উত্তর: এক নজরে যেসব কাজের পূর্বে ওযু করা ওয়াজিব তা হল:
(১) অপবিত্র হলে সালাত আদায়ের পূর্বে ওযু করা ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে মুমিনেরা! তোমরা যখন নামাযে দাঁড়াও, তখন (তার পূর্বে) তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত দু’টো কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, অতঃপর মাথা মাসেহ কর এবং উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।” (সূরা মায়েদাহ,৬)। আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, পবিত্রতা অর্জন ছাড়া নামায কবুল হয় না।” (সহীহ মুসলিম ২২৪ বুখারী হা/৩৩১)। অর্থাৎ, বড় নাপাকি হলে গোসল এবং ছোট নাপাকি হলে অবশ্যই ওযু করে সালাত আদায় করতে হবে।
(২) বিনা ওযুতে কাবাঘর তওয়াফ করা নিষিদ্ধ। হাদীসে এসেছে,রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “কাবাঘরে তাওয়াফ করা নামাযতুল্য।”(সূনানে নাসাঈ: ২৯২০)। অপর এক হাদীসে আয়েশা (রা)-কে সম্বােধন করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,“পবিত্র না হয়ে আল্লাহর ঘরে তাওয়াফ করো না।” (সহীহ বুখারী: ২৯৪ ও ৩০৫ সহীহ মুসলিম, ২৯৭৭)।
(৩) বিনা অযুতে সরাসরি কুরআন স্পর্শ করা নিষিদ্ধ। তবে এক্ষেত্রে নাপাক অবস্থা দু’প্রকারের। যথা:-
(ক) পেশাব-পায়খানা করার কারণে নাপাক হওয়া (খ) স্ত্রী সহবাসে বা অন্য কোন উপায়ে বীর্যপাত হওয়ার কারণে নাপাক হওয়া। প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় অবস্থায় কুরআন মাজীদ স্পর্শ ছাড়া পড়া জায়েজ। (তিরমিযী ১/১৪৬; আহমাদ হা/৬৩৯, ৮৭২;বুখারী, মিশকাত হা/৪৫১)।
দ্বিতীয় অবস্থায় কুরআন মাজীদ স্পর্শ করা হারাম। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,কেউ তা (কুরআন) স্পর্শ করে না পবিত্রগণ ছাড়া।’ (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৭৯)। ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল (ﷺ) বলেন, “পবিত্র না হয়ে কেউ যেন কুরআন স্পর্শ না করে। (মুয়াত্তা মালেক, ১/১৯৯ পৃঃ, দারাকুতনী, ১/১২১ পৃঃ; সনদ সহীহ। মিশকাত হা/৪৬৫,)। তবে কম্পিউটার, মোবাইল,ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে কুরআন পড়াতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা এগুলি সরাসরি কিতাবুল্লাহ নয়, যা স্পর্শযোগ্য।
যে সকল কাজের জন্য ওযু করা সুন্নাত?
(১) আল্লাহ তা‘আলার যিকির এবং কুরআন তেলাওয়াতের সময় ওযু করা উত্তম। রাসূল (ﷺ) বলেন, ওযু ব্যতীত আমি আল্লাহর নাম নেয়া অপছন্দ করি অথবা তিনি বললেন,পবিত্রাবস্থায় ব্যতীত। (আবূদাঊদ হা/১৭; নাসাঈ হা/৩৮; মিশকাত হা/৪৬৭; ছহীহাহ হা/৮৩৪) আর কুরআন তেলাওয়াত যিকরের অন্তর্ভুক্ত। তবে ওযু ছাড়াও কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে। আয়েশা (রাঃ) রাসূল (ﷺ) সম্পর্কে বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকর করতেন। (সহীহ মুসলিম হা/৩৭৩ আবূদাঊদ হা/১৮; তিরমিযী হা/৩৩৮৪; ছহীহাহ হা/৪০৬)। কিন্তু ওযু অবস্থায় তেলাওয়াত করা উত্তম।
