- Joined
- May 20, 2024
- Threads
- 22
- Comments
- 32
- Reactions
- 284
- Thread Author
- #1
বিতর্কিত সঙ্গীত বন্দে মাতারাম।
ইসলাম ধর্মের ভিত্তি হলো তাওহীদ (আল্লাহর একত্ববাদের উপর বিশ্বাস), পবিত্র আল কুরআন এবং সহীহ হাদিসে তাওহীদের গুরুত্বের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। এবং সকল মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদত করার জন্য আদেশ করা হয়েছে। আল্লাহর ইবাদত ছাড়া অন্যের - মূর্তি অথবা কাগজের ছবি, নদ-নদী অথবা ঝর্ণা, পাহাড় হোক অথবা গাছপালা, পাথর হোক বা ফুল, জীবিত হোক অথবা নির্জীব- ইবাদত নিষিদ্ধ ও হারাম করা হয়েছে। এককথায় এক আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত করা অথবা আল্লাহর বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর মধ্যে কাউকে অংশীদার ও শরিক করা, অথবা আল্লাহর বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী থেকে কিছু অন্য কারো জন্য সাব্যস্ত করা নিষিদ্ধ ও হারাম। ইসলামী পরিভাষায় একে "শিরক" বলা হয়, যা ইসলামের দৃষ্টিতে বড় অপরাধ এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমার অযোগ্য পাপ। এ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান একেবারেই স্পষ্ট যে, একজন সৃষ্টি কখনো "স্রষ্টা" হতে পারে না। তাওহীদ সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও জ্ঞান পেতে হলে সূরা ইখলাস পড়া দরকার। ইবাদতের যোগ্য ও অধিকারী আসলে কে? স্রষ্টা হওয়ার জন্য কি কি বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী থাকা জরুরি? বিস্তারিত জানতে সূরা ইখলাস পাঠ করা প্রয়োজন। সত্য ও মিথ্যা মাবুদ যাচাইয়ের জন্য মাপকাঠি হল সূরা ইখলাস। সূরা ইখলাস আপনাকে বলে দেবে কে সত্য মাবুদ, স্রষ্টা, ইবাদতের অধিকারী? আর কে মিথ্যুক?
সকল প্রকার ইবাদত, গুনগান ও প্রশংসার অধিকারী হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ, যিনি বিশ্ব সৃষ্টিকর্তা, সর্ব শক্তিমান, মরণ ও জীবনের মালিক। পবিত্র আল কুরআন ঘোষণা করে:
إِنَّ اللَّهَ فالِقُ الحَبِّ وَالنَّوىٰ ۖ يُخرِجُ الحَىَّ مِنَ المَيِّتِ وَمُخرِجُ المَيِّتِ مِنَ الحَىِّ ۚ ذٰلِكُمُ اللَّهُ ۖ فَأَنّىٰ تُؤفَكونَ، فالِقُ الإِصباحِ وَجَعَلَ الَّيلَ سَكَنًا وَالشَّمسَ وَالقَمَرَ حُسبانًا ۚ ذٰلِكَ تَقديرُ العَزيزِ العَليمِ، وَهُوَ الَّذى جَعَلَ لَكُمُ النُّجومَ لِتَهتَدوا بِها فى ظُلُمٰتِ البَرِّ وَالبَحرِ ۗ قَد فَصَّلنَا الءايٰتِ لِقَومٍ يَعلَمونَ، وَهُوَ الَّذى أَنشَأَكُم مِن نَفسٍ وٰحِدَةٍ فَمُستَقَرٌّ وَمُستَودَعٌ ۗ قَد فَصَّلنَا الءايٰتِ لِقَومٍ يَفقَهونَ، وَهُوَ الَّذى أَنزَلَ مِنَ السَّماءِ ماءً فَأَخرَجنا بِهِ نَباتَ كُلِّ شَيءٍ فَأَخرَجنا مِنهُ خَضِرًا نُخرِجُ مِنهُ حَبًّا مُتَراكِبًا وَمِنَ النَّخلِ مِن طَلعِها قِنوانٌ دانِيَةٌ وَجَنّٰتٍ مِن أَعنابٍ وَالزَّيتونَ وَالرُّمّانَ مُشتَبِهًا وَغَيرَ مُتَشٰبِهٍ ۗ انظُروا إِلىٰ ثَمَرِهِ إِذا أَثمَرَ وَيَنعِهِ ۚ إِنَّ فى ذٰلِكُم لَءايٰتٍ لِقَومٍ يُؤمِنونَ،وَجَعَلوا لِلَّهِ شُرَكاءَ الجِنَّ وَخَلَقَهُم ۖ وَخَرَقوا لَهُ بَنينَ وَبَنٰتٍ بِغَيرِ عِلمٍ ۚ سُبحٰنَهُ وَتَعٰلىٰ عَمّا يَصِفونَ، بَديعُ السَّمٰوٰتِ وَالأَرضِ ۖ أَنّىٰ يَكونُ لَهُ وَلَدٌ وَلَم تَكُن لَهُ صٰحِبَةٌ ۖ وَخَلَقَ كُلَّ شَيءٍ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيءٍ عَليمٌ، ذٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُم ۖ لا إِلٰهَ إِلّا هُوَ ۖ خٰلِقُ كُلِّ شَيءٍ فَاعبُدوهُ ۚ وَهُوَ عَلىٰ كُلِّ شَيءٍ وَكيلٌ، لا تُدرِكُهُ الأَبصٰرُ وَهُوَ يُدرِكُ الأَبصٰرَ ۖ وَهُوَ اللَّطيفُ الخَبيرُ
