সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

তওবা সম্পর্কে

সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি প্রত্যেক সৃষ্টিতে আপন এককত্বের ওপর প্রমাণ স্থাপন করেছেন। আপন সৃষ্টিতে যেভাবে চান ইয্‌যত ও ক্ষমতার হস্তক্ষেপ করেন। মুত্তাকীদের নির্বাচিত করে তাদের ঈমান ও নিরাপত্তা দান করেন। অপরাধীদের আপন সংযম ও করুণায় ক্ষমা ও মার্জনা করেন। তাঁর অবাধ্যদের রিযিক বন্ধ করেন না দয়া ও করুণাবশত। নিষ্ঠাবান মুমিনদেরকে আপন নৈকট্যের মৃদু বায়ূ দ্বারা প্রশান্তি দান করেন এবং হিসাব দিবসে তার মহাবিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেন। তাঁর সন্তুষ্টির পথ অবলম্বনকারীকে তিনি নিজ আস্তানায় হেফাযত করেন। মুমিনকে তার অন্তরে ঈমান অঙ্কিত করে সম্মানিত করেন। নিজ সৃষ্টিতে তিনি বিধি-বিধান প্রবর্তন করেন, তাই তাদের জন্য জারী করেন আদেশ-নিষেধ। আপন সহযোগিতায় দাঁড় করান ফলে কেউ সে আদেশ পালন করতে সমর্থ হয় আবার কেউ তাতে অপারগ হয়। যে উদাসীন ও বিস্মৃতপ্রায় তাকে নিজ উপদেশবাণী দিয়ে জাগ্রত করেন। তিনি গুনাহগারকে তার গুনাহ মাফের জন্য তাওবার দিকে আহ্বান করেন। তিনি মহান রব; সৃষ্টিজগতে তাঁর কোনো তুলনা নেই। তিনি দয়ালু দাতা; যিনি পানাহারের মুখাপেক্ষী নন। সকল সৃষ্টি সর্বদা তাঁর মুখাপেক্ষী এবং দিবারাত্রি তাঁর করুণার ভিখারী। আমি তাঁর প্রশংসা করি এমন প্রশংসা যা কোনো রবের ইবাদতকারী করে থাকে এবং আর তাঁর কাছে ওযর পেশ করছি নিজ পাপ ও ত্রুটির জন্য।

আর আমি সাক্ষ্য দেই যে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই; তাঁর কোনো শরীক নেই, নিজ মন থেকে একনিষ্ঠ ব্যক্তির সাক্ষ্য। আমি আরও সাক্ষ্য দেই মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল, যাকে তাঁর দল থেকে বাছাই করা হয়েছে।

আল্লাহ সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন তাঁর ওপর, তাঁর শ্রেষ্ঠতম সঙ্গী আবূ বকরের ওপর, উমরের ওপর যার চলার পথে শয়তান চলত না, উসমান শহীদের ওপর, যিনি যুদ্ধের কাতারে শহীদ হননি, আলীর ওপর যিনি তাঁর যুদ্ধের সাহায্যকারী এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীবৃন্দ ও তাঁর আদর্শের অনুসারীদের ওপর।


ভাইয়েরা আমার! রমযান মাস শেষ করুন, আল্লাহর কাছে গুনাহ থেকে তাওবার মাধ্যমে, তাঁর সন্তুষ্টি অনুযায়ী কাজ করে তাঁর কাছে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে। কেননা, মানুষ গুনাহ ও ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্ত নয়। প্রত্যেক আদম সন্তান গুনাহ করে তবে সর্বোত্তম পাপী হলো, তাওবাকারী।

আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় কিতাবে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাণীতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও তাঁর কাছে তাওবার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَأَنِ ٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ ثُمَّ تُوبُوٓاْ إِلَيۡهِ يُمَتِّعۡكُم مَّتَٰعًا حَسَنًا إِلَىٰٓ أَجَلٖ مُّسَمّٗى وَيُؤۡتِ كُلَّ ذِي فَضۡلٖ فَضۡلَهُۥۖ وَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنِّيٓ أَخَافُ عَلَيۡكُمۡ عَذَابَ يَوۡمٖ كَبِيرٍ ٣ ﴾ [هود: ٣]​

