একজন আবেগী জি’হাদীকে শায়খ আল-‘আলবানীর নসীহাত—

  • Thread Author
প্রশ্নকারী: ঠিক আছে, বসনিয়াতে আমাদের ভাইদের
সম্পর্কে আরও একটি প্রশ্ন আছে..

শায়খ আল-আলবানী: ন’আম।

প্রশ্নকর্তা: আমি শুনেছি যে— আপনি কিছু ভাইকে বলেছিলেন— যারা তাদের জীবন নিয়ে আল্লাহ্'র পথে লড়াই করার জন্য সেখানে যেতে চেয়েছিল: ‘নিজের বিরুদ্ধে জি’হাদ কর’ [অর্থাৎ নিজেকে শুদ্ধ কর]।

শায়খ আল-আলবানী: হ্যাঁ, এটা সত্য।

প্রশ্নকারী: এর অর্থ হল যে, আপনি [লোকদের] সেখানে [জি’হাদের জন্য] যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন না?

শায়খ আল-আলবানী: এটা সত্য।
প্রশ্নকারী: আচ্ছা, আপনি কি মনে করেন না যে সেখানকার লোকেদের সাহায্যের প্রয়োজন?

শায়খ আল-আলবানী: আমি কীভাবে এটা ভাববো না! তবে মুসলিমদের জীবনকে বৃথা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে সাহায্য সম্পাদন করা যায়? পবিত্র কুর’আনে আমাদেরকে যে প্রস্তুতির কথা বলা হয়েছে সেই প্রস্তুতি কোথায়?
প্রশ্নকর্তা: সেখানে যদি লাভ থাকে?

শায়খ আল-আলবানী: তুমি যদি বিশ্বাস কর যে, কোনও লাভ আছে— তাহলে এটি [জি'হাদ] ওয়াজীব। তুমি কি বিশ্বাস কর?
প্রশ্নকর্তা: হ্যাঁ।

শায়খ আল-আলবানী: কীসের ভিত্তিতে?
প্রশ্নকর্তা: সেখানে দুর্বল মুসলিমরা রয়েছে..

শায়খ আল-আলবানী: দয়া করে আঁখি— আমাকে স্থিতাবস্থা সম্পর্কে বলবে না; কি লাভ তা বলো।

প্রশ্নকর্তা: লাভ হচ্ছে— তাদের সাহায্য করা এবং [অস্পষ্ট কথা]..

শায়খ আল-আলবানী: আল্লাহ্ তোমাকে সৎপথগামী করুন! তাদেরকে সাহায্য করার জন্য ব্যক্তির নয় রাজ্যের [হস্তক্ষেপ] প্রয়োজন। [এই] পরিস্থিতিতে সুগঠিত সেনাবাহিনী দরকার যারা অস্ত্র ব্যবহারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এটির জন্য ট্যাঙ্ক, বিমান ইত্যাদি দরকার হয়, তুমি কোন বিশেষ উপায়ের কথা বলছো? আমরা যদি এখান থেকে ওখান থেকে এক হাজার লোক [সেখানে] পাঠাতাম, তখন তারা শত্রুদের গুলির সহজ শিকারে পরিণত হতো৷ এই লোকেরা [শত্রুদের] ট্যাঙ্ক এবং বিধ্বংসী অস্ত্রের মুখে কী করতে পারবে?
প্রশ্নকর্তা: হাঁ।

শায়খ আল-আলবানী: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্’র। আমি আশ্চর্য হই— কীভাবে যুবকরা এই বিষয়গুলিকে খুব সীমিত/সহজ ভাবে দেখে! আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কোনও লাভ আছে কিনা। তুমি বলেছিলে: ‘হ্যাঁ।’ লাভ কী? তারা দুর্বল! আবূ ছু’হাইব! আল্লাহ্ তোমাকে সৎপথগামী করুন৷ যেন আমি জানতাম না যে তারা দুর্বল এবং প্রথম: সার্ব এবং তাদের মিত্রদের— দ্বিতীয় এবং বিশেষত: আমেরিকানরা যারা সমস্ত কিছু ধ্বংস করে দিয়েছে তাদের তুলনায় তারা সংখ্যায় কম এবং স্বল্প-সশস্ত্র৷ তুমি কি এই তথ্যগুলো জানো না?
প্রশ্নকর্তা: হ্যাঁ।

শায়খ আল-আলবানী: তুমি কীভাবে বলতে পারো যে— সেখানে লাভ আছে? বৃথা মুসলিমদের ধ্বংস করাতে কোন উপকার আছে? এবং আফগানিস্তানে ঠিক এটাই হয়েছিল। তুমি কি মনে করো যে— বসনিয়া এবং হার্জেগোভিনার জি’হাদ যেকোনভাবে আফগানিস্তানের চেয়ে জোরতম হতে পারে?

প্রশ্নকর্তা: না।
শায়খ আল-আলবানী: সেখানকার ফলাফল কী হয়েছিল? আহ্! ফলাফল ছিল আমরা পরাজয় ভোগ করেছি..

প্রশ্নকর্তা: হ্যাঁ।

শায়খ আল-আলবানি: ..এবং আমরা নিজেদের উপর ধ্বংস ডেকে নিয়ে এসেছিলাম কারণ আমরা ধর্মীয় শিক্ষাগুলির বহু [শিক্ষায়], বহু খুঁটিনাটির বিরোধীতা করেছি, যার মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্টতই [পৃথক ও বিভক্ত] হওয়াই খারাপ পরিণতি ডেকে এনেছিল। [আল্লাহ্ বলেন]: ❝আর তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। যারা নিজেদের দ্বীনকে বিভক্ত করে ফেলেছে এবং বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে গেছে। প্রত্যেক দল নিজেদের কাছে যা আছে তাই নিয়ে উল্লসিত।❞ [সূরাহ্ রুম: ৩১-৩২]

সাতটি দল একটি দলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং তা হচ্ছে কমিউনিস্ট দল। কমিউনিস্ট দল— যা একটি কাফির দল বনাম তিনটি মুসলিম দল। এটা কীভাবে হতে পারে? কাজেই, ভুলে যেও না, যদিও তুমি আমাদের থেকে অনেক দূরে থাকো, মূলনীতি হল যে— সূচনা হবে তাসফিয়া ওয়াত্ব-তারবিয়া দিয়েই অর্থাৎ [অর্থাৎ শুদ্ধি ও শিক্ষা]...

প্রশ্নকর্তা: হ্যাঁ।

শায়খ আল-আলবানী: .. এবং আল্লাহ্’র [আজজা ওয় জাল] কথা-টি মনে রাখবে: ❝তোমাদের উপর যে বিপদই উপনীত হয় তা তোমাদের হাতের উপার্জনের কারণেই, তিনি অনেক অপরাধই ক্ষমা করে দেন।❞
[সূরাহ্ আশ-শূরাহ্: ৩০]

এবং আমরা আল্লাহ্’র কাছে সমস্ত মুসলিম দেশে আমাদের মুসলিম ভাইরা যেন বিজয় অর্জন করতে পারে— এই দোয়া করি৷ না'আম, আমাদের রাব্ব পবিত্র কুর’আনে বলেছেন: ❝যারা অতীত হয়ে গেছে তাদের ক্ষেত্রে এটাই ছিল আল্লাহ্’র বিধান, তুমি আল্লাহ্’র বিধানে কক্ষনো হেরফের পাবে না।❞ [সূরাহ্ আহযাব: ৪৩] ❝তুমি আল্লাহ্’র সুন্নাহ্য় কক্ষনো কোন ব্যতিক্রম পাবে না।❞ [সূরাহ্ ফাতির: ৪৩] ❝নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেরাই তাদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আল্লাহ্ কোন সম্প্রদায়ের অকল্যাণ করতে চাইলে তা রদ্দ করার কেউ নেই, আর তিনি ছাড়া তাদের কোন অভিভাবক নেই।❞ [সূরাহ্ রদ্দ: ১১]

যদি আমরা ইসলামিক দেশগুলোর মধ্যে থেকে কোন দেশকে রক্ষা করতে চায় তবে আমাদের অবশ্যই প্রথমে নিজ নিজ দেশে ইসলামকে রক্ষা করতে হবে। কিন্তু আমরা আমাদের দেশগুলিতে ইসলামকে রক্ষা করি না এবং এ কারণেই আমাদের নিজ দেশগুলিতে বিপর্যয়/দুঃখ আঘাত হেনেছে, এবং এটি নিয়ে আমরা দুঃখবোধ করি এবং আমরা আল্লাহ্ [আজজা ওয়া জাল]-এর কাছে মুসলিমদেরকে দেওয়া তাঁর সত্য ওয়াদা পূরণ করার জন্য দোয়া করি: ❝নিশ্চয়ই আমি আমার রসূলদেরকে আর মু’মিনদেরকে অবশ্যই সাহায্য করব দুনিয়ার জীবনে....।❞ [সূরাহ্ গাফির: ৫১]

“আমার উম্মতের একদল সত্যকে বিজয়ী করবে এবং কেয়ামত না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরোধিতাকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।” আশা করি, এটি তোমার জন্য যথেষ্ট হবে৷

প্রশ্নকর্তা: আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক, শায়খ।

শায়খ আল-আলবানী: তোমাকেও, আল্লাহ্'র ইচ্ছায়৷ শীঘ্রই তোমাকে আবার শুনতে পাবো।”

বঙ্গানুবাদ: আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ রাকিব খান।

সোর্স
 
Back
Top