• আসসালামু আলাইকুম, খুব শীঘ্রই আমাদের ফোরামে মেজর কিছু চেঞ্জ আসবে যার ফলে ফোরামে ১-৩ দিন আপনারা প্রবেশ করতে পারবেন না। উক্ত সময়ে আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানাচ্ছি।
‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

সিয়াম জিভের রোযা

Abu Abdullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Uploader
Salafi User
Threads
745
Comments
997
Solutions
19
Reactions
10,263
Credits
6,307
রোযাদারের উচিৎ, যেন তার জিভও রোযা রাখে। অর্থাৎ, সে যেন প্রত্যেক নোংরা কথা থেকে; পরচর্চা বা গীবত থেকে, চুগলখোরী বা লাগান-ভাজান থেকে, অশ্লীল ও মিথ্যা কথা থেকে বিরত থাকে। দূরে থাকে মূর্খামি ও বেওকুফি করা থেকে। যেহেতু মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি রোযা রেখে নোংরা কথা ও তার উপর আমল ত্যাগ করতে পারল না, সে ব্যক্তির পানাহার ত্যাগ করার মাঝে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।’’[1] অর্থাৎ, তার রোযা কবুল করার ব্যাপারে তাঁর কোন ইচ্ছা নেই। আর তার মানে তার রোযা আল্লাহ কবুল করেন না।[2]

রোযাদারের উচিৎ, অশ্লীলতা, হৈ-হট্টগোল ও গালাগালি করা থেকে দূরে থাকা এবং ভদ্রতা, আদব ও গাম্ভির্য অবলম্বন করা। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তোমাদের কারো রোযার দিন হলে সে যেন অশ্লীল না বকে ও ঝগড়া-হৈচৈ না করে; পরন্তু যদি তাকে কেউ গালাগালি করে অথবা তার সাথে লড়তে চায়, তাহলে সে যেন বলে, ‘আমি রোযা রেখেছি, আমার রোযা আছে।’’[3]

তিনি আরো বলেন, ‘‘পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম রোযা নয়। আসলে রোযা হল, অসার ও অশ্লীল কথা ও কর্ম থেকে বিরত থাকার নাম। অতএব যদি তোমাকে কেউ গালাগালি করে অথবা তোমার সাথে কেউ মুর্খামি করে, তাহলে তুমি তাকে বল, ‘আমি রোযা রেখেছি, আমার রোযা আছে।’’[4]

সুতরাং রোযাদারকে কেউ গালি দিলে তার বিনিময়ে গালিদাতাকে ‘আমি রোযা রেখেছি’ বলা সুন্নত। আর এই জবাবে রয়েছে দুটি উপকার; একটিতে রয়েছে নিজের জন্য সতর্কতা এবং অপরটিতে রয়েছে তার বিরোধী পক্ষের জন্য সতর্কতা।

প্রথম উপকার এই যে, রোযাদার এই জন্যই গালিদাতার গালির বদলা নিয়ে মুকাবালা করতে চায় না, কারণ সে রোযা রেখেছে। এ জন্য নয় যে, সে মুকাবালা করতে অক্ষম। যেহেতু সে যদি অক্ষমতা প্রকাশ করে মুকাবালা ত্যাগ করে, তাহলে বিরোধী পক্ষের কাছে সে তুচ্ছ হয়ে যায় এবং তাতে রোযাদার লাঞ্ছিত হয়। পক্ষান্তরে ঐ জবাবে বিরোধী পক্ষ লজ্জিত হয় এবং গালাগালি বা লড়াই করা অব্যাহত রাখতে আর সাহস পায় না।

আর দ্বিতীয় উপকার এই যে, উক্ত জবাবের মাধ্যমে রোযাদার বিরোধী পক্ষকে এই সতর্কতা দান করে যে, রোযা অবস্থায় কাউকে গালাগালি করতে হয় না। সে ক্ষেত্রে গালিদাতাও রোযাদার হতে পারে; বিশেষ করে এই গালাগালি যদি রমাযান মাসে হয়। আর তা হলে উভয়েই নিষিদ্ধ বিষয়ে লিপ্ত হয়ে যাবে। সুতরাং রোযাদারের ঐ উত্তর তাকে গালি দেওয়া থেকে নিষেধ করার পর্যায়ভুক্ত হবে। পরন্তু গালি দেওয়া হল একটি মন্দ কাজ; যাতে বাধা দেওয়া জরুরী।[5]

কোন কোন বর্ণনাতে আছে যে, ‘‘রোযা রেখে তুমি কাউকে গালাগালি করো না। কিন্তু যদি তোমাকে কেউ গালাগালি করে, তাহলে তুমি তাকে বল, ‘আমি রোযা রেখেছি। আর সে সময় যদি তুমি দাঁড়িয়ে থাক, তাহলে বসে যাও।’’[6] কারণ, ক্রোধান্বিত অবস্থায় বসে গেলে ক্রোধ প্রশমিত হয়। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ক্রোধাw¦বত হয়, তখন সে যেন বসে যায়। তাতে তার ক্রোধ প্রশমিত হলে ভাল, না হলে সে যেন শুয়ে যায়।’’[7]

রোযাদারের জন্য ওয়াজেব, তার জিভও যেন রোযা রাখে; অর্থাৎ, তাতে যেন সে (গীবত ও চুগলখোরী করে) লোকেদের মাংস না খায়, তাদের ইজ্জত বিক্ষত না করে এবং তাদের আপোসে বিবাদ সৃষ্টি না করে।

তার জিভ যেন মুসলিমদেরকে কষ্ট দেওয়া থেকে, তাদের সম্ভ্রম নষ্ট করা থেকে এবং তাদের মাঝে অশ্লীলতা ছড়ানো থেকে রোযা রাখে।

তার জিভ যেন বাজে কথা থেকে, গুজব রটানো থেকে, নিরপরাধকে অপবাদ ও কলঙ্ক আরোপ করা থেকে এবং দ্বীনদার মানুষদের সুনাম নষ্ট করে বদনাম করা থেকে রোযা রাখে।

তার জিভ যেন ধ্বংসকারী অন্ধ পক্ষপাতিত্ব করা থেকে এবং রাগ ও ক্রোধের সময় নোংরা ও অশ্লীল বলা থেকে রোযা রাখে।

তার জিভ যেন গালাগালি করা থেকে, অপরকে হিট মারা থেকে এবং সমাজ-বিরোধী অপরাধীদেরকে গোপন রাখা এবং তাদের তরফদারী করা থেকে রোযা রাখে।

তার জিভ যেন কানে-কানে অথবা ফোনে-ফোনে অবৈধ মহিলার সাথে প্রেমালাপ করা থেকে রোযা রাখে।

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘মানুষকে তাদের নিজ জিহ বা-জাত পাপ ছাড়া অন্য কিছু কি তাদের মুখ অথবা নাক ছেঁচড়ে দোজখে নিক্ষেপ করবে?’[8]


[1] (বুখারী ৬০৫৭, ইবনে মাজাহ ১৬৮৯, আহমাদ, মুসনাদ ২/৪৫২, ৫০৫, সুনানে আরবাআহ; আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ)
[2] (দ্রঃ ফাতহুল বারী ৪/১৪০)
[3] (বুখারী ১৯০৪, মুসলিম ১১৫১নং)
[4] (ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ, ইবনে হিববান, সহীহ, হাকেম, মুস্তাদ্রাক, সহীহ তারগীব, আলবানী ১০৬৮, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৫৩৭৬নং)
[5] (দ্রঃ আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৪৩৭, সামানিয়া ওয়া আরবাঊন সুআলান ফিস্-সিয়াম ১২পৃঃ)
[6] (ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ ১৯৯৪, ইবনে হিববান, সহীহ, মাওয়ারিদ ৮৯৭, সহীহ তারগীব, আলবানী ১০৬৮নং)
[7] (আহমাদ, মুসনাদ ৫/১৫২, আবূ দাঊদ, ইবনে হিববান, সহীহ, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৬৯৪নং)
[8] (তিরমিযী ২৬১৫, ইবনে মাজাহ ৩৯৭৩, আহমাদ, মুসনাদ ৫/২৩১, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৪১৩নং)


রমাযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল
শাইখ আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী​
 

Share this page