দলীলের অনুসরণ করার মানে এ নয় যে, এর দ্বারা ইমামের মতামতের বিরোধিতা করা হলো
মাযহাবপন্থি কতিপয় মুকাল্লিদ ধারণা করে যে, কুরআন-সুন্নাহর দলীলের ইত্তেবার দিকে দাওয়াত দেয়া এবং ইমামদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী মতামতগুলোকে বর্জন করা হলে সাধারণভাবে ইমামদের সকল কথাকে পরিত্যাগ করা হলো ও তাদের ইজতিহাদের উপকারিতাকে বর্জন করা হলো।
আল্লামা আলবানী (রাহি.) বলেন:[1]
এ ধারণাটি সত্য থেকে অনেক দূরে, বরং তা প্রকাশ্যভাবে বাত্বিল (মিথ্যা)। যেমনটি পূর্বোক্ত কথাগুলো থেকে প্রতিভাত হয়, কেননা সব কয়টি কথাই উক্ত ধারণার বিপরীত অর্থ বহন করছে। আমরা যে বিষয়টির দিকে দাওয়াত দান করি তার সবই হচ্ছে এই যে, মাযহাবকে দ্বীনরূপে গণ্য করা যাবে না এবং তাকে কুরআন ও হাদীসের স্থলে এমনভাবে আসন দেয়া চলবে না যে, বিবাদ মিটানোর ক্ষেত্রে অথবা নবোদ্ভাবিত সমস্যার নতুন বিধান বের করার উদ্দেশ্যে তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। যেমন করে থাকেন বর্তমান যুগের ফক্বীহরা। তারা শুদ্ধ-অশুদ্ধ হক-বাত্বিল জানার জন্যে কুরআন হাদীসের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়াই বিবাহ, তালাক ইত্যাদির নতুন বিধি-বিধান প্রণয়ন করেছেন। আর এক্ষেত্রে তাদের তরীকাহ (নীতি বা পথ) হচ্ছে ( اختلافهم رحمة ) অর্থ: তাদের মতভেদ হচ্ছে রহমাত এবং অনুমোদন, সহজ করণ বা সংশোধনের অনুসরণ। এ বিষয়ে সুলাইমান তামীমী (রাহিমাহুল্লাহ) কতইনা সুন্দর বলেছেন:
( إن أخذت برخصة كل عالم اجتمع فيك الشر كله ) অর্থ: তুমি যদি প্রত্যেক আলিমের প্রদত্ত সুযোগ গ্রহণ কর তবে সব অনিষ্ট তোমার মধ্যে একত্রিত হবে।
ইবনু আব্দিল বার এর বিপরীত মত দিয়েছেন, তিনি (২/৯১-৯২) বলেন, এটি সর্বসম্মত কথা। এ বিষয়ে কোন মতানৈক্য আছে বলে আমার জানা নেই। উপরোক্ত নীতি যা আপনি ইজমা বলে মনে করেন,আমরা তার প্রতিবাদ করি।
আর তাদের কথার দিকে প্রত্যাবর্তন করা, তা থেকে উপকৃত হওয়া, বিতর্কিত যে সব বিষয়ে কুরআন হাদীসের স্পষ্ট প্রমাণ নেই সেগুলোর সঠিক অবস্থা বুঝতে সহযোগিতা নেয়া অথবা যে সব বিষয় ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে তা বুঝতে যাওয়া এটাতো আমরা অস্বীকার করি না বরং এ ব্যাপারে নির্দেশ দান করি এবং উৎসাহ যোগাই, কারণ এ থেকে ঐ ব্যক্তির উপকৃত হওয়ার আশা করা যায় যে কুরআন হাদীসের হিদায়াত গ্রহণের পথ অবলম্বন করে।
আল্লামা ইবনু আব্দিল বার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন (২/১৭২):
হে ভাই! তোমার উপর মৌলনীতি মুখস্থ করা এবং তা সংরক্ষণ করা অপরিহার্য। আর জেনে রাখুন, যে ব্যক্তি সুন্নাহ এবং কুরআনের স্পষ্ট বিধানগুলো সংরক্ষণ করেছে এবং ফক্বীহদের কথার ভিতর দৃষ্টি দিয়েছে এবং এটাকে তার গবেষণা কার্যের সহযোগী বিবেচনা করেছে এবং তাকে চিন্তা গবেষণার চাবি-কাঠিরূপে গণ্য করেছে ও একাধিক অর্থ সম্ভাবনাময় হাদীস সমূহের ব্যাখ্যা হিসেবে গ্রহণ করেছে আর তাদের কোন একজনের এমনভাবে অন্ধ অনুসরণ করে নি যেরূপ করতে হয় হাদীসের ক্ষেত্রে, যার আনুগত্য সর্বাবস্থায় ও কোনরূপ চিন্তাভাবনা ছাড়াই ওয়াজিব, আর সে নিজেকে মুক্ত রাখে নি ঐ কাজ থেকে যে কাজে উলামাগণ নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখতেন তথা হাদীস মুখস্থ করা ও তাতে চিন্তা নিবন্ধ রাখা। বরং গবেষণা, বুঝা এবং চিন্তাভাবনায় তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে এবং সর্বোপরি সে তাদের উপকার দান ও অবহিত করানোর পরিপ্রেক্ষতে ব্যয়িত শ্রমের শুকরিয়া করেছে। তাদের প্রদত্ত সঠিক সিদ্ধান্ত যার পরিমাণই বেশি রয়েছে এর উপর তাদের প্রশংসা করেছে, তিনি তাদেরকে ত্রুটিমুক্ত অবস্থায় পান নি, যেমন তারা নিজেদেরকেও ত্রুটিমুক্ত করতে পারেন নি, তবে সেই হবে ঐ বিদ্যান্বেষী যে পূর্বসূরী সৎ ব্যক্তিগণের আদর্শে অটল, তার অধিকার আদায়ে সার্থক, সঠিক পথ প্রদর্শক, নাবী (ﷺ) এর সুন্নাতের এবং তাঁর সাহাবা (রাযিয়ালস্নাহ আনহুম) দের আদর্শের অনুসারী।
পক্ষান্তরে, যে নিজেকে চিন্তা গবেষণা থেকে দূরে রেখেছে এবং আমরা যা উল্লেখ করেছি তা থেকে বিমুখ রয়েছে এবং স্বীয় মতামত দ্বারা হাদীসের বিরোধিতা করেছে এবং নিজের দৃষ্টিভঙ্গির দিকে অন্যকে ঠেলে দিতে চায় সে নিজে পথভ্রষ্ট এবং অপরকে ভ্রষ্টকারী, আর যে ব্যক্তি এসবের কিছুই না জেনে বিদ্যাহীনভাবে ফাৎওয়াদানে প্রবৃত্ত হয় সে আরও কঠিন অন্ধ এবং আরও অধিক পথভ্রষ্ট।
কবি বলেন:
অর্থ: এটাই চির সত্য যাতে কোন অস্পষ্টতা নেই, অতএব তুমি আমাকে নেইরূপ পথ থেকে বাঁচতে দাও, স্পষ্ট পথসমূহ অবলম্বন করতে ছেড়ে দাও।
এ সব সতর্কবাণীর ক্ষেত্রে আমি বলব, একজন একনিষ্ঠ ব্যক্তির জন্য কুরআন হাদীসের বিধানের দিকে প্রত্যাবর্তন করা, কুরআন হাদীসের বিরোধী সব কিছু বর্জন করা এবং হক্ব বিরোধী তাক্বলীদ প্রত্যাখ্যান করাই যথেষ্ট। কেউ যদি এটা অস্বীকার করে তাক্বলীদ করতে চায়, তাহলে আমরা বলব ইবনু আব্দিল বার ও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেছেন: এ ব্যাপারে সকল বিদ্বান একমত যে, মুকাল্লিদগণ বিদ্বানদের কাছে গণনাযোগ্য নয়। আর একজন মুকাল্লিদ কোন মুজতাহিদের উপর অভিযোগ আরোপ করতে পারে না। যদি সে বলে যে, আপনি মুজতাহিদ নন, তাহলে আমরা বলব যে, বিদ্বানদের মতে ইজতিহাদ অনেকভাবে বিভক্ত। সুতরাং একজন মুজতাহিদের জন্য আবশ্যক নয় যে, তাকে প্রত্যেক মাসআলার ক্ষেত্রে ইজতিহাদ করতে হবে। তাই তোমার অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। একজন অন্ধ ব্যক্তির কি দিরহাম যাচাই-বাছাই করার যোগ্যতা আছে?!!
নোটঃ [1] ‘সিফাতু সালাতিন্নাবী’ এর ভূমিকা (পৃ:৬৯-৭০)।
মাযহাবপন্থি কতিপয় মুকাল্লিদ ধারণা করে যে, কুরআন-সুন্নাহর দলীলের ইত্তেবার দিকে দাওয়াত দেয়া এবং ইমামদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী মতামতগুলোকে বর্জন করা হলে সাধারণভাবে ইমামদের সকল কথাকে পরিত্যাগ করা হলো ও তাদের ইজতিহাদের উপকারিতাকে বর্জন করা হলো।
আল্লামা আলবানী (রাহি.) বলেন:[1]
এ ধারণাটি সত্য থেকে অনেক দূরে, বরং তা প্রকাশ্যভাবে বাত্বিল (মিথ্যা)। যেমনটি পূর্বোক্ত কথাগুলো থেকে প্রতিভাত হয়, কেননা সব কয়টি কথাই উক্ত ধারণার বিপরীত অর্থ বহন করছে। আমরা যে বিষয়টির দিকে দাওয়াত দান করি তার সবই হচ্ছে এই যে, মাযহাবকে দ্বীনরূপে গণ্য করা যাবে না এবং তাকে কুরআন ও হাদীসের স্থলে এমনভাবে আসন দেয়া চলবে না যে, বিবাদ মিটানোর ক্ষেত্রে অথবা নবোদ্ভাবিত সমস্যার নতুন বিধান বের করার উদ্দেশ্যে তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। যেমন করে থাকেন বর্তমান যুগের ফক্বীহরা। তারা শুদ্ধ-অশুদ্ধ হক-বাত্বিল জানার জন্যে কুরআন হাদীসের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়াই বিবাহ, তালাক ইত্যাদির নতুন বিধি-বিধান প্রণয়ন করেছেন। আর এক্ষেত্রে তাদের তরীকাহ (নীতি বা পথ) হচ্ছে ( اختلافهم رحمة ) অর্থ: তাদের মতভেদ হচ্ছে রহমাত এবং অনুমোদন, সহজ করণ বা সংশোধনের অনুসরণ। এ বিষয়ে সুলাইমান তামীমী (রাহিমাহুল্লাহ) কতইনা সুন্দর বলেছেন:
( إن أخذت برخصة كل عالم اجتمع فيك الشر كله ) অর্থ: তুমি যদি প্রত্যেক আলিমের প্রদত্ত সুযোগ গ্রহণ কর তবে সব অনিষ্ট তোমার মধ্যে একত্রিত হবে।
ইবনু আব্দিল বার এর বিপরীত মত দিয়েছেন, তিনি (২/৯১-৯২) বলেন, এটি সর্বসম্মত কথা। এ বিষয়ে কোন মতানৈক্য আছে বলে আমার জানা নেই। উপরোক্ত নীতি যা আপনি ইজমা বলে মনে করেন,আমরা তার প্রতিবাদ করি।
আর তাদের কথার দিকে প্রত্যাবর্তন করা, তা থেকে উপকৃত হওয়া, বিতর্কিত যে সব বিষয়ে কুরআন হাদীসের স্পষ্ট প্রমাণ নেই সেগুলোর সঠিক অবস্থা বুঝতে সহযোগিতা নেয়া অথবা যে সব বিষয় ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে তা বুঝতে যাওয়া এটাতো আমরা অস্বীকার করি না বরং এ ব্যাপারে নির্দেশ দান করি এবং উৎসাহ যোগাই, কারণ এ থেকে ঐ ব্যক্তির উপকৃত হওয়ার আশা করা যায় যে কুরআন হাদীসের হিদায়াত গ্রহণের পথ অবলম্বন করে।
আল্লামা ইবনু আব্দিল বার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন (২/১৭২):
হে ভাই! তোমার উপর মৌলনীতি মুখস্থ করা এবং তা সংরক্ষণ করা অপরিহার্য। আর জেনে রাখুন, যে ব্যক্তি সুন্নাহ এবং কুরআনের স্পষ্ট বিধানগুলো সংরক্ষণ করেছে এবং ফক্বীহদের কথার ভিতর দৃষ্টি দিয়েছে এবং এটাকে তার গবেষণা কার্যের সহযোগী বিবেচনা করেছে এবং তাকে চিন্তা গবেষণার চাবি-কাঠিরূপে গণ্য করেছে ও একাধিক অর্থ সম্ভাবনাময় হাদীস সমূহের ব্যাখ্যা হিসেবে গ্রহণ করেছে আর তাদের কোন একজনের এমনভাবে অন্ধ অনুসরণ করে নি যেরূপ করতে হয় হাদীসের ক্ষেত্রে, যার আনুগত্য সর্বাবস্থায় ও কোনরূপ চিন্তাভাবনা ছাড়াই ওয়াজিব, আর সে নিজেকে মুক্ত রাখে নি ঐ কাজ থেকে যে কাজে উলামাগণ নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখতেন তথা হাদীস মুখস্থ করা ও তাতে চিন্তা নিবন্ধ রাখা। বরং গবেষণা, বুঝা এবং চিন্তাভাবনায় তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে এবং সর্বোপরি সে তাদের উপকার দান ও অবহিত করানোর পরিপ্রেক্ষতে ব্যয়িত শ্রমের শুকরিয়া করেছে। তাদের প্রদত্ত সঠিক সিদ্ধান্ত যার পরিমাণই বেশি রয়েছে এর উপর তাদের প্রশংসা করেছে, তিনি তাদেরকে ত্রুটিমুক্ত অবস্থায় পান নি, যেমন তারা নিজেদেরকেও ত্রুটিমুক্ত করতে পারেন নি, তবে সেই হবে ঐ বিদ্যান্বেষী যে পূর্বসূরী সৎ ব্যক্তিগণের আদর্শে অটল, তার অধিকার আদায়ে সার্থক, সঠিক পথ প্রদর্শক, নাবী (ﷺ) এর সুন্নাতের এবং তাঁর সাহাবা (রাযিয়ালস্নাহ আনহুম) দের আদর্শের অনুসারী।
পক্ষান্তরে, যে নিজেকে চিন্তা গবেষণা থেকে দূরে রেখেছে এবং আমরা যা উল্লেখ করেছি তা থেকে বিমুখ রয়েছে এবং স্বীয় মতামত দ্বারা হাদীসের বিরোধিতা করেছে এবং নিজের দৃষ্টিভঙ্গির দিকে অন্যকে ঠেলে দিতে চায় সে নিজে পথভ্রষ্ট এবং অপরকে ভ্রষ্টকারী, আর যে ব্যক্তি এসবের কিছুই না জেনে বিদ্যাহীনভাবে ফাৎওয়াদানে প্রবৃত্ত হয় সে আরও কঠিন অন্ধ এবং আরও অধিক পথভ্রষ্ট।
কবি বলেন:
فهذا هو الحق ما به خفاء فدعني عن بنيات الطريق
অর্থ: এটাই চির সত্য যাতে কোন অস্পষ্টতা নেই, অতএব তুমি আমাকে নেইরূপ পথ থেকে বাঁচতে দাও, স্পষ্ট পথসমূহ অবলম্বন করতে ছেড়ে দাও।
এ সব সতর্কবাণীর ক্ষেত্রে আমি বলব, একজন একনিষ্ঠ ব্যক্তির জন্য কুরআন হাদীসের বিধানের দিকে প্রত্যাবর্তন করা, কুরআন হাদীসের বিরোধী সব কিছু বর্জন করা এবং হক্ব বিরোধী তাক্বলীদ প্রত্যাখ্যান করাই যথেষ্ট। কেউ যদি এটা অস্বীকার করে তাক্বলীদ করতে চায়, তাহলে আমরা বলব ইবনু আব্দিল বার ও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেছেন: এ ব্যাপারে সকল বিদ্বান একমত যে, মুকাল্লিদগণ বিদ্বানদের কাছে গণনাযোগ্য নয়। আর একজন মুকাল্লিদ কোন মুজতাহিদের উপর অভিযোগ আরোপ করতে পারে না। যদি সে বলে যে, আপনি মুজতাহিদ নন, তাহলে আমরা বলব যে, বিদ্বানদের মতে ইজতিহাদ অনেকভাবে বিভক্ত। সুতরাং একজন মুজতাহিদের জন্য আবশ্যক নয় যে, তাকে প্রত্যেক মাসআলার ক্ষেত্রে ইজতিহাদ করতে হবে। তাই তোমার অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। একজন অন্ধ ব্যক্তির কি দিরহাম যাচাই-বাছাই করার যোগ্যতা আছে?!!
নোটঃ [1] ‘সিফাতু সালাতিন্নাবী’ এর ভূমিকা (পৃ:৬৯-৭০)।
গ্রন্থঃ সহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ
লেখকঃ আবূ মালিক কামাল বিন আস-সাইয়্যিদ সালিম
অধ্যায়ঃ ভূমিকা এবং জরুরী জ্ঞাতব্য
লেখকঃ আবূ মালিক কামাল বিন আস-সাইয়্যিদ সালিম
অধ্যায়ঃ ভূমিকা এবং জরুরী জ্ঞাতব্য
Last edited by a moderator: