If you're in doubt ask الله.
Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
Q&A Master
Salafi User
LV
17
- Awards
- 33
- Credit
- 16,583
- Thread starter
- #1
আল্লাহর সিফাতে খবরিয়্যাহ (কুরআন ও সুন্নাহ'র মাধ্যমে প্রাপ্ত) গুণাবলি সাব্যস্ত করার ব্যাপারে সালাফে সালেহীনের ইজমা' বা ঐকমত্য।
আল্লাহ জানেন যে, আমি পূর্ণ গবেষণার পর এবং সালাফদের কথা যথাসম্ভব অধ্যয়ন করার পর তাদের কারও কথাই এমন পাইনি যে, তা প্রকাশ্যে স্পষ্টভাবে বা ইঙ্গিতে সিফাতে খবরিয়্যাহ (কুরআন ও সুন্নাহ'র মাধ্যমে প্রাপ্ত সিফাত)কে নাকচ করা বুঝায়। বরং যেটা আমি পেয়েছি তা হচ্ছে, তাদের বহু কথা, হয় নস (অকাট্য)ভাবে না হয় যাহের (প্রকাশ্য অর্থ)ভাবে, এ জাতীয় সিফাত সাব্যস্ত করার ওপর প্রমাণ বহন করছে।(১)
আমি প্রত্যেকের থেকে প্রত্যেক সিফাত সাব্যস্ত করার বিষয়টি বর্ণনা করছি না, তবে আমি যা দেখেছি তা হচ্ছে, তারা সামগ্রিকভাবে এ জাতীয় সিফাতগুলোকে সাব্যস্ত করেছেন। আবার এটাও পাইনি যে, তারা সিফাতগুলো নাকচ করেছেন। তারা কেবল নাকচ করেছেন সাদৃশ্য দেয়া। আর যারা আল্লাহকে সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য দেয় এমন মুশাব্বিহাদের বক্তব্য তারা অস্বীকার করেছেন। সাথে সাথে আমি তাদেরকে দেখেছি যারা সিফাত অস্বীকার করে তাদের কথাও অস্বীকার করেছেন।(২) যেমন, ইমাম বুখারীর শাইখ নু'আইম ইবন হাম্মাদ আল-খুযা'য়ী বলেছেন:
“যে আল্লাহকে মাখলুকের সাথে সাদৃশ্য দিল সে কাফের হয়ে গেলো, আবার আল্লাহ যা নিজের জন্য সাব্যস্ত করেছেন সেটা যে অস্বীকার করলো সেও কাফের হয়ে গেল। আর আল্লাহ নিজের ব্যাপারে যে বর্ণনা দিয়েছেন এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বর্ণনা করেছেন তাঁর সম্পর্কে তা বর্ণনা করা সাদৃশ্য দেয়া নয়।”(৩)
তারা (সালাফগণ) যখন কোনো লোককে দেখতেন যে, সে সাদৃশ্য নাকচ করতে গিয়ে খুব বাড়াবাড়ি করেছে, কিন্তু সিফাত সাব্যস্তের কথা আলোচনা করেনি, তখন তারা বলতেন : লোকটি মু‘আত্ত্বিল (আল্লাহর গুণ অস্বীকারকারী) জাহমী। তাদের কথায় এরূপ অনেক রয়েছে; কেননা আজ পর্যন্ত জাহমিয়্যাহ, মু'তাযিলারা যখনই কাউকে সিফাত সাব্যস্ত করতে দেখেছে, তখনই তারা তাদের মিথ্যা ও অপবাদের আশ্রয় নিয়ে বলেছে, সে তো মুশাব্বিহা (সাদৃশ্যদানকারী)।(৪) এমনকি তাদের অনেক উগ্রবাদী লোক নবীদেরকে পর্যন্ত মুশাব্বিহা বলে অপবাদ দিয়েছে। এমনকি জাহমিয়্যাহ।(৫) নেতা সুমামাহ ইবনুল আশরাস(৬) বলেছে: তিনজন নবী মুশাব্বিহা(৭) ছিলেন।
(১) মূসা ‘আলাইহিস সালাম, যখন তিনি বলেছিলেন: “এটা তোমার পরীক্ষা বৈ কিছুই নয়।” [সূরা আল-আ'রাফ: ১৫৫]
(২) ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালাম, যখন তিনি বলেছিলেন: “আমার অন্তরের কথাতো আপনি জানেন, কিন্তু আপনার নিকট যা আছে তা আমি জানি না” [সূরা আল-মায়েদাহ: ১১৬]
(৩) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যখন তিনি বলেছেন: “আমাদের রব্ব অবতরণ করেন।”(৮) [নাউযুবিল্লাহ]
এমনকি মু'তাযিলাদের অধিকাংশ গোষ্ঠী, বিশুদ্ধ আকীদাহ'র অধিকাংশ ইমাম ও তাদের ছাত্রগণ যেমন, ইমাম মালেক ও তার ছাত্রগণ, সাওরী ও ছাত্রগণ, আওয়া'ঈ ও তার ছাত্রগণ, শাফে'য়ী ও তার ছাত্রগণ, আহমদ ও তার ছাত্রগণ, ইসহাক ইবন রাহওয়াই, আবু উবাইদ প্রমুখকে তারা মুশাব্বিহা শ্রেণিভুক্ত গণ্য করত।(৯)
১. যেমনটি শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ তার বিরোধীদেরকে, যখন তাদের সাথে আকীদায়ে ওয়াসেত্বিয়্যাহ নিয়ে বিতর্ক করছিলেন তখন চ্যালেঞ্জ প্রদান করে বলেছিলেন, ‘যারা এর (আল্লাহর সিফাত সাব্যস্ত করা সংক্রান্ত ওয়াসেত্বিয়্যাহ গ্রন্থে যা এসেছে তার) কোনো কিছুর বিরোধিতা করবে তাদের সকলকে তিন বছর সময় দিলাম, তারা যদি আমি যা বর্ণনা করেছি তার কোনো কানাকড়ির বিরুদ্ধে প্রথম তিন প্রজন্মের কাছ থেকে এর বিপরীত কিছু আনতে পারে তাহলে আমি তা থেকে প্রত্যাবর্তন করব, আর আমার ওপর দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে প্রথম তিন প্রজন্মের সকল গোষ্ঠী থেকে উদ্ধৃতি আনার, যা দিয়ে আমি যা বলেছি, তার পক্ষে প্রমাণ পেশ করবো।' মাজমূ' ফাতাওয়া (৩/১৬৯), (৬/১৫)।
কেউ যদি এসব সিদ্ধান্তের দিকে তাকায় তবে তার কাছে ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ'র প্রশস্ত জ্ঞান, শক্তিশালী অনুসরণ, পূর্ণ পর্যবেক্ষণ, সালাফরা যার ওপর ছিলেন তার প্রতি পূর্ণ আত্মবিশ্বাস ও তাঁর সর্বোচ্চ সূক্ষ্ম কর্মকাণ্ডের পরিচয় পেয়ে আশ্চর্যন্বিত না হয়ে পারবে না।
২. জাহমিয়্যাহ সম্প্রদায় তাওহীদের বিপরীতে নিয়ে এসেছে ‘তাশবীহ’কে। আর ‘তাশবীহ' বলতে তারা বুঝে সিফাত সাব্যস্ত করাকে। ইবন তাইমিয়্যাহ সেটার অসারতা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তাওহীদের বিপরীত হচ্ছে আল্লাহর সাথে শির্ক, আর তাকে তার সৃষ্টির মত মনে করা। এটা (আল্লাহকে সৃষ্টির মত মনে করা) যদিও তাওহীদের বিপরীত, কিন্তু তারা যেটাকে তাশবীহ বা সাদৃশ্য মনে করে তাওহীদের বিপরীতে নিয়ে এসেছে সেটা উদ্দেশ্য নয়, কারণ তারা সিফাসতমূহের অর্থকে এমনসব নাম দিয়েছে (যেমন তাশবীহ) যার সপক্ষে আল্লাহ কখনো কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি।' দেখুন, ইবন তাইমিয়্যাহ, বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ (১/৪২৮-৪২৯)।
৩. দেখুন, লালেকাঈ, শারহু উসূলি ই'তিকাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা'আহ (২/৫৩২), নং ৯৩৬; ইবন আসাকির, তারীখে দামেশক (১৭/৬১২); যাহাবী, আল-‘আরশ, পৃ. ১২০, নং ২০৯; আল-উলু লিল আলিয়্যিল আযীম (২/১০৯৩), নং ৪২৯; মুখতাসারুল উলু, পৃ. ১৮৪; সিয়ারু আ'লামিন নুবালা (১৩/২৯৯)।
শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী এ বর্ণনাটিকে সহীহ বলেছেন। তিনি আরও বলেন, এ বর্ণনার সনদের লোকগুলো নির্ভরযোগ্য। দেখুন, মুখতাসারুল উলু, পৃ. ১৮৪; তাছাড়া এ বর্ণনাটি ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম রাহিমাহুল্লাহ নিয়ে এসেছেন, তাঁর ইজতিমা উল জুয়ূশিল ইসলামিয়্যাহ, পৃ. ২২১; শাইখুল ইসলাম তার মাজমূ' ফাতাওয়া (৫/২৬৩)।
ইমাম যাহাবী বলেন, আর আমাদের কাছে এটি সহীহ সনদে বর্ণিত হয়ে এসেছে। কতই না সুন্দর এ উক্তি। ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আ'লামিন নুবালা (১৩/২৯৯)।
তিনি অন্যত্র বলেন, ‘এ কথাটি হক্ব, সত্য ও যথাযথ। ‘তাশবীহ’ থেকে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই, অনুরূপ সিফাত সংক্রান্ত হাদীস অস্বীকার করা হতেও। যে দীনের বুঝ অর্জন করেছে সে
কখনও এসব সিফাতের সাব্যস্ত ভাষ্যগুলো অস্বীকার করে না। এ জায়গায় দু'টি নিন্দিত অবস্থান রয়েছে,
(১) সেগুলোকে তা’ওয়ীল করা ও তার অর্থকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা। সালাফরা কখনোও এগুলোর তা’ওয়ীল করেননি, আর তারা এগুলোর শব্দসমূহকে বক্র করে স্থানচ্যুতও করেননি, বরং এগুলোর অর্থের ওপর ঈমান এনেছেন এবং (ধরণ নির্ধারণে প্রবৃত্ত না হয়ে) এগুলোকে যেভাবে এসেছে সেভাবে পার করে দিয়েছেন।
(২) দ্বিতীয় নিন্দিত অবস্থান হচ্ছে, এগুলো সাব্যস্ত করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করা, এগুলোকে মানুষের গুণের মত ধারণা করা, অন্তরে এগুলোর আকার নির্ধারণ করা, এটি নিঃসন্দেহে বড় ধরনের মূর্খতা ও পথভ্রষ্টতা। এখানে এটা জানা আবশ্যক যে, গুণ সব সময় মাওসূফ তথা যার গুণ বর্ণনা করা হচ্ছে তার অবস্থা ও অবস্থান অনুসারে হয়ে থাকে। তাহলে যেহেতু আমরা মাওসূফ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলাকে দেখিনি, আর আমাদের কাছে কেউ সংবাদ দেয়নি যে, তিনি তাঁকে দেখেছেন, সাথে সাথে আমাদের সামনে রয়েছে আল্লাহর বাণী, “তাঁর মতো কোনো কিছু নেই।” [সূরা আশ-শূরা: ১১] তাহলে কীভাবে আমাদের ব্রেনে মহান আল্লাহর ধরণ নির্ধারণের বিষয়টি অবশিষ্ট থাকতে পারে? আল্লাহ তা থেকে কতই না ঊর্ধ্বে। অনুরূপভাবে তাঁর পবিত্র সিফাতসমূহের ব্যাপারেও একই কথা কার্যকর, আমরা সেগুলোকে স্বীকার করি, আর বিশ্বাস করি যে, তা হক্ক, সত্য ও যথাযথ। কিন্তু আমরা এগুলোকে কোনো প্রকার তামসীল বা কারো মত মনে করি না, কোনো আকার নির্ধারণ করি না।' ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আ'লামিন নুবালা (১০/৬১০-৬১১)।
৪. তাশবীহ বা সাদৃশ্য অস্বীকারকারী সম্প্রদায়, আল্লাহ তা'আলার জন্য যারাই কোনো নাম বা গুণ সাব্যস্ত করে তাদেরকেই ‘মুশাব্বিহা' নামে অভিহিত করে। ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেন, জাহম ইবন সাফওয়ান মনে করেছে, যে কেউ আল্লাহ তা'আলাকে সেসব গুণে গুণান্বিত করে যা দিয়ে তিনি নিজেকে তার কিতাবে গুণান্বিত করেছেন অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেগুলো দিয়ে হাদীসে তাকে গুণান্বিত করেছেন, সে কাফের হয়ে যাবে, আর সে মুশাব্বিহা হয়ে যাবে। দেখুন, ইমাম আহমাদ, আর-রাদ্দু আলায যানাদিকাতি ওয়াল জাহমিয়্যাহ, পৃ. ২০৬।
অনুরূপভাবে ‘জাহম' ইবন সাফওয়ানের পরে যত সিফাত অস্বীকারকারী এসেছে সকলেই এ কাজটি করেছে। যারাই আল্লাহ তা'আলার সিফাত সাব্যস্ত করেছে তাদেরকেই তারা ‘মুশাব্বিহা’ বা দেহবাদী বলেছে। এমনকি শেষ পর্যন্ত সিফাত অস্বীকারকারীদের একটি চিহ্নে পরিণত হয়েছে তারা এর মাধ্যমে পরিচিতি পেতে থাকে। এজন্য ইমাম ইসহাক্ব ইবন রাহওয়িয়াহ বলেন, ‘জাহম ও তার অনুসারীদের আলামত হচ্ছে তারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের ওপর মিথ্যাচার করে বলে, এরা মুশাব্বিহা।
যারা এভাবে আহলুস সুন্নাহকে মুশাব্বিহা বলত, তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন আবুল মা'আলী আল-জুওয়াইনী। তিনি বলেন, ‘জেনে রাখ, হক্ব মতবাদ হচ্ছে, মহান রব্ব সুবহানাহু ওয়া তা'আলা যেকোনো হাইয়্যে্য বা স্থানে হওয়া থেকে পবিত্র, অনুরূপ কোনো দিক দ্বারা বিশেষিত হওয়া থেকে পবিত্র। আর যারা মুশাব্বিহা তারা বলে, নিশ্চয় মহান আল্লাহ উপরের দিক দ্বারা বিশেষিত।' আশ- শামিল, পৃ. ৫১১। উল্লেখ্য, এখানে তিনি হক্ব মতবাদ বলে আশ'আরীদের বুঝিয়েছেন।
অনুরূপ কাজটি শাহরাস্তানীও করেছে। তিনি বলেন, ‘পরবর্তী একটি গোষ্ঠী সালাফে সালেহীন যা বলেছে তার ওপর বাড়তি করেছে, তারা বলেছে, এসব আয়াত ও হাদীসকে তার প্রকাশ্য অর্থে নিতে হবে, এভাবে তারা কেবল তাশবীহ বা সাদৃশ্য প্রদানেই নিপতিত হয়েছে, যা সালাফদের বিশ্বাসের বিপরীত।' আল-মিলাল ওয়ান নিহাল (১/১৪৬০)।
বরং কোনো কোনো কালামশাস্ত্রবিদ হাম্বলীদের দিকে তাশবীহ এর দোষ যুক্ত করতো; কারণ ফিকহী মাযহাবের অনুসারীদের মাঝে তারাই অধিক পরিমাণে আল্লাহ তা'আলার সিফাত সাব্যস্তকরণে বিখ্যাত ছিল। ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ এর সাথে যারা বিতর্ক করে বলেছিল, ‘আহমাদ এর দিকে বেশ কিছু হাশাওয়িয়্যাহ (অক্ষরবাদী) ও মুশাব্বিহা গোষ্ঠী নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে নিয়েছে', একথার জবাবে শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ তিনি তাদের দাবি খণ্ডন করে বলেছিলেন, ইমাম আহমাদের সাথীদের ছাড়া অন্যদের মধ্যে মুশাব্বিহা ও মুজাসসিমাদের সংখ্যা অনেক বেশি।
এই যে কুর্দীরা তারা সবাই শাফে'য়ী মাযহাবভুক্ত, তাদের মধ্যে যত তাশবীহ আর তাজসীম পাওয়া যায় তা অন্য কোনো প্রজাতির মধ্যে পাওয়া যায় না। জীলানের অধিবাসীরা তাদের মধ্যে শাফেয়ী ও হাম্বলী। একান্ত হাম্বলী যারা তাদের মাঝে এসব কিছু নেই যা অন্যদের মধ্যে আছে। এই যে কাররামিয়্যাহ মুজাসসিমাহ, এরা সবাই হানাফী'। মাজমূ' ফাতাওয়া (৩/১৯৭); হিকায়াতু মুনাযারাতিল ওয়াসেত্বয়্যিাহ।
ইবন আবিল ইয্য আল-হানাফী রাহিমাহুল্লাহ ইমাম ইসহাক্ব ইবন রাহওয়িয়াহ'র পূর্বোক্ত বক্তব্য বর্ণনার পরে বলেন, ‘অনুরূপভাবে সালাফগণের অনেক ইমাম বলেছেন, জাহমিয়্যাদের আলামত হচ্ছে তারা আহলুস সুন্নাহকে মুশাব্বিহা (সাদৃশ্যবাদী) বলে; কারণ আল্লাহর নাম ও গুণ অস্বীকারকারী প্রতিটি সম্প্রদায় যারা নাম ও গুণ সাব্যস্ত করে তাদেরকে মুশাব্বিহা বলতো। এজন্য সিফাত অস্বীকারকারী জাহমিয়্যাহ, মু'তাযিলা, রাফেযী প্রমুখ লোকদের কিতাবসমূহ, যারা আল্লাহর জন্য সিফাত সাব্যস্ত করে তাদেরকে, মুশাব্বিহা ও মুজাসসিমা নামক অপবাদে ভরপুর।' ইবন আবিল ইয্য আল-হানাফী, শারহুল আকীদাতিত ত্বাহাওয়িয়্যাহ (১/১৭৯)।
৫. 'জাহমিয়্যাহ' শব্দটি কখনও কখনও তাদের জন্য প্রয়োগ করা হয়, যারা আল্লাহর গুণাবলি নিষ্ক্রীয় করে অথবা সেগুলোর কিছু কিছুকে নিষ্ক্রীয় করে। সে হিসেবে মু'তাযিলাদেরকে জাহমিয়্যাহ বলা হয়, কারণ তারা আল্লাহর প্রায় সকল গুণকেই অস্বীকার করে। অনুরূপভাবে তা দ্বারা আশা'য়েরা ও মাতুরিদিয়্যাদেরকেও বুঝানো হয়; কারণ সামান্য কিছু সিফাত বাদে সকল সিফাতকে অস্বীকার করে থাকে। তবে সাধারণভাবে যখন ‘জাহমিয়্যাহ' ফির্কা হিসেবে বর্ণনা করা হয় তখন যারা আল্লাহর সকল নাম ও গুণ অস্বীকার করে তাদেরকে বুঝানো হয়। বিশেষ করে যখন জাহমিয়্যাহ বলার পরে ভিন্ন করে মু'তাযিলা, আশা'য়েরা ও মাতুরিদিয়্যাহ বলা হয় তখন প্রত্যেক গোষ্ঠীকে আলাদা বুঝানো হবে। যেমন কেউ বললো, জাহমিয়্যাহ, আশা'য়েরা ও মাতুরিদিয়্যাহ সম্প্রদায় আহলুস সুন্নাত এর আকীদাহ বিরোধী। দেখুন, মাজমূ' ফাতাওয়া (৩/৯৯), (৬/৫৫, ৩৫৮); আর রিসালাতুল মাদানিয়্যাহ, পৃ. ৩৬।
৬. তিনি হচ্ছেন আবু মা'ন সুমামাহ ইবন আশরাস আন-নুমাইরী আল-মু'তাযিলী। বিশর ইবনুল মু'তামির আল-মু'তাযিলির ছাত্র। তাছাড়া সে জাহেয এর ছাত্রত্বও গ্রহণ করে। খলীফা হারুন-অর-রশীদ ও তার ছেলে মামুনের সাথে যোগাযোগ রাখত। মামুনের বিশেষ লোক ছিল। তার মুনাযারায় সে আজে বাজে ফালতু কথা নিয়ে আসত। মামুন তাকে ওযীর বানাতে চেয়েছিল কিন্তু সে অপারগতা প্রকাশ করে। হিজরী ২১৩ সালে সে মারা যায়। মাকরীযী তাকে ধ্বংসাত্মক এক ফির্কার প্রধান হিসেবে গণ্য করেছেন। তার অনুসারীরা ‘সুমামিয়্যাহ' নামে প্রসিদ্ধ। মু'তাযিলাদের থেকে তার কিছু মাসআলা আলাদা ছিল। তার মতামতের মধ্যে ছিল, সে বলতো, জগত আল্লাহর প্রকৃতির কর্ম। আহলুল কিতাব, মূর্তিপুজকদের মধ্যে যারা মুকাল্লিদ তারা জাহান্নামে যাবে না, বরং তারা মাটি হয়ে যাবে। যারা কবীরা করতে করতে মারা যাবে তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। ঈমানদারদের বাচ্চারা মাটি হয়ে যাবে।
তার সম্পর্কে ইবন ক্কুতাইবাহ বলেন, দীনের স্বল্পতা, ইসলামের বিনষ্টতা, ইসলাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ, যাচ্ছে চাই মুখ চালানোর ব্যাপারে তার মতো এমন কোনো মানুষ দেখা যায়নি, যারা আল্লাহকে জানে ও তার ওপর ঈমান রাখে।
ইমাম যাহাবী বলেন, বড় মু'তাযিলাদের একজন, পথভ্রষ্টদের শিরোমনি।
সাফাদী বলেন, দীনদারীতে অধঃপতিত ও বাজে কথা জমাকারী এক ব্যক্তি ছিল। দেখুন, ইবনুল মুরতাদ্বা, ত্বাবাক্বাতুল মু'তাযিলাহ, পৃ. ৬২-৬৭; খত্বীবে বাগদাদী, তারীখে বাগদাদ (৭/১৪৫); ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আ'লামিন নুবালা (১০/২০৩); মীযানুল ই'তিদাল (১/৩৭১); ইবন হাজার, লিসানুল মীযান (২/৩৯৮); সাফাদী, আল-ওয়াফী বিল ওফায়াত (১১/১৬); যিরিকলী, আল- আ'লাম (২/১০০)।
৭. নবী-রাসূলগণকে কারা মুশাব্বিহা বলতে পারে? কতবড় ধৃষ্ঠতা! তারা দীন কি তাহলে কাফেরদের থেকে পেয়েছে? এমন কথা কোনো ঈমানদার বলতে পারে? অথচ এমন সময়ও হয়ত আসবে কেউ এই সুমামার মতাদর্শ কেউ কেউ প্রচার করবে। কারণ প্রতিটি গোষ্ঠীর পরবর্তীতে ওয়ারিশ রয়েছে। মতের প্রবক্তা মরলেও মত মরে যায় না। নাউযুবিল্লাহ।
৮.সুমামাহ এর এ বক্তব্যটি অন্য কোনো সূত্রে পাওয়া যায়নি। তবে এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন ইবন আবী দুআদ। দেখুন, যাহাবী, আল-‘উলু লিল 'আলিয়্যিল 'আযীম, পৃ. ১৪০; অনুরূপ ইবন আবী হাতেম, আর-রাদ্দু আলাল জাহমিয়্যাহতেও তা এসেছে, যা যাহাবী বর্ণনা করেছেন তার থেকে।
৯. অন্যত্র শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন, ‘মু'তাযিলাহ, জাহমিয়্যাহ ও তাদের মত যারা আল্লাহ তা'আলার সিফাত বা গুণাবলি অস্বীকারকারী আছে, যারা যারা আল্লাহ তা'আলার সিফাত সাব্যস্ত করে তারা তাদের প্রত্যেককে মুজাসসিমা (দেহবাদী) মুশাব্বিহা (সাদৃশ্য প্রদানকারী) বলে। আবার তাদের মধ্যে অনেকেই বিখ্যাত ইমাম যেমন মালেক, শাফেয়ী, আহমাদ ও তার সাথীদেরকে মুজাসসিমা ও মুশাব্বিহা হিসেবে গণ্য করে। যেমনটি ‘আয-যীনাহ' গ্রন্থের লেখক আবু হাতেম ও তার মতো অন্যান্যরা উল্লেখ করেছে। সে যখন মুশাব্বিহাদের বিভিন্ন উপদলের বর্ণনা দিচ্ছিল তখন বলে, ‘আর তাদের মধ্যে আরেক গোষ্ঠী রয়েছে, যাদেরকে বলা হয় মালেকী, তারা এক লোকের দিকে নিজেদের সম্পৃক্ত করে যাকে বলা হয় মালেক ইবন আনাস। আবার তাদের মধ্যে আরেক গোষ্ঠী রয়েছে, যাদেরকে বলা হয় শাফে'য়ী, তারা এক লোকের দিকে নিজেদের সম্পৃক্ত করে, যাকে বলা হয় শাফে'য়ী....।' ইবন তাইমিয়্যাহ, মিনহাজুস সুন্নাহ (২/১০৫)।
ইবন তাইমিয়্যাহ আরও বলেন, ‘বস্তুত ‘মুশাব্বিহা' নামটির কোনো নিন্দাসূচক কিছু কুরআনেও আসেনি, হাদীসেও আসেনি, এমনকি কোনো সাহাবী, তাবেয়ীদের কথাতেও আসেনি। তবে সালাফে সালেহীনের একটি গোষ্ঠী যেমন, আব্দুর রহমান ইবন মাহদী, ইয়াযীদ ইবন হারূন, আহমাদ ইবন হাম্বল, ইসহাক্ব ইবন রাহওয়িয়াহ, নু'আইম ইবন হাম্মাদ প্রমুখ থেকে আল্লাহ তা'আলার গুণাবলিতে ‘তাশবীহ’ বা সাদৃশ্য প্রদানের নিন্দা সংক্রান্ত ভাষ্য এসেছে। তারা তাদের দ্বারা যেসব মুশাব্বিহাদের নিন্দা করেছেন সেটা বলেও দিয়েছেন যে, তারা হচ্ছে ঐসব লোক যারা আল্লাহ তাআলার গুণাবলিকে সৃষ্টির গুণাবলির মতো মনে করে। এর মাধ্যমে তারা সেসব লোকদের নিন্দা করেছে যারা কুরআন ও সুন্নাহ'র বিরোধিতা করেছে, কারণ তারা তামসীল অর্থাৎ স্রষ্টার গুণকে সৃষ্টির গুণের মতো করে সাব্যস্ত করেছে। দেখুন, ইবন তাইমিয়্যাহ, বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ (১/৩৮৭)।
ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ আরও বর্ণনা করেছেন যে, ‘এসব নাম অর্থাৎ হাশাওয়িয়্যাহ, মুশাব্বিহা.. এ নামগুলোর সপক্ষে আল্লাহ কখনও কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি। বস্তুত যার প্রশংসা সম্মানের আর যার নিন্দা অসম্মানের তিনি হচ্ছেন আল্লাহ তা'আলা। দীনের মধ্যে যেসব নামের ব্যাপারে প্রশংসা ও নিন্দা জড়িত তা তো কেবল সেসব নামের যার সপক্ষে আল্লাহ তা'আলা কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেছেন, আর যার ওপর কুরআন ও সুন্নাহ অথবা ইজমা' প্রমাণবহ। যেমন মুমিন ও কাফের, আলেম ও জাহিল, মুকতাসেদ বা মধ্যপন্থা অনুসরণকারী ও মুলহিদ বা বিশ্বাস ধ্বংসকারী। কিন্তু এসব নাম (হাশাওয়িয়্যাহ, মুশাব্বিহা ইত্যাদি) তা আল্লাহর কিতাবে নেই, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসেও নেই, উম্মতের সালাফে সালেহীনের ইমামগণের কেউ সেটার পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো কথা বলেননি। সর্বপ্রথম যারা এসব দিয়ে নিন্দা জ্ঞাপনের সংস্কৃতি আবিষ্কার করে তারা হচ্ছে মু'তাযিলা গোষ্ঠী, যারা মুসলিমদের দল থেকে নিজেরা আলাদা দল গঠন করেছিল।' দেখুন, মাজমূ' ফাতাওয়া (৪/১৪৬)।
তিনি আরও সাব্যস্ত করে দেখিয়েছেন যে, মু'তাযিলারা ‘তাশবীহ' এর বিরাট অংশ গ্রহণ করেছে। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, মু'তাযিলারা কাদারিয়্যা, যারা আল্লাহর কর্মকাণ্ডে তাশবীহ দিয়েছে, তাই তাদেরকে বলা হয়, ‘মুশাব্বিহা ফিল আফ‘আল’; কারণ তারা আল্লাহ তা'আলার কর্মে স্রষ্টাকে সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য দেয় আর সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে তাশবীহ দেয়। (কেননা নিজেরা নিজেদের কর্মকাণ্ডের স্রষ্টা দাবি করে থাকে, অথচ আল্লাহ বান্দা ও বান্দার কর্ম সবই সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে স্রষ্টার সাথে তাশবীহ দিল।) দেখুন, মাজমূ' ফাতাওয়া (৮/৪৩১)।
তাছাড়া তারা আল্লাহর নাম ও গুণাবলি অস্বীকার করার আগে সেটাকে তামসীল ও তাশবীহ দিয়ে নিয়েছে। কারণ তারা প্রথমেই মনে করেছে আল্লাহ তা'আলার গুণ সাব্যস্ত করার অর্থ দাঁড়ায় আল্লাহকে সৃষ্টির মত মনে করা, তারপর সেটাকে প্রতিরোধ করতে নেমেছে না করা ও নিষ্ক্রীয় করার মাধ্যমে। কেননা একটি বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, সকল (মু'আত্তিল) নিষ্ক্রীয়কারী (তামসীল) সমতা বিধানকারী।
আল্লাহ জানেন যে, আমি পূর্ণ গবেষণার পর এবং সালাফদের কথা যথাসম্ভব অধ্যয়ন করার পর তাদের কারও কথাই এমন পাইনি যে, তা প্রকাশ্যে স্পষ্টভাবে বা ইঙ্গিতে সিফাতে খবরিয়্যাহ (কুরআন ও সুন্নাহ'র মাধ্যমে প্রাপ্ত সিফাত)কে নাকচ করা বুঝায়। বরং যেটা আমি পেয়েছি তা হচ্ছে, তাদের বহু কথা, হয় নস (অকাট্য)ভাবে না হয় যাহের (প্রকাশ্য অর্থ)ভাবে, এ জাতীয় সিফাত সাব্যস্ত করার ওপর প্রমাণ বহন করছে।(১)
আমি প্রত্যেকের থেকে প্রত্যেক সিফাত সাব্যস্ত করার বিষয়টি বর্ণনা করছি না, তবে আমি যা দেখেছি তা হচ্ছে, তারা সামগ্রিকভাবে এ জাতীয় সিফাতগুলোকে সাব্যস্ত করেছেন। আবার এটাও পাইনি যে, তারা সিফাতগুলো নাকচ করেছেন। তারা কেবল নাকচ করেছেন সাদৃশ্য দেয়া। আর যারা আল্লাহকে সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য দেয় এমন মুশাব্বিহাদের বক্তব্য তারা অস্বীকার করেছেন। সাথে সাথে আমি তাদেরকে দেখেছি যারা সিফাত অস্বীকার করে তাদের কথাও অস্বীকার করেছেন।(২) যেমন, ইমাম বুখারীর শাইখ নু'আইম ইবন হাম্মাদ আল-খুযা'য়ী বলেছেন:
“যে আল্লাহকে মাখলুকের সাথে সাদৃশ্য দিল সে কাফের হয়ে গেলো, আবার আল্লাহ যা নিজের জন্য সাব্যস্ত করেছেন সেটা যে অস্বীকার করলো সেও কাফের হয়ে গেল। আর আল্লাহ নিজের ব্যাপারে যে বর্ণনা দিয়েছেন এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বর্ণনা করেছেন তাঁর সম্পর্কে তা বর্ণনা করা সাদৃশ্য দেয়া নয়।”(৩)
তারা (সালাফগণ) যখন কোনো লোককে দেখতেন যে, সে সাদৃশ্য নাকচ করতে গিয়ে খুব বাড়াবাড়ি করেছে, কিন্তু সিফাত সাব্যস্তের কথা আলোচনা করেনি, তখন তারা বলতেন : লোকটি মু‘আত্ত্বিল (আল্লাহর গুণ অস্বীকারকারী) জাহমী। তাদের কথায় এরূপ অনেক রয়েছে; কেননা আজ পর্যন্ত জাহমিয়্যাহ, মু'তাযিলারা যখনই কাউকে সিফাত সাব্যস্ত করতে দেখেছে, তখনই তারা তাদের মিথ্যা ও অপবাদের আশ্রয় নিয়ে বলেছে, সে তো মুশাব্বিহা (সাদৃশ্যদানকারী)।(৪) এমনকি তাদের অনেক উগ্রবাদী লোক নবীদেরকে পর্যন্ত মুশাব্বিহা বলে অপবাদ দিয়েছে। এমনকি জাহমিয়্যাহ।(৫) নেতা সুমামাহ ইবনুল আশরাস(৬) বলেছে: তিনজন নবী মুশাব্বিহা(৭) ছিলেন।
(১) মূসা ‘আলাইহিস সালাম, যখন তিনি বলেছিলেন: “এটা তোমার পরীক্ষা বৈ কিছুই নয়।” [সূরা আল-আ'রাফ: ১৫৫]
(২) ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালাম, যখন তিনি বলেছিলেন: “আমার অন্তরের কথাতো আপনি জানেন, কিন্তু আপনার নিকট যা আছে তা আমি জানি না” [সূরা আল-মায়েদাহ: ১১৬]
(৩) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যখন তিনি বলেছেন: “আমাদের রব্ব অবতরণ করেন।”(৮) [নাউযুবিল্লাহ]
এমনকি মু'তাযিলাদের অধিকাংশ গোষ্ঠী, বিশুদ্ধ আকীদাহ'র অধিকাংশ ইমাম ও তাদের ছাত্রগণ যেমন, ইমাম মালেক ও তার ছাত্রগণ, সাওরী ও ছাত্রগণ, আওয়া'ঈ ও তার ছাত্রগণ, শাফে'য়ী ও তার ছাত্রগণ, আহমদ ও তার ছাত্রগণ, ইসহাক ইবন রাহওয়াই, আবু উবাইদ প্রমুখকে তারা মুশাব্বিহা শ্রেণিভুক্ত গণ্য করত।(৯)
১. যেমনটি শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ তার বিরোধীদেরকে, যখন তাদের সাথে আকীদায়ে ওয়াসেত্বিয়্যাহ নিয়ে বিতর্ক করছিলেন তখন চ্যালেঞ্জ প্রদান করে বলেছিলেন, ‘যারা এর (আল্লাহর সিফাত সাব্যস্ত করা সংক্রান্ত ওয়াসেত্বিয়্যাহ গ্রন্থে যা এসেছে তার) কোনো কিছুর বিরোধিতা করবে তাদের সকলকে তিন বছর সময় দিলাম, তারা যদি আমি যা বর্ণনা করেছি তার কোনো কানাকড়ির বিরুদ্ধে প্রথম তিন প্রজন্মের কাছ থেকে এর বিপরীত কিছু আনতে পারে তাহলে আমি তা থেকে প্রত্যাবর্তন করব, আর আমার ওপর দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে প্রথম তিন প্রজন্মের সকল গোষ্ঠী থেকে উদ্ধৃতি আনার, যা দিয়ে আমি যা বলেছি, তার পক্ষে প্রমাণ পেশ করবো।' মাজমূ' ফাতাওয়া (৩/১৬৯), (৬/১৫)।
কেউ যদি এসব সিদ্ধান্তের দিকে তাকায় তবে তার কাছে ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ'র প্রশস্ত জ্ঞান, শক্তিশালী অনুসরণ, পূর্ণ পর্যবেক্ষণ, সালাফরা যার ওপর ছিলেন তার প্রতি পূর্ণ আত্মবিশ্বাস ও তাঁর সর্বোচ্চ সূক্ষ্ম কর্মকাণ্ডের পরিচয় পেয়ে আশ্চর্যন্বিত না হয়ে পারবে না।
২. জাহমিয়্যাহ সম্প্রদায় তাওহীদের বিপরীতে নিয়ে এসেছে ‘তাশবীহ’কে। আর ‘তাশবীহ' বলতে তারা বুঝে সিফাত সাব্যস্ত করাকে। ইবন তাইমিয়্যাহ সেটার অসারতা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তাওহীদের বিপরীত হচ্ছে আল্লাহর সাথে শির্ক, আর তাকে তার সৃষ্টির মত মনে করা। এটা (আল্লাহকে সৃষ্টির মত মনে করা) যদিও তাওহীদের বিপরীত, কিন্তু তারা যেটাকে তাশবীহ বা সাদৃশ্য মনে করে তাওহীদের বিপরীতে নিয়ে এসেছে সেটা উদ্দেশ্য নয়, কারণ তারা সিফাসতমূহের অর্থকে এমনসব নাম দিয়েছে (যেমন তাশবীহ) যার সপক্ষে আল্লাহ কখনো কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি।' দেখুন, ইবন তাইমিয়্যাহ, বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ (১/৪২৮-৪২৯)।
৩. দেখুন, লালেকাঈ, শারহু উসূলি ই'তিকাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা'আহ (২/৫৩২), নং ৯৩৬; ইবন আসাকির, তারীখে দামেশক (১৭/৬১২); যাহাবী, আল-‘আরশ, পৃ. ১২০, নং ২০৯; আল-উলু লিল আলিয়্যিল আযীম (২/১০৯৩), নং ৪২৯; মুখতাসারুল উলু, পৃ. ১৮৪; সিয়ারু আ'লামিন নুবালা (১৩/২৯৯)।
শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী এ বর্ণনাটিকে সহীহ বলেছেন। তিনি আরও বলেন, এ বর্ণনার সনদের লোকগুলো নির্ভরযোগ্য। দেখুন, মুখতাসারুল উলু, পৃ. ১৮৪; তাছাড়া এ বর্ণনাটি ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম রাহিমাহুল্লাহ নিয়ে এসেছেন, তাঁর ইজতিমা উল জুয়ূশিল ইসলামিয়্যাহ, পৃ. ২২১; শাইখুল ইসলাম তার মাজমূ' ফাতাওয়া (৫/২৬৩)।
ইমাম যাহাবী বলেন, আর আমাদের কাছে এটি সহীহ সনদে বর্ণিত হয়ে এসেছে। কতই না সুন্দর এ উক্তি। ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আ'লামিন নুবালা (১৩/২৯৯)।
তিনি অন্যত্র বলেন, ‘এ কথাটি হক্ব, সত্য ও যথাযথ। ‘তাশবীহ’ থেকে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই, অনুরূপ সিফাত সংক্রান্ত হাদীস অস্বীকার করা হতেও। যে দীনের বুঝ অর্জন করেছে সে
কখনও এসব সিফাতের সাব্যস্ত ভাষ্যগুলো অস্বীকার করে না। এ জায়গায় দু'টি নিন্দিত অবস্থান রয়েছে,
(১) সেগুলোকে তা’ওয়ীল করা ও তার অর্থকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা। সালাফরা কখনোও এগুলোর তা’ওয়ীল করেননি, আর তারা এগুলোর শব্দসমূহকে বক্র করে স্থানচ্যুতও করেননি, বরং এগুলোর অর্থের ওপর ঈমান এনেছেন এবং (ধরণ নির্ধারণে প্রবৃত্ত না হয়ে) এগুলোকে যেভাবে এসেছে সেভাবে পার করে দিয়েছেন।
(২) দ্বিতীয় নিন্দিত অবস্থান হচ্ছে, এগুলো সাব্যস্ত করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করা, এগুলোকে মানুষের গুণের মত ধারণা করা, অন্তরে এগুলোর আকার নির্ধারণ করা, এটি নিঃসন্দেহে বড় ধরনের মূর্খতা ও পথভ্রষ্টতা। এখানে এটা জানা আবশ্যক যে, গুণ সব সময় মাওসূফ তথা যার গুণ বর্ণনা করা হচ্ছে তার অবস্থা ও অবস্থান অনুসারে হয়ে থাকে। তাহলে যেহেতু আমরা মাওসূফ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলাকে দেখিনি, আর আমাদের কাছে কেউ সংবাদ দেয়নি যে, তিনি তাঁকে দেখেছেন, সাথে সাথে আমাদের সামনে রয়েছে আল্লাহর বাণী, “তাঁর মতো কোনো কিছু নেই।” [সূরা আশ-শূরা: ১১] তাহলে কীভাবে আমাদের ব্রেনে মহান আল্লাহর ধরণ নির্ধারণের বিষয়টি অবশিষ্ট থাকতে পারে? আল্লাহ তা থেকে কতই না ঊর্ধ্বে। অনুরূপভাবে তাঁর পবিত্র সিফাতসমূহের ব্যাপারেও একই কথা কার্যকর, আমরা সেগুলোকে স্বীকার করি, আর বিশ্বাস করি যে, তা হক্ক, সত্য ও যথাযথ। কিন্তু আমরা এগুলোকে কোনো প্রকার তামসীল বা কারো মত মনে করি না, কোনো আকার নির্ধারণ করি না।' ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আ'লামিন নুবালা (১০/৬১০-৬১১)।
৪. তাশবীহ বা সাদৃশ্য অস্বীকারকারী সম্প্রদায়, আল্লাহ তা'আলার জন্য যারাই কোনো নাম বা গুণ সাব্যস্ত করে তাদেরকেই ‘মুশাব্বিহা' নামে অভিহিত করে। ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেন, জাহম ইবন সাফওয়ান মনে করেছে, যে কেউ আল্লাহ তা'আলাকে সেসব গুণে গুণান্বিত করে যা দিয়ে তিনি নিজেকে তার কিতাবে গুণান্বিত করেছেন অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেগুলো দিয়ে হাদীসে তাকে গুণান্বিত করেছেন, সে কাফের হয়ে যাবে, আর সে মুশাব্বিহা হয়ে যাবে। দেখুন, ইমাম আহমাদ, আর-রাদ্দু আলায যানাদিকাতি ওয়াল জাহমিয়্যাহ, পৃ. ২০৬।
অনুরূপভাবে ‘জাহম' ইবন সাফওয়ানের পরে যত সিফাত অস্বীকারকারী এসেছে সকলেই এ কাজটি করেছে। যারাই আল্লাহ তা'আলার সিফাত সাব্যস্ত করেছে তাদেরকেই তারা ‘মুশাব্বিহা’ বা দেহবাদী বলেছে। এমনকি শেষ পর্যন্ত সিফাত অস্বীকারকারীদের একটি চিহ্নে পরিণত হয়েছে তারা এর মাধ্যমে পরিচিতি পেতে থাকে। এজন্য ইমাম ইসহাক্ব ইবন রাহওয়িয়াহ বলেন, ‘জাহম ও তার অনুসারীদের আলামত হচ্ছে তারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের ওপর মিথ্যাচার করে বলে, এরা মুশাব্বিহা।
যারা এভাবে আহলুস সুন্নাহকে মুশাব্বিহা বলত, তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন আবুল মা'আলী আল-জুওয়াইনী। তিনি বলেন, ‘জেনে রাখ, হক্ব মতবাদ হচ্ছে, মহান রব্ব সুবহানাহু ওয়া তা'আলা যেকোনো হাইয়্যে্য বা স্থানে হওয়া থেকে পবিত্র, অনুরূপ কোনো দিক দ্বারা বিশেষিত হওয়া থেকে পবিত্র। আর যারা মুশাব্বিহা তারা বলে, নিশ্চয় মহান আল্লাহ উপরের দিক দ্বারা বিশেষিত।' আশ- শামিল, পৃ. ৫১১। উল্লেখ্য, এখানে তিনি হক্ব মতবাদ বলে আশ'আরীদের বুঝিয়েছেন।
অনুরূপ কাজটি শাহরাস্তানীও করেছে। তিনি বলেন, ‘পরবর্তী একটি গোষ্ঠী সালাফে সালেহীন যা বলেছে তার ওপর বাড়তি করেছে, তারা বলেছে, এসব আয়াত ও হাদীসকে তার প্রকাশ্য অর্থে নিতে হবে, এভাবে তারা কেবল তাশবীহ বা সাদৃশ্য প্রদানেই নিপতিত হয়েছে, যা সালাফদের বিশ্বাসের বিপরীত।' আল-মিলাল ওয়ান নিহাল (১/১৪৬০)।
বরং কোনো কোনো কালামশাস্ত্রবিদ হাম্বলীদের দিকে তাশবীহ এর দোষ যুক্ত করতো; কারণ ফিকহী মাযহাবের অনুসারীদের মাঝে তারাই অধিক পরিমাণে আল্লাহ তা'আলার সিফাত সাব্যস্তকরণে বিখ্যাত ছিল। ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ এর সাথে যারা বিতর্ক করে বলেছিল, ‘আহমাদ এর দিকে বেশ কিছু হাশাওয়িয়্যাহ (অক্ষরবাদী) ও মুশাব্বিহা গোষ্ঠী নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে নিয়েছে', একথার জবাবে শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ তিনি তাদের দাবি খণ্ডন করে বলেছিলেন, ইমাম আহমাদের সাথীদের ছাড়া অন্যদের মধ্যে মুশাব্বিহা ও মুজাসসিমাদের সংখ্যা অনেক বেশি।
এই যে কুর্দীরা তারা সবাই শাফে'য়ী মাযহাবভুক্ত, তাদের মধ্যে যত তাশবীহ আর তাজসীম পাওয়া যায় তা অন্য কোনো প্রজাতির মধ্যে পাওয়া যায় না। জীলানের অধিবাসীরা তাদের মধ্যে শাফেয়ী ও হাম্বলী। একান্ত হাম্বলী যারা তাদের মাঝে এসব কিছু নেই যা অন্যদের মধ্যে আছে। এই যে কাররামিয়্যাহ মুজাসসিমাহ, এরা সবাই হানাফী'। মাজমূ' ফাতাওয়া (৩/১৯৭); হিকায়াতু মুনাযারাতিল ওয়াসেত্বয়্যিাহ।
ইবন আবিল ইয্য আল-হানাফী রাহিমাহুল্লাহ ইমাম ইসহাক্ব ইবন রাহওয়িয়াহ'র পূর্বোক্ত বক্তব্য বর্ণনার পরে বলেন, ‘অনুরূপভাবে সালাফগণের অনেক ইমাম বলেছেন, জাহমিয়্যাদের আলামত হচ্ছে তারা আহলুস সুন্নাহকে মুশাব্বিহা (সাদৃশ্যবাদী) বলে; কারণ আল্লাহর নাম ও গুণ অস্বীকারকারী প্রতিটি সম্প্রদায় যারা নাম ও গুণ সাব্যস্ত করে তাদেরকে মুশাব্বিহা বলতো। এজন্য সিফাত অস্বীকারকারী জাহমিয়্যাহ, মু'তাযিলা, রাফেযী প্রমুখ লোকদের কিতাবসমূহ, যারা আল্লাহর জন্য সিফাত সাব্যস্ত করে তাদেরকে, মুশাব্বিহা ও মুজাসসিমা নামক অপবাদে ভরপুর।' ইবন আবিল ইয্য আল-হানাফী, শারহুল আকীদাতিত ত্বাহাওয়িয়্যাহ (১/১৭৯)।
৫. 'জাহমিয়্যাহ' শব্দটি কখনও কখনও তাদের জন্য প্রয়োগ করা হয়, যারা আল্লাহর গুণাবলি নিষ্ক্রীয় করে অথবা সেগুলোর কিছু কিছুকে নিষ্ক্রীয় করে। সে হিসেবে মু'তাযিলাদেরকে জাহমিয়্যাহ বলা হয়, কারণ তারা আল্লাহর প্রায় সকল গুণকেই অস্বীকার করে। অনুরূপভাবে তা দ্বারা আশা'য়েরা ও মাতুরিদিয়্যাদেরকেও বুঝানো হয়; কারণ সামান্য কিছু সিফাত বাদে সকল সিফাতকে অস্বীকার করে থাকে। তবে সাধারণভাবে যখন ‘জাহমিয়্যাহ' ফির্কা হিসেবে বর্ণনা করা হয় তখন যারা আল্লাহর সকল নাম ও গুণ অস্বীকার করে তাদেরকে বুঝানো হয়। বিশেষ করে যখন জাহমিয়্যাহ বলার পরে ভিন্ন করে মু'তাযিলা, আশা'য়েরা ও মাতুরিদিয়্যাহ বলা হয় তখন প্রত্যেক গোষ্ঠীকে আলাদা বুঝানো হবে। যেমন কেউ বললো, জাহমিয়্যাহ, আশা'য়েরা ও মাতুরিদিয়্যাহ সম্প্রদায় আহলুস সুন্নাত এর আকীদাহ বিরোধী। দেখুন, মাজমূ' ফাতাওয়া (৩/৯৯), (৬/৫৫, ৩৫৮); আর রিসালাতুল মাদানিয়্যাহ, পৃ. ৩৬।
৬. তিনি হচ্ছেন আবু মা'ন সুমামাহ ইবন আশরাস আন-নুমাইরী আল-মু'তাযিলী। বিশর ইবনুল মু'তামির আল-মু'তাযিলির ছাত্র। তাছাড়া সে জাহেয এর ছাত্রত্বও গ্রহণ করে। খলীফা হারুন-অর-রশীদ ও তার ছেলে মামুনের সাথে যোগাযোগ রাখত। মামুনের বিশেষ লোক ছিল। তার মুনাযারায় সে আজে বাজে ফালতু কথা নিয়ে আসত। মামুন তাকে ওযীর বানাতে চেয়েছিল কিন্তু সে অপারগতা প্রকাশ করে। হিজরী ২১৩ সালে সে মারা যায়। মাকরীযী তাকে ধ্বংসাত্মক এক ফির্কার প্রধান হিসেবে গণ্য করেছেন। তার অনুসারীরা ‘সুমামিয়্যাহ' নামে প্রসিদ্ধ। মু'তাযিলাদের থেকে তার কিছু মাসআলা আলাদা ছিল। তার মতামতের মধ্যে ছিল, সে বলতো, জগত আল্লাহর প্রকৃতির কর্ম। আহলুল কিতাব, মূর্তিপুজকদের মধ্যে যারা মুকাল্লিদ তারা জাহান্নামে যাবে না, বরং তারা মাটি হয়ে যাবে। যারা কবীরা করতে করতে মারা যাবে তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। ঈমানদারদের বাচ্চারা মাটি হয়ে যাবে।
তার সম্পর্কে ইবন ক্কুতাইবাহ বলেন, দীনের স্বল্পতা, ইসলামের বিনষ্টতা, ইসলাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ, যাচ্ছে চাই মুখ চালানোর ব্যাপারে তার মতো এমন কোনো মানুষ দেখা যায়নি, যারা আল্লাহকে জানে ও তার ওপর ঈমান রাখে।
ইমাম যাহাবী বলেন, বড় মু'তাযিলাদের একজন, পথভ্রষ্টদের শিরোমনি।
সাফাদী বলেন, দীনদারীতে অধঃপতিত ও বাজে কথা জমাকারী এক ব্যক্তি ছিল। দেখুন, ইবনুল মুরতাদ্বা, ত্বাবাক্বাতুল মু'তাযিলাহ, পৃ. ৬২-৬৭; খত্বীবে বাগদাদী, তারীখে বাগদাদ (৭/১৪৫); ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আ'লামিন নুবালা (১০/২০৩); মীযানুল ই'তিদাল (১/৩৭১); ইবন হাজার, লিসানুল মীযান (২/৩৯৮); সাফাদী, আল-ওয়াফী বিল ওফায়াত (১১/১৬); যিরিকলী, আল- আ'লাম (২/১০০)।
৭. নবী-রাসূলগণকে কারা মুশাব্বিহা বলতে পারে? কতবড় ধৃষ্ঠতা! তারা দীন কি তাহলে কাফেরদের থেকে পেয়েছে? এমন কথা কোনো ঈমানদার বলতে পারে? অথচ এমন সময়ও হয়ত আসবে কেউ এই সুমামার মতাদর্শ কেউ কেউ প্রচার করবে। কারণ প্রতিটি গোষ্ঠীর পরবর্তীতে ওয়ারিশ রয়েছে। মতের প্রবক্তা মরলেও মত মরে যায় না। নাউযুবিল্লাহ।
৮.সুমামাহ এর এ বক্তব্যটি অন্য কোনো সূত্রে পাওয়া যায়নি। তবে এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন ইবন আবী দুআদ। দেখুন, যাহাবী, আল-‘উলু লিল 'আলিয়্যিল 'আযীম, পৃ. ১৪০; অনুরূপ ইবন আবী হাতেম, আর-রাদ্দু আলাল জাহমিয়্যাহতেও তা এসেছে, যা যাহাবী বর্ণনা করেছেন তার থেকে।
৯. অন্যত্র শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন, ‘মু'তাযিলাহ, জাহমিয়্যাহ ও তাদের মত যারা আল্লাহ তা'আলার সিফাত বা গুণাবলি অস্বীকারকারী আছে, যারা যারা আল্লাহ তা'আলার সিফাত সাব্যস্ত করে তারা তাদের প্রত্যেককে মুজাসসিমা (দেহবাদী) মুশাব্বিহা (সাদৃশ্য প্রদানকারী) বলে। আবার তাদের মধ্যে অনেকেই বিখ্যাত ইমাম যেমন মালেক, শাফেয়ী, আহমাদ ও তার সাথীদেরকে মুজাসসিমা ও মুশাব্বিহা হিসেবে গণ্য করে। যেমনটি ‘আয-যীনাহ' গ্রন্থের লেখক আবু হাতেম ও তার মতো অন্যান্যরা উল্লেখ করেছে। সে যখন মুশাব্বিহাদের বিভিন্ন উপদলের বর্ণনা দিচ্ছিল তখন বলে, ‘আর তাদের মধ্যে আরেক গোষ্ঠী রয়েছে, যাদেরকে বলা হয় মালেকী, তারা এক লোকের দিকে নিজেদের সম্পৃক্ত করে যাকে বলা হয় মালেক ইবন আনাস। আবার তাদের মধ্যে আরেক গোষ্ঠী রয়েছে, যাদেরকে বলা হয় শাফে'য়ী, তারা এক লোকের দিকে নিজেদের সম্পৃক্ত করে, যাকে বলা হয় শাফে'য়ী....।' ইবন তাইমিয়্যাহ, মিনহাজুস সুন্নাহ (২/১০৫)।
ইবন তাইমিয়্যাহ আরও বলেন, ‘বস্তুত ‘মুশাব্বিহা' নামটির কোনো নিন্দাসূচক কিছু কুরআনেও আসেনি, হাদীসেও আসেনি, এমনকি কোনো সাহাবী, তাবেয়ীদের কথাতেও আসেনি। তবে সালাফে সালেহীনের একটি গোষ্ঠী যেমন, আব্দুর রহমান ইবন মাহদী, ইয়াযীদ ইবন হারূন, আহমাদ ইবন হাম্বল, ইসহাক্ব ইবন রাহওয়িয়াহ, নু'আইম ইবন হাম্মাদ প্রমুখ থেকে আল্লাহ তা'আলার গুণাবলিতে ‘তাশবীহ’ বা সাদৃশ্য প্রদানের নিন্দা সংক্রান্ত ভাষ্য এসেছে। তারা তাদের দ্বারা যেসব মুশাব্বিহাদের নিন্দা করেছেন সেটা বলেও দিয়েছেন যে, তারা হচ্ছে ঐসব লোক যারা আল্লাহ তাআলার গুণাবলিকে সৃষ্টির গুণাবলির মতো মনে করে। এর মাধ্যমে তারা সেসব লোকদের নিন্দা করেছে যারা কুরআন ও সুন্নাহ'র বিরোধিতা করেছে, কারণ তারা তামসীল অর্থাৎ স্রষ্টার গুণকে সৃষ্টির গুণের মতো করে সাব্যস্ত করেছে। দেখুন, ইবন তাইমিয়্যাহ, বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ (১/৩৮৭)।
ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ আরও বর্ণনা করেছেন যে, ‘এসব নাম অর্থাৎ হাশাওয়িয়্যাহ, মুশাব্বিহা.. এ নামগুলোর সপক্ষে আল্লাহ কখনও কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি। বস্তুত যার প্রশংসা সম্মানের আর যার নিন্দা অসম্মানের তিনি হচ্ছেন আল্লাহ তা'আলা। দীনের মধ্যে যেসব নামের ব্যাপারে প্রশংসা ও নিন্দা জড়িত তা তো কেবল সেসব নামের যার সপক্ষে আল্লাহ তা'আলা কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেছেন, আর যার ওপর কুরআন ও সুন্নাহ অথবা ইজমা' প্রমাণবহ। যেমন মুমিন ও কাফের, আলেম ও জাহিল, মুকতাসেদ বা মধ্যপন্থা অনুসরণকারী ও মুলহিদ বা বিশ্বাস ধ্বংসকারী। কিন্তু এসব নাম (হাশাওয়িয়্যাহ, মুশাব্বিহা ইত্যাদি) তা আল্লাহর কিতাবে নেই, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসেও নেই, উম্মতের সালাফে সালেহীনের ইমামগণের কেউ সেটার পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো কথা বলেননি। সর্বপ্রথম যারা এসব দিয়ে নিন্দা জ্ঞাপনের সংস্কৃতি আবিষ্কার করে তারা হচ্ছে মু'তাযিলা গোষ্ঠী, যারা মুসলিমদের দল থেকে নিজেরা আলাদা দল গঠন করেছিল।' দেখুন, মাজমূ' ফাতাওয়া (৪/১৪৬)।
তিনি আরও সাব্যস্ত করে দেখিয়েছেন যে, মু'তাযিলারা ‘তাশবীহ' এর বিরাট অংশ গ্রহণ করেছে। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, মু'তাযিলারা কাদারিয়্যা, যারা আল্লাহর কর্মকাণ্ডে তাশবীহ দিয়েছে, তাই তাদেরকে বলা হয়, ‘মুশাব্বিহা ফিল আফ‘আল’; কারণ তারা আল্লাহ তা'আলার কর্মে স্রষ্টাকে সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য দেয় আর সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে তাশবীহ দেয়। (কেননা নিজেরা নিজেদের কর্মকাণ্ডের স্রষ্টা দাবি করে থাকে, অথচ আল্লাহ বান্দা ও বান্দার কর্ম সবই সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে স্রষ্টার সাথে তাশবীহ দিল।) দেখুন, মাজমূ' ফাতাওয়া (৮/৪৩১)।
তাছাড়া তারা আল্লাহর নাম ও গুণাবলি অস্বীকার করার আগে সেটাকে তামসীল ও তাশবীহ দিয়ে নিয়েছে। কারণ তারা প্রথমেই মনে করেছে আল্লাহ তা'আলার গুণ সাব্যস্ত করার অর্থ দাঁড়ায় আল্লাহকে সৃষ্টির মত মনে করা, তারপর সেটাকে প্রতিরোধ করতে নেমেছে না করা ও নিষ্ক্রীয় করার মাধ্যমে। কেননা একটি বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, সকল (মু'আত্তিল) নিষ্ক্রীয়কারী (তামসীল) সমতা বিধানকারী।
আরও পড়ুন - ফাতওয়া আল হামাউইয়্যা