প্রশ্নঃ বর্তমানে সালাফীদের মাঝে একটি খতরনাক সংশয় কাজ করছে। আর সেটা হলো: "যখনই আমরা কোনো শায়খের ইলম ও আলেমদের পক্ষ থেকে তার প্রশংসা শুনে তার উপর নির্ভর করতে শুরু করি -তার ব্যক্তিত্ব দেখে নয়-, তখনই হঠাৎ দেখি তার ছন্দপতন ঘটেছে!! কারণ জানতেই পারি না। তার ভুল থেকে সাবধান হতে হয়। আবার যখনই কারো বই দিয়ে আমাদের ব্যক্তিগত লাইব্রেরী পূর্ণ করে ফেলি, তখনই আবার সেগুলো খালি করতে হয়!!"
এই ধ্বংসাত্মক সংশয়ের সমাধান কি? এটা তো এখন রীতিমতো সংক্রামক ভাইরাসে রূপান্তরিত হয়েছে; আর এসবের মাধ্যমে আমাদের সালাফীদের মান-মর্যাদায় ঘাটতি হচ্ছে, এমনকি শয়তান তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করছে। এ ব্যাপারে আপনার সালাফী সন্তানদের প্রতি উপদেশ কি?
উত্তরঃ প্রশ্নে উল্লেখিত পরিস্থিতি বাস্তবে রয়েছে এবং আমিও সেটা অনুভব করি। তবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে হয়তোবা প্রশ্নকারীর উত্তর স্পষ্ট হবে:
উত্তর প্রদানেঃ
মক্কার মুফতী শায়খ মুহাম্মাদ বিন উমার বাযমূল হাফিযাহুল্লাহ।
(শায়খের পেজ থেকে)
এই ধ্বংসাত্মক সংশয়ের সমাধান কি? এটা তো এখন রীতিমতো সংক্রামক ভাইরাসে রূপান্তরিত হয়েছে; আর এসবের মাধ্যমে আমাদের সালাফীদের মান-মর্যাদায় ঘাটতি হচ্ছে, এমনকি শয়তান তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করছে। এ ব্যাপারে আপনার সালাফী সন্তানদের প্রতি উপদেশ কি?
উত্তরঃ প্রশ্নে উল্লেখিত পরিস্থিতি বাস্তবে রয়েছে এবং আমিও সেটা অনুভব করি। তবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে হয়তোবা প্রশ্নকারীর উত্তর স্পষ্ট হবে:
- ১) সালাফিয়্যাত এবং সালাফী হওয়া মানে এটা নয় যে, তার ভুল হবে না, সে ছোট হোক বা বড় আলেম হোক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ "সব আদম সন্তানই ভুল করে। আর এই ভুলকারীর মাঝে তারাই উত্তম, যারা ফিরে আসে (তাওবা করে)।"
- ২) যেকোনো ভুল করলেই যে ভুলকারীর সাথে বিদয়াতীদের মতো আচরণ করতে হবে- ব্যাপারটা মোটেও সেরকম নয়। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এ বিষয়ে (আসল) সালাফী এবং (বেশধারী সালাফী) হাদ্দাদী-রা সহ তাদের মতো অন্যান্যদের মাঝে ভেদরেখা হলো: তারা (বেশধারীরা) সালাফী কর্তৃক ঘটে যাওয়া ভুল আর বিদয়াতী কর্তৃক সংঘটিত ভুল- এ দুটোর মাঝে পার্থক্য করে না। সবার সাথে একই আচরণ করে। কারণ, সুন্নী সালাফী-কে উপদেশ এবং দিকনির্দেশনা দেয়া হবে; আর তার ক্ষেত্রে আশাই করা যায় যে, সে হক গ্রহণ করবে এবং ফিরে আসবে। এটা (নসীহত) দূর্বলতা ও কাপুরুষতার জন্য নয়, বরং এটা শিষ্টাচারগত বীরত্ব যার মাধ্যমে মানুষ তার রবের দ্বীন মানবে। কারণ, সত্যই অনুসরণের অধিক হকদার।
- ৩) সালাফিয়্যাত মানে এটা নয় যে, সালাফীদের মাঝে ইজতিহাদী ইলমী মাসয়ালাতে মতভেদ থাকবে না; সাহাবীদের বিভিন্ন ঘটনা যার প্রমাণ বহন করে। আবার, সালাফে সালেহীনের বুঝ অনুযায়ী কুরআন ও সুন্নাহ বোঝা মানে তো এটা নয় যে, সালাফীদের মাঝে ইখতিলাফ হবে না; সালাফে সালেহীনের অনুসারী ইমাম চতুষ্ঠয়ের মাঝেও তো আমরা ইজতিহাদী ইলমী মাসয়ালাতে মতভেদ দেখতে পাই, যা সর্বজনবিদিত।
- ৪) সালাফিয়্যাত মানে এটা নয় যে, সালাফী লোকটির মাঝে অন্তরে লুকায়িত মানবিক চাহিদার প্রভাব থাকবে না; যেমন, প্রসিদ্ধি, অন্য ভাইদের সাথে একগুঁয়েমি ইত্যাদি। বরং হওয়ার কথা তো এটা যে, এক মুসলিম অপর মুসলিমের আয়না স্বরূপ; ফলে অপরকে নসীহত করবে, সঠিক দিকনির্দেশনা দেবে। -আল্লাহ সাহায্য করুন-।
- ৫) সালাফে সালেহীনের মানহাজের মাঝে এটা নেই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাদে অন্য কারো অনুসরণ আবশ্যক; বিশেষ করে ইজতিহাদী বিষয়গুলোতে।
- ৬) এক সালাফী আলেম আরেক সালাফী আলেমের বিরুদ্ধে বলতে পারেন, কোনো একটা সমস্যার কারণে একে অন্যকে কিছু এদিক ওদিক বলে দিতে পারেন। কিন্তু এর মানে তো এটা নয় যে, তাকে একদম সাকেত্ব তথা অপাংক্তেয় বলে ফেললেন। এক্ষেত্রে (আমাদের) অবস্থান হবে: দুজনের প্রতিই সুধারণা রাখা। তখন আমরা মনে করব যে, অমুক আলেমের কথাটি তার কোনো ইজতিহাদের ফলাফল; ফলে ঠিক হলে তার দুটি সওয়াব, আর ভুল হলে একটি।
- ৭) ন্যায়পরায়ণতা ও ইলমের দৃঢ়তায় যিনি পরিচিত, এরকম কারো নামে কোনো অপবাদ গ্রহণযোগ্য হবে না স্পষ্ট ত্রুটি ও কারণ দর্শানো ছাড়া। সুতরাং, তার সাথে এমন আচরন করা যাবে না, যেমনটা করা হয় পূর্ব থেকেই সমালোচিত বা ন্যায়পরায়ণতা ও ইলমের দৃঢ়তায় অপরিচিত কোনো লোকের সাথে।
- ৮) সুধারণা রাখতে হবে- এটাই অগ্রগণ্য। তো তুমি তোমার মুসলিম ভাই সম্পর্কে কুধারণা করতে যাবে না, যতক্ষণ তুমি কোনো একদিক থেকে ভালো অর্থ নিতে পারছ।
- ৯) কোনো ব্যক্তিকে পবিত্র ও নির্ভুল বলা যাবে না। প্রশ্নকারী -আল্লাহ তাকে উত্তম বিনিময় দিন- এদিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
- ১০) সমালোচনা করা হলেই যে তিনি পরিত্যক্ত হবেন এমনটাও নয়, আবার সব কথাই যে সমালোচনা হিসেবে ধর্তব্য হবে- তা-ও তো নয়।
- ১১) এটা সালাফী মানহাজ নয় যে, কোনো আলেমকে অন্য আলেমদের থেকে তাযকিয়া তথা প্রশংসাপত্র নেয়ার জন্য চাপাচাপি করা এবং এটার পিছনেই ছুটে বেড়ানো। কারণ, একজন মুসলিমকে তার ইলম ও আমল-ই তাযকিয়া দেয় অন্য সবকিছুর আগে। মাটি কাউকে নির্ভুল করতে পারে না। বংশ পরিচিতিও কারো নিষ্কলুষতার প্রমাণ বহন করে না। মানুষের দোষ-ত্রুটি বলাও কোনো আহামরি কিছু না।
- ১২) এটা সালাফিয়্যাত নয় যে, মানুষের দোষে খুশি হওয়া, অন্যকে দোষারোপ করতে পারা, এমনিতেই শুধু শুধু এসবের পিছে ছোটা। ছাত্রদের জন্য আবশ্যক হলো, এসবে তারা নিজেরা লাগবে না; বরং, আলেমদের হাতেই ছেড়ে দেবে। সে কোনোমতেই ফিতনার ইন্ধন হবে না, এটাকে উস্কে দেবে না। বরং সে এইসব ফিতনা থেকে বিরত থাকা, সুধারণা এবং আলেমদের জন্য এই বিষয়টি ছেড়ে দেয়ার মাধ্যমে এই ফিতনা নেভাবে।
আল্লাহ তাওফীক দিন।
উত্তর প্রদানেঃ
মক্কার মুফতী শায়খ মুহাম্মাদ বিন উমার বাযমূল হাফিযাহুল্লাহ।
(শায়খের পেজ থেকে)