সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

সালাত তারাবীহর নামাযের পদ্ধতি

Abu Abdullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Uploader
Salafi User
Threads
745
Comments
997
Solutions
19
Reactions
10,179
Credits
6,268
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর রাতের নামায সাধারণভাবে একই নিয়ম-পদ্ধতির অনুসারী ছিল না। বরং তাঁর এই নামায ছিল একাধিক ধরনের একাধিক নিয়মের। নিম্নে সংক্ষেপে সেই সব নিয়মাবলী মুসলিমের অবগতির জন্য উল্লেখ করা হলঃ-

১। তিনি ১৩ রাকআত নামায পড়তেন। প্রথমে হাল্কা করে ২ রাকআত দিয়ে শুরু করতেন। প্রত্যেক ২ রাকআতে সালাম ফিরতেন। প্রত্যেক ২ রাকআতকে পূর্বের অপেক্ষা হাল্কা করতেন। এইভাবে ১০ রাকআত পড়ার পর পরিশেষে ৩ রাকআত বিত্র পড়তেন।[1]

২। তিনি কোন রাতে ১৩ রাকআত নামায পড়তেন। তার মধ্যে প্রত্যেক ২ রাকআতে সালাম ফিরে ৮ রাকআত নামায পড়তেন এবং সবশেষে এক সালামে ৫ রাকআত বিত্র পড়তেন। আর এই ৫ রাকআত বিত্রের মাঝে কোথাও বসতেন না এবং সালামও ফিরতেন না।[2]

৩। তিনি কোন রাতে ১১ রাকআত নামায পড়তেন। প্রত্যেক ২ রাকআতে সালাম ফিরে ১০ রাকআত পড়তেন এবং পরিশেষে ১ রাকআত বিত্র পড়তেন।[3]

৪। কোন রাতে তিনি ১১ রাকআত নামায পড়তেন। এক সালামে ৪ রাকআত, অতঃপর আর এক সালামে ৪ রাকআত। তারপর ৩ রাকআত বিত্র পড়তেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘তিনি রমাযানে এবং অন্যান্য মাসেও ১১ রাকআত অপেক্ষা বেশী নামায পড়তেন না। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) ৪ রাকআত নামায পড়তেন। সুতরাং তুমি সেই নামাযের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করো না। (অর্থাৎ অত্যন্ত সুন্দর ও দীর্ঘ হত।) অতঃপর তিনি ৪ রাকআত নামায পড়তেন। সুতরাং তুমি সেই নামাযের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করো না। অতঃপর তিনি ৩ রাকআত (বিত্র) নামায পড়তেন।’[4]

কিন্তু কোন কোন আহলে ইল্ম বলেন যে, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) ৪ রাকআত নামায পড়তেন।’ আয়েশার এই কথার অর্থ এই নয় যে, তিনি ৪ রাকআত নামায একটানা একই সালামে পড়তেন। বরং তাঁর উদ্দেশ্য হল, তিনি ৪ রাকআত ২ সালামে পড়ে একটু আরাম করে নেওয়া তথা ক½vন্তি দূর করে নেওয়ার উদ্দেশ্যে বসতেন। অতঃপর উঠে আবার ৪ রাকআত নামায পড়তেন। যেমন আয়েশার অন্য বর্ণনায় এ কথার বিশদ ব্যাখ্যা রয়েছে; তিনি বলেন, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) রাত্রে ১১ রাকআত নামায পড়তেন; এর প্রত্যেক ২ রাকআতে সালাম ফিরতেন।’[5]

পক্ষান্তরে যদি ধরে নেওয়া যায় যে, আয়েশা (রাঃ) বিস্তারিত বর্ণনা দেননি, তবুও মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর উক্তি, ‘‘রাতের নামায ২ রাকআত ২ রাকআত’’ উক্ত কর্মের ব্যাখ্যা দেয়। আর বিদিত যে, রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর বিস্তারিত উক্তি তাঁর অস্পষ্ট কর্মের ব্যাখ্যা প্রদান করে।

বলা বাহুল্য, এই ভিত্তির উপর বুনিয়াদ করে অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম বলেন, এক সালামে একটানা ৪ রাকআত নামায পড়া মকরূহ অথবা হারাম।[6]

৫। কোন রাতে তিনি ১১ রাকআত নামায পড়তেন। তার মধ্যে ৮ রাকআত একটানা পড়তেন। কোথাও না বসে অষ্টম রাকআত শেষ করে বসতেন। তাতে তিনি তাশাহহুদ ও দরূদ পড়ে সালাম না ফিরে উঠে যেতেন এবং এক রাকআত পড়ে নিয়মিত সালাম ফিরতেন। সবশেষে বসে বসে ২ রাকআত নামায পড়তেন।[7]

৬। কোন রাত্রে তিনি ৯ রাকআত নামায পড়তেন। তার মধ্যে ৬ রাকআত একটানা পড়তেন। অতঃপর বসে তাশাহহুদ ও দরূদ পাঠ করে সালাম না ফিরে উঠে যেতেন। তারপর এক রাকআত পড়ে নিয়মিত সালাম ফিরতেন। পরিশেষে বসে বসে ২ রাকআত নামায পড়তেন। (ঐ)

৩ রাকআত বিত্র পড়লে ২ নিয়মে পড়া যায়; (ক) ২ রাকআত পড়ে সালাম ফিরে পুনরায় উঠে আর এক রাকআত পড়তে হয়। অথবা (খ) ৩ রাকআত একটানা পড়ে শেষ রাকআতে বসে তাশাহহুদ-দরূদ পড়ে সালাম ফিরতে হয়। এ ক্ষেত্রে মাগরেবের নামাযের মত ২টি তাশাহহুদ পড়া বৈধ নয়। কারণ, বিত্র নামাযকে মাগরেবের নামাযের মত করে পড়তে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সুতরাং তেমন করে পড়া কমপক্ষে মকরূহ।[8]

প্রকাশ থাকে যে, ইমামের জন্য উত্তম হল, ২ রাকআত করে তারাবীহর নামায আদায় করা। কারণ, এই নিয়ম নামাযীদের পক্ষে সহজ। তাছাড়া জামাআতের কোন লোক হয়তো বা নিজের প্রয়োজনে ২, ৪, অথবা ৬ রাকআত পর বের হয়ে যাবে। কিন্তু ইমাম ৪, ৫, ৭ বা ৯ রাকআত একটানা পড়লে সে ফেঁসে যাবে। দেহ থাকবে মসজিদে, অথচ তার মন থাকবে বাথরুমে অথবা জরুরী কাজে। পক্ষান্তরে ২ রাকআত করে পড়লে এমনটি হয় না। অবশ্য সুন্নাহ বয়ান করার উদ্দেশ্যে যদি কোন কোন সময় ঐরূপ একটানা নামায পড়ে, তাহলে তা দোষাবহ নয়।[9]

উক্ত সংখ্যা চাইতে কম সংখ্যক রাকআত তারাবীহ পড়াও বৈধ। যেহেতু এ ব্যাপারে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর কর্ম ও নির্দেশ প্রমাণিত। তাঁর কর্মের ব্যাপারে আব্দুল্লাহ বিন আবূ কাইস বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, ‘আল্লাহর রসূল কত রাকআত বিত্র পড়তেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘তিনি কখনো ৪ রাকআত পড়ে ৩ রাকআত বিত্র পড়তেন, কখনো ৬ রাকআত পড়ে ৩ রাকআত বিত্র পড়তেন, কখনো ১০ রাকআত পড়ে ৩ রাকআত বিত্র পড়তেন। অবশ্য তিনি ৭ রাকআত অপেক্ষা কম এবং ১৩ রাকআত অপেক্ষা বেশী বিত্র পড়তেন না।’[10]

আর এ ব্যপারে তিনি নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘‘বিত্র হল প্রত্যেক মুসলিমের জন্য হক বা সত্য। সুতরাং যে ৫ রাকআত বিত্র পড়তে পছন্দ করে সে তাই পড়ুক, যে ৩ রাকআত পড়তে পছন্দ করে সে তাই পড়ুক এবং যে এক রাকআত পড়তে পছন্দ করে সে তাই পড়ুক।’’[11]


[1] (মুসলিম প্রমুখ সালাতুত তারাবীহ আলবানী ৮৬পৃঃ দ্রঃ)
[2] (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম প্রমুখ ঐ ৮৯পৃঃ)
[3] (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, আবূ দাঊদ, প্রমুখ, ঐ ৯০পৃঃ)
[4] (বুখারী ১১৪৭, মুসলিম ৭৩৮নং)
[5] (মুসলিম ৭৩৬নং)
[6] (স্বালাতুল লাইলি অত্-তারাবীহ, ৪-৬পৃঃ, আশ্শারহুল মুমতে’ ৪/১৩, ৬৬-৬৭, ইবনে বায ফাসিঃ মুসনিদ ৮৭পৃঃ)
[7] (আহমাদ, মুসনাদ ৬/৫৩-৫৪, ১৬৮, মুসলিম, আবূ দাঊদ, নাসাঈ, বাইহাকী ৩০/৩০, সালাতুত তারাবীহ আলবানী ৯২পৃঃ)
[8] (সালাতুল লাইলি অত্-তারাবীহ, ইবনে বায ৭পৃঃ, সাতাঃ আলবানী ৯৮পৃঃ, বিস্তারিত দ্রঃ স্বালাতে মুবাশ্শির ২/২৯০)
[9] (সালাতুল লাইলি অত্-তারাবীহ, ইবনে বায ৭পৃঃ)
[10] (আহমাদ, মুসনাদ ৬/১৪৯, আবূ দাঊদ, প্রমুখ, দ্রঃ সালাতুত তারাবীহ আলবানী ৮৩-৮৪পৃঃ)
[11] (আবূ দাঊদ ১৪২২, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, দারাকুত্বনী, সুনান, হাকেম, মুস্তাদ্রাক ১/৩০২, বাইহাকী ৩/২৭, মিশকাতুল মাসাবীহ ১২৬৫নং)


রমাযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল
শাইখ আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী​
 
COMMENTS ARE BELOW
Top