সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
FORUM BOT

প্রশ্নোত্তর কোরআন ও হাদিসের আলোকে চিকিৎসা – প্রথম পর্ব

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Threads
4,134
Comments
4,353
Solutions
1
Reactions
34,836
Credits
24,212
১//শরীরে কোনো ব্যথা অনুভব করলে যা করবে ও বলবে আপনার দেহের যে স্থানে আপনি ব্যথা অনুভব করছেন, সেখানে আপনার হাত রেখে তিনবার বলুন, ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ আল্লাহর নামে। বিসমিল্লাহ আর সাতবার বলুন, ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻗُﺪْﺭَﺗِﻪِ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺃَﺟِﺪُ ﻭَﺃُﺣَﺎﺫِﺭُ এই যে ব্যথা আমি অনুভব করছি এবং যার আমি আশঙ্কা করছি, তা থেকে আমি আল্লাহ্র এবং তাঁর কুদরতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আ‘ঊযু বিল্লা-হি ওয়া ক্বুদরাতিহী মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহা-যিরু মুসলিম ৪/১৭২৮, নং ২২০২। ২//হৃদরোগে চিকিৎসা হার্ট আল্লাহ তাআলার অনন্যদান। মানবদেহে রোগের বিস্তার সম্পর্কে কুরআন, হাদিস ও বিজ্ঞানেরধারাসমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে এসেছে, আল্লাহর কাছে তোমরা সুস্বাস্থ্য প্রার্থনা কর, কারণ ইমানের পর সুস্বাস্থ্যের চেয়ে অধিক মঙ্গলজনক কোনো কিছু কাউকে দান করা হয়নি। (ইবনে মাজাহ) সুতরাং নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন করে হার্টের সুস্থতাসহ সর্বপ্রকার রোগ-বালাই থেকে হিফাজত থাকা জরুরি। হৃদরোগের যতগুলো কারণ রয়েছে, তার প্রতিটির ব্যাপারেই কুরআন ও হাদিসে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দশনা। জাগো নিউজে তার কিছু তুলে ধরা হলো- আল্লাহ বলেন- ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻣَﺮِﺿْﺖُ ﻓَﻬُﻮَ ﻳَﺸْﻔِﻴﻦِ অর্থাৎ যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন। (সূরা শোয়ারা : আয়াত ৮০) গোগাক্রান্ত বান্দাহকে আল্লাহ নিরাময় করবেন। এ কথা আল্লাহ কুরআনুল কারিমে বলেছেন। কিন্তু আল্লাহ মানুষের প্রতিটি রোগ ব্যধির নিয়ামক হিসেবে পৃথিবীতে প্রতিষেধক পাঠিয়েছেন। এবং অসংখ্য খাবার উপাদান পাঠিয়েছেন। এ উপাদান যদি মাত্রাতিরিক্ত আকারে কেউ গ্রহণ করে তখনই বাঁধে সমস্যা। তাই খাবার গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। হৃদরোগের কারণ- চিকিৎসা বিজ্ঞানে হৃদরোগের প্রধান কারণ হচ্ছে- থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা, রক্তশূন্যতা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুঃশ্চিন্তা, যে কোনো ধরনের ভয়-ভীতি, অত্যধিক মদপান, নেশাজাতীয় বস্তু গ্রহণ, অতিরিক্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ মেডিসিন ব্যবহার এবং অনেক মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই হৃদরোগের কারণ। মানুষ ইসলামি অনুশাসন মেনে নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন করে তবে সুস্থ থাকার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। জীবনের নানা প্রাঙ্গনে মানুষ হরহামেশাই নানা ধরনের হতাশা ও দুঃশিন্তায় ভুগে থাকে। যা মানুষের জন্য বড়ই ক্ষতির কারণ। আল্লাহ বলেন- ﻭَﻻَ ﺗَﻴْﺄَﺳُﻮﺍْ ﻣِﻦ ﺭَّﻭْﺡِ ﺍﻟﻠّﻪِ অর্থাৎ এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। (সূরা