আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন;
جَاءَ أَعْرَابِيٌّ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: هَلْ أَخَذَتْكَ أُمُّ مِلْدَمٍ ؟. قَالَ: وَمَا أُمُّ مِلْدَمٍ؟ قَالَ: حَرٌّ بَيْنَ الْجِلْدِ وَاللَّحْمِ. قَالَ: لَا. قَالَ: فَهَلْ صُدِعْتَ؟ قَالَ: وَمَا الصُّدَاعُ؟ قَالَ: رِيحٌ تَعْتَرِضُ فِي الرَّأْسِ، تَضْرِبُ الْعُرُوقَ. قَالَ: لَا. قَالَ: فَلَمَّا قَامَ قَالَ: مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَلْيَنْظُرْهُ
‘একজন গ্রাম্য লোক আগমন করলে নবী (ﷺ) বললেন, তোমার কি কখনো উম্মু মিলদাম (এক প্রকার জ্বর) হয়েছে? লোকটি বলল, উম্মু মিলদাম আবার কি? তিনি (ﷺ) বললেন, এটা চামড়া ও গোশতের মধ্যকার তাপমাত্রা (জ্বর)। সে বলল, না। নবী ﷺ) বললেন, তোমর কি মাথাব্যথা হয়? সে বলল, মাথাব্যথা আবার কি? তিনি (ﷺ) বললেন, এক প্রকার বাতাস, যা মাথায় প্রবেশ করে এবং শিরা-উপশিরায় আঘাত হানে। সে বলল, এটা আমার হয় না। এরপর লোকটি যখন উঠে দাঁড়াল, নবী (ﷺ) তখন বললেন, যে ব্যক্তি কোন জাহান্নামী ব্যক্তিকে দেখে আনন্দবোধ করে, সে যেন এই লোকটাকে দেখে নেয়। (মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৭৬; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৯৫; সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/২৯১৬; মুস্তাদরাকে হাকেম হা/১২৮৩)
সনদ: এই হাদিসটি ইমাম বুখারী তার আল-আদাবুল মুফরাদে বর্ননা করেছেন। তিনি বলেন; আহমাদ ইবনু ইউনুস আমাদেরকে বলেন, তিনি বলেন- আবু বকর আমাদেরকে মুহাম্মাদ ইবনু আমরের সূত্রে, আবি সালামার সূত্রে, আবু হুরায়রার সূত্রে আমাদেরকে বলেছেন। (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৯৫)
তাহক্কীক: হাদীসটির সহীহ-জয়ীফ নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও বিশুদ্ধ কথা হলো হাদীসটি হাসান সহীহ।
(১). হাদীসটি ইমাম হাকেম তার মুস্তাদরাকে হাকেমে উল্লেখ করে বলেন; হাদীসটি ইমাম মুসলিমের শর্তে সহীহ। ইমাম যাহাবী তার সাথে একমত হয়েছেন (দেখুন মুস্তাদরাকে হাকেম: ১/৩৪৭, হা/১২৮৩)
(২). ইমাম ইবনু খুযাইমাহ (রাহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি সহীহ বলেছেন। (সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/২৯১৬)
(৩). ইমাম হায়সামী (রাহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি হাসান বলেছেন। (মাযমাউয যাওয়ায়েদ-২/২৯৪)
(৪). ইমাম ইবনে হিব্বান হাদীসটি সহীহ বলেছেন। (সহীহ ইবনে হিব্বান হা/২৯১৬)
(৫). মুসনাদে আহমদের ভাষ্যকার, মুহাক্কিক শু‘আইব আরনাউত্ব (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মতেও এই হাদীসটি হাসান। (তাখরীজ আল-মুসনাদ শুয়াইব: ২/৩৩২, হা/ ৮৩৯৫)
(৬). বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেন; মুহাম্মদ ইবনে আমর এর কারনে হাদিসের সনদ হাসান।(তাহক্বীক আদাবুল মুফরাদ হা/৩৮১ ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৩২২৮৩৮)
শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) তার ওয়েবসাইটে হাদীসটি বিশুদ্ধ হওয়ার পক্ষে ইঙ্গিত দিয়েছেন।(ইসলামী সওয়াল-জবাব, ফাতাওয়া নং-৩২২৮৩৮)
হাদীসটির সঠিক অর্থ কি?
হাদীসটির সারমর্ম সম্পর্কে হাদিস শাস্ত্রের ইমামগণ বলেন; হাদীসটির অর্থ এই নয় যে- একজন ব্যক্তির যদি জীবনে কখনো মাথাব্যথা না হয় তাহলে সে জাহান্নামের জন্য নির্ধারিত অথবা সে জাহান্নামী। তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যক্তিকে উপরোক্ত রোগ না থাকার কারণে জাহান্নামী হিসেবে আখ্যায়িত করেন নি। বরং রাসূল (ﷺ) আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহীর মাধ্যমে জনেছেন যে, উক্ত ব্যক্তির মধ্যে এমন গুনাহ রয়েছে যা তার জন্য জাহান্নাম আবশ্যক করে। তাই তিনি তার ব্যাপারে সাহাবীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন; “যে ব্যক্তি কোন জাহান্নামীকে দেখতে আগ্রহী সে যেন এই ব্যক্তিকে দেখে নেয়।” কেননা একদিকে যেমন এই ব্যক্তি গুনাহগার অপরদিকে পাপের কাফফারা অথবা বালা-মুসিবত দূর হয় এমন কোন অসুখও তার হয় নি। অথচ রাসূল (ﷺ) থেকে বহু হাদিসে এসেছে যে- অসুখ-বিসুখ, বিপদাপদ দ্বারা বান্দার গুনাহ মোচন করেন এবং তাকে পবিত্র করে দেন। ( হাদীসটির ব্যাখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন, সৌদি ফতোয়া ও গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়া সমগ্র খন্ড:২ পৃষ্ঠা:২৯৪-২৯৭)
হাদীসটি সম্পর্কে আবু হাতিম ইমাম ইবনু হিব্বান (রহিমাহুল্লাহ) বলেন; রাসূল (ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি কোনো জাহান্নামী ব্যক্তিকে দেখতে চায় সে যেন এই ব্যক্তির দিকে তাকায়। মহান আল্লাহ পাক এই পৃথিবীতে মুসলিমদেকে অসুস্থতা, যন্ত্রণা এবং দুঃখ দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন। রাসূল (ﷺ) তাঁর উম্মতকে জানাতে চেয়েছিলেন যে, একজন ব্যক্তি তার দিন ও রাত্রিতে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের যা নিষিদ্ধ করেছেন তা থেকে খুব কমই মুক্ত থাকতে পারে, যদি সে ব্যক্তি দুনিয়াতে এসব রোগ থেকে রক্ষা পায় তাহলে তার পাপের কোন কাফফারা নেই। ফলে যদি তিনি (আল্লাহ) ক্ষমা করার জন্য তার প্রতি সদয় না হন, তবে তার জন্য জাহান্নাম আবশ্যক হবে,অপরদিকে এই পৃথিবীতে যাকে ক্ষমা করা হয় সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। (সহীহ ইবনে হিব্বান ৭/১৮০)
ইমাম ইবনু রজব হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:৭৯৫ হি.] হাদীসটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন; মাথা-ব্যথা ঈমানদার ও জান্নাতী লোকদের একটি নিদর্শন।(ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং ৩২২৮৩৮)
পরিশেষে, প্রিয় পাঠক! মহান আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আর পৃথিবী হচ্ছে কষ্ট-ক্লেশের স্থান। কষ্টের অন্যতম দিক হলো রোগ-ব্যাধি। মানব জীবনে রোগ-শোক নিত্যকার ঘটনা। রোগ এমন এক ভয়াবহ জিনিস, যাতে আক্রান্ত হয়ে অহংকারী ব্যক্তিও শক্তিহীন হয়ে পড়ে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনের জন্য পরীক্ষা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ যাকে ভালবাসেন তাকে বিভিন্ন রোগ ও বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। রাসূল (ﷺ) বলেছেন,বড় পরীক্ষায় বড় পুরস্কার। আল্লাহ কোন জাতিকে ভালোবাসলে তাদেরকে বিভিন্ন বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। যারা এতে সন্তুষ্ট থাকে, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর যারা এই বিপদে নাখোশ হয়, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। (তিরমিযী হা/২৩৯৬; সিলসিলা সহীহাহ হা/১৬৪; সহীহুল জামে হা/২১১০; মিশকাত হা/১৫৬৬) সুতরাং, রোগ-ব্যাধিতে হতাশ ও পেরেশান না হয়ে ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করা প্রকৃত মুমিনের পরিচয়। বিপদ-আপদসমূহও মুমিনের গোনাহ মাফের অন্যতম কারণ। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, মুমিনের জীবনে কোন বিপদ, কোন রোগ, কোন ভাবনা, কোন দুশ্চিন্তা, কোন কষ্ট, কোন দুঃখ, এমনকি তার দেহে কোন কাঁটাও বিদ্ধ হয় না, যা দ্বারা আল্লাহ তার গোনাহ সমূহ ক্ষমা করেন না। তিরমিযীর বর্ণনায় এসেছে, এভাবে তার উপর বিপদাপদ হতেই থাকে, শেষ পর্যন্ত সে পৃথিবীতে চলাফেরা করে এমন অবস্থায় যে, তার কোন গোনাহ থাকে না। (সহীহ বুখারী মুসলিম,মিশকাত হা/১৫৩৭ ও হা/১৫৬২) এজন্য শাইখুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেছেন,
مصيبة تقبل بها على الله خير لك من نعمة تنسيك ذكر الله،
‘বিপদে পতিত হলে আল্লাহর প্রতি অভিমুখী হওয়া যায়, এমন বিপদ সে নেয়ামত থেকে উৎকৃষ্ট, যে নেয়ামত তোমাকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ রাখে। (তাসলিয়াতু আহলিল মাছায়িব, পৃ: ১৭৫) আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন-আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
______________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি
Salafi Forum
جَاءَ أَعْرَابِيٌّ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: هَلْ أَخَذَتْكَ أُمُّ مِلْدَمٍ ؟. قَالَ: وَمَا أُمُّ مِلْدَمٍ؟ قَالَ: حَرٌّ بَيْنَ الْجِلْدِ وَاللَّحْمِ. قَالَ: لَا. قَالَ: فَهَلْ صُدِعْتَ؟ قَالَ: وَمَا الصُّدَاعُ؟ قَالَ: رِيحٌ تَعْتَرِضُ فِي الرَّأْسِ، تَضْرِبُ الْعُرُوقَ. قَالَ: لَا. قَالَ: فَلَمَّا قَامَ قَالَ: مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَلْيَنْظُرْهُ
‘একজন গ্রাম্য লোক আগমন করলে নবী (ﷺ) বললেন, তোমার কি কখনো উম্মু মিলদাম (এক প্রকার জ্বর) হয়েছে? লোকটি বলল, উম্মু মিলদাম আবার কি? তিনি (ﷺ) বললেন, এটা চামড়া ও গোশতের মধ্যকার তাপমাত্রা (জ্বর)। সে বলল, না। নবী ﷺ) বললেন, তোমর কি মাথাব্যথা হয়? সে বলল, মাথাব্যথা আবার কি? তিনি (ﷺ) বললেন, এক প্রকার বাতাস, যা মাথায় প্রবেশ করে এবং শিরা-উপশিরায় আঘাত হানে। সে বলল, এটা আমার হয় না। এরপর লোকটি যখন উঠে দাঁড়াল, নবী (ﷺ) তখন বললেন, যে ব্যক্তি কোন জাহান্নামী ব্যক্তিকে দেখে আনন্দবোধ করে, সে যেন এই লোকটাকে দেখে নেয়। (মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৭৬; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৯৫; সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/২৯১৬; মুস্তাদরাকে হাকেম হা/১২৮৩)
সনদ: এই হাদিসটি ইমাম বুখারী তার আল-আদাবুল মুফরাদে বর্ননা করেছেন। তিনি বলেন; আহমাদ ইবনু ইউনুস আমাদেরকে বলেন, তিনি বলেন- আবু বকর আমাদেরকে মুহাম্মাদ ইবনু আমরের সূত্রে, আবি সালামার সূত্রে, আবু হুরায়রার সূত্রে আমাদেরকে বলেছেন। (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৯৫)
তাহক্কীক: হাদীসটির সহীহ-জয়ীফ নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও বিশুদ্ধ কথা হলো হাদীসটি হাসান সহীহ।
(১). হাদীসটি ইমাম হাকেম তার মুস্তাদরাকে হাকেমে উল্লেখ করে বলেন; হাদীসটি ইমাম মুসলিমের শর্তে সহীহ। ইমাম যাহাবী তার সাথে একমত হয়েছেন (দেখুন মুস্তাদরাকে হাকেম: ১/৩৪৭, হা/১২৮৩)
(২). ইমাম ইবনু খুযাইমাহ (রাহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি সহীহ বলেছেন। (সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/২৯১৬)
(৩). ইমাম হায়সামী (রাহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি হাসান বলেছেন। (মাযমাউয যাওয়ায়েদ-২/২৯৪)
(৪). ইমাম ইবনে হিব্বান হাদীসটি সহীহ বলেছেন। (সহীহ ইবনে হিব্বান হা/২৯১৬)
(৫). মুসনাদে আহমদের ভাষ্যকার, মুহাক্কিক শু‘আইব আরনাউত্ব (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মতেও এই হাদীসটি হাসান। (তাখরীজ আল-মুসনাদ শুয়াইব: ২/৩৩২, হা/ ৮৩৯৫)
(৬). বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেন; মুহাম্মদ ইবনে আমর এর কারনে হাদিসের সনদ হাসান।(তাহক্বীক আদাবুল মুফরাদ হা/৩৮১ ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৩২২৮৩৮)
শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) তার ওয়েবসাইটে হাদীসটি বিশুদ্ধ হওয়ার পক্ষে ইঙ্গিত দিয়েছেন।(ইসলামী সওয়াল-জবাব, ফাতাওয়া নং-৩২২৮৩৮)
হাদীসটির সঠিক অর্থ কি?
হাদীসটির সারমর্ম সম্পর্কে হাদিস শাস্ত্রের ইমামগণ বলেন; হাদীসটির অর্থ এই নয় যে- একজন ব্যক্তির যদি জীবনে কখনো মাথাব্যথা না হয় তাহলে সে জাহান্নামের জন্য নির্ধারিত অথবা সে জাহান্নামী। তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যক্তিকে উপরোক্ত রোগ না থাকার কারণে জাহান্নামী হিসেবে আখ্যায়িত করেন নি। বরং রাসূল (ﷺ) আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহীর মাধ্যমে জনেছেন যে, উক্ত ব্যক্তির মধ্যে এমন গুনাহ রয়েছে যা তার জন্য জাহান্নাম আবশ্যক করে। তাই তিনি তার ব্যাপারে সাহাবীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন; “যে ব্যক্তি কোন জাহান্নামীকে দেখতে আগ্রহী সে যেন এই ব্যক্তিকে দেখে নেয়।” কেননা একদিকে যেমন এই ব্যক্তি গুনাহগার অপরদিকে পাপের কাফফারা অথবা বালা-মুসিবত দূর হয় এমন কোন অসুখও তার হয় নি। অথচ রাসূল (ﷺ) থেকে বহু হাদিসে এসেছে যে- অসুখ-বিসুখ, বিপদাপদ দ্বারা বান্দার গুনাহ মোচন করেন এবং তাকে পবিত্র করে দেন। ( হাদীসটির ব্যাখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন, সৌদি ফতোয়া ও গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়া সমগ্র খন্ড:২ পৃষ্ঠা:২৯৪-২৯৭)
হাদীসটি সম্পর্কে আবু হাতিম ইমাম ইবনু হিব্বান (রহিমাহুল্লাহ) বলেন; রাসূল (ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি কোনো জাহান্নামী ব্যক্তিকে দেখতে চায় সে যেন এই ব্যক্তির দিকে তাকায়। মহান আল্লাহ পাক এই পৃথিবীতে মুসলিমদেকে অসুস্থতা, যন্ত্রণা এবং দুঃখ দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন। রাসূল (ﷺ) তাঁর উম্মতকে জানাতে চেয়েছিলেন যে, একজন ব্যক্তি তার দিন ও রাত্রিতে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের যা নিষিদ্ধ করেছেন তা থেকে খুব কমই মুক্ত থাকতে পারে, যদি সে ব্যক্তি দুনিয়াতে এসব রোগ থেকে রক্ষা পায় তাহলে তার পাপের কোন কাফফারা নেই। ফলে যদি তিনি (আল্লাহ) ক্ষমা করার জন্য তার প্রতি সদয় না হন, তবে তার জন্য জাহান্নাম আবশ্যক হবে,অপরদিকে এই পৃথিবীতে যাকে ক্ষমা করা হয় সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। (সহীহ ইবনে হিব্বান ৭/১৮০)
ইমাম ইবনু রজব হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:৭৯৫ হি.] হাদীসটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন; মাথা-ব্যথা ঈমানদার ও জান্নাতী লোকদের একটি নিদর্শন।(ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং ৩২২৮৩৮)
পরিশেষে, প্রিয় পাঠক! মহান আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আর পৃথিবী হচ্ছে কষ্ট-ক্লেশের স্থান। কষ্টের অন্যতম দিক হলো রোগ-ব্যাধি। মানব জীবনে রোগ-শোক নিত্যকার ঘটনা। রোগ এমন এক ভয়াবহ জিনিস, যাতে আক্রান্ত হয়ে অহংকারী ব্যক্তিও শক্তিহীন হয়ে পড়ে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনের জন্য পরীক্ষা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ যাকে ভালবাসেন তাকে বিভিন্ন রোগ ও বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। রাসূল (ﷺ) বলেছেন,বড় পরীক্ষায় বড় পুরস্কার। আল্লাহ কোন জাতিকে ভালোবাসলে তাদেরকে বিভিন্ন বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। যারা এতে সন্তুষ্ট থাকে, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর যারা এই বিপদে নাখোশ হয়, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। (তিরমিযী হা/২৩৯৬; সিলসিলা সহীহাহ হা/১৬৪; সহীহুল জামে হা/২১১০; মিশকাত হা/১৫৬৬) সুতরাং, রোগ-ব্যাধিতে হতাশ ও পেরেশান না হয়ে ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করা প্রকৃত মুমিনের পরিচয়। বিপদ-আপদসমূহও মুমিনের গোনাহ মাফের অন্যতম কারণ। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, মুমিনের জীবনে কোন বিপদ, কোন রোগ, কোন ভাবনা, কোন দুশ্চিন্তা, কোন কষ্ট, কোন দুঃখ, এমনকি তার দেহে কোন কাঁটাও বিদ্ধ হয় না, যা দ্বারা আল্লাহ তার গোনাহ সমূহ ক্ষমা করেন না। তিরমিযীর বর্ণনায় এসেছে, এভাবে তার উপর বিপদাপদ হতেই থাকে, শেষ পর্যন্ত সে পৃথিবীতে চলাফেরা করে এমন অবস্থায় যে, তার কোন গোনাহ থাকে না। (সহীহ বুখারী মুসলিম,মিশকাত হা/১৫৩৭ ও হা/১৫৬২) এজন্য শাইখুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেছেন,
مصيبة تقبل بها على الله خير لك من نعمة تنسيك ذكر الله،
‘বিপদে পতিত হলে আল্লাহর প্রতি অভিমুখী হওয়া যায়, এমন বিপদ সে নেয়ামত থেকে উৎকৃষ্ট, যে নেয়ামত তোমাকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ রাখে। (তাসলিয়াতু আহলিল মাছায়িব, পৃ: ১৭৫) আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন-আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
______________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি
Salafi Forum
Last edited: