‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

প্রশ্নোত্তর প্রশ্নঃ ‘সালাতুর রাগায়েব’ (রাগায়েব নামায) কি কোন সুন্নত; যা আদায় করা মুস্তাহাব?

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Threads
4,138
Comments
4,353
Solutions
1
Reactions
37,583
Credits
24,212
উত্তর: সালাতুর রাগায়েব বা রাগায়েব নামায রজব মাসে সংঘটিত বিদাতগুলোর একটি। এ বিদাতটি রজব মাসের প্রথম জুমাবার রাত্রে মাগরিব ও এশার নামাযের মাঝে সম্পাদিত হয়। এর আগে রজব মাসের প্রথম বৃহষ্পতিবারে রোযা রাখা হয়।


হিজরি ৪৮০ সালের পরে বায়তুল মুকাদ্দাসে সর্বপ্রথম এ বিদাত চালু হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, উত্তম তিনপ্রজন্ম কিংবা ইমামগণ এটি করেছেন মর্মে কোন বর্ণনা নেই। এ আমলটি নিন্দনীয় বিদাত; প্রশংসিত সুন্নত নয় এটা প্রমাণিত হওয়ার জন্য এ দলিলটিই যথেষ্ট।


আলেমগণ আমল থেকে সাবধান করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে, এটি ভ্রষ্ট বিদাত।


ইমাম নববী আল-মাজমু গ্রন্থে (৩/৫৪৮) বলেন: “সালাতুর রাগায়েব নামে পরিচিত রজব মাসের প্রথম জুমার রাতে মাগরিব ও এশার মাঝে আদায়কৃত ১২ রাকাত এবং অর্ধ শাবানে আদায়কৃত ১০০ রাকাত নামাযদ্বয় গর্হিত দুটি বিদাত। ‘কুতুল কুলুব’ কিতাবে কিংবা ‘ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন’ কিতাব-এ নামাযদ্বয়ের উল্লেখ থাকা দ্বারা কিংবা কিতাবদ্বয়ে উল্লেখিত হাদিস দ্বারা কেউ যেন বিভ্রান্ত না হয়। কারণ এ সংক্রান্ত সবকিছু বাতিল। অনুরূপভাবে কোন কোন আলেমের কাছে এ নামাযের বিধান অস্পষ্ট থাকার কারণে এ নামায মুস্তাহাব মর্মে কয়েকপাতার যে কিতাব লিখেছেন সেটা দ্বারাও কেউ যেন বিভ্রান্ত না হন। কারণ তিনি তাতে ভুল করেছেন। ইমাম আবু মুহাম্মদ আব্দুর রহমান বিন ইসমাইল আল-মাকদিসি এ নামাযকে বাতিল সাব্যস্ত করে একটি মূল্যবান কিতাব লিখেছেন এবং তাতে তিনি খুব সুন্দর ও বিস্তারিত লিখেছেন।”[সমাপ্ত]


ইমাম নববী সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যায় লিখেছেন: “এই বিদাত প্রচলনকারীর উপর আল্লাহ্‌র লানত হোক। বিদাত হচ্ছে- অজ্ঞতা ও ভ্রষ্টতা। এ আমলটিও সে রকম বিদাতসমূহের মধ্য থেকে একটি। একদল আলেম এ বিদাতটির নিন্দা করে, এ নামায আদায়কারীর ভ্রষ্টতা তুলে ধরে, তাকে বিদাতী সাব্যস্ত করে, এ আমলটি মন্দ ও বাতিল হওয়ার প্রমাণাদি উল্লেখ করে অগণিত বই রচনা করেছেন।[সমাপ্ত]


ইবনে আবেদীন তার রচিত ‘হাশিয়া’ তে (২/২৬) বলেন: “ ‘আল-বাহর’ গ্রন্থে বলেছেন: এ আলোচনার ভিত্তিতে জানা যায় যে, রজব মাসের প্রথম জুমাবার পালনকৃত ‘সালাতুর রাগায়েব’ আদায় করার একত্রিত হওয়া গর্হিত ও বিদাত…।


আল্লামা নুর উদ্দীন আল-মাকদিসি এ বিষয়ে সুন্দর একটি কিতাব লিখেছেন। সেটির নাম দিয়েছেন: ‘রাদউর রাগিব আন সালাতির রাগায়েব’। সে কিতাবে তিনি চার মাযহাবের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল আলেমদের বক্তব্য সংকলন করেছেন।”[সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত]


ইবনে হাজার হাইতামি (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয় যে, সালাতুর রাগায়েব কি জামাতের সাথে আদায় করা জায়েয হবে; নাকি নয়?


জবাবে তিনি বলেন: “ ‘সালাতুর রাগায়েব’ অর্ধ শাবানের রাতে আদায়কৃত নামাযের ন্যায় নিন্দিত দুটি বিদাত। এ সংক্রান্ত হাদিস মাওযু (বানোয়াট)। এ দুটি আমল একাকী বা জামাতের সাথে পালন করা গর্হিত।”[সমাপ্ত] [আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা (১/২১৬)]


ইবনুল হাজ্জ আল-মালেকি ‘আল-মাদখাল’ নামক কিতাবে (১/২৯৪) বলেন: এই মহান মাসে (বুঝাতে চাচ্ছেন রজব মাস) লোকেরা যে বিদাতগুলো চালু করেছে: এ মাসের প্রথম জুমার রাতে পাঞ্জেগানা মসজিদ ও জামে মসজিদগুলোতে ‘সালাতুর রাগায়েব’ আদায় করা। লোকেরা বিভিন্ন শহরের জামে মসজিদ ও পাঞ্জেগানা মসজিদে একত্রিত হয় এবং এ বিদাত পালন করে। জামাতে নামায আদায় করা হয় এমন মসজিদগুলোতে তারা ইমামের নেতৃত্বে জামাতের সাথে এ নামায আদায় করে যেন এটি শরিয়ত স্বীকৃত কোন নামায…। ইমাম মালেক (রহঃ) এর মাযহাব হচ্ছে- সালাতুর রাগায়েব আদায় করা গর্হিত। কেননা পূর্ববর্তীরা এ নামায আদায় করেনি। সকল কল্যাণ হচ্ছে তাঁদের অনুসরণে।”[সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত]


শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: পক্ষান্তরে, জিজ্ঞাস্য নামাযের মত নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট সংখ্যায়, নির্দিষ্ট ক্বিরাতে জামাতের সাথে নামায সৃষ্টি করা: যেমন- রজব মাসের প্রথম জুমাবারে সালাতুর রাগায়েব, রজব মাসের প্রথম দিন এক হাজার রাকাত নামায, অর্ধ শাবানে নামায, রজব মাসের সাতাশ তারিখের নামায ইত্যাদি ইসলামের ইমামগণের সর্বসম্মতিক্রমে শরিয়ত স্বীকৃত নয়। যেমনটি নির্ভরযোগ্য আলেমগণ দ্যর্থহীন ভাষায় উল্লেখ করেছেন। এ ধরণের আমল কোন মূর্খ বিদাতী ছাড়া অন্য কেউ চালু করতে পারে না। এ ফটক উম্মুক্ত করা ইসলামী শরিয়তকে বিকৃত করা অবধারিত করবে এবং আল্লাহ্‌র অনুমোদন ছাড়া যারা ধর্মকে পরিবর্তন করেছে তাদের কর্মে অংশীদারিত্ব গ্রহণ করা হবে। [আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা (২/২৩৯)]


শাইখুল ইসলামকে এ নামায সম্পর্কে আরও জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: এ নামায রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পড়েননি, সাহাবায়ে কেরাম পড়েননি, তাবেয়ীগণ পড়েননি, মুসলিম উম্মাহর ইমামগণ পড়েননি; এ নামাযের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্বুদ্ধ করেননি, সলফে সালেহীনদের কেউ উদ্বুদ্ধ করেননি, কোন ইমাম উদ্বুদ্ধ করেননি এবং তারা এ রাত্রির বিশেষ কোন ফযিলতও উল্লেখ করেননি। এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিস সংশ্লিষ্ট জ্ঞানে পারদর্শীদের সর্বসম্মতিক্রমে মিথ্যা ও বানোয়াট। এ কারণে মুহাক্কিক আলেমগণ বলেছেন: এ নামায মাকরুহ; মুস্তাহাব নয়।[সমাপ্ত] [আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা (২/২৬২)]


আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা (২২/২৬২) গ্রন্থে এসেছে: “হানাফি ও শাফেয়ি মাযহাবের আলেমগণ দ্ব্যর্থহীনভাবে উল্লেখ করেছেন যে, রজব মাসের প্রথম জুমাবার সালাতুর রাগায়েব পড়া ও অর্ধ শাবানের রাতে বিশেষ পদ্ধতিতে ও বিশেষ সংখ্যক রাকাতে নামায আদায় করা গর্হিত বিদাত…।


আবুল ফারাজ ইবনুল জাওযি বলেন: সালাতুর রাগায়েব রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে বানোয়াট ও মিথ্যা। তিনি বলেন: আলেমগণ এ দুটি আমল বিদাত হওয়া ও মাকরুহ হওয়ার ব্যাপারে একাধিক দলিল উল্লেখ করেছেন; তার মধ্যে রয়েছে: সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন এবং তাদের পরবর্তীতে মুজতাহিদ ইমামগণের কারো কাছ থেকে এ নামাযদ্বয়ের ব্যাপারে কোন বর্ণনা আসেনি। যদি এ নামাযদ্বয় শরিয়ত অনুমোদিত হত তাহলে সালাফদের এ নামাযদ্বয় ছুটে যেত না। বরং এ নামাযদ্বয় ৪০০ হিজরির পরে উদ্ভাবিত হয়েছে।[সমাপ্ত]


সূত্র: islamqa.info
 

Share this page