‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

প্রশ্নোত্তর প্রশ্ন: ইসলামী শরীয়ত বলতে কি বুঝায় এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Threads
4,134
Comments
4,353
Solutions
1
Reactions
34,836
Credits
24,212
উত্তর: সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য।


ইসলামী শরীয়ত হলো একটি সুনির্দিষ্ট পথ ও পদ্ধতি; যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একমাত্র জীবন বিধান হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ইসলামী শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:


(ক) এটা আল্লাহর নিকট থেকে এসেছে; আল্লাহ বলেন:


﴿ ثُمَّ جَعَلۡنَٰكَ عَلَىٰ شَرِيعَةٖ مِّنَ ٱلۡأَمۡرِ فَٱتَّبِعۡهَا وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَآءَ ٱلَّذِينَ لَا يَعۡلَمُونَ ١٨ ﴾ [الجاثية: ١٨]


‘‘অতঃপর আমরা আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি নির্ধারিত শরীয়তের বিধানের উপর; সুতরাং আপনি এর অনুসরণ করুন, আর তাদের ইচ্ছা ও বাসনার অনুসরণ করবেন না, যাদের ইলম-জ্ঞান নেই’’।


আল্লাহ আরো বলেন:


﴿ وَٱللَّهُ بَصِيرُۢ بِٱلۡعِبَادِ ﴾ [ال عمران: ١٥]


‘‘আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি সম্যক দ্রষ্টা’’। (সূরা আলে-ইমরান: ১৫)


অর্থাৎ মহান আল্লাহ বান্দাদের প্রতি সবিশেষ দৃষ্টি রাখেন এবং তিনি বান্দাদের কল্যাণের ব্যাপারে সর্বাধিক অবহিত।


(খ) এটা একমাত্র পূর্ণাঙ্গ, সর্বাত্মক, সার্বজনীন, শাশ্বত জীবন বিধান; মহান আল্লাহ বলেন:


﴿ ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ﴾ [المائ‍دة: ٣]


‘‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে (জীবন বিধান) পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ (নেয়ামত) সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন (জীবন বিধান) নির্ধারণ করলাম’’।


অনুরূপভাবে সূরা মরিয়মের ৬৪ নং আয়াতে আছে:


﴿ ۚ وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيّٗا ﴾ [مريم: ٦٤]


‘‘আর আপনার রব কখনই ভুলে যান না’’।


ইসলামী শরীয়ত নামক বিধান আল্লাহর মনোনিত জীবন বিধান। মানুষের যাবতীয় প্রয়োজনের সুষ্ঠু সমাধান, দুনিয়া ও আখেরাতের সুখ-শান্তি নিহিত আছে আল্লাহ প্রদত্ত এ বিধানের মধ্যেই।


(গ) এটি সর্বকালীন এবং সর্বস্থানের উপযোগী একমাত্র আদর্শ বিধান। প্রতিদিন সূর্য উদিত হয় এবং আমরা দেখতে পাই যে, পৃথিবী শরীয়তের আলো হতে যা প্রয়োজন তা গ্রহণ করেছে। সুস্থ বুদ্ধি বিবেক এ সুন্দরতম সুশৃংখল নিয়ম-পদ্ধতি দেখে এ বিধানের প্রতি আগ্রহ উৎসাহ অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে এবং সাক্ষ্য দিবে যে, এ বিধানই নির্ভরযোগ্য একমাত্র অনুসরণীয় আদর্শ বিধান। এটা শান্তিময় আলোর পথ এবং ঈমানদারদের জন্য এটা আল্লাহর নেয়ামতসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম নেয়ামত। সুমহান আল্লাহ বলেন:


﴿ لَقَدۡ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ بَعَثَ فِيهِمۡ رَسُولٗا مِّنۡ أَنفُسِهِمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ ١٦٤ ﴾ [ال عمران: ١٦٤]


‘‘তাদের নিজেদের (মানুষের) মধ্য থেকেই তাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করে আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন; সে তাঁর (আল্লাহর) আয়াত তাদের নিকট তেলাওয়াত করে, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে এবং কিতাব ও হিকমাত (যাবতীয় বিষয়বস্তুকে সঠিক জ্ঞান দ্বারা জানাকে হিকমত বলে) শিক্ষা দেয়, যদিও তারা পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল’’। (সূরা আল ইমরান: ১৬৪)


(ঘ) এটা নিরাপত্তার নিশ্চিত ব্যবস্থা। অতএব ইসলাম সম্পর্কে যে যত বেশী জ্ঞান অর্জন করবে তত বেশী সে ইসলামী শরীয়তের শ্রেষ্ঠত্বে মহাত্ম্যে মুগ্ধ ও আকৃষ্ট হবে। অতঃপর এ বিধানকে সে নিজে আঁকড়ে ধরে তা প্রচারের চেষ্টা করবে। আর যে সর্বোত্তম নেয়ামতকে (ইসলাম) গ্রহণ ও শক্তভাবে ধারণ করতে পারবে সে ব্যক্তিই মানুষের মাঝে স্থিতাবস্থায় মানসিক শান্তি ও নিরাপত্তা অনুভব করবে। ব্যক্তিগত স্বস্তি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন:


﴿أَلَا بِذِكۡرِ ٱللَّهِ تَطۡمَئِنُّ ٱلۡقُلُوبُ ﴾ [الرعد: ٢٨]


‘‘আল্লাহর যিকিরে কি তোমাদের চিত্ত প্রশান্ত হয় না’’। (সূরা আর-রা‘দ-২৮)


অনুরূপভাবে সামজিক ও পারিপার্শ্বিক শান্তি-নিরাপত্তার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:


﴿ وَلَكُمۡ فِي ٱلۡقِصَاصِ حَيَوٰةٞ يَٰٓأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٧٩ ﴾ [البقرة: ١٧٩]


‘‘হে বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিগণ! কিসাসের মধ্যেই তোমাদের জীবন রয়েছে। আশা করা যায় যে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে’’। (সূরা আল-বাকারাহ: ১৭৯)


তদ্রূপ আখেরাতে বা পরকালে জাহান্নামের আগুন থেকে নিরাপদ ও মুক্ত থাকার নিশ্চয়তা প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন:


﴿ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَلَمۡ يَلۡبِسُوٓاْ إِيمَٰنَهُم بِظُلۡمٍ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمُ ٱلۡأَمۡنُ وَهُم مُّهۡتَدُونَ ٨٢ ﴾ [الانعام: ٨٢]


‘‘যারা ঈমান এনেছে অতঃপর তাদের ঈমানকে যুলুম (শির্ক) দ্বারা কুলুষিত করেনি, তাদের জন্যই নিরাপত্তা এবং এরাই হেদায়াতপ্রাপ্ত ও সত্যনিষ্ঠ। (সূরা আল-আন‘আম: ৮২)


(ঙ) এটা দুনিয়া ও আখেরাতে স্থায়ী সুখ-শান্তির ব্যাবস্থা। প্রত্যেকেই সুখ-শান্তি কামনা করে এবং সুখ কোথায় আছে তা খুজে বেড়ায়। আর কেউই সুখ-শান্তির বিপরীত চিন্তা করে না। স্থায়ী সুখ-শান্তি প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেনঃ


﴿ ۞وَأَمَّا ٱلَّذِينَ سُعِدُواْ فَفِي ٱلۡجَنَّةِ خَٰلِدِينَ فِيهَا مَا دَامَتِ ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ ﴾ [هود: ١٠٨]


‘‘আর যারা ভাগ্যবান তাদের স্থান জান্নাতে, সেখানেই তারা স্থায়ী হবে, যতদিন আকাশমণ্ডলী ও যমীন বিলুপ্ত না হয়’’। (সূরা হূদ-১০৮)


মহান আল্লাহ আরো বলেন:


﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِن تَتَّقُواْ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّكُمۡ فُرۡقَانٗا وَيُكَفِّرۡ عَنكُمۡ سَيِّ‍َٔاتِكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡۗ﴾ [الانفال: ٢٩]


‘‘হে ঈমানদারগণ, যদি তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, তাহলে (আল্লাহ) তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দিবেন এবং তোমাদের পাপ মোচন করে দিবেন’’। (সূরা আল-আনফাল: ২৯)


বুদ্ধিমান লোকের সদা-সর্বদা সুখ-শান্তির অনুসন্ধান করে থাকে। আর এটা নিশ্চিত যে, সর্ব প্রকার সুখ-শান্তি পেতে হলে পবিত্র ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী জীবন-যাপন করতে হবে।


সূত্রঃ প্রশ্নোত্তরে তাওহীদ
লেখকঃ ড. ইবরাহীম ইবন সালেহ আল-খুদ্বায়রীউত্তর: সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য।
 

Share this page