সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

সালাত ঈদের সালাতে ছহীহ হাদীছের আলোকে তাকবীর কয়টি?

Md Atiar Rahaman Halder

Salafi

Salafi User
Threads
62
Comments
84
Reactions
771
Credits
422
ছহীহ হাদীছের আলোকে ১২ তাকবীরের প্রমাণ সমূহ
(۱) عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنْ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَبَّرَ في الْعَيْدَيْنِ الْأَضْحَى وَالْفِطْرِ ثَنْتَيْ عَشَرَةَ تَكْبِيرَةً فِي الْأَوْلَى سَبْعًا وَفِي الْأَخِيْرَةِ حَمْسًا سِوَى تَكْبِيرَةِ الْإِحْرَامِ وَفِي رِوَايَةٍ سِوَى تَكْبِيرَةِ الصَّلاةِ
(১) ‘আমর ইবনু শু‘আইব তার পিতা হ’তে, তিনি তার দাদা (আব্দুল্লাহ ইবনু 'আমর ইবনুল ‘আছ) হ'তে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর-এর ছালাতে ১২ তাকবীর দিতেন। তাকবীরে তাহরীমা ছাড়াই তিনি প্রথম রাক'আতে সাত এবং দ্বিতীয় রাক'আতে পাঁচ তাকবীর দিতেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, 'ছালাতের তাকবীর' ছাড়া'। অন্য হাদীছে এসেছে,
(۲) عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ قَالَ نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ التَّكْبيـ الْفِطْرِ سَبْعٌ فِيالْأَوْلَى وَخَمْسَ فِي الآخِرَةِ وَالْقِرَاءَةُ بَعْدَهُمَا كِلْتَيْهِمَا
(২) আব্দুল্লাহ ইবনু 'আমর ইবনুল আছ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “ঈদুল ফিতর-এর প্রথম রাক'আতে সাত তাকবীর দিতে হবে এবং দ্বিতীয় রাক'আতে পাঁচ তাকবীর দিতে হবে। আর উভয় রাক'আতে ক্বিরাআত পড়তে হবে তাকবীরের পর'।

‘আমর ইবনু শু‘আইব (রাঃ) থেকে উক্ত দু'ধরনের বর্ণনা এসেছে। দারাকুত্নীতে পৃথক পৃথক তিনটি সনদে বর্ণিত হয়েছে,১​

* মাসিক আত-তাহরীক, ১০ম বর্ষ অক্টোবর ও নভেম্বর ২০০৬ সংখ্যা প্রকাশিত- প্ৰকাশক ।

১. ইমাম আলী ইবনু ওমর আদ-দারাকুত্নী, সুনানুদ দারাকুত্নী (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, ১৯৯৬/১৪১৭, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৬, হা/১৭১২, ১৭১৩ ও ১৭১৪।​

বায়হাক্বীর সুনানুল কুবরাতে দু'টি,২

২. ইমাম বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা, তাহক্বীক্ব: আব্দুল কাদের আত্বা (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, ১৯৯৪/১৪১৪), ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪০৩-৪০৪, হা/৬১৭১ ও ৬১৭২।​

তারীখে বাগদাদে একটি,৩

৩. তারীখে বাগদাদ ৪/৪৭৬।​

আবুদাউদে দু'টি,৪

৪. ইমাম আবুদাউদ, সুনানু আবীদাউদ (দেওবন্দ: আছাহহুল মাতাবে', ১৯৮৫ খৃঃ), পৃঃ ১৬৩, হা/১১৫১ ও ১১৫২।​

ইবনু মাজাতে একটি,৫

৫. ইমাম ইবনু মাজাহ, সুনানু ইবনে মাজাহ (দেওবন্দ: আশরাফী বুক ডিপু, ১৪০৭ হিঃ), পৃঃ ৯১,হা/১২৬৩।​

মুসনাদে আহমাদে একটি, ৬

৬. ইমাম আহমাদ, মুসনাদে আহমাদ (মিসর: দারুল মা'আরিফ, ১৯৭২/১৩৯৯), ১০ম খণ্ড, পৃঃ ১৬৫ (২য় খণ্ড, পৃঃ ১৮০), হা/৬৬৮৮।​

মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাতে একটি,৭

৭. ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ আল-কূফী, আল-মুছান্নাফ ফিল আহাদীছ ওয়াল আছার, তাহক্বীক্ব: সাঈদ মুহাম্মাদ আল-লাহহাম (বৈরুত: দারুল ফিকর, ১৯৮৯/১৪০৯), ২য় খণ্ড, পৃঃ ৭৮।​

মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাকে একটি,৮

৮. ইমাম আবুবকর আব্দুর রাযযাক আছ-ছান'আনী (১২৬-২১১ হিঃ), আল-মুছান্নাফ (বৈরুত: আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৯৮৩/১৪০৩), ৩য় খণ্ড, পৃঃ ২৯২, হা/৫৬৭৭।​

এবং ত্বাহাবীতে একটি।”৯

৯. ইমাম আবু জা'ফর আত-ত্বাহাবী, শারহু মাআনিল আছার (দেওবন্দ: গাযালী বুক ডিপু, তাবি), ২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৯৮।​

এছাড়াও ফিরইয়াবী”১০

১০. ফিরইয়াবী, পৃঃ ১৩২।​

এবং ইবনুল জারদের মুনতাক্কা‍,১১

১১. ইমাম ইবনুল জারূদ (মৃঃ ৩০৭হিঃ), কিতাবুল মুনতাক্কা (বৈরুত: দারুল কলাম, ১৯৮৭/১৪০৭), পৃঃ ১১৩, হা/২৬২।​

সহ ১০-এর অধিক হাদীছ গ্রন্থে ১৫টিরও বেশী হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যার সবগুলোই ছহীহ।
বিশুদ্ধতার প্রমাণ: হাদীছটি অকাট্যভাবে ছহীহ। হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (৭৭৩- ৮৫২হিঃ) বলেন,
صَحْحَهُ أَحْمَدُ وَعَلَى وَالْبُخَارِيُّ
'হাদীছটিকে ইমাম আহমাদ, আলী (১৬১-২৩৪ হিঃ) (ইবনুল মাদীনী, যিনি ইমাম বুখারীর শিক্ষক) এবং ইমাম বুখারী ছহীহ বলেছেন'।১২

১২. ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী, তালখীছুল হাবীর ফী তাখরীজি আহাদীছির রাফঈল কাবীর (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, ১৯৯৮/১৪১৯), ২য় খণ্ড, পৃঃ ২০০, হা/৬৯১।​

ইমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬হিঃ) অন্যত্র বলেছেন, ‘হাদীছটি অবশ্যই ছহীহ'। ইমাম তিরমিযী, বায়হাক্বী, নববী, শাওকানীও একই কথা বলেছেন।১৩

১৩. সে এক মা – ইমাম নববী, আল-খুলাছাহ; ইমাম শাওকানী, নায়লুল আওত্বার মিন আহাদীছি সাইয়িদিল আখইয়ার শরহে মুনতাকাল আখবার (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি), ৩য় খণ্ড, পৃঃ২৯৭-৯৮।​

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১হিঃ) হাদীছটি তার ‘মুসনাদে’ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমিও এর প্রতি আমল করি'।১৪

১৪. মুসনাদে আহমাদ, ১০ম খণ্ড, পৃঃ ১৬৫ (২য় খণ্ড, পৃঃ ১৮০), হা/৬৬৮৮।​

হাফেয ইরাক্বী বলেন, এই হাদীছের সনদ উত্তম'৷১৫​

১৫. إسنادُهُ صَالِحٌ-নায়লুল আওত্বার, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ২৯৭।​

ইমাম নববী (৬৩১-৬৭৬) বলেন,​

حَدِيْثُ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبِ هَذَا صَحِيْحٌ رَوَاهُ أَبُوْدَاوُدَ وَغَيْرُهُ بِأَسَانِيْدَ حَسَنَةٍ
‘আমর ইবনু শু‘আইব (রাঃ)-এর এই হাদীছ ছহীহ। আবুদাউদ সহ অন্যান্যরা হাসান সনদ সমূহের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন'।'১৬

১৬. ইমাম নববী, আল-মাজমূউ ৫/১৬ পৃঃ।​

তিরমিযীর ভাষ্যগ্রন্থ ‘আল-আরফুশ শাযী’ প্রণেতা আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী হানাফী (১২৯২-১৩৫২হিঃ) বলেন,​
أَخْرَجَهُ أَبُوْدَاؤُدَ ص ۱۷۱ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ بِسَنَدٍ قَوِيٌّ صَحَّحَهُ الْبُخَارِيُّ​

‘ইমাম আবুদাউদ ১৭১ পৃষ্ঠায় আব্দুল্লাহ বিন আমর থেকে শক্তিশালী সনদে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। যাকে ইমাম বুখারী ছহীহ বলেছেন'।''১৭

১৭. মুহাম্মাদ আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী, আল-আরফুশ শাযী শরহে তিরমিযী, (দেওবন্দ: ইসলামী কুতুব, তাবি), পৃঃ ১১৭।​

তুহফাতুল আহওয়াযী শরহে তিরমিযী গ্রন্থকার বলেন,​
وَهُوَ حَدِيْثُ مَرْفُوعٌ حَقِيْقَةً وَهُوَ حَدِيثُ صَحِيْحٌ صَالِحٌ لِلْاحْتِجَاج
‘এটি প্রকৃতপক্ষেই মারফূ হাদীছ এবং ছহীহ হাদীছ। দলীল গ্রহণের জন্য যথোপযুক্ত’১৮

১৮. আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী (বৈরুত: দারুল কুতুব আল-ইলমিয়াহ, ১৪১০/১৯৯০), ৩য় খণ্ড, পূঃ ৬৮, হা/৫৩৪-এ আলোচনা দ্রঃ।​

আল্লামা ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (মৃঃ ১৯৯৪) বলেন,​
هَذَا حَدِيثُ صَحِيحٌ أَوْ حَسَنٌ صَالِحٌ لِلْاحْتِجَاجُ​
‘এই হাদীছটি ছহীহ অথবা হাসান, দলীলের জন্য উপযুক্ত'। ১৯

১৯. শায়খ ওবায়দুল্লাহ রহমানী মুবারকপুরী, মির'আতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতিল মাছাবীহ (বেনারস: জামি'আ সালাফিয়া, ১৯৭৪/১৩৯৪), ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৪৭, হা/১৪৫০-এর ব্যাখ্যা।​

মুসনাদে আহমাদের টীকাকার আহমাদ মুহাম্মাদ শাকের (১৮৯২-১৯৫৮ খৃ:) বলেন, ‘হাদীছটির সনদ ছহীহ'।২০​

২০. إسْنَادُهُ صَحِيحٌ -মুসনাদে আহমাদ, ১০/১৬৫, হা/৬৬৮৮।​

বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিছ শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ)ও উক্ত হাদীছের প্রত্যেক সনদকে ছহীহ বলেছেন।২১

২১. মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, ছহীহ সুনানে আবুদাউদ (রিয়ায: মাকতাবাতুল মা'আরিফ, প্রথম প্রকাশ: ১৯৯৮/১৪১৯), হা/১১৫১ ও ১১৫২; আলবানী, ছহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ (রিয়ায়: মাকতাবাতুল মা'আরিফ, ১৯৯৭/১৪১৭), হা/১০৬৩; বিস্তারিত আলোচনা দ্রঃ আলবানী, ইরওয়াউল গালীল ফী তাখরীজি আহাদীছি মানারিস সাবীল (বৈরুত: আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৯৮৫/১৪০৫), ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১০৮-১০৯, হা/৬৩৯।​

মুহাদ্দিছ শু‘আইব আরনাঊত্ব সর্বশেষ বিশ্লেষণে বলেন, ‘এই হাদীছের সনদ হাসান' । ২২​

২২. إسناده حسن - তাহক্বীক্ব: মুসনাদে আহমাদ ২/১৮০ পৃঃ, হা/৬৬৮৮।​

জ্ঞাতব্য: উক্ত হাদীছের সনদে আব্দুর রহমান আত-ত্বায়েফী নামক রাবী আছেন। যাকে দু'একজন মুহাদ্দিছ কখনো দুর্বল আবার কখনো শক্তিশালী বলেছেন। আর এই অনুল্লেখযোগ্য ও অগ্রহণযোগ্য মন্তব্যের কারণে দলীয় সংকীর্ণতায় অকাট্যভাবে প্রমাণিত এই ছহীহ হাদীছটিকে যঈফ বলার অপচেষ্টা করা হয়েছে। জগতশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছগণের উপরিউক্ত দ্ব্যর্থহীন বক্তব্যগুলো মোটেও দৃষ্টিগোচর হয়নি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। অথচ উক্ত রাবীর ব্যাপারেও মুহাদ্দিছগণ বলিষ্ঠ মন্তব্য করেছেন। যেমন- ইমাম বুখারী বলেন,​

وَحَدِيثُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الطَّائِفِى عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبِ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّهِ فِي هَذَاالْبَابِ هُوَ صَحِيحٌ​

‘এ বিষয়ে আমর ইবনু শু'আইব (রাঃ) থেকে আব্দুর রহমান আত্ব-ত্বায়েফীর বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ'।২৩

২৩. বায়হাক্বী ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪০৪ হা/৬১৭৩।​

ইমাম যাহাবী (রহঃ) তাকে শক্তিশালী সাব্যস্ত করে বলেছেন, ‘ইবনু হিব্বান তাকে শক্তিশালী রাবীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন'। ২৪

২৪.আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ বিন ওছমান আয-যাহাবী, মীযানুল ই'তিদাল ফী নাকদির রিজাল (বৈরুত: দারুল মা'রেফা তাবি), ২য় খণ্ড, পৃঃ ৪৫২।​

এছাড়া তিনি ইবনু আদীর মন্তব্য উল্লেখ্য করে বলেন,​

أَمَّا سَائِرُ حَدِيْثِهِ فَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبِ وَهِيَ مُسْتَقِيْمَةٌ​

‘আমর ইবনু শু‘আইব (রাঃ) থেকে বর্ণিত ত্বায়েফীর সমস্ত হাদীছইসুদৃঢ়’২৫

২৫. মীযানুল ই'তিদাল ২য় খণ্ড, পৃঃ ৪৫২।

মুহাদ্দিছ আজালীও তাকে শক্তিশালী বলে মন্তব্য করেছেন। ২৬

২৬. ইবনু হাজার আল-আসকালানী, তাহযীবুত তাহযীব (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, ১৯৯৪/১৪১৫), ৫/২৩৫।​

এছাড়াও ইমাম মুসলিম (২০৪-২৬১ হিঃ) ত্বায়েফীর হাদীছকে ছহীহ মুসলিমে স্থান দিয়েছেন। ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, ‘মুসলিমে তাঁর একটি হাদীছ রয়েছে'।`২৭
২৭. لَهُ فِي مُسْلِمٍ حَدِيثُ وَاحِدٌ -তাহযীবুত তাহযীব, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ২৬৫।​


মূলকথা হ'ল ঈদায়নের তাকবীর সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ সমূহের মধ্যে উক্ত হাদীছটিই সর্বাধিক ছহীহ। তাই ছাহেবে তুহফা বলেন,
إِنَّ الظَّاهِرَ أَنَّ حَدِيثَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَصَحُ شَيْءٍ فِي هَذَا الْبَابِ​

‘স্পষ্ট বক্তব্য হ’ল- ঈদায়নের তাকবীর সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ সমূহের মধ্যে আব্দুল্লাহ বিন আমরের হাদীছটিই সর্বাধিক বিশুদ্ধ'।

অতএব উক্ত হাদীছটি সর্বসম্মতিক্রমে অকাট্যভাবে ছহীহ। এরপরও কেউ যদি স্বার্থসিদ্ধির জন্য এর সমালোচনা করে তাহ'লে নিঃসন্দেহে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাতকে অবমাননা করা হবে। তাই কুরআন-সুন্নাহর নিরপেক্ষ অনুসারীদের উপর উক্ত সমালোচনা কোনই প্রভাব ফেলবে না। যেমন ছাহেবে মির'আত পরিস্কার বলে দিয়েছেন,
وَلَمْ يَكُنْ حَاجَةٌ إِلَى ذِكْرِ كَلَامِهِمْ ثُمَّ إِلَى الرَّدِ عَلَيْهِمْ بَعْدَ مَا صَحَّحَهُ أَئِمَّةُ هَذَا الشَّأْنِ الْجَهَابِدَةِ النَّقَادِ أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ وَعَلِيُّ بْنُ الْمَدِينِى وَالْبُخَارِيُّ وَاحْتَجَّ بِهِ الْأَئِمَّةُ الْمُجْتَهِدُونَ​

‘এ বিষয়ে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল, আলী ইবনুল মাদীনী, বুখারী সহ অন্যান্য মুজতাহিদ ইমামগণের ন্যায় রিজালশাস্ত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ পণ্ডিতগণ তাকে ছহীহ সাব্যস্ত করার পর বিরোধীদের বক্তব্য উল্লেখ করা এবং তা খণ্ডন করার কোনই প্রয়োজন নেই'২৮

২৮. মির'আত, ৫র্ম খণ্ড, পৃঃ ৪৭।​

(۲) حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ أَخْبَرَنِى ابْنُ لَهِيعَةَ عَنْ خَالد بن يَزِيدَ عَن ابْن شهَاب عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ أَنْ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَبَّرَ فِي الْفِطْرِ وَالْأَضْحَى سَبْعًا وَحَمْسًا سِوَى تَكْبِيرَتَيْ الرُّكُوعِ
(২) ‘আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার ছালাতে রুকূর দুই তাকবীর ছাড়া প্রথমে সাত আর পরে পাঁচ তাকবীর দিতেন'। হাদীছটি উপরিউক্ত ধারাবাহিক সনদে আবুদাউদ, ২৯

২৯. আবুদাউদ, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৬৩, হা/১১৫০।​

ইবনু মাজাহ,৩০

৩০. ইবনু মাজাহ, পৃঃ ৯১, হা/১০৬৫।​

দারাকুত্নী,৩১

৩১. দারাকুত্নী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৬, হা/১৭১০।​

বায়হাক্বী‍,৩২

৩২. বায়হাক্বী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪০৫, হা/৬১৭৫।​

এবং ত্বাহাবীতে দু'টি সহ ৬টির বেশী হাদীছ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।৩৩

৩৩. ত্বাহাবী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৯৯ ।​

বিশুদ্ধতার প্রমাণঃ হাদীছটির সনদ ছহীহ। যদিও এর সনদে ‘আব্দুল্লাহ ইবনু লাহী‘আহ’ রয়েছেন । কারণ তার সম্পর্কে শীর্ষস্থানীয় মুহাদ্দিছগণের বক্তব্য হ'ল- আব্দুল্লাহ ইবনু ওয়াহাব যদি ইবনু লাহী'আহ থেকে আর তিনি যদি খালেদ ইবনু ইয়াযীদ থেকে কোন হাদীছ বর্ণনা করেন, তাহ'লে তা ছহীহ বলে প্রমাণিত হবে। আলোচ্য হাদীছটি উক্ত ধারাবাহিকতায় বর্ণিত হয়েছে। মূল ঘটনা হ'ল- শেষ জীবনে ইবনু লাহী‘আর বাড়ীতে আগুন লাগার কারণে তার কাছে সংরক্ষিত হাদীছের নুসখার বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়। সেই থেকে তার বর্ণনায় এলোমেলো ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু উক্ত ঘটনার পূর্বের হাদীছগুলো মুহাদ্দিছগণের নিকটে ছহীহ হিসাবে প্রমাণিত । আর সনদে বর্ণিত ইবনু ওয়াহাব যেমন ইবনু লাহী‘আহ থেকে উক্ত ঘটনার পূর্বে বর্ণনা করেছেন, তেমনি ইবনু লাহী‘আহও খালেদ ইবনু ইয়াযীদ থেকে পূর্বেই হাদীছ শুনেছেন। ফলে এই বর্ণনা নিঃসন্দেহে ছহীহ। আবার উক্ত ধারাবাহিক সনদ ও শর্ত ছাড়া যে সমস্ত বর্ণনা এসেছে তা মুহাদ্দিছগণের নিকট যঈফ বলে প্রমাণিত। মুহাদ্দিছ আব্দুল গণী বিন সাঈদ আল-আযদী বলেন,৩৪

৩৪. হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী, তাক্বরীবুত তাহযীব (সিরিয়া: দারুর রশীদ, ১৪০৮/১৯৮৮), পৃঃ ৩১৯;, রাবী নং ৩৫৬৩।​

إِذَا رَوَى الْعَبَادِلَةُ عَنِ ابْنِ لَهِيعَةَ فَهُوَ صَحِيحٌ ابْنُ الْمُبَارَكِ وَابْنُ وَهْبِ وَالْمُقَرِّيُّ وَذَكَرَ السَّاحِيُّ وَغَيْرُهُ مِثْلَهُ​

‘ইবনু লাহী‘আহ থেকে যখন ‘আবাদিলাহ' অর্থাৎ ইবনুল মুবারক, ইবনু ওয়াহাব এবং মুক্কাররী বর্ণনা করবেন তখন তা ছহীহ সাব্যস্ত হবে'। ইমাম সাজী সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছগণও অনুরূপ কথা বলেছেন।৩৫

৩৫. ইবনু হাজার আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৩৩৪।​

ইবনু হিব্বান বলেন,​
وَكَانَ أَصْحَابُنَا يَقُوْلُوْنَ سِمَاعُ مَنْ سَمِعَ مِنْهُ قَبْلَ احْتِرَاقِ كُتُبِهِ مِثْلَ الْعَبَادِلَةِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ وَهْبٍ وَابْنِ الْمُبَارَكِ وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ يَزِيدَ الْمُقَرِّئَ وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْلَمَةَ الْقَعْنَبِيَّ فَسِمَاعُهُمْ صَحِيحٌ
‘আমাদের সাথীরা বলতেন, ‘ইবনু লাহী‘আর কিতাব-পত্র পুড়ে যাওয়ার পূর্বে ‘আবাদিলাহ’ অর্থাৎ আবদুল্লাহ বিন ওয়াহাব, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক, আব্দুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ আল- মুক্কাররী এবং আব্দুল্লাহ বিন মাসলামা আল-কা'নাবীর ন্যায় যারা তার থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন তাদের বর্ণিত হাদীছ ছহীহ' ।৩৬
৩৬. মীযানুল ই'তিদাল, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৪৮২।

ইবনুল ফাল্লাস বলেন,
مَنْ كَتَبَ عَنْهُ قَبْلَ إِحْرَاقِهَا مِثْلَ ابْنِ الْمُبَارَكِ وَالْمُقَرِّئَ فَسِمَاعُهُمْ أَصَحُ​

‘ইবনু লাহী‘আর কিতাব-পত্র পুড়ে যাওয়ার পূর্বেই যারা তার থেকে ইবনুল মুবারক ও মুকাররীর ন্যায় হাদীছ বর্ণনা করেছেন তাদের হাদীছ সর্বাধিক ছহীহ'। আবু যুর‘আহ, ইমাম নাসাঈ প্রমুখ মুহাদ্দিছগণও অনুরূপ বলেছেন,৩৭

৩৭. মীযানুল ই'তিদাল, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৪৭৭।​

এজন্যই ইমাম বায়হাক্বী উক্ত হাদীছের শেষে মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়ার বক্তব্য উপস্থাপন করে বলেন,​
هَذَا هُوَ الْمَحْفُوْظُ لِأَنَّ ابْنَ وَهْبِ قَدِيْمُ السَّمَاعِ مِنْ ابْنِ لَهِيعَةَ
‘এই হাদীছ নিরাপদ, কেননা ইবনু লাহী'আহ থেকে ইবনু ওয়াহাব অনেক পূর্বেই হাদীছ শুনেছেন'।৩৮​

৩৮. বায়হাক্বী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪০৫, হা/৬১৭৫-এর আলোচনা দ্রঃ।

শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন,
الْأَرْجَحُ عِنْدِي رِوَايَتُهُ عَنْ خَالِدِ بْنِ يَزِيدَ عَنِ ابْنِ شِهَابٍ لِأَنَّهَا رِوَايَةُ ابْنِ وَهْبٍ عَنْهُ وَهِيَ صَحِيْحَةٌ​

‘আমার নিকট ইবনু শিহাব থেকে খালেদ ইবনু ইয়াযীদের হাদীছই সর্বাধিক প্রাধান্যযোগ্য । কারণ তার থেকে ইবনু ওয়াহাবের হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। আর সেটা অবশ্যই ছহীহ' ৩৯

৩৯. ইরওয়াউল গালীল ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১০৭-১০৮, হা/৬৩৯।​

দারাকুত্নীর মুহাক্কিক্ক মজদী বিন মানছূর আশ-শাওরী আলোচ্য হাদীছ সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন, ‘এর সনদ হাসান'।৪০

৪০. إِسْنَادُهُ حَسَن দারাকুত্নী, হা/১৭১০।​

কিন্তু একই রাবী থেকে এর বিপরীত সনদে বর্ণিত অন্য দু'টি হাদীছকে তিনি যঈফ বলেছেন। ৪১

৪১. দ্রঃ দারাকুত্নী, হা/১৭০৪ ও ১৭০৫।​

উক্ত হাদীছের তাহক্বীক্ব করতে গিয়ে মুহাদ্দিছ শু‘আইব আরনাউত্ব বলেন, ‘এই হাদীছ হাসান’৷৪২

৪২. وهو حديث حسن এবং -মুসনাদে আহমাদ, তাহক্বীক্ব: শুআইব আরনাউত্ব হা/২৪৪০৭, ৬/৬৫।​

আলবানী (রহঃ) পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করে সবশেষ মন্তব্য করেন ‘সুতরাং এর সনদ ছহীহ' ।৪৩

৪৩. فَالْإِسْنَادُ صَحِيحٌ ইরওয়া, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১০৮।​

উল্লেখ্য যে, ১২ তাকবীর সম্পর্কে আয়েশা (রাঃ) থেকে ২০টিরও বেশী হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে উপরিউক্ত ধারাবাহিক সনদ ছাড়াও ইবনু লাহী‘আহ থেকে আরো অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন- ১টি আবুদাউদে,৪৪

৪৪. আবুদাউদ, পৃঃ ১৬৩, হা/১১৪৯।​

২টি হাহাকেমে,৪৫

৪৫. ইমাম আবু আব্দুল্লাহ আল-হাকিম আন-নীসাপুরী, আল-মুস্তাদরাক আলাছ-ছাহীহায়ন (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, ১৯৯০/১৪১১), ১ম খণ্ড, পৃঃ ৪৩৮ হা/১১০৮ ও ১১০৯।​

১টি বায়হাক্বীতে,৪৬

৪৬. বায়হাক্বী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪০৫, হা​

২টি দারাকুত্নীতে,৪৭

৪৭. দারাকুত্নী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৫, হা/১৭০৪, ১৭০৫।​

এবং ত্বাবরাণী কবীরে,৪৮ বর্ণিত হয়েছে। যা সনদগতভাবে যঈফ।

৪৮. আবু কাসেম আত-ত্বাবরাণী, আল-মু'জামুল কাবীর (আল-মাওছুল: মাকতাবাতুল উলূম ওয়া হিকাম, ১৯৮৩/১৪০৪), ৩/২৪৬, হা/৩২৯৮।​

তাই ইমাম বুখারীও যঈফ বলেছেন। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একই রাবী থেকে ছহীহ হাদীছ থাকার কারণে মুহাদ্দিছগণের মূলনীতি অনুযায়ী শাওয়াহেদ হিসাবে হাদীছগুলো পরস্পরকে শক্তিশালী করে। তাই তাঁরা এই হাদীছগুলোকেও ছহীহ বলেছেন,৪৯

৪৯. দ্রঃ ছহীহ আবুদাউদ হা/১১৪৯; ছহীহ ইবনু মাজাহ, হা/১০৬৫; বিস্তারিত দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১০৬-১০৮।​

অতএব ১২ তাকবীর সম্পর্কে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত সমস্ত হাদীছই ছহীহ। তাই সচেতন মহলকে ফাঁকি দিয়ে উক্ত হাদীছকে এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই ।​
(۳) عَنْ كَثِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
الْعِيْدَيْنِ فِي الْأَوْلَى سَبْعًا قَبْلَ الْقِرَائَةِ وَالْأَخِرَةِ خَمْسًا قَبْلَ الْقِرَائَةِ.رَفِي
(৩) কাছীর ইবনু আব্দুল্লাহ স্বীয় পিতা হ'তে তিনি তার দাদা (আমর ইবনু আওফ আল- মুযানী বাদরী) হ'তে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই ঈদের ছালাতে প্রথম রাক'আতে ক্বিরাআতের পূর্বে সাত ও দ্বিতীয় রাক'আতে ক্বিরাআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর দিতেন'।হাদীছটি তিরমিযীতে একটি সনদে,৫০

৫০. ইমাম তিরমিযী, সুনানুত তিরমিযী (দেওবন্দ: ইসলামী কুতুব, তাবি), পৃঃ ১/১১৯, হা/৫৪২।​

ইবনু মাজাতে একটি,৫১

৫১. ইবনু মাজাহ, পৃঃ ৯১, হা/১২৭৯।​

ছহীহ ইবনে খুযায়মাতে দু'টি,৫২

৫২. ছহীহ ইবনে খুযায়মাহ, ২/৩৪৬, হা/১৪৩৮ ও ১৪৩৯।​

দারাকুত্নীতে একটি,৫৩

৫৩. দারাকুত্নী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৭, হা/১৭১৫।​

বায়হাক্বীতে একটি, ৫৪

৫৪. বায়হাক্বী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪০৪, হা/৬১৭৩।​

ত্বাহাবীতে একটি,৫৫

৫৫. ত্বাহাবী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৯৯ ।​

শারহুস সুন্নাতে একটি৫৬

৫৬. ইমাম হুসাইন বিন মাসউদ আল-বাগাভী, শারহুস সুন্নাহ (বৈরুত : আলমাকতাবুল ইসলামী, ১৯৮৩/১৪০৩), ৪/৩০৮ ।​

এবং ইবনু আদী,৫৭ সহ ৮-এর অধিক হাদীছ গ্রন্থে ১০টিরও বেশী হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।

৫৭. ইবনু আদী, ২/২৭৩।​

বিশুদ্ধতার প্রমাণঃ হাদীছটি ছহীহ কিংবা হাসান। ইমাম তিরমিযী (২০৯-২৭৯) বলেন,​
حَدِيثُ جَدٌ كَثِيرٍ حَدِيْثٌ حَسَنٌ وَهُوَ أَحْسَنُ شَيْءٍ رُوِيَ فِي هَذَا الْبَابِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ​

‘কাছীর কর্তৃক তার দাদার বর্ণিত হাদীছটি হাসান এবং এটিই ঈদায়নের তাকবীর সম্পর্কে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত সর্বাধিক সুন্দর বর্ণনা'।৫৮

৫৮. তিরমিযী, পৃঃ ১/১১৯, হা/৫৩৬।​

অন্যত্র তিনি বলেন,​
سَأَلْتُ مُحَمَّدًا يَعْنِى الْبُخَارِئَ عَنْ هَذَا الْحَدِيْثِ فَقَالَ لَيْسَ فِي هَذَا الْبَابِ شَيْيٌّ أَصَحُ مِنْ هَذَا وَبِهِ أَقُولُ​

‘আমি এ সম্পর্কে আমার উস্তায ইমাম বুখারীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ঈদের ছালাতের তাকবীর সম্পর্কে এর চাইতে অধিক ছহীহ বর্ণনা আর নেই। আমিও এই ১২ তাকবীরের কথাই বলি'৫৯

৫৯. বায়ুহাক্বী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪০৪, হা/৬১৭৩-এর আলোচনা দ্রঃ।​

উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীছের রাবী কাছীর ইবনু আব্দুল্লাহ সম্পর্কে মুহাদ্দিছগণ সমালোচনা করেছেন। তবে এ ব্যাপারে আরো ছহীহ হাদীছ থাকায় শাওয়াহেদ হিসাবে শক্তিশালী, তাই ইমাম তিরমিযী হাসান বলেছেন। আর ইমাম বুখারী (রহঃ) এ সম্পর্কে তাঁর জ্ঞাত বর্ণনা সমূহের মধ্যে এটাকেই সর্বাধিক ছহীহ বলেছেন। সর্বশেষ তাহক্বীক্ব হিসাবে শায়খ আলবানীও শাওয়াহেদের কারণে ছহীহ তিরমিযী ও ছহীহ ইবনু মাজাতে হাদীছটিকে ছহীহ বলে উল্লেখ করেছেন । অতএব এ হাদীছকে দুর্বল বলে প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয় ।৬০

৬০. ছহীহ তিরমিযী হা/৪৪২; ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/১০৬৪।​

تَكْبِيْرِ فِي الْعَيْدَيْنِ فِي التَكْبِيرِ في (٤) عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَا الرَّكْعَةِ الْأُولَى سَبْعُ تَكْبِيرَاتٍ وَفِي الْآخِيْرَةِ حَمْسُ تَكْبِيرَ
(৪) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দুই ঈদের তাকবীর হবে- প্রথম রাক'আতে সাত এবং দ্বিতীয় রাক'আতে পাঁচ’।হাদীছটি তারীখে ইবনে আসাকির,৬১

৬১. তারীখে ইবনে আসাকির,১৫/১৬ পৃঃ হা/১১৫৩৫ ও ১১৫৩৬, (৫৪/৩৭৯), ২য় খণ্ড, পৃঃ ১৬৫।​

এবং তারীখে বাগদাদে,৬২

৬২. তারীখে বাগদাদ, ২/৪১৩ (১০ম খণ্ড, পৃঃ ১৬৪)।​

বর্ণিত হয়েছে।৬৩

৬৩. তারীখে বাগদাদ, ২/৪১৩।​

বিশুদ্ধতার প্রমাণঃ উক্ত হাদীছও ছহীহ। ইমাম আবুবকর খত্বীব বাগদাদী এই হাদীছকে ছহীহ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। শায়খ আলবানী (রহঃ) সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ এর সনদকে ছহীহ বলেছেন। উল্লেখ্য যে, ইবনু ওমর (রাঃ) হ'তে ত্বাহাবী, দারাকুত্নী ও মুসনাদে বাযযারে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে এবং তিরযিমী ও হাকেম যার ইঙ্গিত দিয়েছেন তার সনদ যঈফ। তবে উক্ত বিষয়ে একই রাবী থেকে ছহীহ হাদীছ থাকার কারণে শাওয়াহেদ হিসাবে ছহীহ।৬৪

৬৪. আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১১০; ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/১০৬২।​

(٥) عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَعَدِ بْنِ عَمَّارِ بْنِ سَعَدِ مُؤَذِّنِ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُكَبِّرُفِي الْعِيْدَيْنِ فِي الْأَوْلَى سَبْعًا قَبْلَ الْقِرَاءَةِ وَفِي الْآخِرَةِ خَمْسًا قَبْلَ الْقِرَاءَةِ
(৫) আব্দুর রহমান ইবনু সা'দ বলেন, আমার পিতা তার দাদা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুআযযিন আমাকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই ঈদে তাকবীর দিতেন। প্রথম রাক'আতে ক্বিরাআতের পূর্বে সাত তাকবীর আর দ্বিতীয় রাক'আতে ক্বিরাআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর।৬৫

৬৫. ইবনু মাজাহ হা/ ১২৭৭, ১/৩৮৪; মুস্তাদরাক হাকিম হা/৬৫৫৪, ৩/৭০৩, ‘ছাহাবা পরিচিতি' অধ্যায়; বায়হাক্বী হা/৬১৭৮, ৩/৪০৬ পৃঃ; ইমাম আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আদ-দারেমী, সুনানুদ দারেমী (দিমাস্ক: দারুল কলম, ১৯৯৬/১৪১৭), ১/৪০১, হা/১৫৬৭।​

বিশুদ্ধতার প্রমাণঃ হাদীছটি যঈফ। তবে শাওয়াহেদ হিসাবে ছহীহ। ৬৬

৬৬. ইরওয়াউল গালীল ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১১০​

(৬) আলী (রাঃ) থেকেও অনুরূপ হাদীছ বর্ণিত, হয়েছে, যা যিয়া মাকদেসী বর্ণনা
করেছেন।৬৭

৬৭. যিয়া মাকদেসী, আল-মুনতাক্কা, ২য় খণ্ড, পৃঃ ১২৪; ইরওয়অউল গালীল ৩/১১০ পৃঃ।​

বিশুদ্ধতার প্রমাণঃ হাদীছটিও ছহীহ পর্যায়ের। শায়খ আলবানী (রহঃ) উপরিউক্ত ৪, ৫ ও ৬ নং হাদীছগুলো পর্যালোচনা করে শেষে বলেছেন,​
وَبِالْجُمْلَةِ فَالْحَدِيثُ بِهَذِهِ الطُّرُقِ صَحِيْحٌ وَيُؤَيِّدُهُ عَمَلُ الصَّحَابَةِ
‘মোটকথা এ সমস্ত সনদে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ। তাছাড়া ছাহাবীগণের আমলও একে আরো শক্তিশালী করেছে' ।৬৮

৬৮. ইরওয়া ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১১০।​

(۷) عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفِ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُخْرَجُ لَهُ الْعَتَرَةُ فِي الْعِيَّدَيْنِ حَتَّى يُصَلِّيَ إِلَيْهَا وَكَانَ يُكَبِّرُ ثَلَاثَ عَشَرَةَ تَكْبِيرَةً وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِمَا وَرِضْوَانَهُ يَفْعَلَان ذَلكَ
(৭) আবদুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য দুই ঈদের দিন বর্শা বের করা হত। অতঃপর তার দিক ঘুরে তিনি ছালাত পড়তেন। তিনি ১৩ টি তাকবীর দিতেন। আবুবকর এবং ওমর (রাঃ) উভয়েই অনুরূপ করতেন। ৬৯

৬৯. মুসনাদে বাযযার হা/১০২৩, ৩/২৩৪ পৃঃ; নূরুদ্দীন আলী ইবনু আবুবকর আল-হায়ছামী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়েদ (বৈরুত: দারুল ফিকর, ১৪১২ হিঃ), হা/৩২৪৪, ২/৪৪০ ।​

বিশুদ্ধতার প্রমাণঃ হাদীছটি হাসান। হাসান ইবনু হাম্মাদ আল-বাজালী ছাড়া উক্ত হাদীছের সকল রাবী নির্ভরযোগ্য। তবে তার সম্পর্কেও মুহাদ্দিছগণ মন্তব্য করেননি।৭০

৭০. দ্রঃ মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৩২৪৪, ২/ ৪৪০ ।​

(۸) عَنْ أَبِي وَاقِدِ اللَّيْغِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى بِالنَّاسِ يَوْمَ الْفِطْـ وَقَرَا وَالْأَضْحَى فَكَبَّرَ فِي الرَّكْعَةِ الْأُولَى سَبْعًا وَقَرَأَ وَ وَالْقُرْآنِ الْمَجِيْدِ وفِي الثَّانِيَةِ خَمْسًا و اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانْشَقَّ الْقَمَرُ
(৮) আবী ওয়াকেদ আল-লায়ছী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনগণকে নিয়ে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার ছালাত আদায় করতেন। তিনি প্রথম রাক‘আতে সাত তাকবীর বলতেন এবং সূরা ক্বাফ পড়তেন। আর দ্বিতীয় রাক'আতে পাঁচ তাকবীর বলতেন এবং সূরা ক্বামার পড়তেন ।৭১

৭১. তাবরাণী, আল-মু'জামুল কাবীর হা/৩২৯৮, ৩/২৪৬ পৃঃ; মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৩২৪৬, ২/৪৪০ ।​

বিশুদ্ধতার প্রমাণ: হাদীছটি ছহীহ। মুহাদ্দিছ হায়ছামী (রহঃ) বলেন, আবী ওয়াকেদ আল- লায়ছী বর্ণিত এই হাদীছ ছহীহ। ৭২

৭২. মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৩২৪৬, ২/৪৪০ ।

(۹) عَنِ ابْنِ عَبَّاسِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُكَبِّرُ فِي الْعِيْدَيْنِ ثِنْتَيْ عَشَرَةَ تَكْبِيرَةً فِي الْأَوْلَى سَبْعًا وَفِي الْآخِرَةِ حَمْسًا وَكَانَ يَذْهَبُ بِطَرِيْقٍ وَيَرْجِعُ فِي أُخْرَى
(৯) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই ঈদের ছালাতে ১২ তাকবীর দিতেন। প্রথম রাক'আতে সাত এবং দ্বিতীয় রাক'আতে পাঁচ । তিনি এক রাস্তা দিয়ে যেতেন অন্য রাস্তা দিয়ে আসতেন।৭৩

৭৩. ত্বাবরাণী, আল-মু'জামুল কাবীর হা/১০৭০৮, ১০/২৯৪; মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৩২৪৫, ২/৪৪০।​

বিশুদ্ধতার প্রমাণ: হাদীছটির সনদে সুলায়মান বিন আরকাম থাকায় মারফূ' হিসাবে যঈফ। তবে মাওকূফ সনদে ছহীহ হাদীছ রয়েছে। যা ছহীহ মুসলিমের শর্তানুযায়ী বর্ণিত হয়েছে। এই হাদীছটি সামনে ১২ নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে।৭৪

৭৪. বায়হাক্বী ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪০৭, হা/৬১৮০; ইবনু আবী শায়বাহ ২য় খণ্ড, পৃঃ ৮১; ইরওয়াউল গালীল ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১১১ ।​

ফলে এ হাদীছকে গ্রহণযোগ্য বলাযেতে পারে।

উপরিউক্ত হাদীছগুলো ছাড়াও ১২ তাকবীরে পক্ষে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে মারফূ সূত্রে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেগুলো বিভিন্ন হাদীছ গ্রন্থে রয়েছে। ইবনু অব্দিল বার বলেন,​
روى عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ طُرُقِ كَثِيرَة حَسَّان أَنَّهُ كَبَّرَ فِي الْعَيْدَيْنِ سَبْعًا فِي الْأُولَى وَخَمْسًا فِي الثَّانِيَةِ مِنْ حَدِيثَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو وَابْنِ عُمَرَ وَجَابِرٍ وَعَائِشَةَ وَأَبِى وَاقِدٍ وَعَمْرِو بْنِ
بِهِ. عَوْفِ الْمُزَنِي وَلَمْ يَرْوِ عَنْهُ مِنْ وَجْهِ قَوِيٌّ وَلَاَضَعِيْفَ خِلافُ هَذَا وَهُوَ أَوْلَى مَا عَمِلَ​

‘নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হ'তে অনেক হাদীছ হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি ইদায়নের ছালাতে প্রথম রাক'আতে সাত এবং দ্বিতীয় রাক'আতে পাঁচ তাকবীর দিতেন। যা আব্দুল্লাহ বিন আমর, ইবনু ওমর, জাবের, আয়েশা, আবু ওয়াক্কেদ, আমর বিন আওফ প্রমুখের হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তাঁর থেকে এর বিপরীত কোন কিছুই বর্ণিত হয়নি, তা শক্তিশালী সনদে হোক আর দুর্বল সনদে হোক। আর এটাই সর্বোত্তম, যার উপরে স্বয়ং রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমল করেছেন'। ছাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত ছহীহ আছার সমূহঃ৭৫

৭৫. ইবনু কুদামা, আল-মুগনী (বৈরুত: দারুল ফিকর, ১৯৮৪ / ১৪০৪), ২/২৩৬; মাস'আলা নং ১৪১৪ ; মির'আতুল মাফাতীহ ৫/৫৩ পৃঃ।​

১২ তাকবীর সম্পর্কে ছহীহ সনদে ছাহাবায়ে কেরাম থেকে যে সমস্ত আছার বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর কয়েকটি নিম্নে পেশ করা হ'ল-​

(۱۰) عَنْ مَالِكِ عَنْ نَافِعٍ مَوْلَى عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّهُ قَالَ شَهِدْتُ الْأَضْحَى وَالْفِطْرَ مَعَ أَبِي هُرَيْرَةَ فَكَبَّرَ فِي الرَّكْعَةِ الْأَوْلَى سَبْعَ تَكْبِيرَاتِ قَبْلَ الْقِرَاءَةِ وَفِي الْآخِرَةِ خَمْسَ تَكْبِيرَاتِ قَبْلَ الْقِرَاءَةِ
(১০) আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ)-এর গোলাম নাফে' থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, 'আমি ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর-এর ছালাতে আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে উপস্থিত ছিলাম। তিনি প্রথম রাক'আতে ক্বিরাআতের পূর্বে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাক'আতে ক্বিরাআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর দিলেন'। ৭৬

৭৬. ইমাম মালেক বিন আনাস, আল-মুওয়াত্ত্বা (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি), ১/১৮০, পৃঃ (১০৮-১০৯); ফিরইয়াবী ২/১৩৪; বায়হাক্বী ৩/৪০৬, হা/৬১৭৯; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ ২/৭৯; মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আবু আব্দুল্লাহ আশ-শাফেঈ, মুসনাদুশ শাফেঈ (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি), ১/৭৬ পৃঃ, হা/৩৩৯; ত্বাহাবী ২/৩৯৯।​

বিশুদ্ধতার প্রমাণঃ আছার সমূহের মধ্যে এর সনদ সর্বাধিক বিশুদ্ধ। যাকে ইমাম মালেক, বুখারী, তিরমিযী, বায়হাক্বী, দারাকুত্নী, শায়খ আলবানীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ ছহীহ বলেছেন।৭৭

৭৭. দ্রঃ আল্লামা যায়লাঙ্গ, নাছবুর রাইয়াহ (রিয়ায ছাপা: ১৯৭৩), ২য় খণ্ড, পৃঃ ২১৮; তালখীছুল হাবীর ২য় খণ্ড, পৃঃ ২০১; ইরওয়া ৩য় খণ্ড, পূঃ ১১০ ।​

ইমাম বায়হাক্বী বলেন,​
११ لا شك في صحته مَوْقُوْفًا عَلَى أَبِي هُرَيْرَةَ
‘মওকূফ সূত্রে বর্ণিত আবু হুরায়রাহ (রাঃ)-এর এই হাদীছ ছহীহ হওয়ার ব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহ নেই'।”৭৮

৭৮. আল্লামা শামসুল হক আযীমাবাদী, আওনুল মা'বূদ শরহে আবী দাউদ (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি), ৪/ ১০ ।​

মুহাদ্দিছ শু‘আইব আরনাউত্ব বলেন, ‘এই হাদীছের সনদ ছহীহ'।'৭৯

৭৯. মুসনাদে আহমাদ, তাহক্বীক্ব: শুআইব আরনাউত্ব হা/৮৬৬৪, ২/৩৫৬ পৃঃ।​

(۱۱) عَنْ نَافِعِ بْنِ أَبِي نُعَيْمٍ قَالَ سَمِعْتُ نَافِعًا قَالَ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ التَّكْبِيرُ فِي عِيْدَيْنِسبع وخمس
(১১) নাফে' ইবনু আবী নু'আইম বলেন, আমি নাফে' (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেছেন, 'দুই ঈদের তাকবীর হবে (প্রথম রাক'আতে) সাত এবং (দ্বিতীয় রাক'আতে) পাঁচ’৮o

৮০. ত্বাহাবী, ২/৩৯৯; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, ২/৮১।​

বিশুদ্ধতার প্রমাণঃ এর সনদও ছহীহ। আলবানী (রহঃ) বলেন, ‘এর সনদ ছহীহ'। ৮১

৮১.দেশ - ইরওয়াউল গালীল, ৩/১১০।​

(۱۲) عَنْ عَمَّارِ بْنِ عَمَّارٍ أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ كَبَّرَ فِي عِيْد تَنْتَى عَشَرَةَ تَكْبِيرَةً سَبْعًا فِي الْأُولَى وَخَمْسًا فِي الْآخِرَةِ
(১২) আম্মার ইবনু আবী আম্মার বর্ণনা করেন, ‘ইবনু আব্বাস (রাঃ) ঈদের ছালাতে ১২ তাকবীর দিতেন । প্রথম রাক'আতে সাত আর দ্বিতীয় রাক'আতে পাঁচ তাকবীর দিতেন'।৮২
৮২. ইবনু আবী শায়বাহ ২য় খণ্ড, পৃঃ ৮১; বায়হাক্বী ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪০৭, হা/৬১৮০।

বিশুদ্ধতার প্রমাণঃ এই আছারটির সনদও ছহীহ। ইমাম বায়হাক্বী বলেন, ‘এই সনদ ছহীহ'।৮৩

৮৩. هَذَا إِسْنَادٌ صَحِيحٌ -বায়হাক্বী ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪০৭।​

আলবানী বলেন, ‘মুসলিমের শর্তানুযায়ী এর সনদ ছহীহ’।" ৮৪

৮৪. سنده صَحِيحٌ عَلَى شَرْطٍ مُسْلِم - ইরওয়াউল গালীল ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১১১)।​

উল্লেখ্য যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর পক্ষ থেকে ৭, ৯, ১১, ১২ ও ১৩ তাকবীরের বর্ণনা রয়েছে। তবে ১২ ও ১৩ তাকবীরের আছারই বেশী এবং মুহাদ্দিছগণের নিকটে সর্বাধিক ছহীহ,৮৫

৮৫. وَالرِّوَايَةُ الْأَوْلَى أَصَحُ عِنْدِى لِجَلَالَةِ عَطَاءِ وَحَفْظِهِ وَمُتَابِعَةِ عَمَّارَ لَّهُ -ইরওয়া ৩/১১২।​

তাছাড়া ইবনু আব্বাস (রাঃ) সরাসরি রাসূল (ছাঃ) থেকে যে সমস্ত হাদীছ বর্ণনা করেছেন তার সবই ১২ তাকবীরের পক্ষে। ৬ আর অন্যান্য বিরোধী বর্ণনাগুলো মূলতঃ কূফা ও বছরার অধিবাসীদের থেকে ইবনু আব্বাসের নামে বর্ণনা করা হয়েছে মাত্র। এর কারণ হ'ল, তিনি কিছুদিন সেখানে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন।৮৬

৮৬. দ্রঃ বায়হাক্বী, ৩য় খণ্ড,পৃঃ ৪০৭, হা/৬১৮১; ইবনু আবী শায়বাহ, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৭৯; ইমাম শাফেঈ, কিতাবুল উম্ম ১/২৩৬।​

অন্যান্য ছাহাবী থেকেও বিভিন্ন হাদীছ গ্রন্থে ১২ তাকবীরের পক্ষে বিশুদ্ধ আছার বর্ণিত হয়েছে। ৮৭

৮৭. বায়হাক্বী ৩/৪১১, হা/৬১৭৮।​

তবে ১২ তাকবীরের পক্ষে যঈফ আছারের সংখ্যা অনেক। ৮৮

৮৮. মুসনাদুশ শাফেঈ হা/৩৩৬, ৩৩৭, ৩৩৮, ১/৭৬ পৃঃ; ফিরইয়াবী প্রভৃতি। উল্লেখ্য, এ বিষয়ে আলোচনা দেখুন: প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব প্রণীত সংক্ষিপ্ত অথচ সারগর্ভ নিবন্ধ ‘তাকবীরাতুল ঈদায়ন' -মাসিক আত-তাহরীক জানুয়ারী '৯৯; ঐ, ‘মাসায়েলে কুরবানী' বই, যা বর্ধিত কলেবরে জানুয়ারী ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে। সেই সাথে আলোচনা দেখুন: মাওলানা খলীলুর রহমান বিন ফযলুর রহমান রচিত 'ঈদের সলাতে ১২ তাকবীরের পক্ষে ১৫২টি হাদীস ৬ তাকবীরের হাদীস কোথায়? শীর্ষক পুস্তক।​

ছহীহ হাদীছের কষ্টিপাথরে ঈদের তাকবীর
মুযাফফর বিন মুহসিন​
 
COMMENTS ARE BELOW
Top