Habib Bin Tofajjal
If you're in doubt ask الله.
Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
- Joined
- Nov 25, 2022
- Threads
- 690
- Comments
- 1,228
- Solutions
- 17
- Reactions
- 7,152
- Thread Author
- #1
ভূমিকা :
কোন কোন মুসলিম ভাই বিভিন্ন অগ্রহণযোগ্য বর্ণনা দ্বারা নারী-পুরুষের সালাতের মাঝে পদ্ধতিগত পার্থক্য নিরূপণের চেষ্টা করেন। তারা ১৮টি পার্থক্য তুলে ধরে থাকেন। বঙ্গানুবাদ ‘বেহেশতী জেওর’ বইয়ে ১১টি পার্থক্য উল্লেখ করা হয়েছে।[1] তারা মারফূ‘, মাওকূফ এবং মাক্বতূ‘ এই তিন প্রকার বর্ণনা উপস্থাপন করেছেন। নিম্নে তাদের পেশকৃত দলীলসমূহ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হ’ল।-
মারফূ‘ তথা রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি সম্বন্ধযুক্ত বর্ণনা সমূহ :
দলীল-১ :
ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমাকে রাসূল (ﷺ) বললেন, ‘হে ওয়ায়েল বিন হুজর! যখন তুমি সালাত পড়বে তখন তোমার দু’হাত কান পর্যন্ত উত্তোলন করবে। আর নারীরা তাদের দু’হাত বুক পর্যন্ত উত্তোলন করবে’।[2]
জবাব : বর্ণনাটি যঈফ বা দুর্বল। নিম্নোক্ত কারণে এটি দলীল ও আমলযোগ্য নয়। হাফেয নূরুদ্দীন হায়ছামী (রহঃ) বলেন,
‘এটি ত্বাবারাণী একটি দীর্ঘ হাদীছে ওয়ায়েল-এর মানাক্বিব অধ্যায়ে মায়মূনাহ বিনতে হুজর সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি তার ফুফু উম্মে ইয়াহ্ইয়া বিনতে আব্দুল জাববার হ’তে বর্ণনা করেছেন। আর আমি তাকে তথা উম্মে ইয়াহ্ইয়াকে চিনি না। এর অবশিষ্ট রাবীগণ নির্ভরযোগ্য’।[3]
উল্লেখ্য, হায়ছামীর এই উক্তিটি ড. ইলিয়াস ফয়সাল প্রণীত ‘নবীজীর নামায’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হ’লেও এর বঙ্গানুবাদ করা হয়নি।[4]
শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন,
‘এই সনদটি যঈফ। কেননা মায়মূনা বিনতে হুজর এবং তার ফুফু উম্মে ইয়াহ্ইয়া বিনতে আব্দুল জাববার উভয়ের জীবনী আমি পাইনি। অতঃপর তিনি বলেছেন,فالتفريق المذكور في الحديث منكر- ‘এই হাদীছটিতে উপরোল্লিখিত পার্থক্যটি অস্বীকৃত বা পরিত্যক্ত’।[5]
হাফেয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, لَمْ يَرِدْ مَا يَدُلُّ عَلَى التَّفْرِقَةِ فِي الرَّفْعِ بَيْنَ الرَّجُلِ وَالْمَرْأَةِ ‘এমন কিছু বর্ণিত হয়নি যা পুরুষ ও নারীর রাফ‘উল ইয়াদায়নের বিষয়ে পার্থক্য নির্দেশ করে’।[6]
আল্লামা শাওকানী বলেন,
‘আর জেনে রাখো! নিশ্চয়ই এই সুন্নাতটি পুরুষ-নারী উভয়কে (আমলের ক্ষেত্রে সমানভাবে) অন্তর্ভুক্ত করে। আর এমন কিছু বর্ণিত হয়নি যা এই বিষয়ে উভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নির্দেশ করে। তদ্রূপ এমন কিছুই বর্ণিত হয়নি যা হাত উত্তোলন করার পরিমাণ সম্পর্কে পুরুষ-নারীর মাঝে পার্থক্য নির্দেশ করে’।[7]
সুতরাং উক্ত বর্ণনাটি রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি সম্বন্ধযুক্ত করা যাবে না। কেননা এটি দুর্বল বর্ণনা। উল্লেখ্য যে, ড. ইলিয়াস ফয়সাল প্রণীত ‘নবীজীর নামায’ বইয়ে এই বর্ণনাটিকে হাসান বলা হয়েছে।[8] যা গ্রহণযোগ্য নয়।
দলীল-২ : আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, التَّسْبِيْحُ لِلرِّجَالِ، وَالتَّصْفِيْقُ لِلنِّسَاءِ ‘তাসবীহ হ’ল পুরুষদের জন্য ও তাছফীক্ব হ’ল নারীদের জন্য’।[9] (তাছফীক্ব হ’ল এক হাতের পাতা দ্বারা অন্য হাতের তালুতে মারা)।
জবাব : এই পার্থক্য সালাত আদায়ের পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত নয়। বরং ইমামের ভুলের জন্য সতর্কীকরণের সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং এই ছহীহ হাদীছটি তাক্বলীদপন্থীদের পক্ষে দলীল হ’তে পারে না।
উক্ত হাদীছ দ্বারা নারীদের জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় প্রমাণিত হয়। কিন্তু হানাফীগণ এই অনুমতি দিতে প্রস্ত্তত নন।
দলীল-৩ :
ইয়াযীদ বিন হাবীব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দু’জন মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যারা সালাত পড়ছিল। তিনি বললেন, ‘যখন তোমরা সিজদা করবে, তখন শরীরের কিছু অংশ যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কারণ এক্ষেত্রে নারী পুরুষের মত নয়’।[10]
জবাব : হাদীছটি নিম্নোক্ত কারণে আমলযোগ্য নয়। (১) এই রেওয়াতটি মুরসাল।[11] আর মুরসাল রেওয়াতসমূহ যঈফ হয়ে থাকে।
(২) এর সনদে ‘সালেম বিন গায়লান’ নামক রাবী আছেন, যিনি বিতর্কিত।
(৩) শায়খ আলবানী (রহঃ) এই মুরসাল বর্ণনাটিকে যঈফ বলেছেন। তিনি বলেন, فعلة الحديث الإرسال فقط ‘অতঃপর হাদীছটির ত্রুটি হ’ল, (এতে) ইরসাল রয়েছে’।[12] অর্থাৎ হাদীছটি ‘মুরসাল’।
উল্লেখ্য, আলবানীর এই উক্তিটি ‘নবীজীর নামায’ গ্রন্থে পেশ করা হয়েছে। তবে অনুবাদ করা হয়নি।[13]
(৪) হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন, وَرَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ مِنْ طَرِيقَيْنِ مَوْصُولَيْنِ، لَكِنْ فِي كُلٍّ مِنْهُمَا مَتْرُوكٌ ‘একে বায়হাক্বী দু’টি ‘মাওছূল’ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু উভয়ের প্রত্যেকটিতে একজন ‘মাতরূক’ তথা প্রত্যাখ্যাত (রাবী) আছে’।[14]
(৫) ইবনুত তুরকুমানী হানাফী বলেন, ظاهر كلامه انه ليس في هذا الحديث الا الانقطاع وسالم متروك ‘তার কথায় স্পষ্ট হচ্ছে যে, এই হাদীছের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ব্যতীত আর কোন ত্রুটি নেই এবং সালেম (বিন গায়লান) হ’লেন মাতরূক’।[15]
দলীল-৪ :
আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যখন নারী সালাতে বসবে তখন তার এক উরু অপর উরুর উপর রাখবে। আর যখন সিজদা করবে তখন পেটকে উরুর সাথে মিলিয়ে দিবে, যা তার সতরের অধিক উপযোগী হয়। আর নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং বলেন, হে আমার ফেরেশতাগণ! আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রাখছি যে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম’।[16]
জবাব : এ হাদীছ সম্পর্কে ‘আল-আবাত্বীলু ওয়াল মানাকীরু ওয়াছ ছিহাহ ওয়াল-মাশাহীরু’ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে,
’এই হাদীছটি মাউযূ‘ বাতিল। এর কোন ভিত্তি নেই। আর এটি আবূ মুত্বী-এর অন্যতম মাউযূ বর্ণনা’।[17] হাফেয যুবায়ের আলী যাঈ (রহঃ) এই রেওয়ায়াতটিকে মাউযূ তথা বানোয়াট বলেছেন।[18] শায়খ দাঊদ আরশাদ বলেছেন, রেওয়ায়াতটি অত্যন্ত দুর্বল ও বাতিল।[19]
ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) বলেন,
‘আবূ মূত্বীর বর্ণিত হাদীছ যঈফের অন্তর্ভুক্ত। আর তার অধিকাংশ বর্ণনার মুতাবা‘আত (সমর্থনসূচক বর্ণনা) করা হয় না। শায়খ (রহঃ) বলেছেন, ইয়াহ্ইয়া বিন মাঈন এবং অন্যরা তাকে যঈফ বলেছেন’।[20]
ইবনু সা‘দ বলেন, ‘আবূ মুত্বী‘ আল-বালখী-এর নাম আল-হাকাম বিন আব্দুল্লাহ। তিনি ‘বালখ’-এর বিচার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি মুরজিয়া ছিলেন। তিনি আব্দুর রহমান বিন হারমালা ও অন্যান্যদের সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন। কিন্তু তিনি তাদের নিকটে হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে যঈফ। তিনি অন্ধ ছিলেন’।[21]
হাফেয ইবনে হিববান (রহঃ) বলেন, الحكم بْن عَبْد اللهِ أَبُو مُطِيع الْبَلْخِي ... كَانَ من رُؤَسَاء المرجئة مِمَّن يبغض السّنَن ومنتحليها- ‘আল-হাকাম বিন আব্দুল্লাহ আবূ মুত্বী‘ আল-বালখী ... ঐ সকল শীর্ষস্থানীয় মুরজিয়াদের অন্তর্গত ছিলেন, যারা সুন্নাহ সমূহকে এবং সুন্নাতপন্থীদেরকে ঘৃণা করত’।[22]
(৪) হাফেয যাহাবী বলেন, الحكم بن عبد الله أَبُو مُطِيع الْبَلْخِي عَن ابْن جريج وَغَيره تَرَكُوهُ ‘হাকাম বিন আব্দুল্লাহ আবূ মুত্বী‘ আল-বালখী ইবনে জুরায়েজ এবং অন্যদের থেকে বর্ণনা করেছেন। তারা (মুহাদ্দিছগণ) তাকে বর্জন করেছেন’।[23]
এছাড়া ইবনুল জাওযী (রহঃ), দারাকুৎনী (রহঃ), ইমাম নাসাঈ, হায়ছামী প্রমুখ আবু মুত্বী‘ আল-বালখীকে যঈফ ও পরিত্যক্ত রাবী হিসাবে স্ব স্ব গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।[24]
মাওকূফ তথা ছাহাবীদের প্রতি সম্বন্ধযুক্ত বর্ণনাসমূহ :
দলীল-১ :
আব্দে রবিবহ বিন সুলায়মান বিন উমায়ের হ’তে, বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমি উম্মুদ দারদাকে দেখেছি, তিনি সালাতে তার দু’হাতকে কাঁধ পর্যন্ত তুলতেন’।[25]
জবাব : এই রেওয়ায়াত দ্বারা পুরুষ ও নারীদের সালাতের পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য প্রমাণিত হয় না।
‘উম্মুদ দারদা (রাঃ) কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলতেন’ এর পক্ষে ছহীহ হাদীছ রয়েছে। যেমন সালেম বিন আব্দুল্লাহ স্বীয় পিতা হ’তে বর্ণনা করেন যে,
‘নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) যখন সালাত শুরু করতেন, তখন কাঁধ পর্যন্ত দু’হাত তুলতেন এবং যখন রুকূ‘ করতেন, রুকূ‘ হ’তে মাথা উঠাতেন তখনও তদ্রূপ দু’হাত উঠাতেন’।[26]
আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ فِي الصَّلاَةِ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يَكُونَا حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ، ‘আমি রাসূল (ﷺ)-কে দেখেছি যে, তিনি যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাতেন’।[27]
এখানে فِي الصَّلَاةِ (সালাতের মধ্যে) দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল তাকবীরে তাহরীমা, রুকূ‘র আগে ও পরের রাফঊল ইয়াদায়েন। যেমনটি ইমাম বুখারী (রহঃ) ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে,
আব্দু রবিবহ বিন সুলায়মান বিন নুমায়ের হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি উম্মুদ দারদাকে দেখেছি যে, তিনি সালাতের মধ্যে তার দু’হাত দু’কাঁধ পর্যন্ত তুলতেন, যখন তিনি সালাত শুরু করতেন এবং রুকূ‘ করতেন। আর যখন তিনি বলতেন, ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ তখন তার দু’হাত তুলতেন এবং বলতেন, ‘রববানা ওয়া-লাকাল হামদ’।[28]
‘কান’ পর্যন্ত রাফঊল ইয়াদায়েন করারও ছহীহ হাদীছ রয়েছে। যেমন- মালেক বিন হুয়াইরিছ (রাঃ) বলেন,
‘নিশ্চয়ই যখন রাসূল (ﷺ) তাকবীর বলতেন তখন দু’হাতকে কান পর্যন্ত উত্তোলন করতেন। আর যখন রুকূ‘ করতেন এবং রুকূ‘ থেকে মাথা তুলতেন তখনও কান পর্যন্ত হাত তুলতেন। অতঃপর তিনি বলতেন, ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’।[29]
অতএব কান ও কাঁধ পর্যন্ত দু’হাত উত্তোলন তথা রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা উভয়টিই নারী-পুরুষের জন্য প্রযোজ্য।
দলীল-২ :
ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল যে, রাসূলের যুগে মহিলারা কিভাবে সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, তারা সালাতে চারজানু হয়ে বসতেন অতঃপর জড়সড় হয়ে আদায় করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়’।[30]
জবাব :
এই রেওয়ায়াতটি যঈফ নিম্নোক্ত কারণে,
(১) ইবরাহীম বিন মাহদীর নির্দিষ্টতা অজ্ঞাত রয়েছে। ‘তাক্বরীবুত তাহযীব’ গ্রন্থে এই নামের দু’জন রাবী আছেন। তন্মধ্যে দ্বিতীয়জন সমালোচিত। হাফেয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেছেন, ‘তিনি বাছরী, মুহাদ্দিছগণ তাকে মিথ্যুক বলেছেন’।[31]
(২) এর সনদে যির্র বিন নুজায়েহ, আহমাদ বিন মুহাম্মাদ খালেদ ও আলী বিন মুহাম্মাদ আল-বায্যায নামক রাবী আছেন, যাদের জীবনী পাওয়া যায় না।
(৩) ক্বাযী ওমর ইবনুল হাসান বিন আলী আল-আশনানী হ’লেন বিতর্কিত রাবী। তার সম্পর্কে ইমাম দারাকুৎনী বলেছেন যে, তিনি মিথ্যা বলতেন’।[32] ইবনুল জাওযী তার কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং বুরহানুদ্দীন হালাবী তাকে হাদীছ জালকারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।[33]
(৪) অন্য সনদে আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন খালেদ আর-রাযী, যাকারিয়া বিন ইয়াহইয়া নিশাপুরী ও ক্বাবীছাহ ত্বাবারী অজ্ঞাত। আর আবূ মুহাম্মাদ আল-বুখারী মিথ্যুক রাবী।[34]
প্রতীয়মান হ’ল যে, এই রেওয়ায়াতটি মাওযূ‘। আর ইমাম আবূ হানীফা হ’তে এ রেওয়ায়াত প্রমাণিতই নেই। এরপরও বহু মানুষ এই মাউযূ‘ রেওয়ায়াত পেশ করে থাকেন।[35]
দলীল-৩ :
আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন নারী সিজদা করবে, তখন যেন জড়সড় হয়ে যায় ও দুই উরুকে মিলিয়ে রাখে’।[36]
