১। তিনি ১৩ রাকআত নামায পড়তেন। প্রথমে হাল্কা করে ২ রাকআত দিয়ে শুরু করতেন। প্রত্যেক ২ রাকআতে সালাম ফিরতেন। প্রত্যেক ২ রাকআতকে পূর্বের অপেক্ষা হাল্কা করতেন। এইভাবে ১০ রাকআত পড়ার পর পরিশেষে ৩ রাকআত বিত্র পড়তেন।[1]
২। তিনি কোন রাতে ১৩ রাকআত নামায পড়তেন। তার মধ্যে প্রত্যেক ২ রাকআতে সালাম ফিরে ৮ রাকআত নামায পড়তেন এবং সবশেষে এক সালামে ৫ রাকআত বিত্র পড়তেন। আর এই ৫ রাকআত বিত্রের মাঝে কোথাও বসতেন না এবং সালামও ফিরতেন না।[2]
৩। তিনি কোন রাতে ১১ রাকআত নামায পড়তেন। প্রত্যেক ২ রাকআতে সালাম ফিরে ১০ রাকআত পড়তেন এবং পরিশেষে ১ রাকআত বিত্র পড়তেন।[3]
৪। কোন রাতে তিনি ১১ রাকআত নামায পড়তেন। এক সালামে ৪ রাকআত, অতঃপর আর এক সালামে ৪ রাকআত। তারপর ৩ রাকআত বিত্র পড়তেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘তিনি রমাযানে এবং অন্যান্য মাসেও ১১ রাকআত অপেক্ষা বেশী নামায পড়তেন না। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) ৪ রাকআত নামায পড়তেন। সুতরাং তুমি সেই নামাযের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করো না। (অর্থাৎ অত্যন্ত সুন্দর ও দীর্ঘ হত।) অতঃপর তিনি ৪ রাকআত নামায পড়তেন। সুতরাং তুমি সেই নামাযের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করো না। অতঃপর তিনি ৩ রাকআত (বিত্র) নামায পড়তেন।’[4]
কিন্তু কোন কোন আহলে ইল্ম বলেন যে, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) ৪ রাকআত নামায পড়তেন।’ আয়েশার এই কথার অর্থ এই নয় যে, তিনি ৪ রাকআত নামায একটানা একই সালামে পড়তেন। বরং তাঁর উদ্দেশ্য হল, তিনি ৪ রাকআত ২ সালামে পড়ে একটু আরাম করে নেওয়া তথা ক½vন্তি দূর করে নেওয়ার উদ্দেশ্যে বসতেন। অতঃপর উঠে আবার ৪ রাকআত নামায পড়তেন। যেমন আয়েশার অন্য বর্ণনায় এ কথার বিশদ ব্যাখ্যা রয়েছে; তিনি বলেন, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) রাত্রে ১১ রাকআত নামায পড়তেন; এর প্রত্যেক ২ রাকআতে সালাম ফিরতেন।’[5]
পক্ষান্তরে যদি ধরে নেওয়া যায় যে, আয়েশা (রাঃ) বিস্তারিত বর্ণনা দেননি, তবুও মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর উক্তি, ‘‘রাতের নামায ২ রাকআত ২ রাকআত’’ উক্ত কর্মের ব্যাখ্যা দেয়। আর বিদিত যে, রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর বিস্তারিত উক্তি তাঁর অস্পষ্ট কর্মের ব্যাখ্যা প্রদান করে।
বলা বাহুল্য, এই ভিত্তির উপর বুনিয়াদ করে অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম বলেন, এক সালামে একটানা ৪ রাকআত নামায পড়া মকরূহ অথবা হারাম।[6]
৫। কোন রাতে তিনি ১১ রাকআত নামায পড়তেন। তার মধ্যে ৮ রাকআত একটানা পড়তেন। কোথাও না বসে অষ্টম রাকআত শেষ করে বসতেন। তাতে তিনি তাশাহহুদ ও দরূদ পড়ে সালাম না ফিরে উঠে যেতেন এবং এক রাকআত পড়ে নিয়মিত সালাম ফিরতেন। সবশেষে বসে বসে ২ রাকআত নামায পড়তেন।[7]
৬। কোন রাত্রে তিনি ৯ রাকআত নামায পড়তেন। তার মধ্যে ৬ রাকআত একটানা পড়তেন। অতঃপর বসে তাশাহহুদ ও দরূদ পাঠ করে সালাম না ফিরে উঠে যেতেন। তারপর এক রাকআত পড়ে নিয়মিত সালাম ফিরতেন। পরিশেষে বসে বসে ২ রাকআত নামায পড়তেন। (ঐ)
৩ রাকআত বিত্র পড়লে ২ নিয়মে পড়া যায়; (ক) ২ রাকআত পড়ে সালাম ফিরে পুনরায় উঠে আর এক রাকআত পড়তে হয়। অথবা (খ) ৩ রাকআত একটানা পড়ে শেষ রাকআতে বসে তাশাহহুদ-দরূদ পড়ে সালাম ফিরতে হয়। এ ক্ষেত্রে মাগরেবের নামাযের মত ২টি তাশাহহুদ পড়া বৈধ নয়। কারণ, বিত্র নামাযকে মাগরেবের নামাযের মত করে পড়তে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সুতরাং তেমন করে পড়া কমপক্ষে মকরূহ।[8]
প্রকাশ থাকে যে, ইমামের জন্য উত্তম হল, ২ রাকআত করে তারাবীহর নামায আদায় করা। কারণ, এই নিয়ম নামাযীদের পক্ষে সহজ। তাছাড়া জামাআতের কোন লোক হয়তো বা নিজের প্রয়োজনে ২, ৪, অথবা ৬ রাকআত পর বের হয়ে যাবে। কিন্তু ইমাম ৪, ৫, ৭ বা ৯ রাকআত একটানা পড়লে সে ফেঁসে যাবে। দেহ থাকবে মসজিদে, অথচ তার মন থাকবে বাথরুমে অথবা জরুরী কাজে। পক্ষান্তরে ২ রাকআত করে পড়লে এমনটি হয় না। অবশ্য সুন্নাহ বয়ান করার উদ্দেশ্যে যদি কোন কোন সময় ঐরূপ একটানা নামায পড়ে, তাহলে তা দোষাবহ নয়।[9]
উক্ত সংখ্যা চাইতে কম সংখ্যক রাকআত তারাবীহ পড়াও বৈধ। যেহেতু এ ব্যাপারে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর কর্ম ও নির্দেশ প্রমাণিত। তাঁর কর্মের ব্যাপারে আব্দুল্লাহ বিন আবূ কাইস বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, ‘আল্লাহর রসূল কত রাকআত বিত্র পড়তেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘তিনি কখনো ৪ রাকআত পড়ে ৩ রাকআত বিত্র পড়তেন, কখনো ৬ রাকআত পড়ে ৩ রাকআত বিত্র পড়তেন, কখনো ১০ রাকআত পড়ে ৩ রাকআত বিত্র পড়তেন। অবশ্য তিনি ৭ রাকআত অপেক্ষা কম এবং ১৩ রাকআত অপেক্ষা বেশী বিত্র পড়তেন না।’[10]
আর এ ব্যপারে তিনি নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘‘বিত্র হল প্রত্যেক মুসলিমের জন্য হক বা সত্য। সুতরাং যে ৫ রাকআত বিত্র পড়তে পছন্দ করে সে তাই পড়ুক, যে ৩ রাকআত পড়তে পছন্দ করে সে তাই পড়ুক এবং যে এক রাকআত পড়তে পছন্দ করে সে তাই পড়ুক।’’[11]
[1] (মুসলিম প্রমুখ সালাতুত তারাবীহ আলবানী ৮৬পৃঃ দ্রঃ)
[2] (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম প্রমুখ ঐ ৮৯পৃঃ)
[3] (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, আবূ দাঊদ, প্রমুখ, ঐ ৯০পৃঃ)
[4] (বুখারী ১১৪৭, মুসলিম ৭৩৮নং)
[5] (মুসলিম ৭৩৬নং)
[6] (স্বালাতুল লাইলি অত্-তারাবীহ, ৪-৬পৃঃ, আশ্শারহুল মুমতে’ ৪/১৩, ৬৬-৬৭, ইবনে বায ফাসিঃ মুসনিদ ৮৭পৃঃ)
[7] (আহমাদ, মুসনাদ ৬/৫৩-৫৪, ১৬৮, মুসলিম, আবূ দাঊদ, নাসাঈ, বাইহাকী ৩০/৩০, সালাতুত তারাবীহ আলবানী ৯২পৃঃ)
[8] (সালাতুল লাইলি অত্-তারাবীহ, ইবনে বায ৭পৃঃ, সাতাঃ আলবানী ৯৮পৃঃ, বিস্তারিত দ্রঃ স্বালাতে মুবাশ্শির ২/২৯০)
[9] (সালাতুল লাইলি অত্-তারাবীহ, ইবনে বায ৭পৃঃ)
[10] (আহমাদ, মুসনাদ ৬/১৪৯, আবূ দাঊদ, প্রমুখ, দ্রঃ সালাতুত তারাবীহ আলবানী ৮৩-৮৪পৃঃ)
[11] (আবূ দাঊদ ১৪২২, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, দারাকুত্বনী, সুনান, হাকেম, মুস্তাদ্রাক ১/৩০২, বাইহাকী ৩/২৭, মিশকাতুল মাসাবীহ ১২৬৫নং)
শাইখ আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী