মানহাজ আহলুস সুন্নাহর ভুলকারীদের সাথে আর বিদআতিদের সাথে একই আচরণ করা যাবেনা

Joynal Bin TofajjalVerified member

Student Of Knowledge
Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
Joined
Nov 25, 2022
Threads
343
Comments
474
Reactions
5,530
এটা সালাফগণের মানহাজ নয় যে, আহলুস সুন্নাহর1 ভুল (ভুলকারীদের সাথে) আর বিদআতিদের সাথে একই আচরণ করা। প্রকৃতপক্ষে সকল আদম সন্তানই ভুল করে। অতএব, কোনো ব্যক্তি এবং তার ভুলকে যাচাই করার মানহাজ উপরিউক্ত নীতিই হওয়া উচিত।2



[1] আহলুস সুন্নাহ পরিচিতি: আহলুস সুন্নাহ সালাফিগণের আরেক নাম। আহলুস সুন্নাহ তো তারাই যারা তা গ্রহণ করে যার ওপর ছিলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর সাহাবিগণ। তাদেরকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আদর্শের দিকে সম্পৃক্ত করা হয়; কারণ তারা দৃঢ়ভাবে তা ধারণ করে থাকে। যেভাবে ধারণ করতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “অতএব, তোমাদের কর্তব্য হবে আমার সুন্নাতকে ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাতকে আঁকড়িয়ে ধরা এবং এ পথ ও পন্থার ওপর দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে।” [আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস নং ১৬৬৯৪; আবু দাউদ, আস-সুনান, হাদীস নং ৪৬০৭; তিরমিযি, আল-জামিউ, হাদীস নং ২৬৭৬; ইবন মাজাহ, আস-সুনান, হাদীস নং ৪২]

আর তারা তা থেকে দূরে থাকে যা থেকে রাসূল (ﷺ) সাবধান করেছেন, সেটা হচ্ছে, “সাবধান! দীনের ভেতরে নতুন নতুন কথার (বিদআত) উদ্ভব ঘটানো হতে বেঁচে থাকবে। কেননা প্রত্যেকটা নতুন কথাই বিদআত এবং প্রত্যেকটা বিদআতই ভ্রষ্টতা।” [আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস নং ১৬৬৯৪; আবু দাউদ, আস-সুনান, হাদীস নং ৪৬০৭] আরো বলেছেন, “সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগী হবে, তারা আমার গোষ্ঠীভুক্ত নয়।” [বুখারি, আল-জামিউস সহীহ, হাদীস নং ৫০৬৩; মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৪০১; নাসায়ি, আস-সুনান, হাদীস নং ৩২১৭]

আহলুস সুন্নাহ তো তারাই, যাদের আকীদাহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর যুগে প্রকাশিত ছিল, সাহাবিগণের যুগে ছিল। তাই যতক্ষণ কেউ সে আকীদাহ’য় ফিরে না যাবে সে আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত হবে না। ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “এ উম্মাতের শেষের লোকদের তাই সঠিক পথ দেখাবে যা উম্মাতের প্রথম লোকদেরকে দেখিয়েছিল”। এজন্য আহলুস সুন্নাহ কেবল রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীসের দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করে, অন্যদিকে বাতিলরা বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের দিকে কিংবা মতবাদের দিকে নিজেদের সম্পৃক্ত করে থাকে।

ইমাম শাতিবি বলেন, আবদুর রহমান ইবন মাহদি বলেন, “মালিক ইবন আনাসকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল সুন্নাহ সম্পর্কে, তখন তিনি জবাব দিলেন, যাদের সুন্নাহ ছাড়া আর কোনো নাম নেই। তারপর তিনি “আর এ পথই আমার সরল পথ। কাজেই তোমরা এর অনুসরণ করো এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হও।” [সূরা আল-আনআম: ১৫৩] আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন।” আল-ই‘তিসাম (১/৭৯); অর্থাৎ আহলুস সুন্নাহর ‘সুন্নাহ’ ছাড়া আর কোনো নামের দিকে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে না। ইবনুল কাইয়িম, মাদারিজুস সালিকীন (৩/১৭৯)।

ইবন আবদিল বার রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ইমাম মালিককে এক লোক জিজ্ঞেস করলেন, ‘আহলুস সুন্নাহ কারা? তিনি বললেন, আহলুস সুন্নাহ হচ্ছেন তারাই যারা কোনো উপাধিতে পরিচিত নয়, জাহমি নয়, কাদারি নয়, রাফিদি নয়।’ আল-ইন্তিকা, পৃ. ৩৫।

[2] সকল বনী আদমই ভুল করে। কিন্তু যাদের আকীদাহ ও মানহাজ বিশুদ্ধ বলে প্রমাণিত হয়েছে তাদের ভুল আর যাদের আকীদাহ ও মানহাজে সমস্যা রয়েছে তাদের ভুলকে এক কাতারে রাখা যাবে না। তবে অবশ্যই সেটা তখনই হবে সে লোকটি বিদআতের দিকে আহ্বানকারী হবে না। যেমন,

সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৯৩ হি.) বলেন, ‘এমন কোনো আলিম নেই, এমন কোনো শরীফ মানুষ নেই, এমন কোনো ফযীলতপূর্ণ মানুষ নেই যার কোনো দোষ নেই, তবে যার ত্রুটির চেয়ে ফযীলত বেশি, তার ত্রুটি ফযীলতের অধীনে হারিয়ে যাবে। অন্যরা বলেন, কোনো আলিম ভুল থেকে নিরাপদ নন, যে-কেউ কম ভুল করবে আর বেশি বিশুদ্ধ করবে, তিনিই আলিম। আর যে-কেউ কম বিশুদ্ধ করবে আর ভুল বেশি করবে সে জাহিল।’ ইবন আবদিল বার, জামিউ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাদলিহি (২/৪৮)।

আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ১৮১ হি.) বলেন, ‘যখন কোনো মানুষের গুণ তার ত্রুটির ওপর প্রাধান্য পাবে, তখন তার ভুলগুলো তুলে ধরা হবে না, আর যখন কোনো লোকের ভুলগুলো তার গুণের ওপর প্রাধান্য পাবে তখন তার গুণগুলো উল্লেখ করা হবে না।’ ইমাম যাহাবি, সিয়ারু আলামিন নুবালা (৮/৩৫২)।

ইমাম আহমাদ (মৃত্যু ২৪১ হি.) রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘খোরাসানের সাঁকো পার হয়েছে তাদের মধ্যে ইসহাক ইবন রাহওয়িয়াহ’র চেয়ে উৎকৃষ্ট কেউ নেই, যদিও তিনি আমাদের সঙ্গে অনেক বিষয়ে মতভেদ করেন। কারণ মানুষের মাঝে সর্বদা এ ধরনের মতভেদ চলে এসেছে।’ ইমাম যাহাবি, সিয়ারু আলামিন নুবালা (১১/৩৭১)।

আবু হাতিম ইবন হিব্বান রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৩৫৪ হি.) বলেন, আবদুল মালিক ইবন আবু সুলাইমান কুফাবাসীদের উত্তম ব্যক্তিদের একজন, তাদের হাফিযদের অন্যতম। যারাই তাদের হিফয থেকে হাদীস বর্ণনা করে তারাই সাধারণত কিছু ‘ওয়াহম’ সন্দেহে পড়ে যান, তাই যে শাইখের আদালত সাব্যস্ত হয়েছে তার বর্ণনায় কিছু ওয়াহম পাওয়া গেলেই তার হাদীস ছেড়ে দেওয়া ইনসাফের দাবি নয়। যদি এ নীতি অবলম্বন করি তবে তো আমাদেরকে যুহরি, ইবন জুরাইজ, সাওরি, শুবাহর হাদীসও ছাড়তে হয়, কিন্তু তারা হাফিযে হাদীস হওয়া সত্ত্বেও মাসূম ছিলেন না। ... সুতরাং তাদের মধ্যে যাদের সন্দেহ-সংশয় কম তাদের হাদীস গ্রহণ করা হবে, আর যাদের ভুল বেশি তাদের হাদীস ত্যাগ করা হবে।... আস-সিকাত (৭/৯৭-৯৮)।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৭২৮ হি.), বলেন, ‘সালাফ ও খালাফদের অনেক মুজতাহিদ বিদআত করেছে ও বলেছে, তবে তারা জানতে পারেনি যে, এটি বিদআত। হয়ত তারা দুর্বল হাদীসকে সহীহ মনে করে বসেছে, অথবা কিছু আয়াত থেকে এমন কিছু বুঝেছেন যা এ আয়াতের উদ্দেশ্য নয়, অথবা কোনো মাসআলাতে একটি মত তিনি নিয়েছেন কিন্তু এ মাসআলাতে সহীহ সুন্নাহর ভাষ্য তার কাছে পৌঁছেনি। যখন একজন মানুষ তার রবকে যথাসম্ভব ভয় করবেন, তিনি আল্লাহর এ বাণীর অধীন হতে পারবেন, ‘হে আমাদের রব, আমরা যদি ভুলে যাই কিংবা বিস্মৃত হই তবে আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না’। সহীহ হাদীসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা এ দুআর বিপরীতে বলেছেন, ‘আমি তা করলাম’। মাজমূ ফাতাওয়া (১৯/১৯১-১৯২)।

ইমাম যাহাবি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৭৪৮ হি.) বলেন, ‘তারপর ইলমের ইমামগণের বড়ো যিনি, যদি তার বিশুদ্ধ অংশ বেশি হয়, আর তিনি হক তালাশের পথে বেশি শ্রম ব্যয়কারী বলে বিবেচিত হন, তার ইলমও প্রশস্ত হয়, বুদ্ধিমত্তাও প্রকাশিত হয়, সততা, পরহেযগারী ও কুরআন-সুন্নাহর অনুসরণের প্রসিদ্ধ হন, তবে তার পদস্খলনগুলো ক্ষমার্হ, তাকে আমরা পথভ্রষ্ট বলব না, তাকে আমরা পরিত্যাগ করব না, তার নেক কাজগুলো ভুলে যাব না। হ্যাঁ, তার বিদআতে ও ভুলের তাকে আমরা অনুসরণ করব না, আমরা তার জন্য তা থেকে তাওবাহ নসীব হওয়ার আশা রাখি।’ ইমাম যাহাবি, সিয়ারু আলামিন নুবালা (৫/২৭১)।

তিনি আরো বলেন, ‘যদি যখনই কোনো ইমাম তার ইজতিহাদে কোনো একক মাসআলায় এমন ভুল করে যা ক্ষমার যোগ্য, তার বিরুদ্ধে আমরা দাঁড়িয়ে যাই, তাকে বিদআতি তকমা লাগাই, তাকে পরিত্যাগ করি, তাহলে তো আমাদের জন্য কেউ নিরাপদ পাবো না, ইবন নাসর নয়, ইবন মানদাহ নয়, তাদের থেকে বড়ো যারা আছে তাদেরও কেউ নয়। আল্লাহই তো সৃষ্টিকে হকের পথ দেখান, তিনি তো সকল দয়াকারীর চেয়ে দয়ালু। সুতরাং আমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ ও কঠোরতা অবলম্বন থেকে আশ্রয় চাই।’ ইমাম যাহাবি, সিয়ারু আলামিন নুবালা (১৪/৩৯-৪০)।

তিনি আরো বলেন, ‘যদি প্রত্যেক ইজতিহাদকারী তার ইজতিহাদে ভুলকারী, তার বিশুদ্ধ ঈমান, হকের অনুসরণের যথেষ্ট প্রচেষ্টার পরও, উক্ত ভুলে পড়ার কারণে তাকে আমরা বাদ দিয়ে দেই ও তাকে বিদআতি তকমা লাগিয়ে দেই, তাহলে তো ইমামগণের মধ্য হতে খুব কমই আমাদের কাছে নিরাপদ পাব। আল্লাহ সকলকে তার দয়া, বদান্যতা দিয়ে রহমতে ঢেকে দিন।’ ইমাম যাহাবি, সিয়ারু আলামিন নুবালা (১৪/৩৭৬)।

তিনি আরো বলেন, ‘আর আমরা সুন্নাত ও আহলুস সুন্নাতকে ভালোবাসি, আলিমকে তার কাছে যতটুকু অনুসরণ ও উত্তম গুণাবলি রয়েছে ততটুকু ভালোবাসি। তারা কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যার ওজর থাকায় যেসব বিদআতে লিপ্ত হয়েছে সেটাকে আমরা ভালোবাসবো না। এ ব্যাপারে ধর্তব্য হবে অধিক পরিমাণের উত্তম কর্মাদি থাকা।’ ইমাম যাহাবি, সিয়ারু আলামিন নুবালা (২০/৪৬)।

১০ ইমাম ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৭৫১ হি.) বলেন, ‘ইসলামের ইমামগণের ফযীলত জানা, তাদের মর্যাদা সম্পর্কে অবগত হওয়া, তাদের মর্তবা চেনা, তাদের ফযীলত, ইলম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য তাদের কল্যাণকামিতা এটা দাবি করে না যে, তারা যা যা বলবে আমাদের সব গ্রহণ করে নেওয়া। অনুরূপ সেসব ফাতওয়া মেনে নেওয়া, যা তারা সেসব মাসআলায় প্রদান করেছেন যেখানে তাদের কাছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যা নিয়ে এসেছেন তা অস্পষ্ট ছিল, ফলে তারা তাদের জ্ঞান অনুযায়ী ফতোয়া দিয়েছেন, অথচ হক তাদের দেওয়া ফাতওয়ার বিপরীতে। তবে এর কারণে তাদের সকল কথা নিক্ষেপ করা আবশ্যক নয়, তাদের বিরুদ্ধে অপমানজনক কথা বলাও ঠিক নয়, তাদের নিন্দা ও তাদের বদনামে লেগে যাওয়াও উচিত নয়। বস্তুত এ হচ্ছে মধ্যপন্থা গ্রহণের সময় দুটি অত্যাচারী দিক। আর মধ্যপন্থা এ দুয়ের মাঝখানে। তাই আমরা তাদেরকে গুনাহগারও বলবো না, নিরপরাধও বলবো না।... আর যার রয়েছে শরীআত ও বাস্তব অবস্থার জ্ঞান, সে অবশ্যই অকাট্যভাবে জানতে পার, যে মহৎ ব্যক্তিটির রয়েছে ইসলামে উত্তম পদচারণা, নেক প্রভাব, আর তিনি ইসলাম ও মুসলিমদের মাঝে এমন মর্যাদায় উন্নীত, তারও কখনো কখনো কিছু ভুল ও পদস্খলন হয়ে যেতে পারে, তাকে সেখানে অক্ষম মনে করতে হবে, বরং তিনি ইজতিহাদের জন্য সাওয়াব পাবেন, কিন্তু সে ভুলে তার অনুসরণ করা যাবে না, তবে তার মর্যাদার ব্যাঘাত করা যাবে না, ইমাম হওয়ার ব্যাপারে বিরোধিতা করা যাবে না আর মুসলিমদের অন্তরে তার মর্যাদা নষ্ট হয় এমন কিছু করা যাবে না।’ ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন (৩/২৯৫)।

১১ ইমাম ইবন রাজাব হাম্বলি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৭৯৫ হি.) বলেন, আল্লাহ তাআলা নির্ভুল হওয়া কেবল তার কিতাবের জন্যই লিখেছেন। সে ব্যক্তি হচ্ছে ইনসাফকারী যে একজন মানুষের অধিক বিশুদ্ধতার মাঝে অল্প ভুলকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখে। আল-কাওয়ায়িদ, পৃ. ৩।


এটা সালাফগণের মানহাজ নয়!
অনুবাদ: হাবিব বিন তোফাজ্জল
সম্পাদনা: শাইখ ড.আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া​
 
Back
Top