- Joined
- Jan 27, 2024
- Threads
- 22
- Comments
- 55
- Reactions
- 252
- Thread Author
- #1
» তাওহিদ: তাওহিদ অর্থ কোনো জিনিসকে এক করে দেওয়া।
যেমন: ৫টা ফলকে মেসিনে জুস বানালে এক হয়ে যায়।
» পরিভাষায় তাওহিদ হলো আল্লাহকে একক ও অদ্বিতীয় বলে মানা বা মেনে নেওয়া
১.তাঁর কাজে
২.তাঁর ইবাদতে
৩.তাঁর নাম ও গুণাবলিতে
» মেনে না নিলে সে মুশরিক
» তাওহিদ মর্যাদা ও ফজিলত ৩টি
১. তাওহিদ ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে: তওহিদ জান্নাত যাওয়ার মধ্যাম ও জাহান্নামে থেকে মুক্তির মধ্যমক। তাওহিদ ছাড়া কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে না। তাওহীদবাদী ব্যক্তিই শুধুমাত্র জান্নাতে যেতে পারবে।
“নিশ্চয় কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করে দিয়েছেন এবং তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালেমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।” [সূরা আল-মা'ইদাহ ৫:৭২]
উদাহরণ, সমাজে অনেক মানুষ দাবি করে তারা মুসলিম, তারা মুশরিক না। কিন্তু তাদের কাজে কর্মে শিরক স্পষ্ট। বাংলাদেশ, ভারতে, পাকিস্তান বা বিভিন্ন দেশে মুসলিম নামের মানুষ কবরে যায়, মাজারে যায় নজর, নিয়াজ, মানত, কুরবানি, দু'আ, আহ্বান, ডাক, কান্না, রুকু, সিজদাহ করে থাকে। এগুলোর নামই তো শিরক।
“আল্লাহর জন্য যেটা করণীয় ছিল সেটা অন্যের জন্য করছে সেটাই শিরক।”
শিরক করলে জান্নাতে যেতে পারবে না, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তবে যারা আল্লাহকে একক ও অদ্বিতীয় বলে মেনে নিয়েছে,
১.তাঁর কাজে
২.তাঁর ইবাদতে
৩.তাঁর নাম ও গুণাবলিতে
তারাই হবে জান্নাতি।
২. তাওহিদের জন্য আল্লাহ ব্যক্তির সৎ আমল কবুল করবেন, শিরক করলে তার সৎ আমলের কোনো মূল্য থাকবে না: তাহিদবাদী না হলে আল্লাহ ব্যক্তির সৎ আমল কবুল করবেন না। শিরককারী, মুশরিক ব্যক্তির সৎ আমল আল্লাহ কবুল করবেন না। ব্যক্তি আমল কবুল কবুল হওয়ার জন্য তাওহীদবাদী হতে হবে।
উদাহরণ একজন শিরককারী ব্যক্তি বন্যাগ্রস্ত ব্যক্তিদেরকে বা বিপদগ্রস্ত বা ভূমিকম্পগ্রস্ত সাহায্য করে, গরিবদের সাহায্য-সহযোগিতা করে। এটা ভালো কাজ, সৎ কাজ। এই ভালো কাজের নেকি কি ঐ শিরককারী ব্যক্তি পাবে? উত্তর না। আল্লাহ যেহেতু তার সৎ আমল কবুল করবেন না। বিধায় সে নেকিও পাবে না।
তাওহিদবাদী যদি সৎ আমল করে, যেকোনো সৎ আমল, আল্লাহু রব্বুল আ'লামীন তার সৎ আমল কবুল করবেন। অর্থাৎ আল্লাহ শুধু তাওহিদবাদী ব্যাক্তিরই সৎ আমল কবুল করবেন।
৩. তাওহিদের জন্য আল্লাহ ব্যক্তি অন্য গুণাহ মাফ করবেন: তাওহিদ ব্যক্তি পাপ কে ক্ষমা করাবে, মুছে দেয় মিটিয়ে দেয়। যদি ব্যক্তির কাছে তাওহিদ থাকে, আল্লাহর সাথে যদি সে শিরক না করে, অন্য গুণাহ যদি সে করে, আল্লাহু রব্বুল আ'লামীন তার এ তাওহীদের বরকতে তার গুণাহ মাফ করে দেবেন। কিন্তু যদি তাওহীদবাদী না হয়, আল্লাহর সাথে শিরক করে আবার অন্য গুণাহও করে তাহলে আল্লাহ তার শিরকও ক্ষমা করবেন এবং অন্য গুণাহও তার ক্ষমা যোগ্য হবে না।
শাইখ তাওহিদের ব্যাখ্যায় ৩টি কথা বলেছেন। আল্লাহকে একক ও অদ্বিতীয় বলে মেনে নেওয়া
১.তাঁর কাজে
২.তাঁর ইবাদতে
৩.তাঁর নাম ও গুণাবলিতে
এই ৩ বিষয়ই হলো তাওহিদের ৩টি রুকন (স্তম্ভ/ভিত্তি)।
তাওহিদ কয় ভাগে বিভক্ত বা তাওহিদের কয়টি প্রকার প্রকার? তাওহিদ প্রকারভেদ হলো ৩টি।
১. তাওহিদে রুবুবিয়্যত বা রুবুবিয়্যাহ
২. তাওহিদে উলুহিয়্যত বা উলুহিয়্যাহ
৩. তাওহিদে আসমা ওয়াস সিফাত
» ১. তাওহিদে রুবুবিয়্যত বা রুবুবিয়্যাহ: মানে মালিকানা, কোনো ১টা জিনিসের মিলিকানা আমার এটার নাম হলো রুবুবিয়্যত।
যেমন: এই বাড়িটার মালিকানা আমার। এর মানে এই বাড়িটার সম্পূর্ণ মালিক হলাম আমি। এখানে মালিকানায় অন্য কেউ শরীক নেই বা অন্য কারো অংশ নেই।
আল্লাহ রব্বুল আ'লামীনকে একক ও অদ্বিতীয় হিসেবে মানবো তার মালিকানায়, এ মালিকানা কেউ শরীক নেই। এই মালিকানার নাম হলো তাওহিদে রুবুবিয়্যত। জগৎ, আকাশ, পাতাল, বাতাস, চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, মানুষ, জিন, মালাইকা, টাকা-পয়াসা, সম্পাদ সবকিছু মালিকানা আল্লাহর।
আল্লাহকে তাঁর মালিকানায় একক ও অদ্বিতীয় বলে মেনে নেওয়া হলো রুবুবিয়্যত।
»» রুবুবিয়্যত শব্দের ব্যাখ্যা: আল্লাহকে একক ও অদ্বিতীয় বলে মেনে নেওয়া তাঁর ঐ সবকাজে কর্মে যেই কাজ তিঁনি ব্যতীত অন্য কেউ করতে সক্ষম নয়।
বিধায় ঐ কাজে তিনি একক। দ্বিতীয় কেউ নাই যে ঐ কাজটা করতে পারবে।
উদাহরণ:
• বৃষ্টি বর্ষণ করা: আল্লাহ ব্যতীত কেউ বৃষ্টি দিতে সক্ষম? না, বৃষ্টি তিঁনি ব্যতীত কেউ দিতে সক্ষম নয়।
যদি তিঁনি ব্যতীত কেউ বৃষ্টি দিতে পারতো, বৃষ্টি বর্ষণ করতে পারতো তাহলে আমরা অনাবৃষ্টিতে ভুক্ততাম না এবং অতিবৃষ্টিতেও ভুক্ততাম না। অতিবৃষ্টি হলে বৃষ্টি থামায় দিতো? অথবা অনাবৃষ্টিতে হলে তাড়াহুড়া করে বৃষ্টি'র ব্যবস্থা করে দিতো?
বৃষ্টি বর্ষণ করা এই কাজ আল্লাহর। আল্লাহ তাঁর কাজে একক ও অদ্বিতীয়। তিঁনি ব্যতীত এই কাজ বিশ্বের কেউ করতে সক্ষম নয়।
• সন্তান দান করা বা সন্তান দেওয়া: এই কাজটা কার? আল্লাহর কাজ।
যদি আল্লাহ ব্যতীত কেউ সম্তান দিতে পারতো তাহলে বিশ্বের কেউ নিঃসন্তান থাকতো না। বাংলাদেশ, ভারতে বুঝি কেউ নিঃসন্তান নাই? আপনি আপনার গ্রামে, জেলায় বা শহরে দেখুন। আপনি অনেক পাবেন যে অনেক চিকিৎসা করার পরেও নিঃসন্তান।
সন্তান দেওয়ার কাজটা হলো আল্লাহর। কেউ দিতে পারবে না, চিকিৎসক, কবিরাজ, পীর, দরবেশ, কেউই দিতে পারবে না। আল্লাহ রব্বুল আ'লামীন বিনা বিয়েতেও সন্তান দান করেন। মার'ইয়াম (আ.) কে ইসা (আ.) দান করেছিলেন বিয়ে হয়নি। আর আমাদের অনেকে বিয়ে করার পরেও নিঃসন্তান থাকি। এ কাজটা হলো আল্লাহর। বিধায় আমাদেরকে রুবুবিয়্যত মানার জন্য যে বিষয়টা মানতে হবে সেটা হলো যে আল্লাহ তারঁ কাজে একক ও অদ্বিতীয়। তারঁ কাজ তিনি ছাড়া আর কেউ করতে পারবে না। এটার নাম রুবুবিয়্যত।
• চন্দ্র ও সূর্যকে নিয়ন্ত্রণ করা: বিশ্বের কেউ কি এরকম শক্তি, বুদ্ধি বের করতে পারবে যে সূর্যকে নিজের আয়ত্তে আনতে বা নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে? এটা কি কেউ করতে পারবে, সূর্য আধা ঘন্টা দেরি করে উঠবে বা আধা ঘণ্টা পরে ডুববে? চন্দ্রকে বলতে পারবে তোমার পূর্ণ আলো ১৫ তম দিনে দিয়ে থাকো, পূর্ণিমা ১৫ তম দিনে হয়। আজকে না হয় ৭তম দিনেই পূর্ণ আলো দাও? কেউ পারবে না।
চন্দ্র ও সূর্যকে নিয়ন্ত্রণ করা একমাত্র আল্লাহ রব্বুল আ'লামীনের কাজ।
• রাত ও দিনকে চক্রমান অবস্থায় রাখা: দিন আসে রাত যায়, রাত আসে দিন যায়। দিন আর রাতের এই পরিবর্তন, এটা কার হাতে? বিশ্বের কোনো ব্যক্তি বা শক্তি কি এমন আছে যে এই কাজটাকে একটু আগে পিছে করে দিতে পারবে? ১২ ঘন্টার দিনকে ১৩ ঘন্টা করতে পারবে? ২৪ ঘন্টার দিন-রাতকে ২৩ ঘন্টা করে দিবে? সম্ভব নয়। এই কাজ আল্লাহর।
এই কাজগুলো আল্লাহ ব্যতীত কেউ করতে পারবে না। যেহেতু পারবে না সেহেতু এই কাজগুলোতে আল্লাহ কে একক বলে মেনে নেওয়ার নামই হলো রুবুবিয়্যত।
• ইবরাহীম (আ.) এর সাথে নমরুদের তর্ক-বিতর্ক:
- নমরুদ দাবি করে ছিল আমিই তো বর, মালিকানা তো আমার হাতে, আমি যেটা ইচ্ছা সেটাই করতে পারি।
» ইবরাহীম (আ.) বললেন, আমি তো তোমাকে বর বলে মানি না।
- নমরুদ বললো, ইবরাহীম তুমি আমাকে বর বলে মানো না কেনো? আমি তো সব করতে পারি। এমন কোন জিনিস আছে সেটা আমি করতে পারি না আর তোমার রব করতে পারে ইবরাহীম?
» তখন ইবরাহীম (আ.) বললেন যে, আমার বর, যার হাতে আছে জীবন ও মরণ। কাউকে জীবন দেন আবার কাউকে মরণ দেন এটা হলো আমার রবের কাজ।
- তখন নমরুদ বললো, এই কাজ তো আমিও করতে পারি, জীবন-মরণ তো আমারও হাতে আছে। তাহলে তুমি আমাকে বর মানবে না কেনো?
