- Views: 603
- Replies: 6
ইবনুল জাওযি রা. নিঃসন্দেহে একজন বড় ইমাম, মুহাদ্দিস, ফকিহ ছিলেন। কিন্তু কেউ বড় হলেই ভুলের ঊর্ধ্বে উঠে যান না। মাসুম একমাত্র নাবি আলাইহিস সালাম, এটা স্বতঃসিদ্ধ।
ইবনুল জাওযি আকিদাহর ক্ষেত্রে ভুলের শিকার হয়েছেন। আহলেসুন্নাহ ওয়াল জামাআতের বিরোধিতা করেছেন, এটা অকাট্য সত্য। তাওয়ীল ও তাফউইদ্বের প্রতি তার ঝোঁক ছিল। মহান আল্লাহর অনেক জাতি ও ফে'লি সিফাতে তাওয়িল করেছেন তিনি।
এমনকি ইবনু আব্দিল বার. নুযুলের হাদিস থেকে মহান আল্লাহকে আরশের ঊর্ধ্বে সাব্যস্ত করায়, তাঁকে ‘জাহেল’ আখ্যা দিয়েছে ইবনুল জাওযি। (সাইদুল খাতির দ্র:)
তার ব্যক্তিত্বের প্রশংসা করার পর অসন্তোষ প্রকাশ করে ইবনু কুদামা আল-মাকদিসি রাহ. বলেন—
كان ابن الجوزي إمام أهل عصره في الوعظ وصنف في فنون العلم تصانيف حسنة، وكان صاحب قبول وكان يدرس الفقه ويصنف فيه، وكان حافظا للحديث، وصنف فيه، إلا أننا لم نرض تصانيفه في السنة، ولا طريقته فيها.
ইবনুল জাওযি রাহ. ছিলেন তাঁর যুগের ওয়ায়িজদের ইমাম। ইলমের নানা বিষয়ে তিনি চমৎকার গ্রন্থাবলি রচনা করেছেন। ছিলেন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। ফিকহের দারস দিতেন। ছিলেন হাফিজুল হাদিস। এ বিষয়ে গ্রন্থও রচনা করেছেন। তবে ‘সুন্নাহ'র ব্যাপারে তার রচনাবলিতে আমরা সন্তুষ্ট নই। এ ক্ষেত্রে তার গৃহীত পদ্ধতিতেও সন্তুষ্ট নই।
[জাইলু তাবাকাতিল হানাবিলাহ, ইবনু রজব— ২/৪৮৭-৪৮৮]
ইবনুল জাওযির আসমা ওয়া সিফাতের আকিদাহর ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রাহ. বলেন—
أن أبا الفرج نفسه متناقض في هذا الباب: لم يثبت على قدم النفي ولا على قدم الإثبات؛ بل له من الكلام في الإثبات نظما ونثرا ما أثبت به كثيرا من الصفات التي أنكرها في هذا المصنف. فهو في هذا الباب مثل كثير من الخائضين في هذا الباب من أنواع الناس يثبتون تارة وينفون أخرى في مواضع كثيرة من الصفات كما هو حال أبي الوفاء بن عقيل وأبي حامد الغزالي
আবুল ফরজ ইবনুল জাওযি রাহ. এই (আসমা ওয়া সিফাত) ব্যাপারে স্ববিরোধীতা করেছেন; ইসবাত কিংবা নফি কোনোটার ওপর অটল থাকতে পারেন নি। ইসবাতের ক্ষেত্রে তার কাব্য ও গদ্যাকারে এমন বক্তব্য রয়েছে, যার মাধ্যমে তিনি অনেক সিফাত সাব্যস্ত করেছেন, সেগুলো আবার এই গ্রন্থে অস্বীকার করে বসেছেন। এ বিষয়ে তিনি ঐ প্রকার অনুসন্ধানী মানুষের ন্যায়, যারা একবার সিফাত সাব্যস্ত করে তো আরেকবার অস্বীকার করে। একই অবস্থা আবুল ফিদা ইবনু আকিল ও আবু হামিদ গাযালির।
[মাজমুউল ফাতাওয়া ৪/১৬৯]
সিফাতের বাবে তিনি ভ্রান্তিতে পতিত হওয়ার একটি কারণ ইবনু রজব হাম্বলি রাহ. উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন—
وهو الذى من أجله نقم جماعة من مشايخ أصحابنا وأئمتهم من المقادسة والعلثيين - من ميله إلى التأويل فى بعض كلامه، واشتد نكرهم عليه فى ذلك. ولا ريب أن كلامه فى ذلك مضطرب مختلف، وهو وإن كان مطلعا على الأحاديث والآثار فى هدا الباب، فلم يكن خبيرا بحل شبهة المتكلمين، وبيان فسادها.
তিনিই সেই ব্যক্তি, যার কিছু বক্তব্যে তাওয়িলের প্রতি প্রবণতার কারণে মাকদিসি ও আলথিয়ানদের থেকে একদল মাশাইখ ও ইমাম বিক্ষুব্ধ ছিলেন এবং এ ব্যাপারে তাঁদের ঘৃণা তাঁর প্রতি তীব্রতর হয়েছিল। আর এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য যে বিশৃঙ্খল ও বিতর্কিত, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যদিও তিনি এ বিষয়ে আহাদিস ও আছার সম্পর্কে অবহিত ছিলেন, তবুও তিনি মুতাকাল্লিমদের সংশয় নিরসনে ও তার ভ্রন্তির ব্যাখ্যা দিতে পারদর্শী ছিলেন না। [জাইলু তাবাকাতিল হানাবিলাহ— ১/৪১৪]
(ইবনু রজবের শেষোক্ত কথাটি আরেকবার পড়ুন এবং ইবনু তাইমিয়া আমাদের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝার চেষ্টা করুন।)
মোদ্দাকথা, ইবনুল জাওযি রা. পুরোপুরি আশআরিও নন আবার পুরোপুরি আছারিও নন। তবে তিনি পরবর্তী আশায়েরা— যারা মু'তাযিলা ও জাহমিয়া দ্বারা মারাত্মক প্রভাবিত— তাদের থেকে বহুগুণ ভালো অবস্থানে ছিলেন, ইনশাআল্লাহ। তবে ভুলকে ভুল হিসেবে চিহ্নিত না করলে সাধারণ মানুষ ভ্রান্তিতে পতিত হতে পারে। তাই এটা জরুরি।
ভুল তো ভুলই, চাই ইবনুল জাওযি করুন কিংবা ইবনুল কায়্যিম। (রাহিমাহুমুল্লাহ)
- মোহাম্মাদ আব্দুল হক (হাফি:)
ইবনুল জাওযি আকিদাহর ক্ষেত্রে ভুলের শিকার হয়েছেন। আহলেসুন্নাহ ওয়াল জামাআতের বিরোধিতা করেছেন, এটা অকাট্য সত্য। তাওয়ীল ও তাফউইদ্বের প্রতি তার ঝোঁক ছিল। মহান আল্লাহর অনেক জাতি ও ফে'লি সিফাতে তাওয়িল করেছেন তিনি।
এমনকি ইবনু আব্দিল বার. নুযুলের হাদিস থেকে মহান আল্লাহকে আরশের ঊর্ধ্বে সাব্যস্ত করায়, তাঁকে ‘জাহেল’ আখ্যা দিয়েছে ইবনুল জাওযি। (সাইদুল খাতির দ্র:)
তার ব্যক্তিত্বের প্রশংসা করার পর অসন্তোষ প্রকাশ করে ইবনু কুদামা আল-মাকদিসি রাহ. বলেন—
كان ابن الجوزي إمام أهل عصره في الوعظ وصنف في فنون العلم تصانيف حسنة، وكان صاحب قبول وكان يدرس الفقه ويصنف فيه، وكان حافظا للحديث، وصنف فيه، إلا أننا لم نرض تصانيفه في السنة، ولا طريقته فيها.
ইবনুল জাওযি রাহ. ছিলেন তাঁর যুগের ওয়ায়িজদের ইমাম। ইলমের নানা বিষয়ে তিনি চমৎকার গ্রন্থাবলি রচনা করেছেন। ছিলেন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। ফিকহের দারস দিতেন। ছিলেন হাফিজুল হাদিস। এ বিষয়ে গ্রন্থও রচনা করেছেন। তবে ‘সুন্নাহ'র ব্যাপারে তার রচনাবলিতে আমরা সন্তুষ্ট নই। এ ক্ষেত্রে তার গৃহীত পদ্ধতিতেও সন্তুষ্ট নই।
[জাইলু তাবাকাতিল হানাবিলাহ, ইবনু রজব— ২/৪৮৭-৪৮৮]
ইবনুল জাওযির আসমা ওয়া সিফাতের আকিদাহর ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রাহ. বলেন—
أن أبا الفرج نفسه متناقض في هذا الباب: لم يثبت على قدم النفي ولا على قدم الإثبات؛ بل له من الكلام في الإثبات نظما ونثرا ما أثبت به كثيرا من الصفات التي أنكرها في هذا المصنف. فهو في هذا الباب مثل كثير من الخائضين في هذا الباب من أنواع الناس يثبتون تارة وينفون أخرى في مواضع كثيرة من الصفات كما هو حال أبي الوفاء بن عقيل وأبي حامد الغزالي
আবুল ফরজ ইবনুল জাওযি রাহ. এই (আসমা ওয়া সিফাত) ব্যাপারে স্ববিরোধীতা করেছেন; ইসবাত কিংবা নফি কোনোটার ওপর অটল থাকতে পারেন নি। ইসবাতের ক্ষেত্রে তার কাব্য ও গদ্যাকারে এমন বক্তব্য রয়েছে, যার মাধ্যমে তিনি অনেক সিফাত সাব্যস্ত করেছেন, সেগুলো আবার এই গ্রন্থে অস্বীকার করে বসেছেন। এ বিষয়ে তিনি ঐ প্রকার অনুসন্ধানী মানুষের ন্যায়, যারা একবার সিফাত সাব্যস্ত করে তো আরেকবার অস্বীকার করে। একই অবস্থা আবুল ফিদা ইবনু আকিল ও আবু হামিদ গাযালির।
[মাজমুউল ফাতাওয়া ৪/১৬৯]
সিফাতের বাবে তিনি ভ্রান্তিতে পতিত হওয়ার একটি কারণ ইবনু রজব হাম্বলি রাহ. উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন—
وهو الذى من أجله نقم جماعة من مشايخ أصحابنا وأئمتهم من المقادسة والعلثيين - من ميله إلى التأويل فى بعض كلامه، واشتد نكرهم عليه فى ذلك. ولا ريب أن كلامه فى ذلك مضطرب مختلف، وهو وإن كان مطلعا على الأحاديث والآثار فى هدا الباب، فلم يكن خبيرا بحل شبهة المتكلمين، وبيان فسادها.
তিনিই সেই ব্যক্তি, যার কিছু বক্তব্যে তাওয়িলের প্রতি প্রবণতার কারণে মাকদিসি ও আলথিয়ানদের থেকে একদল মাশাইখ ও ইমাম বিক্ষুব্ধ ছিলেন এবং এ ব্যাপারে তাঁদের ঘৃণা তাঁর প্রতি তীব্রতর হয়েছিল। আর এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য যে বিশৃঙ্খল ও বিতর্কিত, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যদিও তিনি এ বিষয়ে আহাদিস ও আছার সম্পর্কে অবহিত ছিলেন, তবুও তিনি মুতাকাল্লিমদের সংশয় নিরসনে ও তার ভ্রন্তির ব্যাখ্যা দিতে পারদর্শী ছিলেন না। [জাইলু তাবাকাতিল হানাবিলাহ— ১/৪১৪]
(ইবনু রজবের শেষোক্ত কথাটি আরেকবার পড়ুন এবং ইবনু তাইমিয়া আমাদের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝার চেষ্টা করুন।)
মোদ্দাকথা, ইবনুল জাওযি রা. পুরোপুরি আশআরিও নন আবার পুরোপুরি আছারিও নন। তবে তিনি পরবর্তী আশায়েরা— যারা মু'তাযিলা ও জাহমিয়া দ্বারা মারাত্মক প্রভাবিত— তাদের থেকে বহুগুণ ভালো অবস্থানে ছিলেন, ইনশাআল্লাহ। তবে ভুলকে ভুল হিসেবে চিহ্নিত না করলে সাধারণ মানুষ ভ্রান্তিতে পতিত হতে পারে। তাই এটা জরুরি।
ভুল তো ভুলই, চাই ইবনুল জাওযি করুন কিংবা ইবনুল কায়্যিম। (রাহিমাহুমুল্লাহ)
- মোহাম্মাদ আব্দুল হক (হাফি:)