(২) তিলাওয়াত ও শুকরিয়া সিজদাহ করার জন্য ওযু করা মুস্তাহাব, তবে বাধ্যতামূলক নয়।অর্থাৎ বিনা ওযুতে এই সিজদাহ করা জায়েয।ইবনু আব্বাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) সূরা নাজ্ম তিলাওয়াতের পর সিজদাহ করেন এবং তাঁর সাথে সমস্ত মুসলিম, মুশরিক, জ্বিন ও ইনসান সবাই সিজদাহ করেছিল’।[সহীহ বুখারী,১০৭১]। অতএব তিলাওয়াত ও শুকরিয়ার সিজদাহর ক্ষেত্রে ওযু পূর্বশর্ত হ’লে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুশরিকদেরকে সিজদাহ করতে নিষেধ করতেন। কেননা তাদের ওযু ও সালাত সহীহ নয়। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ এবং মুহাম্মাদ ইবনে সালেহ আল-উসাইমীন (রহঃ) অনুরূপ ফৎওয়া প্রদান করেছেন। (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২১/২৭৯,২৯৩ পৃঃ; শারহুল মুমতে ১/৩২৫-৩২৭ পৃঃ)।
(৩) প্রত্যেক সালাতের সময় ওযু করা সুন্নাত। যদিও সে ওযু অবস্থায় থাকে। কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রত্যেক সালাতের সময় ওযু করতেন। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক সালাতের সময় ওযু করতেন। আমি বললাম:আপনারা কী করতেন? তিনি বললেনঃ হাদাস (ওযু ভঙ্গের কারণ) না হওয়া পর্যন্ত আমাদের (পূর্বের) ওযু যথেষ্ট হত। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২১৪ আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২১৪)।
(৪) যে সমস্ত নাপাকীর কারণে ওযু নষ্ট হয় তা সংঘটিত হওয়ার পর ওযু করা মুস্তাহাব: মহানবী (ﷺ) জান্নাতে (বেলালের) জুতার আওয়াজ শুনে বলেছিলেন, কি কারণে তুমি আমার অগ্রগামি হয়েছ?তখন বেলাল বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ)! আমি যখনই আযান দিতাম তখনই দু‘রাকআত সালাত আদায় করতাম এবং যখনই আমার ওযু ভঙ্গ হয়ে যেত,তখনই ওযু করে নিতাম। তখন মহানবী (ﷺ) বললেন, এ জন্যই।(আত্ তিরমিযী ১৩৮৯, আহমাদ ২২৯৯৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০১২, সহীহ আল জামি‘ ৭৮৯৪, মিশকাত,১৩২৬)।
(৫) সহবাসের পরে পুনরায় স্ত্রী মিলন করলে ওযু করা সুন্নাত। আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের পর পুনরায় সঙ্গমের ইচ্ছা করবে সে যেন উভয় সঙ্গমের মাঝে একবার ওযু করে। (সহীহ মুসলিম ৩০৮ মিশকাত,৪৫৪) আর হাকিম এ কথাটি বৃদ্ধি করেছেনঃ “পুনর্মিলনের জন্য এটা (ওযু করা) তৃপ্তিদায়ক।(মুসতাদরাক হাকিম ১৫২; বর্ধিত অংশটুকুও সহীহ। সহীহ তিরমিযী ১৪১বুলুগুল মারাম, হাদিস নং ১১৭)।
(৬) সহবাসের পরে কিছু খেতে এবং ঘুমাতে বা পানাহার করতে চাইলে ওযু করা সুন্নাহ; আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাপাক অবস্হায় কিছু খাওয়ার ইচ্ছা করলে ওযু করে নিতেন। (বুখারী ২৮৬, ২৮৮; মুসলিম ৩০১-২, তিরমিযী ১১৮, নাসায়ী ২৫৫-৫৮, আবূ দাঊদ ২২২, ২২৪) অন্য হাদীসে এসেছে ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসুলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাপাকী অবস্থায় যখন ঘুমাতে ইচ্ছা করতেন তখন ঘুমাবার আগে সলাতের জন্য যেমন ওযু করতে হয়,তেমন ওযু করতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৮৬ ই.ফা. ৫৯০, ই.সে. ৬০৬)।
