ভূমিকা
তরুণ তারাই, যারা ধ্বংস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে নতুন করে গড়তে জানে। তারুণ্য যেমন গড়তে পারে তেমনি মহাপ্রলয়ের ন্যায় ধ্বংসও করতে পারে। তারুণ্য এমন এক শক্তি, যার বিরুদ্ধে কখনো কোন শক্তি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে টিকতে পারে না। মানবজীবনে তারুণ্যের সময়কালকে ‘স্বর্ণযুগ’ বলা হয়। সর্বত্র কেবল তারুণ্যেরই জয়গান উচ্চারিত হয়। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তারুণ্য কেবল প্রতিবাদ করেই ক্ষান্ত হয় না; বরং সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতেও বদ্ধপরিকর। তাই সমাজের সার্বিক সংস্কারে তারুণ্য অদ্বিতীয় ও অফুরন্ত শক্তির আধার।
কিন্তু মানব জীবনের ‘স্বর্ণযুগ’ খ্যাত এই তারুণ্য সময়কালটি আজ অন্ধকারে আচ্ছন্ন। সন্ত্রাসের হিংস্র ছোবলে তারা আজ ক্ষত-বিক্ষত। অন্ধকার রাজ্যের পাপাচার ও অন্যায়ের লালনকারী। সন্ত্রাসীদের উপর্যুপরি সংঘাত, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, খুন-রাহাজানি, হরতাল-অবরোধ, ভাংচুর প্রভৃতি তরুণ সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করেছে। ফলে প্রচণ্ড ঝড়-ঝাঞ্ঝা ও তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ সমুদ্রে বিপদজনক জাহাজের উদ্দেশ্যহীন গতিপথের যে দশা হয়, ঠিক তেমনি জাতির কাণ্ডারি তরুণ সমাজেরও আজ সেই একই দশা। এমতাবস্থায় তরুণ সমাজকে অন্ধকার নিগড় থেকে মুক্তিদানের প্রত্যাশায় নিম্নে কিছু কথা উপস্থাপন করা হল :
তরুণ পরিচিতি
তরুণ হল- নবযৌবন লাভ করেছে এমন। [১] যে সকল ভ্রু-কুটি ও বাঁধার প্রাচীর উপেক্ষা করে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছতে দ্বিধা করে না। ‘তরুণ’-এর আরবী প্রতিশব্দ হল-فتي، شاب। যার অর্থ শক্তি বা উন্নতি। [২] এরূপ ইঙ্গিত পবিত্র কুরআনেও পাওয়া যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আল্লাহ তোমাদের দুর্বলরূপে সৃষ্টি করেন, দুর্বলতার পর শক্তি দেন, শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য, তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ ও সর্ব শক্তিমান’ (সূরা আর-রূম : ৫৪)।
তরুণের বয়সসীমা নির্ধারণে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার মাঝে কিছু মত-পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ‘ইউনিসেফ’-এর শিশু অধিকার সনদে বলা হয়, ১৮ বছরের নীচে শিশু এবং ১৮ বছর থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত হচ্ছে তরুণ। [৩] ‘আল-মুনজিদ’ প্রণেতা বলেন, বালেগ বা স্বপ্নদোষ হওয়ার পর থেকে নিয়ে ত্রিশ বছর পর্যন্ত তরুণ।[৪] ইবনু ছা‘আলাবী বলেন, ৩০ থেকে ৪০ বছরের ব্যক্তি হচ্ছে তরুণ।[৫] শিশু, তরুণ, প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্য এ স্তরগুলো মানব জীবনের চলমান প্রক্রিয়া, যা কারো জন্য থেমে থাকে না। এ চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে যৌবনকালটি শুরু হয় বালেগ বয়সে উপনীত হওয়ার পর থেকে তথা ১৫ বছর থেকে, আর তা শেষ হয় প্রায় ৪০ বছর বয়সে।[৬]
তাছাড়া তাদের বয়সের শেষসীমা ৪০ বছর হওয়াটাই অধিক যুক্তিসঙ্গত। এর ইঙ্গিত কুরআনুল কারীমেও পাওয়া যায়।
আল্লাহ বলেন,
‘যখন সে পূর্ণ শক্তিপ্রাপ্ত হল এবং ৪০ বছরে পৌঁছল’ (সূরা আল-আহক্বাফ : ১৫)। এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে, মানুষ ৪০ বছরে পৌঁছলে তরুণের সর্বোচ্চ চূড়ায় উপনীত হয়, তার জ্ঞান পরিপক্ক হয় এবং বোধশক্তি পরিপূর্ণ হয়। [৭] এ কারণে দেখা যায়, আল্লাহ যুগে যুগে যে সকল নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন তাদের অধিকাংশই তরুণ অবস্থায় নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়েছেন।[৮]
ইবনুল ফারিস (৩২৯-৩৯৫ হি./৯৪১-১০০৪ খ্রি.) বলেন,
‘শারীরিক শক্তি ও তেজের মাধ্যমে অধিক শক্তিমত্তাকে তরুণ বলে’। [৯] ‘তরুণ’-এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Young, Youth।
তরুণের পরিচয় দিতে গিয়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার যাহার শক্তি অপরিমাণ, গতিবেগ ঝঞ্ঝার ন্যায়, তেজ নির্মেঘ আষাঢ় মধ্যাহ্নে মার্তণ্ডপ্রায়, বিপুল যাহার আশা, ক্লান্তিহীন যাহার উৎসাহ, বিরাট যাহার সাধ, মৃত্যু যাহার মুঠিতলে’। এখানেই তারুণ্য শক্তির স্বরূপ প্রস্ফুটিত হয়।
তরুণরা স্বপ্ন দেখতে জানে এবং দেখাতেও জানে। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তরুণদের চেয়ে নিপুন শিল্পী আর কে হতে পারে? তাই প্রতিটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার পুরোটা তরুণদেরকে ঘিরেই থাকে। যুগে-যুগে যালেমের যুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তরুণরাই শুধু তাদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলেনি, বরং এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা স্মরণ করে পরবর্তীতে অনেক শাসক অন্যায় করার সাহস পায়নি। সমর লড়াইগুলোর ইতিহাস অধ্যয়ন করলে আজও তরুণের তেজদ্বীপ্ত হুংকার-গর্জন কর্ণকুহরে কম্পন তোলে। বিজ্ঞান, শিক্ষা, চিকিৎসা, তথ্য-প্রযুক্তি সহ এমন সকল ক্ষেত্রে তরুণদের সফলতা সুস্পষ্ট। মূলত এরা সকল যুগে সকল দেশে পাঞ্জেরীর ভূমিকা পালন করেছে। এজন্য জাতীয় কবি কতইনা সুন্দর করে বলেছেন,
‘সকল কালে সকল দেশে
সকল লাভ-লোভকে জয় করেছিল তরুণ।
ওগো বাংলার তরুণের দল!
ওগো আমার আগুন খেলার নির্ভীক ভাইরা!
ঐ দেখ লক্ষ অকালমৃতের লাশ তোমার দুয়ারে দাঁড়াইয়া!
তারা প্রতিকার চায়।
তোমরা ঐ শকুনির দলে নও,
তোমরা আগুনের শিখা, তোমাদের জাতি নাই।
তোমরা আলোর, তোমরা গানের, তোমরা কল্যাণের।
তোমরা বাইরে এস এই দুর্দিনে তাড়াও,
ঐগো ভাগাড়ে পড়া শকুনির দলকে’।
তরুণদের প্রকারভেদ
বিশ্বব্যাপী বর্তমান তরুণ সমাজের ক্রমবর্ধমান ভয়ংকর অবনতি বিশ্লেষণ করে ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম মুহাদ্দিছ ও গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী মুহাম্মাদ বিন ছালিহ আল-উছায়মীন (১৩৪৭-১৪২১ হি.) তরুণ বা যুবকদেরকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা : (১) সুপথগামী যুবক (شَبَابٌ مُسْتَقِيْمٌ) (২) বিপথগামী যুবক (شَبَابٌ مُنْحَرِفٌ) এবং (৩) দিশেহারা যুবক (شَبَابٌ مُتَحَيَّرٌ بَيْنَ بَيْنَ)। [১০] নিম্নে এই তিন প্রকার যুবকের পরিচয় উপস্থাপন করা হল :
সুপথগামী যুবক (شَبَابٌ مُسْتَقِيْمٌ)
সুপথগামী তরুণ বা যুবকের পরিচয় দিতে গিয়ে মুহাম্মাদ বিন ছালিহ আল-ঊছায়মীন (১৩৪৭-১৪২১ হি.) বলেন,
‘সুপথগামী যুবক হল পরিপূর্ণ অর্থে মুমিন যুবক। এরা তারা, যারা তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি সম্পূর্ণরূপে আস্থাশীল, দ্বীনকে ভালবাসে, দ্বীনের প্রতি পরিতুষ্ট থাকে, আনন্দিত হয়, দ্বীনকে গণীমত হিসাবে মনে করে এবং দ্বীন থেকে বঞ্চিত থাকাকে সুস্পষ্ট ক্ষতির কারণ বলে মনে করে’। [১১]
সুপথগামী যুবকের বৈশিষ্ট্য
সুপথগামী যুবকরা দেশের প্রকৃত সম্পদ। এই শ্রেণীর যুবকদের মাধ্যমে সমাজ সংস্কার সম্ভব। নিম্নে সুপথগামী যুবকদের কতিপয় বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হল:
(ক) তাওহীদ ও সুন্নাতের একনিষ্ঠ অনুসারী।
নির্ভেজাল তাওহীদ ও বিশুদ্ধ সুন্নাতের একনিষ্ঠ অনুসারী হওয়া এই শ্রেণীর যুবকদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তারা এমন যুবক, যারা শিরকমুক্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্র ইবাদত করে। নির্ভেজাল তাওহীদী ঝাণ্ডাকে সবার উপরে স্থান দেয়। তাওহীদের পরিচয় দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,
‘তিনি আকাশমণ্ডলী পৃথিবী এবং এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী যা কিছু আছে, সবারই প্রতিপালক; সুতরাং তুমি তাঁরই ইবাদত কর এবং তাঁরই ইবাদতে প্রতিষ্ঠিত থাক। তুমি কি তাঁর সকল নামসম্পন্ন আর কাউকে জান?’ (সূরা মারইয়াম : ৬৫)।
তারা এমন যুবক, যারা কোনকিছু করা বা না করার ক্ষেত্রে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা ও কাজকে নিঃশর্ত ও একনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করে। মহান আল্লাহ বলেন,
‘তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তোমরা তার অনুসরণ কর এবং আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কোন বন্ধু বা অভিভাবকের অনুসরণ কর না’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ৩)।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
‘সুপথ প্রকাশিত হওয়ার পরেও যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনগণের পথের বিপরীত পথের অনুসরণ করে, তবে সে যেদিকে অনুগামী, আমরা তাকে সেদিকেই প্রত্যাবর্তিত করব ও তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর সেটা কতইনা নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তন স্থল’ (সূরা আন-নিসা : ১১৫)। হাদীসে এসেছে, আনাস ভ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
‘তোমাদের মধ্যে কেউ পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি তোমাদের নিকট তোমাদের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং দুনিয়ার সমস্ত মানুষের চেয়ে সর্বাধিক প্রিয় না হব’। [১২] অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা ভ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
‘আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে অস্বীকারকারী ছাড়া। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল ফ! কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করবে, সেই অস্বীকারকারী’।[১৩]
(খ) নিয়মিত ফরয ইবাদত সম্পাদনকারী।
সুপথগামী যুবকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল- নিয়মিত ফরয ইবাদত তথা সালাত, সিয়াম, যাকাত ও হজ্জ সম্পাদন করা। তারা এমন যুবক, যারা সাধ্যমত সঠিকভাবে নিয়মিত সালাত কায়েম করে। কারণ তারা সালাতের উপকারিতা, দ্বীনী ও দুনিয়াবী কল্যাণ, ব্যক্তিগত ও সামাজিক ফলাফলের ব্যাপারে পূর্ণ বিশ্বাসী। তারা এমন যুবক, যারা হক্বদারদের প্রতি পরিপূর্ণভাবে যাকাত আদায় করে, শীতে-গ্রীষ্মে সর্বদাই রামাযানের সিয়াম পালন করে এবং স্বীয়-প্রবৃত্তি ও লালসাকে নিবৃত্ত করে এবং সামার্থ্য থাকলে বায়তুল্লায় ফরয হজ্জ সম্পাদন করে।[১৪]
(গ) ঈমানের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী হওয়া।
ঈমানের ছয়টি স্তম্ভের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা সুপথগামী যুবকের বৈশিষ্ট্য। তারা এমন যুবক, যারা আল্লাহ, ফেরেশতাম-লী, আসমানী কিতাবসমূহ, রাসূলগণ, ক্বিয়ামত দিবস এবং তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি পরিপূর্ণভাবে দৃঢ় বিশ্বাস করে থাকে। কোন প্রতিকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতে ঈমানী চেতনার সুদৃঢ় ভিত্তি থেকে তারা কোনক্রমে ছিটকে পড়ে না। ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও সালাতের মাধ্যমে সকল বিপদাপদ মোবাবেলা করে থাকে।[১৫]
(ঘ) দ্বীনকে নছীহত হিসাবে গ্রহণকারী।
তাদের আরো একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল- তারা এমন যুবক, যারা দ্বীন ইসলামকে নছীহত হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। আর সেটা আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূলের জন্য এবং গোটা মুসলিম জাতি ও জনসাধারণের জন্য নছীহত মনে করে। হাদীসে এসেছে, তামীম আদ-দারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
‘দ্বীন হল নছীহত। (রাবী বলেন) আমরা বললাম, কাদের জন্য? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য এবং গোটা মুসলিম ও জনসাধারণের জন্য’।[১৬] এই শ্রেণীর যুবকরা মুসলিমদের সাথে দ্ব্যর্থহীন ও খোলামেলা জীবনাচরণে অভ্যস্ত হয়, যেমন আচরণ সে অন্যদের কাছে প্রত্যাশা করে। যেখানে কোন ধোঁকা, শঠতা, প্রতারণা, বক্রতা ও গোপনীয়তার লেশমাত্রও থাকে না[১৭]
(ঙ) ইসলামের শ্রেষ্ঠ দাওয়াত প্রদানকারী।
ইসলাম প্রচারমূলক জীবন ব্যবস্থা। দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে তরুণেরা সমাজ থেকে শিরক-বিদ‘আত দূরীভূত করে থাকে। এটা তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তারা এমন যুবক, যারা জাগ্রত জ্ঞান ও সুদৃঢ় প্রমাণভিত্তিক আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান করে। তারা হিকমাহ ও উত্তম পদ্ধতির মাধ্যমে দাওয়াতী কাজ করে থাকে।
মহান আল্লাহ বলেন,
‘(হে নবী!) আপনি বলুন, এটাই আমার পথ; আমি ও আমার অনুসারীগণ আল্লাহর পথে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে আহ্বান করে থাকি। আল্লাহ মহান পবিত্র। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সূরা ইউসুফ : ১০৮)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,
‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান কর প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে সুন্দর পন্থায বিতর্ক কর’ (সূরা আন-নাহল : ১২৫)।
(চ) সৎ কাজের আদেশ প্রদানকারী ও অসৎ কাজে নিষেধ প্রদানকারী।
এই শ্রেণীর যুবকদের আরো একটি বৈশিষ্ট্য হল- তারা সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজে নিষেধ করে। কারণ তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে, একাজেই উম্মতের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, যাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য। তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহ্র উপর বিশ্বাস রাখবে’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১১০)। একাজে তারা রাসূলুল্লাহ ফ কর্তৃক প্রদর্শিত পদ্ধতিকে অনুসরণ করে থাকে। অর্থাৎ সমাজ পরিবর্তনের জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতি অনুযায়ী প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। হাদীসে এসেছে,
‘তোমাদের মধ্যে যখন কেউ কোন অন্যায় হতে দেখে, তখন সে যেন তা হাত দিয়ে প্রতিহত করে। তাতে সক্ষম না হলে যবান দিয়ে প্রতিবাদ করবে। তাতেও সক্ষম না হলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। আর এটা হল দুর্বল ঈমান’।[১৮]
(ছ) সত্য ও ন্যায়ের অনুসারী।
অনুকূল ও প্রতিকূল সকল পরিস্থিতিতে স্বার্থপরতার ঊর্ধ্বে ওঠে সত্যের অনুসারী হওয়া সুপথগামী যুবকের বৈশিষ্ট্য। কেননা তারা জানে যে, সত্য ও মিথ্যার সংঘাত চিরন্তন। সত্য ও ন্যায়ের অনুসারী যুবারা চিরদিন প্রশংসিত ও সম্মানিত। কেননা তারা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রাম করে। হাযারো বিপদ-আপদ, দুঃখ-যন্ত্রণা, যুলুম-অত্যাচার ও নিপীড়নের মধ্যেও তারা সত্য থেকে পিছপা হয় না। সত্য প্রতিষ্ঠায় তারা থাকে চিরদিন আপোসহীন। বাতিলপন্থীদের উপর্যুপরী মিথ্যা অপবাদ, ষড়যন্ত্র-সংঘাত, গীবত-তোহমত, অপমান-অপদস্ত, মিথ্যাচার ও হিংসাত্মক আক্রমণে হক্বপন্থী যুবকরা থাকে সর্বদা পাহাড়সম ধৈর্যশীল। আল্লাহ্র উপর পূর্ণ ভরসা রেখে আল্লাহ প্রদত্ত চিরন্তন সত্যের পথে অবিচল থাকে চিরস্থায়ী বাসস্থান জান্নাত লাভের আশায়। দুনিয়ার সমস্ত বিপদ-আপদ ও অপমানকে তারা হাসিমুখে বরণ করে নেয়। তাই পৃথিবীর সমস্ত বাতিল শক্তি একত্রিত হলেও তারাই হয় চিরদিন বিজিত। এজন্য সুপথগামী যুবকরা সর্বদা সত্য কথা বলে এবং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করে। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই সত্যপন্থী যুবকদের সুসংবাদ প্রদান করে বলেন,
‘সত্য ন্যায়পরায়ণতার দিকে পথ দেখায় আর ন্যায়পরায়ণতা জান্নাতের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সত্য কথা বলে তাকে আল্লাহর দরবারে সত্যবাদী হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়’।[১৯]
(জ) মুসলিমদের জন্য কল্যাণকামী।
মুসলিমদের জন্য সর্বদা কল্যাণ কামনা করা সুপথগামী যুবকদের বৈশিষ্ট্য। এই শ্রেণীর যুবক সাধারণ মুসিলমদের জন্য কল্যাণ কামনা করে। তারা নিজের জন্য যা পসন্দ করে, তা অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্যও পসন্দ করে। হাদীসে এসেছে, আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ সে নিজের জন্য যা পসন্দ করে তা তার অন্য ভাইয়ের জন্য পসন্দ না করবে’।[২০] সুপথগামী যুবকরা সর্বদা আমিত্ব পরায়ণতাকে দূরে ঠেলে নিজের ধর্ম, সমাজ ও জাতির কল্যাণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। অন্যের কল্যাণের প্রতি তারা লক্ষ্য রাখে সেভাবেই, যেভাবে নিজের কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য রাখে।[২১]
(ঝ) আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী।
আল্লাহ্র বিধান প্রতিপালন ও প্রতিষ্ঠার পথে সংগ্রাম করা এই শ্রেণীর যুবকদের একটি বৈশিষ্ট্য। তারা কেবল আল্লাহ্র জন্যই আল্লাহর পথে একনিষ্ঠভাবে সংগ্রাম করে। লোক দেখানো ও সুনাম অর্জনের আকাঙ্ক্ষা তাদের মনে থাকে না। তারা আপন শৌর্য-বীর্যের উপর নির্ভরশীল হয় না বা আত্মপ্রসাদে ভুগে না। বরং সবসময় আল্লাহর পথে কেবল আল্লাহরই সাহায্যপ্রার্থী হয়ে জিহাদ করে। আল্লাহর পথে সংগ্রাম চালানোর সময় তারা সম্পূর্ণরূপে দ্বীনের গণ্ডীতে আবদ্ধ থাকে। কখনও বাড়াবাড়ি বা শিথিলতা প্রদর্শন করে না। আর ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থে তারা প্রয়োজনমত নিজের বাকশক্তি, অস্ত্রশক্তি, লেখনীশক্তি ও ধন-সম্পদ ব্যবহার করে সংগ্রাম চালায়।[২২]
(ঞ) উত্তম চরিত্রের অধিকারী ও দ্বীনদার।
উত্তম চরিত্রের অধিকারী ও দ্বীনদার সুপথগামী যুবকদের অন্যতম গুণাবলী। তারা দ্বীনের ব্যাপারে সুদৃঢ়, কোমল ও প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী, আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন, স্বচ্ছহৃদয় ও ধৈর্যশীল। তবে এমন বিচক্ষণ যে, তারা কোন সুযোগকে নষ্ট করে না এবং বিবেক ও সংস্কারবোধের উপর আবেগকে প্রাধান্য দেয় না।[২৩]
(ট) নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপনে অভ্যস্ত।
সুপথগামী যুবকরা নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। তারা সচেতন ও নিয়ন্ত্রিত। তারা কাজ করে বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার সাথে ও নীরবে-নিভৃতে। যাদের কাজে দক্ষতা ও উৎকর্ষতার ছাপ বিদ্যমান। তারা তাদের জীবনের অবসর সময়গুলোকে হেলায় অতিবাহিত করে না, বরং ঐ সমস্ত কাজে ব্যস্ত রাখে যে কাজে তাদের নিজের জন্য এবং জাতির জন্য উপকার বয়ে আনে।[২৪] এছাড়া এই যুবকরা নিজেদের ধর্মীয় মূল্যবোধ আচার-আচরণ ও চাল-চলনের হেফাযতকারী হয়। আর নিজেদেরকে কুফরী, নাস্তিকতা, পাপাচার, নাফরমানী, দুশ্চরিত্রতা ও অন্যায় কর্মকা- থেকে সর্বান্তকরণে দূরে রাখে।
বিপথগামী যুবক (شَبَابٌ مُنحَرِفٌٌ)
বিপথগামী তরুণ বা যুবকের পরিচয় দিতে গিয়ে মুহাম্মাদ বিন ছালিহ আল-ঊছায়মীন (১৩৪৭-১৪২১ হি.) বলেন,
‘বিপথগামী যুবক হল এমন যুবক, যার আক্বীদা ভ্রান্ত, আচরণ বেপরোয়া, আত্মম্ভরিতায় নিমগ্ন এবং নোংরা কার্যকলাপে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। সে অন্যের নিকট থেকে সত্য গ্রহণ করতে আগ্রহী নয় এবং নিজেও বাতিল, অগ্রহণযোগ্য কাজ থেকে নিবৃত হতে রাযী নয়। সে আচার-আচরণে স্বার্থপর, যেন সে কেবল দুনিয়ার জন্য সৃষ্ট হয়েছে এবং দুনিয়াও শুধু তার জন্যই সৃষ্টি হয়েছে’।[২৫]
বিপথগামী যুবকের বৈশিষ্ট্য
বিপথগামী যুবক ছিরাতে মুস্তাক্বীম থেকে বিচ্যুত। সে সত্যের প্রতি কখনো নমনীয় হয় না এবং বাতিল প্রতিরোধে কোন প্রচেষ্টাও করে না। তারা সামাজিক নীতি-ঐতিহ্য হতে পথভ্রষ্ট। সে আল্লাহর হক্ব নষ্ট হল কি-না সে ব্যাপারে কোন পরোয়া করে না এবং মানুষের কোন হক্ব নষ্ট হল কি-না সে ব্যাপারেও পরোয়া করে না। সে নিজেই নিজের জন্য অমঙ্গল এবং সমাজের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। নোংরা অপকর্মগুলোর ব্যাপারে সে সর্বদা সোচ্চার। সমাজকে সে এমন এক জীবাণুযুক্ত ও প্রতিকারবিহীন ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির মধ্যে নিক্ষেপ করে, যা থেকে কেবল আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কেউ উদ্ধার করতে পারে না। তারা হল ঐ দলের অন্তর্ভুক্ত, যারা দুনিয়াবী জীবনে তাদের সকল আমল নষ্ট হওয়ার কারণে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, অথচ তারা ধারণা করে যে, তারা সৎকর্ম করেছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,
‘(হে নবী!) আপনি বলুন, আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দেব তাদের সম্পর্কে, যারা কর্মে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত? তারাই সেই লোক যাদের প্রচেষ্টা দুনিয়াবী জীবনে বিভ্রান্ত হয়। যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করেছে’ (সূরা আল-কাহ্ফ : ১০৩-১০৪)।
তথ্যসূত্র :
[১] বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, (ঢাকা : বাংলা একাডেমী, ষোড়শ পুনর্মুদ্রণ, নভেম্বর ২০১২ খ্রি.), পৃ. ৫৪৪।
[২] মুনির বা‘আলাবাকী, আল মাওরিদ (লেবানন : দারুল ‘উলূম আল-মালা‘ঈন, ২০০১ খ্রি.), পৃ. ১০৮৫, আল-মাগরিস, বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকা, অক্টোবর ২০০৮ খ্রি., পৃ. ১৪।
[৩] http://www.unicef.org/adolescence/index_66834.
[৪] লুইস মা‘লূফ, আল-মুনজিদ ফিল লুগাহ ওয়াল আলাম (বৈরূত : দারুল মাশরিক, ১৯৮০ খ্রি.), পৃ. ৩৭১।
[৫] আব্দুল মালিক বিন মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আবূ মানছুর আছ-ছা‘আলাবী, ফিকহুল লুগাহ (বৈরূত : ইহইয়ায়িত তুরাছিল ‘আরাবী, ১ম সংস্করণ, ১৪২২ হি./২০০২ খ্রি.), পৃ. ৭৬।
[৬] ড. সুলায়মান বিন কাসিম বিন মুহাম্মাদ আল-ঈদ, মাকানাতুশ শাবাব ফিল ইসলাম (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘আরাবী, ১৪২৮হি./২০০৭ খ্রি.), পৃ. ৩৪।
[৭] আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনু কাছীর আদ-দিমাস্কী, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ৭ম খণ্ড (দারুত তাইয়েবা, ২য় সংস্করণ, ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.), পৃ. ২৮০।
[৮] নূরুদ্দীন আলী বিন আবূ বকর আল-হায়ছামী, মাযমাঊয যাওয়ায়েদ ওয়া মামবায়ুল ফাওয়াইদ, ১ম খণ্ড (বৈরূত : দারুল ফিকর, ১৪১২ হি.), পৃ. ৩৩৪।
[৯] আহমাদ ইবনু ফারিস, মু‘জামু মাক্বাইসিল লুগাহ (দারুল ফিকর, ১৩৯৯ হি./১৯৭৯ খ্রি.), ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৭৭।
[১০] মুহাম্মাদ বিন ছালিহ আল-ঊছায়মীন, মিন মুশকিলাতিশ শাবাব (রিয়ায : মুওয়াসসাসাতুশ শায়খ মুহাম্মাদ ছালিহ আল-উছায়মীন আল-খায়রিয়া, ১৪২৯ হি.), পৃ. ৮।
[১১] মিন মুশকিলাতিশ শাবাব, পৃ. ৮।
[১২] সহীহ বুখারী, হা/১৫; সহীহ মুসলিম, হা/৪৪; মিশকাত, হা/৭।
[১৩] সহীহ বুখারী, হা/৭২৮০; মিশকাত, হা/১৪৩।
[১৪] মিন মুশকিলাতিশ শাবাব, পৃ. ৮-৯।
[১৫] মিন মুশকিলাতিশ শাবাব, পৃ. ৯-১১।
[১৬] সহীহ মুসলিম, হা/৫৫; আবু দাঊদ, হা/৪৯৪৪; তিরমিযী, হা/১৯২৬; নাসাঈ, হা/৪২৯৭; মিশকাত, হা/৪৯৬৬।
[১৭] মিন মুশকিলাতিশ শাবাব, পৃ. ১১।
[১৮] সহীহ মুসলিম, হা/৪৯; ইবনু মাজাহ, হা/৪০১৩; মিশকাত, হা/৫১৩৭।
[১৯] সহীহ বুখারী, হা/৬০৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/২৬০৭; আবু দাঊদ, হা/৪৯৮৯; তিরমিযী, হ/১৯৭১; মিশকাত, হা/৪৮২৪।
[২০] সহীহ বুখারী, হা/১৩; সহীহ মুসলিম, হা/৪৫; তিরমিযী, হ/২৫১৫; নাসাঈ, হা/৫০১৬; মিশকাত, হা/৪৯৬১।
[২১] মিন মুশকিলাতিশ শাবাব, পৃ. ১৩।
[২২] মিন মুশকিলাতিশ শাবাব, পৃ. ১৩।
[২৩] মিন মুশকিলাতিশ শাবাব, পৃ. ১৩-১৪।
[২৪] মিন মুশকিলাতিশ শাবাব, পৃ. ১৪।
[২৫] মিন মুশকিলাতিশ শাবাব, পৃ. ১৪-১৫।
তরুণ তারাই, যারা ধ্বংস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে নতুন করে গড়তে জানে। তারুণ্য যেমন গড়তে পারে তেমনি মহাপ্রলয়ের ন্যায় ধ্বংসও করতে পারে। তারুণ্য এমন এক শক্তি, যার বিরুদ্ধে কখনো কোন শক্তি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে টিকতে পারে না। মানবজীবনে তারুণ্যের সময়কালকে ‘স্বর্ণযুগ’ বলা হয়। সর্বত্র কেবল তারুণ্যেরই জয়গান উচ্চারিত হয়। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তারুণ্য কেবল প্রতিবাদ করেই ক্ষান্ত হয় না; বরং সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতেও বদ্ধপরিকর। তাই সমাজের সার্বিক সংস্কারে তারুণ্য অদ্বিতীয় ও অফুরন্ত শক্তির আধার।
কিন্তু মানব জীবনের ‘স্বর্ণযুগ’ খ্যাত এই তারুণ্য সময়কালটি আজ অন্ধকারে আচ্ছন্ন। সন্ত্রাসের হিংস্র ছোবলে তারা আজ ক্ষত-বিক্ষত। অন্ধকার রাজ্যের পাপাচার ও অন্যায়ের লালনকারী। সন্ত্রাসীদের উপর্যুপরি সংঘাত, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, খুন-রাহাজানি, হরতাল-অবরোধ, ভাংচুর প্রভৃতি তরুণ সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করেছে। ফলে প্রচণ্ড ঝড়-ঝাঞ্ঝা ও তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ সমুদ্রে বিপদজনক জাহাজের উদ্দেশ্যহীন গতিপথের যে দশা হয়, ঠিক তেমনি জাতির কাণ্ডারি তরুণ সমাজেরও আজ সেই একই দশা। এমতাবস্থায় তরুণ সমাজকে অন্ধকার নিগড় থেকে মুক্তিদানের প্রত্যাশায় নিম্নে কিছু কথা উপস্থাপন করা হল :
তরুণ পরিচিতি
তরুণ হল- নবযৌবন লাভ করেছে এমন। [১] যে সকল ভ্রু-কুটি ও বাঁধার প্রাচীর উপেক্ষা করে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছতে দ্বিধা করে না। ‘তরুণ’-এর আরবী প্রতিশব্দ হল-فتي، شاب। যার অর্থ শক্তি বা উন্নতি। [২] এরূপ ইঙ্গিত পবিত্র কুরআনেও পাওয়া যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ ضَعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْ بَعْدِ ضَعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ ضَعْفًا وَشَيْبَةً يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ وَهُوَ الْعَلِيمُ الْقَدِيرُ
‘আল্লাহ তোমাদের দুর্বলরূপে সৃষ্টি করেন, দুর্বলতার পর শক্তি দেন, শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য, তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ ও সর্ব শক্তিমান’ (সূরা আর-রূম : ৫৪)।
তরুণের বয়সসীমা নির্ধারণে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার মাঝে কিছু মত-পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ‘ইউনিসেফ’-এর শিশু অধিকার সনদে বলা হয়, ১৮ বছরের নীচে শিশু এবং ১৮ বছর থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত হচ্ছে তরুণ। [৩] ‘আল-মুনজিদ’ প্রণেতা বলেন, বালেগ বা স্বপ্নদোষ হওয়ার পর থেকে নিয়ে ত্রিশ বছর পর্যন্ত তরুণ।[৪] ইবনু ছা‘আলাবী বলেন, ৩০ থেকে ৪০ বছরের ব্যক্তি হচ্ছে তরুণ।[৫] শিশু, তরুণ, প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্য এ স্তরগুলো মানব জীবনের চলমান প্রক্রিয়া, যা কারো জন্য থেমে থাকে না। এ চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে যৌবনকালটি শুরু হয় বালেগ বয়সে উপনীত হওয়ার পর থেকে তথা ১৫ বছর থেকে, আর তা শেষ হয় প্রায় ৪০ বছর বয়সে।[৬]
তাছাড়া তাদের বয়সের শেষসীমা ৪০ বছর হওয়াটাই অধিক যুক্তিসঙ্গত। এর ইঙ্গিত কুরআনুল কারীমেও পাওয়া যায়।
আল্লাহ বলেন,
حَتّٰۤی اِذَا بَلَغَ اَشُدَّہٗ وَ بَلَغَ اَرۡبَعِیۡنَ سَنَۃً
‘যখন সে পূর্ণ শক্তিপ্রাপ্ত হল এবং ৪০ বছরে পৌঁছল’ (সূরা আল-আহক্বাফ : ১৫)। এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে, মানুষ ৪০ বছরে পৌঁছলে তরুণের সর্বোচ্চ চূড়ায় উপনীত হয়, তার জ্ঞান পরিপক্ক হয় এবং বোধশক্তি পরিপূর্ণ হয়। [৭] এ কারণে দেখা যায়, আল্লাহ যুগে যুগে যে সকল নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন তাদের অধিকাংশই তরুণ অবস্থায় নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়েছেন।[৮]
ইবনুল ফারিস (৩২৯-৩৯৫ হি./৯৪১-১০০৪ খ্রি.) বলেন,
هُوَالنَّمَاءُ وَالزِّيَادَةُ بِقُوَّةِ جِسْمِهِ وَحَرَارَتِهِ
‘শারীরিক শক্তি ও তেজের মাধ্যমে অধিক শক্তিমত্তাকে তরুণ বলে’। [৯] ‘তরুণ’-এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Young, Youth।
তরুণের পরিচয় দিতে গিয়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার যাহার শক্তি অপরিমাণ, গতিবেগ ঝঞ্ঝার ন্যায়, তেজ নির্মেঘ আষাঢ় মধ্যাহ্নে মার্তণ্ডপ্রায়, বিপুল যাহার আশা, ক্লান্তিহীন যাহার উৎসাহ, বিরাট যাহার সাধ, মৃত্যু যাহার মুঠিতলে’। এখানেই তারুণ্য শক্তির স্বরূপ প্রস্ফুটিত হয়।
তরুণরা স্বপ্ন দেখতে জানে এবং দেখাতেও জানে। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তরুণদের চেয়ে নিপুন শিল্পী আর কে হতে পারে? তাই প্রতিটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার পুরোটা তরুণদেরকে ঘিরেই থাকে। যুগে-যুগে যালেমের যুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তরুণরাই শুধু তাদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলেনি, বরং এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা স্মরণ করে পরবর্তীতে অনেক শাসক অন্যায় করার সাহস পায়নি। সমর লড়াইগুলোর ইতিহাস অধ্যয়ন করলে আজও তরুণের তেজদ্বীপ্ত হুংকার-গর্জন কর্ণকুহরে কম্পন তোলে। বিজ্ঞান, শিক্ষা, চিকিৎসা, তথ্য-প্রযুক্তি সহ এমন সকল ক্ষেত্রে তরুণদের সফলতা সুস্পষ্ট। মূলত এরা সকল যুগে সকল দেশে পাঞ্জেরীর ভূমিকা পালন করেছে। এজন্য জাতীয় কবি কতইনা সুন্দর করে বলেছেন,
‘সকল কালে সকল দেশে
সকল লাভ-লোভকে জয় করেছিল তরুণ।
ওগো বাংলার তরুণের দল!
ওগো আমার আগুন খেলার নির্ভীক ভাইরা!
ঐ দেখ লক্ষ অকালমৃতের লাশ তোমার দুয়ারে দাঁড়াইয়া!
তারা প্রতিকার চায়।
তোমরা ঐ শকুনির দলে নও,
তোমরা আগুনের শিখা, তোমাদের জাতি নাই।
তোমরা আলোর, তোমরা গানের, তোমরা কল্যাণের।
তোমরা বাইরে এস এই দুর্দিনে তাড়াও,
ঐগো ভাগাড়ে পড়া শকুনির দলকে’।
তরুণদের প্রকারভেদ
বিশ্বব্যাপী বর্তমান তরুণ সমাজের ক্রমবর্ধমান ভয়ংকর অবনতি বিশ্লেষণ করে ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম মুহাদ্দিছ ও গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী মুহাম্মাদ বিন ছালিহ আল-উছায়মীন (১৩৪৭-১৪২১ হি.) তরুণ বা যুবকদেরকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা : (১) সুপথগামী যুবক (شَبَابٌ مُسْتَقِيْمٌ) (২) বিপথগামী যুবক (شَبَابٌ مُنْحَرِفٌ) এবং (৩) দিশেহারা যুবক (شَبَابٌ مُتَحَيَّرٌ بَيْنَ بَيْنَ)। [১০] নিম্নে এই তিন প্রকার যুবকের পরিচয় উপস্থাপন করা হল :
সুপথগামী যুবক (شَبَابٌ مُسْتَقِيْمٌ)
সুপথগামী তরুণ বা যুবকের পরিচয় দিতে গিয়ে মুহাম্মাদ বিন ছালিহ আল-ঊছায়মীন (১৩৪৭-১৪২১ হি.) বলেন,
شباب مؤمن بكل ما تحمله هذه الكلمة من معني فهو مؤمن بدينه إيمان محب له و مقتنع به و مغتبط به يري الظفر به غنيمة والحرمان منه خسرانا مبينا
‘সুপথগামী যুবক হল পরিপূর্ণ অর্থে মুমিন যুবক। এরা তারা, যারা তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি সম্পূর্ণরূপে আস্থাশীল, দ্বীনকে ভালবাসে, দ্বীনের প্রতি পরিতুষ্ট থাকে, আনন্দিত হয়, দ্বীনকে গণীমত হিসাবে মনে করে এবং দ্বীন থেকে বঞ্চিত থাকাকে সুস্পষ্ট ক্ষতির কারণ বলে মনে করে’। [১১]
সুপথগামী যুবকের বৈশিষ্ট্য
সুপথগামী যুবকরা দেশের প্রকৃত সম্পদ। এই শ্রেণীর যুবকদের মাধ্যমে সমাজ সংস্কার সম্ভব। নিম্নে সুপথগামী যুবকদের কতিপয় বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হল:
(ক) তাওহীদ ও সুন্নাতের একনিষ্ঠ অনুসারী।
নির্ভেজাল তাওহীদ ও বিশুদ্ধ সুন্নাতের একনিষ্ঠ অনুসারী হওয়া এই শ্রেণীর যুবকদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তারা এমন যুবক, যারা শিরকমুক্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্র ইবাদত করে। নির্ভেজাল তাওহীদী ঝাণ্ডাকে সবার উপরে স্থান দেয়। তাওহীদের পরিচয় দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,
رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهِ هَلْ تَعْلَمُ لَهُ سَمِيًّا
‘তিনি আকাশমণ্ডলী পৃথিবী এবং এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী যা কিছু আছে, সবারই প্রতিপালক; সুতরাং তুমি তাঁরই ইবাদত কর এবং তাঁরই ইবাদতে প্রতিষ্ঠিত থাক। তুমি কি তাঁর সকল নামসম্পন্ন আর কাউকে জান?’ (সূরা মারইয়াম : ৬৫)।
তারা এমন যুবক, যারা কোনকিছু করা বা না করার ক্ষেত্রে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা ও কাজকে নিঃশর্ত ও একনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করে। মহান আল্লাহ বলেন,
اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ
‘তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তোমরা তার অনুসরণ কর এবং আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কোন বন্ধু বা অভিভাবকের অনুসরণ কর না’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ৩)।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
‘সুপথ প্রকাশিত হওয়ার পরেও যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনগণের পথের বিপরীত পথের অনুসরণ করে, তবে সে যেদিকে অনুগামী, আমরা তাকে সেদিকেই প্রত্যাবর্তিত করব ও তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর সেটা কতইনা নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তন স্থল’ (সূরা আন-নিসা : ১১৫)। হাদীসে এসেছে, আনাস ভ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
لَايُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُوْنَ أَحَبَّ إِلَيْه ِمِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ
‘তোমাদের মধ্যে কেউ পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি তোমাদের নিকট তোমাদের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং দুনিয়ার সমস্ত মানুষের চেয়ে সর্বাধিক প্রিয় না হব’। [১২] অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা ভ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
كُلُّ أُمَّتِىْ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِىْ دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِىْ فَقَدْ أَبَى
‘আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে অস্বীকারকারী ছাড়া। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল ফ! কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করবে, সেই অস্বীকারকারী’।[১৩]
(খ) নিয়মিত ফরয ইবাদত সম্পাদনকারী।
সুপথগামী যুবকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল- নিয়মিত ফরয ইবাদত তথা সালাত, সিয়াম, যাকাত ও হজ্জ সম্পাদন করা। তারা এমন যুবক, যারা সাধ্যমত সঠিকভাবে নিয়মিত সালাত কায়েম করে। কারণ তারা সালাতের উপকারিতা, দ্বীনী ও দুনিয়াবী কল্যাণ, ব্যক্তিগত ও সামাজিক ফলাফলের ব্যাপারে পূর্ণ বিশ্বাসী। তারা এমন যুবক, যারা হক্বদারদের প্রতি পরিপূর্ণভাবে যাকাত আদায় করে, শীতে-গ্রীষ্মে সর্বদাই রামাযানের সিয়াম পালন করে এবং স্বীয়-প্রবৃত্তি ও লালসাকে নিবৃত্ত করে এবং সামার্থ্য থাকলে বায়তুল্লায় ফরয হজ্জ সম্পাদন করে।[১৪]
(গ) ঈমানের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী হওয়া।
ঈমানের ছয়টি স্তম্ভের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা সুপথগামী যুবকের বৈশিষ্ট্য। তারা এমন যুবক, যারা আল্লাহ, ফেরেশতাম-লী, আসমানী কিতাবসমূহ, রাসূলগণ, ক্বিয়ামত দিবস এবং তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি পরিপূর্ণভাবে দৃঢ় বিশ্বাস করে থাকে। কোন প্রতিকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতে ঈমানী চেতনার সুদৃঢ় ভিত্তি থেকে তারা কোনক্রমে ছিটকে পড়ে না। ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও সালাতের মাধ্যমে সকল বিপদাপদ মোবাবেলা করে থাকে।[১৫]
(ঘ) দ্বীনকে নছীহত হিসাবে গ্রহণকারী।
তাদের আরো একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল- তারা এমন যুবক, যারা দ্বীন ইসলামকে নছীহত হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। আর সেটা আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূলের জন্য এবং গোটা মুসলিম জাতি ও জনসাধারণের জন্য নছীহত মনে করে। হাদীসে এসেছে, তামীম আদ-দারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
اَلدِّيْنُ النَّصِيْحَةُ قُلْنَا لِمَنْ قَالَ لِلهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُوْلِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِيْنَ وَعَامَّتِهِمْ
‘দ্বীন হল নছীহত। (রাবী বলেন) আমরা বললাম, কাদের জন্য? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য এবং গোটা মুসলিম ও জনসাধারণের জন্য’।[১৬] এই শ্রেণীর যুবকরা মুসলিমদের সাথে দ্ব্যর্থহীন ও খোলামেলা জীবনাচরণে অভ্যস্ত হয়, যেমন আচরণ সে অন্যদের কাছে প্রত্যাশা করে। যেখানে কোন ধোঁকা, শঠতা, প্রতারণা, বক্রতা ও গোপনীয়তার লেশমাত্রও থাকে না[১৭]
(ঙ) ইসলামের শ্রেষ্ঠ দাওয়াত প্রদানকারী।
ইসলাম প্রচারমূলক জীবন ব্যবস্থা। দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে তরুণেরা সমাজ থেকে শিরক-বিদ‘আত দূরীভূত করে থাকে। এটা তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তারা এমন যুবক, যারা জাগ্রত জ্ঞান ও সুদৃঢ় প্রমাণভিত্তিক আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান করে। তারা হিকমাহ ও উত্তম পদ্ধতির মাধ্যমে দাওয়াতী কাজ করে থাকে।
মহান আল্লাহ বলেন,
قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ
‘(হে নবী!) আপনি বলুন, এটাই আমার পথ; আমি ও আমার অনুসারীগণ আল্লাহর পথে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে আহ্বান করে থাকি। আল্লাহ মহান পবিত্র। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সূরা ইউসুফ : ১০৮)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,
.ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ
‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান কর প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে সুন্দর পন্থায বিতর্ক কর’ (সূরা আন-নাহল : ১২৫)।
(চ) সৎ কাজের আদেশ প্রদানকারী ও অসৎ কাজে নিষেধ প্রদানকারী।
এই শ্রেণীর যুবকদের আরো একটি বৈশিষ্ট্য হল- তারা সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজে নিষেধ করে। কারণ তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে, একাজেই উম্মতের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ
‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, যাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য। তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহ্র উপর বিশ্বাস রাখবে’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১১০)। একাজে তারা রাসূলুল্লাহ ফ কর্তৃক প্রদর্শিত পদ্ধতিকে অনুসরণ করে থাকে। অর্থাৎ সমাজ পরিবর্তনের জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতি অনুযায়ী প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। হাদীসে এসেছে,
مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ
‘তোমাদের মধ্যে যখন কেউ কোন অন্যায় হতে দেখে, তখন সে যেন তা হাত দিয়ে প্রতিহত করে। তাতে সক্ষম না হলে যবান দিয়ে প্রতিবাদ করবে। তাতেও সক্ষম না হলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। আর এটা হল দুর্বল ঈমান’।[১৮]
(ছ) সত্য ও ন্যায়ের অনুসারী।
অনুকূল ও প্রতিকূল সকল পরিস্থিতিতে স্বার্থপরতার ঊর্ধ্বে ওঠে সত্যের অনুসারী হওয়া সুপথগামী যুবকের বৈশিষ্ট্য। কেননা তারা জানে যে, সত্য ও মিথ্যার সংঘাত চিরন্তন। সত্য ও ন্যায়ের অনুসারী যুবারা চিরদিন প্রশংসিত ও সম্মানিত। কেননা তারা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রাম করে। হাযারো বিপদ-আপদ, দুঃখ-যন্ত্রণা, যুলুম-অত্যাচার ও নিপীড়নের মধ্যেও তারা সত্য থেকে পিছপা হয় না। সত্য প্রতিষ্ঠায় তারা থাকে চিরদিন আপোসহীন। বাতিলপন্থীদের উপর্যুপরী মিথ্যা অপবাদ, ষড়যন্ত্র-সংঘাত, গীবত-তোহমত, অপমান-অপদস্ত, মিথ্যাচার ও হিংসাত্মক আক্রমণে হক্বপন্থী যুবকরা থাকে সর্বদা পাহাড়সম ধৈর্যশীল। আল্লাহ্র উপর পূর্ণ ভরসা রেখে আল্লাহ প্রদত্ত চিরন্তন সত্যের পথে অবিচল থাকে চিরস্থায়ী বাসস্থান জান্নাত লাভের আশায়। দুনিয়ার সমস্ত বিপদ-আপদ ও অপমানকে তারা হাসিমুখে বরণ করে নেয়। তাই পৃথিবীর সমস্ত বাতিল শক্তি একত্রিত হলেও তারাই হয় চিরদিন বিজিত। এজন্য সুপথগামী যুবকরা সর্বদা সত্য কথা বলে এবং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করে। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই সত্যপন্থী যুবকদের সুসংবাদ প্রদান করে বলেন,
إِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِى إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِى إِلَى الْجَنَّةِ وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَصْدُقُ حَتَّى يَكُونَ صِدِّيقًا
‘সত্য ন্যায়পরায়ণতার দিকে পথ দেখায় আর ন্যায়পরায়ণতা জান্নাতের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সত্য কথা বলে তাকে আল্লাহর দরবারে সত্যবাদী হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়’।[১৯]
(জ) মুসলিমদের জন্য কল্যাণকামী।
মুসলিমদের জন্য সর্বদা কল্যাণ কামনা করা সুপথগামী যুবকদের বৈশিষ্ট্য। এই শ্রেণীর যুবক সাধারণ মুসিলমদের জন্য কল্যাণ কামনা করে। তারা নিজের জন্য যা পসন্দ করে, তা অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্যও পসন্দ করে। হাদীসে এসেছে, আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لِأَخِيْهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ
‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ সে নিজের জন্য যা পসন্দ করে তা তার অন্য ভাইয়ের জন্য পসন্দ না করবে’।[২০] সুপথগামী যুবকরা সর্বদা আমিত্ব পরায়ণতাকে দূরে ঠেলে নিজের ধর্ম, সমাজ ও জাতির কল্যাণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। অন্যের কল্যাণের প্রতি তারা লক্ষ্য রাখে সেভাবেই, যেভাবে নিজের কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য রাখে।[২১]
(ঝ) আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী।
আল্লাহ্র বিধান প্রতিপালন ও প্রতিষ্ঠার পথে সংগ্রাম করা এই শ্রেণীর যুবকদের একটি বৈশিষ্ট্য। তারা কেবল আল্লাহ্র জন্যই আল্লাহর পথে একনিষ্ঠভাবে সংগ্রাম করে। লোক দেখানো ও সুনাম অর্জনের আকাঙ্ক্ষা তাদের মনে থাকে না। তারা আপন শৌর্য-বীর্যের উপর নির্ভরশীল হয় না বা আত্মপ্রসাদে ভুগে না। বরং সবসময় আল্লাহর পথে কেবল আল্লাহরই সাহায্যপ্রার্থী হয়ে জিহাদ করে। আল্লাহর পথে সংগ্রাম চালানোর সময় তারা সম্পূর্ণরূপে দ্বীনের গণ্ডীতে আবদ্ধ থাকে। কখনও বাড়াবাড়ি বা শিথিলতা প্রদর্শন করে না। আর ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থে তারা প্রয়োজনমত নিজের বাকশক্তি, অস্ত্রশক্তি, লেখনীশক্তি ও ধন-সম্পদ ব্যবহার করে সংগ্রাম চালায়।[২২]
(ঞ) উত্তম চরিত্রের অধিকারী ও দ্বীনদার।
উত্তম চরিত্রের অধিকারী ও দ্বীনদার সুপথগামী যুবকদের অন্যতম গুণাবলী। তারা দ্বীনের ব্যাপারে সুদৃঢ়, কোমল ও প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী, আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন, স্বচ্ছহৃদয় ও ধৈর্যশীল। তবে এমন বিচক্ষণ যে, তারা কোন সুযোগকে নষ্ট করে না এবং বিবেক ও সংস্কারবোধের উপর আবেগকে প্রাধান্য দেয় না।[২৩]
(ট) নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপনে অভ্যস্ত।
সুপথগামী যুবকরা নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। তারা সচেতন ও নিয়ন্ত্রিত। তারা কাজ করে বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার সাথে ও নীরবে-নিভৃতে। যাদের কাজে দক্ষতা ও উৎকর্ষতার ছাপ বিদ্যমান। তারা তাদের জীবনের অবসর সময়গুলোকে হেলায় অতিবাহিত করে না, বরং ঐ সমস্ত কাজে ব্যস্ত রাখে যে কাজে তাদের নিজের জন্য এবং জাতির জন্য উপকার বয়ে আনে।[২৪] এছাড়া এই যুবকরা নিজেদের ধর্মীয় মূল্যবোধ আচার-আচরণ ও চাল-চলনের হেফাযতকারী হয়। আর নিজেদেরকে কুফরী, নাস্তিকতা, পাপাচার, নাফরমানী, দুশ্চরিত্রতা ও অন্যায় কর্মকা- থেকে সর্বান্তকরণে দূরে রাখে।
বিপথগামী যুবক (شَبَابٌ مُنحَرِفٌٌ)
বিপথগামী তরুণ বা যুবকের পরিচয় দিতে গিয়ে মুহাম্মাদ বিন ছালিহ আল-ঊছায়মীন (১৩৪৭-১৪২১ হি.) বলেন,
الشباب منحرف في عقيدته متهور في سلوكه مغرور بنفسه منغمر في رذائله لا يقبل الحق من غيره ولا يمتنع عن باطل في نفسه أناني في تصرفه كأنما خلق للدنيا وخلقت الدنيا له وحده. شباب عنيد لا يلين للحق ولا يقلع عن الباطل
‘বিপথগামী যুবক হল এমন যুবক, যার আক্বীদা ভ্রান্ত, আচরণ বেপরোয়া, আত্মম্ভরিতায় নিমগ্ন এবং নোংরা কার্যকলাপে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। সে অন্যের নিকট থেকে সত্য গ্রহণ করতে আগ্রহী নয় এবং নিজেও বাতিল, অগ্রহণযোগ্য কাজ থেকে নিবৃত হতে রাযী নয়। সে আচার-আচরণে স্বার্থপর, যেন সে কেবল দুনিয়ার জন্য সৃষ্ট হয়েছে এবং দুনিয়াও শুধু তার জন্যই সৃষ্টি হয়েছে’।[২৫]
বিপথগামী যুবকের বৈশিষ্ট্য
বিপথগামী যুবক ছিরাতে মুস্তাক্বীম থেকে বিচ্যুত। সে সত্যের প্রতি কখনো নমনীয় হয় না এবং বাতিল প্রতিরোধে কোন প্রচেষ্টাও করে না। তারা সামাজিক নীতি-ঐতিহ্য হতে পথভ্রষ্ট। সে আল্লাহর হক্ব নষ্ট হল কি-না সে ব্যাপারে কোন পরোয়া করে না এবং মানুষের কোন হক্ব নষ্ট হল কি-না সে ব্যাপারেও পরোয়া করে না। সে নিজেই নিজের জন্য অমঙ্গল এবং সমাজের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। নোংরা অপকর্মগুলোর ব্যাপারে সে সর্বদা সোচ্চার। সমাজকে সে এমন এক জীবাণুযুক্ত ও প্রতিকারবিহীন ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির মধ্যে নিক্ষেপ করে, যা থেকে কেবল আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কেউ উদ্ধার করতে পারে না। তারা হল ঐ দলের অন্তর্ভুক্ত, যারা দুনিয়াবী জীবনে তাদের সকল আমল নষ্ট হওয়ার কারণে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, অথচ তারা ধারণা করে যে, তারা সৎকর্ম করেছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا- الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا
‘(হে নবী!) আপনি বলুন, আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দেব তাদের সম্পর্কে, যারা কর্মে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত? তারাই সেই লোক যাদের প্রচেষ্টা দুনিয়াবী জীবনে বিভ্রান্ত হয়। যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করেছে’ (সূরা আল-কাহ্ফ : ১০৩-১০৪)।
তথ্যসূত্র :
[১] বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, (ঢাকা : বাংলা একাডেমী, ষোড়শ পুনর্মুদ্রণ, নভেম্বর ২০১২ খ্রি.), পৃ. ৫৪৪।
[২] মুনির বা‘আলাবাকী, আল মাওরিদ (লেবানন : দারুল ‘উলূম আল-মালা‘ঈন, ২০০১ খ্রি.), পৃ. ১০৮৫, আল-মাগরিস, বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকা, অক্টোবর ২০০৮ খ্রি., পৃ. ১৪।
[৩] http://www.unicef.org/adolescence/index_66834.
[৪] লুইস মা‘লূফ, আল-মুনজিদ ফিল লুগাহ ওয়াল আলাম (বৈরূত : দারুল মাশরিক, ১৯৮০ খ্রি.), পৃ. ৩৭১।
[৫] আব্দুল মালিক বিন মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আবূ মানছুর আছ-ছা‘আলাবী, ফিকহুল লুগাহ (বৈরূত : ইহইয়ায়িত তুরাছিল ‘আরাবী, ১ম সংস্করণ, ১৪২২ হি./২০০২ খ্রি.), পৃ. ৭৬।
[৬] ড. সুলায়মান বিন কাসিম বিন মুহাম্মাদ আল-ঈদ, মাকানাতুশ শাবাব ফিল ইসলাম (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘আরাবী, ১৪২৮হি./২০০৭ খ্রি.), পৃ. ৩৪।
[৭] আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনু কাছীর আদ-দিমাস্কী, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ৭ম খণ্ড (দারুত তাইয়েবা, ২য় সংস্করণ, ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.), পৃ. ২৮০।
[৮] নূরুদ্দীন আলী বিন আবূ বকর আল-হায়ছামী, মাযমাঊয যাওয়ায়েদ ওয়া মামবায়ুল ফাওয়াইদ, ১ম খণ্ড (বৈরূত : দারুল ফিকর, ১৪১২ হি.), পৃ. ৩৩৪।
[৯] আহমাদ ইবনু ফারিস, মু‘জামু মাক্বাইসিল লুগাহ (দারুল ফিকর, ১৩৯৯ হি./১৯৭৯ খ্রি.), ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৭৭।
[১০] মুহাম্মাদ বিন ছালিহ আল-ঊছায়মীন, মিন মুশকিলাতিশ শাবাব (রিয়ায : মুওয়াসসাসাতুশ শায়খ মুহাম্মাদ ছালিহ আল-উছায়মীন আল-খায়রিয়া, ১৪২৯ হি.), পৃ. ৮।
[১১] মিন মুশকিলাতিশ শাবাব, পৃ. ৮।
[১২] সহীহ বুখারী, হা/১৫; সহীহ মুসলিম, হা/৪৪; মিশকাত, হা/৭।
[১৩] সহীহ বুখারী, হা/৭২৮০; মিশকাত, হা/১৪৩।
[১৪] মিন মুশকিলাতিশ শাবাব, পৃ. ৮-৯।
[১৫] মিন মুশকিলাতিশ শাবাব, পৃ. ৯-১১।
[১৬] সহীহ মুসলিম, হা/৫৫; আবু দাঊদ, হা/৪৯৪৪; তিরমিযী, হা/১৯২৬; নাসাঈ, হা/৪২৯৭; মিশকাত, হা/৪৯৬৬।
[১৭] মিন মুশকিলাতিশ শাবাব, পৃ. ১১।
[১৮] সহীহ মুসলিম, হা/৪৯; ইবনু মাজাহ, হা/৪০১৩; মিশকাত, হা/৫১৩৭।
[১৯] সহীহ বুখারী, হা/৬০৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/২৬০৭; আবু দাঊদ, হা/৪৯৮৯; তিরমিযী, হ/১৯৭১; মিশকাত, হা/৪৮২৪।
[২০] সহীহ বুখারী, হা/১৩; সহীহ মুসলিম, হা/৪৫; তিরমিযী, হ/২৫১৫; নাসাঈ, হা/৫০১৬; মিশকাত, হা/৪৯৬১।
[২১] মিন মুশকিলাতিশ শাবাব, পৃ. ১৩।
[২২] মিন মুশকিলাতিশ শাবাব, পৃ. ১৩।
[২৩] মিন মুশকিলাতিশ শাবাব, পৃ. ১৩-১৪।
[২৪] মিন মুশকিলাতিশ শাবাব, পৃ. ১৪।
[২৫] মিন মুশকিলাতিশ শাবাব, পৃ. ১৪-১৫।
মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
Last edited: