সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

পৃথিবীকে সমতল বলা লোকদের খণ্ডন - পর্ব ৫

shafinchowdhury

Salafi

Salafi User
Threads
41
Comments
60
Reactions
718
Credits
255
পৃথিবীকে সমতল বলা লোকদের খণ্ডন - পর্ব ৫

তাবেঈ ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ (রাহিমাহুল্লাহ) কি পৃথিবীকে সমতল বলেছেন?

একজন ইমামুল আরদ্বিল মুসাত্তাহা (ছদ্মনাম) ফেসবুকে নিম্নোক্ত হাদিসটি প্রচার করেছে :

সনদ ↓
আহমাদ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু শুরাইহ আল-ইশাবানী (মৃ. ৩০৬ হিজরী) <- মুহাম্মদ ইবনু রাফি' আল-নিসাবুরী (মৃ. ২৪৫ হিজরী) <- ইসমাইল ইবনু আবদ আল-করিম আল-ইয়ামানি (মৃ. ২১০ হিজরী) <- আবদ আল-সামাদ ইবনু মাকিল আল-ইয়ামানি (মৃ. ১৮৩ হিজরী):

"ওয়াহাবকে দুটি যমীন [পৃথিবী] সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তারা কেমন আছে? তিনি বললেনঃ সাতটি সমতল পৃথিবী যা দ্বীপ, প্রত্যেক দুই পৃথিবীর মাঝখানে একটি সমুদ্র এবং সবুজ সাগর সবগুলোকে ঘিরে আছে। আর সমুদ্রের ওপারে মন্দির।"

العظمية لأبو الشيخ الأصبهاني، 4/1399

জবাব: তার লেখায় রাবীদের নাম লেখায় যে ত্রুটি রয়েছে সেটা আমি আরেক পোস্টে খণ্ডন করে দিবো।
এখন আমরা রিওয়ায়েতরটির সনদের দিকে দৃষ্টিপাত করবো। ইমাম আবুশ শাইখ আল আসবাহানি (রাহিমাহুল্লাহ) এটি তার "আল-আযামাহ" কিতাবে নিম্নোক্ত সনদ মারেফত বর্ণনা করেছেন ↓

আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন সুরাইহ → মুহাম্মাদ বিন রাফি → ইসমাঈল বিন আবদিল কারিম → আব্দুস সামাদ → তাবেঈ ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ.

(আল-আযামাতু, ৪/১৩৯৯)

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ شُرَيْحٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَبْدِ الْكَرِيمِ، حَدَّثَنِي عَبْدُ الصَّمَدِ، قَالَ: سَمِعْتُ وَهْبًا، رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى، وَسُئِلَ عَنِ الْأَرَضِينَ كَيْفَ هِيَ؟ قَالَ: «‌سَبْعُ ‌أَرَضِينَ ‌مُمَهَّدَةٌ جَزَائِرُ، بَيْنَ كُلِّ أَرَضَيْنِ بَحْرٌ، وَالْبَحْرُ الْأَخْضَرُ مُحِيطٌ بِذَلِكَ كُلِّهِ، وَالْهَيْكَلُ مِنْ وَرَاءِ الْبَحْرِ
[«العظمة لأبي الشيخ الأصبهاني» (4/ 1399)]

সনদের যে রাবীদ্বয় রয়েছে তারা জমহুর মুহাদ্দিসীনদের নিকট ছিকাহ, স্বাদুক. তাদের বর্ণনা পরিত্যাজ্য নয় বা দুর্বল নয় তবে বর্ণনাটির সনদে থাকা তাবেঈ ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ (রাহিমাহুল্লাহ) মূলত ইসরায়েলী রেওয়ায়ের বর্ণনার জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি সিকাহ, স্বুদুক। তার উপর কোনো মিথ্যার অভিযোগ নেই। তবে তিনি তাফসির শাস্ত্রের ক্ষেত্রে ইসরায়েলী বর্ণনার উপর ভারী মাত্রায় নির্ভর করতেন। উপরোক্ত বর্ণনাটি একটি ইসরায়েলী রিওয়ায়েত যার মতন ত্রুটিযুক্ত, যেটি সমন্ধে এখন আমি আলোচনা করবো।

ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) তার "আল উলু লিল আল্যিয়িল গুফফার" কিতাবে ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ (রাহিমাহুল্লাহ) এর বর্ণিত সমতল পৃথিবীর বর্ণনাটি উল্লেখ্য করে এর সমালোচনা করেন। একে ইসরায়েলী রেওয়ায়েত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন,

ওয়াহব জ্ঞানের তরি ছিলেন, তবে তার অধিকাংশ জ্ঞান ছিল পূর্ববর্তী জাতিদের ইতিহাসকে কেন্দ্র করে। তার নিকট বহু ইসরায়েলী বই ছিল যেগুলো থেকে তিনি বর্ণনা উদ্ধৃত করতেন। সম্ভবত কাব আল-আহবার থেকেও তার বর্ণনার পরিধি বেশি ছিল। যেই কাঠামোর ব্যাপারে তিনি এখানে বর্ণনা করেছেন যাতে সাতটি পৃথিবীর ও সমুদ্রকে তার মাঝ দিয়ে প্রবাহমান বলেছেন ইত্যাদি কথা আপত্তিজনক। ওয়াল্লাহু আলাম। তাই আমরা সেটিকে বর্জনও করি না আবার দলিল হিসেবেও গ্রহণ করি না।

আল উলু লিল আল্যিয়িল গুফফার, ১৩০ পৃষ্ঠা

[«العلو للعلي الغفار» (ص130):]
كان وهب من أوعية العلوم لكن جل علمه عن أخبار الأمم السالفةكان عنده كتب كثيرة ‌إسرائيليات كان ينقل منهالعله أوسع دائرة من كعب الأحباروهذا الذي وصفه من الهيكل وأن الأرضين السبع يتخللها البحر وغير ذلك فيه نظر والله أعلمفلا نرده ولا نتخذه دليلا»

ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবীর (রাহিমাহুল্লাহ) "আল উলূ লিল আল্যিয়িল গুফফার" কিতাবের মুখতাসার (সংক্ষেপায়ন), তাহকীক ও তাখরীজ করেছেন শায়েখ নাসিরুদ্দীন আল আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ)। বইটি "মুখতাসারুল উলূ লিল আল্যিয়িল গুফফার" শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। কিতাবটির ভেতরে শায়েখ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) ইমাম যাহাবীর কিঞ্চিৎ সমালোচনা করেছেন। কারণ, ইমাম যাহাবী উক্ত কিতাবে আল্লাহর আরশ প্রসঙ্গে তাবেঈ ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ হতে কিছু ইসরায়েলী রিওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন এবং আরশের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে যেয়ে সেসব বর্ণনাকে নিসবত করেছেন।

শায়েখ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

আমি বলছি: আমরা বরকতময় ও সুমহান রহমানের আরশ এর ব্যাপারে বিশ্বাস করি এবং কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী এর যেসব বৈশিষ্ট্য প্রমাণিত কেবল সেসবের দ্বারাই আমরা একে বর্ণনা করি। যদি লেখক (রাহিমাহুল্লাহ) ও তাতে সীমাবদ্ধ থেকে আন্দাজ-অনুমানের ভিত্তিতে আরশের কোনো বর্ণনা সংযুক্ত না করতেন, তাহলেই ভালো হতো। বিশেষত, কারণ তিনি একটি বর্ণনার উল্লেখ্য করেছেন যেটি মূলত ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ থেকে এসেছে, যাতে তিনি বলেছেন -
"আরশ হচ্ছে ৫০ হাজার বছরের ভ্রমণপথ (দূরত্বের দিক থেকে)"। অতঃপর তিনি এই বর্ণনার ব্যাপারে বলেছেন, "এটি ৫০ হাজার বছরের পথ, ৫০০ হাজার বছরের নয়।" নিশ্চিতভাবে এটি একটি ইসরায়েলী রিওয়ায়েত যা সতর্ক করার উদ্দেশ্য ব্যতীত বর্ণনা করার কোনো দরকার ছিল না। তাই আমি এই বর্ণনাটিকে মুখতাসার কিতাব থেকে সড়িয়ে দিয়েছি।

মুখতাসারুল উলূ লিল আল্যিয়িল গুফফার, ১০০ পৃষ্ঠা

- قلت: عرش الرحمن تبارك وتعالى، نؤمن به، ونصفه بما ثبت في الكتاب والسنة فقط، فليت المؤلف رحمه الله تعالى وقف عندهما، ولم يزد عليهما وصفا تظننا ورجما بالغيب، لا سيما وهو قد ذكر فيما يأتي من الأصل عن وهب بن منبه أنه قال: "العرش مسيرة خمسين ألف سنة" فقال خمسين، ولم يقل خمسمائة! وهو على كل حال من الإسرائيليات التي لا فائدة من ذكرها إلا للتنبيه، ولذلك حذفته من هذا المختصر.
مختصر العلو للعلي العظيم، ص ١٠٠

শায়েখ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) কিতাবের মুকাদ্দমাতেও এই কিতাবের তাহকীক এর ক্ষেত্রে তার মানহাজের বিষয়টি উল্লেখ্য করে বলেছেন -
তিনি ইমাম যাহাবীর কিতাবটির যে মুখতাসার করেছেন তাতে ঐ সকল ইসরায়েলী বর্ণনাকে বাদ দিয়েছেন যেগুলো সনদের দিক থেকে সহীহ হলেও হাদিসের মতনের অর্থ কুরআন সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক ছিল-

وحذفت أيضا ما جزمت بأنه من الإسرائيليات, ولو كان صحيح الإسناد, إلا إذا كان معناه موافقا للكتاب والسنة.

"আমি উক্ত কিতাবে সেসব বর্ণনাকেও বাদ দিয়েছি যেগুলো ইসরায়েলী রিওয়ায়েত। যদিও সেটার সনদ সহীহ হয়ে থাকে, তবুও সেটার অর্থ যদি কুরআন সুন্নাহর সাথে না মিলে থাকে, তাহলে তা বাদ দিয়েছি।"

মুখতাসারুল উলূ লিল আল্যিয়িল গুফফার, পৃষ্ঠা ২০

এতে বুঝা যায় যে ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ এর আছারটি শায়েখ আলবানীর নিকট সহীহ নয়। কেননা, সহীহ হলে তিনি নিজেই সেটাকে তার কিতাবে যুক্ত করতেন। আমি কিতাবে কোথাও ঐ সাতটি সমতল পৃথিবীর বর্ণনার উল্লেখ্য পাইনি, যেটা ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) তাবেঈ ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণনা করেছিলেন। বরং কিতাবের ভেতরে তিনি তাবেঈ ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ হতে আরশের দূরত্ব প্রসঙ্গে যেই রিওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন তার ব্যাপারে শাইখ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

ইমাম ত্বাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) এর রচিত তারীখ আত্ব-ত্ববারী এর তাহকীক ও তাখরীজ করে "সহীহ ওয়া দ্বঈফ তারীখুত ত্ববারী" শিরোনামে ছাপানো হয়েছেন। তাহকীক করেছেন মুহাম্মাদ বিন ত্বহির আল বারযানজি। তিনি এর সনদকে দুর্বল ও একে ইসরায়েলী বর্ণনা বলে আখ্যায়িত করেছেন।

(দেখুন: সহীহ ওয়া দ্বঈফ তারীখুত ত্ববারী ৬ষ্ঠ খণ্ড ১৮ পৃষ্ঠা, আল মাকতাবুশ শামেলা)
[صحيح وضعيف تاريخ الطبري» (6/ 18)]
ضعيف وهو من الإسرائيليات.»

সমতল পৃথিবীর যেই বর্ণনাটি ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ এর কিতাবুস সুন্নাহ এবং আবু আশ-শাইখ আল আসবাহানী এর আল আযামাহ কিতাবে এসেছে, সেই বর্ণনাটির সনদের রাবীদ্বয় থেকে আরো একাধিক ইসারেয়লী বর্ণনা এসেছে যাতে আল্লাহর সিফাত সমন্ধে কুফরী কথা রয়েছে এবং ওয়াহদাতুল ওজুদ (সৃষ্টি স্রষ্টার ভেতরে, স্রষ্টা সৃষ্টির ভেতরে) এর আক্বীদা রয়েছে। উক্ত কিতাবেই হুবহু একই সনদে বর্ণনাটি এসেছে -

আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন সুরাইহ আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন, তিনি মুহাম্মাদ বিন রাফি আন-নিসাবুরী হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি ইসমাঈল বিন আব্দিল কারিম হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি আব্দুস সামাদ হতে বর্ণনা করেছেন যে তিনি ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ (রাহিমাহুল্লাহ) কে বলতে শুনেছেন,

"বনী ইসরাঈলের কিছু লোকেরা বরকতময় ও সুমহান রবের ব্যাপারে তাদের নবীকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে, "তিনি কোথায়? তিনি কোন বাড়িগুলোতে অবস্থান করেন? আমরা কি তার ইবাদত করতে তার জন্য বাড়ি তৈরি করবো নাকি তিনি (নবী) তার জন্য বাড়ি তৈরি করবেন? (তাদের কথার প্রেক্ষিতে) তখন আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল নবীর উপর ওহী নাযিল করলেন -
"তোমার কওমের লোকেরা জিজ্ঞাসা করছে যে আমি কোথায়, যাতে তারা আমার ইবাদত করতে পারে? কোনো বাড়ি কি আমাকে ধারণ করতে সক্ষম? যমিন এবং আসমান আমাকে ধারণ করতে সক্ষম নয়। যদি তারা আমাকে ধারণ করতে চায় তাহলে নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক পবিত্র, আমানতদার এবং পরহেজগারের অন্তরে রয়েছি।"

[«العظمة لأبي الشيخ الأصبهاني» (2/ 429):]
«‌حدثنا ‌أحمد ‌بن ‌محمد ‌بن ‌شريح، ‌حدثنا ‌محمد ‌بن ‌رافع النيسابوري، حدثنا إسماعيل بن عبد الكريم، ‌حدثني ‌عبد ‌الصمد، أنه سمع وهب ‌بن ‌منبه رحمه الله تعالى، يقول: " إن ناسا من بني إسرائيل سألوا نبيهم عن الرب تبارك وتعالى: أين يكون؟ في أي البيوت يكون؟ أونبني له بيتا نعبده فيه، أو يبني له بيتا؟ فأوحى الله عز وجل إليه: إن قومك يسألونك عني أين أكون فيعبدوني وأي بيت يسعني؟ ولم تسعني السماوات والأرضون، فإذا أرادوا مسكني فإني في قلب العفيف الوادع الورع "»

এই বর্ণনায় বলা হচ্ছে যে আল্লাহকে যদি কেউ ধারণ করতে চায় অথবা مسكني/আবাস করতে চায় তাহলে আল্লাহ পবিত্র, আমানতদার ও পরহেজগারের অন্তরে রয়েছেন। নাউজুবিল্লাহ। এটি স্পষ্ট কুফরী বর্ণনা। কেননা আল্লাহ সৃষ্টি থেকে পৃথক রয়েছেন, তাই আল্লাহ তা'আলাকে সৃষ্টি কীভাবে ধারণ করবে যেখানে তিনি নিজেকে সকল সৃষ্টি থেকে পৃথক করেছেন। কুরআন-সুন্নাহ এবং মুতাওয়াতির আহাদিছ অনুযায়ী এটা স্পষ্টই কুফরী কথা।
যদি কেউ সমতল পৃথিবীর ইসরায়েলী বর্ণনার সনদকে সহীহ বলে হুজ্জাত হিসেবে ধরে, তাহলে সে কি উপরোক্ত ইসরায়েলী রিওয়ায়েত এর মতনকে দলিল হিসেবে ধরবে? যদি হ্যাঁ বলে, তাহলে আমার প্রশ্ন সালাফদের যুগে কি তাহলে এ ধরনের আক্বীদা ছিল? আর যদি না বলে তাহলে আমি প্রশ্ন করছি যে কেন তারা একই সনদে বর্ণিত সমতল পৃথিবী সংক্রান্ত ইসরায়েলী বর্ণনাকে মুতাওয়াতির আহাদিস ও কুরআন সুন্নাহর দলিল ব্যতীত গ্রহণ করছে।

কোনো বর্ণনার সনদ সহীহ হলেই বা তাবেঈ থেকে বর্ণিত হলেই যে তা দলিল হিসেবে গৃহীত হবে এমনটা কখনোই হয় না। বরং তার মতনকেও অন্যান্য সহীহ হাদিসের আলোকে ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে হয়। যেমনটা ইমাম আবু আব্দিল্লাহ আহমাদ বিন হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

যদি কোনো ছিকাহ ব্যক্তি সহীহ সনদে নবী ﷺ এর কোনো সাহাবী থেকে হাদিস বর্ণনা করে, যেটা কেবলমাত্র একজন বর্ণনাকারীর নিকট সহীহ বলে প্রতিপন্ন করেছে এবং অন্য কেউ সেটা বর্ণনা করেনি, তাহলে সেক্ষেত্রেও কোনো অসুবিধা নেই। তবে তা সহীহ কেবল তখনই হবে যখন হাদিসের মতনটি (text) সুপ্রসিদ্ধ না হবে অথবা মুনকার অথবা মা'লুল হবে।

[বি:দ্র: মা'লুল পরিভাষাটি মুআল্লাল/মু'আল নামেও অভিহিত - অনুবাদক]

আল জামিউ লিউলুমিল ইমাম আহমাদ, ১৪/২৩.

«الجامع لعلوم الإمام أحمد - علل الحديث» (14/ 23):
وقال: إذا روى الثقة من طريق ‌صحيح عن رجل من
أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم حديثا لا يصاب إلا عند الرجل الواحد ‌لم يضره أن لا يرويه غيره إذا كان ‌متن ‌الحديث معروفا ولا يكون منكرا ولا معلولا.»

তাদের সমতল দাবির স্বপক্ষে যেসব আয়াত পেশ করছে তা সম্পূর্ণই অপব্যাখা যেটা আমরা সামনের পর্বে লুগাহ থেকে খণ্ডন করবো যদি আল্লাহ তৈফিক দেন।

তাফসিরের ক্ষেত্রে ইসরায়েলী বর্ণনার হুকুম:

তাবেঈ ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ (রাহিমাহুল্লাহ) মূলত ইসলাম গ্রহণের পূর্বে আহলে কিতাব ছিলেন। তিনি যেসব সাহাবীদের থেকে তালিম নিয়েছেন তারাও ইসরায়েলী রিওয়ায়েত বর্ণনা করার জন্য মাশহুর, কিন্তু এগুলোকে তারা দলিল হিসেবে গ্রহণ করতেন না, এগুলোর নিশ্চায়ন করতেন না।

ইসরায়েলী বর্ণনা কয়েক ধরনের হতে পারে যার আক্বসাম নিয়ে এখন আমরা দৃষ্টিপাত করবো এবং তাবেঈ ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ (রাহিমাহুল্লাহ) হতে উলুমুত তাফসির এ যেসব ইসরায়েলী বর্ণনা প্রবেশ করেছে তাদের ব্যাপারে উলামাদের ক্বওল উদ্ধৃত করবো:

তাফসিরের ক্ষেত্রে ইসরায়েলী বর্ণনাকে ব্যবহার করার ক্ষতি সম্পর্কে ড. নূর উদ্দীন ইতর বলেন,
তাফসিরের ক্ষেত্রে ইসরায়েলী বর্ণনার ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে কারণ তা সাহাবীদের যুগ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং তা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বানোয়াট ধাঁচের কল্পকাহিনী তাতে প্রবেশ করেছে। তাই সেগুলো মুফাসসিরদের পথে কাঁটা স্বরূপ। কারণ একজন মুফাসসির স্বভাবত ঐ ধরনের সব বর্ণনার (ইসরায়েলী বর্ণনার) প্রতিই সন্দেহ পোষণ করবেন, যেহেতু তিনি সেগুলোর উৎসকে অভিন্ন বলে মনে করেন।
(অর্থাৎ - ইসরায়েলী বর্ণনার সত্যতা নিয়ে যেহেতু সন্দেহ রয়েছে তাই বনী ইসরায়েলীদের থেকে বর্ণিত সব কথাতেই সন্দেহ থাকায় তা ইনকার বা মাকবুল কিছুই করার সুযোগ থাকে না - অনুবাদক)

ইসরায়েলী বর্ণনাসমূহ তিন শ্রেণী বিভক্ত:
প্রথম শ্রেণী: নবী ﷺ থেকে সহীহ সনদে যেটা বর্ণিত হয়েছে। সেটা সহীহ এবং মাকবুল। আর সেক্ষেত্রে শরীয়তের ভেতর সেই বর্ণনার গ্রহণযোগ্যতার সাক্ষ্য রয়েছে।
(কারণ - নবী ﷺ এর নিকট আল্লাহর কাছ থেকে ওহী আসতো, আর তিনি বানিয়ে কিছু বলতেন না। যেহেতু নবী ﷺ আমাদেরকে ওহী পৌছিয়েছেন আর তা আল্লাহর নিকট থেকে এসেছে তাই সেটি বিশ্বাস করা ওয়াজিব। তবে আহলে কিতাবদের কিতাবে ওহীর বাণীতে তারা বিকৃতি সাধন করায় মানুষের পক্ষে সেখানের সত্য/মিথ্যা যাচাই করা সম্ভব নয়। তাই আমরা সেগুলো ইনকার করি না, মাকবুলও বলি না - অনুবাদক)
দ্বিতীয় শ্রেণী: যেই বর্ণনা মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়েছে। তাই সেটাকে গ্রহণ করা বা বর্ণনা করা সঠিক নয়।
তৃতীয় শ্রেণী: (আমাদের শরীয়তে) যেই ইসরায়েলী বর্ণনার সত্যতা প্রসঙ্গে কিছু উল্লেখ করা হয়নি, সেটি উপরের প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে না। তাই আমরা সেটি বিশ্বাসও করি না আবার মিথ্যা প্রতিপন্নও করি না। পূর্বে উল্লেখিত হাদিস অনুযায়ী এই শ্রেণীর রিওয়ায়েত বর্ণনা করা জায়েজ তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দ্বীনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিধানের ব্যাপারে এই ধরনের বর্ণনার কোনো প্রয়োজন পড়ে না।

ইসরায়েলী বর্ণনার মুফাসসিরদের অবস্থান যেরূপ হবে:
আক্বল এবং প্রয়োজনীয়তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার ব্যাপারে মুফাসসিরকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। যদি আমাদের নবী ﷺ এর সুন্নাহ এবং কুরআনের ভেতর ঐ আয়াতের ব্যাখা থেকে থাকে তাহলে আহলে কিতাবদের থেকে তার ব্যাখা উদ্ধৃত করা জায়েজ নেই। এক্ষেত্রে মুতাকাদ্দিমীন সালাফদের মতভেদ উল্লেখ্য করা জায়েজ হবে, তবে এই শর্তে যে সে ঐ মতভেদকে উল্লেখ্য করেই ক্ষান্ত হবে না বরং কোন মতটি সঠিক এবং কোনটি বেঠিক তাও স্পষ্ট করে দিবে, যাতে তা পাঠকদের মাঝে কোনো বিভ্রান্তির জন্ম না দেয়। তবে একজন মুফাসসির এর জন্য এসব ইসরায়েলী রিওয়ায়েত কে অগ্রাহ্য করা এবং যা বর্ণনা করা জন্য তার জন্য অদরকারি, যা তাকে কুরআন থেকে দূরে সড়িয়ে দেয় এবং কুরআনের হিকমত এবং আহকাম হতে বিমুখ করে দেয় তা পরিত্যাগ করাই তার জন্য উত্তম।
ইসরায়েলী বর্ণনার ক্ষেত্রে বিখ্যাত বর্ণনকারীগণ হচ্ছে:
১. আব্দুল্লাহ বিন সালাম
২. কাব আল আহবার
৩. ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ
৪. আব্দুল মালিক বিন আব্দিল আজিজ বিন জুরাইজ.

[উলুমুল কুরআনিল কারীম, ৭৬ পৃষ্ঠা]

[«علوم القرآن الكريم - نور الدين عتر» (ص76):]«‌‌
كان للإسرائيليات أثر سيئ لأن الأمر لم يقف على ما كان في عهد الصحابة، بل زاد ودخل فيه النوع الخيالي المخترع. فوضعوا الشوك في طريق المفسر، إذ أنه أصبح يشك فيها جميعا لاعتقاده أن الكل من واد واحد. ‌‌وتنقسم الإسرائيليات إلى ثلاث أقسام:‌‌الأول: ما يعلم صحته بالنقل عن النبي صلى الله عليه وسلموهو صحيح مقبول. وكذا إذا كان له شاهد من الشرع يؤيده. ‌‌الثاني: ما يعلم كذبهفلا يصح قبوله ولا روايته. ‌‌الثالث: مسكوت عنهلا هو من الأول ولا من الثاني، فلا نؤمن به ولا نكذبه، وتجوز حكايته للحديث السابق … وهذا القسم غالبه مما لا فائدة فيه تعود إلى أمر ديني. ‌‌موقف المفسر إزاء الإسرائيليات:يجب أن يكون المفسر يقظا جدا ليستخلص ما يوافق العقل ويتقيد بمقدار الضرورة. ويجب أن لا يرتكب النقل عن أهل الكتاب إذا وجد في سنة نبينا- صلى الله عليه وسلم بيانا للقرآن، ويجوز أن يذكر خلاف المتقدمين بشرط أن لا يطلقه بل ينبه على الصحيح ويزيف غيره، لئلا يوقع القراء في الاضطراب، على أن من الخير للمفسر كل الخير الإعراض عن هذه الإسرائيليات وأن يمسك عما لا طائل تحته مما يعد صارفا عن القرآن وشاغلا عن التدبر في
حكمته وأحكامه. ‌‌وأشهر الرواة للإسرائيليات : -
1 - عبد الله بن سلام
2 - كعب الأحبار.
3 - وهب بن منبه.
4 - عبد الملك بن عبد العزيز بن جريج»

সৌদি আরবের কুল্লিয়্যাতুশ শারীয়াহ এর সাবেক অধ্যাপক, মিসরের আল আযহার ভার্সিটির উসুলূদ-দ্বীন বিভাগের সাবেক ডীন শায়েখ মুহাম্মাদ আবু শুহবাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

দ্বিতীয় প্রকার বর্ণনা:
আমাদের কাছে থাকা শরীয়তের জ্ঞান অনুযায়ী যেসব ইসরায়েলী বর্ণনাকে শরীয়ত বিরোধী হওয়ায় আমরা মিথ্যা হিসেবে পাই। যেমন: আম্বিয়াদের কাহিনী সমন্ধে তাদের বর্ণনা, তাদের বর্ণিত খবর যাতে নবীদের (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়ার উপর আপত্তি পোষণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ ইউসুফ, দাউদ, সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) এর ব্যাপারে তারা যা বলে এবং তাদের তাওরাতে তারা এটা লিপিবদ্ধ করেছে যে ইসহাককে কুরবানী করার কথা ছিল ইসমাঈলকে নয়। এসব বর্ণনার সাথে এদের মিথ্যা হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ না করলে তা রিওয়ায়েত করা বা উল্লেখ্য করা জায়েজ নেই আর এটাও উল্লেখ্য করতে হবে যে বর্ণনাটিকে তারা বিকৃত ও পরিবর্ধন করেছে। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, "এরা (আল্লাহর কিতাবের) কালামকে প্রকৃত অর্থ হতে বিকৃত করে" (সূরা মায়েদা ৪১)
এরূপ রিওয়ায়েত বর্ণনার ক্ষেত্রে নবী ﷺ সাহাবীদেরকে নিষেধ করেছেন, আহলে কিতাবদের থেকে এরূপ বর্ণনা গ্রহণ করা এবং তাদেরকে এরূপ বর্ণনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন, "তোমরা বনী ইসরাঈলদের থেকে বর্ণনা করো, তাতে কোনো দোষ নেই"। এর দ্বারা সেসব ক্ষেত্রে হাদিস বর্ণনাকে বৈধতা দেয়া হয়েছে যেক্ষেত্রে তাদের থেকে উত্তম কিছু বর্ণিত হয়েছে, তবে যখন তা মিথ্যা বলে প্রতিপন্ন হবে তখন সেটি বর্ণনা জায়েজ নয়।
সম্ভবত রাসূল ﷺ এর এই কথা দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে: "হে মুসলিম সমাজ! তোমরা কী করে আহলে কিতাবদেরকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস কর? অথচ তোমাদের যে কিতাব যেটি আল্লাহ্ তোমাদের নবীর ওপর নাযিল করেছেন, তা আল্লাহ্‌র কিতাবগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা উপযোগী। যা সনাতন ও নির্ভেজাল। অথচ আল্লাহ্ তোমাদেরকে বলে দিয়েছেন, আহলে কিতাবগণ আল্লাহ্‌র কিতাবগুলোকে বদলে ফেলেছে, পাল্টে দিয়েছে এবং এরা নিজ হাতে লিখে দাবি করছে এগুলো আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। এর দ্বারা তারা তুচ্ছ সুবিধা লুটতে চায়। তোমাদের কাছে যে ইল্‌ম আছে, তা কি তোমাদেরকে তাদের কাছে কিছু জিজ্ঞেস করা থেকে বাধা দিচ্ছে না? আল্লাহ্‌র শপথ! তাদের কাউকে তোমাদের ওপর নাযিলকৃত বিষয় সম্পর্কে কখনো জিজ্ঞেস করতে আমি দেখি না।" (সহীহ বুখারী ৭৩৬৩, ৭৫২৩,২৬৮৫)
[বি:দ্র: হাদিসটি মারফু সূত্রে বর্ণিত হয়নি বরং ইবনু আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) হতে বর্ণিত হয়েছে। - অনুবাদক]

তৃতীয় প্রকার বর্ণনা: যা উপরোক্ত প্রথম অথবা ঐ দ্বিতীয় শ্রেণির বর্ণনার অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই আমরা সেটিকে বিশ্বাসও করি না আবার মিথ্যা প্রতিপন্নও করি না। কারণ হতে পারে সেটি সত্য অথচ আমরা সেটিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছি, অথবা হতে পারে সেটি মিথ্যা কিন্তু আমরা সেটিকে বিশ্বাস করছি। এই ধরনের বর্ণনা করা জায়েজ যেমনটা তাদের থেকে বর্ণনা করা সংক্রান্ত অনুমোদনের ব্যাপারে পূর্বে আলোচিত হয়েছে।
সম্ভবত এই ধরনের বর্ণনার ব্যাপারেই আবু হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) এর বর্ণিত হাদিসে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তিনি বলেন,
"আহলে কিতাব হিব্রু ভাষায় তাওরাত পড়ে মুসলিমদের কাছে তা আরবী ভাষায় ব্যাখ্যা করত। (এ সমন্ধে) রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আহলে কিতাবকে তোমরা সত্যবাদী ভেবো না এবং তাদেরকে মিথ্যাবাদীও ভেবো না। তোমরা বলে দাও (আয়াত ৫:১০) "আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ্‌র প্রতি এবং আমাদের উপর যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি"।
তবে এসব বর্ণনা উল্লেখ্য করা এবং এগুলো নিয়ে মগ্ন থেকে সময় নষ্ট না করাই উত্তম।

(আল-ইসরায়িল্যিয়াত ওয়াল-মাউদ্বুআত ফি কুতুবিত তাফসির, ১০৭ পৃষ্ঠা.)

الإسرائيليات والموضوعات في كتب التفسير» (ص107)
«القسم الثاني: ما علمنا كذبه مما عندنا مما يخالفه، وذلك مثل: ما ذكروه في قصص الأنبياء، من أخبار تطعن في عصمة الأنبياء عليه الصلاة والسلام، كقصة يوسف، وداود، وسليمان ومثل: ما ذكروه في توراتهم: من أن الذبيح إسحاق، لا إسماعيل، فهذا لا تجوز روايته وذكره إلا مقترنا ببيان كذبه، وأنه مما حرفوه، وبدلوه، قال تعالى: {يحرفون الكلم من بعد مواضعه} .
وفي هذا القسم: ورد النهي عن النبي صلى الله عليه وسلم للصحابة عن روايته، والزجر عن أخذه عنهم، وسؤالهم عنه، قال الإمام مالك رحمه الله في حديث: "حدثوا عن بني إسرائيل ولا حرج": المراد جواز التحدث عنهم بما كان من أمر حسن: أما ما علم كذبه فلا1.
ولعل هذا هو المراد من قوله صلى الله عليه وسلم: "يا معشر المسلمين: كيف تسألون أهل الكتاب، وكتابكم الذي أنزل على نبيه صلى الله عليه وسلم أحدث 2، تقرءونه لم يشب 3، وقد حدثكم الله أن أهل الكتاب بدلوا كتاب الله، وغيروه، وكتبوا بأيديهم الكتاب، وقالوا: هو من عند الله، ليشتروا به ثمنا قليلا، ألا ينهاكم ما جاءكم من العلم عن مسألتهم، لا والله ما رأينا منهم رجلا يسألكم عن الذي أنزل عليكم" 4.
القسم الثالث: ما هو مسكوت عنه، لا من هذا، ولا من ذاك، فلا نؤمن به، ولا نكذبه، لاحتمال أن يكون حقا فنكذبه، أو باطلا فنصدقه، ويجوز حكايته لما تقدم من الإذن في الرواية عنهم. ولعل هذا القسم هو المراد بما رواه أبو هريرة، قال: "كان أهل الكتاب يقرأون التوراة بالعبرانية، ويفسرونها بالعربية لأهل الإسلام، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "لا تصدقوا أهل الكتاب، ولا تكذبوهم، وقولوا آمنا بالله، وما أنزل إلينا، وما أنزل إليكم" 5 الآية، ومع هذا: فالأولى عدم ذكره، وأن لا نضيع الوقت في الاشتغال به.

উক্ত কিতাবেই আরেকটি ইসরায়েলী বর্ণনা যা সহীহ সনদে এসেছে তবে বর্ণনার মতন প্রসঙ্গে সমালোচনা করে শায়েখ মুহাম্মাদ আবু শুহবাহ (রাহিমাহুল্লাহ) মন্তব্য করেছেন -

"এটি বনী ইসরাঈলের ইসরায়েলী রেওয়ায়েত এবং নবীদের বিরুদ্ধে তাদের রটানো মিথ্যা জাল কাহিনী, এর সঠিকতার বিষয়টি আপেক্ষিক। যদিও এর সনদের সঠিকতা এই বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক নয় যে এটি ইসরায়েলী বর্ণনার অন্তর্ভুক্ত। যেমনটা আমি বারবার বলেছি।"

وأن ذلك من إسرائيليات بني إسرائيل وافتراءاتهم على الأنبياء، والأصحية هنا نسبية، ‌على ‌أن ‌صحة ‌السند ‌لا ‌تنافي أن أصله من الإسرائيليات، كما قلت مرارا
الإسرائيليات والموضوعات في كتب التفسير» (ص279)

আল আযহার ইউনিভার্সিটির কুল্ল্যিয়াতু উসূলিদ দ্বীন, ক্বিসমুত তাফসির ও উলুমূল কুরআন বিভাগের সাবেক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাহমুদ হিজাযী (রাহিমাহুল্লাহ) তাবেঈ ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ (রাহিমাহুল্লাহ) এর একটি সরায়েলী বর্ণনা প্রসঙ্গে মন্তব্য করে বলেন,

নিশ্চয়ই এগুলো ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ ও কাব আল আহবার এবং তাদের মতো লোকদের কল্পনাপ্রসূত বানানো ইসরায়েলী গাল-গল্প।

আত-তাফসিরুল ওয়াদ্বিহ, ১/৭৪৮.

[«التفسير الواضح» (1/ 748):]
«إنها إسرائيليات مدسوسة من خيال وهب بن منبه وكتب الأحبار وأمثالهم.»

বি:দ্র: এখানে লেখক ইসরায়েলী বর্ণনার জাল হবার ব্যাপারে সঠিক হলেও তিনি তাবেঈ ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ (রাহিমাহুল্লাহ) এর ব্যাপারে যেই ভাষাচয়ন করেছেন তা শালীন নয়। কেননা তিনি তাবেঈ ছিলেন যা তার গ্রহণযোগ্যতার জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কোনোকিছু বানিয়ে বলেননি, যেহেতু জমহুর মুতাকাদ্দিমীন তার তাস্বদিক করেছেন এবং তাকে ছিকাহ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি ইসরায়েলী রেওয়ায়েত বর্ণনায় মগ্ন থাকতেন কিন্তু সেগুলোকে সত্য বা মিথ্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে যাননি। এর ফলে উলুমুত তাফসিরে তার সূত্রে অনেক ইসরায়েলী বর্ণনার অনুপ্রবেশ ঘটেছে, যা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।

উপরোক্ত বক্তব্য থেকে পরিষ্কার হচ্ছে যে তাবেঈ ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ (রাহিমাহুল্লাহ) এর রিওয়ায়েত ঐ শ্রেণির ইসরায়েলী বর্ণনার অন্তর্ভুক্ত যা বিশ্বাস করা বা মিথ্যা প্রতিপন্ন করা কোনোটিই জায়েজ নেই। ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) উক্ত সমতল পৃথিবীর বর্ণনাকেও উক্ত শ্রেণীতেই রেখেছেন, যা লেখার শুরুতেই উল্লেখ্য করা হয়েছে।

তাবেঈ ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ (রাহিমাহুল্লাহ) এর ইসরায়েলী বর্ণনার ব্যাপারে মুতাক্ষিরীন আহলে ইলমদের অবস্থান:

১. আল্লামা ইবন কাছির (রাহিমাহুল্লাহ):

হাফিয ইবন কাছির (রাহিমাহুল্লাহ) তাবেঈ ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ (রাহিমাহুল্লাহ) এর একটি বর্ণনা প্রসঙ্গে সমালোচনা করে বলেন,

"এই কথাগুলো ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ (রাহিমাহুল্লাহ) এর সূত্রে এসেছে যিনি পৌরাণিক বই পুস্তক ঘাটতেন এবং আহলে কিতাবদের বইপুস্তক থেকে ভালো এবং মন্দ উভয় প্রকার লেখাই উদ্ধৃত করতেন।"
আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ১৭ খণ্ড ৩৭২ পৃষ্ঠা

البداية والنهاية (17/ 372)
وهذا الكلام عن ‌وهب ‌بن ‌منبه اليماني، وقد كان ينظر في كتب الأوائل، وينقل من صحف ‌أهل ‌الكتاب الغث والسمين، ولكن لهذا الكلام شواهد من القرآن العظيم، وغيره من الأحاديث»

ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ হতে বর্ণিত একটি রিওয়ায়েত এর সমালোচনা করে আল্লামা ইবন কাছির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

"ইবন আব্বাস, কাব আল আহবার, ক্বাতাদাহ এবং ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ এর সূত্রেও এমন অনুরূপ কিছু বর্ণিত হয়েছে যাতে এসেছে যে এটি শিস (আলাইহিস সালাম) প্রথম তৈরি করেছিলেন। এসব কাহিনী যারা উল্লেখ্য করে তাদের অধিকাংশই এটি আহলে কিতাবদের বইসমূহ থেকে নিয়েছে। এগুলো বিশ্বাস করা বা মিথ্যা বলে প্রতিপন্ন করা অথবা এগুলোর উপর নির্ভর করা যাবে না। তবে যদি তার সমর্থনে কোনো সহীহ হাদিস থাকে তাহলে সেটি মানা আমাদের জন্য শিরোধার্য।"

তাফসির ইবন কাছির ১ম খণ্ড ৬১৭ পৃষ্ঠা.

تفسير ابن كثير - ط ابن الجوزي (1/ 617)
وروى نحوه عن ابن عباس وكعب الأحبار وقتادة، وعن ‌وهب ‌بن ‌منبه: أن أول من بناه شيث عليه السلام، وغالب من يذكر هذا إنما يأخذه من كتب ‌أهل ‌الكتاب، وهي مما لا يصدق ولا يكذب ولا يعتمد عليها بمجردها، وأما إذا صح حديث في ذلك فعلى الرأس والعين»

২. হাফিয শামসুদ্দীন যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ):

ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) তার সিয়ার এ তাবেঈ ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ (রাহিমাহুল্লাহ) সম্পর্কে লিখেছেন,
তার হাদিসের বর্ণনা সামান্য তবে ইসরায়েলী বর্ণনা এবং আহলে কিতাবদের গ্রন্থাদির ব্যাপারে তার অঢেল জ্ঞান রয়েছে।
সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৫ম খণ্ড ৩২৬ পৃষ্ঠা.

[«سير أعلام النبلاء - ط الحديث» (5/ 326):]«
وروايته للمسند قليلة وإنما غزارة علمه في الإسرائيليات ومن صحائف أهل الكتاب»

ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

"তিনি আবু হুরায়রাহ এর সূত্রে স্বল্পকিছু হাদিস এবং আব্দুল্লাহ বিন উমর, ইবন আব্বাস, আবু সাঈদ, জাবির বিন আব্দুল্লাহ এবং অন্যান্যদের সূত্রে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তার আহলে কিতাবদের সম্পর্কে অনেক জ্ঞান ছিল কারণ তিনি তাদের নিয়েই মগ্ন থাকতেন এবং তাদের বর্ণনার ব্যাপারে গভীর জ্ঞানের শিখড়ে পৌঁছান। সহীহাইনে (বুখারী ও মুসলিমে) থাকা তার হাদিসগুলো তার ভাই হাম্মাম এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।"

তাযকিরাতুল হুফফায লিয-যাহাবী, ১ম খণ্ড, ৭৭ পৃষ্ঠা.

تذكرة الحفاظ = طبقات الحفاظ للذهبي (1/77)
روى عن أبي هريرة يسيرا وعن عبد الله بن عمر وابن عباس وأبي سعيد وجابر بن عبد الله وغيرهم، وعنده من علم ‌أهل ‌الكتاب شيء كثير فإنه صرف عنايته إلى ذلك وبالغ وحديثه في الصحيحين عن أخيه همام.»

৩. শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ):

আদম (আলাইহিস সালাম) এর ব্যাপারে আসা ইসরায়েলী ও আহলে কিতাবদের বর্ণনার ব্যাপারে ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) সমালোচনা করেন এবং তাবেঈ ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ (রাহিমাহুল্লাহ) এর সূত্রে আসা এসব বর্ণনা সম্পর্কে তিনি বলেন,
এটি এবং এর অনুরূপ বর্ণনাসমূহ ইসরায়েলী রিওয়ায়েত বর্ণনাকারী এবং মুতাকাদ্দিনীন নবীদের ব্যাপারে কিচ্ছা কাহিনী বর্ণনাকারীদের থেকে বর্ণিত হয়েছে। এরূপ বর্ণনাকারীগণ হলেন - ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ, কাব আল আহবার, মালিক বিন দিনার, মুহাম্মদ বিন ইসহাক ইত্যাদি। মুসলিমগণ ঐক্যমত পোষণ করে যে মুতাওয়াতির সনদে আসা বর্ণনা অথবা শেষ নবীর মাধ্যমে সেই রিওয়ায়েত বর্ণিত বলে প্রমাণিত হওয়া ছাড়া পূর্ববর্তী নবীদের ব্যাপারে এসব ঘটনাকে দ্বীনের ভিত্তি বলে গ্রহণ করা যাবে না।
মাজমুআতুর রাসাঈল ওয়াল মাসাঈল লি ইবন তাইমিয়্যাহ, ৩য় খণ্ড ৪৮ পৃষ্ঠা
مجموعة الرسائل والمسائل لابن تيمية - (3/ 48)
الأحرف التي أنزلها الله على آدم، فإنه قد ذكر بعضهم أن الله أنزل عليه حروف المعجم مفرقة مكتوبة، وهذا ذكره ابن قتيبة في المعارف وهو ومثله يوجد في التواريخ كتاريخ ابن جرير الطبري ونحوه، وهذا ونحوه منقول عمن ينقل الأحاديث الإسرائيلية ونحوها من أحاديث الأنبياء المتقدمين، مثل ‌وهب ‌بن ‌منبه وكعب الأحبار، ومالك ابن دينار، ومحمد بن إسحاق وغيرهم. وقد أجمع المسلمون على أن ما ينقله هؤلاء عن الأنبياء المتقدمين لا يجوز أن يجعل عمدة في دين المسلمين إلا إذا ثبت ذلك بنقل متواتر، أو أن يكون منقولا عن خاتم المرسلين

লক্ষ্য করুন, শাইখুল ইসলাম (রাহিমাহুল্লাহ) বলছেন যে ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ এবং অন্যান্য যারা ইসরায়েলী রেওয়ায়েত বর্ণনাকারী রয়েছেন তারা আম্বিয়াদের ব্যাপারে যেসব ইসরায়েলী রিওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন তা দ্বীনের বিধান হিসেবে মাকবুল নয় যদি না তা কিতাব ওয়া সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত হয়। তাহলে পৃথিবী সমতল এই বিষয়টি যদি কুরআন সুন্নাহ তে স্পষ্ট করে না আসে তাহলে তা কীভাবে মাকবুল বলে গণ্য হতে পারে? যেখানে ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) মুতাওয়াতির বর্ণনা এবং রাসূল ﷺ এর সাক্ষ্যের শর্ত দিয়ে দিয়েছেন।

৪. মুফাসসির ইমাম বাগাউই (রাহিমাহুল্লাহ):

ইমাম, মুফাসিরুল জালিল হাফিয বাগাউই (রাহিমাহুল্লাহ) তার তাফসিরে লিখেছেন,
"ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ: তিনি ছিলেন সানানী হাফিয, ইয়েমেনের আলেম। তিনি ইবন উমর, ইবন আব্বাস, জাবির ইত্যাদি সাহাবীদের সূত্রে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তার নিকট আহলে কিতাবদের ব্যাপারে জ্ঞান ছিল। আর সহীহাইন (বুখারী ও মুসলিমে) এবং ইবন মাজাহ ব্যতীত বাকি সুনানে তার বর্ণিত হাদিস রয়েছে। তিনি ছিকাহ এবং বিস্তর ইলমের অধিকারী ছিলেন তবে তার অধিকাংশ বর্ণনাই ছিল ইসরায়েলী রিওয়ায়েত। তিনি ১১৪ হিজরিতে মারা যান।"
তাফসিরুল বাগাউই, ১ম খণ্ড ১৯ পৃষ্ঠা

تفسير البغوي - إحياء التراث» (1/ 19)
وهب ‌بن ‌منبه: هو الحافظ الصنعاني عالم اليمن، روى عن ابن عمر وابن عباس وجابر وغيرهم، وعنده علم ‌أهل ‌الكتاب، وحديثه في الصحيحين والسنن إلا ابن ماجه، كان ثقة واسع العلم إلا أن أكثر من رواية الإسرائيليات، توفي سنة (114) .

৫. ইমাম খতিব আল বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) -

ইমাম খতিব আল বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) - ইমাম ইয়াহিয়া বিন মাঈন (রাহিমাহুল্লাহ) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি (ইয়াহিয়া বিন মাঈন) বলেন:

"ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ তার ভাইকে (আহলে কিতাবদের) বই কিনে আনার জন্য শাম দেশে পাঠাতেন, যাতে তিনি সেগুলোকে আরবিতে অনুবাদ করতে পারেন।
তেমনিভাবে আহলে কিতাবদের কিতাবাদি ছাড়াও তাদের নিজেদের মুখে যা বর্ণিত হয়েছে সেটাকে প্রত্যাখান করা ওয়াজিব এবং সেটা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যকীয়।"

আল জামিউ লি আখলাকির রাউই ওয়া আদাবিস সামিঈ লিল খতিব আল বাগদাদী, ২য় খণ্ড ১১৪ পৃষ্ঠা

الجامع لأخلاق الراوي وآداب السامع للخطيب البغدادي» (2/ 114)
أنا علي بن الحسين، صاحب العباسي أنا عبد الرحمن بن عمر الخلال، نا محمد بن إسماعيل الفارسي، نا بكر بن سهل، نا عبد الخالق بن منصور، قال: قال يحيى بن معين: «كان وهب بن منبه يرسل أخاه إلى الشام يشتري له الكتب ويجيء بها إليه فيفسرها بالعربية» وكذلك ما نقل عن أهل الكتاب أنفسهم دون أخذه من صحفهم فإن اطراحه واجب والصدوف عنه لازم.

৬. ইমাম ইবনুল মুলাক্কীন আশ-শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ):

ইমাম ইবনুল মুলাক্কীন আশ-শাফেঈ (মৃত ৮০৪ হিজরি) রাহিমাহুল্লাহ বলেন,

ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ ও তার ন্যায় কিছু ব্যক্তিরা আহলে কিতাবদের বই অনুবাদ করতেন, তবে তিনি সেগুলোর সঠিকতা সম্পর্কে কোনো নিশ্চয়তা দেননি। এজন্যই নবী (আলাইহিস সালাতু ওয়াস-সালাম) বলেছেন, "আহলে কিতাবগণ তাওরাত থেকে আরবিতে যা অনুবাদ করবে তা তোমরা বিশ্বাসও কর না"। রাসূল ﷺ এরূপ বলেছেন কারণ এটা প্রমাণিত যে তারা (আহলে কিতাবগণ) কিতাবের কিছু অংশকে গোপন করেছে আর কিছু অংশকে বিকৃত করেছে।
আত-তাওদ্বীহু লিশারহিল জামিঈস সহীহ, ৩৩ খণ্ড ৫৩২ পৃষ্ঠা.
التوضيح لشرح الجامع الصحيح» (33/ 542)
وقد كان ‌وهب ‌بن ‌منبه وغيره يترجمون كتب الله، إلا أنه لا يقطع على صحتها؛ لقوله عليه السلام: "لا تصدقوا ‌أهل ‌الكتاب" فيما يفسرونه من التوراة بالعربية؛ لثبوت كتمانهم لبعض الكتاب وتحريفهم.»

ইবন বাত্তাল (রাহিমাহুল্লাহ) ও একই কথা বলেছেন -

আল্লাহ তাআলার প্রদত্ত পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহকে অনুবাদ করা জায়েজ। ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ ও কতিপয় ব্যক্তিরা আহলে কিতাবদের বই অনুবাদ করতেন, তবে তিনি সেগুলোর সঠিকতা সম্পর্কে কোনো নিশ্চয়তা দেননি। এজন্যই নবী (ﷺ) বলেছেন, "আহলে কিতাবগণ তাওরাত থেকে আরবিতে যা অনুবাদ করবে তা তোমরা বিশ্বাসও কর না"। রাসূল ﷺ এরূপ বলেছেন কারণ এটা প্রমাণিত যে তারা (আহলে কিতাবগণ) কিতাবের কিছু অংশকে গোপন করেছে আর কিছু অংশকে বিকৃত করেছে।
শারহু সহীহিল বুখারী লি ইবন বাত্তাল, ১০ম খণ্ড ৫৩৯ পৃষ্ঠা.

শায়েখ ইবনু বায, শায়েখ স্বলেহ আল উস্বাইমীন (রাহিমাহুমাল্লাহ) এর ছাত্র শায়েখ আব্দুর রহমান ইবন আব্দুল্লাহ ইবন স্বলেহ আস সুহাইম (রাহিমাহুল্লাহ) তার থিসিসে এক জায়গায় ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ এর একটি ইসরায়েলী বর্ণনার ব্যাপারে আলোচনা করতে যেয়ে লিখেছেন,

"ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ এর বক্তব্যটি সেক্ষেত্রে পরিষ্কার, তবে এটা দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, এটি আহলে কিতাবদের থেকে নেয়া হয়েছে। আর ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ আহলে কিতাবদের থেকে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে সুপ্রসিদ্ধ। তেমনি ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ এর সূত্রে আসা বর্ণনাতেও দুর্বলতা রয়েছে।"

(মানহাজুল ক্বুরত্বুব্যিয়ি ফ্যি দাফঈ মা ইউতা'ওয়াহহামু তাআরুদ্বুহু মিনাল আয়াতি ফী কিতাবিল জামিঈ লিআহকামিল কুরআন, ১৫৩ পৃষ্ঠা) (মাক্তবা শামেলা)

منهج القرطبي في دفع ما يتوهم تعارضه من الآيات في كتابه الجامع لإحكام القرآن» (ص153 بترقيم الشاملة آليا)
أما قول ‌وهب ‌بن ‌منبه فهو صريح في ذلك، إلا أنه لا حجة فيه، لأنه مما تلقاه عن ‌أهل ‌الكتاب، ووهب بن منبه ممن عرف عنه ذلك، كما أن الرواية عن وهب فيها ضعف»

আরব ইতিহাসবিদ আহমাদ শাওকী দ্বাইফ বলেন,

"উক্ত যুগের গল্পকারক মধ্যে ছিলেন তামীম আদ-দারী এবং গল্পকারকদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ যিনি ১১৪ হিজরিতে মারা যান। তিনি দক্ষিণের আরবদের ব্যাপারে অনেককিছু লিখে গেছেন এবং তেমনি রাসূলের যুদ্ধাভিযানের ব্যাপারেও অনেক কিছু লিখেছেন। তবে বিশেষত তিনি আহলে কিতাবদের ইতিহাস এবং তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট ইসরায়েলী বর্ণনা সংগ্রহের ব্যাপারে মনোনিবেশ করেছিলেন। তিনি উবাঈদের মতো ইতিহাসের লেখনির সাথে কল্পকাহিনীর মিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন, কেউ তার রচিত - 'আত-তাইজান ফী মুলুকি হিময়ার' নামক বইটি পড়লেই সেটা অনুধাবন করতে পারবে।"
আল ফান্নু ওয়া মাযাহিবুহু ফীন-নাছরিল আরাব্যি, ১০১ পৃষ্ঠা

الفن ومذاهبه في النثر العربي (ص101)
هذا العصر بقصاصها مثل تميم الداري، وأشهرهم ‌وهب ‌بن ‌منبه الذي توفي سنة 114 للهجرة، وقد كتب كثيرا عن عرب الجنوب كما كتب عن مغازي الرسول، وأهم من ذلك أنه عني بجمع أخبار ‌أهل ‌الكتاب، وما يتصل بها من الإسرائيليات، وهو مثل عبيد في ملء كتاباته التاريخية بالخرافات، كما يلاحظ ذلك كل من يقرأ في الكتاب المنسوب إليه المسمى "كتاب التيجان في ملوك حمير".»