(৭) গোসল করার পূর্বে ওযু করা সুন্নাত: আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পবিত্রতার জন্য ফরয গোসল করার সময় প্রথমে (কব্জি পর্যন্ত) দুই হাত ধুতেন। এরপর সলাতের ওযুর মত ওযু করতেন। অতঃপর আঙ্গুলগুলো পানিতে ডুবিয়ে তা দিয়ে মাথার চুলের গোড়া খিলাল করতেন। অতঃপর মাথার উপর তিন অঞ্জলি পানি ঢালতেন, তারপর শরীরের সর্বাঙ্গ পানি দিয়ে ভিজাতেন। কিন্তু ইমাম মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাত্রে হাত ডুবিয়ে দেয়ার আগে কব্জি পর্যন্ত হাত ধুতেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতের তালুতে পানি ঢেলে লজ্জাস্থান ধুতেন, অতঃপর ওযু করতেন। (সহীহ বুখারী ২৪৮,সহীহ মুসলিম ৩১৬ মিশকাত,৪৩৫)।
(৮) বমি হওয়ার পর ওযু করা মুস্তাহাব: মি’দান বিন আবু ত্বলহা আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করে বলেন, রাসূল (ﷺ) বমি করলেন,ফলে তিনি ওযূ করলেন।মিদান বলেন, আমি দামেশকের মাসজিদে সাওবান (রা.) এর সাথে দেখা করে তাঁকে এ কথা বললাম। তিনি বললেন,আবু দারদা (রাঃ) ঠিকই বলেছেন, এ সময় আমি তাঁর (রাসূল ﷺ) এর ওযুর পানি ঢেলেছিলাম। (সহীহ আবূ দাঊদ ২৩৮১, তিরমিযী ৮৭, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৯২০১, আহমাদ ২১৭০১, দারিমী ১৭৬৯, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৯৫৬, দারাকুত্বনী ৫৯০, ইবনু হিববান ১০৯৭। মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ২০০৮)।
(৯) আগুনে স্পর্শ করা খাবার তথা পাকানো খাবার খেলে ওযু করা মুস্তাহাব: আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ আগুন দিয়ে পাকানো কোন জিনিস খেলে তোমরা ওযু করে নেবে। (সহীহ: মুসলিম ৩৫২ মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৩০৩)। তবে ইমাম মুহ্য়িয়ুস্ সুন্নাহ্ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসের হুকুম ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীস দ্বারা মানসূখ বা রহিত বা বাতিল হয়ে গেছে। অর্থাৎ আমর বিন উমাইয়্যাহ আযযমারী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী করীম (ﷺ) কে একটি বকরীর কাঁধের গোশ্ত কেটে খেতে দেখলাম। এ সময় সালাতের জন্য ডাকা হল, তখন তিনি ছুরি ফেলে দিয়ে সালাত আদায় করলেন; কিন্তু ওযু করলেন না। (সহীহ বুখারী (১/৫০), মুসলিম (৪/৪৫, নববী প্রণীত), ইবনে মাজাহ ৪৯০)। কেউ চাইলে অযু করতে পারেন।
(১০) মৃত ব্যক্তিকে গোসল করালে এবং তাকে বহন করলে অযু করা মুস্তাহাব: বিশুদ্ধ মতে, যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে অথবা তাকে বহন করবে, তার ওযু নষ্ট হবে না। তবে কতিপয় বিদ্বান বলেছেন মুস্তাহাব হলো যে ব্যক্তি কোন মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে সে গোসল করবে, আর তাকে বহন করলে ওযু করবে।আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মৃতের গোসল দেয়, সে যেন গোসল করে এবং যে তা বহন করে, সে যেন ওযু করে। ”(আবু দাউদ ৩১৬৩, তিরমিযী ৯৯৩, ইবনে মাজাহ ১৪৬৩, সহীহ আবু দাউদ ২৭০৭ হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১২৯৬)।
(১১) ঘুমানের পূর্বে ওযু করা সুন্নাহ: বারা ইবনু আযেব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন সালাতের ওযুর মত ওযু করে নিবে। তারপর ডান কাতে শয়ন করবে। (সহীহুল বুখারী ২৪৭, ৬৩১১, ৬৩১৩, ৬৩২৫, ৭৪৮৮, মুসলিম ২৭১০, তিরমিযী ২৩৯৪, ৩৫৭৪, আবূ দাউদ,৫০৪৬, ইবনু মাজাহ ৩৮৭৬)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
কী কী কাজের পূর্বে ওযু করা ওয়াজিব এবং সুন্নাহ বা মুস্তাহাব - Tawheed Media
(১) অপবিত্র হলে সালাত আদায়ের পূর্বে ওযু করা ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে মুমিনেরা! তোমরা যখন নামাযে দাঁড়াও, তখন (তার পূর্বে) তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত দু’টো কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, অতঃপর মাথা মাসেহ কর এবং উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।” (সূরা মায়েদাহ,৬)। আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, পবিত্রতা অর্জন ছাড়া নামায কবুল হয় না।” (সহীহ মুসলিম ২২৪ বুখারী হা/৩৩১)। অর্থাৎ, বড় নাপাকি হলে গোসল এবং ছোট নাপাকি হলে অবশ্যই ওযু করে সালাত আদায় করতে হবে।
(২) বিনা ওযুতে কাবাঘর তওয়াফ করা নিষিদ্ধ। হাদীসে এসেছে,রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “কাবাঘরে তাওয়াফ করা নামাযতুল্য।”(সূনানে নাসাঈ: ২৯২০)। অপর এক হাদীসে আয়েশা (রা)-কে সম্বােধন করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,“পবিত্র না হয়ে আল্লাহর ঘরে তাওয়াফ করো না।” (সহীহ বুখারী: ২৯৪ ও ৩০৫ সহীহ মুসলিম, ২৯৭৭)।
(৩) বিনা অযুতে সরাসরি কুরআন স্পর্শ করা নিষিদ্ধ। তবে এক্ষেত্রে নাপাক অবস্থা দু’প্রকারের। যথা:-
(ক) পেশাব-পায়খানা করার কারণে নাপাক হওয়া (খ) স্ত্রী সহবাসে বা অন্য কোন উপায়ে বীর্যপাত হওয়ার কারণে নাপাক হওয়া। প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় অবস্থায় কুরআন মাজীদ স্পর্শ ছাড়া পড়া জায়েজ। (তিরমিযী ১/১৪৬; আহমাদ হা/৬৩৯, ৮৭২;বুখারী, মিশকাত হা/৪৫১)।
দ্বিতীয় অবস্থায় কুরআন মাজীদ স্পর্শ করা হারাম। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,কেউ তা (কুরআন) স্পর্শ করে না পবিত্রগণ ছাড়া।’ (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৭৯)। ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল (ﷺ) বলেন, “পবিত্র না হয়ে কেউ যেন কুরআন স্পর্শ না করে। (মুয়াত্তা মালেক, ১/১৯৯ পৃঃ, দারাকুতনী, ১/১২১ পৃঃ; সনদ সহীহ। মিশকাত হা/৪৬৫,)। তবে কম্পিউটার, মোবাইল,ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে কুরআন পড়াতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা এগুলি সরাসরি কিতাবুল্লাহ নয়, যা স্পর্শযোগ্য।
যে সকল কাজের জন্য ওযু করা সুন্নাত?
(১) আল্লাহ তা‘আলার যিকির এবং কুরআন তেলাওয়াতের সময় ওযু করা উত্তম। রাসূল (ﷺ) বলেন, ওযু ব্যতীত আমি আল্লাহর নাম নেয়া অপছন্দ করি অথবা তিনি বললেন,পবিত্রাবস্থায় ব্যতীত। (আবূদাঊদ হা/১৭; নাসাঈ হা/৩৮; মিশকাত হা/৪৬৭; ছহীহাহ হা/৮৩৪) আর কুরআন তেলাওয়াত যিকরের অন্তর্ভুক্ত। তবে ওযু ছাড়াও কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে। আয়েশা (রাঃ) রাসূল (ﷺ) সম্পর্কে বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকর করতেন। (সহীহ মুসলিম হা/৩৭৩ আবূদাঊদ হা/১৮; তিরমিযী হা/৩৩৮৪; ছহীহাহ হা/৪০৬)। কিন্তু ওযু অবস্থায় তেলাওয়াত করা উত্তম।
(২) তিলাওয়াত ও শুকরিয়া সিজদাহ করার জন্য ওযু করা মুস্তাহাব, তবে বাধ্যতামূলক নয়।অর্থাৎ বিনা ওযুতে এই সিজদাহ করা জায়েয।ইবনু আব্বাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) সূরা নাজ্ম তিলাওয়াতের পর সিজদাহ করেন এবং তাঁর সাথে সমস্ত মুসলিম, মুশরিক, জ্বিন ও ইনসান সবাই সিজদাহ করেছিল’।[সহীহ বুখারী,১০৭১]। অতএব তিলাওয়াত ও শুকরিয়ার সিজদাহর ক্ষেত্রে ওযু পূর্বশর্ত হ’লে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুশরিকদেরকে সিজদাহ করতে নিষেধ করতেন। কেননা তাদের ওযু ও সালাত সহীহ নয়। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ এবং মুহাম্মাদ ইবনে সালেহ আল-উসাইমীন (রহঃ) অনুরূপ ফৎওয়া প্রদান করেছেন। (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২১/২৭৯,২৯৩ পৃঃ; শারহুল মুমতে ১/৩২৫-৩২৭ পৃঃ)।
(৩) প্রত্যেক সালাতের সময় ওযু করা সুন্নাত। যদিও সে ওযু অবস্থায় থাকে। কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রত্যেক সালাতের সময় ওযু করতেন। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক সালাতের সময় ওযু করতেন। আমি বললাম:আপনারা কী করতেন? তিনি বললেনঃ হাদাস (ওযু ভঙ্গের কারণ) না হওয়া পর্যন্ত আমাদের (পূর্বের) ওযু যথেষ্ট হত। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২১৪ আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২১৪)।
(৪) যে সমস্ত নাপাকীর কারণে ওযু নষ্ট হয় তা সংঘটিত হওয়ার পর ওযু করা মুস্তাহাব: মহানবী (ﷺ) জান্নাতে (বেলালের) জুতার আওয়াজ শুনে বলেছিলেন, কি কারণে তুমি আমার অগ্রগামি হয়েছ?তখন বেলাল বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ)! আমি যখনই আযান দিতাম তখনই দু‘রাকআত সালাত আদায় করতাম এবং যখনই আমার ওযু ভঙ্গ হয়ে যেত,তখনই ওযু করে নিতাম। তখন মহানবী (ﷺ) বললেন, এ জন্যই।(আত্ তিরমিযী ১৩৮৯, আহমাদ ২২৯৯৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০১২, সহীহ আল জামি‘ ৭৮৯৪, মিশকাত,১৩২৬)।
(৫) সহবাসের পরে পুনরায় স্ত্রী মিলন করলে ওযু করা সুন্নাত। আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের পর পুনরায় সঙ্গমের ইচ্ছা করবে সে যেন উভয় সঙ্গমের মাঝে একবার ওযু করে। (সহীহ মুসলিম ৩০৮ মিশকাত,৪৫৪) আর হাকিম এ কথাটি বৃদ্ধি করেছেনঃ “পুনর্মিলনের জন্য এটা (ওযু করা) তৃপ্তিদায়ক।(মুসতাদরাক হাকিম ১৫২; বর্ধিত অংশটুকুও সহীহ। সহীহ তিরমিযী ১৪১বুলুগুল মারাম, হাদিস নং ১১৭)।
(৬) সহবাসের পরে কিছু খেতে এবং ঘুমাতে বা পানাহার করতে চাইলে ওযু করা সুন্নাহ; আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাপাক অবস্হায় কিছু খাওয়ার ইচ্ছা করলে ওযু করে নিতেন। (বুখারী ২৮৬, ২৮৮; মুসলিম ৩০১-২, তিরমিযী ১১৮, নাসায়ী ২৫৫-৫৮, আবূ দাঊদ ২২২, ২২৪) অন্য হাদীসে এসেছে ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসুলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাপাকী অবস্থায় যখন ঘুমাতে ইচ্ছা করতেন তখন ঘুমাবার আগে সলাতের জন্য যেমন ওযু করতে হয়,তেমন ওযু করতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৮৬ ই.ফা. ৫৯০, ই.সে. ৬০৬)।
(৭) গোসল করার পূর্বে ওযু করা সুন্নাত: আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পবিত্রতার জন্য ফরয গোসল করার সময় প্রথমে (কব্জি পর্যন্ত) দুই হাত ধুতেন। এরপর সলাতের ওযুর মত ওযু করতেন। অতঃপর আঙ্গুলগুলো পানিতে ডুবিয়ে তা দিয়ে মাথার চুলের গোড়া খিলাল করতেন। অতঃপর মাথার উপর তিন অঞ্জলি পানি ঢালতেন, তারপর শরীরের সর্বাঙ্গ পানি দিয়ে ভিজাতেন। কিন্তু ইমাম মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাত্রে হাত ডুবিয়ে দেয়ার আগে কব্জি পর্যন্ত হাত ধুতেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতের তালুতে পানি ঢেলে লজ্জাস্থান ধুতেন, অতঃপর ওযু করতেন। (সহীহ বুখারী ২৪৮,সহীহ মুসলিম ৩১৬ মিশকাত,৪৩৫)।
(৮) বমি হওয়ার পর ওযু করা মুস্তাহাব: মি’দান বিন আবু ত্বলহা আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করে বলেন, রাসূল (ﷺ) বমি করলেন,ফলে তিনি ওযূ করলেন।মিদান বলেন, আমি দামেশকের মাসজিদে সাওবান (রা.) এর সাথে দেখা করে তাঁকে এ কথা বললাম। তিনি বললেন,আবু দারদা (রাঃ) ঠিকই বলেছেন, এ সময় আমি তাঁর (রাসূল ﷺ) এর ওযুর পানি ঢেলেছিলাম। (সহীহ আবূ দাঊদ ২৩৮১, তিরমিযী ৮৭, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৯২০১, আহমাদ ২১৭০১, দারিমী ১৭৬৯, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৯৫৬, দারাকুত্বনী ৫৯০, ইবনু হিববান ১০৯৭। মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ২০০৮)।
(৯) আগুনে স্পর্শ করা খাবার তথা পাকানো খাবার খেলে ওযু করা মুস্তাহাব: আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ আগুন দিয়ে পাকানো কোন জিনিস খেলে তোমরা ওযু করে নেবে। (সহীহ: মুসলিম ৩৫২ মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৩০৩)। তবে ইমাম মুহ্য়িয়ুস্ সুন্নাহ্ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসের হুকুম ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীস দ্বারা মানসূখ বা রহিত বা বাতিল হয়ে গেছে। অর্থাৎ আমর বিন উমাইয়্যাহ আযযমারী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী করীম (ﷺ) কে একটি বকরীর কাঁধের গোশ্ত কেটে খেতে দেখলাম। এ সময় সালাতের জন্য ডাকা হল, তখন তিনি ছুরি ফেলে দিয়ে সালাত আদায় করলেন; কিন্তু ওযু করলেন না। (সহীহ বুখারী (১/৫০), মুসলিম (৪/৪৫, নববী প্রণীত), ইবনে মাজাহ ৪৯০)। কেউ চাইলে অযু করতে পারেন।
(১০) মৃত ব্যক্তিকে গোসল করালে এবং তাকে বহন করলে অযু করা মুস্তাহাব: বিশুদ্ধ মতে, যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে অথবা তাকে বহন করবে, তার ওযু নষ্ট হবে না। তবে কতিপয় বিদ্বান বলেছেন মুস্তাহাব হলো যে ব্যক্তি কোন মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে সে গোসল করবে, আর তাকে বহন করলে ওযু করবে।আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মৃতের গোসল দেয়, সে যেন গোসল করে এবং যে তা বহন করে, সে যেন ওযু করে। ”(আবু দাউদ ৩১৬৩, তিরমিযী ৯৯৩, ইবনে মাজাহ ১৪৬৩, সহীহ আবু দাউদ ২৭০৭ হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১২৯৬)।
(১১) ঘুমানের পূর্বে ওযু করা সুন্নাহ: বারা ইবনু আযেব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন সালাতের ওযুর মত ওযু করে নিবে। তারপর ডান কাতে শয়ন করবে। (সহীহুল বুখারী ২৪৭, ৬৩১১, ৬৩১৩, ৬৩২৫, ৭৪৮৮, মুসলিম ২৭১০, তিরমিযী ২৩৯৪, ৩৫৭৪, আবূ দাউদ,৫০৪৬, ইবনু মাজাহ ৩৮৭৬)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
কী কী কাজের পূর্বে ওযু করা ওয়াজিব এবং সুন্নাহ বা মুস্তাহাব - Tawheed Media
Last edited by a moderator: