‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

Asking জুমার নামাজের নিয়ত

Solution

জুমার নামাজের নিয়ত​

প্রত্যেক ইবাদাতের জন্য নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত মানে হচ্ছে মনের সংকল্প। আর তার স্থান হল অন্তর; মুখ নয়। মহানবী সঃ ও তার সাহাবীদের কেউই কোন নির্দিষ্ট শব্দ মুখে উচ্চারণ করতেন না; তাই তা মুখে উচ্চারণ করা বিদআত; তাছাড়া নিয়তের জন্য কোন বাধা-ধরা শব্দাবলীও নেই; যেকোন ইবাদাতের জন্য মনে মনে সংকল্প করলেই নিয়ত হয়ে যাবে; মুখে কিছু উচ্চারণের প্রয়োজন নেই।

আলক্বামাহ ইবনে ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,

আমি উমর ইব্নুল খাত্তাব (রাঃ)-কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়ত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে।

ChatGPT

Ask me anything!

Threads
0
Comments
224
Solutions
10
Reactions
46
Credits
123
জুমার নামাজের নিয়ত করতে চাইলে আপনি নিম্নলিখিত নিয়তটি পড়তে পারেন:

"নীয়াত করিতে হলাম, আমি নিয়ত করিতেছি সম্পূর্ণ আল্লাহর জন্য, জুমার নামাজের সাওয়াব পেতে, ইমামের পিছনে ২ রাক্যাত জুমার নামাজ পড়তে ও চার রাক্যাত সানাত মুয়াককাদা পড়তে, পাঠ করিতে গিয়ে।"

এই নিয়তটি বাংলা ভাষায় লেখা হয়েছে এবং বিশ্বাসীদের জুমা নামাজের শুরুতে এটি পাঠ করা হয়। এই নিয়তে বিশ্বাসীদের ইচ্ছা প্রকাশ করা হয় যে তিনি আল্লাহর জন্য নিয়ত করছেন এবং জুমার নামাজের সওয়াব পেতে চান, এছাড়াও অবশিষ্ট রাক্যাত সানাত মুয়াককাদা পাঠ করতে পেশনী দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়। এটি জুমার নামাজের কর্মকাণ্ড শুরু করার জন্য একটি অত্যন্ত মৌলিক নিয়ত।

মাসনুন হওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে সকল সূরা ও দুয়া সাহাবী বলেছেন, তা করা উচিত। জুমার নামাজ একটি পাবলিক ইবাদত হয় যেখানে ইমাম বিচার করে আল্লাহর জন্য সেরা সূরা ও দুয়া পড়েন। এখানে গুরুত্বপূর্ণ যে নিয়তটি বর্ণিত করা হলে সেটি আপনার ইবাদত পরিষ্কার ও মাসনুন করে তুলবে।

তবে, মনে রাখবেন যে জুমা নামাজে নিয়তের বৈধতা সম্পর্কে বিভিন্ন ফিকহ স্কুলে মতভেদ থাকতে পারে। তাই আপনার উচিত যে ফিকহ স্কুলের অনুযায়ী সন্ধান করে বা মসজিদের ইমামের সাথে কথা বলে আপনার নিয়তের বৈধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা উচিত।
 

Abu Abdullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Uploader
Salafi User
Threads
745
Comments
997
Solutions
19
Reactions
10,248
Credits
6,298

জুমার নামাজের নিয়ত​

প্রত্যেক ইবাদাতের জন্য নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত মানে হচ্ছে মনের সংকল্প। আর তার স্থান হল অন্তর; মুখ নয়। মহানবী সঃ ও তার সাহাবীদের কেউই কোন নির্দিষ্ট শব্দ মুখে উচ্চারণ করতেন না; তাই তা মুখে উচ্চারণ করা বিদআত; তাছাড়া নিয়তের জন্য কোন বাধা-ধরা শব্দাবলীও নেই; যেকোন ইবাদাতের জন্য মনে মনে সংকল্প করলেই নিয়ত হয়ে যাবে; মুখে কিছু উচ্চারণের প্রয়োজন নেই।

আলক্বামাহ ইবনে ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,

আমি উমর ইব্নুল খাত্তাব (রাঃ)-কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়ত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে।
 
Solution

Shams uz-zaman

Active member

Threads
26
Comments
32
Reactions
258
Credits
488
জুমুআ শব্দটি আরবি; যার অর্থ একত্রিত হওয়া। মুসলিমরা প্রতি সপ্তাহে এ দিনে আল্লাহর মহান আদেশ পালনের উদ্দেশ্যে মসজিদে একত্র হয়ে থাকেন। তাই এ দিনকে জুমু’আ বলা হয়। আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে এ দিন একত্র হওয়ার নির্দেশ দেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,


হে মুমিনগণ, যখন জুমু’আর দিনে সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তােমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও।

জুম্মা মোবারক অর্থ কি​

মোবারক শব্দের অর্থ বরকতময়, কল্যাণময়, শুভ; জুম্মা মোবারক অর্থ শুভ জুমা দিবস; যারা এটি বলে তাদের উদ্দেশ্য এ দিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা।

এখন দেখি, ইসলামের দৃষ্টিতে জুমার দিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করা কতটুকু শরীয়ত সম্মত?


আমাদের অজানা নয় যে, জুমার দিন মুসলিমদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন; কেননা এ মর্মে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের জন্য জুমার দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্বাচিত করেছেন; সুতরাং জুমায় শরিক হওয়ার পূর্বে গোসল করে নেবে। আর সুগন্ধি থাকলে, ব্যবহার করবে। আর অবশ্যই মিসওয়াক করবে।


সুনানে ইবনে মাজাহ: হা/ ১০৯৮, শাইখ আলবানী এটিকে হাসান বলেছেন- সহিহ ইবনে মাজাহ।

তাহলে মুসলিমদের জন্য মোট ঈদ তিন দিন। বাৎসরিক ঈদ হলো, ঈদুল আজহা (কোরবানির ঈদ) এবং ঈদুল ফিতর (রমজানের ঈদ)। আর সাপ্তাহিক ঈদ হলো, জুমার দিন।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ঈদুল ফিতর ও আজহার শেষে সাহাবিরা একে অপরের সঙ্গে দেখা হলে এ বলে, শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন: ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ ‘আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের পক্ষ থেকে (নেক আমল) কবুল করুন।’ তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা সাহাবিরা জুমার দিন উপলক্ষে কোনো ধরণের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না।

আর এ কথা অজানা নয়, দ্বীনের মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবিদের আদর্শের বাইরে নতুন কিছু প্রচলন করা বা আমল করার নামই বিদাত। আর প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা দ্বীনের মাঝে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে, কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদাত। আর প্রতিটি বিদাতের পরিণাম গোমরাহি বা ভ্রষ্টতা।

সহিহ বুখারী, হা:৭২৭৭, অধ্যায়: কোরআন ও সুন্নাহকে শক্তভাবে ধরে থাকা।​

রাসুল (সা.) আরো বলেন,

যে ব্যক্তি দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন নতুন জিনিষ চালু করল তা পরিত্যাজ্য।

বুখারী, অধ্যায়: সন্ধি-চুক্তি।

আর সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে,

যে ব্যক্তি এমন আমল করল যার ব্যাপারে আমার নির্দেশ নাই তা প্রত্যাখ্যাত।

সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: বিচার-ফয়সালা।

কিছু মানুষকে দেখা যায়, জুমার দিন এলে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ব্লগ ইত্যাদিতে ‘জুমা মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে পোস্ট দেয়! কেউ বা সামনা-সামনি দেখা হলে ‘জুমা মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা বিনিময় করে! এগুলো থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবিদের আদর্শের মধ্যেই আমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এর বাইরে কোনো কল্যাণ আশা করা যায় না।

আল্লাহ আমাদেরকে বিদাত থেকে হেফাজত করুন; আমিন।

জুমার নামাজের ইতিহাস​

১ম হিজরীতে জুম’আ ফরয হয় এবং হিজরতকালে ক্বাবা ও মদীনার মধ্যবর্তী বনু সালেম বিন আওফ গােত্রের ‘রানূনা উপত্যকায় সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুম’আর ছালাত আদায় করেন।

মির’আত ২/২৮৮; ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ২/২১১।

যাতে একশত মুছল্লী শরীক ছিলেন।

ইবনু মাজাহ হা/১০৮২; সীরাতে ইবনে হিশাম ১/৪৯৪; যা-দুল মাআদ ১/৯৮।

তবে হিজরতের পূর্বে মদীনার আনছারগণ আপােষে পরামর্শক্রমে ইহুদী ও নাছারাদের সাপ্তাহিক ইবাদতের দিনের বিপরীতে নিজেদের জন্য একটি ইবাদতের দিন ধার্য করেন ও সেমতে আসআদ বিন যুরারাহ (রাঃ)-এর নেতৃত্বে মদীনার বনু বায়াযাহ গােত্রের নাক্বী’উল খাযেমাত নামক স্থানের সমতল ভূমিতে সর্বপ্রথম জুম’আর ছালাত চালু হয়। যেখানে চল্লিশ জন মুছল্লী যােগদান করেন।

ইবনু মাজাহ হা/১০৮২; আবুদাউদ হা/১০৬৯ সনদ হাসান।

অতঃপর হিজরতের পর জুম’আ ফরয করা হয়।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, জুমআর এই দিনটি প্রথমে ইয়াহূদ-নাছারাদের উপরে ফরয করা হয়েছিল; কিন্তু তারা এ বিষয়ে মতভেদ করে; তখন আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে এই দিনের প্রতি (অহীর মাধ্যমে) হেদায়াত দান করেন; এক্ষণে সকল মানুষ আমাদের পশ্চাদানুসারী; ইহুদীরা পরের দিন (শনিবার) এবং নাছারারা তার পরের দিন (রবিবার)।

মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৩৫৪ ‘জুম‘আ’ অনুচ্ছেদ-৪২।

যেহেতু আল্লাহ শনিবারে কিছু সৃষ্টি করেননি এবং আরশে স্বীয় আসনে সমাসীন হন, সেহেতু ইহুদীরা এদিনকে তাদের সাপ্তাহিক ইবাদতের দিন হিসাবে বেছে নেয়। যেহেতু আল্লাহ রবিবারে সৃষ্টির সূচনা করেন, সেহেতু নাছারাগণ এ দিনটিকে পসন্দ করে। এভাবে তারা আল্লাহর নির্দেশের উপর নিজেদের যুক্তিকে অগ্রাধিকার দেয়। পক্ষান্তরে জুম’আর দিনে সকল সৃষ্টিকর্ম সম্পন্ন হয় এবং সর্বশেষ সৃষ্টি হিসাবে আদমকে পয়দা করা হয়। তাই এ দিনটি হল সকল দিনের সেরা। এই দিনটি মুসলিম উম্মাহর সাপ্তাহিক ইবাদতের দিন হিসাবে নির্ধারিত হওয়ায় বিগত সকল উম্মতের উপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়।

মির’আত ৪/৪১৯-২১ পৃঃ; ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা আরাফ ৫৪।

কা’ব বিন মালেক (রাঃ) অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আযানের আওয়ায শুনে বিগলিত হৃদয়ে বলতেন, আল্লাহ রহম করুন আসআদ বিন যুরারাহ্র উপর, সেই-ই প্রথম আমাদের নিয়ে জুম’আর ছালাত কায়েম করে রাসূল (ছাঃ)-এর মক্কা থেকে আগমনের পূর্বে।

ইবনু মাজাহ হা/১০৮২ ছালাতে দাঁড়ানাে অধ্যায়-৫, জুমআ ফরয হওয়া’ অনুচ্ছেদ-৭৮।

জুমার দিনের ফজিলত​

১. জুমু’আর দিন সর্বোত্তম দিন:​

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিনকে সর্বোত্তম দিন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

সূর্য উদয় হয়েছে এমন দিনগুলাের মধ্যে সর্বোত্তম দিন জুমু’আর দিন। এ দিন আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিনে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানাে হয় এবং এ দিনে তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়। আর কিয়ামত জুমু’আর দিনেই সংঘটিত হবে।

মুসলিম, হাদিস: ৮৫৪, ১৮; তিরমিযি, হাদিস: ৪৮৮; নাসায়ী, হাদিস: ৮৯/৩

২. এ দিনটির মধ্যে জুমু’আর সালাত রয়েছে:​

যা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান এবং মুসলিমদের মহান মিলন মেলা। যে ব্যক্তি কোন কারণ ছাড়া জুমু’আর সালাত ছেড়ে দেবে, আল্লাহ তা’আলা তার অন্তরে মােহর মেরে দেবে।

মুসলিম, হাদিস নং ৮৬৫

৩. এ দিনটি দু’আ কবুল হওয়ার দিন:​

জুমু’আর দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে মুহূর্তে দু’আ করলে, আল্লাহ তাআলা দু’আ কবুল করেন। তবে মুহূর্তটি অজ্ঞাত রাখা হয়েছে, যাতে মানুষ পুরাে জুমু’আর দিনটিকে গুরুত্ব দেয় এবং মুহূর্তটি অনুসন্ধান করতে থাকে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

জুম’আর দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যদি কোন মুসলিম বান্দা ঐ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় রত অবস্থায় আল্লাহর নিকট কোন কিছু প্রার্থনা করেন আল্লাহ তা’আলা তাকে তা অবশ্যই দেবেন।

বুখারি, হাদিস: ৯৩৫ মুসলিম, হাদিস: ৮৫২

আল্লামা ইবনুল কাইয়েম রহ. জুমু’আর দিন দু’আ কবুলের সময়টির ব্যাপারে আলেমদের বিভিন্ন মতামত তুলে ধরার পর বলেন, সবচেয়ে গ্রহণ যােগ্য মতামত হল, দুটি মত যে দুটি মতামত হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত ও প্রমাণিত।

১- ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে সালাত শেষ করা পর্যন্ত মুহূর্তটি। কারণ, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে সালাত শেষ করা পর্যন্ত।

মুসলিম, হাদিস: ৮৫৩; সহীহ ইবনু খুজাইমা, ১৭৩৯; বাইহাকী, হাদিস: ৫৯৯৯

২- মুহুর্তটি হল, জুমু’আর দিন আছরের সালাত আদায়ের পর। এটি উল্লেখিত দুটি মতের মধ্যে সর্বাধিক গ্রহণ যােগ্য মতামত।

যাদুল মা’আদ: ৩৯০, ৩৮৯/১

৪. সদকা করার জন্য উত্তম দিন:​

জুম’আর দিন সদকা করা অন্যান্য দিনের তুলনায় অধিক উত্তম। আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম রহ. বলেন, সপ্তাহের অন্যান্য দিনে সদকা করার তুলনায় এ দিনে সদকা করা এমন উত্তম যেমন বছরের অন্যান্য মাসের সদকার তুলনায় রমাদান মাসে সদকা করা উত্তম। কাআব বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বিশুদ্ধ সনদে মওকুফ হাদিস যা মারফু হাদিস বলে বিবেচিত এমন একটি হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন,

জুমু’আর দিন সদকা করা অন্যান্য দিন সদকা করার তুলনায় অধিক সাওয়াব ও গুরুত্বপূর্ণ।

মুসলিম

৫. জান্নাতীদের আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের দিন:​

জুমু’আ এমন একটি দিন, যে দিন আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে মুমিন বন্ধুদের সাথে সাক্ষাত করবেন। আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা প্রতি জুমুআর দিন জান্নাতীদের জন্য প্রকাশ্যে আসবেন।

৬. জুমুআর দিন মুসলিমদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন:​

জুমু’আর দিন মুসলিমদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন। আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

এটি ঈদের দিন আল্লাহ তাআলা মুসলিমদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। যে ব্যক্তি জুমু’আর সালাতে উপস্থিত হয় সে যেন ওজু করে উপস্থিত হয়।

ইবনু মাযাহ, হাদিস: ১০৯৮; সহীহ আত-তারগীব: ২৯৮/১; আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।

৭. গুনাহ মাফের দিন:​

এ দিন আল্লাহ তা’আলা বান্দার গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেন। সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন গােসল করল, যথাসাধ্য পবিত্রতা অর্জন করল, তেল লাগালাে এবং ঘর থেকে আতর খােশবু লাগিয়ে ঘর থেকে বের হল, দুই ব্যক্তির মাঝে ফাঁক করে সামনে গেল না, অতঃপর তার তাকদীরে যত সালাত পড়া নির্ধারিত ছিল তা আদায় করল এবং ইমামের খুতবার সময় সে চুপ থাকল, তাহলে তার এ জুমু’আ থেকে পরবর্তী জুমু’আ পর্যন্ত সংঘটিত গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।

বুখারি, হাদিস: ৯১০, ৮৮৩

৮. এক বছর কিয়ামুল লাইল ও এক বছর রােজা রাখার সাওয়াব:​

জুমু’আর দিন পায়ে হেঁটে জুমু’আর সালাতে উপস্থিত হওয়া এক বছর রােজা রাখা ও এক বছর কিয়ামুল লাইল করার সম পরিমাণ সাওয়াব সমতুল্য।

আউস ইবনে আওস আস-সাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,

যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন নিজে গােসল করল, অপরকে উদ্বুদ্ধ করল, সকাল সকাল মসজিদে গমন করল, অপরকে উৎসাহ দিল এবং আরােহণ না করে পায়ে হেঁটে মসজিদে এসে ইমামের কাছাকাছি বসল, কোন অনর্থক কর্ম করল না, সে প্রতিটি কদমে এক বছর রােজা রাখা এবং এক বছর কিয়ামুল লাইল করার সাওয়াব পাবে।

আহমদ, হাদিস: ১৬১৭৩

৯. এ দিন জাহান্নামকে প্রজ্বলিত করা বন্ধ থাকে:​

সপ্তাহের প্রতি দিন জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হয়, কেবল জুমু’আর দিন ছাড়া। জুমু’আর দিনের সম্মানে এ দিনে জাহান্নামকে প্রজ্বলিত করা ও উত্তপ্ত করাকে বন্ধ করে রাখা হয়।

যাদুল মা’আদ: ৩৮৭/১

১০. জুমু’আর দিন বা জুমু’আর রাত্রিতে মৃত্যু বরণ করা শুভ লক্ষণ:​

জুমু’আর দিন বা জুমুআর রাত্রিতে মৃত্যু বরণ করা, উত্তম পরিণতির লক্ষণ। কারণ, জুমু’আর দিন বা জুমু’আর রাত্রিতে যে ব্যক্তি মারা যায় সে ব্যক্তি কবরের আযাব ও মুনকার নকীরের প্রশ্ন হতে বেঁচে যায়। আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

যে কোন মুসলিম জুমু’আর দিন বা জুমু’আর রাতে মারা গেল আল্লাহ তা’আলা তাকে অবশ্যই কবরের আযাব থেকে রেহাই দেবেন।

আহমদ ৬৫৮২; তিরমিযি, হাদিস: ১০৭৪ আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।

জুমার নামাজের ফজিলত​

১. গুনাহ মাফ হয়:​

জুমু’আর দিন জুমু’আর সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে ভালােভাবে ওজু করে মসজিদে গমন করলে আল্লাহ তা’আলা গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেন। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

যে ব্যক্তি সুন্দর করে ওযু করল, অতঃপর জুমু’আর সালাতে উপস্থিত হয়ে মনােযােগ দিয়ে জুমু’আর খুতবা শুনল এবং চুপ থাকলাে, তার জন্য এ জুমু’আ থেকে পরবর্তী জুমু’আ পর্যন্ত মধ্যবর্তী গুনাহগুলাে ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি পাথর স্পর্শ করল সে অনর্থক কর্ম করল।

মুসলিম, হাদিস: ৮৫৭, ২৭; আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫০ তিরমিযি, হাদিস: ৪৯৮ ইবনু মাযা, হাদিস: ১০২৫, ১০৯০।

২. জুমু’আর সালাত কবিরা গুনাহ ছাড়া অন্যান্য গুনাহের জন্য কাফফারা:​

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, জুমু’আ এবং রামাদানের মধ্যবর্তী সময়ে যে সব গুনাহ হয়ে থাকে, পরবর্তী সালাত, জুমু’আ ও রমাদান সে সব মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের জন্য কাফফারা। যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।

মুসলিম, হাদিস: ২৩৩

অপর একটি হাদিস- আবু আইয়ুব আল আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি- তিনি বলেন,

যে ব্যক্তি জুমুআর দিন গােসল করে, আতর-খােশবু লাগায়, যদি তার কাছে থাকে এবং সুন্দর জামা-কাপড় পরে, মসজিদে এসে সালাত আদায় করে এবং কাউকে সে কষ্ট না দেয়, তারপর সে জুমু’আর সালাত আদায় করা পর্যন্ত চুপ থাকে, তাহলে তা তার এ জুমু’আ থেকে পরবর্তী জুমু’আ পর্যন্ত সংঘটিত গুনাহ সমূহের কাফফারা হবে।

আহমদ, হাদিস: ২৩৫৭১; ইবনু খুজাইম, হাদিস: ১৭৬২

৩. আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করা হবে:​

আবু মালেক আল-আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

জুমু’আর সালাত তার পরবর্তী জুমুআ পর্যন্ত মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের এবং আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহের জন্য কাফফারা। কারণ, আল্লাহ তা’আলা বলেন, যে কোন নেক আমল করে আল্লাহ তা’আলা তার সাওয়াবকে দশ গুণ বাড়িয়ে দেন।

সহীহ আত-তারগীব, হাদিস: ৬৮২

৪. জুমু’আর সালাত জান্নাত লাভের বিশেষ আমল:​

জুমু’আর সালাত আদায় দ্বারা জান্নাত লাভ করা যায়। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন,

যে ব্যক্তি কোন দিন পাঁচটি আমল করবে, আল্লাহ তা’আলা তার নাম জান্নাতীদের খাতায় লিপিবদ্ধ করবেন: রােগী দেখতে যাবে, কারও জানাযায় উপস্থিত হবে, রােযা রাখবে, জুমু’আর সালাতে গমন করবে এবং দাস মুক্ত করবে।

সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ২৭৭১; সহীহ আত-তারগীব, হাদিস: ৬৮৩

৫. প্রতিটি কদমে কদমে এক বছর রােজা রাখা ও কিয়ামুল লাইল করার সাওয়াব:​

পায়ে হেঁটে জুম’আর সালাতে গমন করলে, প্রতি কদমে এক বছর রােজা রাখা এবং এক বছর কিয়ামুল লাইল করার সাওয়াব পাবে। আউস ইবনে আওস আস-সাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি,

যে জুমু’আর দিন গােসল করাল ও করল, সকাল সকাল নিজে মসজিদে গমন করল, অপরকে উৎসাহ দিল এবং আরােহণ না করে পায়ে হেঁটে মসজিদে এসে ইমামের কাছাকাছি বসল, অতঃপর শুনল এবং কোন অনর্থক কর্ম করল না, সে প্রতিটি কদমে এক বছর রােজা রাখা এবং এক বছর কিয়ামুল লাইল করার সাওয়াব পাবে।

আহমদ, হাদিস: ১৬১৭৬; আবু দাউদ, হাদিস: ৩৪৫; তিরমিযি, হাদিস: ৪৯৬

৬. জন্তু কুরবানি করার সাওয়াব:​

জুমু’আর দিন যে ব্যক্তি যত আগে জুমু’আর সালাতে আসবে, সে তত বেশি সাওয়াব লাভ করবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

যে ব্যক্তি জুমুআর দিন ফরয গােসলের মত গােসল করে, তারপর প্রথম সময়ে মসজিদে গমন করে, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি উট কুরবানি করল। তারপর যে লােকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি গরু কুরবানি করল। তারপর যে লােকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি ভেড়া কুরবানি করল। তারপর যে লােকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি মুরগী আল্লাহর রাস্তায় দান করল। তারপর যে লােকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করল। অত:পর যখন ইমাম উপস্থিত হয়, তখন ফেরেশতারাও উপস্থিত হয় এবং তার খুতবা শ্রবণ করে।

বুখারী হাদিস নং ৮৮১

জুমার নামাজ ফরজ না ওয়াজিব​

জুমু’আর সালাত প্রত্যেক বালেগ মুসলিমের উপর ফরযে আইন। জুমুআর সালাত ফরয হওয়া কুরআন এবং হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

এক- কুরআন দ্বারা প্রমাণ:​

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

হে বিশ্বাসীগণ! যখন জুমআর নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা কেনাবেচা বন্ধ করে আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও। এটা তোমাদের নিজেদের কল্যাণের জন্যেই, যদি তোমরা বুঝতে।

সূরা আল জুমা আয়াত নং ৯

আল্লাহ তা’আলা মানুষকে জুমু’আর দিন আযানের পর আল্লাহর জিকিরের দিক ছুটার নির্দেশ দেন। আল্লাহর নির্দেশ পালন করা ওয়াজিব। সুতরাং, জুমু’আর দিন আযানের পর জুমু’আর সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন অবশ্যই ফরয। আল্লাহ তা’আলা জুমুম’আর দিন আযানের পর বেচা-কেনা করতে নিষেধ করেছেন যাতে জুমু’আর সালাত ছুটে না যায়। যদি জুমু’আর সালাত ফরয না হত, তাহলে তিনি বেচা-কেনা করতে নিষেধ করতেন না।

দুই- হাদিস দ্বারা প্রমাণ:​

প্রথম হাদিস

আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যারা জুম’আর সালাত থেকে বিরত থাকে, তাদের সম্পর্কে বলেন, “আমার ইচ্ছে হয়, একজনকে সালাতের দায়িত্ব দেই যাতে সে মুসল্লিদের নিয়ে সালাত আদায় করে। অত:পর আমি যারা জুমু’আর সালাত থেকে বিরত থাকে তাদের বাড়ি ঘর জালিয়ে দেই।

মুসলিম, হাদিস: ৬৫২, ২৫৪; আহমদ, হাদিস: ৩৮১৬

দ্বিতীয় হাদিস

আবু হুরাইরা ও আব্দুল্লাহ ওমর উভয় সাহাবী থেকে বর্ণিত, তারা দুই জন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাঠের মিম্বারের উপর আরােহণ করে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন, “লােকেরা হয়ত জুমু’আর সালাত পড়া থেকে বিরত থাকবে, অথবা আল্লাহ তা’আলা তাদের অন্তরে মােহর মেরে দেবেন। ফলে তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

মুসলিম, হাদিস: ৮৬৫; আহমদ, হাদিস: ২২৯০; নাসায়ী, হাদিস: ১৩৭০

তৃতীয় হাদিস

আবুল জাআদ আদ-দামরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে অলসতা বসত তিনটি জুমু’আ ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তা’আলা তার অন্তরের উপর মােহর মেরে দেয়।

আহমদ, হাদিস: ১৫৪৯৮; ইবনু মাযা, হাদিস: ১১২৫; আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫২

চতুর্থ হাদিস

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুমু’আর সালাতে উপস্থিত হওয়া প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক বালেগ ব্যক্তির উপর ফরয।

নাসায়ী, হাদিস: ১৩৭১; আবু দাউদ, হাদিস: ৩৪২; ইবনু খুজাইমাহ, হাদিস: ১৭২১

জুমার নামাজ কত রাকাত​

জুমার সালাত দুই রাকাত। জুম’আর পূর্বে নির্দিষ্ট কোন সুন্নাত ছালাত নেই। মুছল্লী কেবল তাহিয়াতুল মাসজিদ’ দু’রাকআত পড়ে বসবে। অতঃপর সময় পেলে খত্বীব মিম্বরে বসার আগ পর্যন্ত যত খুশী নফল ছালাত আদায় করবে। জুমআর ছালাতের পরে মসজিদে চার রাকআত অথবা বাড়ীতে দু’রাকআত সুন্নাত আদায় করবে। তবে মসজিদেও চার বা দুই কিংবা দুই ও চার মােট ছয় রাকআত সুন্নাত ও নফল পড়া যায়।

মুসলিম, মিশকাত হা/১১৬৬ ‘সুন্নাত ছালাত সমূহ ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-৩০; তিরমিযী হা/৫২২-২৩ ‘জুম’আ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-২৪; মির’আত ২/১৪৮; ঐ, ৪/১৪২-৪৩।

ইবনু ওমর (রাঃ) চার রাকআত সুন্নাত এক সালামে পড়তেন। তবে দুই সালামেও পড়া যায়।

মিরআত ৪/২৫৭-৫৮।

জুমআর (খুৎবার) পূর্বে এক সালামে চার রাকআত পড়ার হাদীছটি যঈফ।

ইবনু মাজাহ হা/১১২৯ ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, ‘জুমআর পূর্বে ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৯৪।

জুমার নামাজের নিয়ম​

এক- জুমু’আর সালাত দুই রাকআত। উভয় রাকআতে কিরাত বড় আওয়াজে তিলাওয়াত করবে। আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জবানে জুমুআর সালাত দুই রাকআত, ঈদুল ফিতরের সালাত দুই রাকআত, ঈদুল আযহার সালাত দুই রাকআত, সফর অবস্থায় সালাত দুই রাকআত, পূর্ণ, তাতে কোন কছর নাই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বক্তব্য দ্বারা এটা সাব্যস্ত হয়েছে।

নাসায়ী হাদিস: ১৪২০; ইবনু মাযাহ, হাদিস: ১০৬৪; আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।

দুই- জুমু’আর সালাতের প্রতি রাকআতে সূরা আল-ফাতেহা পড়বে এবং তারপর যে কোন একটি সূরা পাঠ করবে। তবে সুন্নত হল, প্রথম রাকআতে সূরা আল-ফাতেহার পর সূরাতুল জুমু’আ এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরাতুল মুনাফিকুন পড়া অথবা প্রথম রাকআতে সূরাতুল আ’লা এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা আল-গাশিয়াহ পড়া।

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আর দিন ফজরের সালাতে ‘আলিফ মিম তানযীল’ এবং সুরা আদ-দাহার’ পড়তেন এবং জুমু’আর সালাতে সূরাতুল জুমু’আ এবং সূরাতুল মুনাফিকুন পড়তেন।

মুসলিম, হাদিস: ৩০৯৬; নাসায়ী হাদিস: ১৪২১; বাইহাকী: ৫৭২৭

তিন- জুমু’আর সালাতের পূর্বে কোন সুন্নত সালাত নাই। তবে নফল সালাত যত চায় পড়তে পারবে। আর জুমু’আর সালাতে পর সুন্নত সালাত দুই রাকআত বা চার রাকআত।

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

যখন তােমাদের কেউ জুমু’আর সালাত আদায় করে, সে যেন তারপর চার রাকআত সালাত আদায় করে।

মুসলিম, হাদিস: ৮৮১ নাসায়ী, হাদিস: ১৪২৬; ইবনু মাযাহ, হাদিস: ১১৩২

অপর একটি হাদিসে আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,​

রাসূল রাদিয়াল্লাহু আনহু জুম’আর সালাত আদায় করার পর কোন সালাত আদায় করতেন না। তিনি চলে যেতেন এবং তারপর দুই রাকআত সালাত আদায় করতেন।

অপর একটি হাদিসে আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আর সালাত আদায় করার পর স্বীয় ঘরে দুই রাকআত সালাত আদায় করতেন।

বুখারি, হাদিস: ৯৩৭; মুসলিম, হাদিস: ৮৮২; নাসায়ী, হাদিস: ১৪২৮; আবু দাউদ, হাদিস: ১১৩২; ইবনু মাযা, হাদিস: ১১৩১, তিরমিযি, হাদিস: ৫২১।

সুন্নাত হল, ফরয সালাত শেষ করার সাথে সাথে কোন প্রকার কথা-বার্তা বলা ও স্থান পরিবর্তন করা ছাড়া সুন্নাত সালাত আদায়ের জন্য না দাঁড়ানাে। ফরয ও সুন্নাতের মাঝখানে স্থান পরিবর্তন বা কথা-বার্তা বলে বিরত নেয়া সুন্নাত।

ওমর বিন আতা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাফে বিন জুবাইর তাকে সায়েব এর নিকট পাঠালেন, যাতে সে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে সালাতে যা করতে দেখছেন সে সম্পর্কে সংবাদ দেন। তখন তিনি বললেন, আমি তার সাথে মাকসুরামসজিদে নির্মিত ছােট কামরা-তে জুমু’আর সালাত আদায় করি। ইমাম সালাম ফেরানাের পর আমি আমার স্বীয় স্থানে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করি। তারপর যখন তিনি সালাত শেষ করেন, তখন স্বীয় ঘরে প্রবেশ করে আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, এমন কাজ তুমি দ্বিতীয় বার করবে না। যখন তুমি জুমু’আর সালাত আদায় কর, তখন তুমি কথা-বার্তা বলা ছাড়া অথবা মসজিদ থেকে বের হওয়া ছাড়া কোন সালাত আদায় করবে না। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এ বিষয়ে নির্দেশ দেন যে, আমরা যেন কোন কথা-বার্তা বলা বা মসজিদ থেকে বের হওয়া ছাড়া ফরযের সাথে মিলিয়ে কোন সালাত আদায় না করি।

মুসলিম, হাদিস: ৮৮৩।

জুমার নামাজের নিয়ত​

প্রত্যেক ইবাদাতের জন্য নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত মানে হচ্ছে মনের সংকল্প। আর তার স্থান হল অন্তর; মুখ নয়। মহানবী সঃ ও তার সাহাবীদের কেউই কোন নির্দিষ্ট শব্দ মুখে উচ্চারণ করতেন না; তাই তা মুখে উচ্চারণ করা বিদআত; তাছাড়া নিয়তের জন্য কোন বাধা-ধরা শব্দাবলীও নেই; যেকোন ইবাদাতের জন্য মনে মনে সংকল্প করলেই নিয়ত হয়ে যাবে; মুখে কিছু উচ্চারণের প্রয়োজন নেই।

আলক্বামাহ ইবনে ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,

আমি উমর ইব্নুল খাত্তাব (রাঃ)-কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়ত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে।

সহীহ বুখারী হাদিস নং ১

জুমার দিনের ওয়াজিব বা ফরজ সমূহ​

১. খুতবার সময় চুপ থাকা, কথা না বলা ও কোনো অযথা কাজ না করা​

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি জুমার দিন ইমামের খুৎবা রত অবস্থায় তোমার সাথীকে (কাউকে) বল: চুপ কর, তাহলে তুমি নিরর্থক কথা বললে।

সহীহ বুখারী ও মুসলিম

২. মসজিদে প্রবেশ করে বসার পূর্বে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করা, যদিও তা ইমামের খুতবার অবস্থায় হয়​

জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, জুমার দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খুৎবারত অবস্থায় এক ব্যক্তি প্রবেশ করল। তিনি তাকে বললেন, “তুমি সালাত আদায় করেছ?” সে বলল: না, তিনি বললেন, “দাড়াও! দুই রাকাত সালাত আদায় কর।

বুখারী ও মুসলিম

জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত আছে: জুমার দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুত্বরত অবস্থায় সুলাইক আল-গাতফানী রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদে এসে বসে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, হে সুলাইক! দাড়াও, দুই রাকাত হালকা সালাত পড়। অতঃপর তিনি বললেন, “জুমার দিন ইমামের খুতবা রত অবস্থায় তোমাদের কেউ আসলে হালকা করে দুই রাকাত সালাত পড়।

সহীহ মুসলিম

৩. জুমার সালাত আদায় করা​

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “জামাতের সাথে জুমার সালাত আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরয, তবে চারজন এর ব্যতিক্রম, ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ বালক এবং অসুস্থ ব্যক্তি।

সুনানে আবু দাউদ

জুমার দিনের ১১ টি আমল​

১. জুমার দিনে ফজরের সালাতে বিশেষ কিরাত পাঠ করা​

জুমার দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতে প্রথম রাকাতে সূরা আস-সাজদাহ ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা আদ-দাহর (ইনসান) পড়তেন।

সহীহ বুখারী ও মুসলিম

২. বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করা​

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিঃসন্দেহে জুমার দিন তোমাদের সর্বোত্তম দিনসমূহের মধ্যে অন্যতম। সেই দিনে আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তার জান কবজ করা হয়েছে, শিঙ্গায় ফুৎকার হবে এবং (আসমান ও যমীন বাসী) ধ্বংস অথবা বেহুশ হবে। সুতরাং সে দিনে বেশি বেশি করে আমার উপর সালাত পাঠ কর; কেননা তোমাদের সালাত আমার নিকট পেশ করা হয়।” তারা (সাহাবায়ে কেরাম) জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের সালাম আপনার নিকটে কিভাবে পেশ করা হবে অথচ তখন আপনি (অর্থাৎ তাঁর হাড্ডি) পুরাতন হয়ে যাবেন? তিনি বললেন, আল্লাহ নবীগণের শরীর মাটির জন্য খাওয়া হারাম করে দিয়েছেন।

সুনানে নাসাঈ

৩. সূরা কাহাফ পাঠ করা​

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ পাঠ করবে অপর জুমা পর্যন্ত একটি নূর তাকে আলোকিত করবে।

হাকেম, শাইখ আলবানী ইরওয়াতে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

৪. গোসল করা​

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ জুমু’আর সালাতে আস্তে তাহলে সে যেন অবশ্যই গোসল করে আসে।

সহীহ বুখারী ও মুসলিম

এ হাদীসে উল্লেখিত আদেশ থেকে গোসল ফরয সাব্যস্ত হবে না; বরং তার অর্থ হলো গােসল উত্তম; কেননা অপর একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি ওযু করে জুমআর সালাতে আসে তা যথেষ্ট হবে। তবে গোসল করা উত্তম।

সুনান তিরমিযী

৫. মেসওয়াক করা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা​

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুমআর দিন প্রত্যেক বালেগ (বয়স প্রাপ্ত) ব্যক্তি গোসল ও মেসওয়াক করবে এবং সামর্থ্য অনুসারে সুগন্ধি লাগাবে।

সহীহ মুসলিম

৬. সামর্থ্য অনুসারে সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পরিধান করা​

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল ও সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করে এবং সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পরিধান করে, অতঃপর শান্তভাবে মসজিদে আসে, মনে চাইলে সালাত পড়ে, কাউকে কষ্ট না দেয়, ইমাম আসার পর থেকে নিয়ে সালাত আদায় পর্যন্ত চুপ থাকে তার জন্য এটা উভয় জুমু’আর মাঝের কাফফারা হবে।

আহমাদ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, তোমাদের কারো যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে সে কাজের দুটি পোশাক ব্যতীত জুমার জন্য দুটো আলাদা পোশাক রাখতে পারে, তাতে কোন অসুবিধা নেই।

সুনানে আবু দাউদ

৭. সকাল সকাল সালাতের জন্য যাওয়া​

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জুমু’আর দিনে (সহবাসের পর) ফরজ গোসল করে অতঃপর (জুমুআর উদ্দেশ্যে) গমন করে সে যেন একটি উট সদকা করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় ভাগে গমন করে সে যেন একটি গরু সদকা করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় ভাগে গমন করে সে যেন একটি মেষ সদকা করল। যে ব্যক্তি চতুর্থ ভাগে গমন করে সে যেন একটি মুরগী সদকা করল। যে ব্যক্তি পঞ্চম ভাগে গমন করে সে যেন একটি ডিম ছদকা করল। যখন ইমাম (খুতবার উদ্দেশ্যে) বের হয়ে আসে তখন ফেরেশতাগণ হাজির হয়ে জিকির (খুৎবা) শ্রবণ করতে থাকে।

সহীহ বুখারী ও মুসলিম

৮. ইমাম সাহেব খুতবার জন্য বের হওয়ার আগ পর্যন্ত (নফল) সালাত ও জিকিরে লিপ্ত থাকা​

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি গোসল করে জুমার সালাতে আসবে অতঃপর ইমাম খুৎবা শেষ করা পর্যন্ত তাওফিক অনুসারে সালাত পড়বে ও চুপ থাকবে তারপর ইমামের সঙ্গে জুমু’আর সালাত আদায় করবে তাকে (তার গুনাহ) সামনের জুমু’আ এবং তার পরের তিন দিন পর্যন্ত ক্ষমা করে দেওয়া হবে।

সহীহ মুসলিম

৯. দ্বিপ্রহরের সঙ্গে সঙ্গে যতদূর সম্ভব তাড়াতাড়ি জুমার সালাত কায়েম করা​

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢালার পর জুমু’আর সালাত আদায় করতেন। তিনি আরো বলেন: আমরা জুমার সালাত আগেভাগে পড়ে নিতাম এবং জুমু’আর পর (দুপুরের খানা খেয়ে) আরাম করতাম।

সহীহ বুখারী

সালামা ইবনে আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সূর্য ঢালার পর জুমার সালাত আদায় করতাম এবং সালাতের পর (সূর্যের অত্যাধিক তাপের কারণে) ছায়ায় ফিরে আসতাম।

সহীহ মুসলিম

১০. জুমার সালাতের জন্য বিশেষ সূরা নির্দিষ্ট করা​

জুমার সালাতের দুই রাকাতে সূরা আল-আ’লা ও সূরা আল-গাশিয়া পাঠ করা অথবা সূরা আল-জুমুআ ও সূরা আল-মুনাফিকুন পাঠ করা। নুমান ইবনে বশির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই ঈদ এবং জুমার সালাতে সূরা আল আ’লা ও সূরা আল-গাশিয়াহ পড়তেন।

সহীহ মুসলিম

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার সালাতে সূরা আল-জুমুআ ও সূরা আল-মুনাফিকুন পাঠ করতেন।

সহীহ মুসলিম

১১. জুমার পরে বাড়ীতে দুই রাকাত অথবা মসজিদে চার রাকাত সালাত আদায় করা​

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার পর (বাড়ি) না ফেরা পর্যন্ত কোন সালাত পড়তেন না। (বাড়ী ফেরার) পরে দুই রাকাত সালাত আদায় করতেন।

সহীহ বুখারী

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা যখন জুমার সালাত আদায় করবে তখন জুমার পর চার রাকাত সালাত পড়বে।

সহীহ মুসলিম

জুমার দিনের দোয়া​

জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে মুহূর্তে দুআ করলে, আল্লাহ তাআলা দুআ কবুল করেন। তবে মুহূর্তটি অজ্ঞাত রাখা হয়েছে, যাতে মানুষ পুরো জুমার দিনের গুরুত্ব দেয় এবং মুহূর্তটির অনুসন্ধান করতে থাকে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

জুম’আর দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যদি কোন মুসলিম বান্দা ঐ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় রত অবস্থায় আল্লাহর নিকট কোন কিছু প্রার্থনা করেন আল্লাহ তা’আলা তাকে তা অবশ্যই দেবেন।

বুখারি, হাদিস: ৯৩৫ মুসলিম, হাদিস: ৮৫২

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ. জুমার দিন দুআ কবুলের সময় এর ব্যাপারে আলেমদের বিভিন্ন মতামত তুলে ধরার পর বলেন, সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতামত হল দুটি মত, যে দুটি মতামত হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত ও প্রমাণিত।

১- ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে সালাত শেষ করা পর্যন্ত মুহূর্তটি। কারণ, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে সালাত শেষ করা পর্যন্ত।

মুসলিম, হাদিস: ৮৫৩; সহীহ ইবনে খুজাইমা, ১৭৩৯; বাইহাকী, হাদিস: ৫৯৯৯

২- মুহুর্তটি হল, জুমার দিন আসরের সালাত আদায়ের পর।

যাদুল মা’আদ: ৩৯০, ৩৮৯/১

তিরমিযীর ভাষ্যকার আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির (রহঃ) বলেন, হাদীসের রাবী আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) এখানে রাসূল (ছাঃ)-এর বক্তব্য (সালাতের অবস্থা)- কে (সালাতের অপেক্ষারত) বলে ব্যাখ্যা করেছেন।​

তিরমিযী হা/৪৯১; আবুদাউদ হা/১০৪৬; মুয়াত্তা, নাসাঈ, মিশকাত হা/১৩৫৯ জুমা অনুচ্ছেদ-৪২।

এতেই বুঝা যায় যে, তিনি এটা সরাসরি রাসূল (ছাঃ) থেকে শুনেছেন বলে বর্ণনা করেননি। পক্ষান্তরে আমর বিন আউফ (রাঃ) বর্ণিত তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ এর হাদিসটি মারফু, যা ইমাম বুখারী ও তিরমিযী হাসান বলেছেন, সেটি রাসূল (ছাঃ)-এর বক্তব্য (ছালাতরত অবস্থা)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল। আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত অপর একটি হাদীছ একে শক্তিশালী করে। সেখানে এই সময়কালকে খত্বীব মিম্বরে বসা হতে সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত বলা হয়েছে।

মুসলিম, মিশকাত হা/১৩৫৮, ‘জুম’আ অনুচ্ছেদ-৪২।

ইবনুল আরাবী বলেন, এই বক্তব্যটিই অধিকতর সঠিক; কেননা এ সময়ের সম্পূর্ণটাই সালাতের অবস্থা; এতে হাদীসে বর্ণিত ‘ছালাতরত অবস্থায় বক্তব্যের সাথে শব্দগত ও অর্থগত উভয় দিক দিয়ে মিল হয়; বায়হাক্বী, ইবনুল আরাবী, কুরতুবী, নববী প্রমুখ এ বক্তব্য সমর্থন করেন।

আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির, শরহে তিরমিযী ২/৩৬৩-৬৪, হাঃ ৪৯০-৪৯১।

অতএব খতিব মিম্বরে বসা হতে সালাম ফিরানো পর্যন্ত ছালাতরত অবস্থায় দোয়া কবুলের মতটিই সহীহ হাদীসের অধিকতর নিকটবর্তী।

জুমার খুতবা​

১. জুমার সালাতের পূর্বে খতিব দুটি খুতবা দিবে​

উভয় খুতবাতে খতিব ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলাে আলােচনা করবেন। আল্লাহর প্রতি ঈমান, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, নবী, রাসূল ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমানের বিষয়গুলাে আলােচনা করবেন। জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কে আলােচনা করবেন। আল্লাহ তা’আলা তার প্রিয় বান্দাদের জন্য যে সব নেয়ামতের কথা বলেছেন এবং দুশমনদের জন্য যে সব শাস্তির কথা বলেছেন তা স্মরণ করিয়ে দিবেন। আল্লাহর দিকে মানুষকে ডাকবেন। যে সব আয়াতে আল্লাহর জিকির এবং শুকরিয়া আদায় করার নির্দেশ রয়েছে, সে সব আয়াত স্মরণ করিয়ে দিবেন। যে সব আয়াত আল্লাহকে মানুষের নিকট প্রিয় করে তুলে সে সব আয়াত সম্পর্কে আলােচনা করবেন। যাতে মানুষের অন্তর ঈমান ও তাওহীদের আলােতে ভরে যায় এবং শ্রোতারা এমনভাবে বাড়ীতে ফিরে, যেন তারা আল্লাহকে ভালাে বাসছেন এবং আল্লাহও তাদের ভালাে বাসছেন।

২. সংক্ষিপ্ত খুতবা দিবে​

খুতবা এমন দীর্ঘ না হয় যাতে মানুষ বিরক্ত হয়ে যায় আবার এত বেশি সংক্ষিপ্ত না হয় যাতে বুঝতে কষ্ট হয়। খুতবার লক্ষ্য উদ্দেশ্য যাতে হাসিল হয় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ, খুতবা দেয়ার উদ্দেশ্য হল, মানুষকে নছিহত করা, আযাব ও গজব সম্পর্কে ভয় দেখানাে এবং সতর্ক করা। খতীব যিনি হবেন। তাকে অবশ্যই সমাজের অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতে হবে। খুতবায় সমাজের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের উপর খুতবা দিতে চেষ্টা করবে। সমাজে যে বিষয়টি খুব প্রয়ােজন সে বিষয়ের উপর খুতবা দিবে। সময়ের প্রতিও যত্নবান হতে হবে এবং মুসল্লিদের প্রয়ােজনের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

আম্মার ইবনে ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, সালাতকে দীর্ঘ করা এবং খুতবাকে সংক্ষিপ্ত করা একজন মানুষের জ্ঞানী হওয়ার সুফল। সুতরাং তােমরা সালাতকে দীর্ঘ কর এবং খুতবাকে সংক্ষেপ কর। অনেক বক্তৃতা যাদুর সমতুল্য।

মুসলিম, হাদিস: ৮৬৯

অপর একটি হাদিসে বর্ণিত

জাবের বিন সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত আদায় করি, তার সালাত ছিল মধ্য পন্থার এবং তার খুতবা ছিল মধ্য পন্থার।

মুসলিম,হাদিস: ৮৬৬; নাসায়ী, হাদিস: ১৫৮২; তিরমিযি, হাদিস: ৫০৭

৩. যথা সময়ে খুতবা দিবে​

খতিব জুমুআর দিন জুমু’আর খুতবা দেয়ার জন্য ওয়াক্ত হওয়ার পর সাথে সাথে কাল ক্ষেপণ না করে মসজিদে চলে আসবে। খতীব জায়গায় পৌছার পর মিম্বারকে সামনে নিয়ে আসবে। খতীব তাহিইয়্যাতুল মসজিদ পড়বে না। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সরাসরি মিম্বারের উপর আরােহণ করতেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিতে এসে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়েছেন এমন কোন প্রমাণ নাই; খতীব প্রথমে মুসল্লিদের সালাম দেবেন, তারপর আযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত মিম্বারে বসবেন; মুয়াজ্জিন যখন আযান শেষ করবে তখন খুতবা দেয়ার জন্য দাঁড়াবেন এবং খুতবা আরম্ভ করবেন।

সায়েব বিন ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগ, আবু বকর ও ওমরের যুগে জুমু’আর দিন ইমাম যখন মিম্বারে বসত তখন প্রথম আযান দেয়া হত। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর যুগে যখন মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেল, তখন তিনি অপর একটি আযানের নির্দেশ দিলেন। তারপর আরেকটি আযানের প্রচলন। এখন সমস্ত মুসলিম দেশে দুই আযান একটি একামত দ্বারা জুম’আর সালাত আদায় করা হয়।

বুখারি, হাদিস: ৯১৬

৪. মিম্বারের উপর উঠে দাঁড়িয়ে খুতবা দিবে​

যদি মিম্বার না থাকে তাহলে উঁচা জায়গায় দাঁড়িয়ে খুতবা দিবে। যাতে সব মুসল্লি খতিবের আওয়াজ শুনতে পায়।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারের উপর উঠে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন। মিম্বারটি এমনভাবে স্থাপন করবে, যাতে ইমাম যখন মেহরাবে কিবলামুখি হয়ে দাড়ায়, তখন মিম্বারটি তার হাতের ডানে থাকে।

বুখারি, হাদিস: ৯১৯

৫. দাড়িয়ে খুতবা দিবে​

দাড়িয়ে খুতবা দেয়া সুন্নত। প্রথম খুতবা দেয়ার পর কিছু সময় বসবে। তারপর আবার দাঁড়াবে এবং দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় খুতবা দিবে।

জাবের ইবনে সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন তারপর তিনি কিছু সময় বসতেন। তারপর তিনি আবার দাঁড়াতেন এবং দ্বিতীয় খুতবা দিতেন। যে বলে, তিনি বসে খুতবা দিতেন সে মিথ্যা বলল। আল্লাহর শপথ আমি তার সাথে দুই হাজারের অধিক সালাত আদায় করেছি।

মুসলিম হাদিস নং ৮৬২

৬. কঠোর কন্ঠে খুতবা দিবে​

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুতবা দিতেন তখন তার চেহারা লাল হয়ে যেত, আওয়াজ উঁচা হত এবং খুব ক্ষুব্ধ হতেন। যেন তিনি সৈন্য বাহিনীকে এ বলে ভয় দেখাচ্ছেন, সকাল বেলা তােমাদের উপর আক্রমণ হবে বা বিকালে তােমাদের উপর আক্রমণ হবে। তিনি দুটি আঙ্গুলকে একত্রে মিলিয়ে দেখাতেন এবং বলতেন, যে অবস্থায় কেয়ামত খুব কাছাকাছি। অত:পর, মনে রাখবে, উত্তম হাদিস হল, আল্লাহর কিতাব, আর সর্বােত্তম আদর্শ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বস্তু হল, নব আবিস্কৃত বিষয়, আর সমস্ত নতুন আবিস্কৃত বস্তু গােমরাহী। তারপর তিনি বলেন, আমি মুমিনের জন্য তার জীবন থেকেও অধিক উত্তম। যে ব্যক্তি সম্পদ রেখে গেল, তা তার পরিবারের জন্য, আর যে ব্যক্তি ঋণ রেখে যায় তার দায়িত্ব আমার উপর।

মুসলিম, হাদিস: ৮৬৭, ইবনু মাযা, হাদিস: ৪৫

৭. খতীব মুসল্লীদেরকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিবে​

যখন খতীব কোন বিষয়ে মুসল্লিদের সতর্ক করার প্রয়ােজন মনে করবে, তখন সে মিম্বার থেকে তাদের সতর্ক করতে পারবে। তাদের কোন ভুল-ভ্রান্তি দেখলে তিনি তাদের সংশােধন করে দিবেন।

জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন; এমন সময় একলােক মসজিদে প্রবেশ করে বসে পড়ল; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করল, তুমি সালাত আদায় করছ? লােকটি বলল, না; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি দাঁড়াও এবং সালাত আদায় কর।

বুখারি, হাদিস: ৯৩০; মুসলিম, হাদিস: ৮৭৫; নাসায়ী, হাদিস: ১৪০৯; তিরমিযি, ৫১০।

৮. মাতৃভাষায় খুতবা দিবে​

খুৎবা মাতৃভাষায় এবং অধিকাংশ মুছল্লীদের বােধগম্য ভাষায় হওয়া যরূরী; কেননা খুবা অর্থ ভাষণ, যা শ্রোতাদের বােধগম্য ভাষায় হওয়াই স্বাভাবিক; আল্লাহ বলেন, আমরা সকল রাসূলকেই তাদের স্বজাতির ভাষা-ভাষী করে প্রেরণ করেছি; যাতে তিনি তাদেরকে (আল্লাহর দ্বীন) ব্যাখ্যা করে দেন।

সূরা ইবরাহীম ১৪/৪

অতঃপর আমাদের রাসূল (ছাঃ)-কে খাছ করে বলা হচ্ছে, আর আমরা আপনার নিকটে ‘যিকর’ (কুরআন) নাযিল করেছি, যাতে আপনি লােকদের নিকট ঐসব বিষয়ে ব্যাখ্যা করে দেন, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে। যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে।

সূরা নাহল ১৬/৪৪

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সময়ের চাহিদা অনুযায়ী খুৎবা দিতেন। নবী আর আসবেন না; তাই রাসূলের ‘ওয়ারিছ’ হিসাবে প্রত্যেক আলেম ও খত্বীবের উচিত মুছল্লীদের নিজস্ব ভাষায় কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিধান সমূহ খুত্বায় ব্যাখ্যা করে শুনানাে; নইলে খুত্বার উদ্দেশ্য বিনষ্ট হবে।

হযরত জাবের বিন সামুরাহ (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে যে, খুত্বার সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দু’চোখ উত্তেজনায় লাল হয়ে যেত; গলার স্বর উঁচু হত ও ক্রোধ ভীষণ হত; যেন তিনি কোন সৈন্যদলকে হুঁশিয়ার করছেন।

মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০৭; মির’আত ২/৩০৯; ঐ, ৪/৪৯৬-৯৭।

ছাহেবে মির’আত বলেন, অবস্থা অনুযায়ী এবং মুছল্লীদের বােধগম্য ভাষায় খুৎবা দেওয়ার ব্যাপারে জাবের বিন সামুরাহ (রাঃ) বর্ণিত অত্র হাদীছটিই হল প্রথম দলীল।​

মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০৫; মির’আত হা/১৪১৮-এর আলােচনা দ্রঃ, ৪/৪৯৪-৯৫।

মনে রাখা আবশ্যক যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মাতৃভাষায় খুৎবা দিতেন; তাঁর ও তাঁর ছাহাবীগণের মাতৃভাষা ছিল আরবী; তিনি ছিলেন বিশ্বনবী; তাই বিশ্বের সকল ভাষাভাষী তাঁর উম্মতকে স্ব স্ব মাতৃভাষায় খুৎবা দানের মাধ্যমে কুরআন ও হাদীছ ব্যাখ্যা করে দিতে হবে; যা অবশ্য পালনীয়।

যদি বলা হয় যে, রাসূল (ছাঃ) আরবী ভাষায় খুত্ব দিতেন, অতএব আমাদেরও কেবল আরবীতে খুত্ব দিতে হবে; তাহলে তাে বলা হবে যে, তিনি যেহেতু সর্বক্ষণ আরবী ভাষায় কথা বলতেন; অতএব আমাদেরকেও মাতৃভাষা ছেড়ে সর্বক্ষণ আরবীতে কথা বলতে হবে; আরবী ব্যতীত অন্য ভাষা বলা যদি নিষিদ্ধ হয়; তাহলে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) যায়েদ বিন ছাবিত (রাঃ)-কে ইহুদীদের হিব্রু ভাষা শিখতে বললেন কেন? যা তিনি ১৫ দিনেই শিখে ফেলেন ও উক্ত ভাষায় রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষে পত্র পঠন, লিখন ও দোভাষীর কাজ করেন।

তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৬৫৯ ‘শিষ্টাচার অধ্যায়-২৫, ‘সালাম’ অনুচ্ছেদ-১।

নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী (রহঃ) বলেন, শ্রোতামণ্ডলীকে জান্নাতের প্রতি উৎসাহ দান ও জাহান্নামের ভয় প্রদর্শন করাই ছিল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খুবার নিয়মিত উদ্দেশ্য। এটাই হ’ল খুৎবার প্রকৃত রূহ এবং এজন্যই খুবার প্রচলন হয়েছে।

নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী, আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ ১/৩৪৫।

বিভিন্ন মসজিদে স্রেফ আরবী খুত্বা পাঠের যে প্রচলন রয়েছে, তা নিঃসন্দেহে খুৎবার উদ্দেশ্য বিরােধী। এটা বুঝতে পেরে বর্তমানে মূল খুৎবার পূর্বে মিম্বরে বসে মাতৃভাষায় বক্তব্য রাখার মাধ্যমে যে তৃতীয় আরেকটি খুৎবা চালু করা হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে বিদআত। কেননা জুম’আর জন্য নির্ধারিত খুতবা হ’ল দু’টি, তিনটি নয়। তাছাড়া মূল খুতবার পূর্বের সময়টি মুছল্লীদের নফল ছালাতের সময়। তাদের ছালাতের সুযােগ নষ্ট করে বক্তৃতা করার অধিকার ইসলাম কোন খত্বীব ছাহেবকে দেয়নি। অতএব সুন্নাতের উপরে আমল করতে চাইলে মূল খুৎবায় দাঁড়িয়ে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলােকে মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে তাদের বােধগম্য ভাষায় নছীহত করতে হবে। খুতবার সময় কথা বলা নিষেধ। এমনকি অন্যকে ‘চুপ কর’ একথাও বলা চলবে না।

মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৩৮৫ ‘পরিচ্ছন্নতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে গমন অনুচ্ছেদ-৪৪।
 

Share this page