ডক্টর মুহাম্মাদ উমর আল হাজী বলেন,

তাফসির শাস্ত্রের কিতাবাদিতে ইসরায়েলী বর্ণনার চারজন ব্যক্তির কারণে এসেছে -
১. আব্দুল্লাহ বিন সালাম: নবী ﷺ যখন হিজরত করে মদিনায় আসেন তখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তাওরাত সংক্রান্ত বিষয়ে জ্ঞানী ছিল। এজন্য আমরা দেখতে পাই যে ইবন জারির আত-ত্বাবারী তার থেকে বহু বর্ণনাকে সম্পৃক্ত করেছেন। তিনি ৪৩ হিজরিতে মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন।
২. কাব আল আহবার: তিনি ইয়েমেনের একজন ইহুদী ছিলেন। উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) এর খেলাফতকালে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তাওরাত সম্পর্কে তার বিস্তর জ্ঞান ছিল। তিনি শাম দেশে যেয়ে বসতি স্থাপন করেন ৪৩ হিজরি সনে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানের হামস শহরে বাস করেন।
৩. ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ: তিনি পারস্যের আদিবাসী ছিলেন। তিনি পুর্ববর্তীদের পুরোনো কিতাবাদি সমন্ধে অনেক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি কাব আল-আহবার এবং আব্দুল্লাহ বিন সালাম এর অধীনে দ্বীনি তালিম গ্রহণ করেন।

মাওসুআতুত তাফসির ক্বাবলা আহ'দিত-তাদউইন, ২৭৭ পৃষ্ঠা
موسوعة التفسير قبل عهد التدوين (ص277)
إسرائيليات في كتب التفسير جاء عن طريق أربعة أشخاص هم:-

عبد الله بن سلام: أسلم عند قدوم النبي صلى الله عليه وسلم المدينة، وكان عالما بعلوم التوراة، لذلك نرى ابن جرير الطبري ينسب إليه كثيرا من الأقوال وتوفي بالمدينة عام 43 هـ.

- كعب الأحبار: يهودي من يهود اليمن، أسلم في خلافة عمر رضي الله عنه، وكان لديه علم كثير بتعاليم التوراة، تحول إلى بلاد الشام، فسكنها حتى توفي في مدينة حمص عام 32 هـ.

- ‌وهب ‌بن ‌منبه: كان من أبناء فارس، كثير الاطلاع على الكتب القديمة، أخذ عن كعب الأحبار وعبد الله بن سلام، وألف كتابا في المغازي، ولد عام 34 هـ ومات عام 110 هـ.»

অতএব, প্রমাণিত হলো যে উপরোক্ত বর্ণনাটি একটি ইসরায়েলী বর্ণনা বিধায় তা পরিত্যাজ্য। দ্বীনের ক্ষেত্রে এটি হুজ্জাত বলে গ্রহণীয় নয় এবং একাধিক মুহাদ্দিস, ইমাম ও আইম্মাতুল মুসলিমীন একে পরিত্যাগ করেছেন।

চলবে....

লেখা: সাফিন চৌধুরী
রচনাকাল: ২৩/১০/২০২৪ ঈসায়ী
 
COMMENTS ARE BELOW

abdulazizulhakimgrameen

Altruistic

Uploader
Salafi User
Threads
378
Comments
447
Solutions
1
Reactions
8,546
Credits
21,913
আসসালামুয়ালাইকুম সাফিন ভাই আমায় একটু সাহায্য করুন। আমি যারা পৃথিবীকে সমতল বলে তাদের সকল দলিলের জবাব পারি কিন্তু দুইটা বিষয়ে আমি আটকে যায় (১) কাবার ঠিক অপর পৃষ্ঠায় নিউজিল্যান্ড। এখন যে ব্যক্তি ঠিক কাবার নিচে বরাবর থাকবে তারা কোন দিকে ফিরে নামাজ পড়বে, সেই স্থানে কি চতুর্দিকে ফিরে নামাজ আদায় করবে? অথচ আল্লাহ আমাদের কাবার দিকে ফিরে নামাজ আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন (২) গোলাকার পৃথিবী হলে তো যেই দিকেই ফিরে নামাজ আদায় করেন না কেন তা কাবার দিকে ফিরবে, তবে এমন হতে পারে যে এই দিক দিয়ে রাস্তা একটু লম্বা আর ঐ দিক দিয়ে রাস্তা একটু খাটো, এটাতো কোনো সমস্যা নয় কারণ হলো আমি কাছে থেকে করি বা দূরে থেকে করি আমার চেহারা তো কাবার দিকে ফিরবে যেমন:- কেউ পূর্ব দিকে ফিরলে তার চেহারাও কাবার দিকে ফিরে আবার কেউ পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ দিকে ফিরলেও তার চেহারা কাবার দিকে ফিরে। এখন আল্লাহ আমাদের সবাইকে আদেশ করেছেন কাবার দিকে ফিরতে, তিনি তো বলেন নি তোমরা কাছের দিক দিয়ে কাবা মুখী হও, এটাতো আবশ্যক নয়। ভাই আময় উত্তর দিয়ে সাহায্য করুন।
 

shafinchowdhury

Salafi

Salafi User
Threads
41
Comments
60
Reactions
718
Credits
255
আসসালামুয়ালাইকুম সাফিন ভাই আমায় একটু সাহায্য করুন। আমি যারা পৃথিবীকে সমতল বলে তাদের সকল দলিলের জবাব পারি কিন্তু দুইটা বিষয়ে আমি আটকে যায় (১) কাবার ঠিক অপর পৃষ্ঠায় নিউজিল্যান্ড। এখন যে ব্যক্তি ঠিক কাবার নিচে বরাবর থাকবে তারা কোন দিকে ফিরে নামাজ পড়বে, সেই স্থানে কি চতুর্দিকে ফিরে নামাজ আদায় করবে? অথচ আল্লাহ আমাদের কাবার দিকে ফিরে নামাজ আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন (২) গোলাকার পৃথিবী হলে তো যেই দিকেই ফিরে নামাজ আদায় করেন না কেন তা কাবার দিকে ফিরবে, তবে এমন হতে পারে যে এই দিক দিয়ে রাস্তা একটু লম্বা আর ঐ দিক দিয়ে রাস্তা একটু খাটো, এটাতো কোনো সমস্যা নয় কারণ হলো আমি কাছে থেকে করি বা দূরে থেকে করি আমার চেহারা তো কাবার দিকে ফিরবে যেমন:- কেউ পূর্ব দিকে ফিরলে তার চেহারাও কাবার দিকে ফিরে আবার কেউ পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ দিকে ফিরলেও তার চেহারা কাবার দিকে ফিরে। এখন আল্লাহ আমাদের সবাইকে আদেশ করেছেন কাবার দিকে ফিরতে, তিনি তো বলেন নি তোমরা কাছের দিক দিয়ে কাবা মুখী হও, এটাতো আবশ্যক নয়। ভাই আময় উত্তর দিয়ে সাহায্য করুন।
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। জবাব দিবো ইন শা আল্লাহ
 

abdulazizulhakimgrameen

Altruistic

Uploader
Salafi User
Threads
378
Comments
447
Solutions
1
Reactions
8,546
Credits
21,913
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। জবাব দিবো ইন শা আল্লাহ
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপনার জ্ঞানে কল্যাণ দান করুন। আমীন।
 
পৃথিবী সমতল বলা লোকদের খণ্ডন - পর্ব ১ বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। সকল প্রশংসা আল্লাহ তা'আলার। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তার হাবিব মুহাম্মদ ﷺ এর উপর। . কতিপয় ব্যক্তির মুফাসসির জালিল ইমাম ত্বাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) এর একটি উক্তি দিয়ে পৃথিবীকে সমতল প্রমাণ করার চেষ্টা করছে আর যুক্তি দিচ্ছে যেহেতু...
Top