» তখন ইবরাহীম (আ.) বললেন যে, নমরুদ যদি তুমি রব হও, জীবন-মরণ যদি তোমার হাতে থাকে তাহলে দেখাও দেখি।
- জেলখানা বা কয়েদখানার ২ ব্যক্তিকে নমরুদ নিয়ে আসার নির্দেশ দিল। এরপর ঐ ২জন ব্যক্তির ১জনকে ফাঁসি দেওয়া আদেশ দিলো বললো, 'একে ফাঁসি দাও' ওকে ফাঁসি দিয়ে মেরে ফেলা হলো। আর আরেকজনকে ২য় ব্যক্তিকে জেল থেকে বের করে দিল বা রেহাই বা মুক্ত করে দিল। এবার নমরুদ বলছে দেখতে পেলে ইবরাহীম জীবন আর মরণ আমার হাতে? আমি একজনকে মেরে দিলাম আর আরেকজনকে জীবন দিয়ে দিলাম। একজনকে মেরে দিলাম যেহেতু মরণ আমার হাতে আর একজনকে জীবন দিলাম যেহেতু জীবন আমার হাতে। ওকে মুক্ত করে দিলাম।
» ইবরাহীম (আ.) বললেন যে, আসলে জীবন মরণ আল্লাহর হাতেই, আমার হাতে এটা কথাটা তুমি বুঝতেই পারোনি। এই জীবন মরণের কথা আমি বলি নাই। আচ্ছা যেহেতু তুমি এই কাজ করে দেখিয়ে দিলে তোমার বুদ্ধিতে তোমার যুক্তিতে যে এটাই জীবন মরণ। তাহলে আমি আমার রবের আরেকটা কাজের কথা বলি তুমি সেটা করে দেখাও। আমার বরের আরেকটা কাজ হলো তিঁনি প্রতিদিন সকালে সূর্যকে পূর্ব আকাশে উদিত করেন। আর সন্ধ্যা বেলায় পশ্চিম আকাশে ডুবিয়ে দেন। আমি চাইছি, যদি তুমি বর হও, তাহলে এই সূর্যটাকে পাল্টিয়ে দাও। সূর্যটা তুমি পশ্চিম আকাশে উঠাও আর পূর্ব আকাশে ডুবাও। আমার রব যেহেতু এটাকে পূর্ব আকাশে উঠান আর পশ্চিম আকাশে ডুবান।
আল্লাহর কাজ কি সে করতে পারে? সে কখনোই এ কাজ করতে পারে না। সে তো লা-জাবাব হয়ে গেল এবং সে ইবরাহীম (আ.) এর কাছে পরাজিত হলো।
»» মুসলিম ভাইয়েরা, এতগুলো কথা আপনাদের এজন্যই বললাম যে, রুবুবিয়্যত এটা তাওহিদের একটা অংশ এবং একটা প্রকার। আল্লাহকে তাঁর কাজে কর্মে একক ও অদ্বিতীয় বলে মেনে নেওয়া, যে কাজ তিঁনি ব্যতীত অন্য কেউ করতে পারগ এবং সক্ষম নয়। যেমন: সূর্য-চন্দ্র, রাত-দিন ইত্যাদি।
আরেকটি প্রসঙ্গ যে প্রসঙ্গ নিয়ে আগামী সপ্তাহে উপস্থাপন করবো আপনাদের সামনে। প্রসঙ্গটি হচ্ছে আল্লাহ তাঁর কাজে এক, একক ও অদ্বিতীয়, কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর কাজ তিঁনি করেন, তাঁর কাজে অন্য কেউ অংশীদার নেই। কিন্তু বিষয় হলো আল্লাহ কি আছেন? আল্লাহর অস্তিত্ব কি আছে?
কাজ তো করেন, তাহলে কাজ করলে তাঁর অস্তিত্ব নিশ্চয়ই আছে। তাহলে আল্লাহ রব্বুল আ'লামীন কি আছেন? তাঁর অস্তিত্ব কি আছে? তাঁকে কি আপনি আর আমি অথবা বিশ্বের কোনো মানুষ দেখতে পারে, অথবা তাঁকে যেহেতু দেখা যায় না তাহলে তাঁর অস্তিত্বকে আমরা মানবোই বা কি করে?
এই বিভিন্ন পয়েন্ট, সারসংক্ষেপ কথা হলো আল্লাহ কি আছে? এবং এই প্রশ্নের উত্তর আমরা আগামী সপ্তাহে নিবো এবং দিবো ইনশাআল্লাহ।
আমাদের আলোচনার ৪টি পয়েন্ট,
১. তাওহিদ শব্দের শাব্দিক অর্থ
২. তাওহিদ শব্দের পারিভাষিক অর্থ
৩. তাওহিদের ৩টি মর্যাদা ও ফজিলত
৪. তাওহিদের ৩টি প্রকারে মধ্যে তাওহিদ রুবিয়য়াত
Ustaz: Zakir Husain (hafizahullah)
Rabwah Bangla 65/1,
Islamhouse.com
Written by: Md. Sakib
যেমন: ৫টা ফলকে মেসিনে জুস বানালে এক হয়ে যায়।
» পরিভাষায় তাওহিদ হলো আল্লাহকে একক ও অদ্বিতীয় বলে মানা বা মেনে নেওয়া
১.তাঁর কাজে
২.তাঁর ইবাদতে
৩.তাঁর নাম ও গুণাবলিতে
» মেনে না নিলে সে মুশরিক
» তাওহিদ মর্যাদা ও ফজিলত ৩টি
১. তাওহিদ ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে: তওহিদ জান্নাত যাওয়ার মধ্যাম ও জাহান্নামে থেকে মুক্তির মধ্যমক। তাওহিদ ছাড়া কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে না। তাওহীদবাদী ব্যক্তিই শুধুমাত্র জান্নাতে যেতে পারবে।
“নিশ্চয় কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করে দিয়েছেন এবং তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালেমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।” [সূরা আল-মা'ইদাহ ৫:৭২]
উদাহরণ, সমাজে অনেক মানুষ দাবি করে তারা মুসলিম, তারা মুশরিক না। কিন্তু তাদের কাজে কর্মে শিরক স্পষ্ট। বাংলাদেশ, ভারতে, পাকিস্তান বা বিভিন্ন দেশে মুসলিম নামের মানুষ কবরে যায়, মাজারে যায় নজর, নিয়াজ, মানত, কুরবানি, দু'আ, আহ্বান, ডাক, কান্না, রুকু, সিজদাহ করে থাকে। এগুলোর নামই তো শিরক।
“আল্লাহর জন্য যেটা করণীয় ছিল সেটা অন্যের জন্য করছে সেটাই শিরক।”
শিরক করলে জান্নাতে যেতে পারবে না, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তবে যারা আল্লাহকে একক ও অদ্বিতীয় বলে মেনে নিয়েছে,
১.তাঁর কাজে
২.তাঁর ইবাদতে
৩.তাঁর নাম ও গুণাবলিতে
তারাই হবে জান্নাতি।
২. তাওহিদের জন্য আল্লাহ ব্যক্তির সৎ আমল কবুল করবেন, শিরক করলে তার সৎ আমলের কোনো মূল্য থাকবে না: তাহিদবাদী না হলে আল্লাহ ব্যক্তির সৎ আমল কবুল করবেন না। শিরককারী, মুশরিক ব্যক্তির সৎ আমল আল্লাহ কবুল করবেন না। ব্যক্তি আমল কবুল কবুল হওয়ার জন্য তাওহীদবাদী হতে হবে।
উদাহরণ একজন শিরককারী ব্যক্তি বন্যাগ্রস্ত ব্যক্তিদেরকে বা বিপদগ্রস্ত বা ভূমিকম্পগ্রস্ত সাহায্য করে, গরিবদের সাহায্য-সহযোগিতা করে। এটা ভালো কাজ, সৎ কাজ। এই ভালো কাজের নেকি কি ঐ শিরককারী ব্যক্তি পাবে? উত্তর না। আল্লাহ যেহেতু তার সৎ আমল কবুল করবেন না। বিধায় সে নেকিও পাবে না।
তাওহিদবাদী যদি সৎ আমল করে, যেকোনো সৎ আমল, আল্লাহু রব্বুল আ'লামীন তার সৎ আমল কবুল করবেন। অর্থাৎ আল্লাহ শুধু তাওহিদবাদী ব্যাক্তিরই সৎ আমল কবুল করবেন।
৩. তাওহিদের জন্য আল্লাহ ব্যক্তি অন্য গুণাহ মাফ করবেন: তাওহিদ ব্যক্তি পাপ কে ক্ষমা করাবে, মুছে দেয় মিটিয়ে দেয়। যদি ব্যক্তির কাছে তাওহিদ থাকে, আল্লাহর সাথে যদি সে শিরক না করে, অন্য গুণাহ যদি সে করে, আল্লাহু রব্বুল আ'লামীন তার এ তাওহীদের বরকতে তার গুণাহ মাফ করে দেবেন। কিন্তু যদি তাওহীদবাদী না হয়, আল্লাহর সাথে শিরক করে আবার অন্য গুণাহও করে তাহলে আল্লাহ তার শিরকও ক্ষমা করবেন এবং অন্য গুণাহও তার ক্ষমা যোগ্য হবে না।
শাইখ তাওহিদের ব্যাখ্যায় ৩টি কথা বলেছেন। আল্লাহকে একক ও অদ্বিতীয় বলে মেনে নেওয়া
১.তাঁর কাজে
২.তাঁর ইবাদতে
৩.তাঁর নাম ও গুণাবলিতে
এই ৩ বিষয়ই হলো তাওহিদের ৩টি রুকন (স্তম্ভ/ভিত্তি)।
তাওহিদ কয় ভাগে বিভক্ত বা তাওহিদের কয়টি প্রকার প্রকার? তাওহিদ প্রকারভেদ হলো ৩টি।
১. তাওহিদে রুবুবিয়্যত বা রুবুবিয়্যাহ
২. তাওহিদে উলুহিয়্যত বা উলুহিয়্যাহ
৩. তাওহিদে আসমা ওয়াস সিফাত
» ১. তাওহিদে রুবুবিয়্যত বা রুবুবিয়্যাহ: মানে মালিকানা, কোনো ১টা জিনিসের মিলিকানা আমার এটার নাম হলো রুবুবিয়্যত।
যেমন: এই বাড়িটার মালিকানা আমার। এর মানে এই বাড়িটার সম্পূর্ণ মালিক হলাম আমি। এখানে মালিকানায় অন্য কেউ শরীক নেই বা অন্য কারো অংশ নেই।
আল্লাহ রব্বুল আ'লামীনকে একক ও অদ্বিতীয় হিসেবে মানবো তার মালিকানায়, এ মালিকানা কেউ শরীক নেই। এই মালিকানার নাম হলো তাওহিদে রুবুবিয়্যত। জগৎ, আকাশ, পাতাল, বাতাস, চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, মানুষ, জিন, মালাইকা, টাকা-পয়াসা, সম্পাদ সবকিছু মালিকানা আল্লাহর।
আল্লাহকে তাঁর মালিকানায় একক ও অদ্বিতীয় বলে মেনে নেওয়া হলো রুবুবিয়্যত।
»» রুবুবিয়্যত শব্দের ব্যাখ্যা: আল্লাহকে একক ও অদ্বিতীয় বলে মেনে নেওয়া তাঁর ঐ সবকাজে কর্মে যেই কাজ তিঁনি ব্যতীত অন্য কেউ করতে সক্ষম নয়।
বিধায় ঐ কাজে তিনি একক। দ্বিতীয় কেউ নাই যে ঐ কাজটা করতে পারবে।
উদাহরণ:
• বৃষ্টি বর্ষণ করা: আল্লাহ ব্যতীত কেউ বৃষ্টি দিতে সক্ষম? না, বৃষ্টি তিঁনি ব্যতীত কেউ দিতে সক্ষম নয়।
যদি তিঁনি ব্যতীত কেউ বৃষ্টি দিতে পারতো, বৃষ্টি বর্ষণ করতে পারতো তাহলে আমরা অনাবৃষ্টিতে ভুক্ততাম না এবং অতিবৃষ্টিতেও ভুক্ততাম না। অতিবৃষ্টি হলে বৃষ্টি থামায় দিতো? অথবা অনাবৃষ্টিতে হলে তাড়াহুড়া করে বৃষ্টি'র ব্যবস্থা করে দিতো?
বৃষ্টি বর্ষণ করা এই কাজ আল্লাহর। আল্লাহ তাঁর কাজে একক ও অদ্বিতীয়। তিঁনি ব্যতীত এই কাজ বিশ্বের কেউ করতে সক্ষম নয়।
• সন্তান দান করা বা সন্তান দেওয়া: এই কাজটা কার? আল্লাহর কাজ।
যদি আল্লাহ ব্যতীত কেউ সম্তান দিতে পারতো তাহলে বিশ্বের কেউ নিঃসন্তান থাকতো না। বাংলাদেশ, ভারতে বুঝি কেউ নিঃসন্তান নাই? আপনি আপনার গ্রামে, জেলায় বা শহরে দেখুন। আপনি অনেক পাবেন যে অনেক চিকিৎসা করার পরেও নিঃসন্তান।
সন্তান দেওয়ার কাজটা হলো আল্লাহর। কেউ দিতে পারবে না, চিকিৎসক, কবিরাজ, পীর, দরবেশ, কেউই দিতে পারবে না। আল্লাহ রব্বুল আ'লামীন বিনা বিয়েতেও সন্তান দান করেন। মার'ইয়াম (আ.) কে ইসা (আ.) দান করেছিলেন বিয়ে হয়নি। আর আমাদের অনেকে বিয়ে করার পরেও নিঃসন্তান থাকি। এ কাজটা হলো আল্লাহর। বিধায় আমাদেরকে রুবুবিয়্যত মানার জন্য যে বিষয়টা মানতে হবে সেটা হলো যে আল্লাহ তারঁ কাজে একক ও অদ্বিতীয়। তারঁ কাজ তিনি ছাড়া আর কেউ করতে পারবে না। এটার নাম রুবুবিয়্যত।
• চন্দ্র ও সূর্যকে নিয়ন্ত্রণ করা: বিশ্বের কেউ কি এরকম শক্তি, বুদ্ধি বের করতে পারবে যে সূর্যকে নিজের আয়ত্তে আনতে বা নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে? এটা কি কেউ করতে পারবে, সূর্য আধা ঘন্টা দেরি করে উঠবে বা আধা ঘণ্টা পরে ডুববে? চন্দ্রকে বলতে পারবে তোমার পূর্ণ আলো ১৫ তম দিনে দিয়ে থাকো, পূর্ণিমা ১৫ তম দিনে হয়। আজকে না হয় ৭তম দিনেই পূর্ণ আলো দাও? কেউ পারবে না।
চন্দ্র ও সূর্যকে নিয়ন্ত্রণ করা একমাত্র আল্লাহ রব্বুল আ'লামীনের কাজ।
• রাত ও দিনকে চক্রমান অবস্থায় রাখা: দিন আসে রাত যায়, রাত আসে দিন যায়। দিন আর রাতের এই পরিবর্তন, এটা কার হাতে? বিশ্বের কোনো ব্যক্তি বা শক্তি কি এমন আছে যে এই কাজটাকে একটু আগে পিছে করে দিতে পারবে? ১২ ঘন্টার দিনকে ১৩ ঘন্টা করতে পারবে? ২৪ ঘন্টার দিন-রাতকে ২৩ ঘন্টা করে দিবে? সম্ভব নয়। এই কাজ আল্লাহর।
এই কাজগুলো আল্লাহ ব্যতীত কেউ করতে পারবে না। যেহেতু পারবে না সেহেতু এই কাজগুলোতে আল্লাহ কে একক বলে মেনে নেওয়ার নামই হলো রুবুবিয়্যত।
• ইবরাহীম (আ.) এর সাথে নমরুদের তর্ক-বিতর্ক:
- নমরুদ দাবি করে ছিল আমিই তো বর, মালিকানা তো আমার হাতে, আমি যেটা ইচ্ছা সেটাই করতে পারি।
» ইবরাহীম (আ.) বললেন, আমি তো তোমাকে বর বলে মানি না।
- নমরুদ বললো, ইবরাহীম তুমি আমাকে বর বলে মানো না কেনো? আমি তো সব করতে পারি। এমন কোন জিনিস আছে সেটা আমি করতে পারি না আর তোমার রব করতে পারে ইবরাহীম?
» তখন ইবরাহীম (আ.) বললেন যে, আমার বর, যার হাতে আছে জীবন ও মরণ। কাউকে জীবন দেন আবার কাউকে মরণ দেন এটা হলো আমার রবের কাজ।
- তখন নমরুদ বললো, এই কাজ তো আমিও করতে পারি, জীবন-মরণ তো আমারও হাতে আছে। তাহলে তুমি আমাকে বর মানবে না কেনো?
» তখন ইবরাহীম (আ.) বললেন যে, নমরুদ যদি তুমি রব হও, জীবন-মরণ যদি তোমার হাতে থাকে তাহলে দেখাও দেখি।
- জেলখানা বা কয়েদখানার ২ ব্যক্তিকে নমরুদ নিয়ে আসার নির্দেশ দিল। এরপর ঐ ২জন ব্যক্তির ১জনকে ফাঁসি দেওয়া আদেশ দিলো বললো, 'একে ফাঁসি দাও' ওকে ফাঁসি দিয়ে মেরে ফেলা হলো। আর আরেকজনকে ২য় ব্যক্তিকে জেল থেকে বের করে দিল বা রেহাই বা মুক্ত করে দিল। এবার নমরুদ বলছে দেখতে পেলে ইবরাহীম জীবন আর মরণ আমার হাতে? আমি একজনকে মেরে দিলাম আর আরেকজনকে জীবন দিয়ে দিলাম। একজনকে মেরে দিলাম যেহেতু মরণ আমার হাতে আর একজনকে জীবন দিলাম যেহেতু জীবন আমার হাতে। ওকে মুক্ত করে দিলাম।
» ইবরাহীম (আ.) বললেন যে, আসলে জীবন মরণ আল্লাহর হাতেই, আমার হাতে এটা কথাটা তুমি বুঝতেই পারোনি। এই জীবন মরণের কথা আমি বলি নাই। আচ্ছা যেহেতু তুমি এই কাজ করে দেখিয়ে দিলে তোমার বুদ্ধিতে তোমার যুক্তিতে যে এটাই জীবন মরণ। তাহলে আমি আমার রবের আরেকটা কাজের কথা বলি তুমি সেটা করে দেখাও। আমার বরের আরেকটা কাজ হলো তিঁনি প্রতিদিন সকালে সূর্যকে পূর্ব আকাশে উদিত করেন। আর সন্ধ্যা বেলায় পশ্চিম আকাশে ডুবিয়ে দেন। আমি চাইছি, যদি তুমি বর হও, তাহলে এই সূর্যটাকে পাল্টিয়ে দাও। সূর্যটা তুমি পশ্চিম আকাশে উঠাও আর পূর্ব আকাশে ডুবাও। আমার রব যেহেতু এটাকে পূর্ব আকাশে উঠান আর পশ্চিম আকাশে ডুবান।
আল্লাহর কাজ কি সে করতে পারে? সে কখনোই এ কাজ করতে পারে না। সে তো লা-জাবাব হয়ে গেল এবং সে ইবরাহীম (আ.) এর কাছে পরাজিত হলো।
»» মুসলিম ভাইয়েরা, এতগুলো কথা আপনাদের এজন্যই বললাম যে, রুবুবিয়্যত এটা তাওহিদের একটা অংশ এবং একটা প্রকার। আল্লাহকে তাঁর কাজে কর্মে একক ও অদ্বিতীয় বলে মেনে নেওয়া, যে কাজ তিঁনি ব্যতীত অন্য কেউ করতে পারগ এবং সক্ষম নয়। যেমন: সূর্য-চন্দ্র, রাত-দিন ইত্যাদি।
আরেকটি প্রসঙ্গ যে প্রসঙ্গ নিয়ে আগামী সপ্তাহে উপস্থাপন করবো আপনাদের সামনে। প্রসঙ্গটি হচ্ছে আল্লাহ তাঁর কাজে এক, একক ও অদ্বিতীয়, কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর কাজ তিঁনি করেন, তাঁর কাজে অন্য কেউ অংশীদার নেই। কিন্তু বিষয় হলো আল্লাহ কি আছেন? আল্লাহর অস্তিত্ব কি আছে?
কাজ তো করেন, তাহলে কাজ করলে তাঁর অস্তিত্ব নিশ্চয়ই আছে। তাহলে আল্লাহ রব্বুল আ'লামীন কি আছেন? তাঁর অস্তিত্ব কি আছে? তাঁকে কি আপনি আর আমি অথবা বিশ্বের কোনো মানুষ দেখতে পারে, অথবা তাঁকে যেহেতু দেখা যায় না তাহলে তাঁর অস্তিত্বকে আমরা মানবোই বা কি করে?
এই বিভিন্ন পয়েন্ট, সারসংক্ষেপ কথা হলো আল্লাহ কি আছে? এবং এই প্রশ্নের উত্তর আমরা আগামী সপ্তাহে নিবো এবং দিবো ইনশাআল্লাহ।
আমাদের আলোচনার ৪টি পয়েন্ট,
১. তাওহিদ শব্দের শাব্দিক অর্থ
২. তাওহিদ শব্দের পারিভাষিক অর্থ
৩. তাওহিদের ৩টি মর্যাদা ও ফজিলত
৪. তাওহিদের ৩টি প্রকারে মধ্যে তাওহিদ রুবিয়য়াত
Ustaz: Zakir Husain (hafizahullah)
Rabwah Bangla 65/1,
Islamhouse.com
Written by: Md. Sakib