পৃথিবীকে সমতল দাবি করা একজন ইমামুল জাহিলীন এর আরবি ভাষাজ্ঞান ():
একজন إمام الجاهلين ফেসবুকে নিম্নোক্ত হাদিসটি প্রচার করেছে :
সনদ ↓
আহমাদ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু শুরাইহ আল-ইশাবানী (মৃ. ৩০৬ হিজরী) <- মুহাম্মদ ইবনু রাফি' আল-নিসাবুরী (মৃ. ২৪৫ হিজরী) <- ইসমাইল ইবনু আবদ আল-করিম আল-ইয়ামানি (মৃ. ২১০ হিজরী) <- আবদ আল-সামাদ ইবনু মাকিল আল-ইয়ামানি (মৃ. ১৮৩ হিজরী):
"ওয়াহাবকে দুটি যমীন [পৃথিবী] সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তারা কেমন আছে? তিনি বললেনঃ সাতটি সমতল পৃথিবী যা দ্বীপ, প্রত্যেক দুই পৃথিবীর মাঝখানে একটি সমুদ্র এবং সবুজ সাগর সবগুলোকে ঘিরে আছে। আর সমুদ্রের ওপারে মন্দির।"
العظمية لأبو الشيخ الأصبهاني، 4/1399
এবার আমরা তাবেঈ ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত সমতল পৃথিবী সংক্রান্ত আছারটির সঠিক অনুবাদ এবং উপরের অনুবাদে থাকা ভুল নিয়ে আলোচনা করছি -
প্রথমেই তার আরবি উচ্চারণের দিকে একটু দৃষ্টিপাত করতে চাই। তিনি উপরে প্রথম রাবীর তথা আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন সুরাইহ যিনি আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন সুরাইজ নামে খ্যাত, তার নিসবত হিসেবে যুক্ত তার অঞ্চলের নামকে লিখেছে "আল-ইশাবানী"। মূলত উপাধিটি হচ্ছে 'الأصبهاني' যার উচ্চারন হয় আল-আসবাহানী অথবা ইসবাহানী।
ইমাম যাহাবী তাকে তারীখুল ইসলাম এ নিম্নোক্ত কুনিয়া মারেফত উল্লেখ্য করেছেন -
تاريخ الإسلام» (7/ 28)
«أحمد بن محمد بن سريج، أبو العباس الفأفاء.
ثقة، من شيوخ أصبهان.»
আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন সুরাইজ আবুল আব্বাস আল ফাফা। ছিকাহ, ইসফাহান এর শায়েখদের একজন।
তারীখুল ইসলাম ৭ম খণ্ড ২৮ পৃষ্ঠা
ইসফাহান অঞ্চলকে আরবিতে أصبهان/أصفهان বলা হয়। যাকে কয়েকভাবে উচ্চারণ করা হয় তবে কখনো ইশাবানী নামে উচ্চারণ করতে দেখিনি। তার স্ক্রিনশটেও الأصبهاني রয়েছে তবে সম্ভবত এটি গুগল ট্রান্সলেট এর কেরামতির জন্য ইমাম সাহেব দেখতে পাইনি।
কিতাবের নাম লিখেছে "Al Azma" অথচ কিতাবের আরবি নাম "العظمة" - যার উচ্চারণ হবে আল-আযামাতু অথবা আল-আযামাহ. এটি আল আযমা কীভাবে হলো? আমার জানা নেই।
এরপর মুহাম্মদ ইবনু রাফি আন-নিসাবুরী কে লিখেছে "আল-নিসাবুরী". মাদ্রাসায় মাদানী নেসাবে পড়া ছোট বাচ্চাকাচ্চারাও জানে যে النيسابوري তে ال এর পরে আসা ن হরফটি حروف الشمسية তাই লাম উহ্য থাকে এবং حمزة الوصل যেয়ে ن এর সাথে তাশদীদযুক্ত রূপে উচ্চারিত হয়ে থাকে।
একই ভুল করেছে আবদ আল সামাদ লেখায়, কারণ الصمد এর স্বোয়াদ ও হুরুফশ-শামছ্যিয়াহ তাই ل উহ্য থাকে। সঠিক উচ্চারণ হবে - আব্দুস সামাদ.
এভাবে উদ্ভট উচ্চারণে ইতিপূর্বে কাউকে লিখতে দেখিনি। আর গুগল ট্রান্সলেট করে যে অনুবাদ করেছে তাতেও ভুলে ভরপুর।
একটা ক্বওল নকল করতে গিয়ে যদি এত ভুল হয় আর তাকে যদি তার অনুসারীরা ইমামুল আরদ্বিল মুসাত্তাহা মানে তাহলে কীভাবে হয়?
এবার আসি বর্ণনার ব্যাপারে -
ওয়াহাবকে দুটি যমীন [পৃথিবী] সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তারা কেমন আছে? তিনি বললেনঃ সাতটি সমতল পৃথিবী যা দ্বীপ, প্রত্যেক দুই পৃথিবীর মাঝখানে একটি সমুদ্র এবং সবুজ সাগর সবগুলোকে ঘিরে আছে। আর সমুদ্রের ওপারে মন্দির।"
সঠিক অনুবাদ হবে:
আব্দুস স্বামাদ বলেন, ওয়াহব (রাহিমাহুল্লাহ) কে যমিনগুলো কীভাবে রয়েছে সেই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন আমি তাকে বলতে শুনেছি:
সাতটি সমান্তরাল যমিনের দ্বীপ, প্রত্যেক দুইটি যমিনের অন্তরান্তর একটি সমুদ্র এবং বাহরুল আখদ্বার দ্বারা তার প্রত্যেকটি বেষ্টিত রয়েছে। কাঠামোটির পশ্চাৎ এ সমুদ্র রয়েছে।
এবার আমার অনুবাদের পেছনে যুক্তি এবং তার অনুবাদ কেন ভুল এর ব্যাখা দিচ্ছি:
তার অনুবাদের প্রথম লাইন:
وسئل عن الأرضين كيف هي؟
ওয়াহাবকে দুটি যমীন [পৃথিবী] সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তারা কেমন আছে?
ভুল: খানে দুটি যমিন অনুবাদ করা ভুল। আরবি লুগাহ তে মুছান্না (দ্বিবচন) এবং জামআ (বহুবচন) এর মাজরুর রূপ দেখতে একই ধরনের হয়। বোঝার সুবিধার্থে আমি নিচে আরদ্ব/الأرض এর মারফু, মানসুব এবং মাজরুর রূপ দেখাচ্ছি :
মুফরাদ (একবচন) : একটি পৃথিবী
মারফু → اَلْأَرضُ, মানসুব → اَلْأرضَ, মাজরুর → اَلْأرْضِ
মুছান্না (দ্বিবচন): দুটি পৃথিবী
মারফু →اَلأَرْضَانِ (আল-আরদ্বানি), মানসুব → اَلْأرْضَيْنِ (আল-আরদ্বাঈনি), মুছান্না এর মাজরুর রূপ মানসুব এর ন্যায় এক হয়ে থাকে।
জামআ (বহুবচন): তিন অথবা তিনের অধিক পৃথিবী
মারফু → اَلْأَرْضُوُنَ, মানসুব → اَلْأَرْضِيْنَ, মাজরুর রূপে মানসুব এর ন্যায় একই থাকে।
লক্ষ্য করুন, যদি আমরা তাশকীল/হারাকাহ সড়িয়ে দিই তাহলে মুছান্না এবং জামআ এর মাজরুর রূপ দেখতে হুবহু এক হয়ে যাবে। যেমন উপরোক্ত ক্ষেত্রে দেখুন → الأرضين
এক্ষেত্রে বাক্য দেখে আমাদের বুঝতে হবে তা মুছান্না এর মাজরুর রূপকে বুঝাচ্ছে নাকি জামআ এর মাজরুর রূপকে।
যেহেতু ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ রাহিমাহুল্লাহ কে সাতটি পৃথিবী নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল এবং পরে তিনি প্রত্যেক দুটি পৃথিবীর মাঝে সাগর কথাটি বলেছেন তাই শুরুতে সাতটি পৃথিবীর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে জামআ এর মাজরুর রূপই ব্যবহৃত হবে এবং এখানে দুটি পৃথিবী অনুবাদ করা ভুল। দ্বিতীয়ত দুইটি পৃথিবী বুঝালে হিয়া/هي ব্যবহৃত হতো না কারণ আরবি লুগাহ তে যেসব মানুষ, জীন এবং ফেরেস্তা ব্যতীত জগতে যত ধরনের গাইর আক্বিল (বুদ্ধিবিবেকহীন) জিনিস রয়েছে তাদের জামআ/বহুবচন শব্দগুলোকে মুফরাদ মুয়ান্নাস/একবচন শব্দরূপে গণ্য করা হয়।
একে বলা হয় - কুল্লু জামঈন মুয়ান্নাস (كُلُّ جَمْعٍ مُؤَنَّث )
এজন্য দেখুন হুয়া (পুরুষের সর্বনাম) এর পরিবর্তে হিয়া (স্ত্রীবাচক সর্বনাম) ব্যবহার হয়েছে ↓
وسئل عن الأرضين كيف هو؟×
وسئل عن الأرضين كيف هي؟√
দ্বিতীয় লাইন: سبع أرضين ممهدة جزائر
এর অনুবাদ করেছে:
"তিনি বললেনঃ সাতটি সমতল পৃথিবী যা দ্বীপ"
ভুল : এখানে سبع হচ্ছে আদাদ/عدد এবং আরদ্বাঈনা হচ্ছে মা'আদুদ/معدود। আরবিতে যেই সংখ্যা দ্বারা গণনা করা হয় তা আদাদ এবং যাকে গণনা করা হচ্ছে তাকে মাআদুদ বলে গণ্য করা হয়। উপরোক্ত এবারতে পৃথিবীগুলোর জন্য ব্যবহৃত أرضين শব্দটিকে স্ত্রীবাচক একবচন রূপে গণ্য হবে, যার কারণ উপরে উল্লেখ্য করেছি। এর ফলে এটি মাওসুফ (যেই বিশেষ্যটির দোষ গুণ বর্ণনা করা হচ্ছে তা মাওসুফ) হলে এর জন্য ব্যবহৃত সিফাত (বিশেষণ) হবে মুয়ান্নাস। কারণ, আরবি লুগাহ অনুযায়ী বিশেষ্য এবং তার জন্য ব্যবহৃত বিশেষণের মাঝে ৪টি ক্ষেত্রে মিল থাকতে হয় -
১. মাওসুফ-সিফাত এর ইরাবে মিল থাকবে
২. মাওসুফ-সিফাত এর মাঝে জেন্ডার এর দিক থেকে মিল থাকবে।
অর্থাৎ মাওসুফ যদি মুযাক্কার/পুরুষবাচক হয় সিফাতও পুরুষবাচক হবে এবং একইভাবে একটি স্ত্রীবাচক হলে উভয়টিই স্ত্রীবাচক হবে।
৩. মাওসুফ-সিফাত এর মাঝে সংখ্যার দিক থেকে মিল থাকবে
৪. মাওসুফ সিফাত এর মাঝে নাকিরাহ (indefinite article) এবং মা'রিফাহ (definite article) এর দিক থেকে মিল থাকবে।
এই চারটি বিষয়েই উপরের "আরদ্বাঈনা মুমাহহাদাতিন" অংশের মিল রয়েছে বিধায় এরা মাওসুফ-সিফাত এর সম্পর্কে রয়েছে।
আরদ্বাঈনা স্ত্রীবাচক একবচন রূপে গণ্য হবে গাইর আক্বিল বস্তু হওয়ায় এবং ممهد এর মুয়ান্নাস এবং মুফরাদ রূপ ممهدة তাই এখানে ব্যবহৃত হয়েছে। যেহেতু আরদ্বাঈনা মাজরুর তাই মুমাহহাদাতিন ও মাজরুর হয়েছে বা এদের শেষ হরফে যের হয়েছে।
আর মাওসুফ সিফাত হলে কখনো সাতটি সমতল পৃথিবী যা দ্বীপ হবে না বরং "সাতটি মসৃণ যমিনের দ্বীপ" অনুবাদ হবে। কারণ, ৩-১০ পর্যন্ত আরবি সংখ্যাগুলো আদাদ হিসেবে এলে এরা মুদাফ হয়ে যায় এবং এদের মাদুদ মুদাফ ইলাইহি হয়। এদাফাত এর সম্পর্ক এলেই 'র' ফলার সহিত অনুবাদ হবে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে পৃথিবীর জায়গায় যমিন কেন হবে? এর উত্তর এখন দিচ্ছি:
৪র্থ লাইন: والبحر الأخضر محيط بذلك كله
তার অনুবাদ: সবুজ সাগর সবগুলোকে ঘিরে আছে.
ভুল: كُلُّهُ এর অনুবাদ কেবল সবগুলো হবে না, 'তার সবগুলো' হবে কারণ কুল্লু মুদ্বাফ এবং এর সাথে هُ মুত্তাসিল দ্বমির/সংযুক্ত সর্বনামটি মুদ্বাফ ইলাইহি আছে। এখানে দ্বমির বা সর্বনামটি উভয় যমিনের প্রত্যেকটিকে উল্লেখ্য করছে।
এখানে আল বাহরুল আখদ্বার এর অনুবাদ করেছে সবুজ সাগর। আক্ষরিক অর্থে ঠিক থাকলেও পারিভাষিক অর্থে ঠিক নেই, কারণ আল বাহরুল আখদ্বার বলতে সুনির্দিষ্টভাবে Gulf Ocean/আরব সমুদ্র বা বাহরুল খালিজ কে বোঝায়। এখন আপনি চিন্তা করুন, তাবেঈ তার সময়কার পৃথিবীর আকৃতির বর্ণনা দিতে কি আরব সমুদ্রকে ব্যবহার করবেন? সাতটি পৃথিবীর সবখানেই কি আরব সমুদ্র আছে? কুরআন সুন্নাহ তে সাতটি পৃথিবীর ধরন না আসলে আমরা এটা তো গায়েবীভাবে বলতে পারি না।
৫ম লাইন: والهيكل من وراء البحر
এখানে আল হাইকাল কে সে মন্দির অর্থে অনুবাদ করেছে যা ভুল। হাইকাল এর বিভিন্ন অর্থ আছে তবে এখানে যেই অর্থ হবে তা হলো কাঠামো।
লেখা: সাফিন চৌধুরী
চলবে....
facebook
telegram
একজন إمام الجاهلين ফেসবুকে নিম্নোক্ত হাদিসটি প্রচার করেছে :
সনদ ↓
আহমাদ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু শুরাইহ আল-ইশাবানী (মৃ. ৩০৬ হিজরী) <- মুহাম্মদ ইবনু রাফি' আল-নিসাবুরী (মৃ. ২৪৫ হিজরী) <- ইসমাইল ইবনু আবদ আল-করিম আল-ইয়ামানি (মৃ. ২১০ হিজরী) <- আবদ আল-সামাদ ইবনু মাকিল আল-ইয়ামানি (মৃ. ১৮৩ হিজরী):
"ওয়াহাবকে দুটি যমীন [পৃথিবী] সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তারা কেমন আছে? তিনি বললেনঃ সাতটি সমতল পৃথিবী যা দ্বীপ, প্রত্যেক দুই পৃথিবীর মাঝখানে একটি সমুদ্র এবং সবুজ সাগর সবগুলোকে ঘিরে আছে। আর সমুদ্রের ওপারে মন্দির।"
العظمية لأبو الشيخ الأصبهاني، 4/1399
এবার আমরা তাবেঈ ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত সমতল পৃথিবী সংক্রান্ত আছারটির সঠিক অনুবাদ এবং উপরের অনুবাদে থাকা ভুল নিয়ে আলোচনা করছি -
প্রথমেই তার আরবি উচ্চারণের দিকে একটু দৃষ্টিপাত করতে চাই। তিনি উপরে প্রথম রাবীর তথা আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন সুরাইহ যিনি আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন সুরাইজ নামে খ্যাত, তার নিসবত হিসেবে যুক্ত তার অঞ্চলের নামকে লিখেছে "আল-ইশাবানী"। মূলত উপাধিটি হচ্ছে 'الأصبهاني' যার উচ্চারন হয় আল-আসবাহানী অথবা ইসবাহানী।
ইমাম যাহাবী তাকে তারীখুল ইসলাম এ নিম্নোক্ত কুনিয়া মারেফত উল্লেখ্য করেছেন -
تاريخ الإسلام» (7/ 28)
«أحمد بن محمد بن سريج، أبو العباس الفأفاء.
ثقة، من شيوخ أصبهان.»
আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন সুরাইজ আবুল আব্বাস আল ফাফা। ছিকাহ, ইসফাহান এর শায়েখদের একজন।
তারীখুল ইসলাম ৭ম খণ্ড ২৮ পৃষ্ঠা
ইসফাহান অঞ্চলকে আরবিতে أصبهان/أصفهان বলা হয়। যাকে কয়েকভাবে উচ্চারণ করা হয় তবে কখনো ইশাবানী নামে উচ্চারণ করতে দেখিনি। তার স্ক্রিনশটেও الأصبهاني রয়েছে তবে সম্ভবত এটি গুগল ট্রান্সলেট এর কেরামতির জন্য ইমাম সাহেব দেখতে পাইনি।
কিতাবের নাম লিখেছে "Al Azma" অথচ কিতাবের আরবি নাম "العظمة" - যার উচ্চারণ হবে আল-আযামাতু অথবা আল-আযামাহ. এটি আল আযমা কীভাবে হলো? আমার জানা নেই।
এরপর মুহাম্মদ ইবনু রাফি আন-নিসাবুরী কে লিখেছে "আল-নিসাবুরী". মাদ্রাসায় মাদানী নেসাবে পড়া ছোট বাচ্চাকাচ্চারাও জানে যে النيسابوري তে ال এর পরে আসা ن হরফটি حروف الشمسية তাই লাম উহ্য থাকে এবং حمزة الوصل যেয়ে ن এর সাথে তাশদীদযুক্ত রূপে উচ্চারিত হয়ে থাকে।
একই ভুল করেছে আবদ আল সামাদ লেখায়, কারণ الصمد এর স্বোয়াদ ও হুরুফশ-শামছ্যিয়াহ তাই ل উহ্য থাকে। সঠিক উচ্চারণ হবে - আব্দুস সামাদ.
এভাবে উদ্ভট উচ্চারণে ইতিপূর্বে কাউকে লিখতে দেখিনি। আর গুগল ট্রান্সলেট করে যে অনুবাদ করেছে তাতেও ভুলে ভরপুর।
একটা ক্বওল নকল করতে গিয়ে যদি এত ভুল হয় আর তাকে যদি তার অনুসারীরা ইমামুল আরদ্বিল মুসাত্তাহা মানে তাহলে কীভাবে হয়?
এবার আসি বর্ণনার ব্যাপারে -
ওয়াহাবকে দুটি যমীন [পৃথিবী] সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তারা কেমন আছে? তিনি বললেনঃ সাতটি সমতল পৃথিবী যা দ্বীপ, প্রত্যেক দুই পৃথিবীর মাঝখানে একটি সমুদ্র এবং সবুজ সাগর সবগুলোকে ঘিরে আছে। আর সমুদ্রের ওপারে মন্দির।"
সঠিক অনুবাদ হবে:
আব্দুস স্বামাদ বলেন, ওয়াহব (রাহিমাহুল্লাহ) কে যমিনগুলো কীভাবে রয়েছে সেই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন আমি তাকে বলতে শুনেছি:
সাতটি সমান্তরাল যমিনের দ্বীপ, প্রত্যেক দুইটি যমিনের অন্তরান্তর একটি সমুদ্র এবং বাহরুল আখদ্বার দ্বারা তার প্রত্যেকটি বেষ্টিত রয়েছে। কাঠামোটির পশ্চাৎ এ সমুদ্র রয়েছে।
এবার আমার অনুবাদের পেছনে যুক্তি এবং তার অনুবাদ কেন ভুল এর ব্যাখা দিচ্ছি:
তার অনুবাদের প্রথম লাইন:
وسئل عن الأرضين كيف هي؟
ওয়াহাবকে দুটি যমীন [পৃথিবী] সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তারা কেমন আছে?
ভুল: খানে দুটি যমিন অনুবাদ করা ভুল। আরবি লুগাহ তে মুছান্না (দ্বিবচন) এবং জামআ (বহুবচন) এর মাজরুর রূপ দেখতে একই ধরনের হয়। বোঝার সুবিধার্থে আমি নিচে আরদ্ব/الأرض এর মারফু, মানসুব এবং মাজরুর রূপ দেখাচ্ছি :
মুফরাদ (একবচন) : একটি পৃথিবী
মারফু → اَلْأَرضُ, মানসুব → اَلْأرضَ, মাজরুর → اَلْأرْضِ
মুছান্না (দ্বিবচন): দুটি পৃথিবী
মারফু →اَلأَرْضَانِ (আল-আরদ্বানি), মানসুব → اَلْأرْضَيْنِ (আল-আরদ্বাঈনি), মুছান্না এর মাজরুর রূপ মানসুব এর ন্যায় এক হয়ে থাকে।
জামআ (বহুবচন): তিন অথবা তিনের অধিক পৃথিবী
মারফু → اَلْأَرْضُوُنَ, মানসুব → اَلْأَرْضِيْنَ, মাজরুর রূপে মানসুব এর ন্যায় একই থাকে।
লক্ষ্য করুন, যদি আমরা তাশকীল/হারাকাহ সড়িয়ে দিই তাহলে মুছান্না এবং জামআ এর মাজরুর রূপ দেখতে হুবহু এক হয়ে যাবে। যেমন উপরোক্ত ক্ষেত্রে দেখুন → الأرضين
এক্ষেত্রে বাক্য দেখে আমাদের বুঝতে হবে তা মুছান্না এর মাজরুর রূপকে বুঝাচ্ছে নাকি জামআ এর মাজরুর রূপকে।
যেহেতু ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ রাহিমাহুল্লাহ কে সাতটি পৃথিবী নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল এবং পরে তিনি প্রত্যেক দুটি পৃথিবীর মাঝে সাগর কথাটি বলেছেন তাই শুরুতে সাতটি পৃথিবীর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে জামআ এর মাজরুর রূপই ব্যবহৃত হবে এবং এখানে দুটি পৃথিবী অনুবাদ করা ভুল। দ্বিতীয়ত দুইটি পৃথিবী বুঝালে হিয়া/هي ব্যবহৃত হতো না কারণ আরবি লুগাহ তে যেসব মানুষ, জীন এবং ফেরেস্তা ব্যতীত জগতে যত ধরনের গাইর আক্বিল (বুদ্ধিবিবেকহীন) জিনিস রয়েছে তাদের জামআ/বহুবচন শব্দগুলোকে মুফরাদ মুয়ান্নাস/একবচন শব্দরূপে গণ্য করা হয়।
একে বলা হয় - কুল্লু জামঈন মুয়ান্নাস (كُلُّ جَمْعٍ مُؤَنَّث )
এজন্য দেখুন হুয়া (পুরুষের সর্বনাম) এর পরিবর্তে হিয়া (স্ত্রীবাচক সর্বনাম) ব্যবহার হয়েছে ↓
وسئل عن الأرضين كيف هو؟×
وسئل عن الأرضين كيف هي؟√
দ্বিতীয় লাইন: سبع أرضين ممهدة جزائر
এর অনুবাদ করেছে:
"তিনি বললেনঃ সাতটি সমতল পৃথিবী যা দ্বীপ"
ভুল : এখানে سبع হচ্ছে আদাদ/عدد এবং আরদ্বাঈনা হচ্ছে মা'আদুদ/معدود। আরবিতে যেই সংখ্যা দ্বারা গণনা করা হয় তা আদাদ এবং যাকে গণনা করা হচ্ছে তাকে মাআদুদ বলে গণ্য করা হয়। উপরোক্ত এবারতে পৃথিবীগুলোর জন্য ব্যবহৃত أرضين শব্দটিকে স্ত্রীবাচক একবচন রূপে গণ্য হবে, যার কারণ উপরে উল্লেখ্য করেছি। এর ফলে এটি মাওসুফ (যেই বিশেষ্যটির দোষ গুণ বর্ণনা করা হচ্ছে তা মাওসুফ) হলে এর জন্য ব্যবহৃত সিফাত (বিশেষণ) হবে মুয়ান্নাস। কারণ, আরবি লুগাহ অনুযায়ী বিশেষ্য এবং তার জন্য ব্যবহৃত বিশেষণের মাঝে ৪টি ক্ষেত্রে মিল থাকতে হয় -
১. মাওসুফ-সিফাত এর ইরাবে মিল থাকবে
২. মাওসুফ-সিফাত এর মাঝে জেন্ডার এর দিক থেকে মিল থাকবে।
অর্থাৎ মাওসুফ যদি মুযাক্কার/পুরুষবাচক হয় সিফাতও পুরুষবাচক হবে এবং একইভাবে একটি স্ত্রীবাচক হলে উভয়টিই স্ত্রীবাচক হবে।
৩. মাওসুফ-সিফাত এর মাঝে সংখ্যার দিক থেকে মিল থাকবে
৪. মাওসুফ সিফাত এর মাঝে নাকিরাহ (indefinite article) এবং মা'রিফাহ (definite article) এর দিক থেকে মিল থাকবে।
এই চারটি বিষয়েই উপরের "আরদ্বাঈনা মুমাহহাদাতিন" অংশের মিল রয়েছে বিধায় এরা মাওসুফ-সিফাত এর সম্পর্কে রয়েছে।
আরদ্বাঈনা স্ত্রীবাচক একবচন রূপে গণ্য হবে গাইর আক্বিল বস্তু হওয়ায় এবং ممهد এর মুয়ান্নাস এবং মুফরাদ রূপ ممهدة তাই এখানে ব্যবহৃত হয়েছে। যেহেতু আরদ্বাঈনা মাজরুর তাই মুমাহহাদাতিন ও মাজরুর হয়েছে বা এদের শেষ হরফে যের হয়েছে।
আর মাওসুফ সিফাত হলে কখনো সাতটি সমতল পৃথিবী যা দ্বীপ হবে না বরং "সাতটি মসৃণ যমিনের দ্বীপ" অনুবাদ হবে। কারণ, ৩-১০ পর্যন্ত আরবি সংখ্যাগুলো আদাদ হিসেবে এলে এরা মুদাফ হয়ে যায় এবং এদের মাদুদ মুদাফ ইলাইহি হয়। এদাফাত এর সম্পর্ক এলেই 'র' ফলার সহিত অনুবাদ হবে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে পৃথিবীর জায়গায় যমিন কেন হবে? এর উত্তর এখন দিচ্ছি:
৪র্থ লাইন: والبحر الأخضر محيط بذلك كله
তার অনুবাদ: সবুজ সাগর সবগুলোকে ঘিরে আছে.
ভুল: كُلُّهُ এর অনুবাদ কেবল সবগুলো হবে না, 'তার সবগুলো' হবে কারণ কুল্লু মুদ্বাফ এবং এর সাথে هُ মুত্তাসিল দ্বমির/সংযুক্ত সর্বনামটি মুদ্বাফ ইলাইহি আছে। এখানে দ্বমির বা সর্বনামটি উভয় যমিনের প্রত্যেকটিকে উল্লেখ্য করছে।
এখানে আল বাহরুল আখদ্বার এর অনুবাদ করেছে সবুজ সাগর। আক্ষরিক অর্থে ঠিক থাকলেও পারিভাষিক অর্থে ঠিক নেই, কারণ আল বাহরুল আখদ্বার বলতে সুনির্দিষ্টভাবে Gulf Ocean/আরব সমুদ্র বা বাহরুল খালিজ কে বোঝায়। এখন আপনি চিন্তা করুন, তাবেঈ তার সময়কার পৃথিবীর আকৃতির বর্ণনা দিতে কি আরব সমুদ্রকে ব্যবহার করবেন? সাতটি পৃথিবীর সবখানেই কি আরব সমুদ্র আছে? কুরআন সুন্নাহ তে সাতটি পৃথিবীর ধরন না আসলে আমরা এটা তো গায়েবীভাবে বলতে পারি না।
৫ম লাইন: والهيكل من وراء البحر
এখানে আল হাইকাল কে সে মন্দির অর্থে অনুবাদ করেছে যা ভুল। হাইকাল এর বিভিন্ন অর্থ আছে তবে এখানে যেই অর্থ হবে তা হলো কাঠামো।
লেখা: সাফিন চৌধুরী
চলবে....
telegram
Attachments
Last edited: