সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
কোনো একজনের মতকে নিয়ে গোঁড়ামি করা এবং এর প্রতি অতিভক্তি করা

মানহাজ কোনো একজনের মতকে নিয়ে গোঁড়ামি করা এবং এর প্রতি অতিভক্তি করা

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
Q&A Master
Salafi User
LV
17
 
Awards
33
Credit
16,591
❝এটা সালাফগণের মানহাজ নয় যে, কোনো একজনের মতকে নিয়ে গোঁড়ামি করা এবং এর প্রতি অতিভক্তি করা , যেমন তাদের কেউ একজন বলতে পারে: আমি যার ওপর আছি তাই হক যদিও সেটা ভুল হতে পারে এবং আমার বিরোধী ভুলের উপর আছে যদিও তা হক হতে পারে।❞

১। গোঁড়ামী বা তা‘আসসুব এর অর্থ কোনো কথা বা মত বা ব্যক্তির পক্ষ নেয়ার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা। যখন সেটা না জেনে করা হবে তখন সেটা হবে গোঁড়ামী।

কিন্তু হক জানার পরে সেটার ওপর অটল থাকাকে গোঁড়ামী বলা হবে না। সুতরাং অনেকে যা বলে থাকে যে, সালাফীরা তাদের সালাফদের মত ধারণ করার ওপর গোঁড়ামী করে, তা অবশ্যই ভুল। কারণ এটাকে বাড়াবাড়ি বলা হবে না। এটা হচ্ছে দৃঢ়পদ থাকা।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তার দীনের ওপর দৃঢ়পদ থাকার ব্যাপারে দো‘আ করতে শিখিয়েছেন।

আল্লাহ বলেন, “হে আমাদের রব! সরল পথ দেয়ার পর আপনি আমাদের অন্তরসমূহকে সত্য লঙ্ঘনপ্রবণ করবেন না। আর আপনার কাছ থেকে আমাদেরকে করুণা দান করুন, নিশ্চয়ই আপনি মহাদাতা।” [সূরা আলে ইমরান: ০৮]

আরও বলেন, “এ কথা ছাড়া তাদের আর কোনো কথা ছিল না, ‘হে আমাদের রব! আমাদের পাপ এবং আমাদের কাজের সীমালঙ্ঘন আপনি ক্ষমা করুন, আমাদের পা সুদৃঢ় রাখুন এবং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন’।” [সূরা আলে ইমরান: ১৪৭]

আর আল্লাহ তা‘আলাই ঈমানদারদেরকে হিদায়াতের ওপর দৃঢ়পদ রাখেন।

আল্লাহ বলেন, “স্মরণ কর, যখন তিনি তাঁর পক্ষ থেকে স্বস্তির জন্য তোমাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেন এবং আকাশ থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন যাতে এর মাধ্যমে তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করেন, আর তোমাদের থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করেন, তোমাদের হৃদয়সমূহ দৃঢ় রাখেন এবং এর মাধ্যমে তোমাদের পা-সমূহ স্থির রাখেন। স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফিরিশতাদের প্রতি ওহী প্রেরণ করেন যে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথে আছি, সুতরাং তোমরা মুমিনদেরকে অবিচলিত রাখ’। যারা কুফরী করেছে অচিরেই আমি তাদের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করব; কাজেই তোমরা আঘাত কর তাদের ঘাড়ের উপরে এবং আঘাত কর তাদের প্রত্যেক আঙ্গুলের অগ্রভাগে এবং জোড়ে।” [সূরা আল-আনফাল: ১১-১২]

আরও বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন কোনো দলের সম্মুখীন হবে তখন অবিচলিত থাক এবং আল্লাহকে বেশি পরিমাণ স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।” [সূরা আল-আনফাল: ৪৫]

আরও বলেন, “যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদেরকে সুদৃঢ় বাক্যের দ্বারা দুনিয়ার জীবনে ও আখেরাতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন এবং যারা যালিম আল্লাহ তাদেরকে বিভ্রান্তিতে রাখবেন। আর আল্লাহ যা ইচ্ছে তা করেন।” [সূরা ইবরাহীম: ২৭]

আরও বলেন, “বলুন, ‘আপনার রবের কাছ থেকে রূহুল-কুদুস -জিবরীল- যথাযথভাবে একে নাযিল করেছেন, যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুদৃঢ় করার জন্য এবং হিদায়াত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ’।” [সূরা আন-নাহল: ১০২]

আরও বলেন, “আর আমরা আপনাকে অবিচলিত না রাখলে আপনি অবশ্যই তাদের দিকে প্রায় কিছুটা ঝুঁকে পড়তেন।” [সূরা আল-ইসরা: ৭৪]

আরও বলেন, “আর কাফেররা বলে, ‘সমগ্র কুরআন তার কাছে একবার নাযিল হলো না কেন?’ এভাবেই আমরা নাযিল করেছি আপনার হৃদয়কে তা দ্বারা মযবুত করার জন্য এবং তা ক্রমে ক্রমে স্পষ্টভাবে আবৃত্তি করেছি।” [সূরা আল-ফুরক্বান: ৩২]

আরও বলেন, “হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ্কে সাহায্য কর, তবে তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা-সমূহ সুদৃঢ় করবেন।” [সূরা মুহাম্মাদ: ০৭]

সুতরাং হক্বের ওপর দৃঢ়পদ থাকা গোঁড়ামী নয়। এটাকে গোঁড়ামী বলে নিন্দা করা যাবে না।

গোঁড়ামী হচ্ছে, কারও কথা, মত বা ব্যক্তির ভুল কিংবা শুদ্ধ সেটা যাচাই না করেই তার বা তার মতের অন্যায় পক্ষাবলম্বন।

গোঁড়ামী কয়েক প্রকার হতে পারে:

• কারো মত ও কোনো ব্যক্তির জন্য গোঁড়ামী করা। এ ব্যাপারে সাধারণত ইলমের দিকে সম্পৃক্ত অর্ধ আলেম লোকেরাই বেশি নিমজ্জিত। তারা তাদের উস্তাদ কিংবা মতাদর্শের জন্য গোঁড়ামী করে থাকে। এ গোঁড়ামী প্রতিষ্ঠা করার জন্য কিছু মাদ্‌রাসা ও খানকাও তৈরি হয়ে যায়।

• জাতি, বংশীয় কিংবা গোত্রীয় গোঁড়ামী। রাসূলের যুগে এক মুহাজির ও আরেক আনসার এ গোঁড়ামীর ডাক দেয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, ‘জাহেলী আহ্বান কোত্থেকে শুনলাম, অথচ আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান, ছেড়ে দাও তা পুঁতি দুর্গন্ধময়’। [মুসলিমআস-সহীহহাদীস নং ২৫৮৪] আনসার ও মুহাজির নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় শব্দ। কিন্তু ব্যবহার হয়েছে গোঁড়ামীতে, তাই তা নিষিদ্ধ হয়েছে।

• দলীয় গোঁড়ামী। বর্তমানে যাতে অধিকাংশ মুসলিমরা জড়িত। অথচ এ রকম দলীয় গোঁড়ামী ইসলামে নেই। কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূলকে অনুসরণে সুদৃঢ় থাকতে পারে। কিন্তু কোনো নেতা কিংবা ব্যক্তি বিশেষের জন্য এমন গোঁড়ামী কোনোভাবেই অনুমোদিত হতে পারে না।

• সাংগঠনিক গোঁড়ামী। এটাও বর্তমান সময়ে কোনোভাবেই কম নয়। এটার কারণে ভিন্ন মতের লোককে গালি-গালাজ, মিথ্যাচার, অপমান, জান ও মালের ক্ষতি করার মতো সবই করা হয়। নাউযুবিল্লাহ।

• ধর্মীয় গোঁড়ামী। যার কারণে কাউকে জোর করে নিজের মতবাদে যেতে বাধ্য করা হয়। আল্লাহ বলেন, “দীন গ্রহণের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই; সত্য পথ সুস্পষ্ট হয়েছে ভ্রান্ত পথ থেকে। অতএব, যে তাগূতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহর ওপর ঈমান আনবে সে এমন এক দৃঢ়তর রজ্জু ধারন করল যা কখনো ভাঙ্গবে না। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।” [সূরা আল-বাকারাহ: ২৫৬]

• চিন্তাগত গোঁড়ামী। অথচ ইসলাম তা করতে নিষেধ করে মানুষদেরকে মধ্যপন্থী করেছে। আল্লাহ বলেন, “আর এভাবে আমরা তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী জাতিতে পরিণত করেছি, যাতে তোমরা মানবজাতির ওপর সাক্ষী হও এবং রাসূল তোমাদের ওপর সাক্ষী হতে পারেন। আর আপনি এ যাবত যে কিবলা অনুসরণ করছিলেন সেটাকে আমরা এ উদ্দেশ্যে কেবলায় পরিণত করেছিলাম যাতে প্রকাশ করে দিতে পারি কে রাসূলের অনুসরণ করে এবং কে পিছনে ফিরে যায়? আল্লাহ যাদেরকে হিদায়াত করেছেন তারা ছাড়া অন্যদের ওপর এটা নিশ্চিত কঠিন। আল্লাহ এরূপ নন যে, তোমাদের ঈমানকে ব্যর্থ করে দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আল-বাকারাহ: ১৪৩]

• শ্রেণি গোঁড়ামী, যেমন নারীদের জন্য কিংবা পুরুষদের জন্য, যেমন কিছু মানুষ ফেমিনিস্ট হয়ে আছে। এগুলোও জাহেলিয়াত।

• খেলা-ধুলা সংক্রান্ত গোঁড়ামী, এ আরেক জগত। এর কারণে অনেকে জীবন দিয়ে দিচ্ছে, অপরকে মেরে ফেলছে। এটাও জহেলিয়াত।

• উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের গোঁড়ামী, যার ফলে অনেকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ইসলাম গ্রহণ থেকে দূরে থাকতো। আল্লাহ বলেন, “আর তারা বলে, এ কুরআন কেন নাযিল করা হলো না দুই জনপদের কোনো মহান ব্যক্তির ওপর?” [সূরা আয-যুখরুফ: ৩১]

আল্লাহ তা‘আলা তার জবাবে বলেন, “তারা কি আপনার রবের রহমত বণ্টন করে? আমরাই দুনিয়ার জীবনে তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি এবং তাদের একজনকে অন্যের ওপর মর্যাদায় উন্নত করি যাতে একে অন্যের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে; আর আপনার রবের রহমত তারা যা জমা করে তা থেকে উৎকৃষ্টতর।” [সূরা আয-যুখরুফ: ৩২]

• পারিবারিক গোঁড়ামী, যা মানুষকে সঠিকভাবে জানতে ও কাজ করতে অনেকসময় বাঁধাগ্রস্ত করে।

• রাজনৈতিক গোঁড়ামী, যার মাধ্যমে শাসকরা তাদের ভালো কিংবা মন্দ সবকিছু মানতে জনগণকে বাধ্য করে।

গোঁড়ামীর বড় সমস্যা হচ্ছে,

• মুসলিম ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বরং বিনষ্ট করে। “আর তোমরা সকলে আল্লাহর রশি দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর, তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা তো অগ্নিগর্তের দ্বারপ্রান্তে ছিলে, তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ স্পষ্টভাবে বিবৃত করেন যাতে তোমরা হিদায়াত পেতে পার।”। [সূরা আলে ইমরান: ১০৩]

• গোঁড়ামীর মাধ্যমে হিংসা-বিদ্বেষ চালু হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘শয়তান নিরাশ হয়েছে যে, আরব উপদ্বীপে কেউ আর তার ইবাদত করবে না, তবে সে তাদেরকে একজনের বিরুদ্ধে অপরজনকে লাগিয়ে রাখবে।’ মুসলিমআস-সহীহহাদীস নং ২৮১২।

• গোঁড়ামীর আরেকটি খারাপ দিক হচ্ছে এর মাধ্যমে এক গোষ্ঠী বা দেশের লোক অন্য গোষ্ঠী বা দেশের লোককে অপমানিত করে থাকে। এজন্য সালমান আল-ফারেসী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘পবিত্র ভুমি কাউকে পবিত্র করে না, মানুষকে তার আমলই কেবল নিষ্কলুষ করতে পারে।’ [মুওয়াত্তা মালিক, হাদীস নং ৭]

• গোঁড়ামীর আরেকটি খারাপ দিক হচ্ছে, তা মানুষকে ইনসাফ করতে দেয় না। ফলে যালিম বা মযলুম হতে হয়। অনেক সময় এ কারণে যোগ্য কাউকে কর্মে নিয়োগ করে না, অযোগ্যকে নিয়োগ দেয়া হয়।

আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকবে; কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা তোমাদেরকে যেন সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। তোমরা সুবিচার করবে, এটা তাক্ওয়ার অধিকতর নিকটবর্তী। আর তোমরা আল্লাহর তাক্‌ওয়া অবলম্বন কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।” [আল-মায়েদাহ: ০৮]

অনুরূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে কেউ এমন ঝাণ্ডার নিচে অবস্থান করে মারা যাবে যার লক্ষ্য অস্পষ্ট, যারা মানুষদেরকে গোঁড়ামী কিংবা গোঁড়ামীর সাহায্য করার আহ্বান করে, তার মৃত্যু জাহেলিয়াতের হবে।’ [মুসলিমআস-সহীহহাদীস নং ৩৪৪০]

ইমাম আহমাদ বলেন, সেটা হচ্ছে, অন্ধকার কোনো কাজ, যেখানে লক্ষ্য স্পষ্ট নয়, কারণ অজানা। যেখানে মানুষ প্রবৃত্তির টানে যুদ্ধ করে, শরী‘আতের চাহিদায় নয়। দেখুন, আবুল ফারজ ইবনুল জাওযী, কাশফুল মুশকিল মিন হাদীসিস সহীহাইন (২/৫১)।

• গোঁড়ামীর আরেক খারাপ দিক হচ্ছে, হক্ক দেখতে না পাওয়া ও হক্ব অস্বীকার করা। যখন কারও নাম-ডাক হয়ে যায়, তখন তার পক্ষে অন্যের হক কথা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে তার নযীর অনেক বেশি।

• গোঁড়ামীর আরেক খারাপ দিক হচ্ছে, ভুল সংশোধন না করা। হয়ত তিনি একটি মত গ্রহণ করেছেন, কিছু দিন পরে দেখলেন যে, ভিন্নমতটি বেশি শক্তিশালী, কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করতে আর পারলেন না।

• গোঁড়ামীর কারণে অনেক সময় মানুষ বাস্তব বিষয়কে অন্য রকম করে পেশ করে, কখনও কখনও হক্ককে মিথ্যা হিসেবে প্রকাশ করে।

• গোড়ামী মানুষদেরকে ঝগড়া বিবাদ, হানাহানিতে নিবদ্ধ করে।

• গোঁড়ামী মানুষকে প্রবৃত্তি পূজারী বানিয়ে দেয়।

• গোঁড়ামীর আরেকটি দিক হলো, তার কারণ হচ্ছে মূর্খতা, কিন্তু যিনি গোঁড়ামী করছেন তিনি তা বুঝতে পারেন না।

ইসলামে তা‘আসসুব বা গোঁড়ামীর বিধান:

তা‘আসসুব বা গোঁড়ামী ইসলামে কোনোভাবেই অনুমোদিত নয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “যারা মনোযোগের সাথে কথা শোনে এবং তার মধ্যে যা উত্তম তা অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ হিদায়াত দান করেছেন আর তারাই বোধশক্তি সম্পন্ন।” [সূরা আয-যুমার: ১৮]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, “হে মানুষ! আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, আর তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অন্যের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে ব্যক্তিই বেশি মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে বেশি তাকওয়াসম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।” [সূরা আল-হুজুরাত: ১৩]

আরও বলেন, “আপনি কি তাকে দেখেছেন, যে তার প্রবৃত্তিকে ইলাহরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন?” [সূরা আল-ফুরক্বান: ৪৩]

২। আকীদাহ’র মাসআলায় এ বক্তব্য চলবে না। শুধু ইজতিহাদী মাসআলায় এটি একটি সঠিক মত, যা ইমাম শাফে‘য়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেছিলেন। কারণ অধিকাংশ ইজতিহাদী মাসআলায় অকাট্য কথা বলতে কিছু থাকে না। প্রত্যেকেই তার ইজতিহাদ অনুসারে আমল করবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এমনটি বলেছেন, “তোমরা আমার কাছে ঝগড়া করো, তোমাদের কারও প্রমাণ অপরের চেয়ে বেশি চিত্তাকর্ষক হয়, ফলে তার পক্ষে আমার শোনা অনুযায়ী ফয়সালা দিই, তবে যার জন্য তার ভাইয়ের হক্ব আমি কর্তন করি, সে যেন তা না নেয়; কারণ আমি তো জাহান্নামের টুকরোই শুধু কর্তন করছি।” [বুখারী, হাদীস নং ২৪৫৮; মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৩]

সুফইয়ান আস-সাওরী বলেন, ‘যখন তুমি দেখবে যে, একটি লোক তোমার বিপরীত মতে আমল করছ, আর সেখানে পূর্ব থেকেই মতভেদ চলে আসছে, তাহলে তুমি তাকে তাকে নিষেধ করো না।’ [ফাতহুল বার বি তারতীবে আত-তামহীদ লি ইবন আব্দিল বার (৪/৫৪৮)]

ইয়াহইয়া ইবন সা‘ঈদ আল-কাত্তান বলেন, সর্বদা মুফতিদের প্রশ্ন করা হতো, মুফতিগণের একজন যা হালাল বলতো আরেকজন তা হারাম বলতো, তাদের মধ্যে একে অপরকে ধ্বংস হয়ে গেছে বলতো না। [জামে‘উ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাদ্বলিহী (২/১৬১)]

ইউনুস আস-সাদাফী বলেন, “আমি শাফে‘য়ী থেকে বুদ্ধিমান মানুষ কাউকে দেখি না। তার সাথে এক মাসআলায় মুনাযারা করে আমরা আলাদা হলাম, তারপর আমার সাথে সাক্ষাৎ হলে আমার হাত ধরে বললেন, ‘আবু মূসা! একটি মাসআলায় আমরা একমত না হতে পারলেও আমরা কি ভাই হিসেবে থাকতে পারি না?’

ইমাম যাহাবী এর ওপর টীকা দিয়ে বলেন, এটা প্রমাণ করে ইমাম শাফে‘য়ীর বিবেকের পরিপূর্ণতা ও তাঁর ফিকহের উৎকর্ষতার; কারণ আলেমগণ মতভেদ সর্বদাই করেছেন।” [ইমাম যাহাবীসিয়ারু আ‘লামিন নুবালা (১০/১৬)]

আ‘মাশ বলেন, আমি আমাদের যির ও আবু ওয়ায়েল সহ উস্তাদগণকে পেয়েছি, তাদের মধ্যে কেউ উসমানকে আলীর চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন, আবার কেউ আলীকে উসমানের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন, তারপরও তারা পরস্পর ভালোবাসা ও সম্প্রীতিতে অনেক শক্ত ছিলেন।’ [ইমাম যাহাবীসিয়ারু আ‘লামিন নুবালা (৪/১৬৯)]

ইবন আব্দুল বার কোনো কোনো সালাফ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ‘যে কেউ মতভেদ শুনতে পারে না, সে আলেম হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়নি।’ [জামে‘উ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাদ্বলিহী (২/১০২)]

ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ এ বিষয়টিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার নাম ‘রাফ‘উল মালাম আনিল আয়িম্মাতিল আ‘লাম।’। সুতরাং মতভেদের বিষয়টিকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখা উচিত। আরও দেখুন, ইবন তাইমিয়্যাহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া (২০/২৫৭)।

ইবন হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘ইমামগণ কর্তৃক হাদীসের কারণ বের করা অধিক ধারণার ওপর নির্ভরশীল’। [ফাতহুল বারী, (১/৫৮৫)] তার অর্থ হচ্ছে অকাট্য নয় এমন জায়গায় মতভেদ হওয়া অস্বাভাবিক নয়।



এটা সালাফগনের মানহাজ নয়
মূল: শাইখ মুহাম্মাদ ইবন উমার আল-বাযমূল হাফিযাহুল্লাহ
অনুবাদ সম্পাদনা ও ব্যাখ্যা:
শাইখ Dr. Abubakar Md. Zakaria হাফিযাহুল্লাহ​
 

Attachments

  • কোনো একজনের মতকে নিয়ে গোঁড়ামি করা এবং এর প্রতি অতিভক্তি করা.webp
    কোনো একজনের মতকে নিয়ে গোঁড়ামি করা এবং এর প্রতি অতিভক্তি করা.webp
    156.6 KB · Views: 222

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Total Threads
13,350Threads
Total Messages
17,210Comments
Total Members
3,679Members
Latest Messages
Shajib AuzidLatest member
Top