিক্ত ৬ষ্ঠ আরো এক ওয়াক্ত সালাত প্রচলন করা। কিংবা চার রাকাত সালাতকে দুই রাকাত কিংবা দুই রাকাতের সালাতকে চার রাকাতে পরিণত করা।

৫। নির্ধারিত পদ্ধতি পরিবর্তনের উদাহরণ: অযু করার শরঈ‘ পদ্ধতির বিপরীতে যেমন দু‘পা ধোয়ার মাধ্যমে অযু শুরু করা এবং তারপর দু‘হাত ধৌত করা এবং মাথা মাসেহ করে মুখমণ্ডল ধৌত করা। অনুরূপভাবে সালাতের মধ্যে আগে সাজদাহ ও পরে রুকু করা।

নবম নীতি: ‘আম তথা ব্যাপক অর্থবোধক দলিল দ্বারা শরী‘আতে যে সকল ইবাদাতকে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে সেগুলোকে কোনো নির্দিষ্ট সময় কিংবা নির্দিষ্ট স্থান অথবা অন্য কিছুর সাথে এমনভাবে সীমাবদ্ধ করা বিদআত বলে গণ্য হবে যদ্দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত ইবাদাতের এ সীমাবদ্ধ করণ প্রক্রিয়া শরী‘আতসম্মত, অথচ পূর্বোক্ত ‘আম দলীলের মধ্যে এ সীমাবদ্ধ করণের ওপর কোনো প্রমাণ ও দিক নির্দেশনা পাওয়া যায় না।
এ নীতির মোদ্দাকথা হচ্ছে কোনো উন্মুক্ত ইবাদাতকে শরী‘আতের সহীহ দলীল ছাড়া কোনো স্থান, কাল বা সংখ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ করা বিদআত হিসেবে বিবেচিত।

উদাহরণ:

১। যে দিনগুলোতে শরী‘আত রোযা বা সাওম রাখার বিষয়টি সাধারণভাবে উন্মুক্ত রেখেছে যেমন মঙ্গল বার, বুধবার কিংবা মাসের ৭, ৮ ও ৯ ইত্যাদি তারিখসমূহ, সে দিনগুলোর কোনো এক বা একাধিক দিন বা বারকে বিশেষ ফযীলত আছে বলে সাওম পালনের জন্য যদি কেউ খাস ও সীমাবদ্ধ করে অথচ খাস করার কোনো দলীল শরী‘আতে নেই। যেমন, ফাতিহা-ই-ইয়াযদাহমের দিন সাওম পালন করা, তাহলে শরী‘আতের দৃষ্টিতে তা হবে বিদআত, কেননা দলীল ছাড়া শরী‘আতের কোনো হুকুমকে খাস ও সীমাবদ্ধ করা জায়েয নেই।

২। ফযীলাতপূর্ণ দিনগুলোতে শরী‘আত যে সকল ইবাদাতকে উন্মুক্ত রেখেছে সেগুলোকে কোনো সংখ্যা, পদ্ধতি বা বিশেষ ইবাদাতের সাথে খাস করা বিদআত হিসাবে গণ্য হবে। যেমন, প্রতি শুক্রবার নির্দিষ্ট করে চল্লিশ রাক‘আত নফল সালাত পড়া, প্রতি বৃহস্পতিবার নির্দিষ্ট পরিমাণ সদকা করা, অনুরূপভাবে কোনো নির্দিষ্ট রাতকে নির্দিষ্ট সালাত ও কুরআন খতম বা অন্য কোনো ইবাদাতের জন্য খাস করা।

দশম নীতি: শরী‘আতে যে পরিমাণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ইবাদাত করতে গিয়ে সে ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি ‘আমল করার মাধ্যমে বাড়াবাড়ি করা এবং কঠোরতা আরোপ করা বিদআত বলে বিবেচিত।

উদাহরণ:

১। সারা রাত জেগে নিদ্রা পরিহার করে কিয়ামুল লাইল-এর মাধ্যমে এবং ভঙ্গ না করে সারা বছর সাওম রাখার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা এবং অনুরূপভাবে স্ত্রী, পরিবার ও সংসার ত্যাগ করে বৈরাগ্যবাদের ব্রত গ্রহণ করা। সহীহ বুখারীতে আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসে যারা সারা বছর সাওম রাখার ও বিবাহ করে সংসার ধর্ম পালন না করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিল তাদের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম বলেছিলেন:

«أَمَا وَاللهِ إِنِّي لأَخْشَاكُمْ للهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ لَكِنِّي أَصُومُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّي وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي».​

‘‘আমি তোমাদের মধ্যে আল্লাহর প্রতি সবচেয়ে বেশি ভয় পোষণ করি এবং তাকওয়া অবলম্বনকারী। কিন্তু আমি সাওম পালন করি ও ভাঙ্গি, সালাত আদায় করি ও নিদ্রা যাপন করি এবং নারীদের বিবাহ করি। যে আমার এ সুন্নাত থেকে বিরাগভাজন হয়, যে আমার দলভুক্ত নয়।’’[17]

২। হজের সময় জামরায় বড় বড় পাথর দিয়ে রমী করা, এ কারণে যে, এগুলো ছোট পাথরের চেয়ে পিলারে জোরে আঘাত হানবে এবং এটা এ উদ্দেশ্যে যে, শয়তান এতে বেশি ব্যাথা পাবে। এটা বিদআত এজন্য যে, শরী‘আতের নির্দেশ হলো ছোট পাথর নিক্ষেপ করা এবং এর কারণ হিসেবে হাদীসে বলা হয়েছে যে, ‘‘আল্লাহর যিকির ও স্মরণকে কায়েম করা।’’[18] উল্লেখ্য যে, পাথর নিক্ষেপের স্তম্ভটি শয়তান বা শয়তানের প্রতিভূ নয়। হাদীসের ভাষায় এটি জামরাহ। তাই সকল ক্ষেত্রে নিরাপদ হলো হাদীস অনুযায়ী ‘আমল করা ও আকীদা পোষণ করা।

৩। যে পোষাক পরিধান করা শরী‘আতে মুবাহ ও জায়েয। যেমন, পশমী কিংবা মোটা কাপড় পরিধান করা তাকে ফযীলতপূর্ণ অথবা হারাম মনে করা বিদআত, কেননা এটা শরী‘আতের দৃষ্টিতে বাড়াবাড়ি।
একাদশ নীতি: যে সকল আকীদা, মতামত ও বক্তব্য আল-কুরআন ও সুন্নাতের বিপরীত কিংবা এ উম্মাতের সালাফে সালেহীনের ইজমা‘ বিরোধী সেগুলো শরী‘আতের দৃষ্টিতে বিদআত। এই নীতির আলোকে নিম্নোক্ত দু’টি বিষয় শরী‘আতের দৃষ্টিতে বিদআত ও প্রত্যাখ্যাত বলে গণ্য হবে।

প্রথম বিষয়: নিজস্ব আকল ও বিবেকপ্রসূত মতামতকে অমোঘ ও নিশ্চিত নীতিরূপে নির্ধারণ করা এবং কুরআন ও সুন্নাহর বক্তব্যকে এ নীতির সাথে মিলিয়ে যদি দেখা যায় যে, সে বক্তব্য উক্ত মতামতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ তাহলে তা গ্রহণ করা এবং যদি দেখা যায় যে, কুরআন ও সুন্নাহর বক্তব্য উক্ত মতামত বিরোধী তাহলে সে বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা। অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহ্‌র উপরে নিজের আকল ও বিবেককে অগ্রাধিকার দেওয়া।

শরী‘আতের দৃষ্টিতে এ বিষয়টি অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এ ব্যাপারে ইমাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন: ‘‘বিবেকের মতামত অথবা কিয়াস দ্বারা আল কুরআনের বিরোধিতা করাকে সালাফে সালেহীনের কেউই বৈধ মনে করতেন না। এ বিদআতটি তখনই প্রচলিত হয় যখন জাহমিয়া, মু‘তাযিলা ও তাদের অনুরূপ কতিপয় এমন ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে যারা বিবেকপ্রসূত রায়ের ওপর ধর্মীয় মূলনীতি নির্ধারণ করেছিলেন এবং সেই রায়ের দিকে কুরআনের বক্তব্যকে পরিচালিত করেছিলেন এবং বলেছিলেন, যখন বিবেক ও শরী‘আর মধ্যে বিরোধিতা দেখা দিবে তখন হয় শরী‘আতের সঠিক মর্ম বোধগম্য নয় বলে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করা হবে অথবা বিবেকের রায় অনুযায়ী তাবীল ও ব্যাখ্যা করা হবে। এরা হলো সে সব লোক যারা কোনো দলীল ছাড়াই আল্লাহর আয়াতের ব্যাপারে তর্ক করে থাকে।’’[19]

ইবনু আবিল ‘ইয আল-হানাফী রহ. বলেন, ‘‘বরং বিদআতকারীদের প্রত্যেক দলই নিজেদের বিদআত ও যাকে তারা বিবেকপ্রসূত যুক্তি বলে ধারণা করে তার সাথে কুরআন ও সুন্নাহর বক্তব্যকে মিলিয়ে দেখে। কুরআন সুন্নাহর সে বক্তব্য যদি তাদের বিদআত ও যুক্তির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় তাহলে তারা বলে, এটি মুহকাম ও দৃঢ়বক্তব্য। অতঃপর তারা তা দলীলরূপে গ্রহণ করে। আর যদি তা তাদের বিদআত ও যুক্তির বিপরীত হয় তাহলে তারা বলে, এটি মুতাশাবিহাত ও আবোধগম্য, অতঃপর তারা তা প্রত্যাখ্যান করে..........অথবা মূল অর্থ থেকে পরিবর্তন করে’’[20]

দ্বিতীয় বিষয়: কোনো জ্ঞান ও ইলম ছাড়াই দীনী বিষয়ে ফাতাওয়া দেওয়া।

ইমাম শাতিবী রহ. বলেন, ‘‘যারা অনিশ্চিত কোনো বক্তব্যকে অন্ধভাবে মেনে নেওয়ার ওপর নির্ভর করে অথবা গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ছাড়াই কোনো বিষয়কে প্রাধান্য দেয়, তারা প্রকৃত পক্ষে দীনের রজ্জু ছিন্ন করে শরী‘আত বহির্ভূত কাজের সাথে জড়িত থাকে। আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহে এ থেকে আমাদেরকে নিরাপদ রাখুন। ফাতওয়ার এ পদ্ধতি আল্লাহ তা‘আলার দীনের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত বিদআতেরই অন্তর্ভুক্ত, তেমনিভাবে আকল বা বিবেককে দীনের সর্বক্ষেত্রে Dominator হিসেবে স্থির করা নবউদ্ভাবিত বিদআত।’’[21]

দ্বাদশ নীতি: যে সকল আকীদা কুরআন ও সুন্নায় আসে নি এবং সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনের কাছ থেকেও বর্ণিত হয় নি, সেগুলো বিদআতী আকীদা হিসেবে শরী‘আতে গণ্য।

উদাহরণ:

১. সুফী তরীকাসমূহের সে সব আ কীদা ও বিষয়সমূহ যা কুরআন ও সুন্নায় আসে নি এবং সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনের কাছ থেকেও বর্ণিত হয় নি।

ইমাম শাতিবী রহ. বলেন, ‘‘তন্মধ্যে রয়েছে এমন সব অলৌকিক বিষয় যা শ্রবণকালে মুরিদদের উপর শিরোধার্য করে দেওয়া হয়। আর মুরীদের কর্তব্য হল যা থেকে সে বিমুক্ত হয়েছে পুনরায় পীরের পক্ষ থেকে তা করার অনুমতি ও ইঙ্গিত না পেলে তা না করা.....এভাবে আরো অনেক বিষয় যা তারা আবিষ্কার করেছে, সালাফদের প্রথম যুগে যার কোনো উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায় না।’’[22]

২. আল্লাহর যাতী গুণাবলীর ক্ষেত্রে [23] الجهة বা দিক-নির্ধারণ الجسم বা শরীর ইত্যাদি সার্বিকভাবে সাব্যস্ত করা কিংবা পুরোপুরি অস্বীকার করা বিদআত হিসেবে গণ্য। কেননা কুরআন, হাদীস ও সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যের কোথাও এগুলোকে সরাসরি সাব্যস্ত কিংবা অস্বীকার কোনোটাই করা হয় নি।

এ সম্পর্কে ইমাম ইবন তাইমিয়াহ রহ. বলেন, ‘‘সালাফের কেউই আল্লাহর ব্যাপারে الجسم বা শরীর সাব্যস্ত করা কিংবা অস্বীকার করার বিষয়টি সস্পর্কে কোনো বক্তব্য প্রদান করেন নি। একইভাবে আল্লাহর সম্পর্কে الجواهر বা মৌলিক বস্তু এবং التحيز বা অবস্থান গ্রহণ অথবা অনুরূপ কোনো বক্তব্যও তারা দেন নি। কেননা এগুলো হলো অস্পষ্ট শব্দ, যদ্দ্বারা কোনো হক প্রতিষ্ঠিত হয় না এবং বাতিলও প্রমাণিত হয় না।.....বরং এগুলো হচ্ছে সে সকল বিদআতী কালাম ও কথা যা সালাফ ও ইমামগণ প্রত্যাখ্যান করেছেন।’’[24]

আল্লাহর সিফাত সম্পর্কিত মুজমাল ও অস্পষ্ট শব্দমালার সাথে সালাফে সালেহীনের অনুসৃত ব্যবহারিক নীতিমালা কী ছিল সে সম্পর্কে ইমাম ইবন আবিল ইয আল-হানাফী রহ. বলেন, ‘‘যে সকল শব্দ (আল্লাহর ব্যাপারে) সাব্যস্ত করা কিংবা তার থেকে অস্বীকার করার ব্যাপারে নস তথা কুরআন-হাদীসের স্পষ্ট বক্তব্য এসেছে তা প্রবলভাবে মেনে নেওয়া উচিত। অতএব আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম যে সকল শব্দ ও অর্থ সাব্যস্ত করেছেন আমরা সেগুলো সাব্যস্ত করব এবং তাদের বক্তব্যে যে সব শব্দ ও অর্থকে অস্বীকার করা হয়েছে আমরাও সেগুলোকে অস্বীকার করবো। আর যে সব শব্দ অস্বীকার করা কিংবা সাব্যস্ত করার ব্যাপারে কিছুই আসে নি (আল্লাহর ব্যাপারে) সে সব শব্দের ব্যবহার করা যাবে না। অবশ্য যদি বক্তার নিয়তের প্রতি লক্ষ্য করলে বুঝা যায় যে অর্থ শুদ্ধ, তাহলে তা গ্রহণ করা হবে। তবে সে বক্তব্য কুরআন-হাদীসের শব্দ দিয়েই ব্যক্ত করা বাঞ্ছনীয়, মুজমাল ও অস্পষ্ট শব্দ দিয়ে নয়........।’’[25]

ত্রয়োদশ নীতি: দীনী ব্যাপারে অহেতুক তর্ক, ঝগড়া-বিবাদ ও বাড়াবাড়িপূর্ণ প্রশ্ন বিদআত হিসেবে গণ্য। এ নীতির মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো শামিল:

১. মুতাশাবিহাত বা মানুষের বোধগম্য নয় এমন বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা। ইমাম মালেক রহ.-কে এক ব্যক্তি আরশের উপর আল্লাহর استواء বা উঠার প্রকৃতি-ধরণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন ‘‘কিরূপ উঠা তা বোধগম্য নয়, তবে استواء বা উঠা একটি জানা ও জ্ঞাত বিষয়, এর প্রতি ঈমান রাখা ওয়াজিব এবং প্রশ্ন করা বিদআত।[26]

ইমাম ইবন তাইমিয়াহ রহ. বলেন, ‘‘কেননা এ প্রশ্নটি ছিল এমন বিষয় সম্পর্কে যা মানুষের জ্ঞাত নয় এবং এর জবাব দেওয়াও সম্ভব নয়।’’[27]
তিনি অন্যত্র বলেন, ‘‘استواء বা ‘আরশের উপর উঠা সম্পর্কে ইমাম মালেকের এ জবাব আল্লাহর সকল গুণাবলী সম্পর্কে ব্যাখ্যা হিসেবে পুরাপুরি যথেষ্ট।’’[28]

২। দীনের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন কিছু নিয়ে গোঁড়ামি করা এবং গোঁড়ামির কারণে মুসলিমদের মধ্যে অনৈক্য ও বিভেদ সৃষ্টি করা বিদআত বলে গণ্য।

৩। মুসলিমদের কাউকে উপযুক্ত দলীল ছাড়া কাফির ও বিদআতী বলে অপবাদ দেওয়া।

চতুর্দশ নীতি: দীনের স্থায়ী ও প্রমাণিত অবস্থান ও শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত সীমারেখাকে পরিবর্তন করা বিদআত।

উদাহরণ:

১। চুরি ও ব্যভিচারের শাস্তি পরিবর্তন করে আর্থিক জরিমানা দন্ড প্রদান করা বিদআত।

২। যিহারের কাফফারার ক্ষেত্রে শরী‘আতের নির্ধারিত সীমারেখা পাল্টে আর্থিক জরিমানা করা বিদআত।

পঞ্চদশ নীতি: অমুসলিমদের সাথে খাস যে সকল প্রথা ও ইবাদাত রয়েছে মুসলিমদের মধ্যে সেগুলোর অনুসরণ বিদআত বলে গণ্য।

উদাহরণ: কাফিরদের উৎসব ও পর্ব অনুষ্ঠানের অনুকরণে উৎসব ও পর্ব পালন করা। ইমাম যাহাবী রহ. বলেন, ‘‘জন্ম উৎসব, নববর্ষ উৎসব পালনের মাধ্যমে অমুসলিমদের অনুকরণ নিকৃষ্ট বিদআত।’’[29]

শেষ কথা: বিদআতের সংজ্ঞা প্রদানের পাশাপাশি বিদআতের মৌলিক ও সাধারণ কিছু নীতিমালা আমরা এখানে আলোচনা করলাম। আশা করি সকলেই এগুলো ভালোভাবে জেনে নেবেন এবং উপলব্ধি করার চেষ্টা করবেন। পরবর্তী করণীয় হলো এ মূলনীতিগুলোর আলোকে আমাদের নিজেদের মধ্যে কিংবা আমাদের লোকালয়ে কোনো বিদআত রয়েছে কিনা তা যাচাই করা, আর যদি এখানে কোনো বিদআত থেকে থাকে তাহলে আমাদের উচিৎ সেগুলো চিহ্নিত করা ও দেশবাসীকে তা অবহিত করা এবং নিজেরা সেগুলো ত্যাগ করা ও অন্যদেরকেও তা ত্যাগ করতে উদ্বুদ্ধ করা, যাতে রিসালাতের দায়িত্ব পালনে মুসলিম হিসেবে আমরা সকলেই কম-বেশি অবদান রাখতে পারি। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন। আমীন!!

বর্তমান সমাজের চালচিত্রে বিদআতের প্রচলন আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সুন্নাত ও বিদআত উভয়ের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণে পর্যাপ্ত জ্ঞানের যথেষ্ট অভাবে বহু মানুষ বিদআতে লিপ্ত হয়ে পড়ছে।
বিদআতকে সহজে চিহ্নিত করা ও তা থেকে বেঁচে থাকা এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সবার পক্ষে বিদআতকে চিহ্নিত করা যাতে সহজ হয় সে উদ্দেশ্যে এ পুস্তিকাটি একটি প্রাথমিক প্রয়াস।


লেখক : মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সম্পাদনা: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া​

[1] আন-নিহায়াহ, পৃ. ৬৯; কাওয়ায়েদ মা‘রিফাতিল বিদ‘আহ, পৃ. ১৭
[2] কাওয়ায়েদ মা‘রিফাতিল বিদ‘আহ, পৃ. ২৪
[3] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯৯১; সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭৬। তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন।
[4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫ ও সুনান আন-নাসাঈ, হাদীস নং ১৫৬০। হাদীসের শব্দ চয়ন নাসায়ী থেকে।
[5] তালবীসু ইবলীস, পৃ. ১৬
[6] আল-ইস্তিকামাহ, আয়াত: ১/১৩
[7] তানযীহুশ শারী‘আহ আল-মরফু‘আহ ২/৮৯-৯৪, আল-ইবদা‘ পৃ. ৫৮।
[8] আল-ই‘তেসাম ১/২২০
[9] আল-ই‘তিসাম ১/২১২, ২/১৮১
[10] মাজমু‘ আল-ফাতাওয়া ১০/৩৬৯
[11] সহীহ বুখারী
[12] ইকতিযা আস-সিরাত আল মুস্তাকীম ২/৭১৮
[13] ইকতিয়া আস সীরাত আল-মুস্তাকীম ২/৭৯৮
[14] মাযমু‘ আল-ফাতাওয়া: ২৬/১৭২
[15] ইকতিযা আস-সিরাত আল মুস্তাকিম: ২/৬১৫
[16] আত-তারগীব ‘আন সালাতির রাগাইব আল-মাওদু‘আ, পৃ. ৫-৯
[17] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৬৩
[18] সুনান আবি দাঊদ, হাদীস নং ১৬১২; সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ৮২৬। তিরমিযী বলেছেন, এটি হাসান ও সহীহ হাদীস।
[19] আল-ইসতেকামা ১/২৩
[20] শরহুল আকীদা আত-ত্বহাবিয়া, পৃ. ১৯৯৯
[21] আল-ই‘তিসাম ২/১৭৯
[22] আল-‘ইতিসাম ১/২৬১
[23] তবে দিক নির্ধারণ না করলেও جهة العلو বা উপরের দিক আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। এটা কুরআন ও হাদীসের হাজার হাজার ভাষ্য দ্বারা প্রমাণিত। গ্রন্থকারের উদ্দেশ্য جهة শব্দটি ব্যবহার না করা। উপরের দিক প্রতিটি মুসলিমই সাব্যস্ত করে থাকেন। [সম্পাদক]
[24] মাজমু‘ আল-ফাতাওয়া ৩/৮১
[25] শারহু আল-‘আকীদাহ আত-ত্বহাবিয়্যাহ, পৃঃ২৩৯, আরো দেখুন পৃ. ১০৯-১১০।
[26] আস-সুন্নাহ ৩/৪৪১, ফাতহুল বারী ১৩/৪০৬-৪০৭
[27] মাজমু‘ আল-ফাতাওয়া ৩/২৫
[28] মাজমু‘ আল-ফাতাওয়া ৪/৪
[29] আত-তামাসসুক- বিসসুনান পৃ. ১৩০
 
Last edited:
COMMENTS ARE BELOW

Share this page