নিশ্চয় আল্লাহই বীজ ও আঁটি থেকে অঙ্কুর সৃষ্টিকারী; তিনি জীবিতকে মৃত থেকে বের করেন ও মৃতকে জীবিত থেকে বের করেন। তিনি আল্লাহ অতঃপর তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছ? তিনি প্রভাত রশ্মির উন্মেষক। তিনি রাত্রিকে আরামদায়ক করেছেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে হিসেবের জন্য রেখেছেন। এটি পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানীর নির্ধারণ। তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্রপুঞ্জ সৃজন করেছেন যাতে তোমরা স্থল ও জলের অন্ধকারে পথ প্রাপ্ত হও। নিশ্চয় যারা জ্ঞানী তাদের জন্যে আমি নির্দেশনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করে দিয়েছি।তিনিই তোমাদের কে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অনন্তর একটি হচ্ছে তোমাদের স্থায়ী ঠিকানা ও একটি হচ্ছে গচ্ছিত স্থল। নিশ্চয় আমি প্রমাণাদি বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি তাদের জন্যে, যারা চিন্তা করে। তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন অতঃপর আমি এর দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি, অতঃপর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙ্গুরের বাগান, যয়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য কর যখন সেুগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্কতার প্রতি লক্ষ্য কর। নিশ্চয় এ গুলোতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদারদের জন্যে। তারা জিনদেরকে আল্লাহর অংশীদার স্থির করে; অথচ তাদেরকে তিনিই সৃস্টি করেছেন। তারা অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহর জন্যে পুত্র ও কন্যা সাব্যস্ত করে নিয়েছে। তিনি পবিত্র ও সমুন্নত, তাদের বর্ননা থেকে। তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের আদি স্রষ্টা। কিরূপে আল্লাহর পুত্র হতে পারে, অথচ তাঁর কোন সঙ্গী নেই ? তিনি যাবতীয় কিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি সব বস্তু সম্পর্কে সুবিজ্ঞ। তিনিই আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনিই সব কিছুর স্রষ্টা। অতএব, তোমরা তাঁরই এবাদত কর। তিনি প্রত্যেক বস্তুর কার্যনির্বাহী। দৃষ্টিসমূহ তাঁকে পেতে পারে না, অবশ্য তিনি দৃষ্টিসমূহকে পেতে পারেন। তিনি অত্যন্ত সুক্ষদর্শী, সুবিজ্ঞ। (সূরা আনয়াম আয়াত নং ৯৫-১০৩)।
ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান একেবারেই স্পষ্ট যে, সৃষ্টি যতই বড় শক্তিশালী ও যতই সম্মানিত হোক না কেন, কখনো স্রষ্টা হতে পারে না। ইসলামের দৃষ্টিতে পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হলেন বিশ্ব নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, কিন্তু একজন প্রকৃত মুসলিম কখনো তাঁকে স্রষ্টা হিসেবে বিবেচনা করে তাঁর ইবাদত করতে পারে না। যদি কেউ করে, তা হবে আল্লাহর সাথে শিরক, বড় অপরাধ, যা তাওবা ছাড়া কখনও ক্ষমা হবে না এবং এর পরিমাণ হচ্ছে চিরস্থায়ী জাহান্নাম।
পৃথিবীর মাঝে পিতামাতার সম্পর্ক, অত্যন্ত উচ্চ, মর্যাদাময়, সম্মান ও ভালোবাসার সম্পর্ক। এমনকি তাঁদের পদতলে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, মানুষ তাদের ইবাদত করবে। কেউ যদি করে, তা হবে শিরক, যার পরিমাণ হবে চিরস্থায়ী জাহান্নাম।
পৃথিবীতে কে এমন আছে, যে তার মা কে ভালোবাসে না? সবাই মাকে ভালোবাসে, শ্রদ্ধা ও সম্মান করে, আর এমন করাটাই স্বাভাবিক । কিন্তু এত প্রিয়তমা, শ্রদ্ধা , সম্মান ও ভালোবাসার পাত্র হওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ তাঁদের ইবাদত ও পূজা করে, তা হবে শিরক, নিষিদ্ধ ও হারাম। এমনকি স্বয়ং পিতামাতা যদি তাঁদের সন্তান সন্ততিদের কে তাঁদের ইবাদাতের দিকে আহ্বান জানান, তা প্রত্যাখান করাটাই হবে ফরজ। আল্লাহ বলেন:
وَوَصَّينَا الإِنسٰنَ بِوٰلِدَيهِ حُسنًا ۖ وَإِن جٰهَداكَ لِتُشرِكَ بى ما لَيسَ لَكَ بِهِ عِلمٌ فَلا تُطِعهُما ۚ إِلَىَّ مَرجِعُكُم فَأُنَبِّئُكُم بِما كُنتُم تَعمَلونَ
আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। ( সূরা আনকাবুত আয়াত নং ৮)।
মাতৃভূমি কখনো ইবাদাতের যোগ্য নয়: বিবেচনা করুন যে পবিত্র কুরআন যখন মানুষ কে তাঁর ভালোবাসার পাত্র পিতামাতার ইবাদত করার অনুমতি দেয়নি, প্রত্যাখান করেছে, কেমনে
"মাতৃভূমির" ইবাদতের অনুমতি দিতে পারে? মাতৃভূমি কে সম্মান করা এবং ভালোবাসা এক জিনিস, আর তাকে দেবতা হিসেবে ধারণ করা আরেক জিনিস। সম্মান ও ভালোবাসার অর্থ এই নয় যে আমরা যাকে ভালোবাসি তাকে পূজা করি। আমরা আমাদের বাবা-মাকে ভালোবাসি, আমরা আমাদের ভাইবোনদের ভালোবাসি এবং আমরা আমাদের আত্মীয়স্বজনের প্রতি আসক্ত। কিন্তু যদি আমরা তাদের পূজা না করি, তাহলে কেউ বলতে পারে না যে আমরা তাদের পূজা না করার কারণে আমাদের ভালোবাসা কমে গেছে।একইভাবে, একজন মুসলিম সে তার দেশকে ভালবাসে, কিন্তু দেশের পূজা (ইবাদত) করে না, তার পূজা না করার কারণে তাঁকে কখনও দেশ দ্রোহ বলা যেতে পারে না।
ভারত আমাদের মাতৃভূমি। মাতৃভূমি হিসেবে দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের অন্তরে দেশের জন্য অগাদ ভালোবাসা রয়েছে। দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের অন্তরে দেশের জন্য ভালোবাসা থাকাটাই স্বাভাবিক। আমরা দেশকে ভালবাসি, দেশের কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য সর্বান্তকরণে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং চালিয়ে যাব; কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে আমরা একে দেবতা হিসেবে ধারণ করব। যুক্তিসঙ্গত অথবা আইনগত কোনওভাবেই আমাদেরকে এর জন্য বাধ্য করা বৈধ নয়। দেশের সাংবিধান আদেশ করে যে, আমরা এখানকার কোনও বাসিন্দার উপর এমন কোনও আদেশ চাপিয়ে দিতে পারিনা যা তার ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিপন্থী বা যা তার ধর্মীয় স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করে। হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান ইত্যাদি সকলেই মাতৃভূমির সন্তান হিসেবে সমান। ঠিক যেমন একজন হিন্দুকে মূর্তি পূজা থেকে বিরত রাখা যায় না, তেমনি একজন মুসলিমকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর উপাসনা করতে বাধ্য করা যায় না।
দুর্ভাগ্যবশত হলেও সত্য যে, আজকে আমাদের প্রিয় দেশ ভারত বর্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষেরা ক্ষমতার বলে রাজনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যে তাদের শিরক যুক্ত আকিদাহ ও বিশ্বাস দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, এটি একেবারেই অসাংবিধানিক। দেশের আইন ও সংবিধান সকল নাগরিকদের ধর্মীয় বিষয়ে স্বতন্ত্রতা ও স্বাধীনতা দিয়েছে, কিন্তু কিছু উগ্রবাদী মানুষ দেশের ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ নষ্ট করতে এবং সম্প্রীতির শিকড়কে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে নাগরিকদের মাঝে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব লাগানোর নোংরা রাজনীতি করছে, যা আমরা শান্তি প্রিয় জনগণ কখনোই মেনে নেবো না। এরা আসলে মাতৃভূমির শুভাকাঙ্ক্ষী নন; বরং তারাই দেশটাকে অশান্তি, দাঙ্গা ও ফাসাদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এরাই হচ্ছে আসলে রাষ্ট্রদ্রোহ ও দেশের শত্রু।
ভারতীয় সকল নাগরিক, বিশেষ করে মুসলিম জাতি দেশকে তাঁদের জান মাল থেকে বেশি ভালোবাসেন। ইতিহাস সাক্ষ্য রয়েছে যে, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিম সম্প্রদায় সবচেয়ে বেশি বলিদান (কুরবানী) দিয়েছেন, তার জ্বলন্ত প্রমাণ আজ ইন্ডিয়া গেট বহন করে। যারা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের শরীরের এক ফোঁটা রক্ত জড়ায়নি, বরং দেশের শত্রুদের সহযোগিতা ও সমর্থন করেছিল, আজকে তারাই কুকৌশলে দেশের গদি দখল করে দেশ বিভাজনের রাজনীতি করছে, মুসলিম সম্প্রদায়ের দেশ প্রেমের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ছে, কি অদ্ভুত?! আজকে তারা মুসলিম সম্প্রদায়ের পেছনে উঠে পড়েছে, তাঁদের কে ভারত থেকে উত্খাত, বিতাড়িত, তাঁদের আকিদাহ ও বিশ্বাস নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করেছে। দুর্ভাগ্যবশত ও দুঃখজনক বিষয় হলো আজকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল থেকে দুর্বল হয়ে সংকটময় পরিস্থিতিতে পৌঁছে গেছে, দেশে বেকারত্বের হার বাড়ছে, দেশের নাগরিক দারিদ্রতা মুখামুখি, পার্শ্ববর্তী দেশ আমাদের দেশের উপর কুদৃষ্টি করছে, দেশের জমি দখল করছে কিন্তু কারো মাথায় ব্যাথা নেই। আজকে দেশের পার্লামেন্টে চর্চা হচ্ছে এমন এক বিষয়, এমন একটি বিতর্কিত সঙ্গীত নিয়ে, যার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেশের একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে টার্গেট করে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করা এবং দেশকে বিভাজনের মুখে ঠেলে দেয়া।
বন্দে মাতারাম সঙ্গীত দেশের সংবিধানে প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী। দেশের সাংবিধান দেশের সকল নাগরিককে ধর্মীয় স্বাধীনতা দিয়েছে, দেশের সকল নাগরিক স্বতন্ত্রতা ও স্বাধীনতার সহিত তাঁরা নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে, কেউ এ অধিকার খর্ব করতে পারে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আজকে বন্দে মাতারাম সঙ্গীত দ্বারা ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা চলছে, এটি সংবিধান বিরোধী পদক্ষেপ, এবং দেশের সংবিধানের উপর আঘাত। সংবিধান দ্বারা প্রদত্ত স্বাধিনতা কে আমরা দেশের সংবিধানপ্রিয় বুদ্ধিজীবী মানুষ কখনও এবং কোনো মূল্যেই বিলিয়ে দিতে পারিনা। আমরা আমাদের সংবিধানের রক্ষক, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দেশের সংবিধানের হেফাজত করব। সংবিধানের উপর ষড়যন্ত্রের সকল প্রকার কালো হাতকে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করবো।
বন্দে মাতারাম সঙ্গীত যেহেতু বহুঈশ্বরবাদী ধারণা বহনকারী একটি সঙ্গীত, একেশ্বরবাদ (তাওহীদের) এর বিশ্বাসের পরিপন্থী। অতএব দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে মুসলিম, খ্রীষ্টান, ইহুদী এবং যাঁরাই একত্ববাদের উপর বিশ্বাসী কখনো এবং কোনো মূহুর্তে এটি মেনে নিতে পারে না। শুধু এখানেই শেষ নয়, এ সঙ্গীত প্রকৃত অর্থে বিশুদ্ধ সনাতনী ধর্মেরই পরিপন্থী। কারণ প্রকৃত সনাতনী ধর্ম কখনও সৃষ্টির পূজাকে সমর্থন করে না। তাহলে কেমনে সনাতনী ধর্মাবলম্বী মানুষ বহুঈশ্বরবাদী ধারণা বহনকারী সঙ্গীত বন্দে মাতারাম সমর্থন করতে পারে?!
অতএব দেশের সকল বুদ্ধিজীবী, শিক্ষিত সমাজ এবং সুবুদ্ধি সম্পূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ও নাগরিকদের উচিত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণভাবে এই সঙ্গীতের তীব্র বিরোধিতা, নিন্দা এবং সুকৌশলে গ্রহণ করা, যাতে সরকার বিতর্কিত সঙ্গীত বন্দে মাতারাম প্রত্যহার করতে বাধ্য হয়।
মুসলিম উম্মাহর উচিত বিচক্ষণতা ও সচেতনতার সহিত নিজের ঈমানের হেফাজত করা, যাতে আমাদের জিহ্বা দ্বারা এমন কোনো শব্দ উচ্চারণ না হয়, অথবা আমাদের দ্বারা কোনো এমন কর্ম সম্পাদিত না হয়, যা আমাদের ঈমানকে ধ্বংস ও বিনষ্টকারী। হে আল্লাহ! আমাদের রব, তুমি আমাদেরকে বিশুদ্ধ ঈমানের উপর দৃঢ়তা ও অটল থাকার তৈফিক দাও, শত্রুদের ষড়যন্ত্র থেকে আমাদেরকে রক্ষা কর এবং অবশেষে ঈমান অবস্থায় মৃত্যু দিও। আমীন।
ইসলাম ধর্মের ভিত্তি হলো তাওহীদ (আল্লাহর একত্ববাদের উপর বিশ্বাস), পবিত্র আল কুরআন এবং সহীহ হাদিসে তাওহীদের গুরুত্বের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। এবং সকল মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদত করার জন্য আদেশ করা হয়েছে। আল্লাহর ইবাদত ছাড়া অন্যের - মূর্তি অথবা কাগজের ছবি, নদ-নদী অথবা ঝর্ণা, পাহাড় হোক অথবা গাছপালা, পাথর হোক বা ফুল, জীবিত হোক অথবা নির্জীব- ইবাদত নিষিদ্ধ ও হারাম করা হয়েছে। এককথায় এক আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত করা অথবা আল্লাহর বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর মধ্যে কাউকে অংশীদার ও শরিক করা, অথবা আল্লাহর বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী থেকে কিছু অন্য কারো জন্য সাব্যস্ত করা নিষিদ্ধ ও হারাম। ইসলামী পরিভাষায় একে "শিরক" বলা হয়, যা ইসলামের দৃষ্টিতে বড় অপরাধ এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমার অযোগ্য পাপ। এ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান একেবারেই স্পষ্ট যে, একজন সৃষ্টি কখনো "স্রষ্টা" হতে পারে না। তাওহীদ সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও জ্ঞান পেতে হলে সূরা ইখলাস পড়া দরকার। ইবাদতের যোগ্য ও অধিকারী আসলে কে? স্রষ্টা হওয়ার জন্য কি কি বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী থাকা জরুরি? বিস্তারিত জানতে সূরা ইখলাস পাঠ করা প্রয়োজন। সত্য ও মিথ্যা মাবুদ যাচাইয়ের জন্য মাপকাঠি হল সূরা ইখলাস। সূরা ইখলাস আপনাকে বলে দেবে কে সত্য মাবুদ, স্রষ্টা, ইবাদতের অধিকারী? আর কে মিথ্যুক?
সকল প্রকার ইবাদত, গুনগান ও প্রশংসার অধিকারী হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ, যিনি বিশ্ব সৃষ্টিকর্তা, সর্ব শক্তিমান, মরণ ও জীবনের মালিক। পবিত্র আল কুরআন ঘোষণা করে:
إِنَّ اللَّهَ فالِقُ الحَبِّ وَالنَّوىٰ ۖ يُخرِجُ الحَىَّ مِنَ المَيِّتِ وَمُخرِجُ المَيِّتِ مِنَ الحَىِّ ۚ ذٰلِكُمُ اللَّهُ ۖ فَأَنّىٰ تُؤفَكونَ، فالِقُ الإِصباحِ وَجَعَلَ الَّيلَ سَكَنًا وَالشَّمسَ وَالقَمَرَ حُسبانًا ۚ ذٰلِكَ تَقديرُ العَزيزِ العَليمِ، وَهُوَ الَّذى جَعَلَ لَكُمُ النُّجومَ لِتَهتَدوا بِها فى ظُلُمٰتِ البَرِّ وَالبَحرِ ۗ قَد فَصَّلنَا الءايٰتِ لِقَومٍ يَعلَمونَ، وَهُوَ الَّذى أَنشَأَكُم مِن نَفسٍ وٰحِدَةٍ فَمُستَقَرٌّ وَمُستَودَعٌ ۗ قَد فَصَّلنَا الءايٰتِ لِقَومٍ يَفقَهونَ، وَهُوَ الَّذى أَنزَلَ مِنَ السَّماءِ ماءً فَأَخرَجنا بِهِ نَباتَ كُلِّ شَيءٍ فَأَخرَجنا مِنهُ خَضِرًا نُخرِجُ مِنهُ حَبًّا مُتَراكِبًا وَمِنَ النَّخلِ مِن طَلعِها قِنوانٌ دانِيَةٌ وَجَنّٰتٍ مِن أَعنابٍ وَالزَّيتونَ وَالرُّمّانَ مُشتَبِهًا وَغَيرَ مُتَشٰبِهٍ ۗ انظُروا إِلىٰ ثَمَرِهِ إِذا أَثمَرَ وَيَنعِهِ ۚ إِنَّ فى ذٰلِكُم لَءايٰتٍ لِقَومٍ يُؤمِنونَ،وَجَعَلوا لِلَّهِ شُرَكاءَ الجِنَّ وَخَلَقَهُم ۖ وَخَرَقوا لَهُ بَنينَ وَبَنٰتٍ بِغَيرِ عِلمٍ ۚ سُبحٰنَهُ وَتَعٰلىٰ عَمّا يَصِفونَ، بَديعُ السَّمٰوٰتِ وَالأَرضِ ۖ أَنّىٰ يَكونُ لَهُ وَلَدٌ وَلَم تَكُن لَهُ صٰحِبَةٌ ۖ وَخَلَقَ كُلَّ شَيءٍ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيءٍ عَليمٌ، ذٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُم ۖ لا إِلٰهَ إِلّا هُوَ ۖ خٰلِقُ كُلِّ شَيءٍ فَاعبُدوهُ ۚ وَهُوَ عَلىٰ كُلِّ شَيءٍ وَكيلٌ، لا تُدرِكُهُ الأَبصٰرُ وَهُوَ يُدرِكُ الأَبصٰرَ ۖ وَهُوَ اللَّطيفُ الخَبيرُ
নিশ্চয় আল্লাহই বীজ ও আঁটি থেকে অঙ্কুর সৃষ্টিকারী; তিনি জীবিতকে মৃত থেকে বের করেন ও মৃতকে জীবিত থেকে বের করেন। তিনি আল্লাহ অতঃপর তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছ? তিনি প্রভাত রশ্মির উন্মেষক। তিনি রাত্রিকে আরামদায়ক করেছেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে হিসেবের জন্য রেখেছেন। এটি পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানীর নির্ধারণ। তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্রপুঞ্জ সৃজন করেছেন যাতে তোমরা স্থল ও জলের অন্ধকারে পথ প্রাপ্ত হও। নিশ্চয় যারা জ্ঞানী তাদের জন্যে আমি নির্দেশনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করে দিয়েছি।তিনিই তোমাদের কে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অনন্তর একটি হচ্ছে তোমাদের স্থায়ী ঠিকানা ও একটি হচ্ছে গচ্ছিত স্থল। নিশ্চয় আমি প্রমাণাদি বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি তাদের জন্যে, যারা চিন্তা করে। তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন অতঃপর আমি এর দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি, অতঃপর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙ্গুরের বাগান, যয়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য কর যখন সেুগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্কতার প্রতি লক্ষ্য কর। নিশ্চয় এ গুলোতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদারদের জন্যে। তারা জিনদেরকে আল্লাহর অংশীদার স্থির করে; অথচ তাদেরকে তিনিই সৃস্টি করেছেন। তারা অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহর জন্যে পুত্র ও কন্যা সাব্যস্ত করে নিয়েছে। তিনি পবিত্র ও সমুন্নত, তাদের বর্ননা থেকে। তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের আদি স্রষ্টা। কিরূপে আল্লাহর পুত্র হতে পারে, অথচ তাঁর কোন সঙ্গী নেই ? তিনি যাবতীয় কিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি সব বস্তু সম্পর্কে সুবিজ্ঞ। তিনিই আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনিই সব কিছুর স্রষ্টা। অতএব, তোমরা তাঁরই এবাদত কর। তিনি প্রত্যেক বস্তুর কার্যনির্বাহী। দৃষ্টিসমূহ তাঁকে পেতে পারে না, অবশ্য তিনি দৃষ্টিসমূহকে পেতে পারেন। তিনি অত্যন্ত সুক্ষদর্শী, সুবিজ্ঞ। (সূরা আনয়াম আয়াত নং ৯৫-১০৩)।
ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান একেবারেই স্পষ্ট যে, সৃষ্টি যতই বড় শক্তিশালী ও যতই সম্মানিত হোক না কেন, কখনো স্রষ্টা হতে পারে না। ইসলামের দৃষ্টিতে পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হলেন বিশ্ব নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, কিন্তু একজন প্রকৃত মুসলিম কখনো তাঁকে স্রষ্টা হিসেবে বিবেচনা করে তাঁর ইবাদত করতে পারে না। যদি কেউ করে, তা হবে আল্লাহর সাথে শিরক, বড় অপরাধ, যা তাওবা ছাড়া কখনও ক্ষমা হবে না এবং এর পরিমাণ হচ্ছে চিরস্থায়ী জাহান্নাম।
পৃথিবীর মাঝে পিতামাতার সম্পর্ক, অত্যন্ত উচ্চ, মর্যাদাময়, সম্মান ও ভালোবাসার সম্পর্ক। এমনকি তাঁদের পদতলে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, মানুষ তাদের ইবাদত করবে। কেউ যদি করে, তা হবে শিরক, যার পরিমাণ হবে চিরস্থায়ী জাহান্নাম।
পৃথিবীতে কে এমন আছে, যে তার মা কে ভালোবাসে না? সবাই মাকে ভালোবাসে, শ্রদ্ধা ও সম্মান করে, আর এমন করাটাই স্বাভাবিক । কিন্তু এত প্রিয়তমা, শ্রদ্ধা , সম্মান ও ভালোবাসার পাত্র হওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ তাঁদের ইবাদত ও পূজা করে, তা হবে শিরক, নিষিদ্ধ ও হারাম। এমনকি স্বয়ং পিতামাতা যদি তাঁদের সন্তান সন্ততিদের কে তাঁদের ইবাদাতের দিকে আহ্বান জানান, তা প্রত্যাখান করাটাই হবে ফরজ। আল্লাহ বলেন:
وَوَصَّينَا الإِنسٰنَ بِوٰلِدَيهِ حُسنًا ۖ وَإِن جٰهَداكَ لِتُشرِكَ بى ما لَيسَ لَكَ بِهِ عِلمٌ فَلا تُطِعهُما ۚ إِلَىَّ مَرجِعُكُم فَأُنَبِّئُكُم بِما كُنتُم تَعمَلونَ
আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। ( সূরা আনকাবুত আয়াত নং ৮)।
মাতৃভূমি কখনো ইবাদাতের যোগ্য নয়: বিবেচনা করুন যে পবিত্র কুরআন যখন মানুষ কে তাঁর ভালোবাসার পাত্র পিতামাতার ইবাদত করার অনুমতি দেয়নি, প্রত্যাখান করেছে, কেমনে
"মাতৃভূমির" ইবাদতের অনুমতি দিতে পারে? মাতৃভূমি কে সম্মান করা এবং ভালোবাসা এক জিনিস, আর তাকে দেবতা হিসেবে ধারণ করা আরেক জিনিস। সম্মান ও ভালোবাসার অর্থ এই নয় যে আমরা যাকে ভালোবাসি তাকে পূজা করি। আমরা আমাদের বাবা-মাকে ভালোবাসি, আমরা আমাদের ভাইবোনদের ভালোবাসি এবং আমরা আমাদের আত্মীয়স্বজনের প্রতি আসক্ত। কিন্তু যদি আমরা তাদের পূজা না করি, তাহলে কেউ বলতে পারে না যে আমরা তাদের পূজা না করার কারণে আমাদের ভালোবাসা কমে গেছে।একইভাবে, একজন মুসলিম সে তার দেশকে ভালবাসে, কিন্তু দেশের পূজা (ইবাদত) করে না, তার পূজা না করার কারণে তাঁকে কখনও দেশ দ্রোহ বলা যেতে পারে না।
ভারত আমাদের মাতৃভূমি। মাতৃভূমি হিসেবে দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের অন্তরে দেশের জন্য অগাদ ভালোবাসা রয়েছে। দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের অন্তরে দেশের জন্য ভালোবাসা থাকাটাই স্বাভাবিক। আমরা দেশকে ভালবাসি, দেশের কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য সর্বান্তকরণে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং চালিয়ে যাব; কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে আমরা একে দেবতা হিসেবে ধারণ করব। যুক্তিসঙ্গত অথবা আইনগত কোনওভাবেই আমাদেরকে এর জন্য বাধ্য করা বৈধ নয়। দেশের সাংবিধান আদেশ করে যে, আমরা এখানকার কোনও বাসিন্দার উপর এমন কোনও আদেশ চাপিয়ে দিতে পারিনা যা তার ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিপন্থী বা যা তার ধর্মীয় স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করে। হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান ইত্যাদি সকলেই মাতৃভূমির সন্তান হিসেবে সমান। ঠিক যেমন একজন হিন্দুকে মূর্তি পূজা থেকে বিরত রাখা যায় না, তেমনি একজন মুসলিমকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর উপাসনা করতে বাধ্য করা যায় না।
দুর্ভাগ্যবশত হলেও সত্য যে, আজকে আমাদের প্রিয় দেশ ভারত বর্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষেরা ক্ষমতার বলে রাজনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যে তাদের শিরক যুক্ত আকিদাহ ও বিশ্বাস দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, এটি একেবারেই অসাংবিধানিক। দেশের আইন ও সংবিধান সকল নাগরিকদের ধর্মীয় বিষয়ে স্বতন্ত্রতা ও স্বাধীনতা দিয়েছে, কিন্তু কিছু উগ্রবাদী মানুষ দেশের ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ নষ্ট করতে এবং সম্প্রীতির শিকড়কে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে নাগরিকদের মাঝে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব লাগানোর নোংরা রাজনীতি করছে, যা আমরা শান্তি প্রিয় জনগণ কখনোই মেনে নেবো না। এরা আসলে মাতৃভূমির শুভাকাঙ্ক্ষী নন; বরং তারাই দেশটাকে অশান্তি, দাঙ্গা ও ফাসাদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এরাই হচ্ছে আসলে রাষ্ট্রদ্রোহ ও দেশের শত্রু।
ভারতীয় সকল নাগরিক, বিশেষ করে মুসলিম জাতি দেশকে তাঁদের জান মাল থেকে বেশি ভালোবাসেন। ইতিহাস সাক্ষ্য রয়েছে যে, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিম সম্প্রদায় সবচেয়ে বেশি বলিদান (কুরবানী) দিয়েছেন, তার জ্বলন্ত প্রমাণ আজ ইন্ডিয়া গেট বহন করে। যারা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের শরীরের এক ফোঁটা রক্ত জড়ায়নি, বরং দেশের শত্রুদের সহযোগিতা ও সমর্থন করেছিল, আজকে তারাই কুকৌশলে দেশের গদি দখল করে দেশ বিভাজনের রাজনীতি করছে, মুসলিম সম্প্রদায়ের দেশ প্রেমের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ছে, কি অদ্ভুত?! আজকে তারা মুসলিম সম্প্রদায়ের পেছনে উঠে পড়েছে, তাঁদের কে ভারত থেকে উত্খাত, বিতাড়িত, তাঁদের আকিদাহ ও বিশ্বাস নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করেছে। দুর্ভাগ্যবশত ও দুঃখজনক বিষয় হলো আজকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল থেকে দুর্বল হয়ে সংকটময় পরিস্থিতিতে পৌঁছে গেছে, দেশে বেকারত্বের হার বাড়ছে, দেশের নাগরিক দারিদ্রতা মুখামুখি, পার্শ্ববর্তী দেশ আমাদের দেশের উপর কুদৃষ্টি করছে, দেশের জমি দখল করছে কিন্তু কারো মাথায় ব্যাথা নেই। আজকে দেশের পার্লামেন্টে চর্চা হচ্ছে এমন এক বিষয়, এমন একটি বিতর্কিত সঙ্গীত নিয়ে, যার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেশের একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে টার্গেট করে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করা এবং দেশকে বিভাজনের মুখে ঠেলে দেয়া।
বন্দে মাতারাম সঙ্গীত দেশের সংবিধানে প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী। দেশের সাংবিধান দেশের সকল নাগরিককে ধর্মীয় স্বাধীনতা দিয়েছে, দেশের সকল নাগরিক স্বতন্ত্রতা ও স্বাধীনতার সহিত তাঁরা নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে, কেউ এ অধিকার খর্ব করতে পারে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আজকে বন্দে মাতারাম সঙ্গীত দ্বারা ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা চলছে, এটি সংবিধান বিরোধী পদক্ষেপ, এবং দেশের সংবিধানের উপর আঘাত। সংবিধান দ্বারা প্রদত্ত স্বাধিনতা কে আমরা দেশের সংবিধানপ্রিয় বুদ্ধিজীবী মানুষ কখনও এবং কোনো মূল্যেই বিলিয়ে দিতে পারিনা। আমরা আমাদের সংবিধানের রক্ষক, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দেশের সংবিধানের হেফাজত করব। সংবিধানের উপর ষড়যন্ত্রের সকল প্রকার কালো হাতকে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করবো।
বন্দে মাতারাম সঙ্গীত যেহেতু বহুঈশ্বরবাদী ধারণা বহনকারী একটি সঙ্গীত, একেশ্বরবাদ (তাওহীদের) এর বিশ্বাসের পরিপন্থী। অতএব দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে মুসলিম, খ্রীষ্টান, ইহুদী এবং যাঁরাই একত্ববাদের উপর বিশ্বাসী কখনো এবং কোনো মূহুর্তে এটি মেনে নিতে পারে না। শুধু এখানেই শেষ নয়, এ সঙ্গীত প্রকৃত অর্থে বিশুদ্ধ সনাতনী ধর্মেরই পরিপন্থী। কারণ প্রকৃত সনাতনী ধর্ম কখনও সৃষ্টির পূজাকে সমর্থন করে না। তাহলে কেমনে সনাতনী ধর্মাবলম্বী মানুষ বহুঈশ্বরবাদী ধারণা বহনকারী সঙ্গীত বন্দে মাতারাম সমর্থন করতে পারে?!
অতএব দেশের সকল বুদ্ধিজীবী, শিক্ষিত সমাজ এবং সুবুদ্ধি সম্পূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ও নাগরিকদের উচিত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণভাবে এই সঙ্গীতের তীব্র বিরোধিতা, নিন্দা এবং সুকৌশলে গ্রহণ করা, যাতে সরকার বিতর্কিত সঙ্গীত বন্দে মাতারাম প্রত্যহার করতে বাধ্য হয়।
মুসলিম উম্মাহর উচিত বিচক্ষণতা ও সচেতনতার সহিত নিজের ঈমানের হেফাজত করা, যাতে আমাদের জিহ্বা দ্বারা এমন কোনো শব্দ উচ্চারণ না হয়, অথবা আমাদের দ্বারা কোনো এমন কর্ম সম্পাদিত না হয়, যা আমাদের ঈমানকে ধ্বংস ও বিনষ্টকারী। হে আল্লাহ! আমাদের রব, তুমি আমাদেরকে বিশুদ্ধ ঈমানের উপর দৃঢ়তা ও অটল থাকার তৈফিক দাও, শত্রুদের ষড়যন্ত্র থেকে আমাদেরকে রক্ষা কর এবং অবশেষে ঈমান অবস্থায় মৃত্যু দিও। আমীন।