‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

প্রবন্ধ আশুরা কি এবং আশুরার গুরুত্ব

Imtiazm uddin

New member

Threads
1
Comments
2
Reactions
10
Credits
343
ইসলামের নামে প্রচলিত অনৈসলামী পর্ব সমূহের মধ্যে একটি হ’ল ১০ই মুহাররম তারিখে প্রচলিত আশূরা পর্ব।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বা সাহাবায়ে কেরামের যুগে এ পর্বের কোন অস্তিত্ব ছিল না। আল্লাহর নিকটে বছরের চারটি মাস হ’ল ‘হারাম’ বা মহা সম্মানিত (তওবা ৯/৩৬)। যুল-ক্বা‘দাহ, যুলহিজ্জাহ ও মুহাররম একটানা তিন মাস এবং তার পাঁচ মাস পর ‘রজব’, যা শা‘বানের পূর্ববর্তী মাস’।[1] জাহেলী যুগের আরবরা এই চার মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ করত না।[2] দুর্ভাগ্য যে, মুসলমান হয়েও আমরা অতটুকু করতে পারি না।

আশূরার গুরুত্ব ও কারণ : হিজরী সনের প্রথম মাস মুহাররমের ১০ম তারিখকে ‘আশূরা’ (يَوْمُ عَاشُورَاءَ) বলা হয়। এদিন আল্লাহর হুকুমে মিসরের অত্যাচারী সম্রাট ফেরাঊন সসৈন্যে নদীতে ডুবে মরেছিল এবং মূসা (আঃ) ও তাঁর সাথী বনু ইস্রাঈলগণ ফেরাঊনের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। তাই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে মূসা (আঃ) এদিন সিয়াম রাখেন’।[3] সেকারণ এদিন নাজাতে মূসার শুকরিয়ার নিয়তে সিয়াম রাখা মুস্তাহাব। যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরাম নিয়মিতভাবে পালন করতেন।

ইসলাম আসার পূর্ব থেকেই ইহূদী, নাছারা ও মক্কার কুরায়েশরা এদিন সিয়াম রাখায় অভ্যস্ত ছিল। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) নিজে ও তাঁর হুকুম মতে সকল মুসলমান এদিন সিয়াম রাখতেন (ঐ, শরহ নববী)। অতঃপর ২য় হিজরীতে রামাযানের সিয়াম ফরয হ’লে তিনি বলেন, ‘এখন তোমরা আশূরার সিয়াম রাখতেও পার, ছাড়তেও পার। তবে আমি সিয়াম রেখেছি’।[4]

ইহূদীদের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, তোমাদের চাইতে আমরাই মূসার (আদর্শের) অধিক হকদার ও অধিক নিকটবর্তী’।[5] ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, লোকেরা বলল, ইহূদী-নাছারাগণ আশূরার দিনকে খুবই সম্মান দেয়। জবাবে রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘আগামী বছর ইনশাআল্লাহ আমরা ৯ই মুহাররম সহ সিয়াম রাখব’।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আগামীতে বেঁচে থাকলে আমি অবশ্যই ৯ই মুহাররম সহ সিয়াম রাখব’। রাবী বলেন, কিন্তু পরের বছর মুহাররম মাস আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়ে যায়’।[6]

ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূল (ﷺ) আরও বলেন, ‘তোমরা আশূরার দিন সিয়াম রাখ এবং ইহূদীদের খেলাফ কর। তোমরা আশূরার সাথে তার পূর্বের দিন অথবা পরের দিন সিয়াম রাখ’।[7] আলবানী বলেন, হাদীসটি মওকূফ সহীহ (ঐ)। তবে ৯ ও ১০ দু’দিন রাখাই উত্তম। কেননা রাসূল (ﷺ) ৯ তারিখ সিয়াম রাখতে চেয়েছিলেন।

