সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রশ্নোত্তর প্রশ্ন: সুস্থ ও সুঠাম দেহের অধিকারী ভিক্ষুককে দান করার বিধান এবং ইসলামের দৃষ্টিতে ভিক্ষাবৃত্তির ভয়াবহতা কি?

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Threads
4,137
Comments
4,353
Solutions
1
Reactions
37,583
Credits
24,212
প্রশ্ন: আমরা জানি, ইসলামে অভাবীকে সাহায্য করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং যে চায় তাকে ধমক দিতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কিছু মানুষ ভিক্ষা চাইতে আসে যারা সম্পূর্ণ সুস্থ এবং সুঠাম দেহের অধিকারী। তাদের জিজ্ঞাসা করলে নানা অজুহাত দেখায়। এমন কি তাদের যদি কাজ দিয়ে দিতে চাই তাও তারা করবে না। উল্টা এমন কথা বললে খারাপ কথা বলে। বলে, ছোটলোক! গরিব মানুষের পেটে লাথি মারে ইত্যাদি। এমন অবস্থায় কী করা উচিৎ? উত্তর: কেউ যদি আপনার নিকট অভাব-অনটনের কথা বলে সাহায্য/ভিক্ষা চায় আর তাকে সত্যিই অভাবী মনে হয় তাহলে তাকে যথাসম্ভব দান করার চেষ্টা করবেন। চাই সাধারণ দান-সদকা হোক অথবা যাকাত হোক। আর যদি জানতে পারেন যে, সে অভাবী নয় বা সে ভিক্ষাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে তাহলে তার নিকট অপারগতা প্রকাশ করবেন এবং তাকে ভিক্ষা দেয়া থেকে বিরত থাকবেন। এ ক্ষেত্রে যদি সুন্দর পন্থায় ভালো কথার মাধ্যমে তাকে নসিহত করা সম্ভব হয় তাহলে নি:সন্দেহে তা করা উচিৎ। কেননা ইসলামের দৃষ্টিতে একান্ত নিরুপায় অবস্থা ছাড়া ভিক্ষা করা হারাম। হাদিসে আখিরাতে সম্পদ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ভিক্ষাবৃত্তির করুণ পরিণতির কথা বর্ণিত হয়েছে। ইমাম ইবনুল কাইয়েম রা. বলেন: المسألة في الأصل حرام، وإنما أبيحت للحاجة والضرورة “প্রকৃতপক্ষে ভিক্ষা করা হারাম। তবে কেবল প্রয়োজন ও একান্ত জরুরি ক্ষেত্রে তার বৈধতা দেয়া হয়েছে।” সুতরাং এ ধরণের কথিত ভিক্ষুকের নিকট সুন্দর ভাষায় ভিক্ষাবৃত্তি সংক্রান্ত ইসলামের নির্দেশনা পৌঁছানো এবং এ বিষয়ে তাকে নসিহত করা কর্তব্য। ◉ একান্ত নিরুপায় অবস্থা ছাড়া ভিক্ষাবৃত্তি করা হারাম: নিম্নে এ প্রসঙ্গে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হল: 🔸 ১. হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: عَنْ قَبِيصَةَ بْنِ مُخَارِقٍ, قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَسْتَعِينُهُ فِي حَمَالَةٍ , فَقَالَ: ” أَقِمْ عِنْدَنَا فَإِمَّا أَنْ نَتْحَمَّلَهَا وَإِمَّا أَنْ نُعِينَكَ وَاعْلَمْ أَنَّ الْمَسْأَلَةَ لَا تَصْلُحُ إِلَّا لِأَحَدِ ثَلَاثَةِ رِجَالٍ: رَجُلٍ تَحَمَّلَ عَنْ قَوْمٍ حَمَالَةً فَسَأَلَ حَتَّى يُؤَدِّيَهَا ثُمَّ يُمْسِكُ , وَرَجُلٍ أَصَابَتْهُ جَائِحَةٌ أَذْهَبَتْ مَالَهُ فَسَأَلَ حَتَّى يُصِيبَ سِدَادًا مِنْ عَيْشٍ أَوْ قِوَامًا مِنْ عَيْشٍ ثُمَّ يُمْسِكُ , وَرَجُلٍ أَصَابَتْهُ حَاجَةٌ حَتَّى يَشْهَدَ ثَلَاثَةٌ مِنْ ذَوِي الْحِجَى أَوْ مِنْ ذَوِي الصَّلَاحِ فِي قَوْمِهِ أَنْ قَدْ حَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ , وَمَا سِوَى ذَلِكَ مِنَ الْمَسَائِلِ سُحْتٌ يَأْكُلُهُ صَاحِبُهُ سُحْتًا يَا قَبِيصَةُ আবু বিশর কাবিসা ইবনে মুখারেক রা. থেকে বর্ণিত, একবার এক অর্থদণ্ডের দায়িত্ব আমার ঘাড়ে থাকলে আমি সে ব্যাপারে সাহায্য নিতে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম। তিনি বললেন, ‘‘সদকার মাল আসা পর্যন্ত তুমি অবস্থান কর। এলে তোমাকে তা দেওয়ার আদেশ করব।’’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘হে কাবিসা! তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কারো জন্য চাওয়া বৈধ নয়: ১. যে ব্যক্তি অন্য লোকদের অর্থদণ্ড পরিশোধের দায়িত্ব নিবে (কারো দিয়াত তথা রক্তপণ কিংবা জরিমানা দেওয়ার জামিন হবে), তার জন্য চাওয়া হালাল। অতঃপর তা পরিশোধ হয়ে গেলে সে চাওয়া বন্ধ করবে। ২. দুর্যোগ কবলিত হয়ে যার অর্থ-সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে, তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত চাওয়া বৈধ, যতক্ষণ তার সচ্ছল অবস্থা ফিরে না আসে। ৩. যে ব্যক্তি অভাবী হয়ে পড়বে এবং তার গোত্রের তিনজন জ্ঞানী বা সৎ লোক এ কথার সাক্ষ্য দেবে যে, অমুক অভাবী, তখন তার জন্য চাওয়া বৈধ। আর এ ছাড়া হে কাবিসা, অন্য লোকের জন্য চেয়ে (মেগে) খাওয়া হারাম। সে মাল খেলে হারাম খাওয়া হবে।’’ (মুসলিম ১০৪৪, নাসায়ী ২৫৭৯, ২৫৯১, আবু দাউদ ১৬৪০, আহমদ ১৫৪৮৬, ২০০৭৮, দারেমী ১৬৭৮) 🔸 ২. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন: مَنْ سَأَلَ النَّاسَ أَمْوَالَهُمْ تَكَثُّرًا فَإِنَّمَا يَسْأَلُ جَمْرًا فَلْيَسْتَقِلَّ أَوْ لِيَسْتَكْثِرْ “যে ব্যক্তি সম্পদ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মানুষের নিকট অর্থ চায় সে মূলত: (জাহান্নামের) জলন্ত আঙ্গার চায়। অতএব সে কম-বেশি যা ইচ্ছা যাক।” [মুসলিম, অধ্যায়ঃ যাকাত, অনুচ্ছেদঃ মানুষের কাছে ভিক্ষা চাওয়া নাজায়েয।] 🔸 ৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‏ لأَنْ يَأْخُذَ أَحَدُكُمْ حَبْلَهُ فَيَأْتِيَ بِحُزْمَةِ الْحَطَبِ عَلَى ظَهْرِهِ فَيَبِيعَهَا فَيَكُفَّ اللَّهُ بِهَا وَجْهَهُ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَسْأَلَ النَّاسَ أَعْطَوْهُ أَوْ مَنَعُوهُ “তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রশি নিয়ে (বন-জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কেটে) পিঠে কাঠের বোঝা বয়ে এনে বিক্রি করার ফলে আল্লাহ তাকে (ভিক্ষাবৃত্তির অপমান থেকে) রক্ষা করেন তাহলে তা মানুষের নিকট তার হাতপাতার চেয়ে উত্তম। তারা দিতেও পারে নাও পারে।” [সহিহ বুখারী, যাকাত অধ্যায়: হাদিস ৫৫০] 🔸 ৪. আব্দুল্লাহ ইবনে ‘উমর রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: مَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَسْأَلُ النَّاسَ حَتّى يَأْتِيَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَيْسَ فِي وَجْهِه مُزْعَةُ لَحْمٍ “যে ব্যক্তি সর্বদা মানুষের কাছে ভিক্ষা করতে থাকে কিয়ামতের দিন সে এমনভাবে উঠবে যে, তখন তার মুখমণ্ডলে গোশত থাকবে না।” [সহীহ বুখারী ১৪৭৪ ও মুসলিম ১০৪০] 🔸 ৫. আবু কাবশা আল আনমারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেনঃ ثَلَاثَةٌ أُقْسِمُ عَلَيْهِنَّ وَأُحَدِّثُكُمْ حَدِيثًا فَاحْفَظُوهُ قَالَ مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ وَلَا ظُلِمَ عَبْدٌ مَظْلَمَةً فَصَبَرَ عَلَيْهَا إِلَّا زَادَهُ اللَّهُ عِزًّا وَلَا فَتَحَ عَبْدٌ بَابَ مَسْأَلَةٍ إِلَّا فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ بَابَ فَقْرٍ أَوْ كَلِمَةً نَحْوَهَا “তিনটি বিষয়ের উপর আমি শপথ করছি এবং তোমাদের কাছে একটি হাদীছ বর্ণনা করছি, তোমরা তা মুখস্ত করে রাখ। তিনি বলেনঃ উক্ত তিনটি বিষয় হল ১. দান করলে বান্দার সম্পদ কমে না। ২. কারো উপর জুলুম করা হলে সে যদি ধৈর্য ধারণ করে তবে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। ৩. যখন কোন বান্দা ভিক্ষার দ্বার খুলে দেয় (ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করে) তখন আল্লাহ তার জন্য অভাবের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন।” (অথবা তিনি এ জাতীয় একটা কথা বলেছেন)। [সহিহ তারগিব ওয়াত তাহরিব অধ্যায়: ইখলাস (একনিষ্ঠতা), পরিচ্ছেদ: ইখলাস, সত্যবাদিতা ও সৎ নিয়তের প্রতি উদ্বুদ্ধ করণ, হা/১৬] আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কেবল তিনি ব্যতীত তাঁর সকল সৃষ্টি জগত থেকে মুখাপেক্ষীহীন করুন এবং এমন অভাব-অনটন থেকে হেফাজত করুন যাতে মানুষের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়। নিশ্চয় তিনি অভাব মুক্ত ও অতীব প্রশংসিত। ▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬ উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল fb id: AbdullaahilHadi দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
 
Top