শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বিভিন্ন সময়ে মোট সাতবার কারাবাসে গিয়েছিলেন। এই কারাবাসগুলোর সময়কাল ও স্থান বিভিন্ন ছিল। সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ বছর তিনি বন্দিত্বে ছিলেন।
এই কারাবাসের কারণগুলো সাধারণত খুবই তুচ্ছ ছিল, যা অধিকাংশ সময়ে ছিল হিংসা ও ষড়যন্ত্রের ফলাফল। কিন্তু এইসব বন্দিত্বের ফলাফল ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্থায়ী। কারণ সেসব সময়েই তিনি অনেক মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন এবং তাঁর আদর্শিক দৃঢ়তা আরও উজ্জ্বলভাবে প্রকাশ পায়। আমরা প্রত্যেক কারাবাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে তুলে ধরব।
প্রথম কারাবাস
স্থান: দামেস্ক, সিরিয়া
সন: ৬৯৩ হিজরী
মেয়াদ: অল্প কিছু দিন
কারণ: এক খ্রিস্টান ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে গালাগালি করেছিল। ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ এর প্রতিবাদ করেছিলেন। ফলত জেলে যান।
ফলাফল: তিনি এই প্রসঙ্গে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ "আস-সারিম আল-মাসলূল আলা শাতিমির রাসূল" রচনা করেন।
দ্বিতীয় কারাবাস
স্থান: কায়রো, মিশর
সন: ৭০৫–৭০৭ হিজরী
মেয়াদ: দেড় বছর
কারণ: আরশ, কালাম ও আল্লাহর অবতরণ (নুযূল) ইত্যাদি আক্বীদাগত ও ফিকহী বিষয়ে মতভেদ।
বিশেষ ঘটনা: তিনি কারাবাসে থাকার সময় তাঁর ভাইকে দুশমনদের জন্য বদদোয়া করতে নিষেধ করেন এবং বরং তাদের হেদায়াতের জন্য দোয়া করেন।
তৃতীয় কারাবাস
স্থান: মিশর
সন: ৭০৭ হিজরী
মেয়াদ: প্রায় দুই সপ্তাহ
কারণ: তাঁর রচিত "আল-ইস্তিগাছা" নামক গ্রন্থ, যা বাকরী নামক ব্যক্তির ভ্রান্ত মতের জবাব হিসেবে লিখেছিলেন। এতে সুফীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।
চতুর্থ কারাবাস
স্থান: মিশর
সন: ৭০৭–৭০৮ হিজরী
মেয়াদ: দুই মাস বা তারও বেশি
কারণ: সুফী হুলুলী নাসর আল-মানবাজীর ষড়যন্ত্র।
পঞ্চম কারাবাস
স্থান: আলেকজান্দ্রিয়া
সন: ৭০৯ হিজরী
মেয়াদ: সাত মাস
কারণ: নাসর আল-মানবাজী এবং জাশনকীরের চক্রান্ত; তাঁকে সাইপ্রাসে নির্বাসনে পাঠানোর চেষ্টা।
এই সময়ে উল্লেখযোগ্য বক্তব্য: ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছিলেন- যদি আমাকে হত্যা করা হয়, তা হবে আমার জন্য শহীদী; যদি নির্বাসিত করা হয়, তা হবে হিজরত; যদি আমাকে সাইপ্রাসে পাঠানো হয়, আমি সেখানকার মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করবো, তারা সাড়া দিবে; আর যদি আমাকে বন্দি রাখা হয়, তবে তা আমার ইবাদতের স্থান হবে।
ফলাফল: বাদশাহ নাসির মুহাম্মদ ইবনু ক্বলাওন ক্ষমতায় ফিরে এসে তাঁকে মুক্তি দেন এবং যারা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, তাদেরকে তিনি ক্ষমা করে দেন।
ষষ্ঠ কারাবাস
স্থান: দামেস্ক
সন: ৭২০–৭২১ হিজরী
মেয়াদ: প্রায় ছয় মাস
কারণ: তালাকের শপথ (حلف بالطلاق) সংক্রান্ত একটি ফিকহী মতভেদ।
ফলাফল: তিনি এই সময়ে "আল-রাদ্দুল কবীর" সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ও পত্র রচনা করেন।
সপ্তম কারাবাস
স্থান: দামেস্ক
সন: ৭২৬–৭২৮ হিজরী
মেয়াদ: প্রায় দুই বছর তিন মাস এবং অর্ধ মাস, যেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
কারণ: কবর জিয়ারত সংক্রান্ত আক্বীদাগত মতভেদ।
ফলাফল: এই সময়ে তিনি "আর-রদ্দু আলা আল-ইখনায়ী" গ্রন্থ রচনা করেন এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইলমী রচনা অর্জন করেন।
ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহর এই কারাবাসগুলো ছিল বাহ্যিকভাবে কঠিন ও কষ্টদায়ক, কিন্তু বাস্তবে ইসলামী চিন্তাধারা সমৃদ্ধ করার এবং ইসলামী আক্বীদা ও ফিকহে স্থায়ী অবদান রাখার এক একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তিনি কারাবাসে থেকেও ছিলেন ধৈর্যশীল, অটল ও উদার। এমনকি যারা তাঁকে কষ্ট দিয়েছিল, তাদের জন্য তিনি দোআ করেছেন। আর বন্দিত্বের সময়ে তিনি রেখে গেছেন বহু মূল্যবান গ্রন্থ ও আদর্শিক উত্তরাধিকার, যা আজও সমগ্র বিশ্বে মানুষ পড়ে উপকৃত হচ্ছে। মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। আমীন!
Join our WhatsApp channel
মানহাজ-সালফে আস-সালেহিন**
এই কারাবাসের কারণগুলো সাধারণত খুবই তুচ্ছ ছিল, যা অধিকাংশ সময়ে ছিল হিংসা ও ষড়যন্ত্রের ফলাফল। কিন্তু এইসব বন্দিত্বের ফলাফল ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্থায়ী। কারণ সেসব সময়েই তিনি অনেক মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন এবং তাঁর আদর্শিক দৃঢ়তা আরও উজ্জ্বলভাবে প্রকাশ পায়। আমরা প্রত্যেক কারাবাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে তুলে ধরব।
প্রথম কারাবাস
স্থান: দামেস্ক, সিরিয়া
সন: ৬৯৩ হিজরী
মেয়াদ: অল্প কিছু দিন
কারণ: এক খ্রিস্টান ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে গালাগালি করেছিল। ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ এর প্রতিবাদ করেছিলেন। ফলত জেলে যান।
ফলাফল: তিনি এই প্রসঙ্গে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ "আস-সারিম আল-মাসলূল আলা শাতিমির রাসূল" রচনা করেন।
দ্বিতীয় কারাবাস
স্থান: কায়রো, মিশর
সন: ৭০৫–৭০৭ হিজরী
মেয়াদ: দেড় বছর
কারণ: আরশ, কালাম ও আল্লাহর অবতরণ (নুযূল) ইত্যাদি আক্বীদাগত ও ফিকহী বিষয়ে মতভেদ।
বিশেষ ঘটনা: তিনি কারাবাসে থাকার সময় তাঁর ভাইকে দুশমনদের জন্য বদদোয়া করতে নিষেধ করেন এবং বরং তাদের হেদায়াতের জন্য দোয়া করেন।
তৃতীয় কারাবাস
স্থান: মিশর
সন: ৭০৭ হিজরী
মেয়াদ: প্রায় দুই সপ্তাহ
কারণ: তাঁর রচিত "আল-ইস্তিগাছা" নামক গ্রন্থ, যা বাকরী নামক ব্যক্তির ভ্রান্ত মতের জবাব হিসেবে লিখেছিলেন। এতে সুফীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।
চতুর্থ কারাবাস
স্থান: মিশর
সন: ৭০৭–৭০৮ হিজরী
মেয়াদ: দুই মাস বা তারও বেশি
কারণ: সুফী হুলুলী নাসর আল-মানবাজীর ষড়যন্ত্র।
পঞ্চম কারাবাস
স্থান: আলেকজান্দ্রিয়া
সন: ৭০৯ হিজরী
মেয়াদ: সাত মাস
কারণ: নাসর আল-মানবাজী এবং জাশনকীরের চক্রান্ত; তাঁকে সাইপ্রাসে নির্বাসনে পাঠানোর চেষ্টা।
এই সময়ে উল্লেখযোগ্য বক্তব্য: ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছিলেন- যদি আমাকে হত্যা করা হয়, তা হবে আমার জন্য শহীদী; যদি নির্বাসিত করা হয়, তা হবে হিজরত; যদি আমাকে সাইপ্রাসে পাঠানো হয়, আমি সেখানকার মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করবো, তারা সাড়া দিবে; আর যদি আমাকে বন্দি রাখা হয়, তবে তা আমার ইবাদতের স্থান হবে।
ফলাফল: বাদশাহ নাসির মুহাম্মদ ইবনু ক্বলাওন ক্ষমতায় ফিরে এসে তাঁকে মুক্তি দেন এবং যারা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, তাদেরকে তিনি ক্ষমা করে দেন।
ষষ্ঠ কারাবাস
স্থান: দামেস্ক
সন: ৭২০–৭২১ হিজরী
মেয়াদ: প্রায় ছয় মাস
কারণ: তালাকের শপথ (حلف بالطلاق) সংক্রান্ত একটি ফিকহী মতভেদ।
ফলাফল: তিনি এই সময়ে "আল-রাদ্দুল কবীর" সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ও পত্র রচনা করেন।
সপ্তম কারাবাস
স্থান: দামেস্ক
সন: ৭২৬–৭২৮ হিজরী
মেয়াদ: প্রায় দুই বছর তিন মাস এবং অর্ধ মাস, যেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
কারণ: কবর জিয়ারত সংক্রান্ত আক্বীদাগত মতভেদ।
ফলাফল: এই সময়ে তিনি "আর-রদ্দু আলা আল-ইখনায়ী" গ্রন্থ রচনা করেন এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইলমী রচনা অর্জন করেন।
ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহর এই কারাবাসগুলো ছিল বাহ্যিকভাবে কঠিন ও কষ্টদায়ক, কিন্তু বাস্তবে ইসলামী চিন্তাধারা সমৃদ্ধ করার এবং ইসলামী আক্বীদা ও ফিকহে স্থায়ী অবদান রাখার এক একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তিনি কারাবাসে থেকেও ছিলেন ধৈর্যশীল, অটল ও উদার। এমনকি যারা তাঁকে কষ্ট দিয়েছিল, তাদের জন্য তিনি দোআ করেছেন। আর বন্দিত্বের সময়ে তিনি রেখে গেছেন বহু মূল্যবান গ্রন্থ ও আদর্শিক উত্তরাধিকার, যা আজও সমগ্র বিশ্বে মানুষ পড়ে উপকৃত হচ্ছে। মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। আমীন!
Join our WhatsApp channel
মানহাজ-সালফে আস-সালেহিন**