আশূরার সিয়ামের ফযীলত : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, রামাযানের পর সর্বোত্তম সিয়াম হ’ল মুহাররম মাসের সিয়াম। অর্থাৎ আশূরার সিয়াম’।[8] তিনি বলেন, ‘আমি আল্লাহর নিকট আশা করি যে, আশূরার সিয়াম বান্দার বিগত এক বছরের (ছগীরা) গোনাহ সমূহের কাফফারা হবে’।[9]

প্রচলিত আশূরা : প্রচলিত আশূরার প্রধান বিষয় হ’ল শাহাদাতে কারবালা, যা শাহাদাতে হুসায়েনের শোক দিবস হিসাবে পালিত হয়। যেখানে আছে কেবল অপচয় ও হাযার রকমের শিরকী ও বিদ‘আতী কর্মকান্ড। যেমন তা‘যিয়ার নামে হোসায়েনের ভুয়া কবর বানানো, তার কাছে গিয়ে প্রার্থনা করা, তার ধুলা গায়ে মাখা, তার দিকে সিজদা করা, তার সম্মানে মাথা নীচু করে দাঁড়ান, ‘হায় হোসেন’ ‘হায় হোসেন’ বলে মাতম করা, বুক চাপড়ানো, তা‘যিয়া দেওয়ার মানত করা, তা‘যিয়ার সম্মানে রাস্তায় জুতা খুলে চলা, হোসেনের নামে মোরগ উড়িয়ে দেওয়া।

অতঃপর ছেলে ও মেয়েরা পানিতে ঝাঁপ দিয়ে ঐ ‘বরকতের মোরগ’ ধরা ও তা যবেহ করে খাওয়া। ঐ নামে একটি নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো হয়ে চেরাগ জ্বালানো, ঐ নামে কেক-পাউরুটি বানিয়ে ‘বরকতের পিঠা’ বলে ধোঁকা দেওয়া ও তা বেশী দামে বিক্রি করা এবং বরকতের আশায় তা খরিদ করা, সুসজ্জিত অশ্বারোহী দল নিয়ে কারবালা যুদ্ধের মহড়া দেওয়া, শোক বা তা‘যিয়া মিছিল করা, তাবার্রুক বিতরণ করা, শোকের কারণে এ মাসে বিবাহ-শাদী না করা ইত্যাদি। এমনকি এদিন উস্কানীমূলক এমন কিছু কাজ করা হয়, যেকারণে প্রতি বছর আশূরা উপলক্ষে শী‘আ-সুন্নী পরস্পরে খুনোখুনি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ইসলামে শোক : কোন মুসলিম ব্যক্তির মৃত্যুর খবরে ইন্না লিল্লাহ.. পাঠ করা এবং মাইয়েতের জানাযা করাই হ’ল ইসলামের বিধান। এর বাইরে অন্য কিছু নয়। স্বামী ব্যতীত অন্য মাইয়েতের জন্য তিন দিনের ঊর্ধ্বে শোক করা ইসলামে নিষিদ্ধ।[10] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন, ‘ঐ ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি শোকে মুখ চাপড়ায়, বুকের কাপড় ছিঁড়ে এবং জাহেলী যুগের ন্যায় চিৎকার দিয়ে কাঁদে’।[11] তিনি বলেন, ‘আমি দায়মুক্ত ঐ ব্যক্তি থেকে, যে শোকে মাথা মুন্ডন করে, চিৎকার দিয়ে কাঁদে ও বুকের কাপড় ছিঁড়ে’।[12] রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘যার জন্য শোক করা হবে, তাকে কবরে শাস্তি দেওয়া হবে’।[13]

উল্লেখ্য যে, জাহেলী যুগের রীতি ছিল, যার মৃত্যুতে যত বেশী মহিলা কান্নাকাটি করবে, তিনি তত বেশী মর্যাদাবান বলে খ্যাত হবেন। সেকারণ মৃত ব্যক্তি র সম্মান বাড়ানোর জন্য তার

লোকেরা কান্নায় পারদর্শী মেয়েদের ভাড়া করে আনত’।[14]

দুর্ভাগ্য, আজকের মুসলিম তরুণ-তরুণীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বশেষ ডিগ্রী নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় একত্রে রাস্তায় ধুলোয় বসে মাইক লাগিয়ে বিদায়ী ‘গণকান্না’ জুড়ে দেয়। একি জাহেলী আরবের ফেলে আসা নষ্ট সংস্কৃতির আধুনিক বঙ্গ সংস্করণ নয়? অনেকে তিন দিন পর কুলখানী, দশ দিন পর দাসওয়াঁ, চল্লিশ দিন পর চেহলাম এবং কেউ প্রতি বছর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেন।

কেউ প্রতি বছর তিন দিন, সাত দিন, চল্লিশ দিন বা মাস ব্যাপী শোক পালন করেন। এছাড়া শোক সভা, শোক র‌্যালী, শোক বই খোলা, কালো টুপি ও কালো পোষাক পরা, কালো ব্যাজ ধারণ করা, কালো পতাকা উত্তোলন বা কালো ব্যানার টাঙানো, মৃতের সম্মানে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা, শোকের নিদর্শন হিসাবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ইত্যাদি ইসলামী সংস্কৃতির ঘোর বিরোধী।

মর্ছিয়া : মর্ছিয়া অর্থ মৃত ব্যক্তির প্রশংসায় বর্ণিত কবিতা। জাহেলী আরবের প্রসিদ্ধ সাব‘আ মু‘আল্লাক্বাত বা কা‘বাগৃহে ‘ঝুলন্ত দীর্ঘ কবিতাসপ্তক’-কে আল-মারাছী আস-সাব‘আ ‘সাতটি শোক কাব্য’ বলা হয়। শাহাদাতে হোসায়েন উপলক্ষে বাংলা গদ্যে ‘বিষাদ সিন্ধু’ ছাড়াও বহু মর্সিয়া রচিত হয়েছে। যে বিষয়ে মন্তব্য করে জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না’। বলা বাহুল্য, হোসায়েনের ত্যাগ এখন নেই। আছে কেবল শোকের নামে মুখ-বুক চাপড়ানো, রং ছিটানো, নাচ-গান ও বাদ্য-বাজনা।

সেই সাথে রয়েছে অতিরঞ্জিত লেখনী ও গাল-গল্পের অনুষ্ঠান সমূহ। অথচ জাতীয় মুক্তির পথ দেখিয়ে মহাকবি আল্লামা ইকবাল বলেছেন, ইসলাম যিন্দা হোতা হ্যায় হর কারবালা কে বা‘দ। এর অর্থ হ’ল, বিশুদ্ধ ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য মুমিনকে সর্বদা কারবালার ন্যায় চূড়ান্ত ঝুঁকি নিতে হয়। এর অর্থ এটা নয় যে, কারবালার ঘটনা হক ও বাতিলের লড়াই ছিল। বস্ত্ততঃ এটি ছিল হোসায়েন (রাঃ)-এর একটি রাজনৈতিক ভুলের মর্মান্তিক পরিণতি। যেটা বুঝতে পেরেই অবশেষে তিনি ইয়াযীদের প্রতি আনুগত্যের বায়‘আত গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।[15]

তা‘যিয়া (التَّعْزِيَةُ) অর্থ মৃত ব্যক্তির ওয়ারিছান বা বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেওয়া ও তার প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা। হোসায়েন পরিবারই ছিলেন এই সমবেদনা পাওয়ার প্রকৃত হকদার। কিন্তু এখন তাঁরা কোথায়? ৬১ হিজরীতে হোসায়েন (রাঃ) কারবালায় শহীদ হয়েছেন। অথচ সেখান থেকে ৩৫২ হিজরী পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বের কোথাও এদিন শোক পালন করা হয়নি।

বাগদাদে আববাসীয় খলীফার কট্টর শী‘আ আমীর মু‘ইযযুদ্দৌলা সর্বপ্রথম ৩৫২ হিজরীর ১০ই মুহাররম-কে ‘শোক দিবস’ ঘোষণা করেন। এদিন তিনি বাগদাদের সকল দোকান-পাট ও অফিস-আদালত বন্ধ করে দেন। মহিলাদেরকে শোকে চুল ছিঁড়তে, চেহারা কালো করতে, রাস্তায় নেমে শোকগাথা গেয়ে চলতে বাধ্য করেন, শহর ও গ্রামের সর্বত্র সকলকে শোক মিছিলে যোগদান করতে আদেশ দেন। শী‘আরা খুশী মনে এ আদেশ মেনে নিলেও সুন্নীরা বিরোধিতা করেন। ফলে ৩৫৩ হিজরীতে উভয় দলে ব্যাপক সংঘর্ষ ও রক্তারক্তি হয়।[16]

এই বিদ‘আতী রীতির ফলশ্রুতিতে উপমহাদেশ সহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে আশূরার দিন পরস্পরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশ অঞ্চলের শাসক নবাবেরা শী‘আ ছিলেন। ফলে এদেশের মুসলমানদের নামে ও আচার-অনুষ্ঠানে শী‘আ প্রভাব ব্যাপকতা লাভ করে। সেই সাথে প্রসার ঘটে আশূরা ও তাযিয়ার মত শিরকী ও বিদ‘আতী কর্মকান্ড সমূহের। তাযিয়াপূজা কবরপূজার শামিল।

পৌত্তলিকরা যেমন নিজ হাতে মূর্তি গড়ে তার পূজা করে, ভ্রান্ত মুসলমানরা তেমনি নিজ হাতে ‘তাযিয়া’ বানিয়ে তার কাছে মনোবাঞ্ছা নিবেদন করে। এটা পরিষ্কারভাবে শিরক। কেননা লাশ বিহীন কবর যিয়ারত মূর্তিপূজার শামিল। যা নিকৃষ্টতম শিরক। আর আল্লাহ শিরকের গোনাহ কখনো মাফ করেন না’ (নিসা ৪/৪৮)।

অতএব এই বিদ‘আতী পর্বে সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করা কিংবা এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দিয়ে তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার মাধ্যমে আল্লাহর ক্রোধের শিকার হওয়া থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

করণীয় : এদিনের করণীয় হ’ল, যালেম শাসক ফেরাঊনের কবল থেকে নাজাতে মূসার শুকরিয়ার নিয়তে ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ই মুহাররম দু’টি নফল সিয়াম রাখা। কমপক্ষে ১০ই মুহাররম একটি সিয়াম পালন করা। এর বেশী কিছু নয়। সেই সাথে উচিৎ হবে যালেম-মাযলূম সকলকে উক্ত ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। আল্লাহ আমাদেরকে ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত রাখুন এবং বিশুদ্ধ ইসলামের অনুসারী হওয়ার তাওফীক দান করুন- আমীন!

[1]. বুখারী হা/৫৫৫০; মুসলিম হা/১৬৭৯; মিশকাত হা/২৬৫৯।
[2]. বুখারী হা/৫৩; মুসলিম হা/১৭; মিশকাত হা/১৭।
[3]. মুসলিম হা/১১৩০ (১২৮)।
[4]. মুসলিম হা/১১২৯; বুখারী হা/২০০২।
[5]. মুসলিম হা/১১৩০ (১২৮); মিশকাত হা/২০৬৭।
[6]. মুসলিম হা/১১৩৪।
[7]. সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/২০৯৫।
[8]. মুসলিম হা/১১৬৩; মিশকাত হা/২০৩৯।
[9]. মুসলিম হা/১১৬২; মিশকাত হা/২০৪৪।
[10]. আবুদাঊদ হা/২২৯৯, ২৩০২।
[11]. বুখারী হা/১২৯৭; মুসলিম হা/১০৩।
[12]. বুখারী হা/১২৯৬।
[13]. বুখারী হা/১২৯১।
[14]. ফাৎহুল বারী হা/১২৯১-এর অনুচ্ছেদের আলোচনা দ্রঃ।
[15]. বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : হা.ফা.বা. প্রকাশিত ‘আশূরায়ে মুহাররম ও আমাদের করণীয়’ বই।
[16]. আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১১/২৪৩, ২৫৩।
 

Share this page