ভূমিকা
পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে এ পর্যন্ত বহু ধর্ম প্রবর্তিত হয়েছে। তবে ইসলামই একমাত্র জীবন ব্যবস্থা, যা সমগ্র মানব জীবনের জন্য একটি নির্ভুল পদ্ধতি। যার মাঝে রয়েছে জীবনের প্রতিটি স্তর ও বিভাগের সুষ্ঠু সমাধান। এটা মানব রচিত কোন জীবন বিধান নয় যে, তার মাঝে সত্য-মিথ্যার সম্ভাবনা থাকবে। এটা আল্লাহ প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, যা তার অনুসারীদের জন্য দুনিয়ার জীবনে কল্যাণ, সমৃদ্ধি, শান্তি ও মানসিক স্বস্তি আনয়ন করে এবং ক্বিয়ামতের কঠিন দিনে পুরস্কৃত হয়ে চিরস্থায়ী সুখের জান্নাত লাভে ধন্য করে। মনের পরিশুদ্ধি বা সুন্দর চরিত্র বিনির্মাণে নবুওয়াতী আদবের একটি সুন্দর প্রভাব ও সুদূর প্রসারী ফলাফল রয়েছে। নবুওয়াতী আদবই হল ইসলামী শিষ্টাচার। যেমন সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা, চারিত্রিক নিষ্কলুষতা, পবিত্রতা, আদল-ইনছাফ বা ন্যায়পরায়ণতা, একনিষ্ঠ ইবাদত ইত্যাদি সবই এর মাঝে অর্ন্তভুক্ত।
শিষ্টাচার কী?
শিষ্টাচার বলতে আচরণে ভদ্রতা, সুরুচিবোধ এবং মার্জিত স্বভাবকে বুঝায়। মানুষের মনের গহীনে যে সৌন্দর্য থাকে তার বাহ্যিক প্রকাশই শিষ্টাচার। প্রতিটি মানুষেরই একটি চরিত্র আছে, আর তা সুচারুরূপে ও আকর্ষণীয় করে প্রকাশ করাই শিষ্টতা। এই শিষ্টতাই সুন্দরের প্রতিমূর্ত রূপ। একে উদারতাও বলা যায়, যা শালীনভাবে নিজেকে উপস্থাপনা করতে শেখায়।
মানুষের জীবনের প্রতিটি কাজেই রয়েছে শিষ্টাচার। ছুবহে ছাদিকে ঘুম থেকে উঠা এবং রাতে ঘুমানো পর্যন্ত মানুষ যা কিছু করে তার সবই শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। যেগুলো ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতেই আবর্তিত হতে হবে। মুমিন ব্যক্তি ইসলামের বাহিরে কোন কিছু করতে পারে না। এটাই ইসলামী শিষ্টাচার। দুনিয়ার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট স্থান হল মসজিদ নিকৃষ্ট জায়গা হল বাজার। সেখানে গমনাগমনেরও রয়েছে বিশেষ নীতিমালা। এমনকি বাথরুমে যাওয়ারও রয়েছে নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি, যা সকল মুসলিমকে পালন করতে হয়। কোন ইবাদত বা চলাফেরা, কথা বলা, খাওয়া এবং ঘুম যাই হোক না কেন সকল কিছুরই রয়েছে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন। মহান আল্লাহ বলেন,
‘মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই, যখন তাদের মধ্যকার কোন ফায়ছালার জন্য তাদেরকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে আহ্বান করা হবে, তখন তারা বলবে শুনলাম এবং মানলাম, আর তারাই সফলকাম’ (সূরা আন-নূর : ৫১)।
প্রতিটি মুসলিম ইসলামী বিধিবদ্ধ নিয়ম অনুযায়ী যা কিছু করে সেগুলোই ইসলামী শিষ্টাচার। ইসলামী শিষ্টাচার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা অধিকাংশ মুহাদ্দিছ তাদের সংকলিত হাদীস গ্রন্থে এমর্মে পৃথক শিরোনামে অধ্যায় রচনা করেছেন। বিভিন্ন মুহাদ্দিছের হাদীস সংকলনের ধারায় আমরাও ইসলামী শিষ্টাচারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ।
নিয়তের শিষ্টাচার
মানুষের প্রতিটি কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। নিয়ত যদি বিশুদ্ধ হয়, তাহলে কাজও ত্রুটিমুক্ত ও সুন্দর হবে আর যদি নিয়তেই ত্রুটি থাকে, তাহলে তা কোনভাবেই আল্লাহর দরবার পর্যন্ত পৌঁছবে না। সেটা যতই ফীযলতপূর্ণ আমল হোক। এজন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
‘প্রত্যেক কাজই নিয়তের উপর নির্ভরশীল’।[১]
মনের পরিকল্পনাকে নিয়ত বলে। নির্দিষ্ট গদ বেধে মুখে উচ্চারণ করে বলার নাম নিয়ত নয়। কেননা ইসলামী শিষ্টাচার ইসলামী বিধান মোতাবেকই হতে হবে। কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী না হলে তা ইসলামী শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না- চাই তা নিয়তে হোক বা কর্মে হোক। উমামা আল-বাহেলী (রাযিয়াল্লাহ আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‘একজন ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে জানতে চাইলেন। হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কী বলবেন, যে লোক যুদ্ধ করে দুনিয়াতে নাম-ডাক চায় আবার আখেরাতে প্রতিদানও চায়, তার জন্য কিছু আছে কি? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না তার জন্য কিছুই নেই। লোকটি বিষ্ময়ের সাথে ৩ বার জিজ্ঞেস করলেও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবারেই বললেন, না তার জন্য কিছুই নেই। এরপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বান্দার কোন আমলই কবুল করেন না, যদি সে আমল শুধু আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য না হয়ে থাকে’। [২] সুতরাং ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নিয়ত পরিশুদ্ধির গুরুত্ব অপরিসীম। প্রকৃতপক্ষে নিয়তের পরিশুদ্ধিতাই হল নিয়তের শিষ্টাচার।
