প্রবন্ধ ইখলাছ, ইখলাস কি?

Abu AbdullahVerified member

Knowledge Sharer
ilm Seeker
Uploader
Salafi User
Joined
Jan 12, 2023
Threads
792
Comments
1,044
Solutions
19
Reactions
10,789
আভিধানিক অর্থে ইখলাছ হল কোন বস্তুকে খালি করা বা পরিস্কার করা।

শরিয়তের পরিভাষায় ইখলাছ দ্বারা উদ্দেশ্য কি-তা নির্ণয়ে বিজ্ঞ আলেমদের মত ও মন্তব্য ভিন্ন ভিন্ন।

কেউ বলেছেন, ইখলাছ হল : ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে একক বলে গ্রহণ করা। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন-

وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا . الكهف : 100

সে যেন তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে। সূরা আল-কাহফ : ১১০

কারো মত হল, অন্তরকে পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত করে, এমন যাবতীয় নোংরামী ও অসুস্থতা হতে অন্তরকে পবিত্র করা। ভিন্ন কারো মত-স্বত:প্রণোদিত হয়ে আল্লাহর আনুগত্যে আত্মনিবেদন।

আবার কারো মত এই যে, ইখলাছ হল, আল্লাহ যা নির্দেশ দিয়েছেন, তা পালন করা তার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা তার সন'ষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে।

ভাষার পার্থক্য থাকলেও সংজ্ঞাগুলোর মূল বক্তব্য এটাই। যে মৌলিক নীতিমালাকে কেন্দ্র করে আলেমগণ ইখলাছের সংজ্ঞা নিরূপণ করেছেন, তা হলো- ইবাদত-বন্দেগী-সৎকর্ম বলতে যা কিছু আছে, সবই একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য সম্পাদন করার নাম ইখলাছ। আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্য নিয়ে ইবাদত পালন করলে তাকে ইখলাছ বলে গণ্য করা হবে না। এমনিভাবে, সকল পাপাচার থেকে মুক্ত থাকার উদ্দেশ্য হবে কেবল তাঁরই সন্তুষ্টি অর্জন।

ইবাদত ও কর্মসম্পাদন একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদন ও ইখলাছ আনয়নের বিভিন্ন রূপ হতে পারে- কেউ কেউ আল্লাহর ইবাদত করেন তার প্রতি সম্মান ও মর্যাদা জ্ঞাপনার্থে। অপর কেউ ইখলাছকে ভাবেন আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতের প্রবেশিকা হিসাবে। কারো উদ্দেশ্য থাকে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সন'ষ্টি লাভ। অপর কেউ ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সুনিবীড় সম্পর্ক ও পরম আস্বাদ লাভে প্রয়াসী, কিংবা পরকাল দিবসে মহান আল্লাহর সাক্ষাত লাভে প্রত্যাশী-যেদিন আল্লাহর সাক্ষাতে সারিবদ্ধ হবে বান্দাগণ। নির্দিষ্ট কোন প্রাপ্তিকে উদ্দেশ্য করে নয়-কারো কারো ইবাদতের লক্ষ্য থাকে যে কোন প্রকারে পুরস্কার প্রাপ্তি, আবার কারো ইবাদতের লক্ষ্য নির্দিষ্ট কোন সওয়াব লাভ। কেউ কেউ আল্লাহর ভয়ে ভীত হন নির্দিষ্ট কোন আযাবের কথা স্মরণ করে, অপর কেউ নির্দিষ্ট কোন আযাবের কথা স্মরণ করে নয়, আল্লাহকে ভয় করেন তার যে কোন আযাবের ভয়াবহ পরিণতির কথা চিন্তা করে।

সন্দেহ নেই, ইবাদতে মানুষের ইচ্ছাবৃত্তির বৈচিত্র্য এক বিশাল অধ্যায়, একেক সময় তার মাঝে ক্রিয়াশীল থাকে একেক ধরণের ইচ্ছা, কখনো সে প্রণোদনা লাভ করে একাধিক ইচ্ছার দ্বারা। কিন্তু ইচ্ছার এ বৈচিত্র্যও একক এক লক্ষ্যের প্রতি সতত ধাবিত-বান্দা তার কাজ-কর্ম ও যাবতীয় মনোবৃত্তির দ্বারা একমাত্র আল্লাহকে পাওয়ার আকাঙ্খাকে তীব্র করে তোলে, অন্য কাউকে নয়। এ সবই ইখলাছেরই সত্যায়ন। এ সব ইচ্ছা যার মাঝে ক্রিয়াশীল, সে-ই সিরাতে মুস্তাকীমের অধিকারী, হেদায়েত ও বিশুদ্ধ লক্ষ্যপানে ধাবিত। তবে বান্দার উচিৎ তার ইবাদতকে আল্লাহপ্রেম, ভীতি ও আশা থেকে কখনো বিযুক্ত করবে না। কারণ, ইবাদতের প্রতিষ্ঠাই এই ত্রিমাত্রিক লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে।
 
Similar threads Most view View more
Back
Top