সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

সালাত নিয়োগপ্রাপ্ত ইমামের অনুপস্থিতিতে সালাতের ইমামতি করার সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তি কে? দাঁড়ি শেভ করে বা ফাসেক এমন ব্যাক্তি সালাতের ইমামতি করতে পারবে কী?

shipa

Inquisitive

Q&A Master
Salafi User
Threads
347
Comments
400
Reactions
1,880
Credits
2,402
সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তি হল,উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে যার ঈমান আক্বীদা আখলাক-চরিত্র উত্তম এবং যে পবিত্র কুরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত এবং রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞান রাখেন।কেননা মহানবী (ﷺ) বলেন, “তিন ব্যক্তি হলে ওদের মধ্যে একজন ইমামতি করবে। আর ইমামতির বেশী হ্‌কদার সেই ব্যক্তি, যে তাদের মধ্যে বেশী ভালো কুরআন পড়তে পারে।(সহীহ মুসলিম,হা/৬৭৬ মিশকাত হা/১১১৮) তিনি আরো বলেন,“লোকেদের ইমাম সেই ব্যক্তি হবে যে বেশী ভালো কুরআন পড়তে পারে। পড়াতে সকলে সমান হলে ওদের মধ্যে যে বেশী সুন্নাহ্‌ জানে, সুন্নাহর জ্ঞান সকলের সমান থাকলে ওদের মধ্যে যে সবার আগে হিজরত করেছে, হিজরতেও সকলে সমান হলে ওদের মধ্যে যার বয়স বেশী সে ইমাম হবে। আর কোন ব্যক্তি যেন অপর ব্যক্তির জায়গায় তার বিনা অনুমতিতে ইমামতি না করে এবং না কেউ কারো ঘরে তার বসার জায়গায় তার বিনা অনুমতিতে বসে।(সহীহ মুসলিম,হা/৬৭৩ মুসনাদে আহমাদ হা/১৭০৬৩, সহীহ আল জামি‘ হা/৩১০৪ মিশকাত হা/ ১১১৭) যদিও ঈমান আক্বীদা সুন্নাহের অনুসরণ ঠিক থাকলে সম্মানিত ব্যক্তি থাকতে অপেক্ষাকৃত কম সম্মানিত ব্যক্তির ইমামতিও বৈধ। একদা আব্দুর রহ্‌মান বিন আওফের পশ্চাতে মহানবী (ﷺ) নামায পড়েছেন। (সহীহ মুসলিম,হা/২৭৪)
.
দ্বিতীয়ত,দাড়ি শেভ করে বা একদম ছোট করে এমন ব্যক্তিকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেমন সঠিক নয় তেমনি তার পিছনে সালাত আদায় করাও উচিত নয়।কেননা তাতে সুন্নাত অমান্যকারীকে সম্মান করা হবে। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন, মুনকার কিছু দেখলে তা হাত দিয়ে প্রতিরোধ করবে। নইলে যবান দিয়ে। নইলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। আর এটি হ’ল দুর্বলতম ঈমান’(সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৩৭) তাছাড়া ইসলামি শরীয়তী বিধান অনুযায়ী দাড়ি রাখা ওয়াজিব। দাড়ি কামানো, ছোট করা কোনটিই বৈধ নয়। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘কিছু লোক দাড়ি ক্লিন সেভ করে অথবা দৈর্ঘ্য-প্রস্থে কিছুটা ছোট করে, অথচ এর কোনটাই জায়েয নয়। কেননা এটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আদেশের বিরোধী (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৫/১৩৭ পৃ.)। শায়খ সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, নিশ্চয় দাড়ি ছোট করা মানে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নির্দেশের নাফরমানী করা। যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আদেশ ও নির্দেশের আনুগত্য করতে চায়, সে যেন দাড়িতে হাত না লাগায়। কারণ রাসূল (ﷺ) কখনো দাড়িতে হাত লাগাননি, অনুরূপভাবে পূর্বের নবীগণও (উছায়মীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ১১/৮২ পৃ.)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, দাড়ি বড় করা, বৃদ্ধি করা ও পরিপূর্ণরূপে ছেড়ে দেয়া অপরিহার্য। অনুরূপভাবে দাড়িতে ক্ষুর, কাঁচি, ব্লেড বা অন্য কোন অস্ত্র লাগানো নিষিদ্ধ (ইবনু বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ১০/৯৬-৯৭ পৃ)।তবে তার পিছনে সালাত আদায় করলে মুক্তাদির সালাত সহীহ হবে ইন-শাআল্লাহ। অধিকাংশ আলেম বলেছেন: ফাসেকের পিছনে স্বলাত পড়লে সহীহ হবে, যারা তার পিছনে স্বলাত পড়েছে তাদেরকে ঐ স্বলাত পুনরায় পড়তে হবে না,কারন, রাসূল (ﷺ) বলেন,‘অনেকেই তোমাদেরকে সালাত আদায় করাবে। তারা যদি (সহীহ সুন্নাহ মোতাবেক) সঠিকভাবে সালাত আদায় করায়, তাহলে তোমাদের জন্য নেকী রয়েছে। আর যদি ভুল করে তাহলে তোমাদের জন্য নেকী এবং তাদের জন্য গোনাহ রয়েছে’ (সহীহ বুখারী হা/৬৯৪ মিশকাত হা/১১৩৩) জেনে রাখা ভাল যে,শরীয়তের দৃষ্টিতে ফাসেক হল: সেই ব্যক্তি, যে অবৈধ, হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ করে এবং ফরয বা ওয়াজিব কাজ ত্যাগ করে; অর্থাৎ কবীরা গুনাহ করে। যেমন, ধূমপান করে, বিড়ি-সিগারেট খায়, জর্দা-তামাক প্রভৃতি মাদকদ্রব্য ব্যবহার করে, গাঁটের নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরে, অথবা সূদ বা ঘুস খায়, অথবা মিথ্যা বলে, অথবা (অবৈধ প্রেম) ব্যাভিচার করে, অথবা দাড়ি চাঁছে বা (এক মুঠির কম) ছেঁটে ফেলে, অথবা মুশারিকদের যবেহ (হালাল মনে না করে) খায়, (হালাল মনে করে খেলে তাঁর পিছনে নামায হবে না।) অথবা স্ত্রী কন্যাকে বেপর্দা রেখে তাঁদের ব্যাপারে ঈর্ষাহীন হয়, অথবা মা বাবাকে দেখে না বা তাঁদেরকে ভাত দেয় না ইত্যাদি।উক্ত সকল ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুরূপ অন্যান্য ব্যক্তির পিছনে নামায মাকরূহ (অপছন্দনীয়)। বিধায় তাকে ইমামরূপে নির্বাচন ও নিয়োগ করা বৈধ ও উচিৎ নয়। কিন্তু যদি কোন কারণে বা চাপে পরে বাধ্য হয়েই তাঁর পিছনে নামায পড়তেই হয়, তাহলে নামায হয়ে যাবে।(মাজাল্লাতুল বুহূষিল ইসলামীয়্যাহ ফাতওয়া নং ৫/২৯০, ৩০০, ৬/২৫১, ১৫/৮০, ১৮/৯০, ১১১, ১৯/১৫২, ২২/৭৫, ৭৭, ৯২, ২৪/৭৮ ও সালাতে মুবাশ্বির আব্দুল হামিদ ফাইজি)
.
সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-বলেন,যখন ধূমপানকারী এবং দাড়ি মণ্ডনকারী ইমামতি করার জন্য একত্রিত হয় এদের মধ্যে ইমামের উপযুক্ত হলো ধূমপানকারী ব্যক্তি কেননা দাড়ি মুন্ডন থেকে ধূমপান করা হালকা গুনাহ,,অতঃপর শাইখ বলেন, ধুমপান করা দাড়িমন্ডন থেকে হালকা গুনাহ/অপরাধ, সুতরাং সে দাড়ি মন্ডনকারীর চেয়ে ইমামতির বেশি উপযুক্ত,,যখন তারা ওজনযুক্ত বিষয়ে সমান হয়।(ইমাম উসাইমীন, মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড:১৫; পৃষ্ঠা:১৩১)
.
জেনে রাখা ভাল,জোরপূর্বক ইমামতি করা যাবে না।অর্থাৎ কোন ব্যক্তির চরিত্রগত বা শিক্ষাগত কোন কারণে মুক্তাদীরা যদি তাকে অপছন্দ করে তাহলে সেই ইমামের সালাত আল্লাহর দরবারে কবুল নয়। সুতরাং জেনেশুনে তার ইমামতি করা বৈধ নয়। যদি তারা জোরপূর্বক ইমামতি করে বা সালাত আদায় করায় তাহলে তাদের জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে। আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির সালাত তাদের কানের সীমা অতিক্রম করে না (অর্থাৎ কবুল হয় না)। (১) পলাতক দাস, যতক্ষণ না সে ফিরে আসে (২) ঐ মহিলা যে তার স্বামীকে অসন্তুষ্ট রেখে রাত্রি যাপন করে এবং (৩) ঐ ইমাম যাকে তার জাতি অপছন্দ করে’ (তিরমীযী, হা/৩৬০;সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৮৭; মিশকাত, হা/১১২২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১০৫৪, ৩/৭০ পৃ.)। কিন্তু ব্যক্তিগত কোন কারণে কেউ কেউ ইমামকে অপছন্দ করলে, দোষ নেই অথচ তাকে খামাখা কেউ অপছন্দ করলে অথবা বেশী সংখ্যক লোক পছন্দ এবং অল্প সংখ্যক লোক অপছন্দ করলে কারো কোন ক্ষতি হয় না। অবশ্য ক্ষতি তার হয়, যে একজন নির্দোষ মানুষকে খামাখা অপছন্দ করে। তবুও জ্ঞানী ইমামের উচিৎ, যে জামাআতের অধিকাংশ লোক তাকে অপছন্দ করে, সে জামাআতের ইমামতি ত্যাগ করা এবং তার ইমামতিকে কেন্দ্র করে জামাআতের মাঝে বিচ্ছিন্নতা ও ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি না করা। আশা করি উত্তরটি পেয়েছেন (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)

উপস্থাপনায়-জুয়েল মাহমুদ সালাফি
 
COMMENTS ARE BELOW

Rejaul

Member

Threads
2
Comments
15
Reactions
24
Credits
22
আলহামদুলিল্লাহ! অনেক কিছু শিখতে পেলাম।
 
Top