সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রশ্নোত্তর প্রশ্ন: (৫০৪) উমরা শেষ করার পর ইহরামের কাপড়ে নাপাকী দেখতে পেলে কী করবে?

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Threads
4,136
Comments
4,353
Solutions
1
Reactions
38,780
Credits
24,212
উত্তর: কোনো মানুষ উমরার তাওয়াফ ও সা‘ঈ শেষ করার পর যদি ইহরামের কাপড়ে নাপাকী দেখতে পায়, তবে তার তাওয়াফ বিশুদ্ধ, সা‘ঈ বিশুদ্ধ তথা উমরা বিশুদ্ধ। কেননা কারো কাপড়ে যদি তার অজানাতে কোনো নাপাকী লেগে থাকে অথবা জানে কিন্তু তা পরিস্কার করতে ভুলে যায় এবং সেই কাপড়ে সালাত আদায় করে, তবে তার সালাত বিশুদ্ধ। অনুরূপভাবে ঐ কাপড়ে যদি তাওয়াফ করে তবে তাওয়াফও বিশুদ্ধ। এ কথার দলীল আল্লাহর বাণী:

﴿رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَا﴾ [البقرة: ٢٨٦]

“হে আমাদের রব, আমরা যদি ভুলে যাই বা ভুলক্রমে কোনো কিছু করে ফেলি, তবে আমাদের পাকড়াও করবেন না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮৬]

এটি একটি সাধারণ দলীল, যা ইসলামের বিরাট ও গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি। এখানে একটি বিশেষ দলীল আছে, একদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে জুতা পরিহিত অবস্থায় সালাত আদায় করছিলেন। হঠাৎ তিনি জুতা খুলে ফেললেন। লোকেরাও জুতা খুলে ফেললেন। সালাত শেষ করে তিনি তাদেরকে বললেন, “তোমাদের কি হয়েছে? কেন তোমরা জুতা খুলে ফেললে? তারা বললেন, আপনি জুতা খুলে ফেলেছেন, আপনার দেখাদেখি আমরাও জুতা খুলে ফেললাম। তিনি বললেন, “জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে আমাকে সংবাদ দিলেন যে, আমার জুতায় নাপাকী আছে। তাই আমি ইহা খুলে ফেলেছি।”[1] কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নতুন করে আর সালাত আদায় করলেন না। অথচ তাঁর সালাতের প্রথম দিকের কিছু অংশ নাপাকী নিয়েই হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা জানতেন না। অতএব, ভুলক্রমে অথবা না জানার কারণে কেউ যদি কাপড়ে নাপাকী নিয়ে সালাত আদায় করে বা তাওয়াফ করে তবে তা বিশুদ্ধ হবে।

একটি মাসআলা: কোনো মানুষ যদি ছাগলের মাংস মনে করে উটের মাংস খায় এবং এ ভিত্তিতে অযু না করেই সালাত আদায় করে। যখন বিষয়টি সে জানবে তখন তাকে কি সালাত পুনরায় পড়তে হবে? হ্যাঁ, অযু করে তাকে সালাত পুনরায় পড়তে হবে।

কেউ যদি প্রশ্ন করে, এটা কেমন কথা? অজ্ঞতাবশতঃ নাপাকী নিয়ে সালাত আদায় করলে তা পুনরায় পড়তে হবে না; কিন্তু অজ্ঞতাবশতঃ উটের মাংস খেয়ে অযু না করে সালাত আদায় করলে তা দোহরাতে হবে?

এর জবাব: একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি (theory) হচ্ছে, (নির্দেশমূলক বিষয় অজ্ঞতা ও ভুলের কারণে রহিত হয় না। কিন্তু নিষিদ্ধ বিষয় অজ্ঞতা ও ভুলের কারণে রহিত হয়ে যায়।) এ মূলনীতির দলীল হচ্ছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: তিনি বলেন, “কোনো ব্যক্তি যদি সালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকে বা ভুলে যায়, তবে স্মরণ হলেই সে যেন তা আদায় করে নেয়।”[2] কোনো এক সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভুলক্রমে দু’রাকাত সালাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে দিলেন, বিষয়টি তাঁকে স্মরণ করানো হলো, তিনি তখন শুধুমাত্র ছুটে যাওয়া দু’রাকাতই আদায় করলেন। এ থেকে বুঝা যায় নির্দেশিত বিষয় ভুলে যাওয়ার কারণে রহিত হয় না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন সালাত ভুলে গেলে স্মরণ হলেই আদায় করে নিতে হবে। তা ছেড়ে দেওয়া যাবে না।

অনুরূপভাবে অজ্ঞতার কারণে নির্দেশমূলক রহিত হয় না তার দলীল হচ্ছে, জনৈক ব্যক্তি এসে খুব তাড়াহুড়া করে সালাত আদায় করলো, তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে সালাম দিলো, তিনি তাকে বললেন, ফিরে যাও আবার সালাত আদায় করো, কেননা তুমি সালাতই আদায় করো নি। এভাবে তিনবার তাকে ফেরালেন। প্রতিবারই সে সালাত আদায় করে তাঁর কাছে আসলে তিনি তাকে বললেন, “ফিরে গিয়ে সালাত আদায় কর। কেননা তুমি সালাতই আদায় করো নি।”[3] শেষ পর্যন্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সালাত শিখিয়ে দিলেন, ফলে সে বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে সালাত আদায় করল। এ লোকটি সালাতের গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব ‘ধীরস্থিরতা’ অজ্ঞতার কারণে পরিত্যাগ করেছিল। সে বলেছিল, ‘শপথ সেই সত্বার যিনি আপনাকে সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, আমি এর চাইতে সুন্দরভাবে সালাত আদায় করতে জানি না। আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন।’ অজ্ঞতার কারণে যদি ওয়াজিব রহিত হয়ে যেত, তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ওযর গ্রহণ করতেন এবং বারবার তাকে সালাত পড়তে বলতেন না।



[1] আবূ দাঊদ, অধ্যায়: সালাত, অনুচ্ছেদ: জুতা পরে সালাত আদায় করা।
[2] দেখুন ১৮৫ নং প্রশ্নের উত্তর।

[3] সহীহ বুখারী, অধ্যায়: আযান, অনুচ্ছেদ: কিরাত পাঠ করা ওয়াজিব; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: সালাত, অনুচ্ছেদ: প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব।

সূত্র: ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম। লেখক: শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)।
 
Top