ইউসুফ : আয়াত ৮৭) আল্লাহ অন্যত্র বলেন- ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻣَﺲَّ ﺍﻟْﺈِﻧﺴَﺎﻥَ ﺿُﺮٌّ ﺩَﻋَﺎﻧَﺎ ﺛُﻢَّ ﺇِﺫَﺍ ﺧَﻮَّﻟْﻨَﺎﻩُ ﻧِﻌْﻤَﺔً ﻣِّﻨَّﺎ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃُﻭﺗِﻴﺘُﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﻋِﻠْﻢٍ ﺑَﻞْ ﻫِﻲَ ﻓِﺘْﻨَﺔٌ ﻭَﻟَﻜِﻦَّ ﺃَﻛْﺜَﺮَﻫُﻢْ ﻟَﺎ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ অর্থাৎ মানুষকে যখন দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে আমাকে ডাকতে শুরু করে, এরপর আমি যখন তাকে আমার পক্ষ থেকে নিআমত দান করি, তখন সে বলে, এটা তো আমি পূর্বের জানা মতেই প্রাপ্ত হয়েছি। অথচ এটা এক পরীক্ষা, কিন্তু তাদের অধিকাংশই বোঝে না। (সুরা জুমার : আয়াত ৪৯) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি উৎকণ্ঠা থেকে, মনোকষ্ট থেকে, অলসতা থেকে, কাপুরুষতা থেকে, কৃপণতা থেকে, ঋণগ্রস্ততা থেকে এবং মানুষের কর্তৃত্বাধীন হয়ে যাওয়া থেকে। (বুখারি) মদ্যপান ও মাদকদ্রব্য সেবন জটিল ও প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টি করে তথা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ। যা আমাদেরকে অনেক ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে আত্মহননের দিকে ঠেলে দেয়। আল্লাহ তাআলা হলেন আমাদের জীবনের মালিক এবং মানুষ হিসেবে আমদের জীবনকে ধবংসের দিকে ঠেলে দেয়াকে আল্লাহ তআলা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা মাদক ও নেশাকে হারাম করেছেন। আল্লাহ বলেন- ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍْ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟْﺨَﻤْﺮُ ﻭَﺍﻟْﻤَﻴْﺴِﺮُ ﻭَﺍﻷَﻧﺼَﺎﺏُ ﻭَﺍﻷَﺯْﻻَﻡُ ﺭِﺟْﺲٌ ﻣِّﻦْ ﻋَﻤَﻞِ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥِ ﻓَﺎﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﻩُ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﻔْﻠِﺤُﻮﻥَ অর্থাৎ ‘হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। ( সূরা মায়িদাহ : আয়াত ৯০) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন সব নেশা জাতীয় পানীয়ই হারাম। (বুখারি ও মুসলিম) আল্লাহ অন্যত্র বলেন- আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন- ﻭَﺃَﻧﻔِﻘُﻮﺍْ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻭَﻻَ ﺗُﻠْﻘُﻮﺍْ ﺑِﺄَﻳْﺪِﻳﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺘَّﻬْﻠُﻜَﺔِ ﻭَﺃَﺣْﺴِﻨُﻮَﺍْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻤُﺤْﺴِﻨِﻴﻦَ অর্থাৎ “তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না” (সূরা বাকারা : আয়াত ১৯৫) হৃদরোগসহ সব রোগ থেকে প্রতিকারে ইসলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ ব্যক্তিকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা দিতে এবং সবিশেষ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিতেন। হারাম বস্তু ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন। হাদিসে এসেছে ‘আল্লাহ তায়ালা রোগও দিয়েছেন, রোগের প্রতিষেধকও দিয়েছেন। প্রত্যেক রোগের চিকিৎসা রয়েছে। সুতরাং তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর। তবে হারাম বস্তু দ্বারা চিকিৎসা নিয়ো না। হারাম বস্তুতে আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য আরোগ্য বা রোগমুক্তি রাখেননি।’ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, ইসলামের দৃষ্টিতে চিকিৎসা গ্রহণ করা শুধু বৈধই নয় বরং তা গ্রহণ করাই কাম্য। যেসব কারণে মানুষ অসুস্থ হতে পারে, সেসব থেকে বেঁচে থাকার জোর তাগিদ দিয়েছে ইসলাম। আসুন নিজেদেরকে রোগমুক্ত রাখতে উক্ত বিষয়গুলো থেকে নিজেদেরকে হিফাজত করি- ০১. খাদ্য-পানীয় মানুষের রোগ-ব্যাধির অন্যতম কারণ। হাদিস শরিফে আছে, ‘পেট সকল রোগের কেন্দ্রস্থল।’ ইসলাম এ বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছে এবং অতিভোজন করতে নিরুৎসাহিত করেছে এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্য নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ বলেন- ﻭﻛُﻠُﻮﺍْ ﻭَﺍﺷْﺮَﺑُﻮﺍْ ﻭَﻻَ ﺗُﺴْﺮِﻓُﻮﺍْ ﺇِﻧَّﻪُ ﻻَ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻤُﺴْﺮِﻓِﻴﻦَ অর্থাৎ ‘তোমরা খাও ও পান কর এবং অপচয় কর না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আরাফ : আয়াত ৩১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্য দ্বারা, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে’। (ইবনে মাজা) ০২. খাদ্যদ্রব্য ঢেকে রাখা ও কিছু পান করার সময় তাতে ফুঁ না দেয়া। কারণ এতে রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। অন্য হাদিসে আছে, ‘খবরদার! তোমরা পানিতে ফুঁ দিয়ো না।’ (তিরমিজি) ০৩. খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধৌত করার প্রতি ইসলামের নির্দেশ রয়েছে। কারণ হাতে বিষাক্ত জীবাণু থাকার কারণে রোগ সৃষ্টি হওয়ার আশংকা রয়েছে। ০৪. শরীরকে সুস্থ, সবল ও সতেজ রাখার জন্য শরীর চর্চামূলক খেলাধুলা, ব্যায়াম ও সাঁতার কাটা ইত্যাদির প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম ও বিশ্রাম সুস্বাস্থ্যের জন্য অতীব জরুরি। ইসলামে অলসতাকে অত্যন্ত ঘৃণা করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি উৎকণ্ঠা, মনোকষ্ট, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণগ্রস্ততা এবং মানুষের কর্তৃত্বাধীন হয়ে যাওয়া থেকে।’ (বুখারি) ০৫. শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে মানুষের মানসিক সুস্থতাও জরুরি। কারণ মানসিক প্রশান্তি ও উৎফল্লতা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মানসিক উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতা দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে। আল্লাহ বলেন- , ‘জেনে রাখ! আল্লাহ তায়ালার জিকির দ্বারা অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।’ (সূরা রাদ : আয়াত ২৮) পরিশেষে... ইসলাম মানবতার কল্যাণ ও সফলতায় প্রয়োজনীয় সবই করেছে। যার প্রমাণ বহন করে কুরআন ও হাদিস। তাই সবার উচিত, সুস্থ হার্ট ও সুস্থ শরীরের জন্য কুরআনের বিধি-নিষেধগুলো বাস্তব জীবনে মেনে চলা। ইসলামি অনুশাসনগুলোর ওপর গুরত্ব দেয়া। তাই আমাদের উচিত প্রকৃত মুসলিম হিসবে ইসলাম প্রদত্ত স্বাস্থ্য নীতি মেনে সুন্দর জীবন যাপণে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্ঠা করা। আল্লাহ সবাইকে বুঝার মানার তাওফিক দান করুন। আমিন। হৃদরোগ একটি জটিল রোগ হিসেবেই বিবেচিত হয়। পবিত্র কোরআনকে হৃদরোগের আরোগ্য বলা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, হে মানুষ! তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং হৃদরোগের নিরাময়। এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, পবিত্র কোরআন হৃদরোগের নিরাময়ের সফল ও অব্যর্থ ব্যবস্থাপত্র। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর দরবারে এসে বলল, আমি বুকে কষ্ট পাচ্ছি। নবী করিম (সা.) বললেন, কোরআন পাঠ কর। কারণ আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, কোরআন হৃদরোগের আরোগ্য। কার্ডিওলোজির ডাক্তাররা যদি পবিত্র কোরআনের এ আয়াত নিয়ে গবেষণা করেন তাহলে হৃদরোগের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। প্রকৃত পক্ষে মহান আল্লাহতায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে রোগ-ব্যাধি তিনিই দেন। তার ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হয় না। আবার রোগ-ব্যাধি যেমন তিনি দিয়েছেন তেমনি এর প্রতিকার, প্রতিষেধক ওষুধও তিনি দিয়েছেন। একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, আল্লাহতায়ালা রোগ ও ওষুধ দুটিই সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে এসবের মৌলিক আলোচনা এসেছে। এসবের খুঁটিনাটি খুঁজে বের করাটা চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের কর্তব্য। কোরআন নিয়ে যদি চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেন তাহলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরও বহু উন্নতি ও সফলতা আসবে। মানুষের শুধু ধর্মীয় জীবনেই নয় দৈনন্দিন পার্থিব বিষয়েও যে কোরআনুল কারিম দিকনির্দেশক তা বারবার প্রমাণিত হবে। আমরা যদি মনে করি, শুধু ইবাদাত-বন্দেগি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের বর্ণনার জন্যই কেবল কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে, পার্থিব বিষয়ের কোনো সমাধান এতে নেই- তাহলে কিন্তু আমরা ভুল করব। ৩//যাদু থেকে মুক্ত থাকার উপায়: আলী (রহঃ) ... আমির ইবনু সাদ তার পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি প্রতিদিন সকালে কয়েকটি আজওয়া খুরমা খাবে ঐ দিন রাত পর্যন্ত কোন বিষ ও যাদু তার কোন ক্ষতি করবে না। অন্যান্য বর্ননাকারীগণ বলেছেনঃ সাতটি খুরমা। ( ইফা:বুখারি হা:নং-৫৩৫৬) ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... সা'দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যাক্তি ভোর বেলা সাতটি আজওয়া (মদিনায় উৎপন্ন উন্নত মানের খুরমার নাম) খেজুর খাবে, সে দিন কোন বিষ বা যাদু তার কোন ক্ষতি করবে না। (ইফা:বুখারি হা:নং-৫৩৫৭) ৪//মৃত ছাড়া সকল রোগ থেকে মুক্তি লাভের দোয়া: ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন কোন রুগ্ন মানুষকে সাক্ষাৎ করবে, যার এখন মরার সময় উপস্থিত হয়নি এবং তার নিকট সাতবার এই দোয়াটি বলবে: আসআলুল্লাহাল আযীম, রাব্বাল আরশিল আযীম, আঁই য়্যাশ্ফিয়াক’ (অর্থাৎ আমি সুমহান আল্লাহ, মহা আরশের প্রভুর নিকট তোমার আরোগ্য প্রার্থনা করছি), আল্লাহ তাকে সে রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন।’ [আবু দাউদ ৩১০৬, তিরমিযি৩০৮৩, আহমদ ২১৩৮, ২১৮৩, ২৩৮৮] ৫//যে কোন জটিল ও কঠিন রোগ: কুরআন মানুষের কল্যাণে নাজিল হয়েছে। মানুষের জবীবনে এমন কিছু নেই যা কুরআনের আলোচনায় আসেনি। এ কুরআনে এমন কিছু আয়াত আছে যেগুলো বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির জন্য শিফা স্বরূপ। তাই এ সব আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার কাছে রোগ থেকে মুক্তি চাওয়া উচিৎ। রোগ থেকে মুক্তি লাভে পূর্ব শর্ত হচ্ছে আল্লাহর বিধানকে জানা এবং যথাযথ মানার পাশাপাশি পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস রাখা। রোগ-ব্যাধি থেকে শিফা লাভে কয়েকটি আয়াত তুলে ধরা হলো- ক. বিসমিল্লাহরসহ সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤـَﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟﻠّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ - ﺍﻟﺮَّﺣْﻤـﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ - ﻣَـﺎﻟِﻚِ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ - ﺇِﻳَّﺎﻙَ ﻧَﻌْﺒُﺪُ ﻭﺇِﻳَّﺎﻙَ ﻧَﺴْﺘَﻌِﻴﻦُ - ﺍﻫﺪِﻧَــــﺎ ﺍﻟﺼِّﺮَﺍﻁَ ﺍﻟﻤُﺴﺘَﻘِﻴﻢَ - ﺻِﺮَﺍﻁَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﻧﻌَﻤﺖَ ﻋَﻠَﻴﻬِﻢْ ﻏَﻴﺮِ ﺍﻟﻤَﻐﻀُﻮﺏِ ﻋَﻠَﻴﻬِﻢْ ﻭَﻻَ ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴﻦَ – ﺍَﻣِﻴْﻦ - খ. সূরা তাওবার ১৪নং আয়াত ﻭَﻳَﺸْﻒِ ﺻُﺪُﻭﺭَ ﻗَﻮْﻡٍ ﻣُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ উচ্চারণ- ওয়া ইয়াশফি ছুদু-রা ক্বাওমিম মু’মিনি-ন। অর্থ : এবং মু’মিনদের (মুসলমানদের) অন্তরসমূহ শান্ত করে দেন। গ. সুরা ইউনুসের ৫৭নং আয়াত ﻭَﺷِﻔَﺎﺀٌ ﻟِﻤَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼُّﺪُﻭﺭِ ﻭَﻫُﺪًﻯ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔٌ ﻟِﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ উচ্চারণ : ওয়া শিফাউ’ল লিমা- ফিচ্ছুদু-রি ওয়া হুদাও ওয়া রাহমাতুল লিল মু’মিনি-ন। অর্থ : এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য। ঘ. সুরা নহলের ৬৯ নং আয়াত ﻳَﺨْﺮُﺝُ ﻣِﻦْ ﺑُﻄُﻮﻧِﻬَﺎ ﺷَﺮَﺍﺏٌ ﻣُﺨْﺘَﻠِﻒٌ ﺃَﻟْﻮَﺍﻧُﻪُ ﻓِﻴﻪِ ﺷِﻔَﺎﺀٌ ﻟِﻠﻨَّﺎﺱِ উচ্চারণ : ইয়াখরুঝু মিমবুতু-নিহা- শারা-বুম মুখতালিফুন, আলওয়ানুহু- ফি-হি শিফা-উ লিন্না-সি। অর্থ : তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙে পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার। ঙ. সুরা শুআরার ৮০ নং আয়াত ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻣَﺮِﺿْﺖُ ﻓَﻬُﻮَ ﻳَﺸْﻔِﻴﻦِ উচ্চারণ : ওয়া ইজা মারিদতু ফা হুয়া ইয়াশফি-নি। অর্থ : যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন। চ. সুরা বনি ইসরাঈলের ৮২নং আয়াত ﻭَﻧُﻨَﺰِّﻝُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻣَﺎ ﻫُﻮَ ﺷِﻔَﺎﺀٌ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔٌ ﻟِﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ উচ্চারণ : ওয়া নুনাজ্জিলু মিনাল ক্বুরআ’নি মা হুয়া শিফাউও ওয়া রাহমাতিুল লিলমু’মিনি-ন। অর্থ : আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। উপরোল্লিখিত আয়াতগুলো একবার তিলাওয়াত করে একটি পানিভর্তি পাত্রে দম করে পানিটি পান করলে আল্লাহ তাআলা জটিল ও কঠিন রোগ থেকে তার বান্দাদের হিফাজত করবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কুরআনি আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
 
Top