সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

দাওয়াহ তাক্বলীদ (দলীলবিহীন অনুসরণ) ও ইত্তেবার (দলীলভিত্তিক অনুসরণ) মধ্যে পার্থক্য

abdulazizulhakimgrameen

Altruistic

Uploader
Salafi User
Threads
378
Comments
447
Solutions
1
Reactions
8,610
Credits
21,983
তাক্বলীদ (দলীলবিহীন অনুসরণ) ও ইত্তেবার (দলীলভিত্তিক অনুসরণ) মধ্যে পার্থক্য

শানকীত্বী (রাহি.) বলেন,[1] জেনে রাখুন যে, তাক্বলীদ ও ইত্তেবার মধ্যে পার্থক্য জানা জরুরী। ইত্তেবার স্থলে কোন অবস্থাতেই তাক্বলীদ করা বৈধ নয়। এর বিস্তারিত আলোচনা এই যে, যে সব বিধানের ব্যাপারে কুরআন, হাদীস অথবা মুসলমানদের প্রকাশ্য ইজমার দলীল পাওয়া যায় সে সব ক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই তাক্বলীদ বৈধ নয়। কেননা যে ইজতিহাদ দলীল বিরোধী তা বাতিল হিসেবে গণ্য। আর ইজতিহাদের ক্ষেত্রে ছাড়া তাক্বলীদ করা যাবে না। কেননা কুরআন ও হাদীসের দলীলসমূহ প্রত্যেক মুজতাহিদের উপর কর্তৃত্ব দান করে । সুতরাং কোন মুজতাহিদদের উচিৎ নয় এ বিধানের বিরোধিতা করা।

আর কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা বিরোধী কোন তাক্বলীদ বৈধ নয়। কেন না তা হক্ব বিরোধী আদর্শ। সুতরাং যে ক্ষেত্রে দলীল প্রতিষ্ঠিত, সেখানে শুধু ইত্তেবাই যথেষ্ট। যে ক্ষেত্রে কুরআন সুন্নাহর দলীল পাওয়া যায় এবং তা পরস্পর বিরোধী হয় না, সে ক্ষেত্রে ইজতিহাদ ও তাক্বলীদ করা যাবে না। বিদ্বানদের নিকট তাক্বলীদ ও ইত্তেবার মধ্যে পার্থক্য একটি সুপরিচিত বিষয়। এর সঠিক অর্থের ব্যাপারে বিদ্বানদের নিকট কোন মতভেদ নেই।

ইতিপূর্বে আমরা যে খুয়াইয মিনদাদ এর উক্তি তুলে ধরেছি, যা ইবনে আব্দিল বার তার থেকে তার জামেতে সংকলন করে বলেন:
শারঈ পরিভাষায় তাক্বলীদ হলো এমন মতামতের দিকে প্রত্যাবর্তন করা, যার পেছনে মতামতদাতার কোন দলীল নেই । শরীয়াতে এরূপ বিষয় একেবারেই নিষিদ্ধ। আর যার পেছনে দলীল আছে তাকে ইত্তেবা বলা হয়।

তিনি তার কিতাবের অন্য জায়গায় বলেন, তুমি যদি কারও মতামতকে দলীল ছাড়াই অনুসরণ করাকে আবশ্যক মনে কর তাহলে তুমি মুক্বালিস্নদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলে। আর আল্লাহ্র দ্বীনের ক্ষেত্রে তাক্বলীদ করা বৈধ নয়। আর যদি দলীলের মাধ্যমে কারও কথার অনুসরণ করা তোমার জন্য আবশ্যক হয়, তাহলে তুমি তার ইত্তেবা করলে। দ্বীনের ক্ষেত্রে ইত্তেবা বৈধ। কিন্তু তাক্বলীদ বৈধ নয়।

ইলামুল মুওয়াক্বিয়ীন গ্রন্থে ইবনুল কাইয়্যিম (রাহি.) বলেন: ইমাম আহমাদ (রাহি.) তাক্বলীদ ও ইত্তেবার মধ্যে পার্থক্য করেছেন।
অতঃপর আবূ দাউদ বলেন, আমি ইমাম আহমাদ (রাহি.) কে বলতে শুনেছি যে, ইত্তেবা হলো, কোন ব্যক্তি মহানাবী (ﷺ) ও তার সাহাবাগণের পক্ষ থেকে যা এসেছে তার অনুসরণ করবে। এরপর তাবেঈদের অনুসরণ করা তার জন্য ইচ্ছাধীন। আর এখান থেকেই এ উদ্দেশ্যের পরিসমাপ্তি ঘটবে।

তিনি (আল্লাহ্ তাঁকে ক্ষমা করুন) এর কায়দা উল্লেখ করে বলেন, ওহী ভিত্তিক আমল ইত্তেবারই অন্তর্ভুক্ত। এটা তাক্বলীদ নয়। এটি একটি অকাট্য বিষয়।

অনেক আয়াতে ওহীর প্রতি আমল করাকে ইত্তেবা নামে অবহিত করা হয়েছে। এর প্রমাণে নিমেণর আয়াতগুলো পেশ করা হলো- আল্লাহ্ বলেন:

﴿قُلْ إِنَّمَا أَتَّبِعُ مَا يُوحَى إِلَيَّ مِنْ رَبِّي هَذَا بَصَائِرُ مِنْ رَبِّكُمْ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ﴾​

বল, আমিতো তারই অনুসরণ করি, যা আমার নিকট আমার রবের পক্ষ থেকে ওহীরূপে প্রেরণ করা হয়। এটি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ। আর তা হিদায়াত ও রহমত সে কওমের জন্য যারা ঈমান আনে (সূরা : আরাফ-২০৩)।

আল্লাহ্ বলেন:

﴿اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ قَلِيلًا مَا تَذَكَّرُونَ﴾​

তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ হতে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর (আরাফ-৩)।

আল্লাহ্ বলেন:

﴿وَاتَّبِعُوا أَحْسَنَ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ﴾​

আর অনুসরণ কর উত্তম যা নাযিল করা হয়েছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে (যুমার-৫৫)।

আল্লাহ্ বলেন:

﴿قُلْ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أُبَدِّلَهُ مِنْ تِلْقَاءِ نَفْسِي إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَيَّ إِنِّي أَخَافُ إِنْ عَصَيْتُ رَبِّي عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ﴾​

বল, আমার নিজের পক্ষ থেকে এতে কোন পরিবর্তনের অধিকার নেই। আমিতো শুধু আমার প্রতি অবতীর্ণ ওহীর অনুসরণ করি। নিশ্চয় আমি যদি রবের অবাধ্য হই তবে ভয় করি কঠিন দিবসের আযাবের (সূরা : ইউনূস-১৫)।

আল্লাহ্ বলেন:

﴿وَهَذَا كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوهُ وَاتَّقُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ﴾​

আর এটি কিতাব- যা আমি নাযিল করেছি- বরকতময়। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং তাক্বওয়া অবলম্বন কর, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও (সূরা : আনআম-১৫৫)।

আল্লাহ্ বলেন:

﴿اتَّبِعْ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ﴾​

তুমি অনুসরণ কর তার, তোমার প্রতি যা ওহী প্রেরণ করা হয়েছে তোমার রবের পক্ষ থেকে। তিনি ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই । আর মুশরিকদের থেকে বিমুখ থাক (সূরা : আনআম-১০৬)।

আল্লাহ্ বলেন:

﴿قُلْ مَا كُنْتُ بِدْعًا مِنَ الرُّسُلِ وَمَا أَدْرِي مَا يُفْعَلُ بِي وَلَا بِكُمْ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَيَّ وَمَا أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ مُبِينٌ﴾​

বল, আমি রাসূলদের মধ্যে নতুন নই। আর আমি জানি না আমার ও তোমাদের ব্যাপারে কী করা হবে? আমার প্রতি যা ওহী করা হয়, আমি কেবল তারই অনুসরণ করি। আর আমি একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র। (সূরা : আহকাফ-৯)। এরূপ আরও অনেক সুপরিচিত আয়াত রয়েছে।

সুতরাং ওহী ভিত্তিক আমল করাকেই ইত্তেবা বলা হয়। যা উল্লেখিত আয়াতগুলি দ্বারাই প্রমাণিত।
উল্লেখ্য যে, নিঃসন্দেহে ওহীর অনুসরণের জন্য বহু আয়াতে নির্দেশ রয়েছে। ওহী বিরোধী কোন ইজতিহাদ কোন ভাবেই বিশুদ্ধ নয় এবং ওহী বিরোধী কোন তাক্বলীদও কোন ক্ষেত্রে বৈধ নয়।

সুতরাং এ থেকে ইত্তেবা ও তাক্বলীদের মাঝে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে গেল। আরও স্পষ্ট হলো যে, ইত্তেবার ক্ষত্র সমূহে তাক্বলীদের কোন সুযোগ নেই।
অতএব পরস্পর বিরোধমুক্ত সুস্পষ্ট বিশুদ্ধ ওহীর দলীল পাওয়া গেলে অবশ্যই ইজতিহাদ ও তাক্বলীদ করা যাবে না। কেননা একথা স্পষ্ট যে, ওহীর অনুসরণ করা ও তার প্রতি আত্মসমর্পণ করা প্রত্যেকের উপর ফরয। সে যে কেউ হোক না কেন।

এ থেকে বুঝা যায় যে, উসূলবীদগণ ইজতিহাদের যে শর্তগুলো আরোপ করেছেন তা কেবল মাত্র ইজতিহাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আর ইত্তেবার স্থানে ইজতিহাদের কোন সুযোগ নেই ।

সুতরাং ইত্তেবা ও ইজতিহাদের মাঝে শাব্দিক ও প্রায়োগিক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ইজতিহাদের শর্তসমূহকে ইত্তেবার শর্তের মধ্যে প্রয়োগ করা বিভ্রান্তির নামান্তর। যা পূর্বের আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট।

মোট কথা ওহীর ইত্তেবার জন্য কেবল মাত্র জ্ঞান অর্জন করাই শর্ত। যে জ্ঞান অনুসারে ওহীর ইত্তেবাকারী আমল করবে। এক্ষেত্রে তাকে হাদীস ও কুরআনের জ্ঞানার্জন করা ও তদনুযায়ী আমল করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। কুরআন ও হাদীসে জ্ঞানার্জনের পর ইজতিহাদের সকল শর্ত অর্জনের জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই।

সুতরাং প্রত্যেক শারঈ দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য অবশ্যক হলো, কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জ্ঞানার্জন করা। সম্পূর্ণভাবে অর্জিত জ্ঞানের উপর আমল করা। যে ধারাবাহিকতার উপর অটল ছিলেন এ উম্মাতের কল্যাণের সাক্ষ্যপ্রাপ্ত প্রথম শতাব্দীর অনুসারীগণ।


নোটঃ [1] ‘আযওয়াউল বায়ান’ (৭/৫৪৭-৫৫০)।


গ্রন্থঃ সহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ
লেখকঃ আবূ মালিক কামাল বিন আস-সাইয়্যিদ সালিম
অধ্যায়ঃ ভূমিকা এবং জরুরী জ্ঞাতব্য​
 
COMMENTS ARE BELOW
Top