প্রশ্ন: একজন প্রশ্নকারী বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
উত্তর: আয়াতটি তার বাহ্যিক অর্থে সঠিক। আল্লাহ তা‘আলা যে সব বিপর্যয় ও দুর্ভিক্ষ জমিনে দিয়ে থাকেন তা কারো কোন ক্ষতি করতে পারে না। তবে যার সময় শেষ হয়ে গেছে এবং রিযিক বন্ধ হয়ে গেছে তার বিষয়টি ভিন্ন। আর যার হায়াত ও রিযিক বাকী আছে আল্লাহ তা‘আলা তাকে অবশ্যই বিভিন্ন উপায়ে রিযিক পৌঁছাবে কখনো সে তা জানতে পারবে আবার কখনো সে তা জানতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আবার কোন সময় বান্দা তার শুকর ও সবরের পরীক্ষার কারণে দরিদ্রতা, রোগ-ব্যাধি সহ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের মুসিবতে আক্রান্ত হয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
এ আয়াতে হাসানাত দ্বারা উদ্দেশ্য নে‘আমতসমূহ। আর খারাপ কর্ম দ্বারা উদ্দেশ্য বিপদসমূহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
আল্লাহই একমাত্র তাওফীক দাতা।
[1] ইবনু মাযাহ, হাদীস নং ২১৪৪
[2] বর্ণনায় আহমাদ, হাদীস নং ২২৩৮৬; ইবনু মাযাহ, হাদীস নং ৪০২২।
[3] বর্ণনায় ইমাম মুসলিম স্বীয় সহীহ গ্রন্থে হাদীস নং ৭৬৯২
﴿وَمَا مِن دَآبَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ رِزۡقُهَا ٦﴾ [هود: ٦]
“আর জমিনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিয্কের দায়িত্ব আল্লাহরই” [সূরা হূদ, আয়াত: ৬] অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা নিজেই তার নিজের ওপর বাধ্য করেছেন যে, জমিনের ওপর যা কিছু বিচরণ করে মানুষ, জীব-জন্তু ও পোকা-মাকড় সবকিছুর রিযিক ও খাওয়ানোর দায়িত্ব তার। তাহলে দুর্ভিক্ষ ও অভাব আফ্রিকা মহাদেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তার ব্যাখ্যা কি?উত্তর: আয়াতটি তার বাহ্যিক অর্থে সঠিক। আল্লাহ তা‘আলা যে সব বিপর্যয় ও দুর্ভিক্ষ জমিনে দিয়ে থাকেন তা কারো কোন ক্ষতি করতে পারে না। তবে যার সময় শেষ হয়ে গেছে এবং রিযিক বন্ধ হয়ে গেছে তার বিষয়টি ভিন্ন। আর যার হায়াত ও রিযিক বাকী আছে আল্লাহ তা‘আলা তাকে অবশ্যই বিভিন্ন উপায়ে রিযিক পৌঁছাবে কখনো সে তা জানতে পারবে আবার কখনো সে তা জানতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ ٣﴾ [الطلاق : ٢، ٣]
“যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।” [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ২,৩]আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿وَكَأَيِّن مِّن دَآبَّةٖ لَّا تَحۡمِلُ رِزۡقَهَا ٱللَّهُ يَرۡزُقُهَا وَإِيَّاكُمۡۚ ٦٠﴾ [العنكبوت: ٦٠]
“আর এমন কত জীব-জন্তু রয়েছে, যারা নিজদের রিযিক নিজেরা সঞ্চয় করে না, আল্লাহই তাদের রিযিক দেন এবং তোমাদেরও।” [সূরা আল-আনকাবূত, আয়াত: ৬০] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, لا تموت نفس حتى تستكمل رزقها و أجلها
“কোন প্রাণী তার রিযিক ও সময় পূর্ণ করা ছাড়া মৃত্যু বরণ করবে না[1]।” মানুষ তার স্বীয় কর্ম— অলসতা, যার ওপর তার ভাগ্য নির্ধারিত এ ধরনের কর্ম থেকে বিমুখ হওয়া, বেকার থাকা, আল্লাহর নিষিদ্ধ কর্ম গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া—ইত্যাদি কারণে অনেক সময় মানুষ অভাব-অনটনের শাস্তি ভোগ করে এবং রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَّآ أَصَابَكَ مِنۡ حَسَنَةٖ فَمِنَ ٱللَّهِۖ وَمَآ أَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٖ فَمِن نَّفۡسِكَۚ وَأَرۡسَلۡنَٰكَ لِلنَّاسِ رَسُولٗاۚ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ شَهِيدٗا ٧٩﴾ [النساء : ٧٩]
“তোমার কাছে যে কল্যাণ পৌঁছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যে অকল্যাণ তোমার কাছে পৌঁছে তা তোমার নিজের পক্ষ থেকে। আর আমি তোমাকে মানুষের জন্য রাসূলরূপে প্রেরণ করেছি এবং সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ যথেষ্ট।” [সূরা নিসা, আয়াত: ৭৯] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَمَآ أَصَٰبَكُم مِّن مُّصِيبَةٖ فَبِمَا كَسَبَتۡ أَيۡدِيكُمۡ وَيَعۡفُواْ عَن كَثِيرٖ ٣٠﴾ [الشورى: ٣٠]
“আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৩০]রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন,
إِنَّ الرَّجُلَ لَيُحْرَمُ الرِّزْقَ بِالذَّنْبِ يُصِيبُهُ وَلَا يَرُدُّ الْقَدَرَ إِلَّا الدُّعَاءُ وَلَا يَزِيدُ فِي الْعُمُرِ إِلَّا الْبِرُّ
“বান্দা তার গুনাহের কারণে রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়” দুআ ছাড়া আর কোন কিছুই ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে না এবং মানুষের সৎ কর্ম ছাড়া আর কোন কিছু আয়ু বাড়াতে পারে না[2]।” আবার কোন সময় বান্দা তার শুকর ও সবরের পরীক্ষার কারণে দরিদ্রতা, রোগ-ব্যাধি সহ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের মুসিবতে আক্রান্ত হয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَنَبۡلُوَنَّكُم بِشَيۡءٖ مِّنَ ٱلۡخَوۡفِ وَٱلۡجُوعِ وَنَقۡصٖ مِّنَ ٱلۡأَمۡوَٰلِ وَٱلۡأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِۗ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٥ ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَٰبَتۡهُم مُّصِيبَةٞ قَالُوٓاْ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيۡهِ رَٰجِعُونَ ١٥٦﴾ [البقرة: ١٥٥، ١٥٦]
“আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৫৫, ১৫৬] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَبَلَوۡنَٰهُم بِٱلۡحَسَنَٰتِ وَٱلسَّئَِّاتِ لَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُونَ ١٦٨﴾ [الاعراف: ١٦٧]
“এবং আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি ভাল ও মন্দ দ্বারা, হয়তো তারা ফিরে আসবে।” [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৬৭] এ আয়াতে হাসানাত দ্বারা উদ্দেশ্য নে‘আমতসমূহ। আর খারাপ কর্ম দ্বারা উদ্দেশ্য বিপদসমূহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«عَجَبًا لأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَاكَ لأَحَدٍ إِلاَّ لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ وليس ذالك لأحد إلا للمؤمن ».
“মু’মিনের কর্মসমূহ কতই সুন্দর ও আশ্চর্যজনক। তার সব কর্মই তার জন্য কল্যাণকর। যদি সে কোন মুসিবতে পড়ে ধৈর্য ধারণ করে, তা তার জন্য কল্যাণকর হয় আর যদি তার কোন খুশির সংবাদ হয় এবং শোনে সে শুকর আদায় করে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। এটি একমাত্র মু’মিন ছাড়া আর কারো জন্য নয়[3]।” এ বিষয়ের ওপর কুরআন ও হাদীস অঢেল। আল্লাহই একমাত্র তাওফীক দাতা।
[1] ইবনু মাযাহ, হাদীস নং ২১৪৪
[2] বর্ণনায় আহমাদ, হাদীস নং ২২৩৮৬; ইবনু মাযাহ, হাদীস নং ৪০২২।
[3] বর্ণনায় ইমাম মুসলিম স্বীয় সহীহ গ্রন্থে হাদীস নং ৭৬৯২
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায (রাহি.)
জানতে আরও ডাউনলোড করুন - কুরআন ও সুন্নাহের ওপর আরোপিত বিভিন্ন প্রশ্নের জাওয়াব