প্রশ্নোত্তর বারবার সিজার, জরায়ু অপসারণ ও সন্তান গ্রহণের বিষয়ে ইসলামি দৃষ্টিকোণ

Joined
Feb 23, 2023
Threads
367
Comments
419
Reactions
2,143
প্রশ্ন: আমার দুইটি সন্তান রয়েছে। দুটোই সিজারিয়ান ডেলিভারির মাধ্যমে হয়েছে। আমি নরমাল ডেলিভারির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু সম্ভব হয়নি। এখন তৃতীয় সন্তানের ব্যাপারে আমি আমার ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেছেন, তৃতীয় সিজার করা যায় তবে এতে ঝুঁকি থাকে এবং জরায়ু কেটে ফেলতে হতে পারে। কারণ বারবার সিজার করানো জরায়ুর সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
এক্ষেত্রে কী করা উচিত? সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করা কি ঠিক হবে যেহেতু ডাক্তার বলছেন জরায়ু কেটে ফেলতে হতে পারে? আবার ইসলামে বেশি বেশি সন্তান গ্রহণের ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সন্তান নেওয়ার চেষ্টা না করলে কি গুনাহ হবে? তৎসঙ্গে পুরুষ ডাক্তারের সাহায্যে সিজারের বিধান সম্পর্কেও জানতে চাই।

উত্তর: ইসলামের দৃষ্টিকোণ:

১. চিকিৎসার ক্ষেত্রে নারী চিকিৎসক পাওয়া গেলে, পুরুষ চিকিৎসক গ্রহণ করা জায়েজ নয়:

ইসলামি শরিয়তে নারীর সংবেদনশীল স্থান কেবলমাত্র স্বামী ব্যতীত অন্য কোনও পুরুষের জন্য দেখা বা স্পর্শ করা জায়েজ নয়, যদিও সে মাহরাম (যেমন: ছেলে, বাবা, ভাই) হয়ে থাকে। তবে যদি কোনও যোগ্য নারী চিকিৎসক পাওয়া না যায় এবং পরিস্থিতি একান্তই সংকটময় হয় তখন প্রয়োজনে পুরুষ চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া বৈধ হবে।

এক্ষেত্রে পুরুষ চিকিৎসককে অবশ্যই গ্লাভস পরিধান করতে হবে এবং রোগীর শরীর যথাসম্ভব আবৃত রাখতে হবে, যাতে একান্ত প্রয়োজনীয় স্থান ব্যতীত অন্য কোনও অংশ প্রকাশিত না হয়।

শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা হলো:

الضرورة تبيح المحظورات​

"প্রয়োজন নিষিদ্ধ বিষয়গুলোকে বৈধ করে দেয়।"

বারবার সিজার ও জরায়ু অপসারণের বিষয়ে শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি:​


১. নিজের প্রাণহানির ঝুঁকি থাকলে সন্তান না নেওয়া বৈধ:
যদি তৃতীয় সিজার করার কারণে আপনার জীবন বা স্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, তাহলে শরিয়ত আপনাকে সন্তান গ্রহণ থেকে বিরত থাকার অনুমতি দেয়। কারণ ইসলাম জীবন রক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।

২. জরায়ু অপসারণ (হিস্টেরেকটমি) কেবলমাত্র চূড়ান্ত প্রয়োজনেই করা উচিত:

যদি চিকিৎসক নিশ্চিতভাবে বলেন যে, জরায়ু না কাটলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে তবে শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি বৈধ হবে। তবে শুধুমাত্র সম্ভাব্য সংক্রমণের আশঙ্কায় জরায়ু অপসারণ করা উচিত নয় বরং বিশেষজ্ঞ ও বিশ্বস্ত চিকিৎসকের সুস্পষ্ট মতামত প্রয়োজন।

৩. সন্তান নেওয়ার চেষ্টা না করলে গুনাহ হবে কি?

ইসলামে বেশি সন্তান গ্রহণের প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়। যদি শরীরিক বা চিকিৎসাগত কারণে আপনি সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকেন তাহলে গুনাহ হবে না। বরং শরিয়ত আপনাকে নিজের স্বাস্থ্য ও জীবনের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে অনুমতি দেয়।

পরামর্শ:​

  • প্রথমে একজন অভিজ্ঞ ইসলামি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • যদি ঝুঁকি সত্যিই গুরুতর হয় তাহলে স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ বা জরায়ু অপসারণের মতো পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
  • তবে শুধুমাত্র সম্ভাব্য ভয় বা আশঙ্কার ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।
  • আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন এবং দোয়া করুন যেন তিনি আপনার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করেন।
আল্লাহু আলাম-আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

- আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি​
 
Back
Top