সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
S

প্রশ্নোত্তর পিতা-মাতার জন্য সব চেয়ে উত্তম দুআ, দুআ করার সঠিক পদ্ধতি এবং এ ক্ষেত্রে বিদআতী কার্যক্রম

shipa

Inquisitive

Q&A Master
Salafi User
Threads
347
Comments
400
Reactions
1,810
Credits
2,120
প্রশ্ন: পিতামাতার নেক হায়াত এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য কিভাবে দোয়া করতে হয়? দুআ করার জন্য আলেম, হাফেযদেরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো এবং তাদেরকে টাকা দেয়া যাবে কি?

উত্তর: দুআর বিষয়টি উন্মুক্ত। অর্থাৎ আমরা দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য নিজেদের মনমত যতখুশি যার জন্য খুশি দুআ করতে পারি।
জীবিত ব্যক্তিগণ মৃত ব্যক্তির জন্য বেশি বেশি দুয়া করবে। কারণ, মানুষ মারা যাওয়ার পর তার জন্য সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন দুয়া। মৃত ব্যক্তিদের জন্য দুআর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِلَّذِينَ آَمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
“যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে,হে আমাদের প্রতিপালক,আমাদেরকে এবং আমাদের পূর্বে যারা ঈমানের সাথে (দুনিয়া থেকে) চলে গেছে তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং মুমিনদের ব্যাপারে আমাদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ রাখিও না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তো অতি মেহেরবান এবং দয়ালু।”[সূরা হাশর: ১০]

সন্তানের দুআর প্রতিদান মৃত বাবা-মা কবরে থেকে লাভ করতে থাকে:

বাবা-মা দুনিয়াবি সম্পর্কের দিকে দিয়ে সবচেয়ে কাছের। তাই সন্তানদের উচিৎ, তাদের জন্য অধিক পরিমাণে দুআ করা। সৎ সন্তানদের দুআ পিতা-মাতা কবরে থেকেও লাভ করবে বলে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
“মানুষ মৃত্যু বরণ করলে তার আমলের সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে যায় তিনটি ব্যতীত: যদি সে সাদকায়ে জারিয়া রেখে যায়,এমন শিক্ষার ব্যবস্থা করে যায় যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হবে এবং এমন নেককার সন্তান রেখে যায় যে তার জন্য দুয়া করবে।” [বুখারী,অধ্যায়: মৃতের পক্ষ থেকে হজ্জ এবং মানত পালন করা এবং পুরুষ মহিলার পক্ষ থেকে হজ্জ করতে পারে ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৩১।)]

তাই আমরা বাবা-মা জীবিত অবস্থায় তাদের সুস্বাস্থ, ঈমানী মজবুতি, আমলে সালেহ, গুনাহ মোচন, শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে হেফাজত এবং সার্বিক কল্যাণময় জীবনের জন্য দুআ করব।
আর তারা মারা গেলেও তাদের জন্য রহমত, মাগফিরাত, কবরের প্রশস্ততা, কবরকে আলোকময় করা, তাদের হিসাব-নিকাশ সহজ করা, জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে প্রবেশের জন্য যত বেশি সম্ভব দুআ করব।

বাবা-মার জন্য কুরআনের দুআ:

কুরআনে বর্ণিত দুআগুলো সবচেয়ে উত্তম-এতে কোন সন্দেহ নাই। তাই আমরা কুরআনের নিম্নোক্ত দুয়াগুলো বেশি বেশি করার চেষ্টা করব। আল্লাহ বলেন:

১) رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
“হে আমাদের পালনকর্তা, আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে।“ (সূরা ইবরাহীম: ৪১)
২) رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
“হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।” (সূরা ইসরা: ২৪)

পিতামাতার জন্য দুআ এবং আমাদের সমাজের বিদআতি প্রচলন:

আমাদের সমাজের অত্যন্ত বহুল প্রচলন হল, সন্তানরা পিতামাতার জন্য তেমন দুআ করে না! বরং তারা হাফেয ও মাওলানাদেরকে দাওয়াত দিয়ে টাকা-পয়সার বিনিময়ে দুআ করিয়ে নেয়। এটাকে ভাড়ায় দুআ করানো বলা যায়।

