সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Golam Rabby

প্রবন্ধ পুরুষমিশ্রিত পরিবেশে নারীদের চাকুরি ও উচ্চশিক্ষার বিধান

Golam Rabby

Knowledge Sharer

ilm Seeker
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
LV
12
 
Awards
22
Credit
3,124
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাকিহ ও মুহাদ্দিস শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.) প্রদত্ত ফতোয়া—

প্রশ্ন: ❝আমাদের বোন একটি সমস্যা উত্থাপন করেছেন যা অনেক মুসলিম মেয়ের সমস্যা। তিনি বলেন, আমার অনেক দ্বীনি বোন ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়ন করে। যার মধ্যে কিছু ভার্সিটি আছে মিক্সড (নারী-পুরুষ-সংমিশ্রিত বিদ্যাপীঠ)। সামাহাতাশ শাইখ, আমাদের বোনের দেওয়া বিবরণ অনুযায়ী, আপনি সেখানে কমিউনিস্ট যুবকদের পাবেন এবং খ্রিষ্টানদেরও পাবেন, যারা বিভিন্ন নন-ইসলামিক দলের সাথে জড়িত। এটাও উক্ত বোনের দেওয়া বিবৃতি। তিনি জিজ্ঞেস করছেন, একজন সালাফি মহিলা, যিনি কিনা সালাফদের মানহাজ (আদর্শ) অনুসরণ করেন, তাঁর জন্য কি এসব ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করা ঠিক? তাঁর জন্য কি আইন, জীববিজ্ঞান ও গণিত পড়া জরুরি? এটা কি এমন জরুরি বিষয়, যা মুসলিম রমণীর জন্য পূর্বোল্লিখিত তরুণদের সাথে ভার্সিটিতে পড়া বৈধ করে দেয়? জ্ঞাতব্য যে, অধ্যয়নরত মেয়েরা নিজেদের সালাফি বলে পরিচয় দেয় এবং এরকম পুরুষমিশ্রিত পরিবেশে পড়াশোনা করে; তাও আবার জরুরি অবস্থার দলিল পেশ করে (তারা এ কাজ করে)। শরিয়া কি তাদেরকে এ কাজ করার অনুমতি দেয়? অথচ তারা নিকাবও পরে না, যদিও নিকাব না পরার বিষয়টি তাঁদের দাবিকৃত জরুরি বিষয় হিসেবে বিবেচ্য হয় না। এ জাতীয় বিষয়ে বোনটি খোলাসা কথা জানতে চান। জাযাকুমুল্লাহু খাইরা।❞

উত্তর: ❝এটি একটি বড়ো সমস্যা এবং অতিশয় বিপজ্জনক বিষয়। মেয়েদের জন্য নারী-পুরুষ-সংমিশ্রিত স্কুল, ইন্সটিটিউট ও কলেজে পড়া অনুমোদিত নয়। কেননা এতে রয়েছে মহা ফিতনা আর বিরাট বিপর্যয়। এটা আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ে নিপাতনের একটা নিকটবর্তী মাধ্যম। সুতরাং এসব স্কুল, ইন্সটিটিউট কিংবা কলেজে পড়া তাদের জন্য জায়েজ নয়। বরং তারা অধ্যয়নের জন্য ভিন্ন পরিবেশের ফ্রি-মিক্সিং-মুক্ত সুনিরাপদ বিদ্যাপীঠ তালাশ করবে। কিংবা উলামাদের সাথে চিঠিপত্র বিনিময়ের মাধ্যমে সে নিজের দ্বীন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে।

অথবা সে মসজিদের ইলমি বৈঠকগুলোতে পর্দাবৃত ও হিজাবপরিহিত অবস্থায় উপস্থিত থাকবে, যেমনটি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ছিল। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মহিলারা তাঁর সাথে সালাত আদায় করতেন পর্দাবৃত অবস্থায়। আর সালাত শেষে তাঁরা বের হয়ে যেতেন। তাঁরা সেখানে খুতবা এবং ইলমি আলোচনা শুনতেন। প্রকৃতপক্ষে পুরুষদের সাথে সংমিশ্রিত হয়ে পড়াশোনা করা কখনোই জায়েজ নয়; যদিও তারা পর্দাবৃত থাকে। তাহলে পর্দাবৃত না হয়ে পড়ার ব্যাপারটি কীরূপ হবে? এক্ষেত্রে এর অনিষ্ট হবে আরও বড়ো, আরও ভয়াবহ।

তদুপরি নারীর দ্বীনের জন্য প্রয়োজনীয় নয় এমন কিছু অধ্যয়ন করার কোনো জরুরত নেই; যেমন জিয়োলজি, অংক, গণিতশাস্ত্র প্রভৃতি। বরং সে কেবল তার দ্বীনের জন্য জরুরি বিষয়ই অধ্যয়ন করবে; যেমন নিজের নামাজ, রোজা, পারস্পরিক আচার ও লেনদেন, বিয়ে, তালাক ইত্যাদি — স্বীয় দ্বীনপালনে যেসবের প্রয়োজন রয়েছে তার। আর সবথেকে জরুরি বিষয়—আকিদা, কুরআনুল কারিম অধ্যয়ন করা, আল্লাহর হারামকৃত ও ফরজকৃত বিধান সম্পর্কে জানা। মূলত এটাই কাঙ্ক্ষিত বিষয়। এর চেয়ে অতিরিক্ত যা আছে তা পুরুষরা করবে। তার (বোনের) এসব অধ্যয়নের কোনো প্রয়োজন নেই।

চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়ায় কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, যাতে সে অন্য বোনদের চিকিৎসা দিতে পারে। কেননা সমাজে এর প্রয়োজন রয়েছে। তাই একজন মহিলার জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়ায় কোনো অসুবিধা নেই, যেন সে অন্য বোনদের চিকিৎসা করতে পারে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। এটা উত্তম এবং ফলপ্রসূ। তবে শর্ত হলো যেখানে ফ্রি-মিক্সিং থাকা যাবে না। যদি থাকে, তবে সে পড়বে না।

একজন মুমিন নারীর ওপর ওয়াজিব— আল্লাহকে ভয় করা এবং ফিতনার মাধ্যম থেকে দূরে থাকা। আর নিজের মতামত ও প্রবৃত্তিকে আল্লাহ যা হারাম করেছেন তার পথ হিসেবে না গ্রহণ করা। বরং সে আহলুল ইলমদের জিজ্ঞেস করবে এবং তাঁদের ইলম থেকে উপকৃত হবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ “আর প্রাচীন জাহেলি যুগের প্রদর্শনীর মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না।” [সুরা আহযাব: ৩৩]

তিনি আরও বলেন, فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِٱلۡقَوۡلِ فَيَطۡمَعَ ٱلَّذِى فِى قَلۡبِهِۦ مَرَضٌ “সুতরাং পরপুরুষের সাথে কোমলকণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না, যার ফলে রোগাগ্রস্ত অন্তরের ব্যক্তি প্রলুব্ধ হয়।” [সুরা আহযাব: ৩২] তিনি আরও বলেন, وَقَرۡنَ فِى بُيُوتِكُنَّ “আর তোমরা (নারীরা) নিজ গৃহে অবস্থান করবে।” [সুরা আহযাব: ৩৩]

মূলত ঘরে অবস্থান করতেই নারী আদিষ্ট হয়েছে; তবে তার বাইরে বের হওয়ার মধ্যে কল্যাণ পরিস্ফুটিত ও প্রবল হয়ে উঠলে সেকথা ভিন্ন। আর বেপর্দা হতে, পুরুষদের সাথে মিশতে, পুরুষদের সাথে নির্জনে অবস্থান করতে এবং পুরুষদের সাথে কোমলকণ্ঠে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে নারীকে। এগুলো সবই তার দ্বীন ও চরিত্রের জন্য ক্ষতিকর। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “দুই শ্রেণির লোক জাহান্নামী হবে। আমি তাদেরকে দেখিনি। এক শ্রেণি হবে ওইসব লোক, যাদের কাছে থাকবে গরুর লেজের ন্যায় ছড়ি। তারা তা দিয়ে লোকেদের প্রহার করবে। আরেক শ্রেণি হবে সেসব মহিলা, যারা কাপড় পরিহিত তথাপি উলঙ্গ, মানুষকে আকৃষ্টকারী এবং নিজেরাও তাদের প্রতি আকৃষ্ট। যাদের মাথার খোপা হবে বুখতি উটের পিঠের উঁচু কুজোর ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না। যদিও জান্নাতের সুগন্ধি অনেক অনেক দূর থেকে পাওয়া যায়।” [সহিহ মুসলিম, হা: ২১২৮; পোশাক ও সাজসজ্জা অধ্যায় (৩৮); পরিচ্ছেদ: ৩৪]

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট বিবৃতি দিয়েছেন, এ ধরনের মহিলা, যারা কাপড় পরিহিত অবস্থাতেও উলঙ্গ, হকের প্রতি অনাকৃষ্ট এবং বাতিলের প্রতি আকৃষ্ট, তারা জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত। যাদেরকে জাহান্নামের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে পর্দাপালনের কর্তব্য পালন না করার জন্য। হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে নারীদের অবহেলার জন্য। এমন বিষয়ের প্রতি অবহেলা, যা তাদের কাছে ফিতনা টেনে আনে এবং তাদেরকে অশ্লীল কাজে নিপাতিত করার কার্যকারণ হয়। ওয়া লা হাওলা ওয়া কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

তাই আমরা আমাদের বোনদের জন্য আল্লাহর নিকট সুপথপ্রাপ্তি ও তৌফিক কামনা করছি। নাআম।❞ [১]

শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.) প্রদত্ত আরেকটি ফতোয়া—

প্রশ্ন: ❝আমি কিছু এতিম সন্তানের মা এবং আমি (বাহিরে) চাকরি করতে ইচ্ছুক। তবে এই কাজে পুরুষদের সাথে ফ্রি-মিক্সিং আছে। তো এখন আমার কী করা উচিত, যেহেতু আমি—ওয়ালিল্লাহিল হামদ—দ্বীন মেনে চলছি?❞

শাইখ: ❝পুরুষদের সাথে কাজ করবেন না। আর ভালো কিছুর সুসংবাদ গ্রহণ করুন। মহিলাদের মাঝে করা যায় এমন চাকরি খুঁজুন। সাথে ভালো কিছুর সুসংবাদ গ্রহণ করুন। “আর যে কেউ আল্লাহভীতি অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য (উত্তরণের) পথ করে দেবেন।” [সুরা তালাক: ২] “আর যে আল্লাহভীতি অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।” [সুরা তালাক: ৪]

পক্ষান্তরে একজন মহিলা নার্স পুরুষদের সাথে কাজ করবে, তা হবে না! মনে রাখা উচিত, ফিতনা আপনার দ্বীন ও সম্ভ্রমের জন্য খুবই বিপজ্জনক। পুরুষদের সাথে কাজ করবেন না। তাদের থেকে দূরে থাকুন। কোনো পুরুষের সেক্রেটারি হবেন না। কোনো পুরুষ ডাক্তারের সেক্রেটারি হবেন না। তাকে সহযোগিতা করবেন না। এগুলো সবই চরম বিপজ্জনক।

আপনি মহিলাদের মাঝে অবস্থান করবেন। মহিলা ডাক্তার এবং মহিলা নার্সের সাথে কাজ করবেন এবং আরও যে সমস্ত কাজ রয়েছে মহিলাদের সাথে (সেসব করবেন)। এতে কোনো ক্ষতি নেই। পক্ষান্তরে পুরুষদের সাথে কাজ করার ক্ষেত্রে বলব, ‘না। এমনকি আপনাকে যদি মাটি খেয়েও থাকতে হয়, তবুও না!’ আল্লাহকে ভয় করুন এবং ভালো কিছুর সুসংবাদ গ্রহণ করুন।❞ [২]


ইমাম ইবনু বাযের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। তিনি স্পষ্টভাবে হক বলেছেন। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে শাইখের ব্যক্তীকৃত নিষিদ্ধ বিষয়টি কখনো কখনো বৈধ হতে পারে। যেমন মুসলিম নারীর জন্য কোনো পুরুষ ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নেওয়া হারাম; যে চিকিৎসাপ্রক্রিয়ায় পর্দা লঙ্ঘিত হয়। বরং মুসলিম নারী আরেকজন মুসলিম নারী ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। যদি মুসলিম নারী ডাক্তার পাওয়া না যায়, তাহলে অমুসলিম নারী ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। যদি অমুসলিম নারী ডাক্তারও পাওয়া না যায়, তাহলেই কেবল তাঁর জন্য মুসলিম পুরুষ ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নেওয়া বৈধ হবে। [৩]

এজন্য এরকম কিছু সেক্টরে আমাদের তথা মুসলিমদের নারী কর্মী প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে ফ্রি-মিক্সিং-মুক্ত মেডিকেল কলেজ নেই, যেখানে আমাদের বোনেরা বৈধভাবে মেডিকেল সাইন্স পড়তে পারেন। এরকম পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের সরকারের উচিত, এ দেশের মুসলিমদের অধিকার নিশ্চিত করে সহশিক্ষামুক্ত মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা। কর্তৃস্থানীয় মুসলিম জনগোষ্ঠীর উচিত সরকারকে এ বিষয়টি বোঝানো। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও সহশিক্ষামুক্ত মেডিকেল কলেজ চালু করতে সচেষ্ট হওয়া সামর্থবান মুসলিম জনগোষ্ঠীর কর্তব্য।

আর বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো পরহেজগার নারীর অভিভাবক যদি মনে করেন, তাঁর অভিভাকত্বের অধীন মেয়ে নিজের দ্বীন ও সম্ভ্রম রক্ষা করে এমন বিদ্যাপীঠে পড়তে পারবে, তাহলে তাঁর জন্য এর বৈধতা রয়েছে, ইনশাআল্লাহ। তবে তা এমন শিক্ষা হওয়া জরুরি, সত্যিকারার্থেই যা জানার প্রবল প্রয়োজন রয়েছে মুসলিম নারীদের। এই বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া মুসলিম মেয়েরা সহশিক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। আর অভিভাবক যদি আশঙ্কা করেন, তাঁর অধীন মেয়ে এমন প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিতে গিয়ে নিজের সতীত্ব নষ্ট করে ফেলবে, বেপর্দা বা বেদিন হয়ে যাবে, তাহলে তিনি তাকে এমন বিদ্যাপীঠে পাঠাতে পারবেন না।


মক্কার সম্মাননীয় মুফতি, আল্লামা মুহাম্মাদ বিন উমার সালিম বাজমুল হাফিজাহুল্লাহকে প্রশ্ন করা হয়েছে, “এক বোন ফ্রি-মিক্সিং আছে এমন ভার্সিটিতে পড়েন। তিনি নিজের সাধ্য অনুযায়ী শরিয়তসম্মত পর্দা রক্ষা করে চলেন এবং তরুণদের সাথে মেশেন না। তাঁর জন্য কি এই ফ্রি-মিক্সিং-যুক্ত পরিবেশে অবস্থান করা জায়েজ? কিংবা ফ্রি-মিক্সিংয়ের দরুন পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া কি তাঁর জন্য ওয়াজিব?”

তিনি উত্তরে জানিয়েছেন, “তিনি যদি নিজের দ্বীন ও পর্দার হেফাজত করতে পারেন, আর উক্ত জায়গায় অধ্যয়নের প্রয়োজনবোধ করেন, ডিগ্রি অর্জনের জন্য, কিংবা কোনো সাবজেক্টে এক্সপার্ট হওয়ার জন্য; তাহলে উল্লিখিত শর্ত পালন করে সেখানে পড়া চালিয়ে যাওয়া তার জন্য বৈধ হবে। আল্লাহ তাকে সাহায্য করুন এবং তার বিষয়াদি সহজ করুন। পক্ষান্তরে তিনি যদি শরিয়তসম্মত পর্দা পালন করতে না পারেন, কিংবা নিজের ধার্মিকতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করেন, তাহলে তাঁর জন্য সেখানে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া বৈধ হবে না। আর আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।” [৪]


কাজের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি এমনই। যদি জরুরি প্রয়োজন থাকে, তবেই পুরুষমিশ্রিত পরিবেশে চাকরি করা মুসলিম নারীর জন্য বৈধ হবে। ইমাম ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “সর্বজনীন কল্যাণগুলো বিবেচনা করা আবশ্যক। ধরুন আমরা যদি মেডিকেলের বিষয় ছেড়ে দিলাম, আর ভালো মানুষগুলো যদি মেডিকেল-সাইন্স না শিখে বলে বসল, ‘আমাদের আশেপাশে মহিলা নার্স, স্টুডেন্ট, আর ইন্টার্নি নিয়ে আমরা কীভাবে মেডিকেল-সাইন্স শিখব?’ তাহলে আমরা বলব, আপনি যদি এ কাজ ছেড়ে দেন, তাহলে এসব কাজের জায়গা কি ফাঁকা পড়ে থাকবে? অচিরেই এসব জায়গায় একদল মন্দলোকের আবির্ভাব হবে, যারা সংশোধন-সংস্কারের পরেও পৃথিবীতে বিপর্যয়-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। আর আপনি-সহ এমন আরও দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ব্যক্তি যদি ঐক্যবদ্ধ থাকেন, তাহলে হয়তো একদিন আল্লাহ শাসকদের হেদায়েত দেবেন, আর শাসকরা নারী-পুরুষের জন্য স্বতন্ত্র জায়গার সুবন্দোবস্ত করবে। নিঃসন্দেহে সেটাই হবে সঠিক ব্যবস্থাপনা।” [৫]

সৌদি আরবের কাসিম ইউনিভার্সিটির ফিকহের সিনিয়র প্রফেসর, শাইখ ড. খালিদ বিন আলি আল-মুশাইকিহ হাফিজাহুল্লাহ হাসপাতালে মহিলা ডাক্তারদের চাকরি প্রসঙ্গে বলেছেন, “কোনো মুসলিম নারীর জন্য এমন কাজ করা বৈধ নয়, যেখানে পুরুষের সাথে তাকে নির্জনতা অবলম্বন করতে হয়। কিন্তু সেখানে যদি কোনো নির্জনতা না থাকে, বরং স্রেফ নারীরা পুরুষদের সাথে থাকে, তাহলে অগ্রগণ্য অভিমত হচ্ছে, মহিলা যদি শরিয়তসম্মত পর্দায় নিজেকে আবৃত করেন, আর সেখানে ফিতনার প্রতি প্রলুব্ধকারী কোনো বিষয় না থাকে, তাহলে অগ্রগণ্য অভিমত অনুযায়ী এতে কোনো সমস্যা নেই। আর বিষয়টি যদি এমন না হয়, (তাহলে এ বিষয়ে মৌলিক বিধান বা অরিজিনের দিকেই ফিরে যেতে হবে) তাহলে এক্ষেত্রে মৌলিক অবস্থা হচ্ছে— এ কাজ হারাম, না-জায়েজ।” [৬]

খোলাসা কথা: কেউ যেন উলামাদের ফতোয়াকে ভুল জায়গায় প্রয়োগ না করেন, সেজন্য আমরা উল্লিখিত ফতোয়াগুলোর সামষ্টিক ব্যাখ্যা দিচ্ছি। বাস্তবিক অর্থে পুরুষমিশ্রিত পরিবেশে মুসলিম নারীর পড়াশোনা কিংবা কাজ করা না-জায়েজ। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কিছুক্ষেত্রে নারী কর্মীর অতীব প্রয়োজন থাকে, যাঁদের জন্য আলাদা বিদ্যাপীঠ বা কর্মক্ষেত্র নেই। এক্ষেত্রে কোনো নারীর অভিভাবক যদি মনে করেন, তার অধীন নারী নিজের ধর্ম ও সম্ভ্রম রক্ষা করে এসব জরুরি ক্ষেত্রে সমাজের খেদমত আঞ্জাম দিতে পারবেন, তাহলে তাকে এসব ক্ষেত্রে পাঠাতে পারবেন স্রেফ জরুরি প্রয়োজনের কারণে। পক্ষান্তরে ধর্ম ও সম্ভ্রম নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করলে তাকে এসব পরিবেশে পাঠাতে পারবেন না।

আবার সৌদি উলামাদের ফতোয়া পড়ে কেউ যেন মনে না করেন, সকল বিষয়ে পড়াশোনা বা কর্মে নিযুক্ত হওয়া নারীদের জন্য জায়েজ। কারণ আমাদের দেশের পুরুষমিশ্রিত পরিবেশ মুসলিম নারীদের জন্য যথোচিত দ্বীন পালনের অনুকূল নয়। এ কথা তারাই জানেন, যাঁদের এ সম্পর্কিত বাস্তবতা জানা রয়েছে। তাই মুসলিম নারীরা কেবল জরুরি বিষয়ে অধ্যয়নরত বা কর্মরত হওয়ার জন্যই শরিয়তসম্মত পর্দাপালনের শর্তসাপেক্ষে পুরুষমিশ্রিত পরিবেশে থাকতে পারবেন। তথাপি ধার্মিকতা ও পর্দা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে জরুরি বিষয়েও অধ্যয়ন করতে পারবেন না; কারণ তা বিলকুল হারাম হিসেবে বিবেচিত হবে। আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।


পাদটীকা:
[১]. https://tinyurl(ডট)com/yc65ry72।
[২].
[৩]. ফাতাওয়া আজিলা লি মানসুবিস সিহ্হা, পৃষ্ঠা: ২৯; ইবনু উসাইমিন কৃত ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দার্ব, টেপ নং: ১২৮; শাইখ ফারকুস কৃত ফাতাওয়া, ফতোয়া নং: ৩২৭; লিংক: https://ferkous(ডট)com/home/?q=fatwa-327।

[৪]. শাইখের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ২০১৫ সালের ৬ই জুন তারিখে প্রকাশিত পোস্ট; দেখুন: [৫]. ইমাম ইবনু উসাইমিন বিরচিত শারহুস সিয়াসাহ আশ-শারইয়্যা, পৃষ্ঠা: ১৪৯; দারু ইবনি হাযম (বৈরুত) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (১ম প্রকাশ)।
[৬]. http://iswy(ডট)co/e5cvt।

অনুবাদক: মুহাম্মাদ আখলাকুজ্জামান ও মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari
সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে
 

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Total Threads
13,348Threads
Total Messages
17,206Comments
Total Members
3,677Members
Latest Messages
Sahadat HossainLatest member
Top