সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Yiakub Abul Kalam

প্রবন্ধ বড় বড় আলেমগণ মাযহাবের ভিত্তিতে ফতোয়া দেন কেন?

Yiakub Abul Kalam

Altruistic

Uploader
Exposer
Salafi User
LV
0
 
Credit
1,533
প্রশ্নঃ ইবনে আব্দুল বার্র, ইবনু কুদামা, নববী, ইবনুল হুমাম সহ বড় বড় আলেমদের দেখি মাসয়ালা নির্ণয় করতে মাযহাবের ভিত্তিতে কথা বলেন! তারা দলীলের ভিত্তিতে কথা বলেন না কেন?

উত্তরঃ তারা মাযহাবের ভিত্তিতে কথা বলেন বটে, তবে সেটা দলীলের সাযুজ্যতায় তাদের কাছে প্রাধান্য পাওয়া বিষয়েই করেন; অন্যথায় দলীল অনুযায়ী যেটাকে প্রাধান্যযোগ্য মনে হয়, সেটাই আলোচনা করেন।

ঐ সমস্ত আলেমগণ যখন মাযহাবের মাসয়ালাকে সাব্যস্ত করেন, তখন মূলত তাদের মতানুসারে যেটা প্রাধান্য পাবার সেটাকেই সাব্যস্ত করেন।

উদাহরণত, ইবনু কুদামা রহিমাহুল্লাহ "উমদাতুল ফিকহ" নামক গ্রন্থে মাযহাবের শুধু নির্ভরযোগ্য বর্ণনাটিই উল্লেখ করেছেন। উক্ত গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি বলেন: "এটি একটি ফিকহ বিষয়ক বই, সাধ্যমতো সংক্ষিপ্ত করেছি এবং একটিমাত্র মতামতেই স্থির থেকেছি, যাতে করে পাঠকের জন্য এটা ভিত্তিস্বরূপ হয়। ফলে বর্ণনা ও দলীলের বিভিন্নতায় পাঠক সঠিকটা বুঝতে দ্বিধায় পড়বে না।"

এরপর "আল-মুকনি'" নামক গ্রন্থ লিখে তাতে মাযহাবের নির্ভরযোগ্য মতামত নিয়ে আসার পাশাপাশি অন্য আরেকটি মতামত নিয়ে এসেছেন, যেটা পূর্বেরটার কাছাকাছি। কিছু মাসয়ালায় আবার দুইরকম দৃষ্টিকোণ এনেছেন। ভূমিকায় উল্লেখ করেছেনঃ "এটি ইমাম আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হান্বল আশ-শায়বানীর -আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন- মাযহাবের ভিত্তিতে লিখিত একটি ফিকহী কিতাব। আমি এটি লিখতে ও সাজাতে, সংক্ষিপ্তভাবে (ছাত্রদের) নাগালে রাখার ক্ষেত্রে নাতিদীর্ঘ পন্থা অবলম্বন করেছি। দলীল ও কারণ না এনে বেশিরভাগ হুকুম জমা করেছি যাতে করে কম কলেবরেই অনেক ইলম জমা হয়, মুখস্থ করতে ও বুঝতে যেন সহজ হয়, হাফেযদের জন্য তুষ্টকারী হয় এবং পাঠকদের জন্য উপকারী হয়।"

এরপর "আল-কাফী" নামক গ্রন্থ লিখেছেন। এই গ্রন্থে তিনি একই মাসয়ালায় ২/৩/৪ রকমের রেওয়ায়েত নিয়ে এসেছেন, সমান সংখ্যক দৃষ্টিকোণ এনেছেন, পাশাপাশি দলীল দিয়েছেন। এটার ভূমিকায় তিনি বলেনঃ "ইমামুল আইম্মাহ, রব্বানীল উম্মাহ আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হান্বল আশ-শায়বানীর -আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন- মাযহাবের উপর এই কিতাবটি লিখতে আমি আল্লাহর কাছে ইস্তিখারা করেছি। এতে আমি দীর্ঘতা ও সংক্ষিপ্ততার মাঝামাঝি থেকেছি, অতি সংক্ষেপে মাসয়ালার দলীলগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করেছি, হাদীসগুলোকে বিভিন্ন আলেমদের গ্রন্থের দিকে সম্পৃক্ত করে দিয়েছি। যেন এই গ্রন্থটি এই বিষয়ে লিখিত সব গ্রন্থ থেকে যথেষ্ট হয়ে যায়, অন্তর্ভুক্ত বিষয়াবলিতে পাঠককে সন্তুষ্টকারী হয়, দীর্ঘতা ছাড়াই যেন উদ্দেশ্য পূরণ হয় এবং হুকুম ও দলীল বর্ণনার মাঝে সমন্বয়কারী হয়। আল্লাহর সাহায্য চাই, তাঁরই উপর ভরসা, তাঁর দরবারে পদস্খলন থেকে হেফাজতের মিনতি জানাই। তিনি যেন আমাদেরকে নিয়ত, কথা ও কাজে সততা দান করেন। আমাদের যাবতীয় প্রচেষ্টাকে যেন তাঁর কাছাকাছি যাওয়ার মাধ্যম ও উপকৃত হবার তাওফীক দেন। এই গ্রন্থের মাধ্যমে আমাদেরকে ও মুসলিমদেরকে উপকার দান করেন। আমাদের এই কর্মকে বরকতময় করুন। তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট, কতই না উত্তম ভরসা তিনি।"

খেলাফি বিষয়ে লিখিত এই বইগুলো মাযহাবেরই অন্তর্ভুক্ত।

ফিকহী মাযহাবগুলোর মতবিরোধ নিয়ে তিনি "আল-মুগনী" নামক আলাদা একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। সেই গ্রন্থে তিনি মাযহাবের যে বর্ণনাটি তার কাছে সঠিক মনে হয়েছে, সেটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।

যেকোনো মুসলিম ব্যক্তি ইজতিহাদের স্তরে পৌঁছে গেলে দলীলের আলোকে প্রাধান্যযোগ্য মাসয়ালা বিবেচনা করা তার জন্য আবশ্যক।

আর মুত্তাবি' ব্যক্তি, যে সব মতামতের দলীল ভালোমতো পর্যালোচনা করার যোগ্যতা রাখে না, তবে কোনো একটি মতের দলীল জানতে পারে, তাহলে তাকে সেই দলীলযুক্ত একটি মতই গ্রহণ করতে হবে।

অপরপক্ষে 'আম্মী লোক, যার পক্ষে গবেষণা ও পর্যালোচনা করা সম্ভব নয়, তাকে তার মুফতীর মতই মানতে হবে।

জেনে রাখুন! মাঝে মাঝে আলেম মুজতাহিদ ব্যক্তিকেও এমন সব মাসয়ালাতে তাকলীদের দ্বারস্থ হতে হয়, যেগুলোর দলীল তার কাছে অস্পষ্ট অথবা ঐ সময় বিস্তর গবেষণার সুযোগ নেই তার কাছে। অনুরূপভাবে মুত্তাবি' ব্যক্তির অবস্থাও তাই।

আলেমগণ মূলত নিম্নোক্ত পরিস্থিতিগুলোতে তাকলীদকে নিন্দা করেছেনঃ

১. যার গবেষণা ও পর্যালোচনা করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও করছে না।
২. আবশ্যকীয় দলীল স্পষ্ট হওয়ার পরেও যে তাকলীদ করে।
৩. গোঁড়ামি ও অন্যদের তিরস্কারের দিকে এই তাকলীদ যদি ঠেলে দেয়। উদাহরণত, অন্যদেরকে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা মাযহাবের তাকলীদ আবশ্যকীয়ভাবে করতে বলে।

তবে এমনিতেই তাকলীদ মূলত 'আম্মী লোকদের জন্য।

আবার অন্যদের জন্যও বৈধ রয়েছে, উপরে যেমন আলোচনা করা হয়েছে।

আল্লাহই তাওফীকদাতা।



- শায়খ মুহাম্মাদ বিন উমার বাযমূল হাফিযাহুল্লাহ।​
 

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Total Threads
13,411Threads
Total Messages
17,342Comments
Total Members
3,720Members
Latest Messages
Rahat KibriaLatest member
Top