সালামের শিষ্টাচার
সালাম এমন একটি ইসলামী শিষ্টাচার, যার বিভিন্নধর্মী উপকার ও গুণাগুণ রয়েছে। এর মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনও সম্ভব। মুমিনদের মাঝে পরস্পর ভালবাসা বৃদ্ধিতেও সালামের জুড়ি নেই। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
‘তোমরা কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা মুমিন হবে। আর তোমরা কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদের বলে দেব না যে, কিভাবে পরস্পরের মাঝে ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে? আর তা হচ্ছে সালামের অধিক প্রচলন করা’। [৩] হাদীসে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, মুমিন হওয়া বা পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি এমনকি জান্নাতে প্রবেশের কারণও হতে পারে সালামের প্রচলন। এক সাহাবী রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ইসলামে কোন্ কাজটি সর্বোত্তম? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, পরিচিত অপরিচিত মানুষকে সালাম দেয়া। [৪]
সমাজ সংস্কারে, অধিক নেকী অর্জনে, পূর্ণ মুমিন হওয়ার জন্য এমনকি জান্নাত লাভের জন্য হলেও সালামের বিকল্প নেই। তবে এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা যায় যে, ‘পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেয়া’ অর্থ এমন নয় যে, যেকোন ব্যক্তি চাই সে মুসলিম হোক আর অমুসলিম হোক তাকে সালাম দিতে হবে। অর্থাৎ যদি বুঝা যায় যে, সে অমুসলিম; তাহলে সালাম দেয়া যাবে না। যেমন আবূ হুরায়রা ভ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
‘যদি রাস্তায় তোমাদের সাথে ইহুদী ও নাছারাদের সাক্ষাৎ হয়, তাহলে তাদেরকে সালাম দিও না এবং রাস্তাও ছেড়ে দিও না; বরং তাদেরকে সংকীর্ণ রাস্তার দিকে ঠেলে দাও’। [৫]
উল্লেখ্য, মুসলিম-অমুসলিম এক জায়গায় অবস্থান করলে ‘আসসালামু ‘আলা মানিত তাবা‘আল হুদা’ বলে অভিবাদন বা সালাম দিতে হয় কথাটি ঠিক না। প্রথমতঃ এটা কোন সহীহ দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়, সাথে যুক্তিরও পরিপন্থী। কারণ যদি বুঝা যায় তাহলে অমুসলিমদের সালামই দেয়া যাবে না। কারণ সালামে আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি, রহমত ও বরকত কামনা করা হয়। আর মুসলিম সালাম পাওয়ার হক্বদার সে যেভাবে যেখানেই থাকুক না কেন বা যার সাথেই থাকুক না কেন।
অন্য হাদীসে বলা হয়েছে- যদি দু’জনের মাঝে কোন দ্বন্দ্ব থাকে, তাহলে সালামই তাদের মাঝে ফায়ছালার অন্যতম মাধ্যম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, দু’জনের মধ্যে উত্তম সে, যে প্রথমে সালাম দেয়’।[৬] এক মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের ৬টি হক্ব রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল সালাম দেয়া ও তার জবাব দেয়া।[৭] রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অভ্যাসগুলোর অন্যতম হল সর্বদা সালাম দেয়া।[৮]
সালাম দিতে বা জবাব দিতে গিয়ে ইসলামী শিষ্টাচার বহির্ভুত অনেক নিয়মই অনুপ্রবেশ ঘটেছে, যা বিদ‘আত। সালামে যেমন বিবিধ ছওয়াব রয়েছে, অনুরূপ সে নেকী অর্জনের জন্য শুদ্ধিতার প্রয়োজন। যেমন সালাম দেয়ার একটি নির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে ছোটরা বড়দের সালাম দেবে। কিন্তু শেখানোর জন্য রাসূলুল্লাহ ফ নিজেই শিশুদের সালাম দিতেন। তাই অন্ততঃ শিখানোর জন্য হলেও বড়রা ছোটদের, স্বামী স্ত্রীকে, বাবা ছেলেকে সালাম দিবে।
সালাম আদান-প্রদানে রয়েছে অসংখ্য নেকী। যেমন ইমরান ইবনু হুছাইন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, একজন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে প্রবেশ করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, ১০ নেকী। দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রবেশের সময় বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জবাব দিয়ে বললেন, ২০ নেকী। তৃতীয় ব্যক্তি প্রবেশের সময় বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ ওয়াবারাকাতুহ’। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালামের জবাব দিয়ে বললেন, ৩০ নেকী’। [৯] সালামের বিধান মূলত আল্লাহ প্রদত্ত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আর তোমাদেরকে যদি কেউ সালাম দেয়, তাহলে তোমরাও তার সালামের জবাব দাও; তার চেয়ে উত্তম কথায় অথবা তারই মত ফিরিয়ে বল। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী’ (সূরা আস-নিসা : ৮৬)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,
‘যখন তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম করবে অভিবাদন স্বরূপ, যা আল্লাহ্র নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র’ (সূরা আন-নূর : ৬১)। আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রদর্শিত এই মূল্যবান বিধান পালনের মাধ্যমে মুসলিমদের সোনালী গর্ব আবারও ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
ধৈর্যধারণ করা
শরী‘আতে এমন কিছু অধ্যায় আছে, যেগুলো আমাদের জীবনের বাস্তবতা মনে করিয়ে দেয়। কিছু আয়াত বা হাদীস রয়েছে, যা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়; আমরা কিভাবে নিজেরাই বিপদ ডেকে আনি। আর কিছু বিষয় আছে, যা আমাদেরকে জীবনের সব দুঃখ, কষ্ট, ভয় হাসিমুখে পার করার শক্তি যোগায়। এগুলোর মধ্যে একটি হল ধৈর্য, যা ইসলামী শিষ্টাচারের গর্বিত অধ্যায়। যার কারণে মানুষ অল্পে তুষ্ট থাকতে পারে, না খেয়ে তৃপ্ত থাকতে পারে, জিহাদের ময়দানে রক্ত দিয়েও সুস্থ থাকতে পারে আবার হাসপাতালের বেডে শুয়ে থেকেও স্বস্তি পেতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন,
‘এমন অনেক নবী ছিলেন, যাদের সহযোগে আল্লাহভক্ত লোকেরা যুদ্ধ করেছিলেন; বরং আল্লাহর পথে যা সংঘটিত হয়েছিল, তাতে তারা নিরুৎসাহিত হননি, শক্তিহীন হননি ও বিচলিত হননি। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালবাসেন। আর এতদ্ব্যতীত তাদের কোন কথা ছিল না যে, হে আমাদের প্রভু! আমাদের অপরাধগুলো ও বাড়াবাড়ি ক্ষমা করুন এবং আমাদের পদসমূহ সুদৃঢ় করুন এবং অবিশ্বাসীদের উপর আমাদের সাহায্য করুন। অনন্তর আল্লাহ তাদেরকে পার্থিব পুরস্কার প্রদান করেন এবং পরকালেও শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দেবেন। আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন’ (সূরা আলে ‘ইবরান : ১৪৬-১৪৮)। বিপদে ধৈর্যধারণের ব্যাপারে আল্লাহ আরো বলেন,
‘আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলব; মাঝে মধ্যে তোমাদেরকে বিপদের আতঙ্ক, ক্ষুধার কষ্ট দিয়ে, সম্পদ, জীবন, ফল-ফসল হারানোর মধ্য দিয়ে। আর যারা কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য-নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করে, তাদেরকে সুখবর দাও’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৫৫)।
কুরআন-সুন্নাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ধৈর্য মূলত বিপদে ধরতে হয়। অর্থাৎ ধৈর্য অধ্যায় আসবে মানে সেখানে বিপদ আছে; অনুরূপ যখনই বিপদ আসবে তখনই ধৈর্য ধরতে হবে। বলে রাখা ভাল যে, আমরা মূলত যেভাবে ধৈর্যধারণ করে থাকি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী অনুযায়ী তাকে আসলে ধৈর্য বলা যায় না। কারণ নিম্নের হাদীসটি খেয়াল করুন-
আনসা ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
‘নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যে ক্ববরের পার্শ্বে র ক্রন্দন করছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্যধারণ কর। মহিলাটি বলল, আমার নিকট থেকে প্রস্থান করুন। আপনার উপর তো আমার মত বিপদ আসেনি। মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে চিনতে পারেনি। পরে তাকে বলা হল, তিনি তো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তখন মহিলাটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরজায় উপস্থিত হল, তাঁর কাছে কোন প্রহরী ছিল না। সে নিবেদন করল, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি (এখন ধৈর্য ধরছি)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, (এখন ধৈর্য ধরে লাভ নেই) ধৈর্য তো বিপদের প্রাথমিক অবস্থাতেই ধরতে হয়’।[১০]
বর্তমান সংস্কৃতিতে যেন এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হারিয়েই গেছে। যদি কোন অধিনস্ত ব্যক্তি কোন ভুল করে, তখন সুযোগ বুঝে মালিকপক্ষ তার উপর যুলুম করে বসে। কোনভাবে কষ্ট পেলে বা কোন ক্ষতি হলে আমরা ধৈর্য না ধরে বিভিন্নভাবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বা ডাক্তারদের এমনকি আল্লাহকে পর্যন্ত মন্দ বলতে ছাড়ি না (নাউযুবিল্লাহ)। অতএব সাবধান!
লুক্বমান (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর সন্তানকে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দেয়ার সময় এ বিষয়েও তাকে স্মরণ করান। যেমন আল্লাহ বলেন,
‘হে বৎস! সালাত আদায় কর, সৎকাজের আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে ধৈর্য ধর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ’ (সূরা লুক্বমান : ১৭)। এ আয়াতের ব্যখ্যায় ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘হে প্রিয় বৎস! জেনে রাখ, নিশ্চয় সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে মানুষকে নিষেধ করতে গেলে যেকোন বিপদ আসতে পারে অথবা মানুষ কষ্ট দিতে পারে, তখন ধৈর্যধারণ করতে হবে’। ধৈর্যের ব্যাপারে এগুলো ছাড়াও কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য আয়াত ও হাদীস এসেছে। তাই ইসলামী শিষ্টাচারের অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ধৈর্যধারণ করা।
নরম ভাষা
অপরিচিত মানুষের সাথে প্রথম পরিচয় হয় কথা, লেখনি কিংবা চিঠির ভাষার মাধ্যমে। তাই কথা শুনলে, লেখনি পড়লে এবং চিঠির ভাষা উচ্চারণ করলেই তার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। মুমিনদের ভাষা সর্বদা নরমই হবে মর্মে আল্লাহ বলেন,
‘অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, আপনি তাদের প্রতি কোমল চিত্ত। আপনি যদি কর্কশভাষী, কঠোর হৃদয়ের হতেন, তাহলে তারা আপনার সংসর্গ হতে দূরে সরে যেত। তাই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজের ব্যাপারে তাদের সাথে পরামর্শ করুন’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১৫৯)।
সুধী পাঠক! আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন এ কথাগুলো বলেছেন আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে লক্ষ্য করে, যাতে তিনি তাঁর ভাষা নরম করেন আর সঙ্গী-সাথীদের সাথে রাগ না করেন। অতএব আমাদের নিজেদের ভাষার প্রতি লক্ষ্য রাখা যরূরী। হাদীসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুসংবাদ দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয় জান্নাতের মধ্যে একটি বালাখানা বা প্রাসাদ আছে। এর ভিতর থেকে বাহির এবং বাহির থেকে ভিতরের দৃশ্য দেখা যায়। এক বিদুঈন দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এ বালাখানা কোন্ ব্যক্তির জন্য? তিনি বললেন, যে লোক মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলে…’।[১২]
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘যে নরম ভাষায় কথা বলে’। [১৩] সুতরাং ভাষা নরম হওয়া মুমিনদের একটি অন্যতম গুণাবলী এবং ইসলামী শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত।
তথ্যসূত্র :
[১] সহীহ বুখারী, হা/১।
[২] নাসাঈ, হা/৩১৪০, সনদ সহীহ।
[৩] সহীহ মুসলিম, হা/৯৩; আবুদাঊদ, হা/৫১৯৩; তিরমিযী, হা/২৬৮৮; ইবনু মাজাহ, হা/৬৮, ৩৬৯২; মিশকাত, হা/৪৬৩১, সনদ সহীহ।
[৪] সহীহ বুখারী, হা/১২।
[৫] সহীহ মুসলিম, হা/২১৬৭; মিশকাত, হা/৪৬৩৫।
[৬] সহীহ বুখারী, হা/৬০৭৭।
[৭] তিরমিযী, হা/২৭৩৭, সনদ সহীহ।
[৮] সহীহ বুখারী, হা/৯৫।
[৯] তিরমিযী, হা/২৯০৫।
[১০] সহীহ বুখারী, হা/১২৮৩।
[১১] তাফসীরে ইবনু কাছীর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৩৩৮।
[১২] তিরমিযী, হা/১৯৮৪, সনদ হাসান।
[১৩] বায়হাক্বী, মিশকাত, হা/১২৩২, সনদ সহীহ।
পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে এ পর্যন্ত বহু ধর্ম প্রবর্তিত হয়েছে। তবে ইসলামই একমাত্র জীবন ব্যবস্থা, যা সমগ্র মানব জীবনের জন্য একটি নির্ভুল পদ্ধতি। যার মাঝে রয়েছে জীবনের প্রতিটি স্তর ও বিভাগের সুষ্ঠু সমাধান। এটা মানব রচিত কোন জীবন বিধান নয় যে, তার মাঝে সত্য-মিথ্যার সম্ভাবনা থাকবে। এটা আল্লাহ প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, যা তার অনুসারীদের জন্য দুনিয়ার জীবনে কল্যাণ, সমৃদ্ধি, শান্তি ও মানসিক স্বস্তি আনয়ন করে এবং ক্বিয়ামতের কঠিন দিনে পুরস্কৃত হয়ে চিরস্থায়ী সুখের জান্নাত লাভে ধন্য করে। মনের পরিশুদ্ধি বা সুন্দর চরিত্র বিনির্মাণে নবুওয়াতী আদবের একটি সুন্দর প্রভাব ও সুদূর প্রসারী ফলাফল রয়েছে। নবুওয়াতী আদবই হল ইসলামী শিষ্টাচার। যেমন সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা, চারিত্রিক নিষ্কলুষতা, পবিত্রতা, আদল-ইনছাফ বা ন্যায়পরায়ণতা, একনিষ্ঠ ইবাদত ইত্যাদি সবই এর মাঝে অর্ন্তভুক্ত।
শিষ্টাচার কী?
শিষ্টাচার বলতে আচরণে ভদ্রতা, সুরুচিবোধ এবং মার্জিত স্বভাবকে বুঝায়। মানুষের মনের গহীনে যে সৌন্দর্য থাকে তার বাহ্যিক প্রকাশই শিষ্টাচার। প্রতিটি মানুষেরই একটি চরিত্র আছে, আর তা সুচারুরূপে ও আকর্ষণীয় করে প্রকাশ করাই শিষ্টতা। এই শিষ্টতাই সুন্দরের প্রতিমূর্ত রূপ। একে উদারতাও বলা যায়, যা শালীনভাবে নিজেকে উপস্থাপনা করতে শেখায়।
মানুষের জীবনের প্রতিটি কাজেই রয়েছে শিষ্টাচার। ছুবহে ছাদিকে ঘুম থেকে উঠা এবং রাতে ঘুমানো পর্যন্ত মানুষ যা কিছু করে তার সবই শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। যেগুলো ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতেই আবর্তিত হতে হবে। মুমিন ব্যক্তি ইসলামের বাহিরে কোন কিছু করতে পারে না। এটাই ইসলামী শিষ্টাচার। দুনিয়ার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট স্থান হল মসজিদ নিকৃষ্ট জায়গা হল বাজার। সেখানে গমনাগমনেরও রয়েছে বিশেষ নীতিমালা। এমনকি বাথরুমে যাওয়ারও রয়েছে নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি, যা সকল মুসলিমকে পালন করতে হয়। কোন ইবাদত বা চলাফেরা, কথা বলা, খাওয়া এবং ঘুম যাই হোক না কেন সকল কিছুরই রয়েছে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন। মহান আল্লাহ বলেন,
.اِنَّمَا کَانَ قَوۡلَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اِذَا دُعُوۡۤا اِلَی اللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ لِیَحۡکُمَ بَیۡنَہُمۡ اَنۡ یَّقُوۡلُوۡا سَمِعۡنَا وَ اَطَعۡنَا وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ
‘মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই, যখন তাদের মধ্যকার কোন ফায়ছালার জন্য তাদেরকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে আহ্বান করা হবে, তখন তারা বলবে শুনলাম এবং মানলাম, আর তারাই সফলকাম’ (সূরা আন-নূর : ৫১)।
প্রতিটি মুসলিম ইসলামী বিধিবদ্ধ নিয়ম অনুযায়ী যা কিছু করে সেগুলোই ইসলামী শিষ্টাচার। ইসলামী শিষ্টাচার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা অধিকাংশ মুহাদ্দিছ তাদের সংকলিত হাদীস গ্রন্থে এমর্মে পৃথক শিরোনামে অধ্যায় রচনা করেছেন। বিভিন্ন মুহাদ্দিছের হাদীস সংকলনের ধারায় আমরাও ইসলামী শিষ্টাচারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ।
নিয়তের শিষ্টাচার
মানুষের প্রতিটি কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। নিয়ত যদি বিশুদ্ধ হয়, তাহলে কাজও ত্রুটিমুক্ত ও সুন্দর হবে আর যদি নিয়তেই ত্রুটি থাকে, তাহলে তা কোনভাবেই আল্লাহর দরবার পর্যন্ত পৌঁছবে না। সেটা যতই ফীযলতপূর্ণ আমল হোক। এজন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ
‘প্রত্যেক কাজই নিয়তের উপর নির্ভরশীল’।[১]
মনের পরিকল্পনাকে নিয়ত বলে। নির্দিষ্ট গদ বেধে মুখে উচ্চারণ করে বলার নাম নিয়ত নয়। কেননা ইসলামী শিষ্টাচার ইসলামী বিধান মোতাবেকই হতে হবে। কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী না হলে তা ইসলামী শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না- চাই তা নিয়তে হোক বা কর্মে হোক। উমামা আল-বাহেলী (রাযিয়াল্লাহ আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَرَأَيْتَ رَجُلًا غَزَا يَلْتَمِسُ الْأَجْرَ وَالذِّكْرَ مَا لَهُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا شَىْءَ لَهُ فَأَعَادَهَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ يَقُوْلُ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا شَىْءَ لَهُ ثُمَّ قَالَ إِنَّ اللهَ لَا يَقْبَلُ مِنَ الْعَمَلِ إِلَّا مَا كَانَ لَهُ خَالِصًا وَابْتُغِىَ بِهِ وَجْهُهُ
‘একজন ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে জানতে চাইলেন। হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কী বলবেন, যে লোক যুদ্ধ করে দুনিয়াতে নাম-ডাক চায় আবার আখেরাতে প্রতিদানও চায়, তার জন্য কিছু আছে কি? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না তার জন্য কিছুই নেই। লোকটি বিষ্ময়ের সাথে ৩ বার জিজ্ঞেস করলেও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবারেই বললেন, না তার জন্য কিছুই নেই। এরপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বান্দার কোন আমলই কবুল করেন না, যদি সে আমল শুধু আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য না হয়ে থাকে’। [২] সুতরাং ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নিয়ত পরিশুদ্ধির গুরুত্ব অপরিসীম। প্রকৃতপক্ষে নিয়তের পরিশুদ্ধিতাই হল নিয়তের শিষ্টাচার।
সালামের শিষ্টাচার
সালাম এমন একটি ইসলামী শিষ্টাচার, যার বিভিন্নধর্মী উপকার ও গুণাগুণ রয়েছে। এর মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনও সম্ভব। মুমিনদের মাঝে পরস্পর ভালবাসা বৃদ্ধিতেও সালামের জুড়ি নেই। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
.لَا تَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلَا تُؤْمِنُوْا حَتَّى تَحَابُّوْا أَوَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَىْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوْهُ تَحَابَبْتُمْ أَفْشُوا السَّلَامَ بَيْنَكُمْ
‘তোমরা কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা মুমিন হবে। আর তোমরা কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদের বলে দেব না যে, কিভাবে পরস্পরের মাঝে ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে? আর তা হচ্ছে সালামের অধিক প্রচলন করা’। [৩] হাদীসে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, মুমিন হওয়া বা পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি এমনকি জান্নাতে প্রবেশের কারণও হতে পারে সালামের প্রচলন। এক সাহাবী রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ইসলামে কোন্ কাজটি সর্বোত্তম? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, পরিচিত অপরিচিত মানুষকে সালাম দেয়া। [৪]
সমাজ সংস্কারে, অধিক নেকী অর্জনে, পূর্ণ মুমিন হওয়ার জন্য এমনকি জান্নাত লাভের জন্য হলেও সালামের বিকল্প নেই। তবে এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা যায় যে, ‘পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেয়া’ অর্থ এমন নয় যে, যেকোন ব্যক্তি চাই সে মুসলিম হোক আর অমুসলিম হোক তাকে সালাম দিতে হবে। অর্থাৎ যদি বুঝা যায় যে, সে অমুসলিম; তাহলে সালাম দেয়া যাবে না। যেমন আবূ হুরায়রা ভ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
.لَا تَبْدَءُوا الْيَهُوْدَ وَلَا النَّصَارَى بِالسَّلَامِ فَإِذَا لَقِيْتُمْ أَحَدَهُمْ فِىْ طَرِيْقٍ فَاضْطَرُّوْهُ إِلَى أَضْيَقِهِ
‘যদি রাস্তায় তোমাদের সাথে ইহুদী ও নাছারাদের সাক্ষাৎ হয়, তাহলে তাদেরকে সালাম দিও না এবং রাস্তাও ছেড়ে দিও না; বরং তাদেরকে সংকীর্ণ রাস্তার দিকে ঠেলে দাও’। [৫]
উল্লেখ্য, মুসলিম-অমুসলিম এক জায়গায় অবস্থান করলে ‘আসসালামু ‘আলা মানিত তাবা‘আল হুদা’ বলে অভিবাদন বা সালাম দিতে হয় কথাটি ঠিক না। প্রথমতঃ এটা কোন সহীহ দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়, সাথে যুক্তিরও পরিপন্থী। কারণ যদি বুঝা যায় তাহলে অমুসলিমদের সালামই দেয়া যাবে না। কারণ সালামে আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি, রহমত ও বরকত কামনা করা হয়। আর মুসলিম সালাম পাওয়ার হক্বদার সে যেভাবে যেখানেই থাকুক না কেন বা যার সাথেই থাকুক না কেন।
অন্য হাদীসে বলা হয়েছে- যদি দু’জনের মাঝে কোন দ্বন্দ্ব থাকে, তাহলে সালামই তাদের মাঝে ফায়ছালার অন্যতম মাধ্যম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, দু’জনের মধ্যে উত্তম সে, যে প্রথমে সালাম দেয়’।[৬] এক মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের ৬টি হক্ব রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল সালাম দেয়া ও তার জবাব দেয়া।[৭] রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অভ্যাসগুলোর অন্যতম হল সর্বদা সালাম দেয়া।[৮]
সালাম দিতে বা জবাব দিতে গিয়ে ইসলামী শিষ্টাচার বহির্ভুত অনেক নিয়মই অনুপ্রবেশ ঘটেছে, যা বিদ‘আত। সালামে যেমন বিবিধ ছওয়াব রয়েছে, অনুরূপ সে নেকী অর্জনের জন্য শুদ্ধিতার প্রয়োজন। যেমন সালাম দেয়ার একটি নির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে ছোটরা বড়দের সালাম দেবে। কিন্তু শেখানোর জন্য রাসূলুল্লাহ ফ নিজেই শিশুদের সালাম দিতেন। তাই অন্ততঃ শিখানোর জন্য হলেও বড়রা ছোটদের, স্বামী স্ত্রীকে, বাবা ছেলেকে সালাম দিবে।
সালাম আদান-প্রদানে রয়েছে অসংখ্য নেকী। যেমন ইমরান ইবনু হুছাইন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, একজন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে প্রবেশ করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, ১০ নেকী। দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রবেশের সময় বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জবাব দিয়ে বললেন, ২০ নেকী। তৃতীয় ব্যক্তি প্রবেশের সময় বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ ওয়াবারাকাতুহ’। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালামের জবাব দিয়ে বললেন, ৩০ নেকী’। [৯] সালামের বিধান মূলত আল্লাহ প্রদত্ত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
.وَ اِذَا حُیِّیۡتُمۡ بِتَحِیَّۃٍ فَحَیُّوۡا بِاَحۡسَنَ مِنۡہَاۤ اَوۡ رُدُّوۡہَا اِنَّ اللّٰہَ کَانَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ حَسِیۡبًا
‘আর তোমাদেরকে যদি কেউ সালাম দেয়, তাহলে তোমরাও তার সালামের জবাব দাও; তার চেয়ে উত্তম কথায় অথবা তারই মত ফিরিয়ে বল। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী’ (সূরা আস-নিসা : ৮৬)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,
.فَاِذَا دَخَلۡتُمۡ بُیُوۡتًا فَسَلِّمُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِکُمۡ تَحِیَّۃً مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ مُبٰرَکَۃً طَیِّبَۃً
‘যখন তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম করবে অভিবাদন স্বরূপ, যা আল্লাহ্র নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র’ (সূরা আন-নূর : ৬১)। আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রদর্শিত এই মূল্যবান বিধান পালনের মাধ্যমে মুসলিমদের সোনালী গর্ব আবারও ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
ধৈর্যধারণ করা
শরী‘আতে এমন কিছু অধ্যায় আছে, যেগুলো আমাদের জীবনের বাস্তবতা মনে করিয়ে দেয়। কিছু আয়াত বা হাদীস রয়েছে, যা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়; আমরা কিভাবে নিজেরাই বিপদ ডেকে আনি। আর কিছু বিষয় আছে, যা আমাদেরকে জীবনের সব দুঃখ, কষ্ট, ভয় হাসিমুখে পার করার শক্তি যোগায়। এগুলোর মধ্যে একটি হল ধৈর্য, যা ইসলামী শিষ্টাচারের গর্বিত অধ্যায়। যার কারণে মানুষ অল্পে তুষ্ট থাকতে পারে, না খেয়ে তৃপ্ত থাকতে পারে, জিহাদের ময়দানে রক্ত দিয়েও সুস্থ থাকতে পারে আবার হাসপাতালের বেডে শুয়ে থেকেও স্বস্তি পেতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ کَاَیِّنۡ مِّنۡ نَّبِیٍّ قٰتَلَ مَعَہٗ رِبِّیُّوۡنَ کَثِیۡرٌ فَمَا وَہَنُوۡا لِمَاۤ اَصَابَہُمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ مَا ضَعُفُوۡا وَ مَا اسۡتَکَانُوۡا وَ اللّٰہُ یُحِبُّ الصّٰبِرِیۡنَ – وَ مَا کَانَ قَوۡلَہُمۡ اِلَّاۤ اَنۡ قَالُوۡا رَبَّنَا اغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوۡبَنَا وَ اِسۡرَافَنَا فِیۡۤ اَمۡرِنَا وَ ثَبِّتۡ اَقۡدَامَنَا وَ انۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ- فَاٰتٰىہُمُ اللّٰہُ ثَوَابَ الدُّنۡیَا وَ حُسۡنَ ثَوَابِ الۡاٰخِرَۃِ وَ اللّٰہُ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ
‘এমন অনেক নবী ছিলেন, যাদের সহযোগে আল্লাহভক্ত লোকেরা যুদ্ধ করেছিলেন; বরং আল্লাহর পথে যা সংঘটিত হয়েছিল, তাতে তারা নিরুৎসাহিত হননি, শক্তিহীন হননি ও বিচলিত হননি। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালবাসেন। আর এতদ্ব্যতীত তাদের কোন কথা ছিল না যে, হে আমাদের প্রভু! আমাদের অপরাধগুলো ও বাড়াবাড়ি ক্ষমা করুন এবং আমাদের পদসমূহ সুদৃঢ় করুন এবং অবিশ্বাসীদের উপর আমাদের সাহায্য করুন। অনন্তর আল্লাহ তাদেরকে পার্থিব পুরস্কার প্রদান করেন এবং পরকালেও শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দেবেন। আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন’ (সূরা আলে ‘ইবরান : ১৪৬-১৪৮)। বিপদে ধৈর্যধারণের ব্যাপারে আল্লাহ আরো বলেন,
.وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ
‘আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলব; মাঝে মধ্যে তোমাদেরকে বিপদের আতঙ্ক, ক্ষুধার কষ্ট দিয়ে, সম্পদ, জীবন, ফল-ফসল হারানোর মধ্য দিয়ে। আর যারা কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য-নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করে, তাদেরকে সুখবর দাও’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৫৫)।
কুরআন-সুন্নাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ধৈর্য মূলত বিপদে ধরতে হয়। অর্থাৎ ধৈর্য অধ্যায় আসবে মানে সেখানে বিপদ আছে; অনুরূপ যখনই বিপদ আসবে তখনই ধৈর্য ধরতে হবে। বলে রাখা ভাল যে, আমরা মূলত যেভাবে ধৈর্যধারণ করে থাকি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী অনুযায়ী তাকে আসলে ধৈর্য বলা যায় না। কারণ নিম্নের হাদীসটি খেয়াল করুন-
আনসা ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
مَرَّ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِامْرَأَةٍ تَبْكِى عِنْدَ قَبْرٍ فَقَالَ اتَّقِى اللهَ وَاصْبِرِىْ قَالَتْ إِلَيْكَ عَنِّى فَإِنَّكَ لَمْ تُصَبْ بِمُصِيْبَتِىْ وَلَمْ تَعْرِفْهُ فَقِيْلَ لَهَا إِنَّهُ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَتَتْ بَابَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ تَجِدْ عِنْدَهُ بَوَّابِينَ فَقَالَتْ لَمْ أَعْرِفْكَ فَقَالَ إِنَّمَا الصَّبْرُ عِنْدَ الصَّدْمَةِ الأُولَى
‘নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যে ক্ববরের পার্শ্বে র ক্রন্দন করছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্যধারণ কর। মহিলাটি বলল, আমার নিকট থেকে প্রস্থান করুন। আপনার উপর তো আমার মত বিপদ আসেনি। মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে চিনতে পারেনি। পরে তাকে বলা হল, তিনি তো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তখন মহিলাটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরজায় উপস্থিত হল, তাঁর কাছে কোন প্রহরী ছিল না। সে নিবেদন করল, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি (এখন ধৈর্য ধরছি)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, (এখন ধৈর্য ধরে লাভ নেই) ধৈর্য তো বিপদের প্রাথমিক অবস্থাতেই ধরতে হয়’।[১০]
বর্তমান সংস্কৃতিতে যেন এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হারিয়েই গেছে। যদি কোন অধিনস্ত ব্যক্তি কোন ভুল করে, তখন সুযোগ বুঝে মালিকপক্ষ তার উপর যুলুম করে বসে। কোনভাবে কষ্ট পেলে বা কোন ক্ষতি হলে আমরা ধৈর্য না ধরে বিভিন্নভাবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বা ডাক্তারদের এমনকি আল্লাহকে পর্যন্ত মন্দ বলতে ছাড়ি না (নাউযুবিল্লাহ)। অতএব সাবধান!
লুক্বমান (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর সন্তানকে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দেয়ার সময় এ বিষয়েও তাকে স্মরণ করান। যেমন আল্লাহ বলেন,
.یٰبُنَیَّ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ وَ اۡمُرۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ انۡہَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ اصۡبِرۡ عَلٰی مَاۤ اَصَابَکَ اِنَّ ذٰلِکَ مِنۡ عَزۡمِ الۡاُمُوۡرِ
‘হে বৎস! সালাত আদায় কর, সৎকাজের আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে ধৈর্য ধর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ’ (সূরা লুক্বমান : ১৭)। এ আয়াতের ব্যখ্যায় ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘হে প্রিয় বৎস! জেনে রাখ, নিশ্চয় সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে মানুষকে নিষেধ করতে গেলে যেকোন বিপদ আসতে পারে অথবা মানুষ কষ্ট দিতে পারে, তখন ধৈর্যধারণ করতে হবে’। ধৈর্যের ব্যাপারে এগুলো ছাড়াও কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য আয়াত ও হাদীস এসেছে। তাই ইসলামী শিষ্টাচারের অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ধৈর্যধারণ করা।
নরম ভাষা
অপরিচিত মানুষের সাথে প্রথম পরিচয় হয় কথা, লেখনি কিংবা চিঠির ভাষার মাধ্যমে। তাই কথা শুনলে, লেখনি পড়লে এবং চিঠির ভাষা উচ্চারণ করলেই তার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। মুমিনদের ভাষা সর্বদা নরমই হবে মর্মে আল্লাহ বলেন,
.فَبِمَا رَحۡمَۃٍ مِّنَ اللّٰہِ لِنۡتَ لَہُمۡ وَ لَوۡ کُنۡتَ فَظًّا غَلِیۡظَ الۡقَلۡبِ لَانۡفَضُّوۡا مِنۡ حَوۡلِکَ فَاعۡفُ عَنۡہُمۡ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لَہُمۡ وَ شَاوِرۡہُمۡ فِی الۡاَمۡرِ
‘অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, আপনি তাদের প্রতি কোমল চিত্ত। আপনি যদি কর্কশভাষী, কঠোর হৃদয়ের হতেন, তাহলে তারা আপনার সংসর্গ হতে দূরে সরে যেত। তাই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজের ব্যাপারে তাদের সাথে পরামর্শ করুন’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১৫৯)।
সুধী পাঠক! আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন এ কথাগুলো বলেছেন আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে লক্ষ্য করে, যাতে তিনি তাঁর ভাষা নরম করেন আর সঙ্গী-সাথীদের সাথে রাগ না করেন। অতএব আমাদের নিজেদের ভাষার প্রতি লক্ষ্য রাখা যরূরী। হাদীসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুসংবাদ দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয় জান্নাতের মধ্যে একটি বালাখানা বা প্রাসাদ আছে। এর ভিতর থেকে বাহির এবং বাহির থেকে ভিতরের দৃশ্য দেখা যায়। এক বিদুঈন দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এ বালাখানা কোন্ ব্যক্তির জন্য? তিনি বললেন, যে লোক মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলে…’।[১২]
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘যে নরম ভাষায় কথা বলে’। [১৩] সুতরাং ভাষা নরম হওয়া মুমিনদের একটি অন্যতম গুণাবলী এবং ইসলামী শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত।
তথ্যসূত্র :
[১] সহীহ বুখারী, হা/১।
[২] নাসাঈ, হা/৩১৪০, সনদ সহীহ।
[৩] সহীহ মুসলিম, হা/৯৩; আবুদাঊদ, হা/৫১৯৩; তিরমিযী, হা/২৬৮৮; ইবনু মাজাহ, হা/৬৮, ৩৬৯২; মিশকাত, হা/৪৬৩১, সনদ সহীহ।
[৪] সহীহ বুখারী, হা/১২।
[৫] সহীহ মুসলিম, হা/২১৬৭; মিশকাত, হা/৪৬৩৫।
[৬] সহীহ বুখারী, হা/৬০৭৭।
[৭] তিরমিযী, হা/২৭৩৭, সনদ সহীহ।
[৮] সহীহ বুখারী, হা/৯৫।
[৯] তিরমিযী, হা/২৯০৫।
[১০] সহীহ বুখারী, হা/১২৮৩।
[১১] তাফসীরে ইবনু কাছীর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৩৩৮।
[১২] তিরমিযী, হা/১৯৮৪, সনদ হাসান।
[১৩] বায়হাক্বী, মিশকাত, হা/১২৩২, সনদ সহীহ।
মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
Last edited: