সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রশ্নোত্তর প্রশ্ন: (৪৬২) হজের জন্য মীকাতের স্থানসমূহ কী কী?

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Threads
4,137
Comments
4,353
Solutions
1
Reactions
38,780
Credits
24,212
উত্তর: হজের জন্য মীকাতের স্থানসমূহ হচ্ছে পাঁচটি: ১) যুল হুলায়ফা ২) জুহ্‌ফা ৩) ইয়ালামলাম ৪) কারণে মানাযেল ৫) যাতু ঈরক্ব।

১) যুল হুলায়ফা: যাকে বর্তমানে আবা’রে আলী বলা হয়। যা মদীনার নিকটবর্তী। মক্কা থেকে এর অবস্থান ১০ মারহালা দূরে (বর্তমান হিসেবে প্রায় ৪০০ কি. মি.)। মক্কা থেকে এটি সবচেয়ে দূরে অবস্থিত মীকাত। এটি মদীনাবাসী এবং সেপথ দিয়ে গমণকারী অন্যান্যদের মীকাত।

২) জুহফা: শাম তথা সিরিয়াবাসীদের মক্কা গমনের পথে পুরাতন একটি গ্রামের নাম জুহফা। সেখান থেকে মক্কার দূরত্ব ৩ মারহালা। (বর্তমানে প্রায় ১৮৬ কি. মি.)। এটা এখন আর গ্রাম নেই। বর্তমানে লোকেরা এর বদলে পার্শবর্তী স্থান রাবেগ থেকে ইহরাম বাঁধে।

৩) ইয়ালামলাম: ইয়ামানের লোকদের মক্কা আগমণের পথে একটি পাহাড় বা একটি স্থানের নাম ইয়ালামলাম। বর্তমানে এস্থানকে সা‘দিয়া বলা হয়। এখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায় দু’মারহালা। (বর্তমানে প্রায় ৯২ কি. মি.।)

৪) কারণে মানাযেল: নজদ তথা পূর্ব এলাকার অধিবাসীদের মক্কা গমণের পথে তায়েফের কাছে একটি পাহাড়ের নাম। বর্তমানে একে সায়লুল কাবীর বলা হয়। এখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায় দু’মারহালা (বর্তমানে প্রায় ৭৮ কি. মি.।)

৫) যাতু ইরক্ব: ইরাকের অধিবাসীদের মক্কা আগমণের পথে একটি স্থানের নাম। এখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায় দু’মারহালা। (বর্তমানে প্রায় ১০০ কি. মি.।)

প্রথম চারটি মীকাত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত।[1] শেষেরটিও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার বর্ণনা অনুযায়ী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নির্ধারণকৃত মীকাত। যেমনটি নাসাঈ ও আবু দাঊদে বর্ণিত হয়েছে।[2] কিন্তু যাতু ইরক্বের ব্যাপারে সহীহ সূত্রে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে। তিনি একে কূফা ও বসরার অধিবাসীদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। তারা এসে অভিযোগ করল, হে আমীরুল মুমিনীন! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নজদবাসীদের জন্য কারণে মানাযেলকে (তায়েফের সাইলুল কাবীর) মীকাত নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু আমাদেরকে অনেকটা পথ ঘুরে সেখানে যেতে হয় এবং আমাদের অনেক কষ্ট হয়। তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তোমাদের পথে ঐ মীকাতের বরাবর কোনো স্থান তোমরা অনুসন্ধান কর। তখন যাতু ইরক্ব মীকাত হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।[3]

মোটকথা, যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সূত্রে প্রমাণিত হয় তবে তো কোনো প্রশ্ন নেই। যদি প্রমাণিত না হয়, তবে তা ওমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সুন্নাত থেকে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি চার খলীফার মধ্যে অন্যতম। যারা ছিলেন সু-পথপ্রাপ্ত এবং তাদের অনুসরণ করার নির্দেশ আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া উমারের সমর্থনে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে কয়েকটি বিধান নাযিল করেছেন। আয়েশা বর্ণিত হাদীসটি যদি সহীহ হয়, তবে এটাও তাঁর প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমর্থন। তাছাড়া উমারের নির্দেশ যুক্তিসংগত। কেননা কোনো মানুষ যদি মীকাত থেকে ভিতরে যেতে চায় তবে সেখান থেকেই তাকে ইহরাম বাঁধতে হবে। কিন্তু এ স্থানের বরাবর কোনো পথ দিয়ে ভিতরে যেতে চাইলে মীকাত অতিক্রমকারী হিসেবে উক্ত স্থান থেকেই ইহরাম বাঁধবে।উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর এ হাদীসে বর্তমান যুগে আমাদের জন্য বিরাট ধরনের উপকার বিদ্যমান। আর তা হচ্ছে, কোনো মানুষ যদি বর্তমান যুগে এরোপ্লেনযোগে হজ বা উমরা করতে আসতে চায়, তবে তার জন্য আবশ্যক হচ্ছে, যে মীকাতের উপর দিয়ে যাবে তার বরাবর হলেই তাকে ইহরাম বাঁধতে হবে। বিলম্ব করা বৈধ হবে না এবং জেদ্দায় গিয়ে ইহরাম বাঁধা জায়েয হবে না (যেমনটি অনেক লোক করে থাকে। কেননা স্থল পথে হোক, বা আকাশ পথে হোক বা সমুদ্র পথে হোক কোনো পার্থক্য নেই) মীকাতের বরাবর হলেই ইহরাম বাঁধতে হবে। এজন্য হজ যাত্রী যে দেশেরই হোক সমুদ্র পথে মক্কা আসতে চাইলে ইয়ালামলাম বা রাবেগের বরাবর হলে তাদেরকে ইহরাম বাঁধতে হবে।

[1] সহীহ বুখারী অধ্যায়: হজ অনুচ্ছেদ: হজ উমরার জন্য মক্কাবাসীদের মীকাত; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: হজ অনুচ্ছেদ: হজ উমরার জন্য মীকাতের স্থান।
[2] নাসাঈ, অধ্যায়: হজ অনুচ্ছেদ: ইরাকবাসীদের মীকাত; আবু দাঊদ, অধ্যায়: হজ অনুচ্ছেদ: মীকাতের বর্ণনা।

[3] সহীহ বুখারী অধ্যায়: হজ অনুচ্ছেদ: ইরাকবাসীদের জন্য মীকাত হচ্ছে যাতু ইরক্ব।

সূত্র: ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম। লেখক: শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)।
 
Top