জবাব : এই বর্ণনার সনদে হারেছ আল-আওয়ার নামক রাবী রয়েছে। তার সম্পর্কে হাফেয যায়লাঈ (রহঃ) বলেন, كَذَّبَهُ الشَّعْبِيُّ وَابْنُ الْمَدِينِيِّ، وَضَعَّفَهُ الدَّارَقُطْنِيُّ ‘তাকে শা‘বী ও ইবনুল মাদীনী মিথ্যুক অভিহিত করেছেন। আর দারাকুৎনী তাকে যঈফ বলেছেন’।[37]
নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ), ইবনু সা‘দ ও দারাকুৎনী হারেছকে যঈফ বলেছেন।[38]
হাফেয যাহাবী বলেন, ইবনুল মাদীনী তাকে মিথ্যুক, দারাকুৎনী তাকে যঈফ, নাসাঈ তাকে ‘শক্তিশালী নন’ এবং শা‘বী তাকে মিথ্যুক বলেছেন।[39]
সুতরাং এমন চরম দুর্বল রাবীর বর্ণনা দ্বারা দলীল গ্রহণ করা সিদ্ধ নয়। উপরন্তু এ হাদীছের সনদে ‘আবূ ইসহাক্ব আস-সাবীঈ’ নামক আরেকজন রাবী আছেন। তিনি আস্থাভাজন রাবী হ’লেও মুদাল্লিস হিসাবে ব্যাপক প্রসিদ্ধ। আসমাউল মুদাল্লিসীন, ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, যিকরুল মুদাল্লিসীন, আল-মুদাল্লিসীন প্রভৃতি গ্রন্থে তাকে প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস রাবী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।[40] নাছিরুদ্দীন আলবানী তাকে মুদাল্লিস[41] রাবী হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন।[42]
দলীল-৪ :
ইবনে আববাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল মহিলাদের সালাত সম্পর্কে। তিনি বললেন, ‘জড়সড় হয়ে এবং খুবই অাঁটসাঁট হয়ে সালাত পড়বে’।[43]
জবাব : সালাতের কোন রুকনকে অাঁটসাঁট হয়ে আদায় করবে, উপরোল্লিখিত বর্ণনাটিতে এই বিষয়ে কোন স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। বরং এর ভাষা হ’ল ‘আম’ তথা ব্যাপক অর্থবোধক। একে ‘খাছ’ করার দলীল প্রয়োজন। যদি বলা হয় যে, সিজদায় অাঁটসাঁট হয়ে সিজদা করবে (যেমনটি হানাফীগণ দাবী করেন), তাহ’লে এটি মারফূ‘ হাদীছের খেলাফ হবে। কারণ রাসূল (ﷺ) হুকুম দিয়েছেন যে, তোমাদের কেউ যেন কুকুরের মত তার বাহুদ্বয়কে বিছিয়ে না দেয়।[44] এ হুকুম নারী-পুরুষ সবার জন্যই প্রযোজ্য। একে পুরুষদের সাথে ‘খাছ’ করার জন্য মারফূ‘ হাদীছ প্রয়োজন। সুতরাং নবী করীম (ﷺ)-এর এই হুকুমকে ছাহাবীর প্রতি সম্বন্ধযুক্ত বক্তব্য দ্বারা প্রত্যাখ্যান করা যাবে না।
দ্বিতীয়তঃ ইবনে আববাস (রাঃ) ৬৮ হিজরীতে মারা গেছেন। যখন ৮৮ হিজরীতে মুত্যৃবরণকারী ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন হারেছ (রাঃ)-এর সাথে তার হাদীছ শ্রবণ প্রমাণিত হয়নি, তখন ৬৮ হিজরীতে মৃত্যুবরণকারী ছাহাবী থেকে হাদীছ শ্রবণ কিভাবে সাব্যস্ত হ’তে পারে?[45]
তৃতীয়তঃ ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে বুকায়ের হাদীছ শ্রবণ করেছেন মর্মে কোন প্রমাণ নেই। সুতরাং এই রেওয়াতটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার দরুণ যঈফ সাব্যস্ত হয়েছে। যা আমলের অযোগ্য এবং দলীলযোগ্য নয়।
মাক্বতূ‘ তথা তাবেঈনদের প্রতি সম্বন্ধযুক্ত বর্ণনাসমূহ
দলীল-১ :
ইবরাহীম নাখঈ বলেন, নারীরা যখন সিজদা করবে তখন তার পেটকে উরুর সাথে আঁটসাঁট করে রাখবে এবং তার নিতম্বকে যেন (পুরুষের ন্যায়) উপরে না তুলে। আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ঐরূপ দূরবর্তী করে না রাখে যেভাবে পুরুষেরা রাখে’।[46]
জবাব : এই বর্ণনাটিও যঈফ এবং অগ্রহণযোগ্য। কারণ এখানে সুফিয়ান ছাওরী নামক একজন মুদাল্লিস রাবী রয়েছেন, যিনি ‘আন’ (عَنْ) দ্বারা বর্ণনা করেছেন। ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) তার সম্পর্কে বলেন, وكان ربما دلس- ‘আর তিনি কখনো কখনো তাদলীস করতেন’।[47]
‘আসমাউল মুদাল্লিসীন’, ‘আল-মুদাল্লিসীন’ ও ‘আত-তাবঈনু লি-আসমাইল মুদাল্লিসীন’ গ্রন্থে তাকে মুদাল্লিস বলা হয়েছে এবং ইবনুত তুরকুমানী হানাফী, হাফেয যাহাবী, বদরুদ্দীন আইনী হানাফী, ইমাম নববী প্রমুখ তাঁকে মুদাল্লিস বলেছেন।[48]
দলীল-২ :
মুজাহিদ হ’তে বর্ণিত, তিনি এই বিষয়টিকে মাকরূহ মনে করতেন যে, ‘সিজদা করার সময় পুরুষ নারীদের মত তার পেটকে উরুর সাথে লাগিয়ে বসবে যেভাবে নারীরা রাখে’।[49]
জবাব : এটি খুবই দুর্বল বর্ণনা। এর সনদে লায়ছ বিন সুলায়েম নামক রাবী আছেন। যিনি সত্যবাদী। কিন্তু তিনি শেষ বয়সে ইখতিলাত্বের শিকার হন। আর তার হাদীছ সমূহের মাঝে পার্থক্য করতে পারতেন না (কোন হাদীছটি ইখতিলাত্বের আগে আর কোনটি পরের তা বুঝতে পারতেন না)। এজন্য তার বর্ণিত হাদীছ যঈফ।
‘আত-তাহক্বীক্ব ফী মাসাইলিল খিলাফ’, ‘বায়ানুল ওয়াহমি ওয়াল ঈহাম ফী কুতুবিল আহকাম’, ‘মা‘রিফাতুত তাযকিরাহ’, ‘তানক্বীহুত তাহক্বীক্ব’ ও ‘আহওয়ালুর রিজাল’ গ্রন্থে লায়ছকে যঈফ বলা হয়েছে।[50]
বায়হাক্বী, যায়লাঈ, হাফেয হায়ছামী, ইমাম নাসাঈ, হাফেয আহমাদ শাহীন, ইবনুল জাওযী, ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও শায়খ আলবানী (রহঃ) সহ জমহুর বিদ্বানগণ লায়ছকে যঈফ বলেছেন।[51]
দলীল-৩ :
ইবনে জুরায়েজ (রহঃ) বলেছেন যে, আমি আত্বাকে জিজ্ঞেস করলাম, নারী কি তাকবীরের সময় পুরুষদের মত ইশারা করবে? তিনি বললেন, নারী পুরুষের মত হাত তুলবে না। এরপর তিনি ইশারা করলেন। তারপর তার দু’হাত নীচুতে রেখে (শরীরের সাথে) মিলিয়ে দিলেন। আর বললেন, নারীর পদ্ধতি পুরুষদের মত নয়। আর যদি এমনটি না করে, তবে কোন অসুবিধা নেই’।[52]
জবাব : রেওয়ায়াতটির শেষে আছে ‘যদি এমনটি না করে, তবে কোন অসুবিধা নেই’।[53] এই বাক্যটির স্পষ্ট মর্ম এই যে, যদি পুরুষদের মত করে, তবুও কোন সমস্যা নেই।
দেওবন্দীদের নির্ভরযোগ্য আলেম জাফর আহমাদ থানভী দেওবন্দী বলেছেন, فان قول التابعي لا حجة فيه ‘নিশ্চয়ই তাবেঈর বক্তব্যের মাঝে কোন হুজ্জাত তথা দলীল নেই’।[54]
উপসংহার :
উপরোক্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে, নারী-পুরুষের সালাতের প্রচলিত পার্থক্য সমূহ সঠিক নয়। বিশেষ করে নারীদের জড়সড় হয়ে সিজদা দেওয়ার নিয়ম বিশুদ্ধ নয়। মূলতঃ সালাত আদায়ের পদ্ধতি ও তাসবীহ তাহলীলের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে নারীরা জামা‘আতে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে ইমাম একই কাতারের মাঝ বরাবর দাঁড়াবে, সালাতে ত্রুটি হ’লে মুক্তাদী নারী হাতের উপর হাত মেরে সতর্ক করবে। এছাড়া আর কোন পার্থক্য নেই। আল্লাহ আমাদের ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী সালাত আদায়ের তাওফীক দান করুন-আমীন!
[1]. মোকাম্মাল মোদাল্লাল বেহেশতী জেওর, (ঢাকা : হামিদিয়া লাইব্রেরী লিমিটেড, তৃতীয় সংস্করণ, ফেব্রুয়ারী ২০০৪ইং), পৃঃ ১১৬-১৭।
[2]. ত্বাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর হা/২৮, ১৯/২২ পৃঃ।
[3]. হায়ছামী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/২৫৯৪।
[4]. ড. ইলিয়াস ফয়সাল, সম্পাদনা : মাওলানা আব্দুল মালেক, নবীজীর নামায, পৃঃ ৩৭৯।
[5]. সিলসিলা যঈফা হা/৫৫০০।
[6]. ফাৎহুল বারী হা/৭৩৮, ২/২২১।
[7]. নায়লুল আওত্বার হা/৬৭১, ২/২১৪।
[8]. নবীজীর নামায, পরিশিষ্ট-২, পৃঃ ৩৭৮-৩৭৯।
[9]. বুখারী হা/১২০৩।
[10]. মারাসীলে আবী দাঊদ হা/৮৭।
[11]. কানযুল উম্মাল হা/১৯৭; আল-ফাতহুল কাবীর হা/১১৩৫।
[12]. সিলসিলা যঈফা হা/২৬৫২।
[13]. নবীজীর নামায, পরিশিষ্ট-২, পৃঃ ৩৭৭।
[14]. আত-তালখীছুল হাবীর হা/৩৬৪।
[15]. ইবনুত তুরকুমানী হানাফী, আল-জাওহারুন নাক্বী, ২/২২৩।
[16]. বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/৩১৯৯।
[17]. আল-আবাত্বীলু ওয়াল মানাকীরু ওয়াছ ছিহাহ ওয়াল-মাশাহীরু, ১/১৪৪-১৪৫।
[18]. তাহক্বীক্বী মাক্বালাত ১/২৩০।
[19]. হাদীছ আওর আহলে তাক্বলীদ বি-জওয়াবে হাদীছ আওর আহলেহাদীছ, ২/৮০ পৃঃ।
[20]. আস-সুনানুল কুবরা হা/৩২০০।
[21]. ত্বাবাক্বাতুল কুবরা, জীবনী ক্রমিক নং ৩৬৪৮।
[22]. আল-মাজরূহীন, জীবনী ক্রমিক নং ২৩৬।
[23]. আল-মুগনী ফিয-যু‘আফা, জীবনী ক্রমিক নং ১৬৫৮।
[24]. আয-যু‘আফাউল মাতরূকীন, জীবনী ক্রমিক নং ৯৫৯, ১৬০, ৬৫৪; তানক্বীহুত তাহক্বীক্ব, মাসআলা নং ২৯৯।
[25]. ইমাম বুখারী, জুযউ রাফ‘ইল ইয়াদায়েন হা/২৩।
[26]. বুখারী হা/৭৩৫।
[27]. বুখারী হা/৭৩৬।
[28]. ইমাম বুখারী, জুযউ রাফইল ইয়াদায়েন হা/২৪; হাফেয যুবায়ের আলী যাঈ (রহঃ) এই হাদীছের সনদকে হাসান বলেছেন। দ্রঃ তাহক্বীক্বী মাক্বালাত, ১/২৩৬ পৃঃ।
[29]. মুসলিম হা/৩৯১।
[30]. মুহাম্মাদ আল-খাওয়ারেযমী, জামেউ মাসানীদিল ইমামিল আ‘যম, ১/৪০০; মুসনাদে আবী হানীফা হা/৩৭।
[31]. আত-তাক্বরীব, জীবনী ক্রমিক নং ২৫৭।
[32]. দারাকুৎনী, সুওয়ালাতুল হাকিম, নং ২৫২, পৃঃ ১৬৪।
[33]. আল-মাউযূ‘আত, ৩/২৮০; আল-কাশফুল হাছীছ, পৃঃ ৩১১-৩১২, নং ৫৪১।
[34]. আল-কাশফুল হাছীছ, পৃঃ ২৪৮; বায়হাক্বী, কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ১৫৪; লিসানুল মীযান, ৩/৩৪৮-৩৪৯; নূরুল আয়নাইন ফী ইছবাতি রাফ‘ইল ইয়াদায়েন, পৃঃ ৪০, ৪১।
[35]. যুবায়ের আলী যাঈ, তাহক্বীক্বী মাক্বালাত, ১/২৩০।
[36]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৭৭৭।
[37]. নাছবুর রায়াহ, ২/৩।
[38]. আছলু ছিফাতি ছলাতিন নাবী, ২/৬৭১; আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা, জীবনী ক্রমিক নং ২০৮৩, ১৫১।
[39]. আল-মুগনী ফী যু‘আফাইর রিজাল, জীবনী ক্রমিক নং ১২৩৬।
[40]. আসমাউল মুদাল্লিসীন, জীবনী ক্রমিক নং ৪৫; ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, জীবনী ক্রমিক নং ৬৬; যিকরুল মুদাল্লিসীন, জীবনী ক্রমিক নং ৯; আল-মুদাল্লিসীন, জীবনী ক্রমিক নং ৪৭।
[41]. রাবীর হিফয শক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়া, বিবেক-বুদ্ধি দুর্বল হয়ে যাওয়া, হাদীছকে সঠিকভাবে মনে রাখতে না পারায় হাদীছের বাক্যে তালগোল পাকিয়ে যাওয়াকে ইখতিলাত্ব বলা হয়। বিভিন্ন কারণে ইখতিলাত হ’তে পারে। যেমন বয়স বেড়ে যাওয়া, বই-পুস্তক পুড়ে যাওয়া, ধন-সম্পদের ক্ষতি হওয়া কিংবা সন্তান-সন্ততির মৃত্যু ঘটার কারণে মানসিক আঘাত পাওয়া ইত্যাদি। দ্রঃ তায়সীরু মুছত্বলাহিল হাদীছ, পৃঃ ১২৫।
[42]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৭০১।
[43]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৭৭৮।
[44]. বুখারী হা/৮২২।
[45]. হাফেয যুবায়ের আলী যাঈ, তাহক্বীক্বী মাক্বালাত, ১/২৩৩।
[46]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৭৮২।
[47]. তাক্বরীবুত তাহযীব, জীবনী ক্রমিক নং ২৪৪৫।
[48]. আসমাউল মুদাল্লিসীন, জীবনী ক্রমিক নং ১৮; আল-মুদাল্লিসীন, জীবনী ক্রমিক নং ২১; আল-জাওহারুন নাক্বী, ৮/২৬২; মীযানুল ই‘তিদাল, জীবনী ক্রমিক নং ৩৩২২; উমদাতুল ক্বারী, হা/২১৪-এর আলোচনা দ্রঃ; শরহে ছহীহ মুসলিম, ২/১৮২।
[49]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৭৮০।
[50]. আত-তাহক্বীক্ব ফী মাসাইলিল খিলাফ হা/১৩১৫; বায়ানুল ওয়াহমি ওয়াল ঈহাম ফী কুতুবিল আহকাম, ৫/২৯৫; মা‘রিফাতুত তাযকিরাহ, জীবনী নং ২৬৮; ইবনে আব্দুল হাদী, তানক্বীহুত তাহক্বীক্ব, ৩/২৩৪; আহওয়ালুর রিজাল, জীবনী ক্রমিক নং ১৩২।
[51]. আল-জাওহারুন নাক্বী, ১/২৯৮; নাছবুর রায়াহ, ২/৪৭৫, ৪/৩৩০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হা/৬৩৬৪; আয-যু‘আফাউল মাতরূকীন, জীবনী ক্রমিক নং ৫১১; তারখে আসমাউয যু‘আফা ওয়াল কায্যাবীন, জীবনী ক্রমিক নং ৫৩১; আয-যু‘আফাউল মাতরূকীন, নং ২৮১৫; তারীখে ইবনে মাঈন, দারেমীর বর্ণনা, নং ৭২০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৫৪; ইতহাফুল মাহরাহ হা/২৭৬০।
[52]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৪৭৪।
[53]. ঐ।
[54]. ই‘লাউস সুনান, ১/২৪৯; তাহক্বীক্বী মাক্বালাত, ১/২২৬-এর বরাতে।
কোন কোন মুসলিম ভাই বিভিন্ন অগ্রহণযোগ্য বর্ণনা দ্বারা নারী-পুরুষের সালাতের মাঝে পদ্ধতিগত পার্থক্য নিরূপণের চেষ্টা করেন। তারা ১৮টি পার্থক্য তুলে ধরে থাকেন। বঙ্গানুবাদ ‘বেহেশতী জেওর’ বইয়ে ১১টি পার্থক্য উল্লেখ করা হয়েছে।[1] তারা মারফূ‘, মাওকূফ এবং মাক্বতূ‘ এই তিন প্রকার বর্ণনা উপস্থাপন করেছেন। নিম্নে তাদের পেশকৃত দলীলসমূহ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হ’ল।-
মারফূ‘ তথা রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি সম্বন্ধযুক্ত বর্ণনা সমূহ :
দলীল-১ :
عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ فَقَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا وَائِلَ بْنَ حُجْرٍ إِذَا صَلَّيْتَ فَاجْعَلْ يَدَيْكَ حِذَاءَ أُذُنَيْكَ، وَالْمَرْأَةُ تَجْعَلُ يَدَيْهَا حِذَاءَ ثَدْيَيْهَا-
ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমাকে রাসূল (ﷺ) বললেন, ‘হে ওয়ায়েল বিন হুজর! যখন তুমি সালাত পড়বে তখন তোমার দু’হাত কান পর্যন্ত উত্তোলন করবে। আর নারীরা তাদের দু’হাত বুক পর্যন্ত উত্তোলন করবে’।[2]
জবাব : বর্ণনাটি যঈফ বা দুর্বল। নিম্নোক্ত কারণে এটি দলীল ও আমলযোগ্য নয়। হাফেয নূরুদ্দীন হায়ছামী (রহঃ) বলেন,
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي حَدِيثٍ طَوِيْلٍ فِيْ مَنَاقِبِ وَائِلٍ مِنْ طَرِيْقِ مَيْمُوْنَةَ بِنْتِ حُجْرٍ، عَنْ عَمَّتِهَا أُمِّ يَحْيَى بِنْتِ عَبْدِ الْجَبَّارِ، وَلَمْ أَعْرِفْهَا، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ
‘এটি ত্বাবারাণী একটি দীর্ঘ হাদীছে ওয়ায়েল-এর মানাক্বিব অধ্যায়ে মায়মূনাহ বিনতে হুজর সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি তার ফুফু উম্মে ইয়াহ্ইয়া বিনতে আব্দুল জাববার হ’তে বর্ণনা করেছেন। আর আমি তাকে তথা উম্মে ইয়াহ্ইয়াকে চিনি না। এর অবশিষ্ট রাবীগণ নির্ভরযোগ্য’।[3]
উল্লেখ্য, হায়ছামীর এই উক্তিটি ড. ইলিয়াস ফয়সাল প্রণীত ‘নবীজীর নামায’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হ’লেও এর বঙ্গানুবাদ করা হয়নি।[4]
শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন,
وهذا إسناد ضعيف، فإن ميمونة بنت حجر، وعمتها أم يحيى بنت عبد الجبار، لم أجد لهما ترجمة-
‘এই সনদটি যঈফ। কেননা মায়মূনা বিনতে হুজর এবং তার ফুফু উম্মে ইয়াহ্ইয়া বিনতে আব্দুল জাববার উভয়ের জীবনী আমি পাইনি। অতঃপর তিনি বলেছেন,فالتفريق المذكور في الحديث منكر- ‘এই হাদীছটিতে উপরোল্লিখিত পার্থক্যটি অস্বীকৃত বা পরিত্যক্ত’।[5]
হাফেয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, لَمْ يَرِدْ مَا يَدُلُّ عَلَى التَّفْرِقَةِ فِي الرَّفْعِ بَيْنَ الرَّجُلِ وَالْمَرْأَةِ ‘এমন কিছু বর্ণিত হয়নি যা পুরুষ ও নারীর রাফ‘উল ইয়াদায়নের বিষয়ে পার্থক্য নির্দেশ করে’।[6]
আল্লামা শাওকানী বলেন,
وَاعْلَمْ أَنَّ هَذِهِ السُّنَّةُ تَشْتَرِكُ فِيْهَا الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ وَلَمْ يَرِدْ مَا يَدُلُّ عَلَى الْفَرْقِ بَيْنَهُمَا فِيْهَا، وَكَذَا لَمْ يَرِدْ مَا يَدُلُّ عَلَى الْفَرْقِ بَيْنَ الرَّجُلِ وَالْمَرْأَةِ فِيْ مِقْدَارِ الرَّفْعِ-
‘আর জেনে রাখো! নিশ্চয়ই এই সুন্নাতটি পুরুষ-নারী উভয়কে (আমলের ক্ষেত্রে সমানভাবে) অন্তর্ভুক্ত করে। আর এমন কিছু বর্ণিত হয়নি যা এই বিষয়ে উভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নির্দেশ করে। তদ্রূপ এমন কিছুই বর্ণিত হয়নি যা হাত উত্তোলন করার পরিমাণ সম্পর্কে পুরুষ-নারীর মাঝে পার্থক্য নির্দেশ করে’।[7]
সুতরাং উক্ত বর্ণনাটি রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি সম্বন্ধযুক্ত করা যাবে না। কেননা এটি দুর্বল বর্ণনা। উল্লেখ্য যে, ড. ইলিয়াস ফয়সাল প্রণীত ‘নবীজীর নামায’ বইয়ে এই বর্ণনাটিকে হাসান বলা হয়েছে।[8] যা গ্রহণযোগ্য নয়।
দলীল-২ : আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, التَّسْبِيْحُ لِلرِّجَالِ، وَالتَّصْفِيْقُ لِلنِّسَاءِ ‘তাসবীহ হ’ল পুরুষদের জন্য ও তাছফীক্ব হ’ল নারীদের জন্য’।[9] (তাছফীক্ব হ’ল এক হাতের পাতা দ্বারা অন্য হাতের তালুতে মারা)।
জবাব : এই পার্থক্য সালাত আদায়ের পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত নয়। বরং ইমামের ভুলের জন্য সতর্কীকরণের সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং এই ছহীহ হাদীছটি তাক্বলীদপন্থীদের পক্ষে দলীল হ’তে পারে না।
উক্ত হাদীছ দ্বারা নারীদের জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় প্রমাণিত হয়। কিন্তু হানাফীগণ এই অনুমতি দিতে প্রস্ত্তত নন।
দলীল-৩ :
عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلَى امْرَأَتَيْنِ تُصَلِّيَانِ فَقَالَ إِذَا سَجَدْتُمَا فَضُمَّا بَعْضَ اللَّحْمِ إِلَى الْأَرْضِ فَإِنَّ الْمَرْأَةَ لَيْسَتْ فِي ذَلِكَ كَالرَّجُلِ-
ইয়াযীদ বিন হাবীব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দু’জন মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যারা সালাত পড়ছিল। তিনি বললেন, ‘যখন তোমরা সিজদা করবে, তখন শরীরের কিছু অংশ যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কারণ এক্ষেত্রে নারী পুরুষের মত নয়’।[10]
জবাব : হাদীছটি নিম্নোক্ত কারণে আমলযোগ্য নয়। (১) এই রেওয়াতটি মুরসাল।[11] আর মুরসাল রেওয়াতসমূহ যঈফ হয়ে থাকে।
(২) এর সনদে ‘সালেম বিন গায়লান’ নামক রাবী আছেন, যিনি বিতর্কিত।
(৩) শায়খ আলবানী (রহঃ) এই মুরসাল বর্ণনাটিকে যঈফ বলেছেন। তিনি বলেন, فعلة الحديث الإرسال فقط ‘অতঃপর হাদীছটির ত্রুটি হ’ল, (এতে) ইরসাল রয়েছে’।[12] অর্থাৎ হাদীছটি ‘মুরসাল’।
উল্লেখ্য, আলবানীর এই উক্তিটি ‘নবীজীর নামায’ গ্রন্থে পেশ করা হয়েছে। তবে অনুবাদ করা হয়নি।[13]
(৪) হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন, وَرَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ مِنْ طَرِيقَيْنِ مَوْصُولَيْنِ، لَكِنْ فِي كُلٍّ مِنْهُمَا مَتْرُوكٌ ‘একে বায়হাক্বী দু’টি ‘মাওছূল’ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু উভয়ের প্রত্যেকটিতে একজন ‘মাতরূক’ তথা প্রত্যাখ্যাত (রাবী) আছে’।[14]
(৫) ইবনুত তুরকুমানী হানাফী বলেন, ظاهر كلامه انه ليس في هذا الحديث الا الانقطاع وسالم متروك ‘তার কথায় স্পষ্ট হচ্ছে যে, এই হাদীছের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ব্যতীত আর কোন ত্রুটি নেই এবং সালেম (বিন গায়লান) হ’লেন মাতরূক’।[15]
দলীল-৪ :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِذَا جَلَسَتِ الْمَرْأَةُ فِي الصَّلَاةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الْأُخْرَى، وَإِذَا سَجَدَتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِيْ فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُونُ لَهَا، وَإِنَّ اللهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُولُ: يَا مَلَائِكَتِي أُشْهِدُكُمْ أَنِّيْ قَدْ غَفَرْتُ لَهَا-
আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যখন নারী সালাতে বসবে তখন তার এক উরু অপর উরুর উপর রাখবে। আর যখন সিজদা করবে তখন পেটকে উরুর সাথে মিলিয়ে দিবে, যা তার সতরের অধিক উপযোগী হয়। আর নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং বলেন, হে আমার ফেরেশতাগণ! আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রাখছি যে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম’।[16]
জবাব : এ হাদীছ সম্পর্কে ‘আল-আবাত্বীলু ওয়াল মানাকীরু ওয়াছ ছিহাহ ওয়াল-মাশাহীরু’ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে,
هَذَا حَدِيثٌ مَوْضُوعٌ بَاطِلٌ لَا أَصْلَ لَهُ، وَهُوَ مِنْ مَوْضُوعَاتِ أَبِي مُطِيعٍ الْبَلَخِيِّ-
’এই হাদীছটি মাউযূ‘ বাতিল। এর কোন ভিত্তি নেই। আর এটি আবূ মুত্বী-এর অন্যতম মাউযূ বর্ণনা’।[17] হাফেয যুবায়ের আলী যাঈ (রহঃ) এই রেওয়ায়াতটিকে মাউযূ তথা বানোয়াট বলেছেন।[18] শায়খ দাঊদ আরশাদ বলেছেন, রেওয়ায়াতটি অত্যন্ত দুর্বল ও বাতিল।[19]
ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) বলেন,
أَبُو مُطِيعٍ بَيْنَ الضَّعْفِ فِي أَحَادِيثِهِ، وَعَامَّةُ مَا يَرْوِيهِ لَا يُتَابَعُ عَلَيْهِ قَالَ الشَّيْخُ رَحِمَهُ اللهُ: وَقَدْ ضَعَّفَهُ يَحْيَى بْنُ مَعِيْنٍ وَغَيْرُهُ-
‘আবূ মূত্বীর বর্ণিত হাদীছ যঈফের অন্তর্ভুক্ত। আর তার অধিকাংশ বর্ণনার মুতাবা‘আত (সমর্থনসূচক বর্ণনা) করা হয় না। শায়খ (রহঃ) বলেছেন, ইয়াহ্ইয়া বিন মাঈন এবং অন্যরা তাকে যঈফ বলেছেন’।[20]
ইবনু সা‘দ বলেন, ‘আবূ মুত্বী‘ আল-বালখী-এর নাম আল-হাকাম বিন আব্দুল্লাহ। তিনি ‘বালখ’-এর বিচার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি মুরজিয়া ছিলেন। তিনি আব্দুর রহমান বিন হারমালা ও অন্যান্যদের সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন। কিন্তু তিনি তাদের নিকটে হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে যঈফ। তিনি অন্ধ ছিলেন’।[21]
হাফেয ইবনে হিববান (রহঃ) বলেন, الحكم بْن عَبْد اللهِ أَبُو مُطِيع الْبَلْخِي ... كَانَ من رُؤَسَاء المرجئة مِمَّن يبغض السّنَن ومنتحليها- ‘আল-হাকাম বিন আব্দুল্লাহ আবূ মুত্বী‘ আল-বালখী ... ঐ সকল শীর্ষস্থানীয় মুরজিয়াদের অন্তর্গত ছিলেন, যারা সুন্নাহ সমূহকে এবং সুন্নাতপন্থীদেরকে ঘৃণা করত’।[22]
(৪) হাফেয যাহাবী বলেন, الحكم بن عبد الله أَبُو مُطِيع الْبَلْخِي عَن ابْن جريج وَغَيره تَرَكُوهُ ‘হাকাম বিন আব্দুল্লাহ আবূ মুত্বী‘ আল-বালখী ইবনে জুরায়েজ এবং অন্যদের থেকে বর্ণনা করেছেন। তারা (মুহাদ্দিছগণ) তাকে বর্জন করেছেন’।[23]
এছাড়া ইবনুল জাওযী (রহঃ), দারাকুৎনী (রহঃ), ইমাম নাসাঈ, হায়ছামী প্রমুখ আবু মুত্বী‘ আল-বালখীকে যঈফ ও পরিত্যক্ত রাবী হিসাবে স্ব স্ব গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।[24]
মাওকূফ তথা ছাহাবীদের প্রতি সম্বন্ধযুক্ত বর্ণনাসমূহ :
দলীল-১ :
عَنْ عَبْدِ رَبِّهِ بْنِ سُلَيْمَانَ بْنِ عُمَيْرٍ قَالَ: رَأَيْتُ أُمَّ الدَّرْدَاءِ تَرْفَعُ يَدَيْهَا فِي الصَّلَاةِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهَ-
আব্দে রবিবহ বিন সুলায়মান বিন উমায়ের হ’তে, বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমি উম্মুদ দারদাকে দেখেছি, তিনি সালাতে তার দু’হাতকে কাঁধ পর্যন্ত তুলতেন’।[25]
জবাব : এই রেওয়ায়াত দ্বারা পুরুষ ও নারীদের সালাতের পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য প্রমাণিত হয় না।
‘উম্মুদ দারদা (রাঃ) কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলতেন’ এর পক্ষে ছহীহ হাদীছ রয়েছে। যেমন সালেম বিন আব্দুল্লাহ স্বীয় পিতা হ’তে বর্ণনা করেন যে,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلاَةَ، وَإِذَا كَبَّرَ لِلرُّكُوْعِ، وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوْعِ، رَفَعَهُمَا كَذَلِكَ أَيْضًا-
‘নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) যখন সালাত শুরু করতেন, তখন কাঁধ পর্যন্ত দু’হাত তুলতেন এবং যখন রুকূ‘ করতেন, রুকূ‘ হ’তে মাথা উঠাতেন তখনও তদ্রূপ দু’হাত উঠাতেন’।[26]
আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ فِي الصَّلاَةِ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يَكُونَا حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ، ‘আমি রাসূল (ﷺ)-কে দেখেছি যে, তিনি যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাতেন’।[27]
এখানে فِي الصَّلَاةِ (সালাতের মধ্যে) দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল তাকবীরে তাহরীমা, রুকূ‘র আগে ও পরের রাফঊল ইয়াদায়েন। যেমনটি ইমাম বুখারী (রহঃ) ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে,
عَنْ عَبْدِ رَبِّهِ بْنِ سُلَيْمَانَ بْنِ عُمَيْرٍ قَالَ رَأَيْتُ أُمَّ الدَّرْدَاءِ تَرْفَعُ يَدَيْهَا فِي الصَّلَاةِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهَا حِيْنَ تَفْتَتِحُ الصَّلَاةَ، وَحِيْنَ تَرْكَعُ وَإِذَا قَالَ: سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَفَعَتْ يَدَيْهَا وَقَالَتْ : رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ-
আব্দু রবিবহ বিন সুলায়মান বিন নুমায়ের হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি উম্মুদ দারদাকে দেখেছি যে, তিনি সালাতের মধ্যে তার দু’হাত দু’কাঁধ পর্যন্ত তুলতেন, যখন তিনি সালাত শুরু করতেন এবং রুকূ‘ করতেন। আর যখন তিনি বলতেন, ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ তখন তার দু’হাত তুলতেন এবং বলতেন, ‘রববানা ওয়া-লাকাল হামদ’।[28]
‘কান’ পর্যন্ত রাফঊল ইয়াদায়েন করারও ছহীহ হাদীছ রয়েছে। যেমন- মালেক বিন হুয়াইরিছ (রাঃ) বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا كَبَّرَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا أُذُنَيْهِ، وَإِذَا رَكَعَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا أُذُنَيْهِ، وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ فَقَالَ: سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ-
‘নিশ্চয়ই যখন রাসূল (ﷺ) তাকবীর বলতেন তখন দু’হাতকে কান পর্যন্ত উত্তোলন করতেন। আর যখন রুকূ‘ করতেন এবং রুকূ‘ থেকে মাথা তুলতেন তখনও কান পর্যন্ত হাত তুলতেন। অতঃপর তিনি বলতেন, ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’।[29]
অতএব কান ও কাঁধ পর্যন্ত দু’হাত উত্তোলন তথা রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা উভয়টিই নারী-পুরুষের জন্য প্রযোজ্য।
দলীল-২ :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، أَنَّهُ سُئِلَ:كَيْفَ كَانَ النِّسَاءُ يُصَلِّينَ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ كُنَّ يَتَرَبَّعْنَ، ثُمَّ أُمِرْنَ أَنْ يَحْتَفِزْنَ-
ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল যে, রাসূলের যুগে মহিলারা কিভাবে সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, তারা সালাতে চারজানু হয়ে বসতেন অতঃপর জড়সড় হয়ে আদায় করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়’।[30]
জবাব :
এই রেওয়ায়াতটি যঈফ নিম্নোক্ত কারণে,
(১) ইবরাহীম বিন মাহদীর নির্দিষ্টতা অজ্ঞাত রয়েছে। ‘তাক্বরীবুত তাহযীব’ গ্রন্থে এই নামের দু’জন রাবী আছেন। তন্মধ্যে দ্বিতীয়জন সমালোচিত। হাফেয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেছেন, ‘তিনি বাছরী, মুহাদ্দিছগণ তাকে মিথ্যুক বলেছেন’।[31]
(২) এর সনদে যির্র বিন নুজায়েহ, আহমাদ বিন মুহাম্মাদ খালেদ ও আলী বিন মুহাম্মাদ আল-বায্যায নামক রাবী আছেন, যাদের জীবনী পাওয়া যায় না।
(৩) ক্বাযী ওমর ইবনুল হাসান বিন আলী আল-আশনানী হ’লেন বিতর্কিত রাবী। তার সম্পর্কে ইমাম দারাকুৎনী বলেছেন যে, তিনি মিথ্যা বলতেন’।[32] ইবনুল জাওযী তার কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং বুরহানুদ্দীন হালাবী তাকে হাদীছ জালকারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।[33]
(৪) অন্য সনদে আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন খালেদ আর-রাযী, যাকারিয়া বিন ইয়াহইয়া নিশাপুরী ও ক্বাবীছাহ ত্বাবারী অজ্ঞাত। আর আবূ মুহাম্মাদ আল-বুখারী মিথ্যুক রাবী।[34]
প্রতীয়মান হ’ল যে, এই রেওয়ায়াতটি মাওযূ‘। আর ইমাম আবূ হানীফা হ’তে এ রেওয়ায়াত প্রমাণিতই নেই। এরপরও বহু মানুষ এই মাউযূ‘ রেওয়ায়াত পেশ করে থাকেন।[35]
দলীল-৩ :
عَنْ عَلِيٍّ قَالَ: إِذَا سَجَدَتِ الْمَرْأَةُ فَلْتَحْتَفِرْ وَلْتَضُمَّ فَخِذَيْهَا-
আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন নারী সিজদা করবে, তখন যেন জড়সড় হয়ে যায় ও দুই উরুকে মিলিয়ে রাখে’।[36]
জবাব : এই বর্ণনার সনদে হারেছ আল-আওয়ার নামক রাবী রয়েছে। তার সম্পর্কে হাফেয যায়লাঈ (রহঃ) বলেন, كَذَّبَهُ الشَّعْبِيُّ وَابْنُ الْمَدِينِيِّ، وَضَعَّفَهُ الدَّارَقُطْنِيُّ ‘তাকে শা‘বী ও ইবনুল মাদীনী মিথ্যুক অভিহিত করেছেন। আর দারাকুৎনী তাকে যঈফ বলেছেন’।[37]
নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ), ইবনু সা‘দ ও দারাকুৎনী হারেছকে যঈফ বলেছেন।[38]
হাফেয যাহাবী বলেন, ইবনুল মাদীনী তাকে মিথ্যুক, দারাকুৎনী তাকে যঈফ, নাসাঈ তাকে ‘শক্তিশালী নন’ এবং শা‘বী তাকে মিথ্যুক বলেছেন।[39]
সুতরাং এমন চরম দুর্বল রাবীর বর্ণনা দ্বারা দলীল গ্রহণ করা সিদ্ধ নয়। উপরন্তু এ হাদীছের সনদে ‘আবূ ইসহাক্ব আস-সাবীঈ’ নামক আরেকজন রাবী আছেন। তিনি আস্থাভাজন রাবী হ’লেও মুদাল্লিস হিসাবে ব্যাপক প্রসিদ্ধ। আসমাউল মুদাল্লিসীন, ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, যিকরুল মুদাল্লিসীন, আল-মুদাল্লিসীন প্রভৃতি গ্রন্থে তাকে প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস রাবী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।[40] নাছিরুদ্দীন আলবানী তাকে মুদাল্লিস[41] রাবী হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন।[42]
দলীল-৪ :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ صَلَاةِ الْمَرْأَةِ، فَقَالَ: تَجْتَمِعُ وَتَحْتَفِرُ-
ইবনে আববাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল মহিলাদের সালাত সম্পর্কে। তিনি বললেন, ‘জড়সড় হয়ে এবং খুবই অাঁটসাঁট হয়ে সালাত পড়বে’।[43]
জবাব : সালাতের কোন রুকনকে অাঁটসাঁট হয়ে আদায় করবে, উপরোল্লিখিত বর্ণনাটিতে এই বিষয়ে কোন স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। বরং এর ভাষা হ’ল ‘আম’ তথা ব্যাপক অর্থবোধক। একে ‘খাছ’ করার দলীল প্রয়োজন। যদি বলা হয় যে, সিজদায় অাঁটসাঁট হয়ে সিজদা করবে (যেমনটি হানাফীগণ দাবী করেন), তাহ’লে এটি মারফূ‘ হাদীছের খেলাফ হবে। কারণ রাসূল (ﷺ) হুকুম দিয়েছেন যে, তোমাদের কেউ যেন কুকুরের মত তার বাহুদ্বয়কে বিছিয়ে না দেয়।[44] এ হুকুম নারী-পুরুষ সবার জন্যই প্রযোজ্য। একে পুরুষদের সাথে ‘খাছ’ করার জন্য মারফূ‘ হাদীছ প্রয়োজন। সুতরাং নবী করীম (ﷺ)-এর এই হুকুমকে ছাহাবীর প্রতি সম্বন্ধযুক্ত বক্তব্য দ্বারা প্রত্যাখ্যান করা যাবে না।
দ্বিতীয়তঃ ইবনে আববাস (রাঃ) ৬৮ হিজরীতে মারা গেছেন। যখন ৮৮ হিজরীতে মুত্যৃবরণকারী ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন হারেছ (রাঃ)-এর সাথে তার হাদীছ শ্রবণ প্রমাণিত হয়নি, তখন ৬৮ হিজরীতে মৃত্যুবরণকারী ছাহাবী থেকে হাদীছ শ্রবণ কিভাবে সাব্যস্ত হ’তে পারে?[45]
তৃতীয়তঃ ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে বুকায়ের হাদীছ শ্রবণ করেছেন মর্মে কোন প্রমাণ নেই। সুতরাং এই রেওয়াতটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার দরুণ যঈফ সাব্যস্ত হয়েছে। যা আমলের অযোগ্য এবং দলীলযোগ্য নয়।
মাক্বতূ‘ তথা তাবেঈনদের প্রতি সম্বন্ধযুক্ত বর্ণনাসমূহ
দলীল-১ :
عَنْ إِبْرَاهِيمَ قَالَ: إِذَا سَجَدَتِ الْمَرْأَةُ فَلْتَلْزَقْ بَطْنَهَا بِفَخِذَيْهَا، وَلَا تَرْفَعْ عَجِيزَتَهَا، وَلَا تُجَافِي كَمَا يُجَافِي الرَّجُلُ-
ইবরাহীম নাখঈ বলেন, নারীরা যখন সিজদা করবে তখন তার পেটকে উরুর সাথে আঁটসাঁট করে রাখবে এবং তার নিতম্বকে যেন (পুরুষের ন্যায়) উপরে না তুলে। আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ঐরূপ দূরবর্তী করে না রাখে যেভাবে পুরুষেরা রাখে’।[46]
জবাব : এই বর্ণনাটিও যঈফ এবং অগ্রহণযোগ্য। কারণ এখানে সুফিয়ান ছাওরী নামক একজন মুদাল্লিস রাবী রয়েছেন, যিনি ‘আন’ (عَنْ) দ্বারা বর্ণনা করেছেন। ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) তার সম্পর্কে বলেন, وكان ربما دلس- ‘আর তিনি কখনো কখনো তাদলীস করতেন’।[47]
‘আসমাউল মুদাল্লিসীন’, ‘আল-মুদাল্লিসীন’ ও ‘আত-তাবঈনু লি-আসমাইল মুদাল্লিসীন’ গ্রন্থে তাকে মুদাল্লিস বলা হয়েছে এবং ইবনুত তুরকুমানী হানাফী, হাফেয যাহাবী, বদরুদ্দীন আইনী হানাফী, ইমাম নববী প্রমুখ তাঁকে মুদাল্লিস বলেছেন।[48]
দলীল-২ :
عَنْ مُجَاهِدٍ أَنَّهُ كَانَ يَكْرَهُ أَنْ يَضَعَ الرَّجُلُ بَطْنَهُ عَلَى فَخِذَيْهِ إِذَا سَجَدَ كَمَا تَضَعُ الْمَرْأَةُ-
মুজাহিদ হ’তে বর্ণিত, তিনি এই বিষয়টিকে মাকরূহ মনে করতেন যে, ‘সিজদা করার সময় পুরুষ নারীদের মত তার পেটকে উরুর সাথে লাগিয়ে বসবে যেভাবে নারীরা রাখে’।[49]
জবাব : এটি খুবই দুর্বল বর্ণনা। এর সনদে লায়ছ বিন সুলায়েম নামক রাবী আছেন। যিনি সত্যবাদী। কিন্তু তিনি শেষ বয়সে ইখতিলাত্বের শিকার হন। আর তার হাদীছ সমূহের মাঝে পার্থক্য করতে পারতেন না (কোন হাদীছটি ইখতিলাত্বের আগে আর কোনটি পরের তা বুঝতে পারতেন না)। এজন্য তার বর্ণিত হাদীছ যঈফ।
‘আত-তাহক্বীক্ব ফী মাসাইলিল খিলাফ’, ‘বায়ানুল ওয়াহমি ওয়াল ঈহাম ফী কুতুবিল আহকাম’, ‘মা‘রিফাতুত তাযকিরাহ’, ‘তানক্বীহুত তাহক্বীক্ব’ ও ‘আহওয়ালুর রিজাল’ গ্রন্থে লায়ছকে যঈফ বলা হয়েছে।[50]
বায়হাক্বী, যায়লাঈ, হাফেয হায়ছামী, ইমাম নাসাঈ, হাফেয আহমাদ শাহীন, ইবনুল জাওযী, ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও শায়খ আলবানী (রহঃ) সহ জমহুর বিদ্বানগণ লায়ছকে যঈফ বলেছেন।[51]
দলীল-৩ :
عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ قَالَ: قُلْتُ لِعَطَاءٍ: تُشِيْرُ الْمَرْأَةُ بِيَدَيْهَا بِالتَّكْبِيْرِ كَالرَّجُلِ؟ قَالَ: لاَ تَرْفَعْ بِذَلِكَ يَدَيْهَا كَالرَّجُلِ وَأَشَارَ فَخَفَضَ يَدَيْهِ جِدًّا، وَجَمَعَهُمَا إِلَيْهِ جِدًّا، وَقَالَ: إِنَّ لِلْمَرْأَةِ هَيْئَةً لَيْسَتْ لِلرَّجُلِ، وَإِنْ تَرَكَتْ ذَلِكَ فَلاَ حَرَجَ-
ইবনে জুরায়েজ (রহঃ) বলেছেন যে, আমি আত্বাকে জিজ্ঞেস করলাম, নারী কি তাকবীরের সময় পুরুষদের মত ইশারা করবে? তিনি বললেন, নারী পুরুষের মত হাত তুলবে না। এরপর তিনি ইশারা করলেন। তারপর তার দু’হাত নীচুতে রেখে (শরীরের সাথে) মিলিয়ে দিলেন। আর বললেন, নারীর পদ্ধতি পুরুষদের মত নয়। আর যদি এমনটি না করে, তবে কোন অসুবিধা নেই’।[52]
জবাব : রেওয়ায়াতটির শেষে আছে ‘যদি এমনটি না করে, তবে কোন অসুবিধা নেই’।[53] এই বাক্যটির স্পষ্ট মর্ম এই যে, যদি পুরুষদের মত করে, তবুও কোন সমস্যা নেই।
দেওবন্দীদের নির্ভরযোগ্য আলেম জাফর আহমাদ থানভী দেওবন্দী বলেছেন, فان قول التابعي لا حجة فيه ‘নিশ্চয়ই তাবেঈর বক্তব্যের মাঝে কোন হুজ্জাত তথা দলীল নেই’।[54]
উপসংহার :
উপরোক্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে, নারী-পুরুষের সালাতের প্রচলিত পার্থক্য সমূহ সঠিক নয়। বিশেষ করে নারীদের জড়সড় হয়ে সিজদা দেওয়ার নিয়ম বিশুদ্ধ নয়। মূলতঃ সালাত আদায়ের পদ্ধতি ও তাসবীহ তাহলীলের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে নারীরা জামা‘আতে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে ইমাম একই কাতারের মাঝ বরাবর দাঁড়াবে, সালাতে ত্রুটি হ’লে মুক্তাদী নারী হাতের উপর হাত মেরে সতর্ক করবে। এছাড়া আর কোন পার্থক্য নেই। আল্লাহ আমাদের ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী সালাত আদায়ের তাওফীক দান করুন-আমীন!
- আহমাদুল্লাহ, সৈয়দপুরী।
[1]. মোকাম্মাল মোদাল্লাল বেহেশতী জেওর, (ঢাকা : হামিদিয়া লাইব্রেরী লিমিটেড, তৃতীয় সংস্করণ, ফেব্রুয়ারী ২০০৪ইং), পৃঃ ১১৬-১৭।
[2]. ত্বাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর হা/২৮, ১৯/২২ পৃঃ।
[3]. হায়ছামী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/২৫৯৪।
[4]. ড. ইলিয়াস ফয়সাল, সম্পাদনা : মাওলানা আব্দুল মালেক, নবীজীর নামায, পৃঃ ৩৭৯।
[5]. সিলসিলা যঈফা হা/৫৫০০।
[6]. ফাৎহুল বারী হা/৭৩৮, ২/২২১।
[7]. নায়লুল আওত্বার হা/৬৭১, ২/২১৪।
[8]. নবীজীর নামায, পরিশিষ্ট-২, পৃঃ ৩৭৮-৩৭৯।
[9]. বুখারী হা/১২০৩।
[10]. মারাসীলে আবী দাঊদ হা/৮৭।
[11]. কানযুল উম্মাল হা/১৯৭; আল-ফাতহুল কাবীর হা/১১৩৫।
[12]. সিলসিলা যঈফা হা/২৬৫২।
[13]. নবীজীর নামায, পরিশিষ্ট-২, পৃঃ ৩৭৭।
[14]. আত-তালখীছুল হাবীর হা/৩৬৪।
[15]. ইবনুত তুরকুমানী হানাফী, আল-জাওহারুন নাক্বী, ২/২২৩।
[16]. বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/৩১৯৯।
[17]. আল-আবাত্বীলু ওয়াল মানাকীরু ওয়াছ ছিহাহ ওয়াল-মাশাহীরু, ১/১৪৪-১৪৫।
[18]. তাহক্বীক্বী মাক্বালাত ১/২৩০।
[19]. হাদীছ আওর আহলে তাক্বলীদ বি-জওয়াবে হাদীছ আওর আহলেহাদীছ, ২/৮০ পৃঃ।
[20]. আস-সুনানুল কুবরা হা/৩২০০।
[21]. ত্বাবাক্বাতুল কুবরা, জীবনী ক্রমিক নং ৩৬৪৮।
[22]. আল-মাজরূহীন, জীবনী ক্রমিক নং ২৩৬।
[23]. আল-মুগনী ফিয-যু‘আফা, জীবনী ক্রমিক নং ১৬৫৮।
[24]. আয-যু‘আফাউল মাতরূকীন, জীবনী ক্রমিক নং ৯৫৯, ১৬০, ৬৫৪; তানক্বীহুত তাহক্বীক্ব, মাসআলা নং ২৯৯।
[25]. ইমাম বুখারী, জুযউ রাফ‘ইল ইয়াদায়েন হা/২৩।
[26]. বুখারী হা/৭৩৫।
[27]. বুখারী হা/৭৩৬।
[28]. ইমাম বুখারী, জুযউ রাফইল ইয়াদায়েন হা/২৪; হাফেয যুবায়ের আলী যাঈ (রহঃ) এই হাদীছের সনদকে হাসান বলেছেন। দ্রঃ তাহক্বীক্বী মাক্বালাত, ১/২৩৬ পৃঃ।
[29]. মুসলিম হা/৩৯১।
[30]. মুহাম্মাদ আল-খাওয়ারেযমী, জামেউ মাসানীদিল ইমামিল আ‘যম, ১/৪০০; মুসনাদে আবী হানীফা হা/৩৭।
[31]. আত-তাক্বরীব, জীবনী ক্রমিক নং ২৫৭।
[32]. দারাকুৎনী, সুওয়ালাতুল হাকিম, নং ২৫২, পৃঃ ১৬৪।
[33]. আল-মাউযূ‘আত, ৩/২৮০; আল-কাশফুল হাছীছ, পৃঃ ৩১১-৩১২, নং ৫৪১।
[34]. আল-কাশফুল হাছীছ, পৃঃ ২৪৮; বায়হাক্বী, কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ১৫৪; লিসানুল মীযান, ৩/৩৪৮-৩৪৯; নূরুল আয়নাইন ফী ইছবাতি রাফ‘ইল ইয়াদায়েন, পৃঃ ৪০, ৪১।
[35]. যুবায়ের আলী যাঈ, তাহক্বীক্বী মাক্বালাত, ১/২৩০।
[36]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৭৭৭।
[37]. নাছবুর রায়াহ, ২/৩।
[38]. আছলু ছিফাতি ছলাতিন নাবী, ২/৬৭১; আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা, জীবনী ক্রমিক নং ২০৮৩, ১৫১।
[39]. আল-মুগনী ফী যু‘আফাইর রিজাল, জীবনী ক্রমিক নং ১২৩৬।
[40]. আসমাউল মুদাল্লিসীন, জীবনী ক্রমিক নং ৪৫; ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, জীবনী ক্রমিক নং ৬৬; যিকরুল মুদাল্লিসীন, জীবনী ক্রমিক নং ৯; আল-মুদাল্লিসীন, জীবনী ক্রমিক নং ৪৭।
[41]. রাবীর হিফয শক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়া, বিবেক-বুদ্ধি দুর্বল হয়ে যাওয়া, হাদীছকে সঠিকভাবে মনে রাখতে না পারায় হাদীছের বাক্যে তালগোল পাকিয়ে যাওয়াকে ইখতিলাত্ব বলা হয়। বিভিন্ন কারণে ইখতিলাত হ’তে পারে। যেমন বয়স বেড়ে যাওয়া, বই-পুস্তক পুড়ে যাওয়া, ধন-সম্পদের ক্ষতি হওয়া কিংবা সন্তান-সন্ততির মৃত্যু ঘটার কারণে মানসিক আঘাত পাওয়া ইত্যাদি। দ্রঃ তায়সীরু মুছত্বলাহিল হাদীছ, পৃঃ ১২৫।
[42]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৭০১।
[43]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৭৭৮।
[44]. বুখারী হা/৮২২।
[45]. হাফেয যুবায়ের আলী যাঈ, তাহক্বীক্বী মাক্বালাত, ১/২৩৩।
[46]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৭৮২।
[47]. তাক্বরীবুত তাহযীব, জীবনী ক্রমিক নং ২৪৪৫।
[48]. আসমাউল মুদাল্লিসীন, জীবনী ক্রমিক নং ১৮; আল-মুদাল্লিসীন, জীবনী ক্রমিক নং ২১; আল-জাওহারুন নাক্বী, ৮/২৬২; মীযানুল ই‘তিদাল, জীবনী ক্রমিক নং ৩৩২২; উমদাতুল ক্বারী, হা/২১৪-এর আলোচনা দ্রঃ; শরহে ছহীহ মুসলিম, ২/১৮২।
[49]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৭৮০।
[50]. আত-তাহক্বীক্ব ফী মাসাইলিল খিলাফ হা/১৩১৫; বায়ানুল ওয়াহমি ওয়াল ঈহাম ফী কুতুবিল আহকাম, ৫/২৯৫; মা‘রিফাতুত তাযকিরাহ, জীবনী নং ২৬৮; ইবনে আব্দুল হাদী, তানক্বীহুত তাহক্বীক্ব, ৩/২৩৪; আহওয়ালুর রিজাল, জীবনী ক্রমিক নং ১৩২।
[51]. আল-জাওহারুন নাক্বী, ১/২৯৮; নাছবুর রায়াহ, ২/৪৭৫, ৪/৩৩০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হা/৬৩৬৪; আয-যু‘আফাউল মাতরূকীন, জীবনী ক্রমিক নং ৫১১; তারখে আসমাউয যু‘আফা ওয়াল কায্যাবীন, জীবনী ক্রমিক নং ৫৩১; আয-যু‘আফাউল মাতরূকীন, নং ২৮১৫; তারীখে ইবনে মাঈন, দারেমীর বর্ণনা, নং ৭২০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৫৪; ইতহাফুল মাহরাহ হা/২৭৬০।
[52]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৪৭৪।
[53]. ঐ।
[54]. ই‘লাউস সুনান, ১/২৪৯; তাহক্বীক্বী মাক্বালাত, ১/২২৬-এর বরাতে।