‘আরো যে, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তারপর তাঁর দিকে ফিরে আস, তিনি তোমাদেরকে এক নির্দিষ্ট কালের এক উত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন এবং তিনি প্রত্যেক গুণীজনকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দান করবেন। আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে নিশ্চয় আমি তোমাদের উপর মহাদিনের শাস্তির আশংকা করি।’ (সূরা হূদ, আয়াত: ৩)

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ قُلۡ إِنَّمَآ أَنَا۠ بَشَرٞ مِّثۡلُكُمۡ يُوحَىٰٓ إِلَيَّ أَنَّمَآ إِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞ فَٱسۡتَقِيمُوٓاْ إِلَيۡهِ وَٱسۡتَغۡفِرُوهُۗ﴾ [فصلت: ٦]​

‘(হে মুহাম্মাদ) আপনি বলুন, আমিও তোমাদের মতই মানুষ, তবে আমার প্রতি ওহী আসে যে, তোমাদের মা‘বুদ একমাত্র মা‘বুদ। অতএব তাঁরই পথ দৃঢ়ভাবে অবলম্বন কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর।’ (সূরা হা-মীম-সিজদাহ, আয়াত: ৬)

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ ﴾ [النور: ٣١]​

‘হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১)

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمۡ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمۡ سَيِّ‍َٔاتِكُمۡ وَيُدۡخِلَكُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ﴾ [التحريم: ٨]​

‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাঁটি তাওবা; আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত।’ (সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৮)

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلتَّوَّٰبِينَ وَيُحِبُّ ٱلۡمُتَطَهِّرِينَ ٢٢٢ ﴾ [البقرة: ٢٢٢]​

‘নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারী এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২২)

আর তাওবার বর্ণনায় বহু আয়াত রয়েছে।

হাদীসসমূহ:

আগার্র ইবন ইয়াসার আল-মুযানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللهِ، فَإِنِّي أَتُوبُ، فِي الْيَوْمِ إِلَيْهِ مِائَةَ، مَرَّةٍ»​

‘হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর ও ক্ষমা প্রার্থনা কর। কারণ, আমি প্রতিদিন একশত বার তাওবা করি।’[1]

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

«وَاللَّهِ إِنِّي لَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ فِي اليَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً»​

‘আল্লাহর শপথ, অবশ্যই আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি ও তাওবা করি ৭০ বারেরও অধিক।’[2]

আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ، مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلَاةٍ، فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ، فَأَيِسَ مِنْهَا، فَأَتَى شَجَرَةً، فَاضْطَجَعَ فِي ظِلِّهَا، قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ، فَبَيْنَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا، قَائِمَةً عِنْدَهُ، فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا، ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ: اللهُمَّ أَنْتَ عَبْدِي وَأَنَا رَبُّكَ، أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ»​

‘বান্দা যখন আল্লাহর কাছে তাওবা করে, তখন আল্লাহ ওই ব্যক্তির চেয়েও অধিক খুশি হন, যে বিশাল বিস্তৃত ভূমিতে সফর করছিল, হঠাৎ তার বাহন পালিয়ে গেল, যে বাহনে তার খাদ্য ও পানীয় ছিল। কোনো উপায় না দেখে সম্পূর্ণ নিরাশ হয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় একটি বৃক্ষের ছায়ায় শুয়ে পড়ল। এমতাবস্থায় হঠাৎ বাহনটি তার পাশেই উপস্থিত পেল। সে লাগাম হাতে নিয়ে আনন্দের অতিশয্যে বলে ফেললো, আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা এবং আমি তোমার প্রভু। অতি আনন্দে ভুল বলে ফেলল।’[3]

আল্লাহ সুবহানাহু বান্দার তাওবাতে খুশি হওয়ার কারণ হচ্ছে তিনি তাওবা ও ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। অনুরূপভাবে তিনি এটাও ভালোবাসেন যে বান্দা তার কাছ থেকে পলায়ন করার পর আবার তার কাছে ফিরে আসছে।

আনাস এবং ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«لَوْ أَنَّ لِابْنِ آدَمَ وَادِيًا مِنْ ذَهَبٍ أَحَبَّ أَنْ يَكُونَ لَهُ وَادِيَانِ، وَلَنْ يَمْلَأَ فَاهُ إِلَّا التُّرَابُ، وَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَى مَنْ تَابَ»​

‘বনী আদমের যদি স্বর্ণের একটি উপত্যকা থকে, তাহলে সে তখন দু’টি উপত্যকার কামনা করে। মাটিই একমাত্র তার মুখ ভরতে পারে। আর যে তাওবা করে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন।’[4]

তাওবা: আল্লাহর নাফরমানী ছেড়ে, তার আনুগত্যে ফিরে আসাকে তাওবা বলে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলাই সত্যিকারের মা‘বুদ। আর ইবাদতের তাৎপর্য হচ্ছে ভালোবাসা ও সম্মানার্থে মা‘বুদ সমীপে বিনয়ী ও অনুগত হওয়া। অতএব, যখনই বান্দার পক্ষ হতে প্রভুর অবাধ্যতা প্রকাশ পাবে, তখন সেটা থেকে তাওবা হচ্ছে, তার কাছে দীন, হীন, ভীত, সন্ত্রস্ত, লজ্জিত ও নত হয়ে তার দরবারে ফিরে আসা ও তার দরজায় দাড়ানো।
তাওবা করা ওয়াজিব; তাৎক্ষণিকভাবে। বিলম্ব করা বা গড়িমসি করা জায়েয নেই। কারণ;

আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে আদেশ করেছেন। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ তৎক্ষণাৎ পালনীয়। কারণ, বান্দার জানা নেই বিলম্বে কী পরিণতি হবে। হতে পারে হঠাৎ তার মৃত্যু এসে যাবে, আর তাওবার সুযোগ ঘটবে না।
তাছাড়া বারবার গুনাহ করা অন্তরকে কঠিন করে দেয়, আল্লাহ হতে দুরে সরিয়ে দেয় ও ঈমানী শক্তি দুর্বল করে দেয়। পক্ষান্তরে আনুগত্য ঈমান বৃদ্ধি করে ও নাফরমানী কমিয়ে দেয়।
বারংবার গুনাহে লিপ্ততা, ওই গুনাহের প্রতি মুহাব্বত ও দৃঢ়তা সৃষ্টি করে। কারণ, নফস কোনো বিষয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তা বর্জন করা কঠিন হয়। এ কারণেই আল্লাহর নাফরমানী হতে মুক্ত হওয়া কষ্টকর। তখন শয়তান পূর্বের চেয়ে বড় গুনাহে জড়িয়ে দেয়।

এজন্য আল্লাহ ওয়ালা আলেমগণ বলেন, ‘গুনাহ কুফরীর দূতস্বরূপ।’[5] ক্রমশ গুনাহে জড়িত হতে থাকে, পরিণামে দ্বীন থেকে সরে পড়ে। আল্লাহর কাছে এ থেকে নিরাপত্তা চাই।

আল্লাহ যে তাওবার আদেশ করেছেন, তা হলো খালেস তাওবা। খালেস তাওবার জন্য পাঁচটি শর্ত:

প্রথম শর্ত: তাওবা একান্তভাবে আল্লাহর জন্য হতে হবে

আল্লাহর ভালোবাসা, তাঁর প্রতি সম্মান, সাওয়াবের আশা, শাস্তি ভয় তাকে তাওবার প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে। এ তাওবার মধ্যে মাখলুকের মহব্বত বা দুনিয়ার তুচ্ছ কোনো স্বার্থ থাকতে পারবে না। অন্যথায় তাওবা কবুল হবে না। কারণ, সে আল্লাহর কাছে তওবা করে নি; বরং ওই উদ্দেশ্যের কাছে সে তাওবা করেছে।

দ্বিতীয় শর্ত: কৃত অপরাধের জন্য লজ্জিত হতে হবে

সে তার অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হবে, এই গুনাহ যদি না হতো—এমন আশা করবে। ফলে এই লজ্জা ও পেরেশানীর কারণে সে আল্লাহর দিকে ফিরে যাবে, তাঁর সমীপে নত হবে এবং যে নফস তাকে অন্যায় করতে প্ররোচিত করেছিল তার প্রতি ঘৃণার উদ্রেক হবে; আর এভাবেই তার তাওবা হবে বিশ্বাস ও সঠিক অনুধাবন থেকে উদ্ভূত।

তৃতীয় শর্ত: তৎক্ষণাৎ সে গুনাহ বর্জন করা

তাই নাফরমানী যদি হারাম কাজ করার ফলে হয়, তাহলে তৎক্ষণাৎ তা পরিত্যাগ করবে।

আর যদি নাফরমানী ওয়াজিব বর্জন করার কারণে হয়, তবে তা তখনই করতে হবে, যদি তার কাযা সম্ভব হয়, যেমন, যাকাত, হজ।

গুনাহে লিপ্ত থাকা অবস্থায় তওবা কবুল হয় না। উদাহরণস্বরূপ:

কেউ সুদী লেনদেনে লিপ্ত থেকে বললো, আমি সুদ থেকে তাওবা করছি। তাহলে তাওবা সহীহ হবে না; বরং এ হলো আল্লাহর সঙ্গে ঠাট্টার শামিল, যা বান্দাকে আল্লাহ থেকে আরো দূরে সরিয়ে দেয়।
অনুরূপ জামাতের সঙ্গে সালাত আদায় না করার গুনাহ থেকে তাওবা করল অথচ এখনো জামাতে সালাত আদায় বর্জন করেই চলে তবে তার সে তাওবা বিশুদ্ধ হয়নি।

আর যদি গুনাহ মানুষের অধিকার সম্পর্কিত হয়, তাহলে তাদের থেকে নিষ্পত্তি না করা পর্যন্ত তাওবা সহীহ হবে না।

সুতরাং যদি গুনাহটি হয় কারও সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া অথবা সম্পদ অস্বীকার করা, তাহলে সেটার হকদারের কাছে তা পৌঁছাতে হবে, যদি সে জীবিত থাকে। আর যদি হকদার মারা গিয়ে থাকে তবে তা ওয়ারিসদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আর যদি ওয়ারিসও না থাকে তাহলে বায়তুল মালে (রাষ্ট্রীয় কোষাগারে) জমা দিতে হবে। আর যদি প্রাপক জানা না থাকে, তার পক্ষ থেকে দান করে দেবে। আর এ সম্পর্কে আল্লাহই জানবেন।
আর নাফরমানী যদি কোনো মুসলিমের গীবত তথা পরনিন্দা হয়, তবে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবে; যদি সে তার গীবত করা সম্পর্কে জানতে পারে অথবা যদি এ আশংকা থাকে যে লোকটি তার গীবত সম্পর্কে জেনে যাবে। আর যদি এরকম কিছু না হয় তবে সেই গীবতের মজলিসেই তার ভালো প্রশংসা করবে। কারণ, নেক কাজ গুনাহকে বিলুপ্ত করে দেয়।

নির্দিষ্ট গুনাহ থেকে তাওবা করা যাবে, যদিও অন্য গুনাহে লিপ্ত থাকে। কারণ ‘আমল যৌগিক বিষয়, আর ঈমান বাড়ে-কমে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত সব গুনাহ থেকে তাওবা না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাওবার গুণ তার জন্য সাব্যস্ত হবে না এবং তাওবাকারীদের উঁচু মর্যাদা ও প্রশংসার অধিকারীও সে হবে না।

চতুর্থ শর্ত: ভবিষ্যতে আর গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করতে হবে।

কারণ, তাওবার ফলাফল এটাই, যা তাওবাকারীর সত্যবাদিতার প্রমাণ।

যদি বলে যে ‘সে তাওবাকারী’ অথচ সে কোনো একদিন গুনাহ করার সংকল্পবদ্ধ বা দোদুল্যমান থাকে, তাহলে তার তাওবা বিশুদ্ধ হবে না। কারণ, এটা সাময়িক তাওবা, এ তাওবাকারী উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় আছে যখন সে আবার এ গুনাহটি করবে। এর মাধ্যমে লোকটিকে ঘৃণাবশত গুনাহ থেকে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে প্রত্যাবর্তনকারী বুঝায় না।

পঞ্চম শর্ত: তাওবা কবুলের সময় অতিক্রান্ত না হওয়া

কেননা, সময় অতিক্রম করার পর তাওবা করলে, তা গৃহীত হবে না।

তাওবা কবুলের শেষ সময় দু’ প্রকার:

১. সকলের জন্য সমানভাবে ও ২. প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য বিশেষ।

তন্মধ্যে সকলের জন্য সাধারণভাবে: সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হওয়া। তখন আর তাওবা কোনো উপকারে আসবে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ يَوۡمَ يَأۡتِي بَعۡضُ ءَايَٰتِ رَبِّكَ لَا يَنفَعُ نَفۡسًا إِيمَٰنُهَا لَمۡ تَكُنۡ ءَامَنَتۡ مِن قَبۡلُ أَوۡ كَسَبَتۡ فِيٓ إِيمَٰنِهَا خَيۡرٗاۗ﴾ [الانعام: ١٥٨]​

‘যে দিন আপনার পালনকর্তার কোনো নিদর্শন আসবে, সে দিন এমন কোনো ব্যক্তির ঈমান আনয়ন তার জন্য ফলপ্রসু হবে না যে পূর্ব থেকে ঈমান আনয়ন করে নি কিংবা স্বীয় ঈমান অনুযায়ী কোনোরূপ সৎকর্ম করে নি।’ (সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৮৫)

এখানে নিদর্শন দ্বারা পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদয় হওয়া উদ্দেশ্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।[6]

‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« ولا تزال التوبة تقبل حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا، فَإِذَا طَلَعَتْ طُبِعَ عَلَى كُلِّ قَلْبٍ بِمَا فِيهِ وَكُفِيَ النَّاسُ الْعَمَلَ»​

‘তাওবা সর্বদা কবুল হতে থাকে সূর্য পশ্চিম আকাশ হতে উদিত হওয়া পর্যন্ত। উদয় হলে প্রত্যেকের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়। মানুষের জন্য তার আমল যথেষ্ট হয়ে যায়।’[7] ইবন কাসীর হাদীসের সূত্রকে ‘হাসান’ বলেছেন।

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«مَنْ تَابَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا، تَابَ اللهُ عَلَيْهِ»​

‘যে ব্যক্তি সূর্য পশ্চিম দিক হতে উদয়ের পূর্বে তাওবা করবে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন।’[8]

প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য বিশেষভাবে: মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া।

যখন কারো মৃত্যু উপস্থিত হবে এবং মৃত্যু প্রত্যক্ষ করবে তখন তাওবা তার কোনো উপকারে আসবে না এবং গৃহীতও হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَلَيۡسَتِ ٱلتَّوۡبَةُ لِلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلسَّيِّ‍َٔاتِ حَتَّىٰٓ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ ٱلۡمَوۡتُ قَالَ إِنِّي تُبۡتُ ٱلۡـَٰٔنَ﴾ [النساء: ١٨]​

‘আর এমন লোকদের তাওবা কবুল হবে না যারা মন্দ কাজ করে। এমনকি যখন তাদের কারো কাছে মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন বলতে থাকে আমি এখন তাওবা করছি।’ (সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ১৮)

‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ اللَّهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ العَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ»​

‘আল্লাহ বান্দার তাওবা গরগরার (রূহ ওষ্ঠাগত হবার) পূর্ব পর্যন্ত কবুল করেন।’[9]

সকল শর্ত পূরণের মাধ্যমে তাওবা যখন সহীহ ও গৃহীত হবে তখন আল্লাহ তার কৃত পাপ যত বড়ই হোক তা মুছে দেবেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣ ﴾ [الزمر: ٥٣]​

‘হে আমার বান্দারা যারা নিজেদের ওপর যুলম করেছো তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সকল গুনাহ মাফ করবেন। তিনি ক্ষমাশীল দয়ালু।’ (সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫৩)

এ আয়াতটি মহান পালনকর্তার অনুগত ও আজ্ঞাবহ তাওবাকারীদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ।

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ وَمَن يَعۡمَلۡ سُوٓءًا أَوۡ يَظۡلِمۡ نَفۡسَهُۥ ثُمَّ يَسۡتَغۡفِرِ ٱللَّهَ يَجِدِ ٱللَّهَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١١٠ ﴾ [النساء: ١١٠]​

‘যে গুনাহ করে কিংবা নিজের ওপর যুলম করে অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও করুণাময় পাবে।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১০)

অতএব আপনারা নিজের জীবনের সময় থাকতে হঠাৎ করে মৃত্যু আসার পূর্বেই দ্রুত স্বীয় রবের কাছে খালেস তাওবা করুন। কারণ তখন আর উদ্ধারের কোনো উপায় থাকবে না।

হে আল্লাহ! আমাদেরকে এমন আন্তরিকভাবে তাওবা করার তাওফীক দিন; যা আমাদের কৃত পাপসমূহ মিটিয়ে দেবে এবং আমাদেরকে সহজ পথ জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দিন। কঠিন পথ জাহান্নামের রাস্তা থেকে দূরে রাখুন। আর আপনার স্বীয় করুনায় আমাদেরকে এবং আমাদের পিতামাতা ও সকল মুসলিমকে ক্ষমা করুন, হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াময়।আর আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কিরামের ওপর সালাত পেশ করুন।


[1] মুসলিম: ২৭০২।
[2] বুখারী: ৬৩০৭।
[3] মুসলিম: ২৭৪৭।
[4] বুখারী: ৬৪৩৬; মুসলিম: ১০৪৯।
[5] ইবনুল কাইয়্যম: আদ-দা ওয়াদ দাওয়া পৃ. ১০০।
[6] দেখুন, বুখারী: ৭১২১।
[7] আহমাদ ১/১৯২; ইবন কাসীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া: পৃ. ১৩৭।
[8] মুসলিম: ২৭০৩।
[9] আহমাদ: ২/১৩২; তিরমিযী: ৩৫৩৮; ইবন মাজাহ: ৪২৫৩। তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।

 
ভূমিকা: নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি, তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি, তাঁর কাছেই তাওবা করি; আর আমরা আমাদের নফসের জন্য ক্ষতিকর এমন সকল খারাপি এবং আমাদের সকল প্রকার মন্দ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। সুতরাং আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন...

Book Chapters

Overview
  • Views: 421
রমযান মাসের ফযীলত
  • Views: 146
হাদীসে বর্ণিত পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের বিশ্লেষণ
  • Views: 191
সিয়ামের ফযীলতের বর্ণনা
  • Views: 158
সিয়াম পালনের অন্যতম ফযীলত
  • Views: 259
সিয়ামের বিধান
  • Views: 135
সিয়াম ফরয হয়েছে দুটি পর্যায়ে
  • Views: 168
দু’টি বিষয়ের কোনো একটি ঘটলে রমযানের আগমন বুঝা যাবে
  • Views: 148
রমযানে কিয়ামুল লাইলের বিধান
  • Views: 127
এসব নফল সালাতের অন্যতম
  • Views: 89
বিতর সালাতসহ তারাবীর সংখ্যা কত
  • Views: 217
কুরআন তিলাওয়াতের ফযীলত
  • Views: 109
কুরআনের সুনির্দিষ্ট সূরার ফযীলতের ব্যাপারেও অনেক হাদীস বর্ণিত রয়েছে
  • Views: 97
সিয়ামের বিধানের দিক থেকে মানুষের প্রকারভেদ
  • Views: 170
সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে মানুষের দশটি প্রকার
  • Views: 190
সিয়ামের বিধানের দিক থেকে মানুষের প্রকারভেদের অবশিষ্ট আলোচনা
  • Views: 102
সিয়াম পালন এবং এর কাযার বিধানের দিক থেকে মানুষের প্রকারভেদের অবশিষ্ট আলোচনা
  • Views: 187
সিয়াম পালন এবং এর কাযার বিধানের দিক থেকে মানুষের প্রকারভেদের অবশিষ্ট আলোচনা - দশম প্রকার
  • Views: 172
সিয়াম পালনের হিকমত বা তাৎপর্যসমূহ
  • Views: 226
সিয়াম ফরয হওয়ার হিকমত ও তাৎপর্য সমূহ
  • Views: 166
সিয়াম পালনের ফরয আদবসমূহ
  • Views: 140
সিয়ামের অন্যতম ওয়াজিব আদব
  • Views: 143
সিয়ামের মুস্তাহাব আদবসমূহ
  • Views: 181
সিয়ামের মুস্তাহাব আদবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, তাড়াতাড়ি ইফতার করা
  • Views: 148
সিয়ামের মুস্তাহাব আদবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বেশি করে কুরআন তিলাওয়াত করা, যিকির করা, দো‘আ করা, সালাত আদায় করা ও দান-সাদকা করা
  • Views: 124
সিয়ামের মুস্তাহাব আদবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতের কথা অন্তরে সদা জাগরুক রাখা।
  • Views: 117
কুরআন তিলাওয়াতের দ্বিতীয় প্রকার
  • Views: 181
কুরআন তিলাওয়াতের আদব
  • Views: 124
সিয়াম ভঙ্গের কারণসমূহ
  • Views: 152
সিয়াম ভঙ্গের কারণসমূহ ৭ প্রকার
  • Views: 164
সিয়াম ভঙ্গের শর্তাবলি এবং যে কাজে সিয়াম ভাঙে না আর সাওম পালনকারীর জন্য যা করা জায়েয
  • Views: 330
যাকাত
  • Views: 178
চার ধরনের সম্পদে যাকাত ফরয
  • Views: 188
যারা যাকাতের হকদার
  • Views: 231
বদর যুদ্ধ
  • Views: 144
মক্কা বিজয় (আল্লাহ এ নগরকে সম্মানিত করুন)
  • Views: 157
আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্তির প্রকৃত কারণসমূহ
  • Views: 177
আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য অপরিহার্য গুণাবলি
  • Views: 184
রমযানের শেষ দশ দিনের ফযিলত
  • Views: 147
ইতিকাফ রমযানের শেষ ১০ দিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য
  • Views: 173
ইতিকাফের উদ্দেশ্য ও ই‘তিকাফকারী মসজিদ থেকে সারা শরীর নিয়ে বের হওয়া
  • Views: 118
রমযানের শেষ দশকের ইবাদত ও লাইলাতুল ক্বদর
  • Views: 157
জান্নাতের বর্ণনা [আল্লাহ আমাদেরকে তার অধিবাসী করুন]
  • Views: 125
হাদীসে জান্নাতের বিবরণ
  • Views: 278
জান্নাতীদের বৈশিষ্ট্যাবলি ও গুণাবলি
  • Views: 193
কুরআন ও হাদিসে জাহান্নামের বর্ণনা
  • Views: 175
জাহান্নামে প্রবেশের কারণ
  • Views: 214
মুনাফিকদের আলামত
  • Views: 141
জাহান্নামে প্রবেশের আরো কিছু কারণ
  • Views: 221
যাকাতুল ফিতর
  • Views: 196
তওবা সম্পর্কে
  • Views: 190
রমযান মাসের সমাপ্তি
  • Views: 174
Top