সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
FORUM BOT

প্রশ্নোত্তর প্রশ্নঃ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক মুসলমান শাবানী নামে যে অনুষ্ঠানগুলো পালন করে সেগুলো কি কি?

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Threads
4,134
Comments
4,353
Solutions
1
Reactions
34,836
Credits
24,212
উত্তর: কোন কোন মুসলিম শাবান মাসের মধ্যবর্তী দিন (১৫তম দিন) উদযাপন করে থাকে। এই দিনে তারা রোযা রাখে, রাতে নামায আদায় করে। এ বিষয়ে হাদিস বর্ণিত আছে; কিন্তু সেটি সহিহ নয়। এ কারণে আলেমগণ এই দিন উদযাপনকে বিদাত হিসেবে গণ্য করেছেন। শাতেবী (রহঃ) বলেন: "সুতরাং বিদাত হচ্ছে দ্বীনি বিষয়ে নব উদ্ভাবিত এমন এক পথ যা শরয়ি পথের প্রতিদ্বন্দ্বী; এ পথ অনুসরণের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ্‌ তাআলার ইবাদতে অতিরঞ্জন…। এর মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট পদ্ধতি ও কাঠামোর অনুসরণ। যেমন— সম্মিলিতভাবে এক সুরে যিকির করার পদ্ধতি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিনকে ঈদ (উৎসব) হিসেবে উদযাপন করা ও এ ধরণের অন্যান্য উৎসব। এর মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু সময়ে নির্দিষ্ট কিছু ইবাদত পালন করা; শরিয়তে এমন কোন নির্দিষ্টতার দলিল পাওয়া যায় না। যেমন— মধ্যবর্তী শাবানের দিনে রোযা রাখা ও রাতে নামায আদায় করা।"[আল-ইতিসাম (১/৩৭-৩৯) থেকে সমাপ্ত]


মুহাম্মদ আব্দুস সালাম আস-শুকাইরী বলেন: "ইমাম আল-ফাতনি 'তাযকিরাতুল মাওযুআত' গ্রন্থে বলেন: মধ্যবর্তী শাবানের রাতে হাজার রাকাত নামায পড়ার যে বিদাত উদ্ভাবন করা হয়েছে: জামাতের সাথে সূরা ইখলাস দিয়ে একশ রাকাত দশ দশবার। তারা এ নামাযকে জুমার নামায ও ঈদের নামাযের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। অথচ এর সপক্ষে কোন হাদিস বা আছার (সাহাবীর উক্তি) আসেনি। তবে 'আল-কুত'-এর গ্রন্থাকার ও 'ইহইয়া'-এর গ্রন্থাকার কিংবা অন্য কোন গ্রন্থাকারের উল্লেখ করা দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। তাফসিরে ছালাবীতে এ রাতকে লাইলাতুল ক্বাদর হিসেবে উল্লেখ করার দ্বারাও বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না।"[সমাপ্ত]


ইরাক্বী বলেন: "মধ্যবর্তী শাবানের হাদিস বাতিল। ইবনুল জাওযি ঐ হাদিসটি 'আল-মাওযুআত' (জাল হাদিসের সংকলন)-এ উল্লেখ করেছেন। মধ্যবর্তী শাবানের রাতে নামায ও দোয়া শীর্ষক অধ্যায়: "মধ্যবর্তী শাবানের রাত উপনীত হলে তোমরা রাতে নামায পড়বে এবং দিনে রোযা রাখবে।"[এ হাদিসটি ইবনে মাজাহ আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। হাশিয়াকার বলেন: 'আল-যাওয়ায়েদ' গ্রন্থে বলা হয়েছে এর সনদ দুর্বল। বর্ণনাকারী ইবনে আবু বুসরা দুর্বল হওয়ার কারণে। তার ব্যাপারে আহমাদ ও ইবনে মায়ীন বলেছেন সে হাদিস জাল করে।"[সমাপ্ত]


বিপদ মুসিবত দূর হওয়া, আয়ু দীর্ঘ হওয়া ও মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষী হওয়ার নিয়তে মধ্যবর্তী শাবানে ৬ রাকাত নামায পড়া এবং নামাযের মাঝে মাঝে সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করা ও দোয়া করা নিঃসন্দেহে দ্বীন ইসলামে অভিনব বিষয় এবং সাইয়্যেদুল মুরসালিনের আদর্শের বরখেলাফ। আল-ইহইয়া গ্রন্থের ব্যাখ্যাকার বলেন: "উত্তরসূরী সূফীদের গ্রন্থে এ নামাযের উল্লেখ মশহুর। কিন্তু এ নামাযের ও দোয়ার সমর্থনে আমি সুন্নাহতে কোন সহিহ দলিল দেখিনি; এটি সূফী শাইখদের আমল। আমাদের মাযহাবের আলেমগণ বলেছেন: উল্লেখিত রাতগুলোর কোন একটিতে ইবাদত করার জন্য মসজিদে কিংবা অন্য কোথাও একত্রিত হওয়া মাকরুহ।


আন-নাজম আল-গাইত্বি 'মধবর্তী শাবানের রাতে জামাতের সাথে নামাযের পদ্ধতি'-এর ব্যাপারে বলেন: "হিজাযের অধিকাংশ আলেম এটাকে অস্বীকার করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন— আতা, ইবনে আবু মুলাইকা, মদিনার ফকীহগণ, ইমাম মালেকের ছাত্রগণ। তারা বলেন: এগুলো সব বিদাত। এ নামায জামাতের সাথে আদায়ের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কিংবা তাঁর সাহাবীবর্গ থেকে কোন কিছু সাব্যস্ত হয়নি। নববী বলেন: রজব ও শাবান মাসের নামায গর্হিত ও নিন্দিত দু'টি বিদাত।"[আস-সুনান ওয়াল মুবতাদাআত (পৃষ্ঠা-১৪৪) থেকে সংকলিত]


আল-ফাতনি (রহঃ) তার উপরোল্লেখিত বক্তব্যের পর বলেন: "এ নামাযের কারণে সাধারণ মানুষ মহা ফিতনাগ্রস্ত হয়েছে। এর কারণে অনিবার্য হয়েছে ব্যাপক আগুন জ্বালানো, এর প্রেক্ষিতে গুনাহর কাজ ও হারাম কাজ অনিবার্য হয়েছে; যা বর্ণনাতীত। এমন কি আউলিয়াগণ এই নামাযের দিনক্ষণে ভূমি ধ্বসের আযাবের ভয়ে নির্জন জায়গায় পালিয়ে যেতেন। এ নামাযের বিদাত সর্বপ্রথম চালু হয় ৪৪৮ হিজরীতে বায়তুল মুকাদ্দাসে। যায়েদ বিন আসলাম বলেন: আমরা আমাদের শাইখ ও ফকীহদের মধ্যে এমন কাউকে পাইনি যিনি শবে বরাতের দিকে ভ্রূক্ষেপ করতেন, কিংবা অন্য রাতের উপর এ রাতকে মর্যাদা দিতেন। ইবনে দিহইয়্যা বলেন: শবে বরাতের হাদিসগুলো মাওযু (বানোয়াট)। একটি হাদিস মাকতু। যে ব্যক্তি এমন কোন হাদিসের উপর আমল করে যে হাদিসের ব্যাপারে সাব্যস্ত হয়েছে যে, এটি মিথ্যা সে ব্যক্তি শয়তানের খাদেম।"[আল-ফাতনির রচিত "তাযকিরাতুল মাওযুআত" পৃষ্ঠা-৪৫ থেএক সমাপ্ত]


আরও জানতে দেখুন: ইবনুল জাওযির "আল-মাওযুআত" (২/১২৭), ইবনুল কাইয়্যেম এর "আল-মানার আল-মুনীফ ফিস সাহীহ ওয়ায যায়ীফ" (পৃষ্ঠা-৯৮), আস-শাওকানীর "আল-ফাওয়ায়েদ আল-মাজমুআ" (পৃষ্ঠা-৫১)।


কিছু কিছু মানুষ শাবান মাসের শেষ দিনগুলোকে "শাবানী" আখ্যায়িত করে থাকেন। তারা বলেন: এ দিনগুলো খাওয়া-দাওয়াকে বিদায় জানানোর দিন। তাই রমযান মাস প্রবেশ করার পূর্বে এ দিনগুলোকে তারা খাওয়া-দাওয়ার সুযোগ হিসেবে গণ্য করেন। আর কিছু কিছু ভাষাবিদ উল্লেখ করেছেন যে, এটি খ্রিস্টানদের থেকে গৃহীত। কারণ খ্রিস্টানেরা তাদের "উপবাস" পালন কাছাকাছি আসলে এমনটি করত।


সারকথা হল: শাবান মাসে উদযাপনের কিছু নাই। শাবান মাসের মধ্যবর্তীতে কিংবা শেষদিকে বিশেষ কোন ইবাদত নাই। এ ধরণের কিছু করা বিদাত ও গর্হিত কাজ।


আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।


সূত্র: islamqa.info
 
Top