আর এই সুযোগে পেটপুজারি অর্থলোভী একশ্রেণীর মানুষ মিলাদ, চল্লিশা, কুরআনখানী, শবিনা খতম ইত্যাদি অসংখ্য বিদআতি কার্যক্রমের মাধ্যমে কলাকৌশলে কিছু অর্থ-কড়ি কামিয়ে নেয়। অথচ ইসলামে এই সব জঘন্যতম বিদআত।
অথচ এ সকল বিদআতের আয়োজন করা, এগুলোতে অংশ গ্রহণ করা, বিদআতিদেরকে ভাড়া করে পয়সা দেয়া.. সবই ইসলামের দৃষ্টিতে গুনাহ ও নিষিদ্ধ কাজ।

প্রশ্ন: বা-মা’র কবরের পাশে অথবা কবরস্থানে গিয়ে কিভাবে দুআ করব যদি আমার আরবি দোয়া গুলো মুখস্থ না থাকে? আর আমরা অন্য সময় হাত তুলে যেভাবে দুআ করি ঠিক সেভাবেই কি করতে হবে?

উত্তর: কুরআন-হাদিসের দুআগুলো না জানলে নিজ ভাষায় তাদের জন্য আল্লাহর কাছে তাদের গুনাহ মোচন ও ক্ষমা প্রার্থনা, তাদের উপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ, তাদের কবরকে আলোকিত ও প্রশস্ত করা, কবরের নিসঙ্গতায় ভয়-ভীতির পরিবর্তে নিরাপত্তা দান করা, কবরের ফিতনা ও আজাব থেকে রক্ষা করা, তাদেরকে সম্মান দান করা, আখিরাতে মর্যাদা বৃদ্ধি করা, আখিরাতে তাদের হিসাব-নিকাশ সহজ করা, হাশরের ময়দানের কষ্ট থেকে রক্ষা করা, পুলসিরাত পার করা, জাহান্নামের আগুন থেকে হেফাজত করা, জান্নাতে প্রবেশ করানো, জান্নাতে মর্যাদা বৃদ্ধি করা, জান্নাতুল ফিরদউসের অধিবাসী করা ইত্যাদি কথাগুলো বলে আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি ও কান্না-কাটি করে দুআ করবেন।

কবর জিয়ারত করা ছাড়াও যে সময়গুলোতে দুআ কবুলের বেশি সম্ভাবনা আছে সেগুলো সময়ের প্রতি লক্ষ রেখে তাদের জন্য দুআ করবেন। যেমন: ভোর রাতে তাহাজ্জুদ সালাতের পর, রোজা অবস্থায়, সফর অবস্থায়, জুমার দিন আসর সালাতের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত, কুরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা বা যে কোনও নেকির কাজ করে তার ওসিলায় আল্লাহর কাছে দুআ করবেন।

হাত তুলে বা না তুলে উভয় ভাবে দুআ করা যায়। তবে হাত তুলে দুআ করা দুআর অন্যতম আদব। সুতরাং হাত তুলে দুআ করা উত্তম।
গোরস্থানে গিয়ে কিবলার দিকে মুখ করে একাকী দু হাত তুলে দুআ করবেন। যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন, দুআর সময় যেন কবর সামনে না থাকে। তবে স্থান সঙ্কট বা বিশেষ পরিস্থিতিতে কবর সামনে থাকলেও সমস্যা নাই।

বিশষে সতর্কণীয় বিষয় হল, কবর বাসীর নিকট কোন কিছু চাওয়া বা কবর বাসীর ওসিলা দিয়ে দুআ করা বড় শিরক। সুতরাং কবর বাসীর নিকট নিজের সমস্যা তুলে ধরে কোন কিছু চাওয়া থেকে বা তার ওসিলা দিয়ে দুআ করা থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। বরং আল্লাহর গুণবাচক নাম, নিজের সৎকর্ম (সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা, হজ্জ-উমরা ইত্যাদি) এর ওসিলা দিয়ে মৃত ব্যক্তির জন্য সরাসরি আল্লাহর দরবারে দুআ করবেন।

মনে রাখতে হবে, সম্মিলিত দুআ করা বিদআত। তাই মসজিদের ইমাম বা কোনও হাফেজ বা আলেমকে ভাড়া করে তার মাধ্যমে গোরস্থানে লোকজন সহ সম্মিলিত দুআ-মুনাজাত করা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। কারণ সম্মিলিত মুনাজাত করা বিদআত।

তার পরিবর্তে নিজের মত করে নিজ ভাষায় পরম আন্তরিকতা সহকারে কান্না বিগলিত হৃদয়ে তাদের জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করবেন। এটাই অধিক কার্যকর হবে ইনশাআল্লাহ। কারণ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সৎ সন্তানের দুআ দ্বারা পিতামাতা কবরে উপকৃত হয় এবং এর সওয়াব তাদের নিকট পৌঁছে।

আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।

উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
 
Top