উত্তর: কুরআন প্রাইভেট পড়ানো, হাফেজী মাদরাসায় শিক্ষকতা, মসজিদের ইমামতি, স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষকতা, মাদরাসার শিক্ষকতা, ওয়াজ মাহফিল, তাফসীর মাহফিল, ইসলামের দিকে মানুষকে আহ্বান (দাওয়াত), ঝাড়ফুঁক ইত্যাদি কার্যক্রম করে বিনিময়/পারিশ্রমিক নেয়ার ব্যাপারে কথা হল, এগুলো সব দ্বীনের কাজ। কারও যদি বিনা পারিশ্রমিকে এ সব দ্বীন ও জনকল্যাণ মূলক কাজ করার সামর্থ্য থাকে তাহলে তা নি:সন্দেহে উত্তম-এতে কোন সন্দেহ নাই।
তবে যদি কোন পক্ষ অপর পক্ষকে উপরোক্ত কাজ করার জন্য নিয়োগ দেয় তাহলে সে ক্ষেত্রে নিয়োগকৃত ব্যক্তি নিয়োগ দাতার নিকট পারিশ্রমিক দাবি করতে পারে বা এর জন্য তাদের সাথে চুক্তিও করতে পারে।
জুমহুর ওলামাগণ বলেন, মূলত: যে কাজ থেকে অন্য মানুষ উপকৃত হয় (তা দ্বীন-দুনিয়া যেক্ষেত্রেই হোক না কেন) তার বিনিময় বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে কোন বাধা নেই। এটা মূলত: তার সময়, শ্রম ও কষ্টের বিনিময়। এটাকে কুরআন বা দ্বীন বিক্রয় করা বলা যাবে না।
কিন্তু অর্থ-সম্পদ, সম্মান, খ্যাতি ইত্যাদি লাভের জন্য দ্বীনকে ব্যবহার করা বৈধ নয়। তবে যে ব্যক্তি উদ্দেশ্য ঠিক রেখে বেতন গ্রহণ করবে, তার জন্য তা দূষণীয় হবে না। মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তার দ্বীনের উপকার হতে হবে।
ঝাড়ফুঁক করে অর্থ উপার্জনকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৈধতা দিয়েছেন। যেমন নিম্নের হাদীসটি:
আবু সাইদ খুদরী (রা:) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কতিপয় সাহাবী আরবের কোন এক বসতিতে এলেন। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা তাদেরকে মেহমান হিসেবে গ্রহণ করল না (এবং কোন খাদ্য ও পেশ করলেন না)।
অতঃপর তারা সেখানে থাকা অবস্থায় তাদের সর্দারকে (বিচ্ছুতে) দংশন করল। তারা বলল, ‘তোমাদের কাছে কি কোন ঝাড়ফুঁককারী অথবা ঔষধ আছে?’ তারা বললেন, ‘ তোমরা আমাদেরকে মেহমান হিসেবে গ্রহণ করো নি। সুতরাং আমরাও পারিশ্রমিক ছাড়া (ঝাড়ফুঁক) করব না।’ ফলে তারা এক পাল ছাগল পারিশ্রমিক নির্ধারণ করল।
একজন সাহাবি উম্মুল কুরআন (সুরা ফাতিহা) পড়তে লাগলেন এবং থুথু জমা করে (দংশনের জায়গায়) দিতে লাগলেন। সর্দার সুস্থ হয়ে উঠল। তারা ছাগলের পাল হাজির করল। তারা বললেন, ‘আমরা নবী (সঃ) কে জিজ্ঞাসা না করে গ্রহণ করব না।’ সুতরাং তাকে তারা জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি হেসে বললেন, “ তোমাকে কিসে জানালো যে, ওটি ঝাড়ফুঁকের মন্ত্র? ! ছাগলগুলো গ্রহণ কর এবং আমার জন্য একটি ভাগ রেখও।” (বুখারী ৫৭৩৬ নং)
আরেক বর্ণনায় আছে নবী (সঃ) তাদেরকে বললেন, “তোমরা ঠিক করেছ।” (বুখারী ২২৭৬ নং)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:
বিশেষ ক্ষেত্রে কুরআন শিক্ষাকে রাসুল সা. বিবাহের মোহর হিসেবে সম্মতি দিয়েছেন। অর্থাৎ বিবাহ ইচ্ছুক ব্যক্তির আর্থিক অসচ্ছলতার ক্ষেত্রে রাসূল আর্থিক মোহরের বিকল্প হিসেবে কুরআন শিক্ষাকে নির্ধারণ করেছেন।
যারা কুরআন শিক্ষা দেয় বা নিজের সময় ও শ্রমকে দ্বীনের জন্য বিসর্জন দেয়, আমাদের উচিৎ, তাদেরকে যথাযোগ্য সম্মানী প্রদান করা যাতে তারা উৎসাহিত হয়ে আরও বেশী গুরুত্বের সাথে দ্বীনের কাজ করে। অন্যথায় মানুষ অনুৎসাহিত হয়ে এ কাজ ছেড়ে দিতে পারে। তখন দ্বীন প্রচার হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যারা দ্বীনের কাজ করবে তাদের জন্য আবশ্যক হচ্ছে, আখিরাতে মহান আল্লাহর নিকট সওয়াব অর্জনের গ্রহণের আশা করা। এর মুল উদ্দেশ্য যেন কোনভাবেই দুনিয়া কামানো না হয়। অন্যথায় আখিরাতের সওয়াব থেকে তো বঞ্চিত হতে হবেই আবার এর পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ।
রাসূল সা. বলেন: “যে ব্যক্তি আখিরাতের কর্ম দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে করবে,তার জন্য আখিরাতের কোন ভাগ থাকবে না।” (আহমদ )
তিনি আরও বলেন, “যে ব্যক্তি কোন এমন ইলম অন্বেষণ করে যার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশা করা হয়, যদি সে তা কেবল মাত্র পার্থিব সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যেই অন্বেষণ করে তবে সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না।” (আবু দাউদ, আহমদ, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান)
সুতরাং মূল উদ্দেশ্য তথা আখিরাতে সওয়াব প্রাপ্তির উদ্দেশ্য ঠিক রেখে যদি জীবন চলার জন্য বা নিজের সময় ও শ্রমের বিনিময় হিসেবে দীনি কাজে বেতন বা পারিশ্রমিক গ্রহণ কর হয় তাহলে তা দূষণীয় নয়।
❖ চুক্তি করা:
যে কাজ করার জন্য পারিশ্রমিক বা আর্থিক বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ সে কাজের জন্য চুক্তি করাও বৈধ। চুক্তি না করলে বরং পরবর্তীতে মন কশাকশি ও ঝগড়াঝাটি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বেতন-ভাতা বা পারিশ্রমিক দেয়ার বিষয়টি মানুষের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিলে অনেক ক্ষেত্রে যথার্থ হক আদায় করা হয় না। সুতরাং পরবর্তীতে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে মুক্তি পেতে অগ্রিম উভয় পক্ষ সম্মতির ভিত্তিতে চুক্তি করা জায়েয। আর চুক্তি সম্পন্ন হলে উভয় পক্ষের জন্য চুক্তি পূরণ করা অপরিহার্য।
আল্লাহ বলেন:
কোন এক পক্ষ চুক্তি ভঙ্গ করলে তারা গুনাহগার হবে।
পারিশ্রমিক/সম্মানী কত হবে?
পারিশ্রমিক/বা সম্মানী কত হবে তা নির্ভর করছে উভয় পক্ষের সম্মতির উপর। কম-বেশি যাই হোক চুক্তি অনুযায়ী তা পরিশোধ করা অপরিহার্য। চুক্তি করার পর তা লঙ্ঘন করলে প্রয়োজনে যে কোন পক্ষ অপর অক্ষের উপর আইনগত ব্যবস্থা নেয়ারও অধিকার রাখে।
আল্লাহ আলাম
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব
তবে যদি কোন পক্ষ অপর পক্ষকে উপরোক্ত কাজ করার জন্য নিয়োগ দেয় তাহলে সে ক্ষেত্রে নিয়োগকৃত ব্যক্তি নিয়োগ দাতার নিকট পারিশ্রমিক দাবি করতে পারে বা এর জন্য তাদের সাথে চুক্তিও করতে পারে।
জুমহুর ওলামাগণ বলেন, মূলত: যে কাজ থেকে অন্য মানুষ উপকৃত হয় (তা দ্বীন-দুনিয়া যেক্ষেত্রেই হোক না কেন) তার বিনিময় বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে কোন বাধা নেই। এটা মূলত: তার সময়, শ্রম ও কষ্টের বিনিময়। এটাকে কুরআন বা দ্বীন বিক্রয় করা বলা যাবে না।
কিন্তু অর্থ-সম্পদ, সম্মান, খ্যাতি ইত্যাদি লাভের জন্য দ্বীনকে ব্যবহার করা বৈধ নয়। তবে যে ব্যক্তি উদ্দেশ্য ঠিক রেখে বেতন গ্রহণ করবে, তার জন্য তা দূষণীয় হবে না। মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তার দ্বীনের উপকার হতে হবে।
ঝাড়ফুঁক করে অর্থ উপার্জনকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৈধতা দিয়েছেন। যেমন নিম্নের হাদীসটি:
আবু সাইদ খুদরী (রা:) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কতিপয় সাহাবী আরবের কোন এক বসতিতে এলেন। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা তাদেরকে মেহমান হিসেবে গ্রহণ করল না (এবং কোন খাদ্য ও পেশ করলেন না)।
অতঃপর তারা সেখানে থাকা অবস্থায় তাদের সর্দারকে (বিচ্ছুতে) দংশন করল। তারা বলল, ‘তোমাদের কাছে কি কোন ঝাড়ফুঁককারী অথবা ঔষধ আছে?’ তারা বললেন, ‘ তোমরা আমাদেরকে মেহমান হিসেবে গ্রহণ করো নি। সুতরাং আমরাও পারিশ্রমিক ছাড়া (ঝাড়ফুঁক) করব না।’ ফলে তারা এক পাল ছাগল পারিশ্রমিক নির্ধারণ করল।
একজন সাহাবি উম্মুল কুরআন (সুরা ফাতিহা) পড়তে লাগলেন এবং থুথু জমা করে (দংশনের জায়গায়) দিতে লাগলেন। সর্দার সুস্থ হয়ে উঠল। তারা ছাগলের পাল হাজির করল। তারা বললেন, ‘আমরা নবী (সঃ) কে জিজ্ঞাসা না করে গ্রহণ করব না।’ সুতরাং তাকে তারা জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি হেসে বললেন, “ তোমাকে কিসে জানালো যে, ওটি ঝাড়ফুঁকের মন্ত্র? ! ছাগলগুলো গ্রহণ কর এবং আমার জন্য একটি ভাগ রেখও।” (বুখারী ৫৭৩৬ নং)
আরেক বর্ণনায় আছে নবী (সঃ) তাদেরকে বললেন, “তোমরা ঠিক করেছ।” (বুখারী ২২৭৬ নং)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:
إِنَّ أَحَقَّ مَا أَخَذْتُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا كِتَبُ اللَّهِ
“তোমরা যে সব জিনিসের উপর পারিশ্রমিক গ্রহণ কর, তার মধ্যে আল্লাহর কিতাব সব চেয়ে বেশি হকদার।(বুখারী ৫৭৩৭ নং )বিশেষ ক্ষেত্রে কুরআন শিক্ষাকে রাসুল সা. বিবাহের মোহর হিসেবে সম্মতি দিয়েছেন। অর্থাৎ বিবাহ ইচ্ছুক ব্যক্তির আর্থিক অসচ্ছলতার ক্ষেত্রে রাসূল আর্থিক মোহরের বিকল্প হিসেবে কুরআন শিক্ষাকে নির্ধারণ করেছেন।
যারা কুরআন শিক্ষা দেয় বা নিজের সময় ও শ্রমকে দ্বীনের জন্য বিসর্জন দেয়, আমাদের উচিৎ, তাদেরকে যথাযোগ্য সম্মানী প্রদান করা যাতে তারা উৎসাহিত হয়ে আরও বেশী গুরুত্বের সাথে দ্বীনের কাজ করে। অন্যথায় মানুষ অনুৎসাহিত হয়ে এ কাজ ছেড়ে দিতে পারে। তখন দ্বীন প্রচার হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যারা দ্বীনের কাজ করবে তাদের জন্য আবশ্যক হচ্ছে, আখিরাতে মহান আল্লাহর নিকট সওয়াব অর্জনের গ্রহণের আশা করা। এর মুল উদ্দেশ্য যেন কোনভাবেই দুনিয়া কামানো না হয়। অন্যথায় আখিরাতের সওয়াব থেকে তো বঞ্চিত হতে হবেই আবার এর পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ।
রাসূল সা. বলেন: “যে ব্যক্তি আখিরাতের কর্ম দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে করবে,তার জন্য আখিরাতের কোন ভাগ থাকবে না।” (আহমদ )
তিনি আরও বলেন, “যে ব্যক্তি কোন এমন ইলম অন্বেষণ করে যার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশা করা হয়, যদি সে তা কেবল মাত্র পার্থিব সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যেই অন্বেষণ করে তবে সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না।” (আবু দাউদ, আহমদ, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান)
সুতরাং মূল উদ্দেশ্য তথা আখিরাতে সওয়াব প্রাপ্তির উদ্দেশ্য ঠিক রেখে যদি জীবন চলার জন্য বা নিজের সময় ও শ্রমের বিনিময় হিসেবে দীনি কাজে বেতন বা পারিশ্রমিক গ্রহণ কর হয় তাহলে তা দূষণীয় নয়।
❖ চুক্তি করা:
যে কাজ করার জন্য পারিশ্রমিক বা আর্থিক বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ সে কাজের জন্য চুক্তি করাও বৈধ। চুক্তি না করলে বরং পরবর্তীতে মন কশাকশি ও ঝগড়াঝাটি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বেতন-ভাতা বা পারিশ্রমিক দেয়ার বিষয়টি মানুষের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিলে অনেক ক্ষেত্রে যথার্থ হক আদায় করা হয় না। সুতরাং পরবর্তীতে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে মুক্তি পেতে অগ্রিম উভয় পক্ষ সম্মতির ভিত্তিতে চুক্তি করা জায়েয। আর চুক্তি সম্পন্ন হলে উভয় পক্ষের জন্য চুক্তি পূরণ করা অপরিহার্য।
আল্লাহ বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَوْفُوا بِالْعُقُودِ
“হে মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকার/চুক্তি সমূহ পূর্ণ কর।” (সূরা মায়িদাহ: ১)কোন এক পক্ষ চুক্তি ভঙ্গ করলে তারা গুনাহগার হবে।
পারিশ্রমিক/সম্মানী কত হবে?
পারিশ্রমিক/বা সম্মানী কত হবে তা নির্ভর করছে উভয় পক্ষের সম্মতির উপর। কম-বেশি যাই হোক চুক্তি অনুযায়ী তা পরিশোধ করা অপরিহার্য। চুক্তি করার পর তা লঙ্ঘন করলে প্রয়োজনে যে কোন পক্ষ অপর অক্ষের উপর আইনগত ব্যবস্থা নেয়ারও অধিকার রাখে।
আল্লাহ আলাম
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব
Last edited by a moderator: